জাতীয়
শহিদুল আলমকে তুরস্কের সহায়তায় মুক্ত করার চেষ্টা চলছে: প্রেস উইং
ইসরায়েলের কারাগারে আটক আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে তুরস্কের সহায়তায় মুক্ত করার চেষ্টা চলছে।
আজ শুক্রবার সকালে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।
পোস্টে বলা হয়, তুরস্কের কর্তৃপক্ষ আশা প্রকাশ করছে, আজই শহিদুল আলমকে বিশেষ বিমানযোগে আঙ্কারায় নিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে তুর্কি কর্তৃপক্ষ শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারেননি। আঙ্কারায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আমানুল হক গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
পোস্টে আরও বলা হয়, শহিদুল আলম ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দ্বারা অবৈধভাবে আটক হওয়ার পর জর্ডান, মিসর ও তুরস্কে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে সেসব দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। তাঁকে মুক্ত করার জন্য দ্রুত উদ্যোগ নিতে বলা হয়।
দূতাবাসগুলো শহিদুল আলমের মুক্তির বিষয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে বলে পোস্টে উল্লেখ করা হয়।
শহিদুল আলম দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের নৃশংসতা বন্ধে এবং গাজায় ইসরায়েলি নৌ অবরোধ ভাঙার প্রত্যয় নিয়ে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন নৌযাত্রা শুরু করেছিল গাজা অভিমুখে। ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে আত্মপ্রকাশ করা আরেক উদ্যোগ থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজার আটটি নৌযানও এ যাত্রায় অংশ নিয়েছিল। মোট ৯টি নৌযানের এ বহরে বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও অধিকারকর্মীরা যোগ দিয়েছিলেন। সেই দলে ছিলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। গত বুধবার এই নৌবহরে আক্রমণ করে সব অধিকারকর্মী ও নাবিককে ধরে নিয়ে যায় ইসরায়েলি সেনারা।
জাতীয়
অগ্রণী ব্যাংকে শেখ হাসিনার লকারে ৮৩২ ভরি সোনার সন্ধান
অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান শাখায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুটি ভল্ট ভেঙে ৮৩২ ভরি স্বর্ণালংকারে সন্ধান পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) এই ভল্ট দুইটি ভাঙ্গার সময় বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ইতোমধ্যে লকারের একটি সিজার লিস্ট করা হচ্ছে। এর আগে লকার দুটি জব্দ করে এনবিআরের এই গোয়েন্দা সংস্থা।
সিআইসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মঙ্গলবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার নামে অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চে থাকা ৭৫১ এবং ৭৫৩ নম্বর ভল্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের রেগুলেশন অনুযায়ী ভাঙা হয়। ভল্ট দুটি থেকে মোট ৮৩২ ভরি স্বর্ণালংকারে সন্ধান পাওয়া যায়।
তবে স্বর্ণের বাইরে আর কি ধরনের জিনিস রয়েছে, তা জব্দ তালিকার পর জানা যাবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
অবশ্য একই দিন শেখ হাসিনার নামে রক্ষিত পূবালী ব্যাংকের একটি শাখায় রক্ষিত ভল্ট খোলা হলেও সেখানে কোনো স্বর্ণালংকার বা কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, পূবালী ব্যাংকের ওই ভল্টে কেবল একটি পাটের বস্তা পাওয়া গেছে। তবে এই তথ্যের সত্যতা নিয়ে দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এমকে
জাতীয়
বাংলাদেশ একটি ঐতিহাসিক নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ একটি ঐতিহাসিক নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) ঢাকায় নবনিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জঁ-মার্ক সেরে-চারলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত প্রধান উপদেষ্টাকে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন ধারায় নিতে তার দেশের প্রস্তুতির কথা জানান। তিনি দুদেশের মধ্যে বিশেষ করে গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে স্বার্থের সঙ্গতি গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।
জ্যঁ-মার্ক সেরে-শার্লেট বলেন, বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মুখে দাঁড়িয়ে, যখন দেশ ইতিহাস সৃষ্টিকারী জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। এটি ফ্রান্স ও বাংলাদেশের জন্য আমাদের অংশীদারত্বকে এগিয়ে নেওয়া এবং সহযোগিতা সম্প্রসারণের সময়।
তিনি আরও জানান, এ মাসের শুরুর দিকে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি বাংলাদেশের প্রতি ফ্রান্সের গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করেছেন। রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, ফ্রান্সের প্রায় ১৫ লাখ নাগরিক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বসবাস করছে, যা ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার প্রায় তিন শতাংশ।
তিনি বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল খোলা এবং স্বাধীন চলাচলের মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত। ফ্রান্স বাংলাদেশের সঙ্গে আরও কার্যকর সম্পর্কের জন্য বড় সম্ভাবনা দেখছে।
রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারিতে শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ এ ধরনের নির্বাচন পরিচালনায় ফ্রান্সের অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হতে পারবে।
তিনি কিছু ইউরোপীয় দেশের উদাহরণ তুলে ধরেন, যেখানে নির্বাচনকালীন পরিকল্পিত ভুল তথ্য প্রচার এবং সামাজিক বিভাজনের প্রচেষ্টা দেখা গেছে।
রাষ্ট্রদূত জঁ-মার্ক সেরে-চারলে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। বাংলাদেশকে সবচেয়ে কম উন্নয়নশীল দেশের (এলডিসি) অবস্থান থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সহযোগিতা সম্প্রসারণে ফ্রান্স প্রস্তুত বলে জানান।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফ্রান্সের এ প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানান এবং দেশটিকে ‘বিশ্বস্ত ও দীর্ঘদিনের অংশীদার’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি রাষ্ট্রদূতকে অন্তর্বর্তী সরকারের সংশোধনী উদ্যোগ ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে বর্ণনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতকে বলেন, আপনার নিয়োগের সময়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশ একটি ঐতিহাসিক নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে।
তিনি ফ্রান্সের ধারাবাহিক সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন—যা গণতন্ত্র, মানবাধিকার, জলবায়ু কার্যক্রম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মতো অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার বিষয়ে অবদান রেখেছে।
ড. ইউনূস তার দীর্ঘদিনের ফ্রান্স সফর এবং ফরাসি সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কের কথাও স্মরণ করেন, যা তিনি প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের আগে গড়ে তুলেছিলেন।
এমকে
জাতীয়
জুলাইয়ের হত্যা মামলায় অব্যাহতি পেলেন শেখ বশিরউদ্দীন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে মো. সোহান শাহ হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
তাকে অব্যাহতির সুপারিশ করে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন গ্রহণ করে মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জামসেদ আলম এ আদেশ দেন।
ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন হাছান এ তথ্য জানান।
গত ২৪ নভেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-৩-এর উপপরিদর্শক মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩(ক) ধারা অনুযায়ী অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই মামলার ঘটনার সঙ্গে শেখ বশিরউদ্দীনের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তাকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি প্রার্থনা করছি।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রামপুরার সিএনজি স্টেশনের সামনে গুলিতে আহত হন ভারগো গার্মেন্টস কোম্পানির ‘এক্সিকিউটিভ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার’ মো. সোহান শাহ (৩০)। এরপর ওই বছরের ২৮ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সোহান।
এই ঘটনায় গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সোহানের মা সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেন। মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫৭ জনকে আসামি করা হয়।
আদালত অভিযোগটি রামপুরা থানা পুলিশকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। সেই মামলায় শেখ বশিরউদ্দীন এজাহারনামীয় ৪৯ নং আসামি ছিলেন।
এমকে
জাতীয়
নির্বাচন আয়োজনে সরকার ও কমিশন প্রস্তুত: উপদেষ্টা শারমীন
আসন্ন জাতীয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকেই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব নিতে হবে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অডিটোরিয়ামে ‘নারী-শিশু সুরক্ষা : জনতার কাতারে সরকার’ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচন আয়োজনে সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা শারমীন বলেন, সরকার বলেছে নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন বলেছে নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত। আমাদের বিশ্বাস করতে হবে, আস্থা রাখতে হবে। ত্রুটি যদি হয়, আপনারা (সাংবাদিক) আছেন দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। ভুল যদি হয়, আপনারা আছেন দেখিয়ে দেওয়ার জন্য।
তিনি আরও বলেন, এই কাজটা সুন্দরভাবে করতে হলে সবচাইতে বড় দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। তাদের গণতান্ত্রিক আচরণ, সহনশীলতা এবং সুন্দরভাবে, সংগতভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা জানি নির্বাচনে কী অরাজকতা হয়। আমার প্রত্যাশা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে যে তারা এমন একটা পরিবেশ তৈরি করবে যে রাষ্ট্রের খুব কষ্ট পেতে হবে না একটা সুশৃঙ্খল পরিবেশ রক্ষা করতে।
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, নির্বাচন নিয়ে এইটুকুই কথা। নির্বাচন হবে, তার জন্য ব্যবস্থাপনা চলছে। প্রস্তুত সরকার। সরকারের চাইতে বড় প্রস্তুত কাকে নিতে হবে? নির্বাচন কমিশনকে এবং নির্বাচন কমিশন আমাদের আশ্বস্ত করেছে, তারা প্রস্তুত। সবকিছু নিয়ে বিতর্ক আছে। কোনো না কোনো দল কোনো না কোনো কাজ অপছন্দ করে। সেটা নিয়ে আমাদের ভাবলে চলবে না, আমরা স্পষ্টত আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। তো এগুলো আমরা দেখি কীভাবে হয়।
তিনি আরও বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়কে জনগণের কাতারে নিয়ে আসা। আমাদের গ্রামে পৌঁছাতে হবে। প্রতিটি মানুষকে তার কথা বলার জন্য সুযোগ করে দিতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা কুইক রেসপন্স নামে একটি কৌশল গ্রহণ করেছি। যেখানে নারী ও শিশু নির্যাতন হবে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের মন্ত্রণালয় সেখানে পৌঁছাবে এমন কাঠামো আমরা তৈরি করছি।
এ সময় রংপুর জেলা প্রশাসক মো. এনামুল আহসানসহ সমাজসেবা ও নারী-শিশু মন্ত্রণালয়ের বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং জুলাই আন্দোলনে নিহত সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র বাবা-মা ও রংপুরের জুলাই যোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।
এমকে
জাতীয়
বাংলাদেশে দারিদ্র্যে নামার ঝুঁকিতে ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ: বিশ্বব্যাংক
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ বা ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা যেকোনো অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের মুখে পড়ে আবারও দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও বৈষম্য মূল্যায়ন-২০২৫’ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ দারিদ্র্য হ্রাসে বড় ধরনের অগ্রগতি অর্জন করেছে। এ সময়ে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ দারিদ্র্য থেকে এবং ৯০ লাখ মানুষ অতি দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ, শিক্ষা ও পয়োনিষ্কাশনসহ জরুরি সেবায় প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ২০১৬ সাল থেকে দারিদ্র্য কমার গতি শ্লথ হয়েছে এবং প্রবৃদ্ধি হয়েছে কম অন্তর্ভুক্তিমূলক।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২২ সালে চরম দারিদ্র্য ১২.২ শতাংশ থেকে কমে ৫.৬ শতাংশে এবং মাঝারি দারিদ্র্য ৩৭.১ শতাংশ থেকে কমে ১৮.৭ শতাংশে নেমে আসে। কিন্তু ২০১৬ সালের পর ধনী জনগোষ্ঠীর আয় বাড়লেও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধির হার কমে যায়, ফলে আয় বৈষম্য বেড়ে যায়। কৃষিনির্ভর গ্রামীণাঞ্চলে দারিদ্র্য দ্রুত কমলেও শহরে দারিদ্র্য হ্রাসের হার কমেছে। ২০২২ সাল নাগাদ প্রতি চারজনের একজন শহরে বসবাস শুরু করেন।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের বিভাগীয় পরিচালক জ্যঁ পেম বলেন, পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট, জলবায়ু ঝুঁকি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় শ্রম আয়ও কমছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি—বিশেষ করে নারী, যুবক ও ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য—দারিদ্র্য হ্রাসের জন্য জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
প্রতিবেদন বলছে, উৎপাদনশীল খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি স্থবির হয়ে পড়েছে, বিপরীতে কম উৎপাদনশীল খাতে কর্মসংস্থান বাড়ছে। এতে নারী ও তরুণেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। প্রতি পাঁচজন নারীর একজন বেকার এবং প্রতি চারজন শিক্ষিত নারীর একজনের কর্মসংস্থান নেই। ঢাকার বাইরে শহরাঞ্চলে কর্মসংস্থান প্রায় স্থবির। ফলে নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
১৫–২৯ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের প্রায় অর্ধেক কম মজুরিতে কাজ করছেন—যা দক্ষতা ও শ্রমবাজারের চাহিদার অসঙ্গতি নির্দেশ করে। অভিবাসন দারিদ্র্য কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও দেশের ভেতরে অভিবাসীরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করেন এবং বিদেশে যেতে উচ্চ ব্যয়ের কারণে দরিদ্র মানুষের সুযোগ সীমিত।
প্রতিবেদনে সামাজিক সুরক্ষায় অদক্ষতা ও লক্ষ্যভিত্তিক ব্যয়ের অভাবের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। ২০২২ সালে সামাজিক সুরক্ষার সুবিধাভোগীদের ৩৫ শতাংশ ছিল ধনী পরিবার, যেখানে অতি দরিদ্রদের অর্ধেকও সুবিধা পাননি। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও সারের ভর্তুকির বড় অংশটিও ধনীদের কাছে পৌঁছেছে।
বিশ্বব্যাংক দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমাতে চারটি কৌশলগত করণীয় চিহ্নিত করেছে— উৎপাদনশীল খাতে কর্মসংস্থানের ভিত্তি শক্তিশালী করা, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য শোভন কাজের সুযোগ বৃদ্ধি, প্রক্রিয়াজাত শিল্পে বিনিয়োগ ও দরিদ্র-বান্ধব বাজারব্যবস্থা তৈরি, লক্ষ্যভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা ও কার্যকর রাজস্ব নীতির মাধ্যমে ঝুঁকি মোকাবিলা।
প্রতিবেদনের সহলেখক ও বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সার্জিও অলিভিয়েরি বলেন, বাংলাদেশ পূর্ব–পশ্চিম বৈষম্য কিছুটা কমালেও জলবায়ু ঝুঁকি শহর–গ্রামের বৈষম্য বাড়াচ্ছে। উদ্ভাবনী নীতি, যোগাযোগ উন্নয়ন, শহরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষিতে দরিদ্র-বান্ধব মূল্যচেইন এবং কার্যকর সামাজিক সুরক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশ আবারও দারিদ্র্য হ্রাসের গতি ফিরিয়ে আনতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এমকে



