অর্থনীতি
হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সন্দেহভাজন মাসুদের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ও তার আইটি প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাপল সফট আইটি লিমিটেড’-এর সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ফয়সাল করিম মাসুদের প্রতিষ্ঠানটি বেসিস-এর সদস্য।
তার মালিকানাধীন ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ও ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাপেল সফট আইটি লিমিটেড’ কোম্পানিটি ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া ২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকও ফয়সাল করিম মাসুদ।
ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের (এখন নিষিদ্ধ) রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হয়েছিলেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ওসমান হাদি। মোটরসাইকেলে থাকা আততায়ী তাকে গুলি করে মোটরসাইকেলে করেই পালিয়ে যায়। হাদি এখন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারসহ বিভিন্ন জায়গায় তার সঙ্গে ফয়সাল করিমের সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ছবি রয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে গুলি করা ব্যক্তির চেহারার সাদৃশ্য থাকায় গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এরইমধ্যে ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন। ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আদাবর থানায় একটি মামলা হয়েছিল। ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম। মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। তখন তার কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, পাঁচটি গুলি, তিনটি মোবাইল ফোন ও পাঁচ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল।
ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তার এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তার বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার বিষয়টি সামনে এলো।
এমকে
অর্থনীতি
মাসে মাত্র ১৪ হাজার টাকার কিস্তিতে কোটিপতির স্বপ্ন পূরণ
একসময় দেশে কোটিপতি হওয়া মানে অনেক বড় বিষয় ছিল। সমাজে কে ধনী মানুষ, তা বোঝাতে বলা হতো, সেই লোক কোটিপতি। অর্থাৎ ধনসম্পদের ক্ষেত্রে কোটি টাকা বড় মাইলফলক ছিল।
সেই বাস্তবতা এখন নেই। মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় গেছে যে ঢাকা শহরে অনেক ফ্ল্যাটের দামই এখন কোটি টাকার ওপরে। সেসব ফ্ল্যাট অবিক্রীতও থাকে না। তারপরও সীমিত আয়ের মানুষের পক্ষে কোটিপতি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
দেশের শক্তিশালী ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের আছে কোটিপতি স্কিম। মাসে সর্বনিম্ন ১৪ হাজার টাকা কিস্তি দিয়েও কোটিপতি হওয়া সম্ভব। দেখে নেওয়া যাক, এই স্কিমে আপনি কীভাবে টাকা সঞ্চয় করবেন।
কী আছে কোটিপতি স্কিমে
ইস্টার্ন ব্যাংকের কোটিপতি স্কিমটি ডিপিএস ও এফডিআরের একধরনের মিশ্রণ। সেটা হলো, আপনি প্রথমে এক লাখ টাকা জমা দিয়ে মাসে মাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা কিস্তি হিসেবে জমা দিয়ে মেয়াদ শেষে কোটিপতি হতে পারেন। আবার প্রাথমিক জমা না দিয়েও শুধু মাসে মাসে কিস্তি দিয়ে মেয়াদ শেষে কোটিপতি হওয়া সম্ভব।
এই সঞ্চয় স্কিমের মেয়াদ ৫ থেকে ২০ বছর। এর মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে এই স্কিম নেওয়া যায়—৫, ৮, ১০, ১২, ১৫, ১৮ ও ২০ বছর মেয়াদে এই স্কিম নেওয়া যায়।
ধরা যাক, আপনি পাঁচ বছর মেয়াদে এই স্কিম নিতে চান। এখন আপনি যদি এক লাখ টাকা প্রাথমিক জমা দেন, তাহলে মাসে ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা জমা দিয়ে কোটিপতি হওয়া যায়। এক লাখ টাকা প্রাথমিক জমা না দিলে আপনার মাসিক কিস্তি হবে ১ লাখ ২৯ হাজার ৯০০ টাকা।
আট বছর মেয়াদে প্রাথমিক জমা ছাড়া আপনার কিস্তি হবে ৭১ হাজার টাকা এবং এক লাখ টাকার প্রাথমিক জমাসহ কিস্তি হবে ৬৯ হাজার ৬০০ টাকা। ১০ বছর মেয়াদে প্রাথমিক জমা ছাড়া আপনার মাসিক কিস্তি হবে ৫১ হাজার ৩০০ টাকা এবং প্রাথমিক জমাসহ কিস্তি হবে ৫০ হাজার ১০০ টাকা।
১২ বছর মেয়াদে প্রাথমিক জমা ছাড়া কিস্তি হবে ৩৮ হাজার ৬০০ টাকা। জমাসহ কিস্তি হবে ৩৭ হাজার ৪০০ টাকা। ১৫ বছর মেয়াদে প্রাথমিক জমা ছাড়া কিস্তি হবে ২৬ হাজার ৩০০ টাকা এবং জমাসহ কিস্তি হবে ২৫ হাজার ৩০০ টাকা।
১৮ বছর মেয়াদে প্রাথমিক জমা ছাড়া কিস্তি হবে ১৮ হাজার ৬০০ টাকা। প্রাথমিক জমাসহ কিস্তি হবে ১৭ হাজার ৬০০ টাকা। ২০ বছর মেয়াদে কিস্তি হবে যথাক্রমে ১৪ হাজার ৯০০ টাকা ও ১৪ হাজার টাকা।
আর কী আছে
এই স্কিম ইস্টার্ন ব্যাংকের যেকোনো শাখায় খোলা যায়। এক ব্যক্তি একসঙ্গে একাধিক কোটিপতি স্কিম খুলতে পারেন। ইস্টার্ন ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব থাকলে সেখান থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিস্তি কেটে নেওয়ার ব্যবস্থাও আছে। সেই সঙ্গে এই স্কিমের বিপরীতে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণের সুবিধা নেওয়া যায়।
কী লাগবে
হিসাব খুলতে সাধারণত যেসব কাগজপত্র লাগে, এ ক্ষেত্রেও তা–ই লাগবে। আপনার নিজের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), নমিনির ছবি ও এনআইডি এবং ওই ব্যাংকে হিসাব আছে, এমন একজন পরিচয়দানকারী। ফরমের নির্দিষ্ট স্থানে সবার স্বাক্ষর লাগবে। জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংক যোগাযোগ করবে, এমন একজনের নাম–ঠিকানাও দিতে হবে।
মেয়াদের আগে ভাঙলে
ব্যাংকের ডিপিএস ও এফডিআর খোলার ক্ষেত্রে যে প্রশ্নটি বারবার ঘুরেফিরে আসে সেটা হলো, মেয়াদের আগে হিসাব ভাঙলে কী হবে। ইস্টার্ন ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, এক বছরের আগে এই হিসাব ভেঙে ফেলা হলে শুধু জমা টাকা ফেরত দেওয়া হয়। সুদ পাওয়া যাবে না।
এক থেকে তিন বছরের মধ্যে ভেঙে ফেলা হলে সঞ্চয়ী হিসাবের সুদ পাওয়া যাবে। তিন বছর পর ভেঙে ফেলা হলে কোটিপতি হিসাবের চেয়ে ২ শতাংশ কম হারে সুদ পাওয়া যাবে।
সঞ্চয় সম্পর্কে একটি কথা বলা হয়। সেটা হলো, আপনি মাসে বা বছরে কত টাকা সঞ্চয় করতে চান, সেই টাকা আগে আলাদা করে রেখে তারপর খরচ করুন। খরচ করার পর আপনি সঞ্চয় করবেন বা তার লক্ষ্য ঠিক করবেন, তা নয়; বরং তার উল্টো পদ্ধতি গ্রহণ করুন। তাহলে সীমিত আয়ের মানুষের পক্ষেও কোটিপতি হওয়া সম্ভব।
এমকে
অর্থনীতি
প্রশাসনিক জটিলতা কমাতে চট্টগ্রামে চালু হচ্ছে শিপ রিসাইক্লিং বোর্ডের কার্যালয়
জাহাজ ভাঙা শিল্পের প্রশাসনিক জটিলতা ও দীর্ঘদিনের ভোগান্তি কমাতে অবশেষে চট্টগ্রামে চালু হচ্ছে বাংলাদেশ শিপ রিসাইক্লিং বোর্ডের প্রথম নিজস্ব কার্যালয়।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে বোর্ডের কার্যক্রম শুরু হবে, যার ফলে অনুমোদনের জন্য ইয়ার্ড মালিকদের আর ঢাকায় ছুটতে হবে না।
জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ বা শিপ রিসাইক্লিং শিল্পের তদারকি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে এই বোর্ড গঠিত হলেও, প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ না হওয়ায় দীর্ঘ সাত বছর এটি কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল। তবে চলতি বছরের মার্চ মাসে একজন মহাপরিচালক ও দুইজন উপ-পরিচালক নিয়োগের মধ্য দিয়ে বোর্ডের কার্যক্রমে গতি আসে।
জাহাজ ভাঙা শিল্পের মূল কেন্দ্র চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে হওয়ায় রাজধানীর শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে কার্যক্রম পরিচালনার পরিবর্তে চট্টগ্রামেই বোর্ডের কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। এত দিন মন্ত্রণালয়ের একটি কক্ষে বসেই দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল।
নগরীর আগ্রাবাদে জাম্বুরি মাঠ সংলগ্ন নবনির্মিত বিএসটিআই ভবনের অষ্টম তলায় স্থাপন করা হয়েছে এই নতুন কার্যালয়। প্রায় ১৮ হাজার বর্গফুট আয়তনের এই অফিসটি রোববার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।
শিপ রিসাইক্লিং বোর্ডের মহাপরিচালক এ এস এম শফিউল আলম তালুকদার জানান, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব ওবায়দুর রহমান।
মহাপরিচালক আরও জানান, এখান থেকে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হলে জাহাজ আমদানি, ভাঙা এবং ইয়ার্ডের অনুমতিসহ অন্তত ২৯ ধরনের লাইসেন্স, অনুমোদন ও নবায়ন সরাসরি এই অফিস থেকেই সম্পন্ন করা যাবে।
তিনি বলেন, ‘আগে এসব অনুমোদনের জন্য উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগ সময়ই ঢাকায় যেতে হতো। এখন আর সেটির প্রয়োজন হবে না।’
খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নতুন এই কার্যালয় চালু হওয়ার ফলে জাহাজ ভাঙা শিল্পের ব্যবসায়ীদের সময় ও খরচ—উভয়ই কমবে। তারা আশা করছেন, বোর্ডটি একটি ‘ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সেন্টার’ হিসেবে কাজ করবে। এটি লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া দ্রুততর করার পাশাপাশি এই শিল্পের সুশৃঙ্খল ও টেকসই বিকাশে নীতিগত সহায়তা প্রদান করবে।
অর্থনীতি
কমেছে শাক-সবজির দাম, পেঁয়াজের বাজারে অস্বস্তি
সরবরাহ বাড়ায় রাজধানীর বাজারে কিছুটা কমেছে শাক-সবজির দাম। তবে আমদানির পরও স্বস্তি ফেরেনি পেঁয়াজের বাজারে; বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামেই।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ আশেপাশের কয়েকটি বাজারঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
বাজারে অস্থিরতা কমাতে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। ভারত থেকে দেশে আসছে পেঁয়াজও। এছাড়া নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠতে শুরু করায় বাজারে বাড়ছে সরবরাহ। আমদানির খবরে মাঝে কয়েকদিন দাম কমলেও ফের চড়া হয়েছে পেঁয়াজের বাজার।
বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি পুরান দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজ ১৪০ টাকা ও নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজের জন্য গুনতে হচ্ছে ১০০ টাকার ওপরে। ক্রেতারা বলছেন, আমদানির পরেও বাজারে কমেনি পেঁয়াজের দাম। অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে অতিরিক্ত মুনাফা লুটে নিচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি করার পরও চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। তাই পেঁয়াজের দাম কমছে না। পাইকারিতে বর্তমানে প্রতিকেজি পুরান দেশি পেঁয়াজ ১৪০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১২০ টাকা ও নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
এদিকে, বাজারে কমতে শুরু করেছে আলুসহ অন্যান্য সবজির দাম। বাজারে প্রতিকেজি বরবটি ৭০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, শালগম ৪০-৬০ টাকা, শিম ৪০-৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৫০ টাকা, টমেটো ৮০-১০০ টাকা, গোল বেগুন ৪০-৬০ টাকা, পটোল ৫০ টাকা ও শসা ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি নতুন আলু ৩০-৪০ টাকা ও পুরান আলু বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। আর মাঝারি আকারের প্রতিপিস, বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে শীতকালীন শাক-সবজির সরবরাহ বাড়ায় দাম কমছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা শাহবুদ্দিন বলেন, বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ছে। এতে বেশিরভাগ সবজির দাম কমে এসেছে। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে সামনে অন্যান্যগুলোর দামও কমে আসবে।
তবে স্থিতিশীল রয়েছে মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা এবং সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৬০ টাকা কেজি দরে।
অর্থনীতি
রিজার্ভ ফের ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। তবে আইএমএফের নির্ধারিত বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে হিসাব করলে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে। গত বুধবারও রিজার্ভ ছিল ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে, গতকাল বৃহস্পতিবার তা বেড়ে ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩১ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভ ছিল ২৭ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে গত ৬ নভেম্বর রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছিল। ওই সময়ে রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার আর বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে তা ছিল ২৮ বিলিয়ন ডলার।
তবে এর তিনদিন পর ৯ নভেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের জন্য ১৬১ কোটি ডলার পরিশোধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আকুর দায় পরিশোধের পর দেশের গ্রস রিজার্ভ ৩১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলারে অবস্থান করে। এরপর থেকে ৩০ ও ৩১ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ছিল রিজার্ভ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাইয়ে মে-জুন মেয়াদের আমদানি ব্যয়ের বিপরীতে বাংলাদেশ আকুকে ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছিল—যা ছিল সর্বশেষ বড় অঙ্কের বিল। এরপর ২০২৩ সালের পুরো সময়জুড়ে দ্বিমাসিক আকু বিল কমে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে ছিল।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে আকু বিল আবার বাড়তে শুরু করে। চলতি বছরের মে-জুনে বিলের পরিমাণ পৌঁছে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের এশিয়া অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (ইউএনইএসক্যাপ) আকু প্রতিষ্ঠা করে। ইরানের তেহরানভিত্তিক এ সংস্থার মাধ্যমে ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা—মোট ৯টি দেশের আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তি করা হয়।
অন্যদিকে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহকে সহায়তা দিতে ব্যাংকগুলো থেকে অতিরিক্ত ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গতকাল বৃহস্পতিবার ১৬টি ব্যাংক থেকে মোট প্রায় ১৫ কোটি মার্কিন ডলার (১৪৯ মিলিয়ন ডলার) কেনা হয়েছে। এসময় প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২২.২৫ টাকা থেকে ১২২.২৯ টাকা পর্যন্ত। কাট-অফ রেট ১২২.২৯ টাকা, যা মাল্টিপল প্রাইস নিলাম পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ পর্যন্ত নিলাম পদ্ধতির মাধ্যমে মোট ২৬৬ কোটি ৩০ লাখ (২.৬৬ বিলিয়ন ডলার) ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৩ জুলাই থেকে নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা শুরু করে। ওই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এখন পর্যন্ত এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করা হয়েছে।
অর্থনীতি
পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকরা ডিসেম্বরেই পাবেন সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা
সংকটে থাকা পাঁচ শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকের আমানতকারীরা চলতি ডিসেম্বরের মধ্যেই ইন্স্যুরেন্স ফান্ড থেকে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ফেরত পাবেন। তবে টাকা তুলতে হলে তাদের ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’-এর নামে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, এক্সিম এবং ইউনিয়ন ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠিত সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক ২ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক রেজোলিউশন ডিপার্টমেন্টের একজন কর্মকর্তা জানান, টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি চ্যালেঞ্জ সামনে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—নতুন ব্যাংকের নিজস্ব ডেটা সফটওয়্যার তৈরি, গ্রাহকের তথ্য যাচাই এবং নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা ও সেখান থেকে অর্থ প্রদান। এ ছাড়া একীভূতকরণ স্কিম, বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং আইটি অবকাঠামো নিয়েও মঙ্গলবার গভর্নরের সঙ্গে ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আয়ুব মিয়ার বৈঠকে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে জানান, এক্সিম ব্যাংকের নিরীক্ষা রিপোর্ট বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর। আইটি অবকাঠামো আপাতত ভাড়ায় নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে; পুরো সমন্বয় সম্পন্ন হতে তিন বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
ডিসেম্বরে টাকা দেওয়ার আশা
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আয়ুব মিয়া বলেন, ইনসুরেন্স ফান্ডের টাকা পাওয়া গেছে। এখন গ্রাহকদের নামে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা, পুরোনো অ্যাকাউন্ট একীভূত করা এবং শাখাভিত্তিক ছাড় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই অর্থ দেওয়া যাবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই গ্রাহকরা টাকা পাবেন বলে আশা করছি।
আগামী সপ্তাহেই অনুষ্ঠিত হবে বোর্ড মিটিং, আর চলতি মাসেই নতুন এমডি নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হবে। টাকা গ্রাহকের হাতে যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি পূর্ণাঙ্গ স্কিম প্রস্তুত করছে। স্কিম চূড়ান্ত হলে তা প্রকাশ করা হবে।
যারা তুলতে পারবেন
যাদের হিসাবে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা রয়েছে, তারা পুরো টাকা তুলতে পারবেন। এখানে দুই লাখের বেশি থাকলে আপাতত দুই লাখ দেওয়া হবে। বাকি অংশ পরে নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী ফেরত দেওয়া হবে।
যে নিয়মগুলো মানতে হবে
একই ব্যাংকে একজনের একাধিক হিসাব থাকলে জাতীয় পরিচয়পত্র-ভিত্তিক মাত্র একটি হিসাবের বিপরীতে টাকা মিলবে। পাঁচ ব্যাংকে আলাদা আলাদা হিসাব থাকলে প্রত্যেক ব্যাংক থেকেই সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পাওয়া যাবে। কোনো হিসাবের বিপরীতে ঋণ থাকলে আপাতত টাকা মিলবে না—ঋণ সমন্বয়ের পর সিদ্ধান্ত হবে।
১২ হাজার কোটি লাগবে ফেরতে
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে লাগবে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা—যা আসবে ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স স্কিম থেকে। সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। যেখানে ২০ হাজার কোটি দেবে সরকার আর ১৫ হাজার কোটি আসবে গ্রাহকের আমানতকে শেয়ারে রূপান্তর করে। ইতোমধ্যে সরকারের বরাদ্দ এবং ইনসুরেন্স ফান্ডের অংশ নতুন ব্যাংকের হিসাবে ছাড় হয়েছে।
নতুন ব্যাংকের প্রস্তুতি
নতুন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় চালু হয়েছে মতিঝিলের সেনাকল্যাণ ভবনে। চেয়ারম্যানসহ পর্ষদে সরকারের সাবেক ও বর্তমান আমলারা নিয়োগ পেয়েছেন। খুব শিগগিরই স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়ে পর্ষদ আরও শক্তিশালী করা হবে।




