পুঁজিবাজার
এটিবিতে রেনাটার প্রেফারেন্স শেয়ারের লেনদেন শুরু
প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) রেনাটা পিএলসির প্রেফারেন্স বা অগ্রাধিকারমূলক শেয়ার লেনদেন আজ শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টায় এটিবিতে লেনদেন তালিকায় নাম লিখিয়েছে কোম্পানিটির প্রেফারেন্স শেয়ার।
এ নিয়ে ডিএসইর এই লেনদেন প্ল্যাটফর্মে দুটি সিকিউরিটিজ তালিকাভূক্ত হলো। তবে, লেনদেন তালিকায় নাম লেখালেও প্রথম অর্ধঘন্টায় রেনাটার প্রেফারেন্স শেয়ারে কোনো লেনদেন হয়নি। লেনদেন শুরুর জন্য শেয়ারটির অভিহিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৯০০ টাকা।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদন সাপেক্ষে রেনাটা পিএলসি সম্প্রতি ৩২৫ কোটি টাকার প্রেফারেন্স বা অগ্রাধিকারমূলক শেয়ার ইস্যু করেছে। এই প্রেফারেন্স শেয়ারের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করবে কোম্পানিটি।
তথ্যানুসারে, রেনাটার ইস্যু করা ৩২৫ কোটি টাকার প্রেফারেন্স শেয়ারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি নন-কিউমুলেটিভ, মানে কোনো বছর লভ্যাংশ না পেলে সেটি ভবিষ্যতে জমা হবে না এবং নন-পার্টিসিপেটিভ, মানে কোম্পানির মুনাফার ওপর ভিত্তি করে প্রেফারেন্স শেয়ারধারীরা বার্ষিক ১৫ শতাংশ হারে মুনাফা পাবেন। এ প্রেফারেন্স শেয়ারের মেয়াদ ছয় বছর এবং তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ বছর পর্যন্ত বার্ষিক ২৫ শতাংশ হারে প্রেফারেন্স শেয়ার থেকে সাধারণ শেয়ারে রূপান্তর করা হবে। একসময় এ প্রেফারেন্স শেয়ার পুরোপুরি সাধারণ শেয়ারে রূপান্তর হবে। এক্ষেত্রে রূপান্তর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭৫ টাকা।
এ বছরের জুলাইয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছ থেকে প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুর বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন পায় রেনাটা। এরপর গত ২০ সেপ্টেম্বর বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) এ বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেয় কোম্পানিটি।
পুঁজিবাজারের সার্বিক বিস্তার তথা বাজার পরিধি বাড়ানোর লক্ষ্য সামনে রেখেই চালু করা হয়েছিল এটিবি। উদ্দেশ্য ছিল– পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানিগুলোর জন্য সহজ ও কম খরচে মালিকানা হস্তান্তরের একটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করা। এই প্ল্যাটফর্মকে জনপ্রিয় করার মাধ্যমে পুঁজিবাজারের মূল মার্কেটে ভালো কোম্পানিগুলোকে নিয়ে আসা। পুঁজিবাজারের বাইরে অনেক ভালো কোম্পানি রয়েছে, যেগুলো বিভিন্ন কারণে তালিকাভুক্ত হতে অনাগ্রহ দেখায়। কিছু কিছু কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়াকে প্রক্রিয়াগত ঝামেলার বিষয় মনে করে। ওই সব কোম্পানি এটিবিতে তালিকাভুক্ত হতে চাইলে রাইট শেয়ার কিংবা প্রাইভেট প্লেসমেন্টে শেয়ার ছেড়েও তাদের মূলধন বাড়াতে পারবে।
তবে দুঃখজনক হলেও দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের এটিবি প্ল্যাটফর্মে এটি নিয়ে এখন পর্যন্ত মাত্র ৪টি সিকিউরিটিজ তালিকাভুক্ত হলো। ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি ব্রোকারেজ হাউজ লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের মাধ্যমে ডিএসইতে যাত্রা শুরু হয়েছিল এটিবি বোর্ডের। তখন প্রাণ এগ্রো লিমিটেড আনসিকিউরড গ্যারান্টেড বন্ড (পিএএলইউজিবি ওয়ান) ডেট সিকিউরিটিজ হিসেবে এই বোর্ডে তালিকাভুক্ত হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল।
পরবর্তী সময়ে ওই বন্ডের উদ্যোক্তা কর্তৃপক্ষ বন্ডটিকে এটিবিতে তালিকাভুক্ত করতে অনাগ্রহ দেখায়। অন্য স্টক এক্সচেঞ্জ সিএসইতে আইএফআইসি ব্যাংকের দুটি বন্ড তালিকাভুক্ত রয়েছে। অর্থাৎ দুই স্টক এক্সচেঞ্জে মাত্র পচারটি সিকিউরিটিজ তালিকাভুক্ত হলো।
এমকে
পুঁজিবাজার
দর বৃদ্ধির শীর্ষে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স
সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৮৮ কোম্পানির মধ্যে ৪৮টির শেয়ারদর বৃদ্ধি পেয়েছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পেয়েছে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৩ টাকা ৩০ পয়সা বা ৯.৭৯ শতাংশ বেড়েছে। এর ফলে কোম্পানি দর বৃদ্ধির তালিকায় প্রথম স্থান দখল করে নেয়।
দর বৃদ্ধির এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল রিলায়েন্স ওয়ান দা ফার্স্ট স্কিম অব রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ড। কোম্পানিটির শেয়ার দর ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর তৃতীয় স্থানে থাকা কুইন সাউথ টেক্সটাইলের দর বেড়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
এছাড়াও, ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে- ওয়াটা কেমিক্যালস লিমিটেড, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, ইনটেক, সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামী মিঊচ্যুয়াল ফান্ড, এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ইউসিবি এবং সায়হাম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড।
এমকে
পুঁজিবাজার
লেনদেনের শীর্ষে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ
সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন শেষে লেনদেনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) কোম্পানিটির ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর ফলে কোম্পানিটি লেনদেনের তালিকায় প্রথম স্থান দখল করে।
এদিন লেনদেনের এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল সায়হাম কটন । কোম্পানিটির ১০ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর ১০ কোটি ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফাইন ফুডস।
এছাড়াও, ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ দশে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হলো- মুন্নু ফেব্রিক্স লিমিটেড, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, রহিমা ফুড, ডমিনেজ স্টিল, খান ব্রাদার্স, ওরিয়ন ইনফিউশন এবং একমি পেস্টিসাইড লিমিটেড।
এমকে
পুঁজিবাজার
বেশিরভাগ শেয়ারের দরপতন, আরও কমেছে লেনদেন
সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্য সূচকের নেতিবাচক প্রবণতায় লেনদেন শেষে হয়েছে। এদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২৯২ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। একই সঙ্গে টাকার অংকে লেনদেনের পরিমান কমে ৪১৩ কোটি টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ৪২ দশমিক ৯১ পয়েন্ট কমেছে। বর্তমানে সূচকটি অবস্থান করছে ৪ হাজার ৮৯০ পয়েন্টে।
এছাড়া, ডিএসইর অপর সূচক ‘ডিএসইএস’ ১১ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট কমে ১০১৬ পয়েন্ট এবং ‘ডিএস-৩০’ সূচক ১৪ দশমিক ৩০ পয়েন্ট কমে ১৮৭৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
আজ ডিএসইতে ৪১৩ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিলো ৪৫৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
এদিন ডিএসইতে মোট ৩৮৮টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৪৮টি কোম্পানির, বিপরীতে ২৯২ কোম্পানির দর কমেছে। আর ৪৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
এমকে
পুঁজিবাজার
পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে বড় উদ্যোগ, আসছে দুই বিশেষ তহবিল
পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় গঠিত একটি কমিটি। পাশাপাশি, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য ৪ শতাংশ সুদে ঋণ প্রদানের উদ্দেশ্যে ৩ হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
কমিটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ৬০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে এবং কর প্রণোদনার মাধ্যমে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে এক লাখ টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয় করমুক্ত রাখা।
এছাড়া মূলধনী আয় বা ক্যাপিটাল গেইনের মুনাফা কর কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার, সম্পদ-সমর্থিত সিকিউরিটিজে ২০ শতাংশ কর রেয়াত দেওয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের কর ছাড়ের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে পুঁজিবাজার সার্বিক উন্নয়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শক্তিশালীকরণ, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ সংস্থা– ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) পুনর্গঠন এবং স্টক এক্সচেঞ্জের সুশাসন জোরদারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এই প্রস্তাবগুলো সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, “বাজার উন্নয়ন এবং কমিশন শক্তিশালী করতে যেসব পদক্ষেপ প্রয়োজন, সেগুলো তুলে ধরে আমরা প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।”
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরীকে প্রধান করে চলতি বছরের মার্চে চার সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে আছেন-বিএসইসির কমিশনার ফারজানা লালারুখ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব।
পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থার জন্য দেশের ‘অনিশ্চিত’ অর্থনীতি ও বিগত দুই বছরে দেশে নতুন বিনিয়োগ না হওয়াকে উল্লেখ করে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ সিদ্দিকী বলেন, বলেন, “এই অবস্থায় সরকার যতই ফান্ড গঠন করুক কিংবা টাকা দিক পুঁজিবাজারের জন্য হেল্প (সহায়ক) হবে না। পুঁজিবাজার ভালো হতে হলে একটি স্থিতিশীল বা নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। নির্বাচিত সরকার আসলে বাজারে আস্থা বাড়বে, দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব পড়বে।”
১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল
কমিটি প্রস্তাব করেছে, ১০ হাজার কোটি টাকার এই তহবিল কেবল ইকুইটি বা শেয়ারে বিনিয়োগে ব্যবহার করা হবে এবং এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকবে আইসিবির হাতে। বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেবে একটি পেশাদার পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপক টিম এবং সাত সদস্যের একটি কমিটি তহবিলের কার্যকারিতা তদারকি করবে।
এই তদারকি কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুইজন ও আইসিবির দুইজন প্রতিনিধি এবং তিনজন স্বতন্ত্র পোর্টফোলিও বিশেষজ্ঞ বা আর্থিক বিশ্লেষক অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। ইকুইটি ভিত্তি শক্তিশালী করতে আইসিবির পরিশোধিত মূলধন রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে বাড়ানোর সুপারিশও করা হয়েছে।
এছাড়া ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ তহবিল আরও ২ হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যাতে ৪ শতাংশ ভর্তুকিযুক্ত সুদে মার্জিন ঋণ পাওয়া যায়। বর্তমানে এই তহবিলের পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকা।
আইসিবির হাতে তহবিল ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে ফারুক আহমদ সিদ্দিকী বলেন, আইসিবি নিজেই ঋণগ্রস্ত। “নতুন তহবিল গঠনের আগে সরকারকে আইসিবির অতীত কার্যক্রম—কীভাবে পরিচালিত হয়েছে এবং কোথায় বিনিয়োগ করা হয়েছে—তা পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা উচিত,” বলেন তিনি।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর পরিসর বাড়ানোর প্রস্তাব
কমিটি বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে স্টক ডিলার, মার্কেট মেকার, পোর্টফোলিও ম্যানেজার, অ্যাসেট ম্যানেজার এবং ফান্ড ম্যানেজার।
বর্তমানে পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ প্রায় ২০ শতাংশ। কমিটির প্রস্তাবে, তিন বছরের মধ্যে তা ৩০ শতাংশ, ছয় বছরে ৪০ শতাংশ, নয় বছরে ৫০ শতাংশ এবং ১২ বছরে ৬০ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে স্টক এক্সচেঞ্জগুলোয় তালিকাভুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য কমিশনের অধীনে মূলধন সংগ্রহসংক্রান্ত বিধিমালা সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিটি জাতীয় সঞ্চয়পত্র ও ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের হার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছে এবং বলেছে, এই হার যেন পাঁচ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় মুনাফার বেশি না হয়।
এছাড়া বিমা কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং বিএসইসি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটস (বিআইসিএম) ও বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটস (বিএএসএম)-এর মাধ্যমে দেশব্যাপী আর্থিক সাক্ষরতা কর্মসূচি জোরদারের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ফারুক আহমদ সিদ্দিকী বলেন, “প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী চাইলেই তো বাড়ানো সম্ভব না। বিনিয়োগকারীরা যেখানে লাভজনক মনে করবে, সেখানেই বিনিয়োগ করবে। ট্রেজারি বিল বা বন্ডে যে মুনাফা, তা বাদ দিয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করতে আসবে না।”
কমিটি সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস পুরোপুরি বাতিল করার এবং আইপিওর পর তালিকাভুক্তির প্রথম দিন থেকেই সব ধরনের লেনদেন সীমাবদ্ধতা তুলে নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে বাজার পতন ঠেকাতে কমিশন ফ্লোর প্রাইস আরোপ করেছিল। বর্তমানে বেক্সিমকো লিমিটেড ও ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারে সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বহাল রয়েছে, অন্য কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে তা পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে কোম্পানিগুলো ঋণ গ্রহণে কোনো সীমাবদ্ধতার মুখে পড়ে না। কমিটি প্রস্তাব করেছে, ঋণ গ্রহণের সীমা কোম্পানির ইকুইটি ক্যাপিটালের ২৫০ শতাংশে বেঁধে দেওয়া হোক। এতে কোম্পানিগুলো ব্যাংক ঋণের বদলে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহে উৎসাহিত হবে।
বাজার স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থমন্ত্রী বা উপদেষ্টার সভাপতিত্বে একটি নিয়ন্ত্রক সমন্বয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এই কমিটিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এবং ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) প্রতিনিধিরা থাকবেন। বছরে অন্তত দুইবার এই কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
‘জেড’ শ্রেণির কোম্পানিতে ৩০% স্বতন্ত্র পরিচালক
কমিটি করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড সংশোধন করে ‘জেড’ শ্রেণির কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে অন্তত ৩০ শতাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক রাখার সুপারিশ করেছে। এছাড়া দুই বছরের মধ্যে কোম্পানি যদি উচ্চতর শ্রেণিতে উত্তীর্ণ না হয়, তাহলে একজন স্বতন্ত্র পরিচালককে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিএসইসিকে শক্তিশালী করতে নীতি ও বিধিমালা পর্যালোচনা, তদারকি ও প্রয়োগ, বাজার উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের সাক্ষরতা এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন পর্যবেক্ষণের জন্য একটি পরামর্শক কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। অসদাচরণ, অযোগ্যতা, দেউলিয়াত্ব বা নৈতিক স্খলন প্রমাণিত হলে বিচারিক তদন্তের মাধ্যমে অপসারণের বিধান রাখার কথাও বলা হয়েছে।
কমিটি প্রস্তাব করেছে, বিএসইসির চেয়ারম্যানের মর্যাদা আপিল বিভাগের বিচারপতির সমতুল্য এবং কমিশনারদের মর্যাদা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমান করা হোক। পাশাপাশি দক্ষ চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা নিয়োগ এবং অন্তত ২০ শতাংশ নির্বাহী পরিচালককে গ্রেড-১ পদে উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ সিদ্দিকী এ বিষয়ে বলেন, “শুধু সার্চ কমিটির মাধ্যমে চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হলেই বাজার পাল্টে যাবে, এমনটা প্রত্যাশা করা যায় না। প্রয়োজন নির্দলীয় আর দক্ষ লোক, যারা সরকারের সিদ্ধান্তের চেয়ে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিবে।”
তবে পুঁজিবাজার উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থার একজন ভালো বা অদলীয় লোক নিয়োগ দেওয়া শেষ পর্যন্ত সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বাজার স্থবির থাকার ৮ কারণ
কমিটি পুঁজিবাজারের মন্দাবস্থা বা স্থবির থাকার আটটি কারণ চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো—দুর্বল মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকে উচ্চ সুদের হার, প্রণোদনা প্রত্যাহার, জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বেশি মুনাফা, মূল্যস্ফীতি, আস্থার সংকট, ব্যাংকনির্ভর অর্থায়ন এবং মিউচুয়াল ফান্ড ও যৌথ বিনিয়োগ স্কিমের মাধ্যমে কম তহবিল সংগ্রহ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নত পুঁজিবাজারে সাধারণত ৭০–৮০ শতাংশ বিনিয়োগ আসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে, যেখানে বাংলাদেশে এই হার এখনো প্রায় ২০ শতাংশে সীমাবদ্ধ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উচ্চ সুদের হার বিনিয়োগকারীদের স্থায়ী আমানত বা অন্যান্য নির্দিষ্ট আয়ের সিকিউরিটিজে ঝুঁকতে বাধ্য করেছে। এতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী আকর্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে উল্লেখ করেছে কমিটি।
গত কয়েক বছরে খুচরা বিনিয়োগকারীদের ওপর মূলধনী মুনাফায় কর আরোপ, বিনিয়োগ ভাতা কমানো, করমুক্ত লভ্যাংশ সীমা প্রত্যাহার এবং কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের কর সুবিধা কমিয়ে দেওয়াসহ অধিকাংশ প্রণোদনা প্রত্যাহার বা হ্রাস করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে পুঁজিবাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকটের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। বিএসইসি ও এক্সচেঞ্জগুলোর নজরদারি ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও যোগসাজশ ও গোষ্ঠীগত আচরণ লক্ষ্য করা গেছে, যা শেয়ার কারসাজির ইঙ্গিত দেয়। অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুশাসনের ঘাটতি ও দুর্নীতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও ক্ষুণ্ন করেছে।
কমিটি আরও বলেছে, সীমাহীন ব্যাংকভিত্তিক অর্থায়ন পুঁজিবাজারকে দুর্বল করে তুলেছে। স্বল্প ইকুইটি থাকা সত্ত্বেও কোম্পানিগুলো ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে পারছে, ফলে তাদের পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের প্রয়োজন কমে যাচ্ছে।
এমকে
পুঁজিবাজার
শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে না ম্যাকসন্স স্পিনিং
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ম্যাকসন্স স্পিনিং মিলস লিমিটেড গত ৩০ জুন, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণা দিয়েছে। কোম্পানিটি আলোচিত বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেবে না।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সর্বশেষ হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর লভ্যাংশ সংক্রান্ত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ডিএসই সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, সর্বশেষ বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি ৯ টাকা ৪২ পয়সা লোকসান হয়েছে। আগের বছর শেয়ার প্রতি ৩ টাকা ৬৯ পয়সা লোকসান হয়েছিল। গত ৩০ জুন, ২০২৪ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ২ টাকা ৮৪ পয়সা।
আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি, সোমবার সকাল ১১টায় হাইব্রিড পদ্ধতিতে কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ০৭ জানুয়ারি।
এমকে




