রাজনীতি
বিদ্যমান নির্বাচনী পদ্ধতিতে দেশ কলঙ্কিত হয়েছে: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, বিদ্যমান পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতেই ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন, ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে এবং ২০২৪ সালে আমি-ডামি নির্বাচন হয়েছে। সেই পদ্ধতি বহাল রেখে কোনভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না, জনগণের সরকার গঠিত হতে পারে না।
শনিবার (১ নভেম্বর) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শাহবাগ পশ্চিম থানার উদ্যোগে জাতীয় জাদুঘর গেইটে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহনমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে পিআর পদ্ধতি। পিআর পদ্ধতিতে ভোট হলে কেউ ভোট চুরি করতে পারবে না, কেন্দ্র দখল দিতে যাবে না, মনোনয়ন বাণিজ্য হবে না। ফলে কালো টাকার ছড়াছড়িও বন্ধ হয়ে যাবে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে এবং প্রতিটি ভোটের মূল্যায়নের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠিত হবে।
এসময় তিনি আরও বলেন, মানুষের মৌলিক ৫টি অধিকার রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু অতীতের কোনো সরকার মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেনি। তারা তাদের নিজেদের সুটকেস ভর্তি করার কাজে ব্যস্ত ছিল। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির সৎ, যোগ্য, আল্লাহভীরু, নৈতিক ও আদর্শিক নেতৃত্ব তৈরি করছে। যার দৃষ্টান্ত ঢাবির শিক্ষার্থীরা সহ পুরো দেশবাসী দেখতেছে। ডাকসুতে ইসলামী ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেল বিজয়ী হওয়ার পর মাত্র ২ মাসে যা করেছে বিগত ৫৪ বছরে তা কেউ ঢাবি শিক্ষার্থীদের জন্য করেনি, করতে পারেনি। জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে একই ভাবে রাষ্ট্রের অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটিয়ে দেশকে একটি কল্যাণ ও মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর (ঢাকা-৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী) এডভোকেট ড হেলাল উদ্দিন বলেন, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতার রাজনীতি করে না; জামায়াত মানুষের কল্যাণে নিবেদিত সংগঠন। জামায়াতে ইসলামী ৪ দফা কর্মসূচিতে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে। তারমধ্যে অন্যতম একটি সমাজ সংস্কার ও সমাজ সেবা। সামাজিক সেবামূলক যেকোন কাজ জামায়াতে ইসলামী দলমত, ধর্ম বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে পরিচালনা করে আসছে। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে এই ধারা অব্যাহত রেখে প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার, মর্যাদা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে। ‘যারা এখন বলে ক্ষমতায় গিয়ে এই করবে, সেই করবে; তারা বিগত সময়ে যখন ক্ষমতায় ছিল তখন কী করেছে জনগণ তা জানে’।
তিনি বলেন, আওয়ামী অপশাসনের ১৫ বছর তাদের নেতারা বিদেশে নিরাপদে উন্নত জীবনযাপন করেছে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতাকর্মী বিদেশে চলে যায়নি। জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে তারপরও জামায়াতের কোনো নেতা আধিপত্যবাদের কাছে মাথানত করে দেশের মানুষকে রেখে বিদেশে চলে যায়নি। জামায়াত নেতারা জেল-জুলুম, নির্যাতনের শিকার হয়েছে, খুন- গুম, আয়না ঘরের অমানবিক টর্চারের শিকার হতে হয়েছে। এতো জুলুম-নির্যাতনের পরও জামায়াতে ইসলামী একদিনের জন্যও কার্যক্রম বন্ধ রাখেনি, রাখবে না। কোনো ষড়যন্ত্র জামায়াতে ইসলামীর অগ্রযাত্রা বন্ধ করতে পারেনি, পারবে না। জামায়াতে ইসলামীর সবচেয়ে বড় শক্তি জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা।
ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি বন্ধ করতে একটি দল গোপন ষড়যন্ত্র করছে। তারা প্রথমে গণভোটের পক্ষে সমর্থনই দেয়নি। পরবর্তীতে জনগণের চাপে পড়ে গণভোটের পক্ষে সমর্থন দিলেও গণভোটের সময় নিয়ে নানারকম টালবাহানা করছে। গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি হয়ে গেলে ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে না পারার ভয়ে তারা কোনভাবেই গণভোট মেনে নিতে পারছে না, চাচ্ছে না। তাদের মনে রাখতে হবে, জুলাই আন্দোলনের দুই হাজার শহীদ পরিবার এবং ৫০ হাজারের অধিক আহত জুলাই যোদ্ধা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না। জামায়াতে ইসলামী ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে জনগণ যেভাবে নির্বাচন চায় জামায়াতে ইসলামীও সেভাবে নির্বাচন চায়। অবশ্যই নভেম্বরের মধ্যে গণভোট এবং ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে।
শাহবাগ পশ্চিম থানা নায়েবে আমীর ডা. মেসবাহ উদ্দিন সায়েমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ডা. মো. আনোয়ারুল হক, ডা. হাফিজুর রহমান প্রমুখ।
শাহবাগ পশ্চিম থানা সেক্রেটারি এম. লোকমান হোসেনের পরিচালনায় এবং ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আলফেসানী’র সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত মেডিকেল ক্যাম্পে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ঔষধ সরবরাহ করা হয়৷
এদিকে ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লালমনিরহাটের কাজিউল ইসলামকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে ১ লাখ টাকার আর্থিক অনুদানের চেক প্রদান করেন। উল্লেখ্য কাজিউলের ব্রেইন টিউমার অপারেশনের জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন জানতে পেরে ড. হেলাল উদ্দিন তাকে এই সহযোগিতা করেন।
কাফি
রাজনীতি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন হাসান ইনাম। রোববার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সভাপতি রিফাত রশিদ বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি।
পদত্যাগপত্রে দেশব্যাপী পরিব্যাপ্ত সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার মতো মানসিক অবস্থায় না থাকার কথা উল্লেখ করে স্বেচ্ছায়, স্বপ্রণোদিতভাবে এই দায়িত্ব থেকে ইস্তফা নেওয়ার কথা জানান তিনি। একইসঙ্গে শূন্য পদে বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মুঈনুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, আমি গত চার মাস জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছি। আমি এই সংগঠনকে বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক পরিসরে তুলে ধরার জন্য একদল কর্মঠ কর্মী নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করেছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে এ অবধি দীর্ঘ সময় নানা পরিসরে কাজে লিপ্ত থেকে আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ অনুভব করছি। সংগঠনের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারা দেশের সকল কমিটি পুনর্গঠনের ঘোষণা দেখার পর মনে হচ্ছে দেশব্যাপী পরিব্যাপ্ত সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার মতো মানসিক অবস্থায় আমি এখন নেই। তাই আমি স্বেচ্ছায়, স্বপ্রণোদিতভাবে এই দায়িত্ব থেকে ইস্তফা নিচ্ছি। তবে, জুলাইকে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমার যে লড়াই সেটি চলমান থাকবে।
তিনি আরও লিখেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সংগঠনে সাধারণ সম্পাদক ভিন্ন অন্যকোনো পরিচয়ে বা বেনামে আমি সংগঠনের এ-সংক্রান্ত কাজে নিজেকে জড়িত রাখতে ইচ্ছুক। এ বিষয়ে আপনার সুমর্জি কামনা করছি। একই সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক পদে আমি ইস্তফা নেওয়ার দরুন শূন্য পদে বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মুঈনুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত করার জন্য অনুরোধ করছি।
রাজনীতি
সংস্কার হলেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে: হাসনাত আবদুল্লাহ
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হবে না, সংস্কার হলেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে।
রোববার (২ নভেম্বর) ভোলা জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, এই সমন্বয় সভা না হলে যেমন প্রেস কনফারেন্স হতো না, তেমনি সংস্কার না হলে নির্বাচন হতে পারে না। এই সরকারের যদি সংস্কারের ম্যান্ডেট না থাকে, এই সরকারের জুলাই সনদ ঘোষণার ম্যান্ডেট না থাকে, তাহলে এই সরকার কোন ম্যান্ডেটে নির্বাচন দেবে। নির্বাচন অবশ্যই ফেব্রুয়ারিতে হওয়া উচিত। নির্বাচনকে তারাই পিছিয়ে দিতে চায়, যারা এই সরকারের সঙ্গে জুলাই সনদকে মুখোমুখি দাঁড় করাতে চায়। এ সরকারের যেমন নির্বাচনের ম্যান্ডেট রয়েছে, এই সরকারের জুলাই সনদের ম্যান্ডেট রয়েছে, তেমনি সংস্কারেরও ম্যান্ডেট রয়েছে। সুতরাং সংস্কার যথাসময়ে হলে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা উচ্চকক্ষে পিআর চাই, তবে জামায়াতের মতো পিআর চাই না। আমাদের অবস্থান দৃঢ় ও স্পষ্ট—বাংলাদেশের পুনর্গঠনে ঐক্যবদ্ধ রাজনীতির বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা রক্ত দিয়েছেন, গুম-হত্যার শিকার হয়েছেন। তাঁদের রক্ত ও ত্যাগকে অসম্মান করা মানে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। আসুন, আমরা মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ পুনর্গঠন করি।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা সাংগঠনিক সমস্যাগুলো শুনেছি, সমাধানের পথ নির্ধারণ করেছি। শিগগিরই আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। পাশাপাশি ভোলার সমস্যা যেমন নদীভাঙন প্রতিরোধ, গ্যাস ব্যবহার করে শিল্প স্থাপন, ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ, চিকিৎসকসংকট ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এসব যৌক্তিক দাবিতে এনসিপি ভোলাবাসীর পাশে থাকবে।
আগামী নির্বাচনে এনসিপি কারও সঙ্গে জোট গঠন করবে কি না, এমন প্রশ্নে দলটির এই নেতা বলেন, আমাদের সঙ্গে জোট হবে কেবল সংস্কারের পক্ষে থাকা দলগুলোর সঙ্গে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা লড়েছেন, তারাই এনসিপির প্রকৃত সহযোদ্ধা।
হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, গণভোটের আদেশ রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের মাধ্যমে তার দল পেতে চায় না।
তিনি বলেন, গণভোটের আদেশ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। যারা ফ্যাসিবাদের প্রতীক চুপ্পুর (রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন) কাছ থেকে সনদ নিতে চায়, তারা দেশকে বিপথে নিতে চায়। আমাদের লক্ষ্য, গণ-আকাঙ্ক্ষার রাষ্ট্র গড়া, তৃণমূলের রক্ত ও ত্যাগের মর্যাদা রক্ষা করা।
ভোলার পর আজ বিকেলে বরিশাল শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এনসিপির বরিশাল জেলা ও মহানগর কমিটির সমন্বয় সভা করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। সভার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণভোটের পাশাপাশি জুলাই সনদসংক্রান্ত আদেশ প্রধান উপদেষ্টাকেই জারি করতে হবে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আদেশ দিলে জুলাই বিপ্লব প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গণভোটের পাশাপাশি জুলাই সনদের আদেশ জারি করতে হবে। এই আদেশ অবশ্যই প্রধান উপদেষ্টাকে জারি করতে হবে। যদি চুপ্পুর (রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন) কাছ থেকে নিতে হয়, সেটি হবে বিপ্লবের কফিনে শেষ পেরেক। যিনি ‘হেড অফিস ফ্যাসিজম’, তাঁর কাছ থেকে যদি অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি নিতে হয়, এর চেয়ে লজ্জাজনক কিছু হতে পারে না।
এ বিষয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, কোনো অধ্যাদেশ নয়, অর্ডার জারি করতে হবে এবং তা অবশ্যই প্রধান উপদেষ্টাকেই দিতে হবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে আমাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছি। কোনো অধ্যাদেশ বা প্রজ্ঞাপন নয়, আদেশ (অর্ডার) জারি করতে হবে। এটি অবশ্যই প্রধান উপদেষ্টাকে জারি করতে হবে। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের যে ম্যান্ডেটে এই সরকার গঠিত হয়েছে, সেই একই ম্যান্ডেটেই প্রধান উপদেষ্টা অর্ডার দিতে পারেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রসঙ্গে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের সাংগঠনিক বিস্তার পরিকল্পনা সেই ভিত্তিতেই নীতি নির্ধারণ করব। আমরা এমন পলিসি তৈরি করছি, যাতে ৩০০ আসনেই আমাদের সাংগঠনিক উপস্থিতি সুসংহত থাকে এবং তা নিশ্চিত করা যায়।
রাজনীতি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। রোববার (২ নভেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি রিফাত রশিদ।
এতে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, ’২৪-এর জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান যে আকাঙ্ক্ষা ও উদ্দেশ্য নিয়ে সংঘটিত হয়েছিল, তার পূর্ণ বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। বরং দেখা যাচ্ছে, জুলাইয়ের শহীদ পরিবার ও আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন যেমন নিশ্চিত করা হয়নি, তেমনি তাদের নিরাপত্তাও যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সরকার।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ ছাড়া জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পর্কেও কোনো সুস্পষ্ট রোডম্যাপ আমরা এখনো প্রত্যক্ষ করিনি, যা হাজারও শহীদ ও আহতদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা অন্তর্বর্তী সরকারের চরম ব্যর্থতা। তাই জুলাই অভ্যুত্থানের বৈপ্লবিক রূপান্তর নিশ্চিতে এবং ঐতিহাসিক এক দফা, অর্থাৎ ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণের নিমিত্তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সব ইউনিট কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হলো।
একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটকে সাংগঠনিক কার্যক্রম পুনরায় সচল করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে এবং সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগর ও জেলা ইউনিটকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠন সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাজনীতি
অবশেষে শাপলা কলিতেই রাজি এনসিপি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকের পর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, প্রতীক হিসেবে শাপলা কলিতেই রাজি দলটি।
রোববার (২ নভেম্বর) বিকেলে নির্বাচন ভবনে সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা জানান তিনি।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, শাপলা, সাদা শাপলা ও শাপলা কলিকে দলের প্রতীক হিসেবে চেয়ে ইসিতে চিঠি দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি।
রোববার (২ নভেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে নির্বাচন ভবনে সিইসির দপ্তরে প্রবেশ করে নতুন করে প্রতীকের জন্য আবেদন করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এবার তারা শাপলা, সাদা শাপলা এবং শাপলা কলির মধ্যে শাপলা কলিকে প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ চেয়েছে।
রাজনীতি
একদল সংস্কার ভেস্তে দিচ্ছে, নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করছে আরেক দল: নাহিদ
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম মন্তব্য করেছেন, একদল সংস্কারকে ভেস্তে দিচ্ছে, আরেক দল নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছে।
জুলাই সনদ, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সংস্কার বাস্তবায়নের সুপারিশ ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াতের পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে কথা বলেন তিনি।
রোববার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নাহিদ। সংবাদ সম্মেলনে কোনো লিখিত বক্তব্য ছিল না। সরাসরি প্রশ্নোত্তর পর্ব দিয়েই শুরু হয় সংবাদ সম্মেলন।
এসময় তিনি বলেন, জামায়াতের কার্যক্রমে মনে হচ্ছে যে নির্বাচনকে পেছানোর কোনো অভিসন্ধি তাদের আছে কিনা, দুরভিসন্ধি আছে কিনা। একদল সংস্কারকে ভেস্তে দিচ্ছে, আরেক দল নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে আমাদের মূল্যায়ন এটাই। তবে আমরা এই দুইটার কোনোটাই চাই না। আমরা চাই যথাসময়ে নির্বাচন হবে ফেব্রুয়ারিতে এবং জুলাই সনদেরও আইনি ভিত্তি পাবে এবং বাস্তবায়ন হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, বিএনপি ঐকমত্য কমিশনের শুরু থেকেই মৌলিক বিষয়গুলোতে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বিরোধিতা করার চেষ্টা করেছে। ফলে সংস্কারের পক্ষে তারা কতটুকু আছে, এ বিষয়ে জনগণের ভেতর প্রশ্ন আছে, আমাদের কাছেও প্রশ্ন আছে। আবার অন্যদিকে জামায়াতের কার্যক্রমে মনে হচ্ছে, নির্বাচনকে পেছানোর কোনো দুরভিসন্ধি তাদের আছে কি না। ফলে একদল সংস্কারকে ভেস্তে দিচ্ছে, আরেক দল নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছে।
গণভোট আগে হবে, না নির্বাচনের দিন হবে- এটাতে বিএনপি-জামায়াত আবার একটা দ্বন্দ্বে চলে গিয়েছে বলে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। এই দ্বন্দ্ব অযথা ও অপ্রয়োজনীয় বলেন তিনি।
উচ্চকক্ষে পিআর, দুই কক্ষে পিআরের দাবি এনে এই ইস্যুটাকে ঘুরিয়ে দেওয়ার একটা চেষ্টা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, সনদে কী কী সংস্কার হবে, কী কী প্রস্তাব থাকবে এবং সেটার আইনি ভিত্তিটা কীভাবে হবে, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আদেশ জারি করবেন কি না- এগুলো প্রধান ইস্যু ও প্রধান তর্কের জায়গা। এই জায়গাগুলোতে একমত হলে গণভোট আমরা নির্বাচনের দিনও করতে পারি, আগেও করতে পারি। সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করতে পারি।
এনসিপি ফেব্রুয়ারিতে যথাসময়ে নির্বাচন এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন চায় বলে উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা মনে করি চলতি মাসের মধ্যেই আদেশ জারি হয়ে যাওয়া উচিত। মৌলিক সংস্কারে যে জায়গাগুলোতে ঐকমত্য হয়েছে, আমরা মনে করি সেসব বিষয়ে গণভোটে যাওয়া উচিত। গণভোট নির্বাচনের দিন হতে পারে, আগেও হতে পারে। এটা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত।’
জুলাই সনদ অবশ্যই এবং অবশ্যই অধ্যাপক ইউনূসকে জারি করতে হবে বলে মন্তব্য করেন নাহিদ। তিনি বলেন, জুলাই সনদ যদি তথাকথিত রাষ্ট্রপতির থেকে জারি হয়, রাষ্ট্রপতি কার্যালয় থেকে থেকে জারি হয়, তাহলে এই সনদের কোনো আইনি ও রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি হবে না।
এক প্রশ্নের উত্তরে নাহিদ বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, রাজনৈতিক অনৈক্য তত তৈরি হবে, দ্বন্দ্ব-প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। তবে আওয়ামী লীগ প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে বলেন তিনি। নির্বাচনকে ভন্ডুল করার সব ধরনের ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগের জায়গা থেকে করা হবে বলেন নাহিদ। আওয়ামী লীগ বিভিন্ন দলে অনুপ্রবেশ করে নির্বাচন ভন্ডুলের ষড়যন্ত্র যাতে করতে পারে সে জন্য সব দলকে সতর্ক থাকতে আহ্বান জানান নাহিদ।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে নাহিদ বলেন, আমরা মনে করি, এই যে গণহত্যা, এটা আসলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ অপরাধ করেছে, কেবল ব্যক্তি হিসেবে শেখ হাসিনা নয়৷
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, ভারত যদি বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চায়, তাহলে অবশ্যই ভারতকে আওয়ামী লীগের চোখে বাংলাদেশকে দেখার নীতি থেকে সরে আসতে হবে। তাদের বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, তার দল আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। কোন আসন থেকে নির্বাচন করতে চান, জানতে চাইলে নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, আমি যেহেতু ঢাকার সন্তান, আমাকে তো ঢাকা থেকেই হয়তো…৷ আর আমরা এখন পর্যন্ত ৩০০ আসন ধরেই এগোচ্ছি। আমরা হয়তো এই মাসেই আমাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করব। তখনই আসলে দেখা যাবে যে আমাদের কে কোথা থেকে দাঁড়াচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির দলীয় প্রতীকের ব্যাপারে তিনি বলেন, নতুন দল হিসেবে সহযোগিতার পরিবর্তে আমাদের কাজে বাধা তৈরি করছে নির্বাচন কমিশন। অথচ শাপলা কলির যে সিদ্ধান্ত, সেটি তারা এক মাস আগেও দিতে পারতো। আমরা শাপলাই চাই।



