অর্থনীতি
পাঁচ ব্যাংকের বোর্ড বাতিল হলেও গ্রাহক সেবায় বিঘ্ন ঘটবে না: গভর্নর
শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংকের বোর্ড বাতিল হলেও গ্রাহকসেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না বলে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ব্যাংকগুলোর পেমেন্ট, রেমিট্যান্স ও এলসিসহ সব ধরনের কার্যক্রম আগের মতোই চলবে।
বুধবার (৫ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মনসুর বলেন, যদিও বোর্ড বাতিল, তবে ব্যাংকগুলোর দৈনন্দিন ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ হবে না। বিজনেস কন্টিনিউ থাকছে। পেমেন্ট, রেমিট্যান্স, এলসি—সব চলবে। আমাদের লক্ষ্য, ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালু রাখা এবং ধাপে ধাপে পাঁচ ব্যাংকের সম্পদ ও আইটি সিস্টেম একীভূত করা।
তিনি বলেন, পাঁচটি ব্যাংকের মোট ৭৫০টি শাখা ও ৭৫ লাখ আমানতকারী রয়েছে। লিকুইডেশন এড়াতে তাদের স্বার্থে প্রথম ধাপেই কাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত একীভূতকরণ শুরু করা হয়েছে।
গভর্নর বলেন, ‘নন-ভায়েবল’ বা টেকসই নয় বলে ঘোষিত পাঁচটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে প্রতিটিতে অস্থায়ী অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগ করা হয়েছে। সকালে ব্যাংকগুলোর কোম্পানি সেক্রেটারিকে ‘নন-ভায়েবিলিটি’ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বোর্ডের কার্যকারিতা বন্ধ হয়েছে—তারা আর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।
গভর্নর বলেন, পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক মিলেই হবে দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক। নতুন এ সমন্বিত ব্যাংকের পেইড-আপ ক্যাপিটাল হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা—যা বর্তমানে দেশের যেকোনো ব্যাংকের তুলনায় অনেক বেশি।
গভর্নর বলেন, এটি সরকারি মালিকানাধীন হলেও বেসরকারি ব্যাংকের মতো পরিচালিত হবে। পেশাদার এমডি, বাজারভিত্তিক বেতন কাঠামো, পৃথক শরিয়াহ বোর্ড গঠন করা হবে। আমরা বিশ্বাস করি—ইসলামিক ব্যাংকিং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।
শেয়ারহোল্ডিং নিয়ে প্রশ্নের জবাবে গভর্নর স্পষ্টভাবে বলেন, শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য এখন নেগেটিভ। তাই শেয়ারের ভ্যালু জিরো বিবেচনা করা হবে। কাউকেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।
আমানতকারীর সুরক্ষা বিষয়ে গভর্নর জনসাধারণকে আশ্বস্ত করে বলেন, ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীরা ১০০ শতাংশ টাকা তুলতে পারবেন। বড় অংকের আমানতের ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে উত্তোলনের সুযোগ থাকবে। এর বিস্তারিত পরবর্তীতে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
তবে তিনি সবাইকে ‘উদ্বেগে না পড়ে শুধু প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ তোলার’ অনুরোধ জানান।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নতুন সরকার পরিবর্তনের পর এ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে কি না—জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, এটি দেশের স্বার্থে নেওয়া সিদ্ধান্ত। সরকার বদলালেও জনগণের স্বার্থেই সিদ্ধান্ত বজায় থাকবে।
অর্থনীতি
অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি কমে ৮.১৭ শতাংশ
দেশে গত অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
আজ বুধবার বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা কমায় মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে। অক্টোবরে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
অন্যদিকে, খাদ্য-বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে অক্টোবরে। সেপ্টেম্বরের ৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ থেকে বেড়ে অক্টোবরে হয়েছে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশে।
অর্থাৎ, খাদ্যপণ্যে কিছুটা স্বস্তি এলেও খাদ্য-বহির্ভূত পণ্য যেমন: পরিবহন, চিকিৎসা ও সেবা খাতে ব্যয় বাড়ছে।
অর্থনীতি
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন আমদানি করবে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ আগামী এক বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন আমদানি করবে। দেশের তিন শীর্ষ সয়াবিন প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান—মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ এবং ডেল্টা অ্যাগ্রো—এই আমদানির চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলের (USSEC) সঙ্গে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি দুই দেশের কৃষি বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন বলেন, “বাংলাদেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজারে পরিণত হয়েছে।” তিনি আরও জানান, এই চুক্তির ফলে আগামী বছরে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন রপ্তানি তিনগুণ বৃদ্ধি পাবে, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করবে।
যুক্তরাষ্ট্র মিশনের মুখপাত্র পূর্ণিমা রায় বলেন, “এই চুক্তি বাংলাদেশ–যুক্তরাষ্ট্র কৃষি বাণিজ্য ও কৌশলগত অংশীদারত্বে একটি নতুন মাইলফলক যুক্ত করেছে।”
অর্থনীতি
আজ যে দামে বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ
দেশের বাজারে আবারও বেড়েছে স্বর্ণের দাম। সর্বশেষ সমন্বয়ে প্রতি ভরিতে ১ হাজার ৬৮০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। নতুন দামে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের মূল্য দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১ হাজার ৭৭৬ টাকা।
শনিবার (১ নভেম্বর) রাতে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দাম বৃদ্ধির এই ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। নতুন দর রবিবার (২ নভেম্বর) থেকে কার্যকর হয়েছে, আর আজ **বুধবার (৫ নভেম্বর)**ও সেই দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে।
বাজুস জানিয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পিওর গোল্ড) দাম বাড়ায় স্বর্ণের নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
আজকের স্বর্ণের বাজারদর:
- ২২ ক্যারেট: প্রতি ভরি ২,০১,৭৭৬ টাকা
- ২১ ক্যারেট: প্রতি ভরি ১,৯২,৫৯৬ টাকা
- ১৮ ক্যারেট: প্রতি ভরি ১,৬৫,০৮১ টাকা
- সনাতন পদ্ধতি: প্রতি ভরি ১,৩৭,১৮০ টাকা
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে ৫% সরকার নির্ধারিত ভ্যাট এবং ৬% বাজুস নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি যোগ করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরি পরিবর্তিত হতে পারে।
অর্থনীতি
একদিনেই পেঁয়াজের দাম বাড়লো কেজিতে ২০ টাকা
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দাম দিনের ব্যবধানে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল ৯০ টাকায় বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ আজ (৪ নভেম্বর) ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে রবি মৌসুমের পেঁয়াজ আসতে দেরি হওয়া এবং ভারতের পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় চাহিদার তুলনায় জোগান কম দেখা যায়। এতে হু হু করে বাড়ছে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম।
রাজধানীর মানিকনগর, মুগদা, গোপীবাগ ও ধলপুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, এসব বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১১০ টাকায়। মুদি দোকানগুলোতে ১০৫ টাকা থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি পেঁয়াজ। তবে এসব বাজারে ভ্যান গাড়িতে ১০০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে।
গোপীবাগ বাজারের আকরাম জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. আকরাম বলেন, ‘বাজারে পেঁয়াজের একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। ভারতের পেঁয়াজ আমদানিও বন্ধ রয়েছে। দেশি পেঁয়াজ চাহিদা অনুযায়ী পাইকারি বাজারে না পাওয়ায় প্রতিদিন দাম বাড়ছে। তিন-চারদিন আগেও ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা দরে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। গতকালও ৯০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ সেটি ১১০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।’
পাইকারি বাজারে মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০৫ টাকা কেজি দরে, যা গত শুক্র-শনিবারও বিক্রি হয়েছে ৭২ থেকে ৮৫ টাকায়।
আড়তদাররা বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বেড়েছে। এছাড়া, রবি মৌসুমের পেঁয়াজ এখনো বাজারে তেমন না আসায় সংকট তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় আমদানি চালু না হলে বাজারে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়তে পারে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আড়তদার মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘এক সপ্তাহের ব্যবধানে আড়তে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি প্রায় ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। মূলত দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ সংকটের কারণে দাম বাড়ছে।’
পেঁয়াজ আমদানিকারক ও শ্যামবাজার পেঁয়াজ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘গত তিন মাস ধরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের সংকট চলছে। দেশে এখন আর পেঁয়াজের তেমন মজুদ নেই। যার কারণে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম। ভারতে এখন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৫ টাকা কেজিতে। তাই দেশে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে দ্রুত আমদানির বিকল্প নেই।’
এ দিকে, পেঁয়াজ চাষীরা বলছেন, এবছর বিভিন্ন জেলায় পেঁয়াজ রোপণ করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। এর ফলে রবি মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসতেও কিছুটা দেরি হচ্ছে। অন্যান্য বছর অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকেই রবি মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করে। এ বছর অনেক জেলায় এখনো পেঁয়াজ জমি থেকে উত্তোলন সম্ভব হয়নি।
অর্থনীতি
মার্কিন শুল্ক সুবিধা পেতে দ্রুত পদক্ষেপের আহ্বান বিজিএমইএর
যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুনভাবে আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক থেকে আনুপাতিক ছাড় পাওয়ার বিষয়ে প্রশাসনের কাছ থেকে দ্রুত প্রয়োজনীয় স্পষ্টীকরণ আনতে এবং তা বিজিএমইএকে সরবরাহ করার দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হলে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা বিলম্ব ছাড়াই শুল্ক সুবিধা গ্রহণের প্রস্তুতি নিতে পারবেন।
পাশাপাশি বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও পোশাক কারখানাগুলোর দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া ও অপচয় হ্রাসে গবেষণা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতায় মার্কিন তুলা রপ্তানিকারকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বিজিএমইএ।
বাংলাদেশ-মার্কিন বস্ত্র ও পোশাক শিল্পে সহযোগিতা বাড়াতে মার্কিন তুলা রপ্তানিকারকদের প্রতিনিধিদল ও বিজিএমইএর বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রসারে গুরুত্বারোপ করে এ দাবি জানানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের তুলা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কটন ইউএসএ এর উদ্যোগে মার্কিন তুলা রপ্তানিকারকদের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) উত্তরা বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন।
বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, মার্কিন তুলার ব্যবহার সম্প্রসারণ, এবং বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে নবঘোষিত শুল্ক সুবিধা কাজে লাগানো।
বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধিদলে উপস্থিত ছিলেন ইকম-এর লি ইন, কারগিল-এর ক্রিস্টা রিকম্যান, এলডিসি-এর ডিয়েগো লোজাদা, ওলাম এগ্রি-এর ওয়েসলি রেন্টজ, ক্যারোলিনা কটন গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর ওয়েন বোসম্যান, স্ট্যাপলকটন কো-অপারেটিভ-এর ক্রিস জোন্স এবং কটন কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনাল-এর উইল বেটেনডর্ফ ও আলী আরসালান।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নেতৃত্বে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নেন সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান ও পরিচালক নাফিস-উদ-দৌলা।
আলোচনায় বাংলাদেশের পোশাক খাতে মার্কিন তুলা সরবরাহের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। মূল ফোকাস ছিল সম্প্রতি ঘোষিত মার্কিন নির্বাহী আদেশ, যেখানে পোশাক উৎপাদনে ন্যূনতম ২০% মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার করা হলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক থেকে আনুপাতিক ছাড় পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এই নতুন শুল্ক ছাড়ের সুযোগ আমাদের শিল্পখাতের জন্য এক বিশাল সম্ভাবনা এনে দিয়েছে, যা আমাদের পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।
তবে তিনি উল্লেখ করেন, এই সুবিধা বাংলাদেশের স্পিনার ও পোশাক কারখানাগুলো কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লাভ করবে, সে বিষয়ে এখনো বিজিএমইএ’র কাছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই।
বিজিএমইএ সভাপতি মার্কিন প্রতিনিধিদলকে অনুরোধ জানান, যেন তারা মার্কিন প্রশাসনের কাছ থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় স্পষ্টীকরণ এনে বিজিএমইএকে সরবরাহ করেন। এতে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা বিলম্ব না করে শুল্ক সুবিধা গ্রহণের লক্ষ্যে অবিলম্বে প্রস্তুতি নিতে পারবেন।
মাহমুদ হাসান খান আরও বলেন, বর্তমানে আমদানিকৃত তুলার প্রায় ১০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে, যা দ্বিগুণ বা তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। তবে এজন্য প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও সুচিন্তিত কৌশলগত পদক্ষেপ।
তিনি মত প্রকাশ করেন যে, মার্কিন তুলার উচ্চগুণগত মান ও তুলনামূলক সুবিধা নিয়ে বিশদ গবেষণা করে স্পিনার ও কারখানাগুলোকে তথ্য সরবরাহ করা হলে তারা আমদানি বাড়াতে উৎসাহিত হবেন।
মার্কিন প্রতিনিধিদল বিজিএমইএ সভাপতির এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে এ বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
প্রতিনিধিদল বৈঠকে উল্লেখ করে যে, বাংলাদেশে তুলা রপ্তানির ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ডকুমেন্টেশন প্রস্তুতের কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ও জটিলতা দেখা দিচ্ছে। তারা এই সমস্যা সমাধানে বিজিএমইএর সহযোগিতা কামনা করেন।
এর প্রেক্ষিতে বিজিএমইএ সভাপতি প্রতিনিধিদলকে অনুরোধ জানান নির্দিষ্ট বিষয়গুলো লিখিত আকারে বিজিএমইএ’কে অবহিত করতে। তিনি আশ্বাস দেন, বিজিএমইএ বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যথাযথভাবে উপস্থাপন করবে, যাতে দ্রুত এই জটিলতাগুলোর নিরসন করা যায়।
বৈঠকে কটন কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনারের প্রতিনিধিরা বলেন, বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প বিশ্ববাজারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে, মার্কিন তুলা তার টেকসই গুণাবলী, নির্ভরযোগ্যতা ও উচ্চমানের জন্য সুপরিচিত।
তারা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি মার্কিন তুলা ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা তাদের পণ্যের মান আরও উন্নত করতে পারবে এবং মার্কিন বাজারে শুল্ক সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারিত করতে পারবে।
বৈঠকে বাংলাদেশের বাজারে মার্কিন তুলা সরবরাহ আরও সহজ ও দ্রুত করতে লজিস্টিক ও অবকাঠামো উন্নয়নের উপায় নিয়েও আলোচনা হয়। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি তরান্বিত করার লক্ষ্যে একটি ওয়্যারহাউজ স্থাপনের সম্ভাবনা নিয়েও মতবিনিময় করা হয়, যা বাস্তবায়িত হলে শিল্পের লিড টাইম কমবে।
উভয় পক্ষ নতুন শুল্কনীতি ও মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহারের পরিমাপ পদ্ধতি সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও ট্রেসেবিলিটি নিশ্চিত করতে যৌথভাবে কাজ করতে সম্মত হয়।
বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও পোশাক কারখানাগুলোর দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়ার জন্য মার্কিন তুলা রপ্তানিকারকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
একই সঙ্গে বিজিএমইএ ইনোভেশন সেন্টারে মিলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধি ও অপচয় হ্রাসে গবেষণা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা ও জ্ঞান প্রদানের আহ্বান জানানো হয়।
উভয় পক্ষই ভবিষ্যতে দুই দেশের অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।



