জাতীয়
৫ বছর জীবিত না ফিরলে ‘গুম’ ঘোষণা করতে পারবেন ট্রাইব্যুনাল
‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। ফলে কোনো ব্যক্তি অন্যূন ৫ বছর গুম থাকলে এবং জীবিত না ফিরলে ট্রাইব্যুনাল তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ডিস-অ্যাপিয়ার্ড’ বা ‘গুম’ ঘোষণা করতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অধ্যাদেশ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সরকার ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার ট্রাইব্যুনাল’র জন্য মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দিতে পারবেন।
ভুক্তভোগী বা অভিযোগকারীও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ট্রাইব্যুনালে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন এবং গুম হওয়া ব্যক্তির স্ত্রী বা তার ওপর নির্ভরশীল পরিবারের কোনো সদস্য কমিশনের পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে গুম হওয়া ব্যক্তির সম্পত্তি ব্যবহার করতে পারবেন।
জাতীয়
হাদির প্রথম জানাজা কোথায়, জানাল ইনকিলাব মঞ্চ
ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংগঠনটির মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির প্রথম জানাজা সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, শহীদ হাদির মরদেহ বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট আজ স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে। ফ্লাইটটি সন্ধ্যা ৬টা ০৫ মিনিটের দিকে ঢাকায় পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইনকিলাব মঞ্চ আরও জানায়, সিঙ্গাপুরের (দ্য আঙ্গুলিয়া মসজিদ) সকাল ১০টায় হাদির প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে দেশে ফিরিয়ে এনে শনিবার বাদ জোহর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে দ্বিতীয় জানাজা আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, আততায়ীর গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে টানা সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের পর চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সাহসী মুখ শরিফ ওসমান হাদি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১০টার দিকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণ ও চেতনাকে ধারণ করতে হাদি প্রতিষ্ঠা করেন ইনকিলাব মঞ্চ। তার মৃত্যুর বিষয়টি বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নিশ্চিত করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির এক সাহসী যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু জাতির জন্য গভীর বেদনার সংবাদ।
হাদির ইন্তেকালের খবরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শোক প্রকাশ করেন। পাশাপাশি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল—বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গভীর শোক ও সমবেদনা জানায়।
সরকারের পক্ষ থেকে আজ দোয়া মাহফিল এবং আগামীকাল রাষ্ট্রীয় শোক পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।
এমকে
জাতীয়
নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবিরকে হেনস্তা
রাজধানীর ফার্মগেটে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার ভবনের সামনে একদল ব্যক্তির হেনস্তার শিকার হয়েছেন ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবির। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওই ভবনের সামনে বিক্ষোভ চলাকালে তাকে নাজেহাল করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে একদল বিক্ষোভকারী ডেইলি স্টার ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করলে ঘটনাস্থলে যান সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভাপতি নূরুল কবির। সেখানে গিয়ে হামলাকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করলে তিনি তাদের তোপের মুখে পড়েন।
ঘটনার একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, ভিড়ের মধ্যে এক যুবক তাকে ধাক্কা দিচ্ছেন এবং ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ বলে গালিগালাজ করা হচ্ছে। ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে একজনকে তার চুল টানতেও দেখা যায়।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ ফার্মগেটে ডেইলি স্টার ভবনে গিয়ে ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে ওই সময় ভবনের ভেতরে থাকা পত্রিকাটির একাধিক সাংবাদিক আটকা পড়েন।
এই ঘটনার খবর পেয়ে পরিস্থিতি জানতে এবং শান্ত করার উদ্দেশে ঘটনাস্থলে গেলে ভবনের সামনে অবস্থানরত বিক্ষোভকারীদের একটি অংশের বাধার মুখে পড়েন নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবির।
এমকে
জাতীয়
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুসংবাদ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৮ই ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১০টা দিকে তিনি মারা যান
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা, হিন্দুস্তান টাইমস এবং দ্য অস্ট্রেলিয়ান-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, শরীফ ওসমান হাদি ২০২৪ সালে শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। সেই আন্দোলনের পর থেকেই তিনি দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে অন্যতম অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
হিন্দুস্তান টাইমস তাদের প্রতিবেদনে তাকে ‘বাংলাদেশি ছাত্র অভ্যুত্থান নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। আল-জাজিরা জানিয়েছে, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রভাবশালী এই নেতার মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় শূন্যতা তৈরি হলো।
শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর থেকেই বিভিন্ন স্থানে উত্তজনা ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। দ্য অস্ট্রেলিয়ান জানিয়েছে, প্রিয় নেতার মৃত্যুর সংবাদে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ ও সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
এমকে
জাতীয়
হাদির জন্য আজ সারা দেশে বিশেষ দোয়া, কফিন মিছিল
জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সারাদেশে জুমার নামাজের পর বিশেষ দোয়া ও কফিন মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জুলাই ঐক্য।
বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচির কথা জানানো হয়।
বিবৃতিতে জুলাই ঐক্যের কেন্দ্রীয় সংগঠক ইসরাফিল ফরাজী বলেন, সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামী বিপ্লবী ওসমান বিন হাদিকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন। তার শাহাদাতে শুক্রবার সারাদেশের সব মসজিদে বাদ জুমা বিশেষ দোয়া এবং কফিন মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, শহীদ ওসমান বিন হাদি জুলাই আন্দোলনের অস্তিত্বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তার রক্তের প্রতিটি ফোঁটার হিসাব বাংলাদেশের মাটিতেই নেওয়া হবে, ইনশাআল্লাহ। একই সঙ্গে তিনি দেশের বিপ্লবী জনগণকে ধৈর্য ও সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে নির্বাচনী প্রচারণা শেষে ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হন ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এমকে
জাতীয়
নির্বাচনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় ইসি, পুলিশের বিভিন্ন বিভাগে চিঠি
গত ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নসির উদ্দিন। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার পরের দিনই ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর ১৩ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর ও পিরোজপুরের দুটি নির্বাচনী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি স্থানে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনা ঘটছে বলে জানা যায়।
গত বুধবার দিবাগত রাতে ফেনী সদর উপজেলার শর্শাদিতে গ্রামীণ ব্যাংকের শর্শাদি বাজার শাখায় অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এতে ব্যাংকের তিনটি মোটরসাইকেল ও আসবাব পুড়ে যায়।
নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, হাদির ঘটনা থেকে শুরু করে যেসব ঘটনা ঘটছে তাতে নির্বাচন কমিশনে নির্বাচনের নিরাপত্তা নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন একাধিকবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সব নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও তাঁদের কার্যালয়ের নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের বিভিন্ন বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকেও এই শঙ্কার কথা জানিয়েছে ইসি। সম্প্রতি দুজন প্রার্থীও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে। নির্বাচনী কাজে কোনো ধরনের বাধা যাতে সৃষ্টি না হয় সে জন্য কমিশন এই নিরাপত্তা চাচ্ছে।
নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা স্বীকার না করলেও বাড়তি নিরাপত্তা চাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ।
গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী নিরাপত্তা নিয়ে তেমন কোনো শঙ্কা নেই। তবে যেহেতু একটা ঘটনা ঘটেছে, আমরা সবাইকে নিরাপত্তার জন্য বলেছি। এটা নিয়ে যে কমিশন সেভাবে শঙ্কিত বা আতঙ্কগ্রস্ত তা কিন্তু না। যেহেতু নির্বাচন আসছে, তাই আমরা একটা বাড়তি নিরাপত্তার কথা বলেছি, যাতে কোনো রকম ঘটনা না ঘটে। কোনো নাশকতা যদি কেউ করতে চায়, সে যেন সুযোগ না পায়।
নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ২০১৪ সালের বিতর্কিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের দিন ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও একতরফা নির্বাচনের আগে অনেক নির্বাচন অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই নির্বাচনের পরিসংখ্যান প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যালট পেপার ও ব্যালট বক্স ছিনতাই ও বিভিন্ন সহিংস ঘটনার কারণে মোট ৫৯৬টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। এবার জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনমুখী। কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নিবন্ধন স্থগিত থাকা দল আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য কোনো তৎপরতা নেই। আওয়ামী লীগের সময় গৃহপালিত বিরোধীদল হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টিও এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। সে ক্ষেত্রে চোরাগোপ্তা হামলা ছাড়া প্রকাশ্যে তেমন কিছু ঘটার আশঙ্কা নেই।
গত ১৪ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ নির্বাচন নিয়ে কোনো আশঙ্কা নেই এবং নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা ব্যর্থ হবে বলে জানান। তবে তিনি চোরাগুপ্তা হামলার আশঙ্কার বিষয়টি উড়িয়ে দেননি। ওই দিন রাজধানীর নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কনফারেন্স রুমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে আয়োজিত এক বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘চোরাগুপ্তা হামলার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আমরা এগুলোকে উড়িয়ে দিচ্ছি না। এ ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে বা হামলাকারীদের যেন কঠোর হস্তে দমন করা হয় এবং ওই ধরনের ঘটনা ঘটলে অপরাধীরা যেন ধরা পড়ে সে বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছে ইসি।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসির নির্দেশ : সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে সারা দেশে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়সমূহের নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কার্যালয়গুলোতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করতে বলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন স্বাক্ষরিত এসংক্রান্ত একটি চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, গত ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি জারি করা হয়েছে। এরই মধ্যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়সমূহের নির্বাচনসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি, নির্বাচনী মালামাল, যন্ত্রপাতি সংরক্ষিত রয়েছে বিধায় নির্বাচনকালীন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় ওই অফিসসমূহে সংরক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ নথি, নির্বাচনী মালামালের সুরক্ষাসহ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচরীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক মর্মে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে। এ অবস্থায় রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের অফিসসমূহের নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয়সংখ্যক পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের সদয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের কার্যালয়সমূহের নিরাপত্তা চাওয়ার আগেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ মাঠপর্যায়ের নির্বাচন কার্যালয় এবং রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া তিন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাসহ সব রিটার্নিং অফিসারে জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা চেয়েছে ইসি। গত ১৩ ডিসেম্বর পুলিশের বিভিন্ন বিভাগকে পাঠানো তিনটি চিঠিতে ইসি এই নিরাপত্তা চায়। সে সময় সিইসির প্রাপ্য পুলিশি এসকর্টের পাশাপাশি নির্বাচনকালীন আরো একটি গাড়িসহ অতিরিক্ত এসকর্ট চাওয়া হয়। এ ছাড়া চার কমিশনার ও সিনিয়র সচিবের বাসভবন ও অফিসে যাতায়াতসহ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা চাওয়া হয়। পাশাপাশি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং সব রিটার্নিং অফিসারের জন্য গানম্যান নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানায় ইসি।
নিরাপত্তা শঙ্কায় ইসির দ্বারস্থ দুই সম্ভাব্য প্রার্থী : নির্বাচনে নিরাপত্তা চেয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রেহা কবির সিগমা। আর লিখিত আবেদন না করলেও মৌখিকভাবে নিরাপত্তা চেয়ে গেছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে দলের প্রার্থী আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। গত বুধবার তাঁরা আলাদাভাবে নির্বাচন কমিশনে এসে এই নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানায়। আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রথমে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ও ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সঙ্গে দেখা করে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানান। এরপর সিগমা সিইসি, নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ ও আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের সঙ্গে দেখা করে লিখিত আবেদন জমা দেন।
সিইসিকে দেওয়া লিখিত অভিযোগে কাজী রেহা কবির সিগমা বলেন, ‘আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন পক্ষপাতমুক্ত, সুষ্ঠু ও সবার জন্য নির্বিঘ্ন করা অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের অঙ্গীকার। কিন্তু নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ও বাধাগ্রস্ত করার প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে অবিলম্বে জড়িত ও দায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার আবেদন করছি।’
লিখিত আবেদন জমা দেওয়ার পর রেহা কবির সিগমা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার কর্মী ও আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই ইসি ও প্রশাসনের কাছে সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছি।’
আসাদুজ্জামান ফুয়াদের দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মৌখিকভাবে নিরাপত্তা শঙ্কা জানিয়েছে আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
ফুয়াদ ও সিগমার সাক্ষাতের বিষয় জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘ব্যারিস্টার ফুয়াদ এসেছিলেন। তাঁর অভিযোগ হচ্ছে, পুলিশ তাঁকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে না। আমরা সার্বিকভাবে সব প্রার্থীর নিরাপত্তার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি।’
এ বিষয়ে আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ‘প্রার্থীরা কেউ যদি অস্ত্র নিতে চায়, লাইসেন্স করতে পারবে। দেহরক্ষী চাইলেও তিনি নিতে পারবেন। সরকার তো সেই সুযোগ দিয়েছে। তার পরও আমরা সবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছি।’
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাদির ওপর হামলার পর এরই মধ্যে অনেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে তাঁদের কাছে অভিযোগ রয়েছে। তবে আমরা সব অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। অনেকের নিরাপত্তাব্যবস্থার দেখভাল শুরু হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অভিযান চলছে।
আইন-শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিশেষ পরিপত্র জারি : গত বুধবার আইন-শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিশেষ পরিপত্র জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। ইসি সচিবালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন স্বাক্ষরে এই পরিপত্র জারি করা হয়েছে। পরিপত্রে সরকার কর্তৃক সামরিক বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। পাশাপাশি এই ক্ষমতা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে জানায় ইসি। একই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সম্ভাব্যতা অনুযায়ী কেন্দ্রসমূহে সিসিটিভি কাভারেজ নিশ্চিত করা এবং মাঠে ব্যবহৃত ইন্টারনেট কানেক্টেড বডি ক্যামেরা ও একটি ‘লাইভ ফিড’ নির্বাচন কমিশন সমন্বয় সেলে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে বলেও পরিপত্রে জানানো হয়।
পরিপত্রে বলা হয়, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন-পরবর্তী সাত দিন পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা দল ছাড়া সব বাহিনী ভোটের সময় পাঁচ দিন মোতায়েন থাকবে, যা আনসারদের জন্য ছয় দিন বরাদ্দ।
পরিপত্রে আরো বলা হয়, ভোটার, প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে এবং ভোটকেন্দ্রসহ নির্বাচনী সামগ্রীর নিরাপত্তা বজায় রাখা হবে। নির্বাচনের সময় বাহিনী মোতায়েনের ধরন অনুযায়ী কেন্দ্রভিত্তিক স্থায়ী মোতায়েন, স্থায়ী-অস্থায়ী চেকপোস্ট, মোবাইল টহল ও আভিযানিক দল এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স কার্যকর থাকবে। নির্বাচনের আগে চার দিন, ভোটের দিন এবং ভোটের পর দুই দিন পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা ও অপতথ্য মনিটরিং সেল পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার, গুজব ও অপতথ্য রোধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
উল্লেখ্য, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট। সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি, রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল দায়েরের শেষ তারিখ ১১ জানুয়ারি, আর নিষ্পত্তি ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ ২১ জানুয়ারি, নির্বাচনী প্রচার চলবে ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত।
এমকে




