রাজনীতি
অবশেষে দেশে ফিরছেন তারেক রহমান
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি এখন ‘ টক অব দ্য কান্ট্রি ’। এ অবস্থায় তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেই দেশে ফিরবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সূত্রটি জানায়, গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর নিজের নিরাপত্তা ইস্যুকে প্রাধান্য দিয়ে দ্রুত দেশে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি তারেক রহমান। তবে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি । স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানও তাঁর সঙ্গে দেশে ফিরবেন । এর কারণ, তারেককে কেন্দ্র করেই তাঁর স্ত্রী – কন্যা যুক্তরাজ্যে আছেন। তারেক রহমানের দেশে ফেরার সঙ্গে তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত। রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি হিসেবে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা সুবিধা পাবেন। সরকারিভাবে তাঁকে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে সরকার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে ।
তবে আওয়ামী লীগের সময়ে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির পাশাপাশি শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যরাও বিশেষ নিরাপত্তা পেতেন। তবে গণ – অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তায় প্রণীত আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।
২০২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জাতির পিতার পরিবার – সদস্যগণের নিরাপত্তা ( রহিতকরণ ) অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি । এখন এই সরকারের সময় বিশেষ কোনো পরিবারের সদস্যদের জন্য সরকারিভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে । এ কারণে সরকারও বিশেষ কোনো পরিবারের সদস্যদের সরকারিভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে চাইছে না।
বিএনপির দলীয় সূত্র বলছে , দল থেকে তারেক রহমানের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে । তিনি দেশে ফেরার আগে এই নিরাপত্তা বাহিনী প্রস্তুত থাকবে । এই বাহিনীই তারেক রহমানকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে রাখবে। তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গেও এরই মধ্যে বৈঠক করেছে বিএনপির প্রতিনিধিদল। এ ছাড়া খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে রেখে দুটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনারও উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি।
দেশে ফিরে তারেক রহমান কোথায় উঠবেন এবং কোথায় অফিস করবেন তাও প্রায় চূড়ান্ত হয়ে আছে। দলীয় সূত্র বলছে, গুলশান – ২ – এর “ ফিরোজা ” ভবনের পাশের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে উঠবেন তারেক রহমান। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তৎকালীন সরকার খালেদা জিয়াকে এই বাড়ি বরাদ্দ দেয় । বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বাড়িটির নামজারি শেষ করে কাগজপত্র বিএনপি চেয়ারপারসনের হাতে হস্তান্তর করেছে। পরে বাড়িটির সংস্কার করে সেখানে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে । বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্সকে বাড়িটির নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ এই অবস্থার মধ্যে আসলে তাঁর ফেরার কোনো আপডেট আমাদের কাছে নেই। যথাসময়ে, মানে উপযুক্ত মনে হলে উনি আসবেন । ‘ গত ২৩ নভেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বর্তমানে তাঁর শারীরিক অবস্থা সংকটময় বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ।
মায়ের এমন দুঃসময়েও কেন তারেক রহমান দেশে ফিরছেন না, তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে সমানে। দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি নানা মহলের নানা লোকেও তারেক রহমানকে অভয় দিয়ে যাচ্ছেন। এই আলোচনার মধ্যে গত শনিবার মায়ের চিকিৎসার প্রসঙ্গ তুলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তারেক রহমান বলেন, এমন সংকটকালে মায়ের স্নেহ স্পর্শ পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেকোনো সন্তানের মতো আমারও রয়েছে । কিন্তু অন্য আর সকলের মতো এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।
তারেক রহমানের এই স্ট্যাটাসের ব্যাখ্যায় তাঁর ঘনিষ্ঠ এক সূত্রের দাবি, ফেসবুক স্ট্যাটাসে তারেক রহমান দেশ , দল ও দেশের মানুষের কথা বুঝিয়েছেন । বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান বলেছিলেন , তিনি ভোটে অংশ নেবেন । এখনো তিনি সেই অবস্থানেই আছেন । তফসিল ঘোষণার পর দেশে ফিরে তিনি নিজের নির্বাচনী আসনে গিয়ে সমাবেশ করবেন । ওই সমাবেশে দল ও নিজের জন্য ভোট চাইবেন তিনি । তারেক রহমান দেশে আসতে চাইলে এক দিনে তাঁকে ট্রাভেল পাস দেওয়া সম্ভব বলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো . তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন।
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের আলোচনা সভায় তিনি বলেন , তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আইনি বা প্রশাসনিক বাধা নেই । তিনি দেশে ফিরতে চাইলে তাঁকে অত্যন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে , এমনকি এক দিনের ব্যবধানে ট্রাভেল পাস দেওয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব ।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে সরকারের তরফে কোনো বিধিনিষেধ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম । দলীয় সূত্র বলছে , তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে চায় বিএনপি। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে তাঁর দেশে ফেরার দিন – তারিখ ঘোষণা করা হবে । সেনা – সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ জরুরি অবস্থার সময় তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয় । ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি । ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডনে যান । টানা ১৭ বছর লন্ডন থেকেই দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন তিনি।
রাজনীতি
জামায়াতের প্রার্থী হলেন আলোচিত সেই সাংবাদিক
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার আবাসিক সম্পাদক ও সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানকে হবিগঞ্জ-৪ আসনে নিজেদের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। সোমবার (১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা জামায়াতের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে এ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন দলটির জেলা আমির।
জেলা জামায়াতের আমির কাজী মাওলানা মখলিছুর রহমানের সভাপতিত্বে ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মহসিন আলীর সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের।
এ সময় সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে দেশ ও বিদেশের মাটিতে সক্রিয় ছিলাম। সাংবাদিকতার পেশায় থাকার সুবাদে আমি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের কল্যাণে নিজেকে সর্বদা নিয়োজিত রেখেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘হাজার হাজার ছাত্র-জনতার প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী আমাকে যে মূল্যায়ন করেছে, যদি মাধবপুর-চুনারুঘাটবাসী দাঁড়িপাল্লাকে জয়ী করেন তাহলে আমার প্রচেষ্টা থাকবে সিলেট বিভাগের প্রবেশদ্বার এই আসনের প্রত্যেকটি এলাকার সার্বিক উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা।’
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি ও হবিগঞ্জ-১ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী মো. শাহজাহান আলী, জেলার সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাজী আব্দুর রউফ বাহার ও মো. নজরুল ইসলাম, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা আমীর প্রভাষক অলিউল্লাহ জহির, সেক্রেটারি ইয়াছিন খান, চুনারুঘাট উপজেলা জামায়াতের আমির ইদ্রিস আলী, নায়েবে আমীর হাফেজ আ স ম কামরুল ইসলাম, মাধবপুর উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আলাউদ্দিনসহ প্রমুখ।
রাজনীতি
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন জামায়াতের জেলা আমির
জামায়াতের হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট–মাধবপুর) আসনের প্রার্থী মাওলানা মুখলিছুর রহমান সংসদ নির্বাচনে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। সোমবার তিনি নিজের প্রার্থিতা তুলে নিয়ে সাংবাদিক ওয়ালী উল্লাহ নোমানের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন।
মুখলিছুর রহমান জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও হবিগঞ্জ জেলা আমির। তিনি ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে জানিয়েছেন, প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে তিনি আসনের প্রতিটি ইউনিয়নে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় নিয়মিত গণসংযোগ ও জনসম্পৃক্ততার কাজ চালিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, বৃহত্তর রাজনৈতিক বাস্তবতা ও সংগঠনের কৌশলগত বিচক্ষণতার কারণে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে সাংবাদিক ওয়ালী উল্লাহ নোমানকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা আমি সম্মান ও স্বীকৃতি দিয়ে মেনে নিচ্ছি।
মুখলিছুর রহমান আরও বলেন, ব্যক্তিগত পদ-পদবি বা মনোনয়ন নয়, আমাদের লক্ষ্য ন্যায়নীতি, সুশাসন ও ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা। আমি ও আমার সহকর্মীরা পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে কাজ চালিয়ে যাবো।
তিনি সমর্থক ও নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, সংগঠনের সিদ্ধান্তকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ওয়ালী উল্লাহ নোমানের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করুন। আমাদের ঐক্যই শক্তি, যা দাঁড়িপাল্লাকে বিজয়ের পথে নিয়ে যাবে।
রাজনীতি
সিলেটে জামায়াত নেতৃবৃন্দের সাথে মার্কিন দূতাবাস কর্মকর্তার সাক্ষাৎ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সিলেট জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা জেমস এ. স্টুয়ার্ট।
সোমবার বিকেলে মহানগর জামায়াত কার্যালয়ে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় মার্কিন দূতাবাস কর্মকর্তার সাথে উপস্থিত ছিলেন দূতাবাসের সহকারী রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মো. ইকবাল মাহমুদ।
জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে থেকে উপস্থিত ছিলেন- জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য, সিলেট জেলা আমীর ও সিলেট-১ আসনের (মহানগর ও সদর) জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান, মহানগর নায়েবে আমীর ড. নুরুল ইসলাম বাবুল, জেলা সেক্রেটারী ও সিলেট-৪ আসনের (গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ) জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী জয়নাল আবেদীন, মহানগর সহকারী সেক্রেটারী জাহেদুর রহমান চৌধুরী, জেলা জামায়াতের মহিলা বিভাগের সেক্রেটারী অধ্যাপিকা মাহফুজা সিদ্দিকা, মহানগর মহিলা বিভাগের সেক্রেটারী ফৌজিয়া রহমান শিউলি, মহানগর সহকারী সেক্রেটারী শাহিমা খানম হেপী ও জেলা সহকারী সেক্রেটারী ডা. আঙ্গুরা বেগম প্রমুখ।
এ সময় মার্কিন দূতাবাস কর্মকর্তা আগামী নির্বাচনে জামায়াতের প্রস্তুতি এবং ক্ষমতায় গেলে ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চান। এছাড়া তিনি দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে জামায়াতের মতামত সম্পর্কে অবহিত হন।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, মার্কিন দূতাবাস কর্মকর্তার সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ও মানবিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ে জামায়াতের ভুমিকার কথা জানিয়েছি। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে জামায়াতের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং নির্বাচনের প্রস্তুতির ব্যাপারে তুলে ধরেছি। এছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সার্থে মার্কিন সমর্থন অব্যাহত রাখার ব্যাপারে বিস্তারিত আলাপ হয়েছে।
রাজনীতি
এনসিপি ছাড়লেন রাঙামাটির প্রধান সমন্বয়ক
রাঙামাটিতে এবার পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী বিপিন জ্যোতি চাকমা। সোমবার ফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিজেই।
এছাড়াও রবিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে নিজের ফেসবুক ভেরিফাইড আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করে দল ছাড়ার ঘোষণা দেন তিনি।
এর আগে ১৪ নভেম্বর একই কারণে দলটির জেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী উজ্জ্বল চাকমা এনসিপি থেকে পদত্যাগ করেন। উজ্জ্বল এদিন তার নিকট পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে জানান পদত্যাগী সদস্য জেলা প্রধান সমন্বয়কারী বিপিন জ্যোতি।
দল থেকে নিজের পদত্যাগের ব্যাপারে সোমবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি নিশ্চিত করে বিপিন জ্যোতি বলেন, এ নিয়ে আমার ওপর কোনো রকম চাপ বা কারো সঙ্গে কোনো বিরোধ ছিল না। কেবল ব্যক্তিগত, পারিবারিক কারণে ও দীর্ঘদিনের মানসিক চাপে দলীয় সব কার্যক্রম থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিগগিরই কেন্দ্রীয় কমিটির নিকট আমার স্বাক্ষরিত অব্যাহতিপত্র পাঠাব।
এছাড়াও রোববার রাতে ফেসবুক স্ট্যাটাসে দলীয় সব কার্যক্রম থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দলটির ছাত্র সংগঠন ছাত্রশক্তির জেলা নেতা সর্বজিৎ চাকমা।
এদিকে পদত্যাগ নিয়ে ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করা হলেও এনসিপির রাঙামাটি জেলা কমিটির অন্যতম যুগ্ম সমন্বয়কারী জাহিদুল ইসলাম জাহিদ জানান, গত কয়েক দিন ধরে জেলা কমিটিকে ঘিরে কিছু মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। তাই হয়তো অভিমান থেকেই বিপিন জ্যোতি চাকমা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের জানানো হয়েছে।
রাজনীতি
প্রয়োজনে আরেকটা ৫ আগস্ট সংঘটিত হবে: জামায়াত আমির
দিশেহারা হয়ে হতাশ, ক্ষুব্ধ হয়ে চোরাবালিতে কেউ যদি হাঁটার চিন্তা করেন, তাহলে প্রয়োজনে আরেকটা ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, কোনো দেশপ্রেমিক দল চাঁদাবাজ হয়ে ৫ তারিখের পর আবির্ভূত হয়নি। যারা আবির্ভূত হয়েছিলেন, দায় ও দরদ নিয়ে তাদের সঙ্গে বসেছিলাম। এটি শহীদদের রক্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা, এটা বন্ধ করতে হবে। যদি বন্ধ করা না হয়, বিপ্লবী জনগণ, তরুণ জনতা, কোলে বাচ্চা নিয়ে রাস্তায় নেমে আসা ওই মায়েরা আমাদেরকে ক্ষমা করবেন না। বন্ধ করা হয়নি, চাঁদাবাজি অব্যাহত রয়েছে। দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে। ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন। প্রশাসনিক ক্যু করার চেষ্টা করছেন।
আজ সোমবার (০১ ডিসেম্বর) বিকেলে খুলনা নগরের ঐতিহাসিক শিববাড়ী মোড়ে আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া, দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটসংখ্যার ভিত্তিতে সংসদের উচ্চকক্ষে আসন বণ্টন, গণভোট জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আলাদাভাবে করাসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে আট দল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াত আমির শফিকুর রহমান সমাবেশে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ছলে-বলে-কৌশলে কেউ কেউ আমরা শুনতে পাই, বিভিন্ন জায়গায় বসে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন—জনগণ ভোট দিক বা না দিক ক্ষমতায় তাঁদের যেতে হবে। বেলা শেষ, দিনও শেষ। সূর্যও ডুবে গেছে। বাংলাদেশে এটা হবে না, এটা আমরা হতে দেব না, ইনশা আল্লাহ।’
আগের চেয়ে চাঁদার রেট বেড়ে গেছে মন্তব্য করে জামায়াতের আমির বলেন, একটা দেশকে সভ্য দেশ হতে হলে সেই দেশকে দুর্নীতিমুক্ত হতে হয়। কিছু দল ও ব্যক্তি বাংলাদেশকে দফায় দফায় দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করে বিশ্ব দরবারে অপমানিত করেছে। এদের সকলের অতীত রেকর্ড বাংলাদেশের জনগণের হাতে আছে। দুঃখের বিষয়, সকল ফ্যাসিবাদ, দুর্নীতি, বৈষম্য, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের বিপ্লব অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই বিপ্লবের পরের দিন থেকে একটা গোষ্ঠী নিজেদের কপাল-কিসমত গড়ার জন্য বাংলাদেশের জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আজ চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যে সমাজজীবন অতিষ্ঠ-তটস্থ। ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। বিনিয়োগকারী, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী—কেউ শান্তিতে নেই। আগের চেয়ে চাঁদার রেট বেড়ে গেছে বলে তারা সকলে বিষাক্ত নিশ্বাস ফেলে। তারা বলে, আগেও ভালো ছিলাম না, এখন আরও খারাপ। কিন্তু কোনো ইসলামী দলের নামে চাঁদাবাজের তকমা জুড়ে দেওয়া যায়নি।
দেশের বিচারব্যবস্থার প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর অতিবাহিত হয়েছে, এই সময়ের স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের লালিত স্বপ্ন অনেকটাই বাস্তবায়িত হয়নি। দৃশ্যমান কিছু উন্নয়ন সাধন হয়েছে, আমরা তা অস্বীকার করি না। তবে এই উন্নয়ন একটি জাতির আসল উন্নয়ন নয়; একটি জাতির আসল উন্নয়ন হচ্ছে—এই দেশ ও জাতির মধ্যে ন্যায়বিচার এবং সামাজিক সুবিচার আছে কি নেই। বাংলাদেশের গ্রাম আদালত থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত আজকে যার প্রভাব-প্রতিপত্তি নেই, অ্যাকাউন্টভর্তি যার টাকা নেই, বাংলাদেশে তার জন্য কোনো বিচার নেই।
জামায়াতের আমির বলেন, দিশেহারা হয়ে হতাশ, ক্ষুব্ধ হয়ে চোরাবালিতে কেউ যদি হাঁটার চিন্তা করেন, তাহলে প্রয়োজনে আরেকটা ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে। এখন থেকে ঐক্য আমাদের গড়ে তুলতে হবে। ঐক্য আগামী দিনে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে যাবে বিজয়ীর বেশে। এই বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। আগামীর ভোট ঐক্যের পক্ষে, বিভক্তির বিপক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে, কোরআনের পক্ষে, জনগণের পক্ষে। আমরা এই আট দলের বিজয় চাই না। আমরা ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই। আমরা কোনো দলবিশেষের বিজয় চাই না। আমরা মজলুম জনগণের বিজয় চাই। আমরা আল্লাহর কোরআনের বিজয় চাই। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত—এক ভাগ ’৭২ সালের বাকশালপন্থী, আর এক ভাগ ২০২৪ সালের বিপ্লবপন্থী শক্তি। রক্তের সাগর পেরিয়ে চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের পর যেই ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত করা হয়েছে, সেই ফ্যাসিবাদ বাংলার মাটিতে আসবে না। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি কার্যকরে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম। জুলাই সনদকে চূড়ান্ত আইনি ভিত্তি দিতে গণভোটের আয়োজন করতে হবে। একসঙ্গে তালগোল পাকিয়ে এই মাহাত্ম্যকে নষ্ট করবেন না। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করা হোক। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।
সমাবেশে খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, ৮ দল ক্ষমতায় গেলে চাঁদাবাজ থাকবে না। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, এটাকে কেউ ভাঙতে পারবে না, ইনশা আল্লাহ।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা—এই তিনটা স্লোগানের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। কিন্তু গত ৫৩ বছর যাদের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হয়েছে, তারা তিনটা উদ্দেশ্যের একটাও কিঞ্চিৎ বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তারা বারবার ধোঁকা দিয়ে চোরের দিক থেকে দুর্নীতির দিক থেকে বারবার ফার্স্ট বানিয়েছে। আমাদের সন্তানগুলো মায়ের কোলহারা করেছে, লাখ লাখ মানুষকে মিথ্যা মামলার মাধ্যমে তাদের সংসারকে বিরান করেছে, ক্ষমতার চেয়ারে বসে আমাদের দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে; বেগমপাড়া তৈরি করেছে।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম আরও বলেন, ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের ব্যাপারে আপনারা হিসাব-নিকাশ মিলিয়ে দেখেছেন, আপনাদের পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে। এখন নির্বাচনকে পিছিয়ে নেওয়ার জন্য আপনারা ষড়যন্ত্র করছেন। ভালো করে জেনে রাখেন, জনগণ আপনাদের পক্ষে মতামত, রায় দেওয়ার মতো পরিবেশ নেই। এখন আপনারা গুন্ডামি, সেন্টার দখল, বিভিন্ন সন্ত্রাসীর মাধ্যমে আপনারা ক্ষমতার চেয়ারে বসবেন—সেদিন ভুলে যান। এখন দেশের মানুষ সজাগ রয়েছে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুফতি মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব ইউসুফ সাদেক হক্কানী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির (বিডিপি) চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আবদুল আউয়াল ও মহাসচিব ইউনুস আহমাদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন প্রমুখ।



