আন্তর্জাতিক
বাংলাদেশের সঙ্গে বিরোধ, আন্তর্জাতিক সালিশে যাচ্ছে আদানি
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত অর্থপ্রদানের বিরোধ নিষ্পত্তিতে আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ী গৌতম আদানির মালিকানাধীন বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ার। সোমবার আদানি গ্রুপের এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে বলে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের অর্থ প্রদানের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আন্তর্জাতিক সালিশ প্রক্রিয়া বেছে নিয়েছে আদানি পাওয়ার। ভারতীয় শিল্পপতি গৌতম আদানি নেতৃত্বাধীন এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) বকেয়া অর্থ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। দুই পক্ষের মধ্যে ২০১৭ সালে স্বাক্ষরিত বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) আওতায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আদানি পাওয়ার।
বিবৃতিতে আদানি পাওয়ার বলেছে, কিছু নির্দিষ্ট খাতের ব্যয়ের হিসেব ও বিল করার পদ্ধতি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এমন অবস্থায় উভয় অংশীদারই বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। এতে দ্রুত, মসৃণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক সমাধানের বিষয়ে উভয়পক্ষই আশাবাদী।
তবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে বলেছেন, আলোচনা এখনো চলছে। আলোচনা শেষ হলে প্রয়োজনে আমরা আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়ায় যাব।
২০১৭ সালে ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কোম্পানি আদানি পাওয়ারের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় অবস্থিত কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে ২৫ বছর মেয়াদী একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
আদানি পাওয়ার গড্ডা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎচাহিদার প্রায় এক-দশমাংশ পূরণ করে এই কোম্পানিটি।
গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে রয়টার্স বলেছিল, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ করেছে। কোম্পানিটি ভারতের সরকারের কাছ থেকে পাওয়া কর-সুবিধার ছাড় বাংলাদেশকে না দেওয়ায় এই অভিযোগ করা হয়।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ আদানিকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ১৪.৮৭ টাকা (০.১২২ মার্কিন ডলার) হারে মূল্য পরিশোধ করেছে; যা অন্যান্য ভারতীয় কোম্পানির সরবরাহকৃত বিদ্যুতের গড় ৯.৫৭ টাকার তুলনায় অনেক বেশি।
গত সপ্তাহে আদানি পাওয়ার বলেছিল, বাংলাদেশের কাছ থেকে পাওনা অর্থের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে এসেছে। গত মে মাসে আদানি পাওয়ারের বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলারে নেমে আসে; যা চলতি বছরের শুরুতে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের কাছে আদানির বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ১৫ দিনের শুল্কের সমান।
সোমবারের বিবৃতিতে কোম্পানিটি বলেছে, আদানি পাওয়ার বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী ও উচ্চমানের বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখবে।
আদানি পাওয়ারের গড্ডা প্ল্যান্টটি আমদানি করা কয়লা দিয়ে চলে এবং এই কেন্দ্রে উৎপাদিত পুরো বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করার কথা। কোম্পানিটি বলেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিটি ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির উদ্দেশ্যগুলোকে এগিয়ে নিতে আরও সহায়তা করছে। ২০১৯ সালে নয়াদিল্লি গড্ডার প্ল্যান্টটিকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অংশ হিসাবে ঘোষণা করে। এর ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে আয়কর এবং অন্যান্য শুল্ক ছাড়ের মতো প্রণোদনা পায়।
গত ডিসেম্বরে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আদানি পাওয়ার ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) মাঝে ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর স্বাক্ষরিত চুক্তি ও বাস্তবায়ন চুক্তি অনুযায়ী, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের করহার পরিবর্তন হলে সেই বিষয়ে বাংলাদেশকে দ্রুত অবহিত করতে হবে। একই সঙ্গে ভারত সরকারের কাছ থেকে ‘‘কর ছাড় সুবিধাও’’ দেওয়ার কথা আদানির।
কিন্তু আদানি পাওয়ার তা করেনি। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর ও ২২ অক্টোবর বিপিডিবির পক্ষ থেকে আদানির কাছে দুই দফায় চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে ভারত সরকারের কাছ থেকে পাওয়া সুবিধার বিপরীতে বাংলাদেশে সরবরাহ করা বিদ্যুতের দামে সমন্বয়ের আহ্বান জানানো হয়। এসব চুক্তি এবং চিঠি সবার জন্য উন্মুক্ত না হলেও রয়টার্স দেখেছে বলে সেই সময় জানায়।
গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিপিডিবির দু’জন কর্মকর্তা বলেছিলেন, দুই দফায় চিঠি দেওয়া হলেও তারা আদানি পাওয়ারের কোনও সাড়া পাননি।
কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারত সরকারের কাছ থেকে যে করছাড় পেয়েছে আদানি পাওয়ার, সে অনুযায়ী বিদ্যুতের দাম ধরা হলে বাংলাদেশের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে প্রায় শূন্য দশমিক ৩৫ সেন্ট সাশ্রয় হবে বলে বিপিডিবির ধারণা।
গড্ডা প্ল্যান্ট থেকে কেনা বিদ্যুতের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের একটি সারসংক্ষেপ দেখেছে রয়টার্স। সারসংক্ষেপের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত গড্ডা প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশে ৮ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। কর ছাড়ের বিষয়টি সমন্বয় করা হলে এই বিদ্যুতে বাংলাদেশের প্রায় ২৮ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হতো।
আন্তর্জাতিক
বিশ্বকে ১৫০ বার উড়িয়ে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, উত্তর কোরিয়াই একমাত্র দেশ নয় যে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করছে, রাশিয়া এবং চীনও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করছে। কিন্তু তারা এ নিয়ে কথা বলছে না।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সিবিএস নিউজে এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
রোববার (২ নভেম্বর) সাক্ষাৎকারে উপস্থাপিকা নোরা ও’ডোনেল যখন ট্রাম্পকে বলেছিলেন যে একমাত্র দেশ যে দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করছে তারা হল উত্তর কোরিয়া।
মূলত কয়েকদিন আগেই ৩০ বছরের বেশি সময় পর আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, অন্য দেশগুলো পরীক্ষা চালাচ্ছে। আমরাই একমাত্র দেশ যারা এই পরীক্ষা করি না। আমি চাই না যে আমরা একমাত্র দেশ হয়ে থাকি যারা পরীক্ষা চালায় না।
তিনি আরও বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে তা পরীক্ষা না করা বাস্তবসম্মত নয়। ট্রাম্প প্রশ্ন তোলেন, আপনি অস্ত্র বানালেন, কিন্তু পরীক্ষা করলেন না- তাহলে জানবেন কীভাবে এটা কাজ করে কিনা?
ট্রাম্প আরও জোর দিয়ে বলেন, আমেরিকার অসাধারণ পারমাণবিক শক্তি আছে, যা অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। রাশিয়া দ্বিতীয়। চীন অনেক দূরের তৃতীয়, কিন্তু পাঁচ বছরের মধ্যে তারা সমান হবে।
এসময় তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে বিশ্বকে ১৫০ বার উড়িয়ে দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত পারমাণবিক অস্ত্র আছে। রাশিয়ার কাছে প্রচুর পারমাণবিক অস্ত্র আছে, এবং চীনের কাছেও আগামীতে অনেক থাকবে।
আন্তর্জাতিক
মধ্যরাতে আফগানিস্তানে ৬.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
ইউএসজিএস জানায়, রোববার (২ নভেম্বর) দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।
আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
গণমাধ্যম আল–জাজিরা জানায়, আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।
ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটি জানিয়েছেন, “১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।”
আন্তর্জাতিক
অন্য দেশের ‘সরকার বদলের’ মার্কিন নীতির সমাপ্তি: তুলসী গ্যাবার্ড
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনকালে দেশটির পূর্বের ‘রিজিম চেঞ্জ বা শাসনপদ্ধতি পরিবর্তন’ নীতির সমাপ্তি হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড জানিয়েছেন।
শুক্রবার বাহরাইনে অনুষ্ঠিত ‘মানামা ডায়ালগ’ নিরাপত্তা সামিটের আগে তিনি এ মন্তব্য করেন। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা গবেষণা সংস্থা এ সম্মেলন আয়োজন করে। খবর এপির
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুলসী গ্যাবার্ডের এ মন্তব্য ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সফরকালের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বের লক্ষ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র সম্প্রসারণ। তবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তা পরিবর্তিত হয়ে ‘অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা’কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ওয়াশিংটনের বিগত সময়ের চিন্তাপদ্ধতি দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে আটকে রেখেছে বলে মন্তব্য করেন তুলসী গ্যাবার্ড।
তিনি বলেন, দশকের পর দশক ধরে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি সরকার পরিবর্তন (রেজিম চেঞ্জ) বা জাতি গঠনের একধরনের ব্যর্থ চক্রে আটকে ছিল। এটি ছিল “সবার জন্য প্রযোজ্য”এমন একটি নীতি, যেখানে সরকার উৎখাত করা, অন্য দেশে আমাদের শাসনব্যবস্থা চাপানোর চেষ্টা করা এবং তেমন জানাশোনা ছাড়াই নানা সংঘাতে হস্তক্ষেপ করা এবং মিত্রের চেয়ে বেশি শত্রু তৈরি করে চলে আসা।
তিনি বলেন, এমন নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয়, অগণিত মানুষের প্রাণহানি এবং অনেক ক্ষেত্রে বৃহত্তর নিরাপত্তা হুমকি তৈরি হয়েছে, আইএসআইএসের (ইসলামিক স্টেট) মতো ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর উত্থান হয়েছে।
তুলসী গ্যাবার্ডের এই মূল্যায়ন ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র যে যুদ্ধ শুরু করেছিল, সে যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্পের নিজস্ব ভাবনার সঙ্গে মিলে যায়। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের চুক্তি হয়েছিল, যা বাইডেন প্রশাসনের সময়ে ২০২১ সালে বিশৃঙ্খলভাবে শেষ হয়। এ ছাড়া তিনি সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারাকে গ্রহণ করেছেন। আল-কায়েদার সাবেক সদস্য আল-শারা একসময় ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে বন্দী ছিলেন।
মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের নীতি এখনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। গ্যাবার্ড বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি এখনো ‘ভঙ্গুর’। এদিকে ইরান সম্প্রতি পারমাণবিক স্থাপনায় নতুন কার্যক্রম শুরু করেছে।
তবে তুলসী গ্যাবার্ড ট্রাম্পের দক্ষিণ আমেরিকায় যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন, মাদক বহনের অভিযোগ তুলে জাহাজে হামলা এবং ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর বিষয়ে মন্তব্য করেননি।
আন্তর্জাতিক
সৌদিতে এক সপ্তাহে ২১ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার
সৌদি আরবে ব্যাপক ধরপাকড় চালানো হয়েছে। দেশটিতে এক সপ্তাহেই ২১ হাজারের বেশি প্রবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আবাসন, শ্রম ও সীমান্ত সুরক্ষা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।
রোববার (০২ নভেম্বর) গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৩ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়েছে। দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এ অভিযান পরিচালনা করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আবাসন আইন লঙ্ঘনের দায়ে ১২ হাজার ৭৪৫ জন, সীমান্ত নিরাপত্তা আইন ভঙ্গের অভিযোগে ৪ হাজার ৫৭৭ জন এবং শ্রম আইন লঙ্ঘনের ঘটনায় ৪ হাজার ৩২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা ও সরকারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এসব অভিযান পরিচালনা করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে সৌদিতে প্রবেশের সময় ১ হাজার ৬৮৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ইয়েমেনি নাগরিক ৪৬ শতাংশ, ইথিওপিয়ান ৫৩ শতাংশ এবং অন্য দেশের নাগরিক ১ শতাংশ। আবার, অবৈধভাবে সৌদি আরব ছাড়ার চেষ্টা করার সময় আরও ৫৯ প্রবাসীকে আটক করা হয়েছে।
একই সময়ে আবাসন ও শ্রম আইন লঙ্ঘনকারীদের আশ্রয় বা সহায়তা দেওয়ার অভিযোগে ২১ সৌদি নাগরিককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে দেশটিতে ৩১ হাজার ৮২৬ প্রবাসীর বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলছে। তাদের মধ্যে ৩০ হাজার ১৫১ পুরুষ এবং ১ হাজার ৬৭৫ নারী।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে ২১ হাজার ৯৮০ জনকে দেশে ফেরত পাঠাতে প্রয়োজনীয় ভ্রমণ নথি সংগ্রহের জন্য নিজ দেশের দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৩ হাজার ২৭৯ জনকে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে, আর ৫ হাজার ১০ জনকে ফেরত পাঠানোর চূড়ান্ত প্রক্রিয়া চলছে।
সৌদি আইনে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমে সহায়তা করলে ১৫ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ সৌদি রিয়াল জরিমানার বিধান রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বারবার সতর্কতা জারি করে আসছে।
আন্তর্জাতিক
সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পঞ্চম গ্লোবাল হজ সম্মেলন
আগামী ৯ থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত “মক্কা থেকে বিশ্বে” শীর্ষক থিমে পঞ্চম গ্লোবাল হজ কনফারেন্স অ্যান্ড এক্সিবিশন আয়োজন করতে যাচ্ছে সৌদি আরব।
এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করছে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়, যা অনুষ্ঠিত হবে জেদ্দা সুপারডোমে। এ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাপী হজযাত্রীদের জন্য হজ ব্যবস্থাপনা ও সেবার মানোন্নয়নে সৌদি আরবের অব্যাহত প্রচেষ্টা তুলে ধরা।
হজ সম্মেলনটি হজযাত্রা উন্নয়নে জাতীয় উদ্যোগসমূহ উপস্থাপন ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের অন্যতম প্রধান প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। এতে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে—যেখানে ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি খাতে নতুন উদ্ভাবনী সমাধান নিয়ে আলোচনা হবে, যার মাধ্যমে হজ ব্যবস্থার গুণগত মান আরও উন্নত করা সম্ভব হবে।
এই আয়োজন সৌদি সরকারের বৃহত্তর কৌশলের অংশ, যার মাধ্যমে হজ ব্যবস্থাপনায় অপারেশনাল, সংগঠনগত ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে হজযাত্রীদের জন্য আরও নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও প্রযুক্তিনির্ভর হজ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করা হবে।
৫২ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এই প্রদর্শনীতে ১৩টি খাতের ২৬০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করবে, যার মধ্যে রয়েছে পর্যটন, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিচালনা খাত। সম্মেলনে থাকবে ৯৫ জন আন্তর্জাতিক বক্তা, ৮০টি প্যানেল আলোচনা, ৬০টি কর্মশালা, এবং ১০০টিরও বেশি উদ্ভাবনী ধারণা উপস্থাপন। আশা করা হচ্ছে, ইভেন্টটিতে ১ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি দর্শনার্থী অংশ নেবেন, যারা সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসবেন।
হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় এ সময় বেশ কয়েকটি নতুন উদ্যোগও উন্মোচন করবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:“এ’আশা-থন” – হজযাত্রীদের জন্য নমনীয় ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক খাবার সরবরাহের নতুন মডেল। “পবিত্র স্থানগুলিকে মানবিকীকরণ করা” – পবিত্র স্থানগুলোকে আরও আরামদায়ক ও মানবিক অভিজ্ঞতায় পরিণত করার উদ্যোগ। “টেকসই সমাধান” – পরিবেশবান্ধব শক্তি, স্মার্ট কুলিং প্রযুক্তি ও সম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে টেকসই হজ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা। এছাড়া “উদ্ভাবন অঞ্চল”-এ ১৫টি প্রযুক্তি স্টার্টআপ অংশ নেবে, যারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডেটা অ্যানালিটিক্স ব্যবহার করে ভিড় ব্যবস্থাপনা ও অপারেশন উন্নয়নে প্রতিযোগিতা করবে।
সম্মেলনের সময় হজ খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কৌশলগত চুক্তি ও অংশীদারিত্ব স্বাক্ষরিত হবে, যা ডিজিটাল রূপান্তর, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন এবং সেবার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
সম্মেলনে আলোচিত হবে তিনটি মূল বিষয়—ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন, স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট ও অপারেশনাল সাসটেইনেবিলিটি। এই বিষয়গুলো সৌদি ভিশন ২০৩০ ও “পিলগ্রিম এক্সপেরিয়েন্স প্রোগ্রাম”-এর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত, যার লক্ষ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে হজযাত্রাকে আরও সহজ, নিরাপদ ও টেকসই করে তোলা।
সর্বোপরি, এই গ্লোবাল হজ কনফারেন্স ও এক্সিবিশন সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নের অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে। এটি বিশ্বব্যাপী বিশেষজ্ঞদের একত্রিত করে নবপ্রযুক্তি, স্মার্ট ব্যবস্থাপনা ও উদ্ভাবনী সমাধানের মাধ্যমে হজ অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ ও আধ্যাত্মিকভাবে অর্থবহ করে তুলবে।
কাফি



