ধর্ম ও জীবন
তাহাজ্জুদ নামাজ কিভাবে পড়তে হয়?
আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের নফল ইবাদত রাতের নামাজ তাহাজ্জুদ। তাহাজ্জুদ অন্তর ও আত্মার শক্তি সঞ্চয়ের শক্তিশালী মাধ্যম। প্রাণহীন হৃদকে সজীব করার এক শ্রেষ্ঠতম উপায়। আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার এক অনন্য মধ্যম সালাতুত তাহাজ্জুদ। নবিজী বলেছেন, ‘ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজ।
রাতের নামাজ তাহাজ্জুদের ঘোষক স্বয়ং আল্লাহ। রাতের শেষাংশে মহান রব দুনিয়ার আকাশে নেমে মানুষকে নামাজের জন্য, তাঁকে ডাকার জন্য, ক্ষম প্রার্থনার জন্য আহ্বান করেন। হাদিসে এসেছে-
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। যে আমার তাঝে কিছু প্রার্থনা করবে আমি তাকে তা দান করব। যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।’ (বুখারি, মুসলিম)
মহান আল্লাহ রাতের নামাজের গুরুত্ব কোরআনুল কারিমে এভাবে তুলে ধরেছেন-
اِنَّ نَاشِئَۃَ الَّیۡلِ هِیَ اَشَدُّ وَطۡاً وَّ اَقۡوَمُ قِیۡلًا
‘নিশ্চয়ই রাতের বেলার জেগে ওঠা আত্মসংযমের জন্য বেশি কার্যকর এবং স্পষ্ট কথা বলার জন্য বেশি উপযোগী।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল : আয়াত ৬)
وَ عِبَادُ الرَّحۡمٰنِ الَّذِیۡنَ یَمۡشُوۡنَ عَلَی الۡاَرۡضِ هَوۡنًا وَّ اِذَا خَاطَبَهُمُ الۡجٰهِلُوۡنَ قَالُوۡا سَلٰمًا – وَ الَّذِیۡنَ یَبِیۡتُوۡنَ لِرَبِّهِمۡ سُجَّدًا وَّ قِیَامًا
‘আর রাহমান-এর বান্দা তারাই, যারা জমিনে অত্যন্ত বিনম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন জাহেল ব্যক্তিরা তাদেরকে (অশালীন ভাষায়) সম্বোধন করে, তখন তারা বলে, সালাম; আর তারা রাত অতিবাহিত করে তাদের রব-এর উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে এবং দাঁড়িয়ে থেকে।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৬৩-৬৪)
তাহাজ্জুদ রাতের নামাজ। ফরজের পর আল্লাহ তাআলা রাতের নামাজের প্রতি যথাযথ গুরুত্বারোপ করেছেন। তাই মুমিন মুসল্লির কাছে রাতের নামাজ তাহাজ্জুদ-এর গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি।
তাহাজ্জুদ পড়ার সময়
তাহাজ্জুদ নামাজ রাতে পড়তে হয়। এটি এশার নামাজ আদায় করার পর থেকে ভোর হওয়ার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ফজরের সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত পড়া যায়। তবে তাহাজ্জুদ নামাজ অর্ধ বা দ্বিপ্রহরের সময় পড়া ভালো। সর্বোত্তম হচ্ছে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়া।
তাহাজ্জুদের রাকাত
তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। তবে অধিকাংশ স্কলারের মতে, তাহাজ্জুদ সর্বনিম্ন দুই রাকাত আর সর্বোচ্চ আট রাকাত। এর বেশিও পড়া বৈধ। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো ৪ রাকাত, কখনো ৮ রাকত এবং কখনো ১২ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়তেন। কিন্তু যদি কেউ রাতে ইশার পর থেকে শেষ রাতের মধ্যে ২ রাকাত নামাজ পড়ে তবে তা তাহাজ্জুদ আদায় হবে। হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এশার পর দুই বা ততোধিক রাকাত নামাজ পড়ে নেয়, সে হবে তাহাজ্জুদের ফজিলতের অধিকারী।
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম
তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সুরা বা নিয়ম নেই। অন্যান্য ওয়াক্তের নামাজের মতো রাতের নামাজ তাহাজ্জুদ পড়তে হয়। সুরা ফাতেহার সঙ্গে যে কোনো সুরা মিলিয়ে এ নামাজ পড়া যায়। তবে উত্তম হলো দীর্ঘ বা লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। যদি কারো বেশি আয়াত বা লম্বা সুরা মুখস্ত থাকে তবে তাদের জন্য লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া উত্তম। কারণ নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় বড় বড় সুরা দিয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। তাই আমাদেরও বড় সুরা মুখুস্ত করে, তা দিয়ে তাহাজ্জুত আদায় করা উত্তম।
রাতের নামাজ তাহাজ্জুদ এতোই মর্যাদাবান যে, এ নামাজ পড়া মুসল্লির দোয়া বা চাওয়া-পাওয়া লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। আল্লাহ তাআলা তাহাজ্জুদ পড়া ব্যক্তির ডাকে সাড়া দেন। দোয়া ও মনের আশা কবুল করেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনার উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
ওমরাহ নিয়ে সুখবর জানালো সৌদি আরব
এখন থেকে যেকোনো ভিসায় ওমরাহ পালন করা যাবে বলে জানিয়েছে সৌদি আরব। গত বুধবার (২৪ এপ্রিল) দেশটির হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এর বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে।
বার্তায় বলা হয়, যেকোনো ভিসা নিয়ে যেকোনো দেশ থেকে ওমরাহ পালন করা যাবে। আপনার ভিসা যে ধরনেরই হোক, আপনি ওমরাহ করতে পারবেন। ফ্যামিলি, ট্রানজিট, লেবার ও ই-ভিসা হোক, তা দিয়ে ওমরাহ করতে কোনো বাধা নেই।
এদিকে পবিত্র হজের অনুমোদন দেওয়া শুরু করেছে সৌদি আরব। গত ২৪ এপ্রিল থেকে দেশটির স্থানীয় বাসিন্দা ও সেখানে বসবাসকারী মুসলিম বিদেশি নাগরিকদের হজের অনুমোদন দেওয়া শুরু হয়।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হয়। এতে আবাসন সুবিধা বিবেচনায় ৪ হাজার ৯৯ সৌদি রিয়াল থেকে শুরু করে ১৩ হাজার ২৬৫ রিয়াল পর্যন্ত চারটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়।
এদিকে আসন্ন হজের প্রস্তুতি হিসেবে ওমরাহ পালনের সময়সীমা ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। আগামী ২৯ জিলকদ (৬ জুন) এর মধ্যে ওমরাহ যাত্রীদের সৌদি আরব ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া সৌদি আরবে প্রবেশের পর থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত ওমরাহ ভিসার মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
রিজিক বাড়ানোর ১২ আমল
প্রতিটি প্রাণীর জীবনধারণের জন্য আল্লাহ–তাআলার এমন বিশেষ দানকে রিজিক বলা হয়, যা নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী প্রদান করা হয়; আর তার মাধ্যমে প্রাণীটির সার্বিক উপকার সাধিত হয়। রিজিক সেটাই, যা বান্দার উপকারে আসে। উপকারে আসার বিষয়টিও ব্যাপক—ইহকাল ও পরকাল তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কোনো ব্যক্তি মানুষ বা প্রাণী যদি ইহকালে রিজিকপ্রাপ্ত না হয়, পরকালে সে অবশ্যই তা পাবে।
অনুরূপভাবে যা কিছু মানবদেহ ও আত্মার খোরাক মেটায়, তা-ই রিজিক। মোট কথা, আল্লাহ–তাআলার এক বিশেষ অনুগ্রহের নাম রিজিক, যা তিনি মানুষসহ সব প্রাণীকে নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী দিয়ে থাকেন। তবে কিছু আমলের মাধ্যমে রিজিক বৃদ্ধি ঘটে এবং আয়-উপার্জনে বরকত আসে। রিজিক বাড়ানোর ১২ আমল করবেন যেভাবে-
১. তওবা-ইস্তিগফার করা
তওবা-ইস্তিগফার করার মাধ্যমে বান্দার রিজিক বাড়ে। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের বাগবাগিচা এবং নদীনালা দান করবেন।’ (সুরা নুহ, আয়াত: ১০-১২; সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত: ৮২)
ইবনে আব্বাস (রা.)–র বিবরণে আছে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইস্তিগফার করবে; আল্লাহ–তাআলা সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন; সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১,৫১৮; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩,৮১৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৯১, হাদিস: ৭,৬৭৭)
২. পরহেজগারি অবলম্বন এবং আল্লার ওপর ভরসা রাখা
যেসব কাজকর্ম বা আমলে রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটে; তার মধ্যে তাকওয়া-পরহেজগারি অবলম্বন করা এবং তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা অন্যতম। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না ।’ (সুরা সাদ, আয়াত: ৩৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থভাবে ভরসা রাখো। তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় (খালি পেটে) বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফেরে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২,৩৪৪; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪,১৬৪)
৩. হজ-ওমরাহ পালন
বারবার হজ ও ওমরাহ পালন করার দ্বারা রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)–র বিবরণে আছে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা লাগাতার হজ ও ওমরাহ পালন করতে থাকো। কারণ, এর দ্বারা এমনভাবে অভাব ও গুনাহ দূরীভূত হয়; যেমনভাবে কামারের হাপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে দেয়।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৮১০; নাসায়ি, হাদিস: ২,৬৩১)
৪. হিজরত করা এবং জিহাদে অংশ নেওয়া
আল্লাহ–তাআলার রাস্তায় হিজরত করা ও জিহাদে অংশগ্রহণ করার দ্বারা রিজিকে বরকত হয়। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহ–তাআলার রাস্তায় হিজরত করবে; জমিনে বহু আশ্রয়স্থল ও সচ্ছলতা পাবে সে।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১০০)
ইবনে উমর (রা.)–র বর্ণনায় আছে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার বর্শার ছায়াতলে আমার রিজিক রাখা হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৫,৬৬৭; বায়হাকি, হাদিস: ১,১৫৪)
৫. নামাজ আদায়
সময়মতো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে রিজিক বাড়ে। নামাজ আদায় করার ফাঁকে ফাঁকে কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করতে হবে; কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করার ফাঁকে ফাঁকে নামাজ নয়। একই সঙ্গে আল্লাহ–তাআলার ইবাদত পালনে নিজেকে ঝামেলামুক্ত করতে হবে। আল্লাহ–তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আর আপনি পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায়ের আদেশ দিন এবং নিজেও তার ওপর অটল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমিই আপনাকে রিজিক দিই। আর মুত্তাকিদের জন্যই শুভ পরিণাম।’ (সুরা ত্বহা, আয়াত: ১৩২)
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ–তাআলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি তোমার অন্তরকে খালি করো। আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত হিসেবে পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার দরিদ্র্যের পথ দূর করে দেব। আর যদি তা না করো; আমি তোমার হাত (দুনিয়ার) ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেবো এবং তোমার অভাব মেটাব না।’ (তিরমিজি, হাদিস–২,৪৬৬; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪,১০৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৮,৬৯৬)
৬. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা
রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম আরেকটি আমল হচ্ছে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা। আত্মীয়ের সঙ্গে সদাচরণ করতে এবং তাঁদের হক যথাযথভাবে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ–তাআলা। (সুরা নিসা, আয়াত: ৩৬; সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৬) আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে আমি বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং আয়ু দীর্ঘ করা হোক—সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ (বুখারি, হাদিস: ৫,৯৮৫; মুসলিম, হাদিস: ৪,৬৩৯)
আরও পড়ুন: যে কারণে আল্লাহ বৃষ্টি বন্ধ করে দেন
৭. আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় এবং দান-সদকা
দান-সদকা করার মাধ্যমে রিজিক বাড়ে। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় করো; তিনি তার বিনিময় দেবেন। তিনিই উত্তম রিজিকদাতা।’ (সুরা সাবা, আয়াত: ৩৯) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করে। তাদের একজন বলে, হে আল্লাহ! দানকারীকে তার দানের জন্য উত্তম প্রতিদান দিন। অপরজন বলে, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন।’ (বুখারি, হাদিস: ১,৪৪২, মুসলিম, হাদিস: ১,০১০)
৮. শোকর আদায় বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
যেসব কাজকর্ম বা আমলে রিজিক বাড়ে, তার মধ্যে অন্যতম হলো আল্লাহ–তাআলা যেসব নিয়ামত দান করেছেন, তার শোকর আদায় করা বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। কারণ, শোকর আদায় করার দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘যদি তোমরা শোকর আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের (নিয়ামত) বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আজাব বড় কঠিন।’ (সুরা ইব্রাহিম, আয়াত: ৭)
৯. বিয়ে করা
আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত এবং তোমাদের দাস–দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদের বিয়ে করিয়ে দাও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, আল্লাহ–তাআলা নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দেবেন। কারণ, আল্লাহ–তাআলা প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা নূর, আয়াত: ৩২) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণির মানুষকে সাহায্য করাকে আল্লাহ–তাআলা নিজ দায়িত্ব হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তিন শ্রেণির অন্যতম হলো—বিয়ে করতে আগ্রহী সেই ব্যক্তি, যিনি বিয়ে করে পবিত্র জীবন যাপন করতে ইচ্ছুক।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১,৬৫৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২,৫১৮)
১০. গরিব-অসহায়ের প্রতি সদয় হওয়া
যেসব কাজকর্ম বা আমলে রিজিক বাড়ে, তার অন্যতম হলো গরিব-অসহায় মানুষের প্রতি সদয় হওয়া। রাস্তাঘাটে গরিব-অসহায় মানুষকে হাত বাড়াতে দেখলেই সবাইকে এক পাল্লায় মেপে খারাপ আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র ইরশাদ করেছেন, ‘তাদের (ধনী লোকদের) সম্পদে প্রার্থী (দরিদ্র) ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ১৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক প্রদান করা হয়।’ (বুখারি, হাদিস: ২,৮৯৬)
১১. আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা
যেসব কাজকর্ম বা আমলে রিজিক বাড়ে, এর মধ্যে অন্যতম হলো আল্লাহ–তাআলার কাছে প্রার্থনা করা। কারণ, আমরা এমন এক স্রষ্টার সৃষ্টি—যিনি চাইলে খুশি; না চাইলে অখুশি। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো; আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা মুমিন, আয়াত: ৬০)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)–এর বিবরণে আছে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হওয়ার পর মানুষের কাছে সোপর্দ করে, অর্থাৎ অভাব দূরীকরণে মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়; তার অভাব মোচন করা হয় না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হওয়ার পর প্রতিকারের জন্য আল্লাহ–তাআলার ওপর নির্ভরশীল হয় (দোয়া-প্রার্থনা করে) অবিলম্বে অথবা বিলম্বে আল্লাহ–তাআলা তাকে রিজিক দান করেন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২,৮৯৬ ও ২,৩২৬; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৪২১৯)
১২. রিজিক অর্জনের চেষ্টায় থাকা
আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জমিনে) ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমা, আয়াত: ১০)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকালবেলা পাহাড়ের দিকে বের হয়। এরপর লাকড়ি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে। মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে তার জন্য এটা উত্তম।’ (বুখারি, হাদিস: ১,৪৮০; মুসলিম, হাদিস: ১,০৪২)
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
যে কারণে আল্লাহ বৃষ্টি বন্ধ করে দেন
ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে একটি হচ্ছে জাকাত। জাকাত পার্থিব জীবনে যেমন দারিদ্র্যবিমোচনে সহায়তা করে, তেমনি পরকালের কঠিন দিনে স্বস্তি দেয়।
হজরত আবদুল্লাহ বিন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেন, হে মুহাজিরগণ! তোমরা ৫টি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও। যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। যখন কোনো জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের ওপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসিবত। আর জাকাত আদায় না করলে তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদি ভূ-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকত তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোনো জাতি আল্লাহ ও তার রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের ওপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪০১৯)
ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ইসলামের ভিত্তি ৫টি বিষয়ের ওপর। এই কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল। নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, জাকাত আদায় করা, হজ করা ও রমজান মাসে রোজা রাখা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮)
সঠিকভাবে জাকাত আদায় বিত্তবানদের অন্তর পরিশুদ্ধ করে এবং তাদের সম্পদকে পবিত্র করে। তাই এটিকে কোরআনের সাফল্যের অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহতায়ালা সুরা মুমিনুনের ১-৫ আয়াতে বলেছেন, অবশ্যই মুমিনরা সফল। যারা নামাজে বিনম্র থাকে, অনর্থক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকে, যারা জাকাত আদায় করে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান সংযত রাখে।
ইসলামে অত্যাবশ্যক বিধানগুলোর একটি জাকাত। কেউ জাকাতের বিধান অস্বীকার করলে সে মুসলিম থাকবে না। তাই যথাযথভাবে জাকাত আদায় করা কর্তব্য। নতুবা পরকালে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
তিন লাখ বৃক্ষ রোপনের ঘোষণা শায়খ আহমাদুল্লাহর
চলতি বছর তিন লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা দিয়েছেন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট দাঈ শায়খ আহমাদুল্লাহ।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর আফতাবনগর ঈদগাহ মাঠে মুসল্লিদের নিয়ে সালাতুল ইস্তিসকার নামাজশেষে সাংবাদিকদের এ ঘোষণা দেন তিনি।
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, গতবছর আস-সুন্নাহর উদ্যোগে এক লাখ গাছ রোপন করা হয়, যার মধ্যে ৩০ হাজার লেবুর গাছ ছিল। কারণ গরমে লেবুর প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়াও প্রচুর পেয়ারা গাছ ও আম গাছসহ দেশীয় ফল গাছ লাগানোর চেষ্টা করেছি। এ বছর আমরা তিন লাখ গাছ রোপন করার কাজ ইতিমধ্যে হাতে নিয়েছি এবং কর্মসূচি শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, যখন অনাবৃষ্টির সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে, যখন তীব্র গরমে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয় তখন মুসলমান হিসেবে আমাদের করণীয় হলো- আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনার দোয়া করা। তিনি বলেন, বিগত কয়েকবছর ধরে দেশে গরমের তীব্রতা বেড়েছে।
‘ফলে পশু-পাখি, প্রাণীকুল ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। ফসলের জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষেরা কাজ করতে গিয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় আমাদের সবার উচিত হবে- তাওবা-ইস্তেগফার করা। নিজেদের সংশোধন করা এবং আত্মশুদ্ধির জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করা।’
এসময় তিনি ইমামদের প্রতি যার যার এলাকায় সালাতুল ইসতিসকা নামাজের জন্য অনুরোধ করেন। পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষায় সবাইকে গাছ লাগানোর আহবান জানান।
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, আমরা প্রত্যেকে অন্তত ৫টি করে গাছ লাগানোর দায়িত্ব নিতে পারি। কারণ দেশে যে পরিমাণ মানুষ রয়েছে সে পরিমাণ উদ্ভিদ নেই। সেই অভাবটা দূর করতে হবে। চারাগুলোর পরিচর্যারও আহ্বান করেন তিনি। বলেন, শুধু চারা রোপন করা নয়, সেগুলোর পরিচর্যাও করতে হবে। আমরা নানাভাবে পরিবেশকে ধ্বংস করেছি, এর প্রায়শ্চিতস্বরূপ তাওবা-ইস্তেগফার ও প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করা উচিত।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
নয় বছর পর ইরানিদের ওমরাহ পালনের সুযোগ
দীর্ঘ ৯ বছর পর পবিত্র ওমরাহ পালনের সুযোগ পেয়েছেন ইরানের নাগরিকেরা। ইরানের ওপর সৌদি আরবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর প্রথম দফায় ৮৫ জন ইরানি ধর্মীয় এ বিধান পালনের সুযোগ পেলেন। ওমরাহযাত্রীদের বহনকারী উড়োজাহাজটি সোমবার (২২ এপ্রিল) তেহরানের ইমাম খামেনি বিমানবন্দর থেকে রওনা দেয়। ২০১৬ সালের পর এটিই প্রথম কোনো ফ্লাইট।
তেহরানের বিমানবন্দরে ওমরাহযাত্রীদের বিদায় অনুষ্ঠানে ইরানে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ বিন সৌদ আল-আনজি উপস্থিত ছিলেন। তিনি আল্লাহর দরবারে তাদের সফলতার দোয়া করেন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনার বরাতে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে ২০১৬ সাল থেকে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। ওই বছর সৌদি আরব এক শিয়া নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। পরে তেহরানের সৌদি দূতাবাসে হামলা হয়। এ ঘিরে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে।
পরে গত বছর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়। এর প্রেক্ষিতে গত বছরের ডিসেম্বরে ইরানিদের ওমরাহ পালনে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় সৌদি আরব। কিন্তু এরপরও ওমরাহযাত্রীদের নিয়ে তেহরান থেকে কোনো ফ্লাইট সৌদি আরবে যায়নি। ইরান এর জন্য কারিগরি সমস্যার কথা বলে আসছিল।
রয়টার্স বলছে, গত বছর সম্পর্ক পুনরায় শুরু হওয়ার আগে ইরানিরা শুধু হজ পালন করতে সৌদিতে যেতে পারতেন। তবে এবার নয় বছর পরে ওমরাহ পালনের সুযোগ পেলেন তারা।
এমআই