Connect with us

অর্থনীতি

ওয়ারেন বাফেটের বেড়ে ওঠা-জীবন-বিয়ে ও বিনিয়োগের যত কাহিনি

Published

on

বসুন্ধরা

আগামী ৩০ আগস্ট তাঁর বয়স হবে ৯৪ বছর। এখনো খেতে পছন্দ করেন চিজ বার্গার আর চেরি কোকাকোলা। চুটিয়ে কন্ট্রাক্ট ব্রিজ খেলেন। ‘ব্রেকিং ব্যাড’ ওয়েব সিরিজের দারুণ ভক্ত। ৬৫ বছর ধরে একটি বাসাতেই থাকেন। লেনদেন করেন নগদ অর্থে। আর যা আয় করেন, বিলিয়ে দেন তার প্রায় সবটাই।

বলছি ওয়ারেন বাফেটের কথা, বিশ্বের সেরা বিনিয়োগকারী। তিনি এমন এক মানুষ, যাঁর কোনো শত্রু নেই বললেই চলে। নামটা যেন কেবলই ভালো লাগা আর শ্রদ্ধার। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১১ সালে তাঁর গলায় প্রেসিডেনশিয়াল গোল্ড মেডেল পরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘ওয়ারেন বাফেট কেবল একজন শীর্ষ ধনীই নন, একই সঙ্গে অন্যতম শ্রদ্ধেয় ও ভালোবাসার মানুষ।’ ভালোবেসে তাঁকে ডাকা হয় ‘ওমাহার জাদুকর’।

ওয়ারেন বাফেট এখন বিশ্বের ষষ্ঠ শীর্ষ ধনী, বার্কশায়ার হ্যাথঅ্যাওয়ের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। আবার কেউ কেউ বলেন, বাফেট যত ভালো বিনিয়োগকারী, তার চেয়েও ভালো ম্যানেজার বা ব্যবস্থাপক। বাফেট যেখানে বিনিয়োগ করেন আর যেভাবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালান, সেটাকেই আদর্শ মানা হয়। আসলে বিনিয়োগকারী হিসেবে তিনি কিংবদন্তিতুল্য আর ব্যবস্থাপক হিসেবে প্রথম শ্রেণির। ফোর্বস পত্রিকার ২০২৪ তালিকা অনুযায়ী বাফেটের সম্পদের পরিমাণ এখন ১৩৩ বিলিয়ন ডলার বা ১৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৫ লাখ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের বাজেট কত জানেন তো? ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।

ওয়ারেন বাফেটের আরেকটি বড় পরিচয় হচ্ছে, তিনি এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় জনহিতৈষীদের একজন। ২০০৬ সালে তিনি তাঁর সম্পদের ৯৯ শতাংশই দানের ঘোষণা দিয়েছিলেন। আর এখন পর্যন্ত দান করেছেন প্রায় ৫৬ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।

যেভাবে বেড়ে ওঠা
ওয়ারেন বাফেটের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্যের ওমাহায়, ১৯৩০ সালের ৩০ আগস্ট। হাওয়ার্ড ও লেইলা বাফেট দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। হাওয়ার্ড দম্পতি বিয়ে করেছিলেন ১৯২৫ সালে। বড় বোন ডরিসের জন্ম ১৯২৮ সালে আর ছোট বোন বার্টি ওয়ারেন বাফেটের চেয়ে তিন বছরের ছোট।

বাবা হাওয়ার্ড বাফেট ছিলেন শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারী। তাঁর শেয়ার কেনাবেচার একটি ব্রোকারেজ ছিল। ছোটবেলায় দেখতেন, বাবা একগাদা কাগজ নিয়ে রাতে বাসায় ফিরছেন। একদিন মাকে জিজ্ঞেস করলেন, তাঁর বাবা আসলে কী করেন? মা বলেছিলেন, ইনভেস্টর। তখনই তিনি ঠিক করে ফেললেন, তাঁকেও ইনভেস্টর হতে হবে। ছয়-সাত বছর বয়সেই স্কুলের খাতায় নিজের নাম লিখে রেখেছিলেন ‘ওয়ারেন বাফেট: ফিউচার ইনভেস্টর’। বাফেট সেটাই হয়েছেন।

বিনিয়োগকারী হতে ছেলের অদম্য আগ্রহ দেখে বাবা হাওয়ার্ড বাফেট পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘বড় বিনিয়োগকারী হতে চাইলে নিজের একটি ব্যবসা ভাবতে শেখো, নিজের সম্পদমূল্য বাড়িয়ে তোলো।’ এ কথা বাফেট বড় হয়েও মনে রেখেছেন। মূলত, বিনিয়োগকারী হওয়ার বীজ ওয়ারেনের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর বাবাই।

একদম ছেলেবেলাতেই ওয়ারেন তাঁর বাল্যবন্ধুকে বলে রেখেছিলেন, ৩৫ বছর বয়সে তিনি লাখপতি বা মিলিয়নিয়ার হবেন। আর এ লক্ষ্যেই মাত্র ১১ বছর বয়সে প্রথম শেয়ারটি কিনেছিলেন। পরে সিএনবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘আমি শুরুই করেছি দেরিতে। জানি না এতটা সময় কেন নষ্ট করেছিলাম।’

দাদার ছিল মুদির দোকান। ওয়ারেন বাফেট সেই বয়সেই নিজের সম্পদমূল্য বাড়াতে সপ্তাহে ৫ ডলার বেতনে দাদার দোকানে কাজ নেন। মাত্র ছয় বছর বয়সেই দাদার দোকান থেকে ২৪ সেন্টে ৬ প্যাকেট কোকাকোলা কিনে একটু দূরে গিয়ে বিক্রি করে ৫ সেন্ট মুনাফা করেছিলেন। এরপর কিছু অর্থ জমিয়ে ১১ বছর বয়সে ৩৮ ডলার করে সিটিজ সার্ভিসের ৬টি শেয়ার কেনেন। এর তিনটি শেয়ার দিয়ে দেন বোনকে। তবে জীবনের প্রথম শেয়ার ব্যবসা শুরুতে হতাশ করেছিল তাঁকে। কিছুদিনের মধ্যেই শেয়ারের দাম কমে ২৭ ডলার হয়ে যায়। কিন্তু তিনি অপেক্ষা করেছেন। দর বেড়ে ৪০ ডলার হতেই বিক্রি করে দেন। তিনি এখনো মানেন, সেটি ছিল তাঁর ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ, কিছুদিনের মধ্যেই ওই শেয়ারের দাম আরও বেড়ে ২০০ ডলার হয়ে যায়। সেই ঘটনা থেকে তিনি বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় শিক্ষাটা পেয়েছিলেন। আর তা হলো অধ্যবসায়, যার প্রতিফলন পুরো জীবনেই ছিল।

ছোটবেলায় সম্পদ বাড়াতে ওয়ারেন বাফেট বাড়ি বাড়ি গিয়ে চুইংগাম, পত্রিকা, কোকাকোলাও বিক্রি করেছেন। পাড়ার সেলুনের সামনে বন্ধুরা মিলে একটা পোকার খেলার মেশিনও বসিয়েছিলেন। এ সময় বাবা ওয়ারেনের নামে একটি ব্যাংক হিসাবও খুলে দিয়েছিলেন। একসময় ব্যাংক থেকে নোটিশ এল যে ওয়ারেন বাফেটের নামে কিছু ডলার জমা পড়েছে। ফলে এখন আয়কর দিতে হবে। ছেলেকে বললেন আয়কর দিতে। কারণ, তখন থেকেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শিখতে হবে। বাফেটের বয়স তখন মাত্র ১৪ বছর। বয়স কম হওয়ায় স্থানীয় আয়কর বিভাগ ৩৫ ডলার ফেরত দিলে বাফেট তা দিয়ে একটি বাইসাইকেল কিনেছিলেন। সেই বাইসাইকেল তিনি চালাতেন বিশ্ববিদ্যালয়জীবনেও।

ওয়াশিংটন–যাত্রা
ওয়ারেন বাফেটের জন্ম ১৯৩০ সালে। ১৯৩০-এর পুরো দশকই ছিল গ্রেট ডিপ্রেশন বা মহামন্দার কাল। লাখ লাখ মানুষ তখন বেকার। বিনিয়োগেও চরম মন্দা। বিনিয়োগকারী হিসেবে সিনিয়র বাফেট সিদ্ধান্তে এলেন যে গন্ডগোলটা আসলে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের। তখন ঠিক করলেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়েই সরকারকে প্রভাবিত করতে হবে। নির্বাচনে দাঁড়ালেন। ১৯৪৩ সালে তিনি নেব্রাস্কা সেকেন্ড ডিস্ট্রিক্ট থেকে ইউএস হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের সদস্য নির্বাচিত হলেন। মাঝখানে একবার বাদ দিয়ে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন কংগ্রেসে। ফলে ১৯৪৩ সালেই বাবার সঙ্গে ওমাহা ছেড়ে ওয়াশিংটনে চলে যান তিনি। ওয়ারেন বাবার সঙ্গে ওয়াশিংটন এসেছিলেন ১২০ ডলার হাতে নিয়ে। কিন্তু যখন ওয়াশিংটন ছেড়ে চলে যান, তখন তাঁর সেই বিনিয়োগ বেড়ে হয়েছিল ১০ হাজার ডলার।

বাফেটের স্কুলজীবন শেষ হয় ১৭ বছর বয়সে, ১৯৪৭ সালে। কলেজে যাওয়ার কোনো ইচ্ছাই তাঁর ছিল না। কিন্তু বাবার ইচ্ছা ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার ওয়ারটন বিজনেস স্কুলে পড়বেন বাফেট। সেখানে ছিলেনও দুই বছর। একসময় ফিরে আসেন ওমাহায়। বাফেট পড়তে চেয়েছিলেন হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে। কিন্তু তাঁকে নেওয়া হয়নি। এখন পর্যন্ত হার্ভার্ডের ভর্তির নিকৃষ্টতম প্রত্যাখ্যানের উদাহরণ হিসেবে ধরা হয় এটাকেই।

প্রত্যাখ্যানের গল্প
নেব্রাস্কা ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পরে ওয়ারেন বাফেট হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে পড়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। ভর্তির জন্য সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল শিকাগোতে। ১০ মিনিট সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর তাঁকে বাতিল করে দেওয়া হয়। এক অনুষ্ঠানে বাফেট এ নিয়ে বলেছেন, ‘আমার প্রতিক্রিয়া ছিল বাবাকে কীভাবে এটা বলব। তবে সেই প্রত্যাখ্যানই ছিল জীবনে অন্যতম সেরা ঘটনা।’ কেননা, এর ফলে তাঁর সামনে কলাম্বিয়া বিজনেস স্কুলে যাওয়ার দরজা খুলে গিয়েছিল।

অনেক ছেলেবেলা থেকে বিনিয়োগ নিয়ে পড়াশোনা করতেন বলে দুই নামী অধ্যাপকের নাম জানতেন। তাঁরা হলেন বেনজামিন গ্রাহাম বা বেন গ্রাহাম এবং ডেভিড ডড। ওয়ারেন বাফেট এ নিয়ে বলেছেন, ‘আমি তাদের দুজনের বই পড়েছি। সে কারণে আমি তাদের চিঠি লিখলাম। লিখলাম, “প্রিয় অধ্যাপক ডড, আমি ভেবেছিলাম তোমরা দুজন বেঁচে নেই। কিন্তু এখন দেখছি তোমরা বেঁচে আছ এবং কলাম্বিয়ায় পড়াচ্ছ। আমি আসলেই এখানে আসতে চাই।” তাঁরা আমাকে সেখানে নিলেন। তাঁরা দুজনেই অত্যন্ত ভালো শিক্ষক। বিশেষ করে বেন গ্রাহাম আমাকে জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষাটা দিয়েছিলেন, যা আজীবন কাজে লেগেছে। বলেছিলেন, “বিনিয়োগ করার দুটি নিয়ম আছে। এক হচ্ছে কখনো অর্থ লোকসান দেবে না, আর দ্বিতীয় নিয়ম হচ্ছে, প্রথম নিয়মটা কখনো ভুলবে না।”’

১৯৪৯ সালে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে চলে যান কলাম্বিয়া বিজনেস স্কুলে। বেনজামিন গ্রাহামের দ্য ইন্টেলিজেন্ট ইনভেস্টর এখনো ওয়ারেন বাফেটের অন্যতম প্রিয় বই। গ্রাহামকে আকৃষ্ট করার জন্য বইটি সম্পূর্ণ মুখস্থ করেছিলেন তিনি। বাফেটই ছিলেন বেন গ্রাহামের একমাত্র ছাত্র, যিনি পরীক্ষায় এ প্লাস পেয়েছিলেন। লেখাপড়া শেষ করার পর বাফেট চেয়েছিলেন গ্রাহামের সঙ্গে কাজ করবেন। কিন্তু ইহুদি না হওয়ায় প্রথমে তিনি তাঁকে নিতে চাননি। পরে অবশ্য সুযোগ পান বাফেট। আর এখান থেকেই শুরু হয়েছিল ওপরে ওঠার।

বেনজামিন গ্রাহামকে নিয়ে আরেকটি মজার গল্প আছে। একবার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে ওয়াশিংটনের ট্রেনে উঠে পড়েছিলেন বাফেট। হুজ হুর পুরোনো একটি সংস্করণ পড়ে জেনেছিলেন, বেন গ্রাহাম গেইকো নামে একটি ছোট বিমা কোম্পানির চেয়ারম্যান। ওয়াশিংটনে নেমে তিনি হাজির হন গেইকোর অফিসে। সেদিন ছিল শনিবার। গিয়ে দেখেন দরজা বন্ধ। দমলেন না। বেল বাজিয়েই চললেন। একসময় কেউ একজন দরজা খুলে দিলেন। ভেতরে তখনো একজন কাজ করছিলেন। বাফেট প্রথমেই তাঁর কাছে জানতে চাইলেন বিমা কোম্পানিটির কাজের ধরন নিয়ে। সেই কথাবার্তা স্থায়ী হয়েছিল দীর্ঘ চার ঘণ্টা। লোকটি ছিল গেইকোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লরিমার ডেভি ডেভিডসন। চার ঘণ্টার সেই আলাপও বাফেটের জীবনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছিল। সেই যে বিমা ব্যবসা পছন্দ করা শুরু করেন, তা আজও আছে।

বাফেট এখন গেইকোর মালিক। আর প্রতিষ্ঠানটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় একটি বিমাপ্রতিষ্ঠান। পরে এক সাক্ষাৎকারে ওয়ারেন বলেছিলেন, সেই চার ঘণ্টার আলাপে যা শিখেছিলেন, তা ছিল কলেজজীবনের শিক্ষার চেয়েও বেশি।

বিয়ে এবং আলাদা থাকা
কলাম্বিয়া থেকে ফিরে এসে ওয়ারেন বাফেট বিয়ে করেন ১৯৫২ সালে, ওমাহায়। সুজান টমসন ছিলেন ছোট বোন বার্টির কলেজের বন্ধু। তবে এই দম্পতি আলাদা বসবাস শুরু করেছিলেন ১৯৭৭ সালে। সুজান সে সময় সান ফ্রান্সিসকো চলে যান তাঁর নিজের সংগীত পেশাকে এগিয়ে নিতে। ২০০৪ সালে সুজান মারা যান, তখনো তাঁরা বিবাহিতই ছিলেন।

২০০৬ সালের ৩০ আগস্ট ওয়ারেন বাফেট দ্বিতীয়বারের মতো বিয়ে করেন অ্যাস্ট্রিড মেংক্সকে। এখানেও একটা গল্প আছে। সুজান ক্যালিফোর্নিয়া চলে যাওয়ার আগে প্রিয় বান্ধবী অ্যাস্ট্রিডকে স্বামীর তদারকির দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন। তখন থেকেই অ্যাস্ট্রিড ছিলেন ওয়ারেনের সঙ্গী। বাফেটের ৭৬তম জন্মদিনের দিন তাঁরা বিয়ে করেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগে অ্যাস্ট্রিডের প্রশংসা করে সুজান বলেছিলেন, ‘সে বাফেটের খুব যত্ন করে। যার প্রশংসা সে করে, আমিও করি।’

প্রথম কোম্পানি আর একমাত্র বাড়ি
গুরু বা মেন্টর বেন গ্রাহামের সঙ্গে ওয়ারেন কাজ করেন দুবছর। ১৯৫৬ সালে ফিরে আসেন ওমাহায়। বয়স তখন তাঁর ২৫। ফিরে এসে প্রথম অংশীদারত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগ ব্যবসা শুরু করেন। সেই কোম্পানির নাম ছিল বাফেট পার্টনারশিপ লিমিটেড। অংশীদারদের মধ্যে ছিলেন নিজের শ্বশুর, বোন ডরিস, খালা অ্যালিস এবং একজন কলেজের বন্ধু। শুরুতে মোট বিনিয়োগ ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ডলার, এর মধ্যে মাত্র ১০০ ডলার ছিল ওয়ারেনের। কোম্পানিতে ওয়ারেনের ফি ছিল ৪ শতাংশের বেশি লাভ হলে তার ৫০ শতাংশ। আর ক্ষতি হলে তার ২৫ শতাংশ বহন করবেন ওয়ারেন।

বিনিয়োগ ব্যবসায় ভালোই লাভ করেছিলেন তাঁরা। দুই বছর পরই ওমাহায় ৩১ হাজার ৫০০ ডলার দিয়ে একটি বাড়ি কেনেন তিনি। বিশ্বের একজন শীর্ষ ধনী হওয়া সত্ত্বেও পরের ৬৫ বছর ধরে সেই বাড়িতেই তিনি জীবন কাটাচ্ছেন। ৬ হাজার ৫৭০ বর্গফুটের সেই বাড়িতে কক্ষ পাঁচটি। বার্কশায়ার অফিসের খুব কাছেই এই বাড়ি। ১৯৭১ সালে অবশ্য ক্যালিফোর্নিয়ার লেগুনা বিচে একটি অবসরযাপন কেন্দ্র কিনেছিলেন বাফেট, পরে সেটি বিক্রি করে দেন।

২০১৪ সালে বার্কশায়ারের বার্ষিক সভায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি যা চাই, তার সবই আমার জীবনে আছে। তবে আমার জীবন এত সুখের থাকত না, বরং আরও খারাপ হতো, যদি আমার ছয় বা আটটা বাড়ি থাকত।’

বন্ধুত্ব–১: বাফেট ও চার্লি মাঙ্গার
দুজন মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব না হলে ওয়ারেন বাফেটের জীবনও হয়তো অসম্পূর্ণ থেকে যেত। তাঁদের একজন হচ্ছে চার্লি মাঙ্গার। চার্লি মাঙ্গার না থাকলে বাফেট হয়তো এত দূর আসতে পারতেন না। চার্লির সঙ্গে দেখা হওয়া ও বন্ধুত্ব ওয়ারেনের জীবনের অন্যতম বড় ঘটনা। নিজেদের নিয়ে তাঁরা কৌতুক করে বলেন, ‘দুজনে দুজনার’। ৬০ বছরের বন্ধুত্ব ছিল তাঁদের, একটি দিনের জন্যও মন-কষাকষি হয়নি।

চার্লি মাঙ্গারের সঙ্গে বাফেটের প্রথম দেখা হয়েছিল ১৯৫৯ সালে এক নৈশভোজে। অবশ্য আগে থেকেই তিনি চার্লিকে জানতেন। বাফেট অ্যান্ড সন্স নামে বাফেটের দাদার মুদির দোকানে কিছুদিন কাজ করেছিলেন চার্লি। তবে বন্ধুত্বের শুরু সেই নৈশভোজের টেবিল থেকেই।

কেন চার্লি মাঙ্গারকে ভালো লেগেছিল? বাফেট এক বক্তৃতায় বলেছেন, মাঙ্গার নিজে কৌতুক বলে নিজেই হাসিতে প্রায় গড়াগড়ি খাচ্ছিলেন দেখে মনে হয়েছিল, এই লোকটি ঠিক তাঁর মতোই। সুতরাং অন্য কোনো বন্ধু খোঁজার আর দরকার নেই। সেই থেকে পরের বছরগুলোয় তাঁরা একসঙ্গে সবকিছু করেছেন। অনেক কিছু শিখেছেনও।

মাঙ্গার ছিলেন মূলত আইনবিদ। হার্ভার্ড ল স্কুল থেকে পাস করে পরিবারসহ ক্যালিফোর্নিয়া চলে গিয়েছিলেন। অপারেশন করাতে গিয়ে একটা চোখ হারান। অন্য পেশায় থাকলেও দুজনের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। পরে বাফেট রাজি করিয়েছিলেন আইন পেশা ছেড়ে তাঁর সঙ্গে যোগ দিতে। ১৯৭৮ সালে বার্কশায়ার হ্যাথঅ্যাওয়ের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন মাঙ্গার।

সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাফেটের ওপর যথেষ্ট প্রভাব ছিল মাঙ্গারের। যেমন একটা সময় প্রযুক্তি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা নিয়ে ঘোর আপত্তি ছিল বাফেটের। কারণ, প্রযুক্তি কোন দিকে যাবে, তিনি তার পূর্বাভাস দিতে পারতেন না। মাঙ্গার তাঁকে রাজি করান প্রযুক্তি কোম্পানিতে বিনিয়োগে। এরপরই অ্যাপল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বার্কশায়ার। আজকে বার্কশায়ারের এত অগ্রগতির বড় কারণ অ্যাপলের মুনাফা। ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর ৯৯ বছর বয়সে মারা যান চার্লি মাঙ্গার।

বার্কশায়ার গঠনের নেপথ্যে
ওয়ারেন বাফেট এখন বার্কশায়ার হ্যাথঅ্যাওয়ের হ্যাঙ্গারের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ডুবতে থাকা এ প্রতিষ্ঠান তিনি কিনেছিলেন ১৯৬৫ সালের ১০ মে। কেনার গল্পটিও অনেক মজার। শুরুতে এটি ছিল বস্ত্র কারখানা। ১৮৩৯ সালে এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অলিভার চেস। তখন এর নাম ছিল ভ্যালি ফলস কোম্পানি। ১৯২৯ সালে বার্কশায়ার কটন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির সঙ্গে একীভূত হয় ভ্যালি ফলস কোম্পানি। এর নাম হয় বার্কশায়ার ফাইন স্পিনিং অ্যাসোসিয়েটস। ১৯৫৫ সালে এই কোম্পানি আবারও একীভূত হয় হ্যাথঅ্যাওয়ে ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির সঙ্গে। শুরুতে ভালো করলেও পরে ব্যবসা খারাপ হতে থাকে। তখন এটি চালাতেন সিব্যারি স্ট্যানটন নামের আরেক মার্কিন ব্যবসায়ী।

১৯৬২ সালে ওয়ারেন বাফেট প্রথম বার্কশায়ার হ্যাথঅ্যাওয়ের শেয়ার কেনা শুরু করেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন যে এর শেয়ারদর বাজার পরিস্থিতির তুলনায় কম। তবে যে প্রত্যাশা নিয়ে ওয়ারেন শেয়ার কিনেছিলেন, তা পূরণ হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা খারাপ হতে থাকে। ১৯৬৪ সালে সিবারি স্ট্যানটন মৌখিকভাবে ওয়ারেনকে প্রস্তাব দেন যে তিনি সাড়ে ১১ ডলারে শেয়ারগুলো কিনে নেবেন, অর্থাৎ বাইব্যাক করবেন। ওয়ারেন সম্মত হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্ট্যানটন বাইব্যাকের যে নথি পাঠান, সেখানে শেয়ারের দর লেখা ছিল ১১ দশমিক ৩৭৫ ডলার। এতে তিনি খুবই ক্ষুব্ধ হন। ফলে শেয়ার বিক্রি না করে বার্কশায়ারের আরও শেয়ার কেনার সিদ্ধান্ত নেন। উদ্দেশ্য ছিল কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্ট্যানটনকে শাস্তি দেওয়া। শেষ পর্যন্ত তা-ই করেছিলেন। মালিকানার কর্তৃত্ব নিয়েই স্ট্যানটনকে বরখাস্ত করেন বাফেট।

ওয়ারেন বাফেটও এটা বস্ত্রকল হিসেবেই চালিয়েছেন। ১৯৬৭ সালে এসে এর সম্প্রসারণ ঘটান। আস্তে আস্তে একটিকে একটি হোল্ডিং কোম্পানিতে পরিণত করেন। সবার আগে বিমাশিল্পে প্রবেশ করেন তিনি। প্রথমে ন্যাশনাল ইনডেমনিটি কোম্পানি নামে একটা বিমা প্রতিষ্ঠান কিনে নেন। পরে কেনেন গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি (জিইআইসিও বা গেইকো)। মূলত, বার্কশায়ার হ্যাথঅ্যাওয়ের উত্থান এই বিমা কোম্পানির মাধ্যমেই। ১৯৮৫ সালে ওয়ারেন বস্ত্রকলের কার্যক্রম একেবারেই বন্ধ করে দেন।

এখনো ওয়ারেন বাফেট মনে করেন, বার্কশায়ার হ্যাথঅ্যাওয়ের মতো বস্ত্রকলে বিনিয়োগ হচ্ছে তাঁর সবচেয়ে বড় ভুল; যদিও এখানে বিনিয়োগ করে এখন পর্যন্ত তিনি মুনাফা পেয়েছেন ২০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই বিনিয়োগ অন্য কোথাও করলে মুনাফা আরও বেশি হতো।

ওয়ারেন বাফেট ১৯৭২ সালে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ছোট্ট একটা চকলেট কোম্পানি কিনে নিয়েছিলেন মাত্র ২৫ মিলিয়ন ডলারে। সি’জ ক্যান্ডি নামের সেই কোম্পানি কেনা ছিল ওয়ারেনের অত্যন্ত প্রিয় বিনিয়োগ, যাকে তিনি বলেন স্বপ্নের ব্যবসা।

ওয়ারেন বাফেটের আরেকটি মাইলস্টোন ছিল ১৯৮৩ সাল। সে বছর বার্কশায়ার হ্যাথঅ্যাওয়ের শেয়ারের দর প্রথমবারের মতো ১ হাজার ডলার হয়। বাফেটের প্রিয় পানীয় চেরি কোকাকোলা। ১৯৮৮ সালে তিনি কোকাকোলা কোম্পানির শেয়ার কেনেন। এর পর থেকে তো বার্কশায়ার হ্যাথঅ্যাওয়ে একের পর এক মাইলস্টোন অর্জন করে বিশ্বের অন্যতম সেরা কোম্পানিতে পরিণত হয়।

বন্ধুত্ব–২: বাফেট ও বিল গেটস
এবার আরেক বন্ধুত্বের গল্প।
দিনটি ছিল ১৯৯১ সালের ৫ জুলাই। এই দিন ওয়ারেন বাফেটের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় বিশ্বের আরেক শীর্ষ ধনী বিল গেটসের। অথচ বিল গেটস সেদিন ওয়াশিংটনের সেই নৈশভোজে যেতেই চাননি। মায়ের অনুরোধে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। ওয়ারেন বাফেটকে নিয়ে বিল গেটসের বহু লেখার একটি হচ্ছে ‘হোয়াট আই লার্নড ফ্রম ওয়ারেন বাফেট’। লেখাটি ১৯৯৬ সালে হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউতে প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে সেই রাতের বর্ণনা দিয়েছেন বিল গেটস।

বিল গেটস সেখানে লিখেছেন, এমন একজন লোকের সঙ্গে দেখা হবে, যিনি শুধু শেয়ার নিয়েই কথা বলবেন—বিষয়টা মোটেই ভালো লাগছিল না তাঁর। শেষ পর্যন্ত যেতে রাজি হয়েছিলেন, কারণ পারিবারিক সেই অনুষ্ঠানে ওয়াশিংটন পোস্ট-এর মালিক-প্রকাশক ক্যাথরিন গ্রাহামও থাকবেন—এই কথা শুনে। ক্যাথরিনের সঙ্গে এর আগে কখনো আলাপ হয়নি। ক্যাথরিন ছিলেন ওয়ারেনের ভালো বন্ধু।

সেখানেই ওয়ারেনের সঙ্গে বিল গেটসের আলাপ শুরু। বিল গেটস লিখেছেন, কথা ছিল সৌজন্যের খাতিরে মাত্র কয়েক ঘণ্টা থাকবেন। কিন্তু দুজনে এমনই জমে গেলেন যে পুরোটা দিন গল্প করে কাটিয়ে দিলেন। কেবল তা-ই নয়, বিল গেটস কথা দিলেন, শিগগিরই তাঁরা ফুটবল খেলা দেখতে নেব্রাস্কায় যাবেন।

সেই যে বন্ধুত্বের শুরু, আজও তা অমলিন। ওয়ারেন বাফেটের সেরা অনুরাগীর নাম আসলে বিল গেটস।

জীবনের নতুন অধ্যায়
২০০৯ সালের মার্চ মাসের শুরুর একদিন বিল গেটস আসেন ওমাহায়। এয়ারপোর্টের কাছাকাছি একটি রেস্তোরাঁয় ওয়ারেন বাফেট আর গেটস একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেন। সেটা ছিল নতুন এক আলোচনার সূত্রপাত। এরপর বিল গেটস আর ওয়ারেন বাফেট ২০০৯ সালের ৪ মার্চ যৌথভাবে একটি চিঠি লেখেন আরেক শীর্ষ ধনী ডেভিড রকফেলারকে। চিঠিতে তাঁকে একটি নৈশভোজে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। চিঠিতে লেখা ছিল, ‘প্রিয় ডেভিড, জনকল্যাণকর কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা দুজন অনেক আলাপ-আলোচনা করেছি। আমরা ভাবছিলাম, আমাদের সমমনা বারোজনের মতো মানুষের সবাই একসঙ্গে একই আলোচনার টেবিলে বসতে পারলে খুব ভালো হয়। আমাদের লক্ষ্য হবে নিজেদের বিভিন্ন দিক শেয়ার করা। সেই সঙ্গে এটাও আলাপ করে দেখা যে যাঁরা এখনো একই পর্যায়ে আসেননি, তাঁদের সমর্থন জোগাতে ও উৎসাহিত করতে আরও বেশি কিছু করা যায় কি না। আমরা দুজনই আপনি এবং আপনার পরিবার দাতব্যকাজে যে সম্মিলিত স্পৃহার জন্ম দিয়েছেন, তার প্রশংসা করি। সে কারণেই আমরা শুরুতেই আপনার কাছে যেতে চাই আমাদের এই আলোচনা আয়োজনে আপনি আগ্রহী হবেন কি না, তা বুঝতে।’

চিঠি পেয়েই তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হন ডেভিড রকফেলার। এরপর ২৪ মার্চ এই তিনজনের স্বাক্ষরে আরেকটি চিঠি পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের আরও কয়েকজনের কাছে। এরপর বহুল আকাঙ্ক্ষিত নৈশভোজটি অনুষ্ঠিত হয় সে বছরের ৫ মে, রকফেলার ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট হাউসে। এই উদ্যোগে শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন বিল গেটসের তৎকালীন স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ওই সব সেরা ধনী, যাঁরা সম্পদের একটি বড় অংশ যেকোনো ধরনের ভালো কাজে দান করতে আগ্রহী, তাঁদের একত্র করে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া।

ওই নৈশভোজের পরই জনসেবা বা জনহিতকর কাজে দানের বিষয়টি নতুন এক ইতিহাস তৈরি করে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় তহবিল সংগ্রহের কাজটি শুরু হয় এর পর থেকেই। তাঁদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ফোর্বস-এর তালিকার চার শ মার্কিন ধনীকে উদ্বুদ্ধ করা, যাতে তাঁরা অন্তত অর্জিত সম্পদের অর্ধেক দান করেন। এরপরই ২০১০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হয় একটি নতুন উদ্যোগের, নতুন কর্মসূচির। তার আনুষ্ঠানিক নাম ‘দ্য গিভিং প্লেজ’ বা ‘দানের অঙ্গীকার’।

এমন নয় যে এর আগে কোটিপতিরা দান করতেন না। যেমন ২০০৬ সাল থেকেই ওয়ারেন বাফেট তাঁর সম্পদ নানা ধরনের জনহিতকর কাজে বিলিয়ে দিতে শুরু করেছিলেন। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে বাফেট সহায়তা দিচ্ছেন আগে থেকেই। কিন্তু একটি সম্মিলিত উদ্যোগের ভাবনা থেকেই সৃষ্টি হলো দ্য গিভিং প্লেজের। শর্ত এখানে দুটি। সম্পদের পরিমাণ হতে হবে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি, আর দান করতে হবে সে সম্পদের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ। অবশ্য বিল গেটস তাঁর সম্পদের ৯৫ শতাংশ আর ওয়ারেন বাফেট তাঁর সম্পদের ৯৯ শতাংশ দান করার ঘোষণা দিয়েছিলেন আরও আগেই।

এখন কেমন আছেন
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ওয়ারেন বাফেট প্রকাশ করেন যে তিনি প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত। তবে সেটি ছিল প্রথম পর্যায়ের, ফলে কোনো বিপদ ঘটেনি। ২০১৮ সালে এসে ওয়ারেন বাফেট উত্তরাধিকার বাছাইয়ের কাজটি শুরু করেন। ওই বছরের ১০ জানুয়ারি গ্রেগরি অ্যাবেল এবং অজিত জৈন বার্কশায়ারের ভাইস চেয়ার হিসেবে যোগ দেন। বাফেট এ নিয়ে সে সময় বলেছিলেন, উত্তরাধিকার বাছাই করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এই উদ্যোগ। স্বাস্থ্যগতভাবে তিনি খুব ভালো আছেন। দ্রুতই প্রধান নির্বাহীর পদ ছেড়ে তিনি দিচ্ছেন না। দুজনের মধ্যে অ্যাবেল তদারক করছেন বার্কশায়ারের বিমা ব্যবসার বাইরের অন্য সবকিছু, আর বিমা ব্যবসা দেখছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত অজিত জৈন।

ওয়ারেন বাফেটের তিন সন্তান। আয়ের ৯৯ শতাংশ দান করার অঙ্গীকারের কারণে সন্তানেরা উত্তরাধিকারসূত্রে পাবেন কমই। বাফেট সব সময়ই বলেন, কিছু একটা করার জন্য তিনি সন্তানদের পর্যাপ্ত অর্থ দিয়ে যাবেন। কিন্তু এত অর্থ দিয়ে যাবেন না, যাতে সন্তানদের কিছুই না করতে হয়।

বাফেট চেয়েছেন তাঁর সন্তানেরা জীবনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুক। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন তাঁর সন্তানেরা। প্রথম সন্তান সুজান এলিস বাফেট নিজেই একজন বড় জনহিতৈষী, নিজের নামে একটি ফাউন্ডেশন আছে। জনশিক্ষা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও শিশুদের নিয়ে কাজ করে এই ফাউন্ডেশন। দ্বিতীয় সন্তান হাওয়ার্ড গ্রাহাম বাফেট একজন ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং লেখক। ছোট ছেলে পিটার অ্যান্ড্রু বাফেট একজন সংগীতশিল্পী, সুরকার ও লেখক। সংগীতে তিনি আঞ্চলিক অ্যামি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। লেখক হিসেবেও নিউইয়র্ক টাইমস–এর বেস্ট সেলিং তালিকায় তিনি আছেন।

ওয়ারেন বাফেট প্রত্যেক সন্তানের ফাউন্ডেশনে বার্কশায়ার হ্যাথঅ্যাওয়ের ২১০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ শেয়ার দিয়ে রেখেছেন।

সাধারণ জীবনযাপন
ওয়ারেন বাফেটকে বলা হয় সর্বকালের সেরা বিনিয়োগকারী। আবার একজন ভালো মানুষ হিসেবেও তাঁর সুনাম সর্বত্র। খুব সাধারণ জীবন যাপন করেন। দিন শুরু করেন ভোরবেলা। আট ঘণ্টা ঘুমিয়ে ওঠেন সকাল পৌনে সাতটায়। পড়তে ভালোবাসেন। দিনের পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা কেবল পড়েন। পড়ার তালিকায় থাকে মূলত অর্থনীতির নানা জার্নাল, বিভিন্ন কোম্পানি রিপোর্ট, আর্থিক বিবরণী এবং দৈনিক পত্রিকা। তিনি নিয়মিতভাবে পাঁচটি পত্রিকা পড়েন—ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ও ওমাহা ওয়ার্ল্ড-হেরাল্ড। নিজেই বলেছেন, দিনে তিনি অন্তত ৫০০ পৃষ্ঠা পড়তে চেষ্টা করেন।

বাফেটের কাজের পদ্ধতিও আলাদা। বার্কশায়ার হ্যাথঅ্যাওয়ের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬৫টির বেশি। সব কটি প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা প্রধান নির্বাহী বা সিইও নিয়োগ দেওয়া আছে। তাঁরাই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। বাফেট বলেন, প্রতিষ্ঠানকে সিইও বা ব্যবস্থাপকের হাতেই ছেড়ে দিতে হবে। আর তাঁর কাজ হচ্ছে যোগ্য সিইও বা ম্যানেজার খুঁজে বের করা। তিনি মনে করেন, বিশেষ মানবিক গুণ থাকলেও বুদ্ধিহীন লোকের পক্ষে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। আর আরামপ্রিয় লোকদের ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। কারণ, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তাঁরা ভেঙে পড়েন। একধরনের মানুষ আছেন, যাঁদের কাছে পেশা শুধু উপার্জনের মাধ্যম নয়, ব্যক্তিগত গর্বও বটে। নিতে হবে তাঁদেরই।

নিয়ম মেনে বছরে একবার বার্কশায়ার হ্যাঙ্গারের বার্ষিক সভা হয়। সেই সভার প্রতি দৃষ্টি থাকে সবার। প্রতিবছর এই সভা উপলক্ষে ওয়ারেন বাফেট একটি চিঠি লেখেন। ১৯৬৫ সাল থেকে তিনি প্রতিবছর চিঠি লিখে আসছেন। বলা হয়, সর্বশ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ-পরামর্শ লুকিয়ে থাকে ওয়ারেন বাফেটের ওই বার্ষিক চিঠিতেই। এই চিঠিকে বলা হয় সেরা বিনিয়োগ-সাহিত্য।

ওয়ারেন বাফেটের বিনিয়োগ-পরামর্শের জন্য এখনো সবাই উন্মুখ হয়ে থাকেন। তাঁর বিভিন্ন পরামর্শ নিয়ে আছে অসংখ্য বই। বিনিয়োগ নিয়ে তাঁর কয়েক হাজার উক্তি পাওয়া যায়। এর মধ্যে উত্তরসূরিদের জন্য তাঁর সবচেয়ে ভালো পরামর্শের একটি হচ্ছে—তাঁদের অবশ্যই তিনটি খারাপ দিক থেকে দূরে থাকতে হবে। যাকে তিনি বলেছেন, ‘এবিসি অব বিজনেস ডিকেই’। যেমন অ্যারোগেন্স বা ঔদ্ধত্য, ব্যুরোক্রেসি বা আমলাতন্ত্র এবং কমপ্লাসেন্সি বা আত্মতুষ্টি।

বাফেট বলেন, একজন ভালো ম্যানেজার বড় ফুটবল কোচের মতো। তাঁরা নিজে মাঠে না নেমেও দলকে খেলান ও জিতিয়ে আনেন। আবার জয়ী হওয়ার উপাদান রেখে যান টিমের মধ্যে, যাতে তিনি না থাকলেও জিততে পারে দলটি। বিনিয়োগ করার জন্য তাঁর সেরা পরামর্শ হচ্ছে, যে জিনিস আমি নিজের জন্য কিনব না, তা অন্যকে কেনার উপদেশ দেব না।

চার্লি মাঙ্গারের মৃত্যুর পর বার্কশায়ারে একা হয়ে গেছেন ওয়ারেন বাফেট। তাই এ বছর তিনি চিঠিতে কী লিখবেন, সবার নজর থাকবে সেদিকেই।

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি

ফরিদপুরে ২০০ কোটি টাকার ভুট্টা উৎপাদন

Published

on

বসুন্ধরা

পদ্মা নদীর ফরিদপুরের চরাঞ্চলকে শত শত একর জমি পড়ে থাকত অনাবাদি, চাষ হতো না তেমন কোনো ফসল। তবে পশুখাদ্যের চাহিদা মেটাতে কয়েক বছর আগে চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষ শুরু হলেও সম্প্রতি বছরগুলোয় ভুট্টার আবাদ বেড়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

তথ্যমতে, গত রবি মৌসুমে ফরিদপুরে ছয় হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। শস্যটি উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার টন, যার বাজারমূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা। আর খরিপ-১ মৌসুমে ৪৪০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও এরই মধ্যে তা দুই হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে গেছে। আবাদ এখনো চলমান। আবাদের অধিকাংশই পদ্মা নদীর চরাঞ্চলকেন্দ্রিক বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

জেলার চরগুলোয় বছরের প্রায় সাত-আট মাস পানি থাকে না। উঁচু এলাকায় বেড়ে ৯-১০ মাস পর্যন্ত গড়ায়। ফলে জমিভেদে এখন বছরে দুই-তিনবার ভুট্টার আবাদ হচ্ছে চরাঞ্চলে। এতেই বাড়ছে ১২০ দিনের ফসলটির আবাদ ও উৎপাদন।

কৃষকরা জানান, প্রতি হেক্টর জমিতে ১০ টনের বেশি ভুট্টা উৎপাদন হয়। মণপ্রতি বিক্রি হয় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। হেক্টরপ্রতি চাষাবাদ খরচ ১০-১২ হাজার টাকা হলেও গড়ে ৪০-৪৫ হাজার টাকার ভুট্টা উৎপাদন হয়। এতে অন্য ফসলের তুলনায় যথেষ্ট লাভবান হচ্ছেন তারা।

এমআই

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

অর্থনীতি

এলপি গ্যাসের নতুন দাম জানা যাবে কাল

Published

on

বসুন্ধরা

তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) মূল্য নির্ধারণ হতে যাচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২ মে)। এদিন এক মাসের জন্য এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা করা হবে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সচিব ব্যারিস্টার মো. খলিলুর রহমান খান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সৌদি আরামকো ঘোষিত মে (২০২৪) মাসের সৌদি সিপি অনুযায়ী এই মাসের জন্য ভোক্তা পর্যায়ে বেসরকারি এলপিজির মূল্য সমন্বয় সম্পর্কে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের নির্দেশনা বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় ঘোষণা করা হবে।

এর আগে টানা আট মাস বাড়ার পর গত ৩ এপ্রিল ভোক্তা পর্যায়ে কমানো হয় এলপিজির দাম। মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিল মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৪০ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ৪৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া, গত মার্চ মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৮ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৪৮২ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ৪১ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৪৭৪ টাকা ও জানুয়ারিতে ২৯ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৪৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

এমআই

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

অর্থনীতি

এপ্রিলের ২৯ দিনে প্রবাসী আয় ১৯০ কোটি ডলার

Published

on

DOLAR

সদ্য সমাপ্ত এপ্রিল মাসের প্রথম ২৯ দিনে দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট ১৯০ কোটি ৮০ ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে প্রবাসী আয়ের এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র মতে, এপ্রিল মাসের প্রথম ১৯ দিনে এসেছিল ১২৮ কোটি ১৫ লাখ ডলার। সে হিসাবে পরের ১০ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ৬২ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। তাতে প্রতিদিন গড়ে প্রবাসী আয় দেশে এসেছে ছয় কোটি ডলার।

সাধারণত, ঈদের মাসে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ স্বাভাবিক মাসের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। এবার, এপ্রিল মাসে ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপিত হয়েছে। কিন্তু এ মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ না বেড়ে বরং সাম্প্রতিক সময়ের অন্য মাসের তুলনায় প্রবাসী আয় শেষ পর্যন্ত খানিকটা কম হয়েছে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। প্রতিবছর ঈদ উপলক্ষে বাড়তি প্রবাসী আয় আসার প্রবণতা লক্ষ করা গেলেও এবার তেমনটা দেখা যায়নি।

এর আগে মার্চ মাসে সব মিলিয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ মার্কিন ডলার। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১০ কোটি ডলার ও ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল।

বেশির ভাগ ব্যাংক এখন ১১৫ থেকে ১১৬ টাকা দরে প্রবাসী আয় কিনছে। তবে সংকটে থাকা কিছু ব্যাংক বেশি দামেও ডলার কিনছে বলে জানা গেছে। যদিও ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম ১১০ টাকা। ফলে আমদানিকারকদেরকে অতিরিক্ত দামে ডলার কিনে আমদানি দায় মেটাতে হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে ভোক্তার ওপর। দেশে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হার এখনো উচ্চ রয়ে গেছে।

এমআই

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

অর্থনীতি

হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

Published

on

বসুন্ধরা

আন্তর্জাতিক মে দিবস উপলক্ষে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বুধবার (১ মে) সকালে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাহিলি কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুর রহমান লিটন।

তিনি বলেন, আজ আন্তর্জাতিক মহান মে দিবস উদযাপিত হচ্ছে। ফলে সরকারিভাবে ছুটি থাকায় দিবসটি উদযাপনে দুই দেশের পরিবহন শ্রমিক, মালিক ও ব্যবসায়ীরা হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। এ কারণে আজ বুধবার সকাল থেকে এই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ মে) থেকে ফের আমদানি-রপ্তানি শুরু হবে বলে জানান তিনি।

এ দিকে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের অফিসার ইনচার্জ শেখ আশরাফুল বলেন, মে দিবস উপলক্ষে বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়াসহ অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও প্রতিদিনের মতো আজও হিলি চেকপোস্ট দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বৈধ পাসপোর্ট-ভিসায় যাত্রীরা চলাচল করছেন।

প্রসঙ্গত, ১৮৮৬ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ওইদিন তাদের আত্মদানের মধ্যদিয়ে শ্রমিক শ্রেণির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এই দিনকে তখন থেকেই সারা বিশ্বে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

অর্থনীতি

এনার্জিপ্যাকের সাথে চীনের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ

Published

on

এনার্জিপ্যাকের সাথে চীনের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ

চীনের আনহুই প্রাদেশিক গণ-কংগ্রেসের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁওয়ের এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন পিএলসির করপোরেট অফিস এনার্জি সেন্টার পরিদর্শন করে। আনহুই প্রাদেশিক গণ-কংগ্রেসের ভাইস চেয়ারম্যান ওয়েই জিয়াওমিংয়ের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ ও চীনের সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে। পাশাপাশি চীনা প্রতিনিধিদল জাতীয় সংসদ, বিসিসিসিআই (বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি) ও ডিএনসিসি (ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন) পরিদর্শন করে।

উৎপাদন খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এনার্জিপ্যাকের কমিটমেন্ট হিসেবে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষায়িত যানবাহন (স্পেশাল পারপাস ভেহিকল) ও বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) অ্যাসেম্বল ও উৎপাদনের ওপর গুরুত্বারোপ করে জ্যাক ও হেলির মতো বৃহৎ চীনা প্রতিষ্ঠানের একমাত্র পরিবেশক হিসেবে এনার্জিপ্যাকের চলমান প্রকল্পগুলোর খুঁটিনাটি প্রতিনিধিদলের সামনে তুলে ধরা হয়।

এ বিষয়ে এনার্জিপ্যাকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হুমায়ূন রশিদ বলেন, বাংলাদেশে আমরা জ্যাক ও হেলির একমাত্র পরিবেশক। আমরা গত প্রায় দুই দশক ধরে তাদের সঙ্গে কাজ করছি এবং প্রতিনিয়ত তাদের নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তি আমাদের বাজারে নিয়ে আসছি। আমরা ইতোমধ্যে বিশ্বখ্যাত হেলি ব্র্যান্ডের ইলেক্ট্রিক লিফটিং মেশিনারিজ আনতে সক্ষম হয়েছি। আগামীতে আরও নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসতে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। শিগগিরই আমরা পরিবেশবান্ধব টেকসই বিদ্যুৎ চালিত (ইলেকট্রিক) বাস ও ট্রাক বাজারে আনতে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য, দেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করার জন্য প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ পরিদর্শনের অংশ হিসেবে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরিদর্শনে বাংলাদেশে বিশেষ করে বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি, বাণিজ্যিক যানবাহন ও কৃষিপ্রযুক্তির মতো উৎপাদন খাতে আনহুই প্রদেশের বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় ওয়েই জিয়াওমিং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় বাংলাদেশের চীনা দূতাবাস ও বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) সমন্বয় ও প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ ও আনহুই প্রদেশের মধ্যে ২০২৩ সালে ৩১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে এবং সামনে এই সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দেশের বিভিন্ন সম্ভাবনাময় খাতে চীনা বিনিয়োগকারীদের প্রবল আগ্রহের বিষয়টি আনহুই প্রতিনিধিদলের এনার্জিপ্যাক অফিস পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। ভবিষ্যৎ সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুই পক্ষই তাদের আশাবাদ ব্যক্ত করে, আগামীতে যা দুই দেশেরই আর্থিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে।

এমআই

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন
Beach Hatchery Ltd
পুঁজিবাজার7 mins ago

বিচ হ্যাচারির ইপিএস বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ

বসুন্ধরা
পুঁজিবাজার8 mins ago

আয় কমেছে বসুন্ধরা পেপারের

বসুন্ধরা
পুঁজিবাজার20 mins ago

লোকসানে ইন্দো-বাংলা ফার্মা

বসুন্ধরা
পুঁজিবাজার37 mins ago

পিপলস লিজিংয়ের প্রথম প্রান্তিক প্রকাশ

বসুন্ধরা
জাতীয়51 mins ago

তিউনিসিয়া থেকে দুপুরে ফিরছে আট বাংলাদেশির মরদেহ

বসুন্ধরা
পুঁজিবাজার57 mins ago

কে অ্যান্ড কিউয়ের আয় বেড়েছে ৮৮ শতাংশ

বসুন্ধরা
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার1 hour ago

স্কুল-কলেজ-মাদরাসা বন্ধ আজ

বসুন্ধরা
জাতীয়1 hour ago

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে রাতেই তিন মামলা

বসুন্ধরা
জাতীয়2 hours ago

বিকেলে বসছে দ্বাদশ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন

বসুন্ধরা
অর্থনীতি11 hours ago

ফরিদপুরে ২০০ কোটি টাকার ভুট্টা উৎপাদন

বসুন্ধরা
লাইফস্টাইল11 hours ago

যেসব গাছ রাখলে ঘর ঠান্ডা থাকে

বসুন্ধরা
স্বাস্থ্য11 hours ago

করোনা টিকা কোভিশিল্ডে ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

বসুন্ধরা
আবহাওয়া11 hours ago

সকালের মধ্যে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস

বসুন্ধরা
আন্তর্জাতিক11 hours ago

চাঁদে যাচ্ছে পাকিস্তান, যাত্রা শুরু শুক্রবার

বসুন্ধরা
জাতীয়12 hours ago

সারাদেশের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি পর্যন্ত কমতে পারে

বসুন্ধরা
জাতীয়12 hours ago

থাইল্যান্ড সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন কাল

বসুন্ধরা
জাতীয়12 hours ago

মিল্টনকে রিমান্ডে নিয়ে সব কিছু বের করা হবে: ডিবি প্রধান

বসুন্ধরা
জাতীয়12 hours ago

শিক্ষকরাই আগামী দিনের স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী

বসুন্ধরা
আন্তর্জাতিক12 hours ago

হংকংয়ে এক রাতে ১০ হাজার বজ্রপাত

বসুন্ধরা
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার12 hours ago

এসএসসি পাসেই সরকারি চাকরির সুযোগ!

বসুন্ধরা
জাতীয়13 hours ago

সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক উন্নতি: স্পিকার

বসুন্ধরা
আন্তর্জাতিক13 hours ago

চীনে গভীর রাতে মহাসড়কে ধসে নিহত ১৯

বসুন্ধরা
জাতীয়13 hours ago

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার

বসুন্ধরা
আন্তর্জাতিক13 hours ago

দুবাইয়ে নির্মিত হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর টার্মিনাল

বসুন্ধরা
জাতীয়14 hours ago

দেশে স্মার্ট শ্রমব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে: প্রতিমন্ত্রী পলক

ফেসবুকে অর্থসংবাদ

২০১৮ সাল থেকে ২০২৩

অর্থসংবাদ আর্কাইভ

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১