অর্থনীতি
দেশের সব বন্দরে খুব দ্রতই আরটিজিএস চালু করা হবে: গভর্নর
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘আমদানি-রপ্তানি কাজ সহজতর করার লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক লেনদেনের জন্য দেশের সকল বন্দর ও বিমান বন্দরে খুব দ্রতই আরটিজিএস (রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট) চালু করা হবে। দেশের প্রথম জেলা হিসেবে কক্সবাজার জেলাকে ক্যাশলেস জেলা হিসেবে পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ক্যাশলেস বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য প্রত্যেক নাগরিকের হাতে ছয়/সাত হাজার টাকার মধ্যে স্মার্ট ফোন পৌঁছাতে হবে। প্রান্তিক এলাকায় নারী এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’
শনিবার বিকেলে নগরের রেডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন বণিক সমিতি, চেম্বার প্রতিনিধি, বন্দর, কাস্টমস, শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও তফসিলি ব্যাংকের আঞ্চলিক প্রধানসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষরা এতে অংশ নেন।
গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য সিঙ্গাপুর, দুবাই ও হংকং এর ন্যায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি করতে হবে। চট্টগ্রাম অঞ্চল বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। এ অঞ্চল সমুদ্র, পাহাড় ও সমতলের এক অন্যন্য অঞ্চল। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল, ভারী শিল্প, জ্বালানি অবকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সিংহভাগ এ অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল। তবে এ সম্ভাবনাকে পূর্ণ রূপ দিতে আর্থিক খাতের সুদৃৃঢ় ভূমিকা অপরিহার্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো উৎপাদনমুখী খাতে পর্যাপ্ত ও স্বল্পমূল্যের ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করা।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমসমূহের অব্যহৃত ফান্ড এ অঞ্চলের উপযুক্ত গ্রাহকের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। আর্থিক অর্ন্তভূক্তির অংশ হিসেবে প্রত্যেক ব্যাংককে অন্তত একটি বিদ্যালয়ে আর্থিক সাক্ষরতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজিটাল লেনদেন ও ক্যাশলেস লেনদেনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের নির্বাহী পরিচালক মো. মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম এর উপাচার্য ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া ও বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. খসরু পারভেজ। বাংলাদেশ ব্যাংক, চট্টগ্রাম অফিসে প্রশাসন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ আশিকুর রহমানের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে সভা শুরু হয়। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল আমিন চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয় বিষয়ক ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন।
অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধরা অর্থনৈতিক, ব্যাংকিং, বন্দর, কাস্টমস, রপ্তানি, কৃষি, শিল্প খাতের নানা সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন ও সুপারিশ তুলে ধরেন। এ বিষয়ে গভর্নর তাৎক্ষণিক কিছু বিষয়ে সমাধান প্রদান করেন এবং কিছু বিষয়ে ভবিষ্যতে নীতি প্রণয়ণের বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করেন। সভাপতির বক্তব্যে মো. মকবুল হোসেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকে আর্থিকর সাক্ষরতার বিষয়টি অর্ন্তভূক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অর্থনীতি
৫ শতাংশ টাকাও খরচ করতে পারেনি ৮ মন্ত্রণালয়-বিভাগ
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই থেকে নভেম্বর) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) আটটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের বরাদ্দের ৫ শতাংশের বেশি টাকা খরচ করতে পারেনি। এর মধ্যে সংসদবিষয়ক সচিবালয় এক টাকাও খরচ করেনি।
অন্য সাতটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ হলো—আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি), পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ।
সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) জুলাই-নভেম্বর মাসের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হালনাগাদ চিত্র প্রকাশ করেছে। সেখানে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, সংসদবিষয়ক সচিবালয়ের এক প্রকল্পে ২০ লাখ বরাদ্দ থাকলেও এখনো কোনো টাকা খরচ করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
একইভাবে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ১৫টি প্রকল্পে ৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। পাঁচ মাসে খরচ হয়েছে মাত্র ২৯৩ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকার বিপরীতে খরচ মাত্র ৮৬ কোটি টাকা।
এ ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বরাদ্দের ২ দশমিক ৩১ শতাংশ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) ২ দশমিক ১২ শতাংশ, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ, জননিরাপত্তা বিভাগ ১ দশমিক ২৫ শতাংশ খরচ করেছে।
গত জুলাই-নভেম্বর মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হার মাত্র ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সব মিলিয়ে ২৮ হাজার ৪৩ টাকা খরচ হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা কম।
চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়েছে। ১১৯৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
অর্থনীতি
রেমিট্যান্স সংগ্রহে চতুর্থ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক
রেমিট্যান্স আহরণে অসামান্য সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ‘রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’ অর্জন করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি)। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে সারা দেশের মধ্যে রেমিট্যান্স সংগ্রহে চতুর্থ স্থান অধিকার করায় ব্যাংকটিকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয় ।
গত বুধবার আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল-এর কাছ থেকে এই সম্মাননা ক্রেস্ট গ্রহণ করেন।
অ্যাওয়ার্ড গ্রহণকালে ব্যাংকের পক্ষ থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহা. খালেদুজ্জামান এবং আন্তর্জাতিক ও হিসাব মহাবিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়া অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিভিন্ন ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ দ্রুত এবং নিরাপদে স্বজনদের কাছে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক আধুনিক প্রযুক্তি ও গ্রাহকবান্ধব সেবা নিশ্চিত করে আসছে। এই স্বীকৃতি ব্যাংকের প্রতি প্রবাসীদের আস্থা আরও সুদৃঢ় করবে এবং ভবিষ্যতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে উৎসাহিত করবে ।
অর্থনীতি
১৭ দিনেই রেমিট্যান্স ছাড়ালো দুই বিলিয়ন ডলার
চলতি মাসের শুরুতে রেমিট্যান্স প্রবাহে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। প্রথম ১৭ দিনে ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এ ধরনের প্রবাহ অব্যাহত থাকলে, ডিসেম্বর শেষে প্রবাসী আয় সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি হতে পারে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক সূচনা হবে।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে প্রবাসী আয়ে উল্লম্মখ প্রবাহের ফলে ব্যাংকগুলোতে ডলারের উদ্বৃত্ত সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার যোগান-চাহিদার ভারসাম্য ঠিক রাখতে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত মোট ডলার ক্রয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮৭১ মিলিয়ন বা ২ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, চলতি মাসের ১৭ ডিসেম্বর এসেছে ১৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আর ১ থেকে ১৭ ডিসেম্বর সময়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২০০ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৭৬ কোটি ডলার। সেই হিসেবে ১৭ দিনে প্রবাসী আয় বেড়েছে ১৪ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৫০৫ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ১ হাজার ২৯০ কোটি ডলার। ফলে এই সময়ে প্রবাসী আয় বেড়েছে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, হুন্ডি প্রতিরোধে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ, প্রণোদনা এবং ব্যাংকিং চ্যানেলের উন্নতি রেমিট্যান্স আয় বাড়াতে বড় ভূমিকা রেখেছে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও স্বস্তিতে আছে।
এদিকে সদ্য সমাপ্ত নভেম্বর মাসে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ২৮৮ কোটি ৯৫ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন, দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৩৫ হাজার ২৫২ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)।
অর্থনীতি
রবিবার আইনশৃঙ্খলা পর্যালোচনায় বসছে ইসি
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট উপলক্ষ্যে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনায় সভায় বসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ২১ ডিসেম্বর (রোববার) সকাল ১০টায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে এই সভায় অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারসহ রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ইসির উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সভায় দেশের বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং নির্বাচনের আগে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমনে যৌথ বাহিনীর ভূমিকা ও কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ। প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য প্রণীত ‘আচরণ বিধিমালা ২০২৫’ অনুযায়ী নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখা এবং বিধি বাস্তবায়ন ও বিবিধ বিষয়ে পর্যালোচনা।
যাদের উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে; সভার গুরুত্ব বিবেচনায় সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানদের উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর প্রধানগণ; প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব; সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার; মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি); এনএসআই, ডিজিএফআই, কোস্টগার্ড, বিজিবি, র্যাব, আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালকরা এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার।
অর্থনীতি
ব্যাংকখাত জঞ্জালপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে: ড. ফাহমিদা
স্বাধীনতার ৫৪ বছরে দেশের ব্যাংকখাত একটি জঞ্জালপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে দেশের ব্যাংকখাত একটি জঞ্জালপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে। এটি ইচ্ছাকৃতভাবেই করা হয়েছে। বর্তমানে খেলাপি ঋণ বাজেটের প্রায় ৮১ শতাংশ। ব্যাংক একীভূতকরণ ম্যাজিক কোনো সমাধান নয়। তবে এ প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে। সেজন্য দক্ষ ব্যাংকার ও নীতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ব্যাংকিং সেক্টর রিফর্ম: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালার সভাপতিত্বে সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে অর্থনীতিটা পেয়েছে, সেখানে তো আমরা দেখেছি—অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই দুর্বল অবস্থানে ছিল। এর মধ্যে ব্যাংকখাত অন্যতম। সেখান থেকে অনেক ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংস্কার কর্মসূচি বলি কিংবা বিভিন্ন ধরনের নীতিমালা—সেটা কিন্তু দৃশ্যমান হয়েছে শুধু আর্থিক খাতে।
তিনি বলেন, মন্দ ঋণে ব্যাংকখাত খুব দুর্বলতম অবস্থায় ছিল। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি দেশে মন্দ ঋণ ১১ থেকে ১২ শতাংশ ছিল। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এটিকে সিঙ্গেল ডিজিটে আনার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন আমরা এসে দেখেছি যে, এটি ৩৫ থেকে ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে। ৬ দশমিক ৪ লাখ কোটি টাকার মন্দ ঋণ রয়েছে; যেখানে দেশের মোট বাজেটের আকার ৭ দশমিক ৯ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ, মন্দ ঋণ বাজেটের প্রায় ৮১ শতাংশ। বাজেটের আকারের প্রায় সমপরিমাণ অর্থ আসলে আমাদের মন্দ ঋণ।
সিপিডির এই নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ঋণ বিতরণে চরম অপেশাদারত্বে রয়েছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ছাড়াই রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রভাবশালীদের সুপারিশে ঋণ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়। বারবার ঋণ পুনঃতফসিল করায় মন্দ ঋণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
ড. ফাহমিদা বলেন, পাঁচটি ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করা হলো। তাদের পুরো যে ঋণটা দেওয়া হয়েছে, তার সমানই প্রায় খেলাপির পরিমাণ। এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এগুলোকে একত্র করা হয়েছে। কিন্তু একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, এই একীভূতকরণ কোনো সহজ বিষয় না। বাংলাদেশে আগে দু-একবার একীভূতকরণ করা হয়েছে। কিন্তু এটা হচ্ছে সবগুলো দুর্বল ব্যাংকের একত্রিতকরণ। সেজন্য একটা দুর্বলতার বিষয়ও রয়েছে।
‘যদিও আকার অনেক বড় আর এটির কোনো ম্যাজিক সলিউশনও হবে না, যদি কি না এর পূর্বশর্ত কিছু থাকে। পূর্বশর্তগুলো কিন্তু রয়েছে। প্রথম বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। এখানে রাজনৈতিক বা প্রভাবশালীদের প্রভাবের কাছে নতি স্বীকার করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে, যেন এই যে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে, সেগুলো অব্যাহত থাকে।’
ব্যাংক একীভূতকরণে শুধু প্রশাসনিক দক্ষতা নয়, অভিজ্ঞ ও পেশাদার ব্যাংকার যুক্ত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন সিপিডির এই নির্বাহী পরিচালক।
তিনি বলেন, খরচ কমানো ও ব্যাংককে লাভজনক করতে দক্ষ মানবসম্পদই মূল চাবিকাঠি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা নিয়ন্ত্রক ও তদারকিতে দক্ষ হলেও, ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা ও ঋণ আদায়ে অভিজ্ঞ ব্যাংকার প্রয়োজন। এজন্য ব্যক্তিখাতের দক্ষ ব্যাংক কর্মকর্তাদের উপযুক্ত প্রণোদনা দিয়ে যুক্ত করার প্রস্তাব দেন তিনি।
প্রণোদনা শুধু আর্থিক নয়—কাজের স্বাধীনতা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগও গুরুত্বপূর্ণ বলে মত দেন ড. ফাহমিদা খাতুন।




