অর্থনীতি
৫ ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকরা আমানত ফেরত পাবেন যেভাবে
সম্মিলিত ইসলামী পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে বিশেষ স্কিমের খসড়া চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। স্কিম অনুযায়ী প্রথম ধাপে একজন গ্রাহক একবারে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা তুলতে পারবেন। এই অর্থ দেওয়া হবে আমানত বিমা তহবিল থেকে। এরপর যাদের আমানত দুই লাখ টাকার বেশি, তারা প্রতি তিন মাসে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা করে তুলতে পারবেন।
গভর্নর আহসান এইচ. মানসুরের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকে একীভূত হওয়া ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসির’ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়াকে নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে চার ডেপুটি গভর্নর, পাঁচ সমস্যাগ্রস্ত ইসলামী ব্যাংকের প্রশাসক এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
বৈঠকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, একীভূত ব্যাংকের গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়েছে। কারণ নতুন ব্যাংক থেকে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো সেই ব্যাংকের ডাটাবেজ তৈরি হয়নি এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকও নিয়োগ করা হয়নি। ফলে আইনি একটি বাধা দাঁড়িয়েছে। তবুও গভর্নর নির্দেশ দিয়েছেন—ডিসেম্বরের মধ্যেই টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
এমন পরিস্থিতিতে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো সমাধানে কি করা যায়, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে বিশেষ স্কিমের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, যেসব গ্রাহকের হিসাবে ২ লাখ টাকা বা এর কম আছে, স্কিম কার্যকর হওয়ার পর তারা পুরো টাকা একবারেই তুলতে পারবেন।
আর যাদের হিসাবে ২ লাখ টাকার বেশি রয়েছে, তারা প্রতি তিন মাস অন্তর সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা করে দুই বছর পর্যন্ত তুলতে পারবেন।
তবে ৬০ বছরের বেশি বয়সী গ্রাহক অথবা ক্যানসার বা জটিল রোগে আক্রান্ত আমানতকারীদের জন্য এই সীমা শিথিল রাখা হয়েছে—তারা প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো পরিমাণ টাকা তুলতে পারবেন।
এদিকে প্রয়োজন ছাড়া টাকা তুলতে নিরুসাহিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন ব্যাংকটি সম্পূর্ণ নতুন হওয়ায় মৌলিকভাবে কোনো জটিলতা নেই। তাই সবার টাকা তোলা বাধ্যতামূলক নয়; তবে কেউ চাইলে স্কিম অনুযায়ী তুলতে পারবেন। এই স্কিমের মূল লক্ষ্য হলো আমানতকারীদের মধ্যে তৈরি হওয়া আস্থাহীনতা দূর করা এবং ধাপে ধাপে ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।
স্কিমের সুবিধা পেতে গ্রাহকের অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে খোলা বৈধ হিসাব থাকতে হবে। এক ব্যাংকে একাধিক হিসাব থাকলেও একজন গ্রাহক একটি হিসাব থেকেই এ সুবিধা পাবেন। তবে পাঁচ ব্যাংকে একজনের আলাদা আলাদা হিসাব থাকলে প্রতিটি হিসাবের বিপরীতে পৃথকভাবে টাকা পাওয়ার সুযোগ থাকবে। যেসব আমানতকারীর ঋণ রয়েছে, তারা ঋণ সমন্বয় না করা পর্যন্ত স্কিমের আওতায় টাকা তুলতে পারবেন না।
গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কয়েকটি প্রভাবশালী গ্রুপ জালিয়াতির মাধ্যমে ডজনখানেক ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ তুলে নেয়। এসব অনিয়ম ও ঋণ কেলেঙ্কারির চাপেই ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে গভীর সংকটে পড়ে। এরমধ্যে সংকটে থাকা পাঁচটি ব্যাংক একত্রিত করে ‘সম্মিলিত ইসলামি ব্যাংক’ গঠনের অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো– এক্সিম, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক।
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসির পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২০ হাজার কোটি এবং আমানতকারীদের শেয়ার থেকে আসবে বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা। অনুমোদিত মূলধন রাখা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ ব্যাংকে বর্তমানে ৭৫ লাখ আমানতকারীর প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা জমা রয়েছে। বিপরীতে ঋণ রয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা, যার বড় অংশ ইতোমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে।
সারা দেশে এসব ব্যাংকের ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৯৭৫টি এটিএম বুথ রয়েছে। একীভূত হওয়ার পর একই এলাকার একাধিক শাখা মিলে একটি বা দুটি করা হবে। ব্যাংকগুলোর পরিচালন খরচ কমাতে এরই মধ্যে কর্মীদের বেতন–ভাতা ২০ শতাংশ কমানো হয়েছে।
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের জন্য প্রাথমিকভাবে রাজধানীর মতিঝিল সেনা কল্যাণ ভবনে অফিস নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় একটি চলতি হিসাব খোলা হয়েছে। শিগগিরই পরিচালনা পর্ষদ গঠন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে। এর আগে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে ৫ নভেম্বর প্রশাসক নিয়োগ ও ব্যাংকগুলোর শেয়ার শূন্য ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এমকে
অর্থনীতি
কমেছে শাক-সবজির দাম, পেঁয়াজের বাজারে অস্বস্তি
সরবরাহ বাড়ায় রাজধানীর বাজারে কিছুটা কমেছে শাক-সবজির দাম। তবে আমদানির পরও স্বস্তি ফেরেনি পেঁয়াজের বাজারে; বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামেই।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ আশেপাশের কয়েকটি বাজারঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
বাজারে অস্থিরতা কমাতে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। ভারত থেকে দেশে আসছে পেঁয়াজও। এছাড়া নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠতে শুরু করায় বাজারে বাড়ছে সরবরাহ। আমদানির খবরে মাঝে কয়েকদিন দাম কমলেও ফের চড়া হয়েছে পেঁয়াজের বাজার।
বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি পুরান দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজ ১৪০ টাকা ও নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজের জন্য গুনতে হচ্ছে ১০০ টাকার ওপরে। ক্রেতারা বলছেন, আমদানির পরেও বাজারে কমেনি পেঁয়াজের দাম। অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে অতিরিক্ত মুনাফা লুটে নিচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি করার পরও চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। তাই পেঁয়াজের দাম কমছে না। পাইকারিতে বর্তমানে প্রতিকেজি পুরান দেশি পেঁয়াজ ১৪০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১২০ টাকা ও নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
এদিকে, বাজারে কমতে শুরু করেছে আলুসহ অন্যান্য সবজির দাম। বাজারে প্রতিকেজি বরবটি ৭০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, শালগম ৪০-৬০ টাকা, শিম ৪০-৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৫০ টাকা, টমেটো ৮০-১০০ টাকা, গোল বেগুন ৪০-৬০ টাকা, পটোল ৫০ টাকা ও শসা ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি নতুন আলু ৩০-৪০ টাকা ও পুরান আলু বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। আর মাঝারি আকারের প্রতিপিস, বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে শীতকালীন শাক-সবজির সরবরাহ বাড়ায় দাম কমছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা শাহবুদ্দিন বলেন, বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ছে। এতে বেশিরভাগ সবজির দাম কমে এসেছে। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে সামনে অন্যান্যগুলোর দামও কমে আসবে।
তবে স্থিতিশীল রয়েছে মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা এবং সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৬০ টাকা কেজি দরে।
অর্থনীতি
রিজার্ভ ফের ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। তবে আইএমএফের নির্ধারিত বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে হিসাব করলে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে। গত বুধবারও রিজার্ভ ছিল ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে, গতকাল বৃহস্পতিবার তা বেড়ে ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩১ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভ ছিল ২৭ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে গত ৬ নভেম্বর রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছিল। ওই সময়ে রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার আর বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে তা ছিল ২৮ বিলিয়ন ডলার।
তবে এর তিনদিন পর ৯ নভেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের জন্য ১৬১ কোটি ডলার পরিশোধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আকুর দায় পরিশোধের পর দেশের গ্রস রিজার্ভ ৩১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলারে অবস্থান করে। এরপর থেকে ৩০ ও ৩১ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ছিল রিজার্ভ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাইয়ে মে-জুন মেয়াদের আমদানি ব্যয়ের বিপরীতে বাংলাদেশ আকুকে ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছিল—যা ছিল সর্বশেষ বড় অঙ্কের বিল। এরপর ২০২৩ সালের পুরো সময়জুড়ে দ্বিমাসিক আকু বিল কমে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে ছিল।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে আকু বিল আবার বাড়তে শুরু করে। চলতি বছরের মে-জুনে বিলের পরিমাণ পৌঁছে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের এশিয়া অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (ইউএনইএসক্যাপ) আকু প্রতিষ্ঠা করে। ইরানের তেহরানভিত্তিক এ সংস্থার মাধ্যমে ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা—মোট ৯টি দেশের আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তি করা হয়।
অন্যদিকে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহকে সহায়তা দিতে ব্যাংকগুলো থেকে অতিরিক্ত ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গতকাল বৃহস্পতিবার ১৬টি ব্যাংক থেকে মোট প্রায় ১৫ কোটি মার্কিন ডলার (১৪৯ মিলিয়ন ডলার) কেনা হয়েছে। এসময় প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২২.২৫ টাকা থেকে ১২২.২৯ টাকা পর্যন্ত। কাট-অফ রেট ১২২.২৯ টাকা, যা মাল্টিপল প্রাইস নিলাম পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ পর্যন্ত নিলাম পদ্ধতির মাধ্যমে মোট ২৬৬ কোটি ৩০ লাখ (২.৬৬ বিলিয়ন ডলার) ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৩ জুলাই থেকে নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা শুরু করে। ওই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এখন পর্যন্ত এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করা হয়েছে।
অর্থনীতি
পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকরা ডিসেম্বরেই পাবেন সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা
সংকটে থাকা পাঁচ শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকের আমানতকারীরা চলতি ডিসেম্বরের মধ্যেই ইন্স্যুরেন্স ফান্ড থেকে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ফেরত পাবেন। তবে টাকা তুলতে হলে তাদের ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’-এর নামে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, এক্সিম এবং ইউনিয়ন ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠিত সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক ২ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক রেজোলিউশন ডিপার্টমেন্টের একজন কর্মকর্তা জানান, টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি চ্যালেঞ্জ সামনে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—নতুন ব্যাংকের নিজস্ব ডেটা সফটওয়্যার তৈরি, গ্রাহকের তথ্য যাচাই এবং নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা ও সেখান থেকে অর্থ প্রদান। এ ছাড়া একীভূতকরণ স্কিম, বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং আইটি অবকাঠামো নিয়েও মঙ্গলবার গভর্নরের সঙ্গে ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আয়ুব মিয়ার বৈঠকে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে জানান, এক্সিম ব্যাংকের নিরীক্ষা রিপোর্ট বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর। আইটি অবকাঠামো আপাতত ভাড়ায় নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে; পুরো সমন্বয় সম্পন্ন হতে তিন বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
ডিসেম্বরে টাকা দেওয়ার আশা
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আয়ুব মিয়া বলেন, ইনসুরেন্স ফান্ডের টাকা পাওয়া গেছে। এখন গ্রাহকদের নামে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা, পুরোনো অ্যাকাউন্ট একীভূত করা এবং শাখাভিত্তিক ছাড় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই অর্থ দেওয়া যাবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই গ্রাহকরা টাকা পাবেন বলে আশা করছি।
আগামী সপ্তাহেই অনুষ্ঠিত হবে বোর্ড মিটিং, আর চলতি মাসেই নতুন এমডি নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হবে। টাকা গ্রাহকের হাতে যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি পূর্ণাঙ্গ স্কিম প্রস্তুত করছে। স্কিম চূড়ান্ত হলে তা প্রকাশ করা হবে।
যারা তুলতে পারবেন
যাদের হিসাবে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা রয়েছে, তারা পুরো টাকা তুলতে পারবেন। এখানে দুই লাখের বেশি থাকলে আপাতত দুই লাখ দেওয়া হবে। বাকি অংশ পরে নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী ফেরত দেওয়া হবে।
যে নিয়মগুলো মানতে হবে
একই ব্যাংকে একজনের একাধিক হিসাব থাকলে জাতীয় পরিচয়পত্র-ভিত্তিক মাত্র একটি হিসাবের বিপরীতে টাকা মিলবে। পাঁচ ব্যাংকে আলাদা আলাদা হিসাব থাকলে প্রত্যেক ব্যাংক থেকেই সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পাওয়া যাবে। কোনো হিসাবের বিপরীতে ঋণ থাকলে আপাতত টাকা মিলবে না—ঋণ সমন্বয়ের পর সিদ্ধান্ত হবে।
১২ হাজার কোটি লাগবে ফেরতে
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে লাগবে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা—যা আসবে ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স স্কিম থেকে। সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। যেখানে ২০ হাজার কোটি দেবে সরকার আর ১৫ হাজার কোটি আসবে গ্রাহকের আমানতকে শেয়ারে রূপান্তর করে। ইতোমধ্যে সরকারের বরাদ্দ এবং ইনসুরেন্স ফান্ডের অংশ নতুন ব্যাংকের হিসাবে ছাড় হয়েছে।
নতুন ব্যাংকের প্রস্তুতি
নতুন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় চালু হয়েছে মতিঝিলের সেনাকল্যাণ ভবনে। চেয়ারম্যানসহ পর্ষদে সরকারের সাবেক ও বর্তমান আমলারা নিয়োগ পেয়েছেন। খুব শিগগিরই স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়ে পর্ষদ আরও শক্তিশালী করা হবে।
অর্থনীতি
আরও ১৫ কোটি ডলার কিনলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক
দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহকে সহায়তা দিতে ব্যাংকগুলো থেকে অতিরিক্ত ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ১৬টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৫ কোটি মার্কিন ডলার (১৪৯ মিলিয়ন ডলার) কেনা হয়েছে।
এ সময় প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২২.২৫ টাকা থেকে ১২২.২৯ টাকা পর্যন্ত। কাট-অফ রেট ১২২.২৯ টাকা, যা মাল্টিপল প্রাইস নিলাম (Multiple Price Auction) পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ পর্যন্ত নিলাম পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক মোট ২৬৬ কোটি ৩০ লাখ (২.৬৬ বিলিয়ন ডলার) ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৩ জুলাই থেকে নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা শুরু করে। ওই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এখন পর্যন্ত এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, মাল্টিপল প্রাইস অকশনের মাধ্যমে ১৬ ব্যাংক থেকে ১৪৯ মিলিয়ন বা ১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার কেনা হয়েছে। এ সময় ডলারের দর নির্ধারণ হয় প্রতি ডলারে ১২২.২৫ টাকা থেকে ১২২.২৯ টাকা পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত এ নিয়ে চলতি অর্থবছরে নিলাম পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক মোট ২৬৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার কিনেছে।
অর্থনীতি
একীভূত ৫ ব্যাংকের গ্রাহকদের টাকা ফেরত সময়ের ব্যাপার মাত্র: বাংলাদেশ ব্যাংক
নবগঠিত সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক থেকে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এ বিষয়ে গ্রাহকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।
তিনি বলেন, একীভূত হওয়া পাঁচ ব্যাংকের সব তথ্য নতুন ব্যাংকের ডাটাবেসে যুক্ত করা হবে। পুরোনো সব গ্রাহকই এখন নবগঠিত ব্যাংকের গ্রাহক হিসেবে বিবেচিত হবেন। নতুন ব্যাংকের আইটি ও এইচআর কাঠামো গড়ে তোলার কাজ চলমান। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি টিম তাদের সহায়তা করবে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
আরিফ হোসেন খান বলেন, প্রথমে যে ব্যাংকের গ্রাহক তিনি তার নিজের ব্যাংক থেকেই টাকা পাবেন। এক ব্যাংকের গ্রাহককে অন্য ব্যাংক থেকে টাকা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ডেটা স্থানান্তর সম্পন্ন হলেই ধাপে ধাপে টাকা ফেরত দেওয়া শুরু হবে।
নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না করার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আজ যদি বলি ১৭ ডিসেম্বর থেকে টাকা দেওয়া হবে, তাহলে সেদিন পাঁচ ব্যাংকের সব শাখায় ভয়াবহ ভিড় তৈরি হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষেও সেটি সামাল দেওয়া কঠিন হবে। তাই তারিখ ঘোষণা না করে ধীরে ধীরে টাকা দেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, নতুন কোনো অ্যাকাউন্ট খোলার প্রয়োজন নেই। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন ব্যাংকের নামে বাংলাদেশ ব্যাংকে যে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, তাতে ২০ হাজার কোটি টাকা এরই মধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে। ফলে টাকা ফেরত দিতে আর কোনো বাধা নেই।
গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যাদের খুব প্রয়োজন, তারা টাকা তুলবেন। কিন্তু যার প্রয়োজন নেই, শুধু অন্য ব্যাংকে সরানোর উদ্দেশ্যে উত্তোলন না করাই ভালো। সবাই অপ্রয়োজনে টাকা তুলতে গেলে নতুন ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে না।
সবশেষ তিনি নবগঠিত সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের প্রতি আস্থা রাখতে গ্রাহকদের প্রতি আহ্বান জানান।




