অর্থনীতি
বেড়েছে কাঁচা মরিচের ঝাঁজ, মাছ-মাংসের বাজার ঊর্ধ্বমুখী
কয়েকদিনের বৃষ্টিকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বাড়িয়েছে কাঁচা মরিচসহ সব ধরনের সবজির দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কিছু সবজি কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছে। কিন্তু খুচরা বাজারে সবজির কোনো সংকট নেই। পাশাপাশি খুচরা পর্যায়ে সাত দিনের ব্যবধানে ভোজ্যতেল ও মসুর ডালের দামও বাড়ানো হয়েছে। অসহনীয় মাছ-মাংসের দামও। ফলে এসব পণ্য কিনতে এসে ক্রেতাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হয়েছে ৮০-৮৫ টাকা, যা সাত দিন আগেও ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়শ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা, যা সাত দিন আগেও ৬০-৭০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি ঝিঙা বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকা, যা আগে ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকা। যা সাত দিন আগেও ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সিম ২০০ টাকা, উস্তা ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০-১০০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া প্রতি কেজি কচুমুখী ৫০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, কুমড়া ৪০-৫০ টাকা, শসার কেজি ৬০-৭০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, মুলা ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে প্রতি পিস ফুলকপি ৫০ টাকা, জালি কুমড়া ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।
রাজধানীর নয়াবাজারে সবজি কিনতে আসা মো. শাকিল বলেন, বৃষ্টি হলেই বিক্রেতারা সবজির দাম বাড়িয়ে দেয়। এটা স্বাভাবিক যে বৃষ্টির কারণে সবজি নষ্ট হয়। পরিবহণেও ঝামেলা হয়। এতে সরবরাহ কমে। তবে বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত। কিন্তু বিক্রেতারা বৃষ্টির অজুহাতে সরবরাহ কম বলে বাড়তি দামে বিক্রি করছে। যা কোনোভাবেই ঠিক নয়।
একই বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. আল আমিন বলেন, আড়তে সবজির সরবরাহ কমেছে। আড়ত পর্যায়ে দাম বাড়ায় আমাদের বাড়তি দরে কিনতে হয়েছে। বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দামেই। বৃষ্টি এমন চলতে থাকলে দাম আরও কিছুটা বাড়তে পারে।
এদিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে ভোজ্যতেল ও ডালের দাম বাড়ানো হয়েছে। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এদিন দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ব্র্যান্ড ভেদে ৩৮০-৩৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা সাত দিন আগেও ৩৭৫-৩৮০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে পাম তেলের দামও। লিটারপ্রতি পাম তেল সুপার বিক্রি হচ্ছে ১৬৮ টাকা। যা আগে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সঙ্গে মাঝারি দানার প্রতি কেজি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা। যা সাত দিন আগে সর্বনিম্ন ১১০ টাকায় পাওয়া গেছে।
এছাড়া ছোট দানার প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম গিয়ে ঠেকেছে ১৫০-১৬০ টাকা। যা এক মাস আগেও ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। সেক্ষেত্রে মাসের ব্যবধানে এই পণ্যের দাম সর্বোচ্চ কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। আর বড় দানার মসুর ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা।
রাজধানীর কাওরান বাজারে মুদি পণ্য কিনতে আসা নাজমুল বলেন, মিডিয়ায় দেখেছি তেল কোম্পানিগুলো তেলের দাম বাড়াতে সরকারের কাছে আবেদন করেছে। কিন্তু সরকার দাম বাড়ায়নি। তারপরও দোকানে এসে দেখি বিক্রেতারা তেলের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। সঙ্গে ডালের দামও বাড়ছে হু হু করে। দেখার যেন কেউ নেই।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। যা সাত দিন আগেও ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা। যা আগে ২৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকা। আর খাসির মাংসে কেজিপ্রতি ১১০০ থেকে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মাঝারি আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৩০০-২৫০০ টাকা। ৭০০-৮০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০০-১৮০০ টাকা। আর ছোট আকারের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকা। পাশাপাশি প্রতি কেজি রুই ৩৫০-৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ টাকা, পাঙাশ ২২০-২৫০ টাকা, পাবদা ৪০০-৪৫০ টাকা, টেংরা ৮০০ টাকা ও চিংড়ি কেজিপ্রতি ১০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অর্থনীতি
সোনা ও রুপার স্মারক মুদ্রার দাম বাড়লো
দেশের বাজারে সোনার দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছনোর প্রেক্ষাপটে সোনা ও রুপার স্মারক মুদ্রার দাম সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে প্রতিটি সোনার স্মারক মুদ্রার দাম ১৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগে ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারে সোনার দাম বেড়ে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) থেকেই নতুন দাম কার্যকর।
নতুন দাম অনুযায়ী, ২২ ক্যারেট সোনার তৈরি ১০ গ্রাম ওজনের স্মারক মুদ্রা (বাক্সসহ) এখন বিক্রি হবে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকায়।
এদিকে, বাজারে প্রচলিত ১১ ধরনের স্মারক রৌপ্যমুদ্রার (ফাইন সিলভার) দামও বাড়ানো হয়েছে। ২০ গ্রাম থেকে ৩১.৪৭ গ্রাম ওজনের এসব রৌপ্যমুদ্রার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার টাকা, যা এতদিন ছিল ৮ হাজার ৫০০ টাকা।
অর্থনীতি
চট্টগ্রাম বন্দরে ড্যানিশ কোম্পানির ৬৭০০ কোটি বিনিয়োগ
চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ এবং ৩০ বছরের জন্য এটি পরিচালনার দায়িত্ব পেলো ডেনমার্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস। এ প্রতিষ্ঠানটি এপি মোলার মার্স্ক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় এ টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে কোম্পানিটি।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে এপিএম টার্মিনালস এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (সিপিএ) মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
চুক্তিতে সই করেন এপিএম টার্মিনালসের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টেইন ভ্যান ডোঙ্গেন এবং চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পাবলিক–প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির (পিপিপিএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিপিং উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক স্টেট সেক্রেটারি লিনা গ্যান্ডলোসে হ্যানসেন, বাংলাদেশে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মোলার এবং মার্স্ক বোর্ড চেয়ারম্যান রবার্ট মার্স্ক উগলা।
তিনি বলেন, লালদিয়া টার্মিনাল ২০২৮ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, এপিএম টার্মিনালসই টার্মিনালটির নকশা, অর্থায়ন, নির্মাণ এবং পরবর্তী ৩০ বছর পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ বিনিয়োগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। পার্টিকুলারলি তাদের জন্য যারা ৪ আগস্ট রক্ত দিয়েছে। যারা জীবন দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য,এটা তাদের জন্য। এই প্রকল্প যখন শেষ হবে তখন অনেক তরুণের কর্মসংস্থান হবে।
এই উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রাম পোর্ট ছাড়াও মংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো কাজ চলছে। মংলাতেও বিনিয়োগ আসছে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আমরা মেরিটাইম পোর্ট স্ট্রেটেজি নিয়ে কাজ করছি। যা ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। আমরা আশা করছি এটা আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান করবে।
পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও আশিক চৌধুরী বলেন, আগামী কয়েক বছরে চারটি নতুন সমুদ্রবন্দর, যার মধ্যে রয়েছে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর, একটি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল এবং একটি ডেডিকেটেড ফ্রি ট্রেড জোন।
ভিডিও বার্তায় ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোক্কে রাসমুসেন বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার শুরুর দিকেই ডেনমার্ক সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং গত পাঁচ দশকে দুই দেশের উন্নয়ন সহযোগিতা সফলভাবে এগিয়েছে। আজ আমাদের সম্পর্ক সহায়তা থেকে ব্যবসায় রূপ নিয়েছে। মাথাপিছু ভিত্তিতে ডেনমার্ক বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বড় রপ্তানি গন্তব্য।
অর্থনীতি
গ্রাহকদের জন্য যে ৫ সেবা বন্ধ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকদের জন্য চালু থাকা পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে এসব সেবা বন্ধ হবে। পরে ধাপে ধাপে দেশের অন্যান্য বিভাগীয় অফিসেও সেবা বন্ধ করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক যে সেবা পাঁচটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করছে, সেগুলো হলো:
.ছেঁড়া-ফাটা নোট বদল
.সঞ্চয়পত্র বিক্রি
.প্রাইজবন্ড বিক্রি
.সরকারি ট্রেজারি চালান গ্রহণ
.চালানভিত্তিক ভাংতি টাকা দেওয়া
ডিসেম্বর থেকে মতিঝিল অফিসে নগদ সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড কেনাবেচাও থাকবে না।
মতিঝিল অফিসের ১৬টি কাউন্টারে কিছু সেবা আপাতত চালু থাকবে। সেগুলো হলো:
.ধাতব মুদ্রা বিনিময়
.স্মারক মুদ্রা বিক্রি
.অপ্রচলিত নোটের বিরোধ নিষ্পত্তি
.ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন সংক্রান্ত সেবা
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এসব সেবাও ধীরে ধীরে বন্ধ করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেবা বন্ধ করলেও বাণিজ্যিক ব্যাংকেই মিলবে সব সেবা।
আগের মতোই সঞ্চয়পত্র, প্রাইজবন্ড, ছেঁড়া নোট বদলসহ সব ধরনের গ্রাহকসেবা প্রদান করবে। ব্যাংকগুলো যাতে নির্বিঘ্নে সেবা দিতে পারে, সেজন্য তদারকি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনাও নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন বন্ধ করা হচ্ছে এসব সেবা?
বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্যাশ বিভাগ আধুনিকায়ন ও নিরাপত্তা বাড়ানোর অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মূল ভবনের নিরাপত্তা জোরদার এবং স্বয়ংক্রিয় ভল্ট স্থাপন সম্পর্কিত কমিটির সুপারিশেই সেবা সীমিত করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
সম্প্রতি মতিঝিল অফিসে সঞ্চয়পত্র সার্ভার জালিয়াতির ঘটনা সামনে এলেও কর্মকর্তারা বলছেন, এটি বন্ধের মূল কারণ নয়; বরং নিরাপত্তা প্রটোকল ও আধুনিকায়নই প্রধান লক্ষ্য।
সেবা বন্ধের বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানাতে শিগগিরই প্রচারণা চালাবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে মতিঝিল অফিসে মোট সঞ্চয়পত্র গ্রাহকসেবার ৩০ শতাংশ পরিচালিত হয়। এসব সেবা বন্ধ হলে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থনীতি
বন্ড অপব্যবহারকারীদের তালিকা প্রকাশের দাবি বিজিএমইএ সভাপতির
বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে কঠোর অবস্থান জানিয়েছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। সংগঠনের সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেছেন, কোনও কোনও প্রতিষ্ঠান বন্ডের অপব্যবহার করছে—সে তালিকা স্পষ্টভাবে বিজিএমইএকে জানাতে হবে। অপব্যবহার প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট সদস্যের সব সেবা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
রবিবার (১৬ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী নেতারা।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘মুষ্টিমেয় কয়েকজনের অপকর্মের দায় পুরো শিল্পের ওপর চাপানো যাবে না। আমাদের ২২টি সদস্য প্রতিষ্ঠানকে ইতোমধ্যে সতর্ক করা হয়েছে। এনবিআর আমাদের যাদের নাম দেবে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বন্ড লাইসেন্স ছাড়া ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে কাঁচামাল আমদানির সুযোগ কার্যকর করা গেলে প্রায় ২০০ সদস্য স্বেচ্ছায় তাদের বন্ড লাইসেন্স সারেন্ডার করবে। কারণ লাইসেন্স বজায় রাখতে যে নানা জটিলতা, তা থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক প্রতিষ্ঠানই আগ্রহী।’
কর অব্যাহতির ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত হওয়াকে স্বাগত জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘যে সুবিধা দেওয়া হবে তা সংসদের মাধ্যমে হবে; আবার যে সুবিধা বন্ধ করা হবে, সেটিও সংসদের মাধ্যমেই হওয়া উচিত। হঠাৎ করে এসআরও জারি করে সুবিধা বাতিল করা অনাকাঙ্ক্ষিত।’
অটোমেশনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অটোমেশন ছাড়া দুর্নীতি কমবে না। বন্ডসহ সব প্রক্রিয়া দ্রুত অটোমেশনে যেতে হবে।’
এদিকে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারীদের তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। তিনি জানান, বন্ড ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি অটোমেশনের আওতায় আনা হচ্ছে এবং বন্ড কর্মকর্তাদের জন্য এক সপ্তাহের বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশিক্ষণে ব্যর্থ হলে চাকরিতে টিকে থাকা কঠিন হবে। অদক্ষ কর্মকর্তাদের অপসারণেরও ইঙ্গিত দেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘খুব শিগগিরই বন্ডের কোনও কাজই হাতে (ম্যানুয়াল) করা হবে না; সবই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আসবে।’
বন্ড ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা নিশ্চিত ও রফতানি খাতকে শৃঙ্খলায় আনতে বিজিএমইএ–এনবিআরের এই অবস্থান রফতানি খাতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অর্থনীতি
দেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে: অর্থ উপদেষ্টা
দেশের অর্থনীতি বর্তমানে অনেক ভাল অবস্থানে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, অর্থনীতি ধ্বংস হয়নি; বরং পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে। গত আগস্টের চ্যালেঞ্জিং সময়ের তুলনায় দেশের অর্থনীতি বর্তমানে অনেক ভাল অবস্থানে রয়েছে।
আজ রবিবার (১৬ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে ‘নগদ-ডিআরইউ বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধার পর্যায়ে রয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, রিজার্ভ ও রপ্তানি খাতে ইতিবাচক অগ্রগতির স্পষ্ট লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
তিনি স্বীকার করেন যে, দেশে অভ্যন্তরীণ কিছু চ্যালেঞ্জ এখনও রয়েছে। তবে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিরাজ করছে বলেও দাবী করেন।
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, প্রধান বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের অর্জন ও অগ্রগতি সম্পর্কে অবগত আছে এবং তারা ইতোমধ্যেই এগুলোকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অতিরিক্ত ব্যয় কমানো এবং জবাবদিহীতা বজায় রাখার আহ্বান জানান অর্থ উপদেষ্টা। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে অতীতের মেগা প্রকল্পগুলোর ব্যয়ের কথাও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, কিছু প্রকল্প এখন শুধু স্মারক বা ভাস্কর্যের মত হয়ে আছে, শত শত কোটি টাকা খরচ করেও বাস্তবে খুব বেশি উপকার পাওয়া যায়নি। এসব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। ভবিষ্যত প্রকল্পগুলোতে আরও জবাবদিহীতা ও সংযম দেখানোর আহ্বান জানান তিনি।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, আগামী মাসগুলো গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যমান কাঠামোকে পরিমার্জন ও সমন্বিত করে নির্বাচিত সরকারের কাছে হস্তান্তরই আমাদের মূল দায়িত্ব। যাতে এগুলো তারা আরও আধুনিক ও কার্যকরভাবে এগিয়ে নিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় উন্নয়ন কেবল অর্থনীতিতেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। জনগণ খাদ্য ও মৌলিক চাহিদার চেয়েও বেশি কিছু প্রত্যাশা করে।
উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তার মত বিষয়ও জাতীয় উন্নয়নের অপরিহার্য অংশ। এই খাতগুলোতে মনোযোগ দেওয়া অপরিহার্য, যাতে বাংলাদেশ আরও সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে ওঠে।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল ভূমিকার গুরুত্বও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রকৃত সত্য উদঘাটনে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে এবং গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ম্যানেজমেন্ট বোর্ড বিএপিও-নগদের চেয়ারম্যান কায়সার এ. চৌধুরী। আরও বক্তব্য দেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল।



