জাতীয়
ফয়সাল করিমের ব্যাংক হিসাবে রহস্যজনক লেনদেন
ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় আততায়ী হিসেবে যার নাম উঠে এসেছে, তিনি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ক্যাডার ফয়সাল করিম মাসুদ (ছদ্মনাম-দাউদ বিন ফয়সাল)। তাকে ঘিরে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। তার রাজনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের তথ্যও খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জানা গেছে, ফয়সাল ছাত্ররাজনীতিতে প্রভাবশালী ছিলেন। তিনি সর্বশেষ ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং আদাবর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জুলাই বিপ্লবের পর নিষিদ্ধ সংগঠনটির পক্ষে ঝটিকা মিছিল, চোরাগোপ্তা হামলা ও বৈঠকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন। এমনকি ভারতে পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ফয়সালের রাজনৈতিক উত্থান ছিল দ্রুত। স্থানীয় পর্যায়ে তিনি শুধু পদধারী নেতা নন, বরং প্রভাব বিস্তারে দক্ষ সংগঠক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তার এই প্রভাবের পেছনে ছিল কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতার আশীর্বাদ। বিশেষ করে ফ্যাসিবাদী দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও প্রভাবশালী নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং বর্তমানে ভারতে পলাতক কামালের অত্যন্ত বিশ্বস্ত অনুসারী ছিলেন ফয়সাল।
এই প্রভাবশালী নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতাই তাকে ক্ষমতার বৃত্তে অবস্থান করতে সাহায্য করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সবচেয়ে গুরুতর তথ্য হলো, গুলিবর্ষণের মাত্র কয়েক দিন আগে, গত ৯ ডিসেম্বর একটি কালচারাল বৈঠকে ফয়সালকে হাদির ঠিক পাশেই বসে থাকতে দেখা যায়। হামলাকারী হিসেবে সন্দেহে থাকা ওই ব্যক্তি হাদির ঘনিষ্ঠ হওয়ারও চেষ্টা করেন। ‘মানবতাবাদী মুক্ত চিন্তার অধিকারী’ জুলাই বিপ্লবী হাদির উদারতার সুযোগ নিয়ে হামলার বিষয়ে পূর্ব ধারণা বা প্রস্তুতি নিতেই হাদির আশপাশে ভিড়েছিলেন আততায়ী ফয়সাল।
গোয়েন্দা তথ্য বলছে, হাদির ওপর হামলার প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্যগুলোর একটি হলোÑজুলাই বিপ্লবের পর ফয়সালের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিপুল অঙ্কের লেনদেন। একাধিক ব্যাংকে থাকা তার হিসাবগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, স্বল্প সময়ে বড় অঙ্কের টাকা জমা ও উত্তোলন হয়েছে। এই লেনদেনের একটি অংশ এসেছে বিদেশ থেকে। তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন, এসব অর্থ বৈধ চ্যানেলে এসেছে কি না। একই সঙ্গে দেশের ভেতর থেকেও বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তার অ্যাকাউন্টে অর্থ এসেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, কারা এই অর্থ দিয়েছেন এবং কী উদ্দেশ্যে দিয়েছেনÑতা জানাই এখন তদন্তের অন্যতম লক্ষ্য। বিদেশে অবস্থানরত কিছু ব্যক্তির সঙ্গে ফয়সালের নিয়মিত আর্থিক যোগাযোগের তথ্যও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ভারতে পলাতক কামালের কাছ থেকে অর্থ পাওয়ার তথ্য বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।
সূত্র বলছে, রাজনৈতিক প্রভাব ও আর্থিক লেনদেনের এই যোগসূত্র হামলার পেছনের পরিকল্পনা বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। ফয়সালকে দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য সরকার ইতোমধ্যে ৫০ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। ফয়সালের বিরুদ্ধে আগেও গুরুতর অপরাধের অভিযোগ ছিল, যা তার বর্তমান কর্মকাণ্ডকে আরো রহস্যময় করে তুলেছে। ২০২৪ সালের ৮ নভেম্বর ডাকাতির সময় আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে আদাবর থানায় অস্ত্র আইনে মামলা হয়।
গ্রেপ্তারের পর দ্রুততার সঙ্গে তার পক্ষে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করা হয়। চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ তাকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করে। তবে এই জামিন প্রক্রিয়া নিয়ে আইন অঙ্গনে প্রশ্ন ওঠে যখন দেখা যায়, জামিন আদেশের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে ১৯ ফেব্রুয়ারি আদেশটি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ পায়। পরে ১২ আগস্ট হাইকোর্টের অন্য একটি বেঞ্চ তার জামিনের মেয়াদ আরও এক বছরের জন্য বাড়িয়ে দেয়।
অস্ত্র মামলার আসামি, যিনি জামিনে থাকাকালীন সময়েই সম্ভাব্য একজন প্রার্থীর ওপর এমন ভয়াবহ হামলার প্রধান সন্দেহভাজন হলেন, সেই প্রক্রিয়া এখন আইনের শাসন নিয়ে জনমনে গভীর সংশয় তৈরি করেছে। তদন্তকারীরা ফয়সালের জামিনকালীন চলাফেরা ও যোগাযোগগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখছেন।
ফয়সালের রাজনৈতিক সংযোগ শুধু তার ব্যক্তিগত পরিচয়েই সীমাবদ্ধ নয়। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, তার পরিবারও আওয়ামী রাজনীতিতে জড়িত। যদিও তার বাবা একজন ছোট ব্যবসায়ী, তবে পরিবারের এই দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা তাকে এবং পরিবারকে মোহাম্মদপুর এলাকায় প্রভাব বিস্তারে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছে। হামলার ঘটনার পর পরিবারের দুই সদস্যকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
ফয়সাল তথ্যপ্রযুক্তিতে বেশ দক্ষ। সূক্ষ্ম পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি গুলি করার আগেই তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভ করা হয়। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, অত্যন্ত উচ্চপর্যায়ের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হাদিকে গুলি করা হয়। ঘটনার দিন আততায়ী ফয়সাল মোবাইল ফোনও ব্যবহার করেনি। এমনকি তাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য আশপাশে কিলার গ্রুপের রেসকিউ টিমও ছিল।
ফয়সাল ‘অ্যাপল সফট আইটি’ নামে একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তিনি দুবছর আগে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসেরও (বেসিস) সদস্য হন। বেসিসের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অ্যাপল সফট আইটি ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি। এটি আদাবর এলাকায় অবস্থিত। এর মাধ্যমে দেশের আইসিটি খাতে দক্ষ কর্মী তৈরি এবং প্রশিক্ষণের কাজ করা হয়। কোম্পানির সেবার মধ্যে আরো আছেÑ ওয়েব ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, প্রশিক্ষণ, আউটসোর্সিং ট্রেনিং, সার্টিফাইড প্রফেশনাল ইন ট্রেনিং ম্যানেজমেন্ট, এসকিউএল ডাটাবেস পরিচালনা, গেম ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ও লোগো ডিজাইন, ২ডি-৩ডি অ্যানিমেশন, অ্যানিমেশন কার্টুন ডেভেলপমেন্ট, বিজ্ঞাপন তৈরি এবং অন্যান্য ডিজিটাল সমাধান।
হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কায় নাম প্রকাশ না করে বেসিসের এক সদস্য জানান, এইট পিয়ারস সলুশনস লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ শাহজালালের সুপারিশে ফয়সালকে বেসিসের সদস্য পদ দেওয়া হয়। ফয়সাল ২০২০ সালের ৯ জুন বেসিসের সদস্য হন।
এসব তথ্যের মাধ্যমে সন্দেহভাজন হামলাকারীর পরিচয় এবং তার ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক সংযোগও আলোচনায় এসেছে। তবে শাহজালাল বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। ফয়সালকে চেনেনও না।
হাদির ওপর সশস্ত্র হামলা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়; এটি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে নির্বাচনি পরিবেশ ও নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘আমরা প্রাইম সাসপেক্টকে খুঁজছি। হোপফুলি আমরা হিট করতে পারব। আমরা জনগণের সহযোগিতা চাইছি।’
এমকে
জাতীয়
বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের অঙ্গীকার অটুট থাকবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে প্রাণঘাতী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পরও বৈশ্বিক শান্তি ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার অটুট থাকবে।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) রিয়াদে জাতিসংঘ সভ্যতাসমূহের জোট (ইউএনএওসি)-এর ১১তম গ্লোবাল ফোরামে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। খবর বাসসের
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক শান্তির প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের ধারাবাহিকতায় আমরা গতকালের ওই কাপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। সুদানের কাদুগলিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের লজিস্টিকস ঘাঁটিতে সংঘটিত হামলায় ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন এবং আরও কয়েকজন আহত হন, যা আমাদের গভীরভাবে শোকাহত করেছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ ঘটনা এমন এক বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে আসে, যেখানে বিশ্বজুড়ে সংঘাত ও মানবিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে; একই সঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে বিদেশিবিদ্বেষ, অসহিষ্ণুতা, বর্ণবাদ ও ইসলামোফোবিয়া।
ডিজিটাল যুগে বিভাজন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভুয়া তথ্য, ঘৃণাত্মক বক্তব্য ও ‘ডিপফেক’ প্রযুক্তি শান্তি ও অভিন্ন মানবিক মূল্যবোধের জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অন্যতম শীর্ষ সেনা প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের ভূমিকার কথা তুলে ধরে তৌহিদ হোসেন বলেন, আন্তঃসাংস্কৃতিক ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ, সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধে বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।
তিনি বলেন, ‘শান্তির সংস্কৃতি’ বিষয়ে বাংলাদেশের বার্ষিক জাতিসংঘ প্রস্তাব শান্তি বিষয়ে আমাদের বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে, যেখানে শান্তি কেবল সংঘাতের অনুপস্থিতি নয়, বরং ন্যায়বিচার, সহমর্মিতা ও মানবিক মর্যাদার ওপর প্রতিষ্ঠিত।
মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানবিক অঙ্গীকারের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন উপদেষ্টা।
বৈশ্বিক উদ্যোগ জোরদারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তরুণদের ক্ষমতায়ন, প্রজন্মান্তরে সংলাপ, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় বিনিয়োগ এবং শিল্প, ক্রীড়া ও দায়িত্বশীল গণমাধ্যমের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময় সম্প্রসারণের মাধ্যমে সহমর্মিতা ও আস্থা গড়ে তুলতে হবে।
জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মসহ সব ধরনের ঘৃণাত্মক উসকানি প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে আমাদের ঐক্যের মূল্যবোধ জোরদার করতে হবে, বোঝাপড়ার পথ আলোকিত করতে হবে, বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য উদ্যাপন করতে হবে এবং আমাদের অভিন্ন মানবিকতা সমুন্নত রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, ‘ইউএনএওসি: মানবতার জন্য দুই দশকের সংলাপ- বহুমুখী বিশ্বে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ার নতুন যুগের অগ্রগতি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে রোববার সৌদি আরবের রিয়াদে শুরু হয়েছে দুদিনব্যাপী ইউএনএওসি’র ১১তম গ্লোবাল ফোরাম।
এই ফোরামে রাজনৈতিক নেতা, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থা, ধর্মীয় নেতা, বেসরকারি খাত, নাগরিক সমাজ, শিক্ষাবিদ, তরুণ, শিল্পী, ক্রীড়া ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ইউএনএওসি’র ২০তম বার্ষিকী উপলক্ষে এটি আয়োজন করা হয় এবং সংস্থাটির ভবিষ্যৎ কর্মপথ নির্ধারণের লক্ষ্য নিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জাতীয়
বিচারকদের নিয়ে ইসির ৩০০ নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি গঠন
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আচরণবিধিমালা প্রতিপালনে ৩০০টি ‘নির্বাচনি অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটি’ গঠন করেছে কমিশন। কমিটিগুলো গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার করতে পারবে। কমিটির কার্যক্রমে সহায়তার জন্য নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) এক আদেশে এ কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে আসন্ন গণভোট ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও নির্বাচনকালীন অভিযোগ যাচাই করতে ১০ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে ইসি। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট যেসব অভিযোগ ইসিতে জমা হবে, সেগুলোর বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন এসব কর্মকর্তারা।
নির্বাচন কমিশনের আইন শাখার উপসচিব মোহাম্মদ দিদার হোসাইন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে রোববার ‘নির্বাচনি অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটি’ গঠনের কথা জানানো হয়। ৩০০টি কমিটিতে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন। কে কোন আসনের দায়িত্বে থাকবেন, তা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, কমিটির কর্মকর্তারা প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ থেকেই নিজ দপ্তর হতে তাৎক্ষণিকভাবে অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন এবং নির্বাচন কমিশনে ন্যস্ত থাকবেন। তারা সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকায় উপস্থিত থেকে সার্বক্ষণিক নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করবেন এবং প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ হতে নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশের সময় পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া নির্বাচন-পূর্ব কোনো অনিয়ম সংঘটিত হলে কমিটিগুলো তিন দিনের মধ্যে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে প্রেরণ করবে। জেলা নির্বাচন অফিসার অনুসন্ধান প্রতিবেদন ইসিতে পাঠাবেন।
জাতীয়
প্রধান উপদেষ্টাকে জাতিসংঘ মহাসচিবের ফোন
সুদানে ড্রোন হামলায় ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রবিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন।
গুতেরেস বলেন, ‘আমি গভীর সমবেদনা জানাতে ফোন করেছি। আমি এই ঘটনায় ভীষণভাবে মর্মাহত।’ একই সঙ্গে হামলার ঘটনায় তিনি গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টাকে নিহত শান্তিরক্ষীদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি তাঁর সমবেদনা পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ জানান।
এসময় অধ্যাপক ইউনূসও বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। পাশপাশি আহত সেনাসদস্যদের উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত উন্নতমানের হাসপাতালে স্থানান্তর ও নিহতদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘকে অনুরোধ জানান।
গুতেরেস প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, আহত শান্তিরক্ষীদের প্রথমে সুদানের একটি স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং গুরুতর আহতদের উন্নত চিকিৎসা সুবিধাসম্পন্ন হাসপাতালে স্থানান্তরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
আহতদের চিকিৎসা ও সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানান ড. ইউনূস।
বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত ফোনালাপে অধ্যাপক ইউনূস গত রমজানে জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফরের কথাও স্মরণ করেন।
এসময় দুই নেতা বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়েও কথা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ মহাসচিবকে আশ্বস্ত করেন যে, অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
জবাবে গুতেরেস বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে আস্থা প্রকাশ করেন।
জাতীয়
এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আগামীকাল সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে হাদিকে
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে একটি এয়ারঅ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
গত দুদিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। আজ এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল এবং অপরিবর্তিত রয়েছে।
সোমবার দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় মেডিকেল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল এবং ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাক্সিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে তার চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ওসমান হাদির চিকিৎসা সংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তার চিকিৎসা প্রক্রিয়া সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
জাতীয়
সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে নেওয়া হলো ডিবি কার্যালয়ে
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ডিবিপ্রধান শফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ধানমন্ডি এলাকা থেকে আনিস আলমগীরকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তাকে আটক নাকি কোনো মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তার ব্যাপারে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে ডিবি কার্যালয় থেকে সাংবাদিক আনিস আলমগীর মোবাইলে গণমাধ্যমকে বলেন, ধানমন্ডি এলাকার একটি জিম (ব্যায়ামাগার) থেকে আমাকে নিয়ে আসা হয়। ডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের প্রধান আমার সঙ্গে কথা বলবেন।
আনিস আলমগীর ২০১৭ সালে দৈনিক মানবকণ্ঠের সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ পান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পড়াশোনা করা আনিস আলমগীর দৈনিক দেশ পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি মানবকণ্ঠে যোগদানের আগে এশিয়ান টিভিতে হেড অব নিউজ অ্যান্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পদে কর্মরত ছিলেন।
তিনি ২০০১ সালে আফগান যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহকালে তালেবানদের হাতে বন্দি হয়েছিলেন।




