অর্থনীতি
ছুটির দিনেও চালু থাকবে আয়কর রিটার্নের হেল্প ডেস্ক
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছুক প্রার্থীদের সুবিধার্থে ছুটির দিনে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের হেল্প ডেস্ক চালু রাখবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) এনবিআর থেকে এ সম্পর্কিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
এনবিআর বলছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছুক প্রার্থীদের অনলাইনে রিটার্ন দাখিল সহজীকরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উদ্যোগে ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের সহযোগিতায় ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটস্থ কার্যালয়ে ‘হেল্পডেস্ক’ চালু করা হয়েছে। এই হেল্পডেস্কে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল সংক্রান্ত সেবা প্রদান করা হবে।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রমনার ইঞ্চিনিয়ার্স ইনিস্টিটউটের (আইইবি) লেভেল ৭ এ অবস্থিত কর কমিশনারের কার্যালয়ে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ দেওয়া হবে। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) একই অফিসে সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এ সেবা দেওয়া হবে। পরেদিন রোববার (২৮ ডিসেম্বর) কর্মদিবসে যথারীতি এ সেবা চালু থাকবে।
এমকে
অর্থনীতি
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু হচ্ছে ১ জানুয়ারি
আগামী ১ জানুয়ারি থেকে মাসব্যাপী ৩০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ)-২০২৬ শুরু হচ্ছে পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে।
উদ্বোধনী দিনে সকাল ১০টায় প্রধান অতিথি হিসেবে মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
ইপিবি জানিয়েছে, এবারের মেলার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে ‘বাংলাদেশ স্কয়ার’, যেখানে দর্শনার্থীরা দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবি যৌথভাবে মেলার আয়োজন করছে।
মেলায় দেশি ও বিদেশি মিলিয়ে ৩৫০টিরও বেশি স্টল ও প্যাভিলিয়ন অংশ নেবে। ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, ইরান, সিঙ্গাপুর ও আফগানিস্তানসহ কয়েকটি দেশের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য চালু থাকবে ই-টিকিটিং সুবিধা এবং টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা। শিশুদের বিনোদনের জন্য দুটি শিশুপার্কও রাখা হয়েছে।
এদিকে নাম পরিবর্তনের আগের সিদ্ধান্ত বাতিল হওয়ায় মেলাটি আগের নাম ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা’ নামেই অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সাল থেকে এ মেলা পূর্বাচলের বিবিসিএফইসিতে আয়োজন করা হচ্ছে।
এমকে
অর্থনীতি
দেশে-বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন বেড়েছে
দেশে ও বিদেশে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবর মাসে দেশের ভেতর, দেশের বাইরে বাংলাদেশিদের এবং দেশে অবস্থানরত বিদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশিরা খরচ করেছিলেন ৪৯৪ কোটি ২ লাখ টাকা। পরের মাস অক্টোবরেই তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩৪ কোটি ২ লাখ টাকায়। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে বিদেশে ক্রেডিট কার্ড লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যয়ের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে খরচ হয়েছে ৭২ কোটি ৬ লাখ টাকা। এরপর থাইল্যান্ডে ৫৬ কোটি ৩ লাখ টাকা, যুক্তরাজ্যে ৫২ কোটি ২ লাখ টাকা, সিঙ্গাপুরে ৪৫ কোটি ২ লাখ টাকা, মালয়েশিয়ায় ৪৫ কোটি টাকা, সৌদি আরবে ৩১ কোটি টাকা, ভারতে ৩২ কোটি ৬ লাখ টাকা, নেদারল্যান্ডসে ২৩ কোটি টাকা, কানাডায় ২০ কোটি টাকা, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৯ কোটি টাকা, চীনে ১৮ কোটি ৯ লাখ টাকা, অস্ট্রেলিয়ায় ১৭ কোটি টাকা এবং অন্যান্য দেশে মোট ৯৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
এদিকে বিদেশিরা বাংলাদেশে এসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যে ব্যয় করছেন, সেটিও বেড়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশিরা বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে খরচ করেছিলেন ১৭৫ কোটি ৯ লাখ টাকা। অক্টোবর মাসে সেই ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৯৯ কোটি ৭ লাখ টাকায়, যা আগের মাসের তুলনায় প্রায় ২৪ কোটি টাকা বেশি।
বিদেশিদের মধ্যে বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যয়ের ক্ষেত্রেও শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির নাগরিকরা অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে খরচ করেছেন ৪৪ কোটি ২ লাখ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে যুক্তরাজ্য (২১ কোটি টাকা) এবং তৃতীয় অবস্থানে ভারত (১৮ কোটি টাকা)।
অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরেও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে দেশের ভেতর ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন ছিল ৩ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। অক্টোবর মাসে তা বেড়ে ৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ফলে এক মাসে দেশের ভেতর ক্রেডিট কার্ড ব্যয় বেড়েছে ৭৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা সামগ্রিকভাবে ভোক্তা ব্যয় ও আন্তর্জাতিক লেনদেনের গতিশীলতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
অর্থনীতি
বেকারদের কর্মসংস্থানে ১ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
বাংলাদেশের নিম্নআয়ের তরুণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে ১৫ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার (১৫০.৭৫ মিলিয়ন) ডলার অতিরিক্ত অর্থায়ন অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। প্রতি ডলার সমান ১২২ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১ হাজার ৮৩৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান পুনরুদ্ধার ও অগ্রগতির লক্ষ্যে প্রকল্পটিতে ঋণ সহায়তা দেবে সংস্থাটি। এই সহায়তা দেশের ১ লাখ ৭৬ হাজার যুবকের জন্য কর্মসংস্থান এবং আয়ের সুযোগ তৈরি করবে। এর আগে অন্তর্ভুক্ত ২ লাখ ৩৩ হাজার সুবিধাভোগীর পাশাপাশি নতুন অংশগ্রহণকারীরাও দক্ষতা প্রশিক্ষণ, শিক্ষানবিশ উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং ক্ষুদ্রঋণের অ্যাক্সেসসহ পরিষেবার একটি বিস্তৃত প্যাকেজ থেকে উপকৃত হবেন। যাতে তরুণ এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা কর্মসংস্থান এবং ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির বাধা অতিক্রম করতে পারে। এটি নারীর ক্ষমতায়নের জন্য উদ্ভাবনী পদ্ধতিও প্রবর্তন করবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, একটি ভালো চাকরি একটি জীবন, একটি পরিবার এবং একটি সম্প্রদায়কে বদলে দিতে পারে। তবুও প্রতি বছর শ্রমবাজারে প্রবেশকারী অনেক তরুণ বাংলাদেশি কাজ খুঁজে পায় না। দেশটি কাজের মান, দক্ষতার ঘাটতি এবং অমিলের ক্ষেত্রেও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই অতিরিক্ত অর্থায়ন নিম্ন আয়ের পরিবারের তরুণ, বিশেষ করে নারী এবং দুর্বল সম্প্রদায়ের তরুণদের উন্নত কর্মসংস্থান এবং জীবিকার সুযোগের জন্য প্রয়োজনীয় বাজার-প্রাসঙ্গিক দক্ষতা, সম্পদ এবং প্রশিক্ষণ অ্যাক্সেস করতে সহায়তা করবে।
সংস্থাটি জানায়, এই অর্থায়ন শহরাঞ্চলের বাইরে গ্রামীণ সম্প্রদায়গুলোতে প্রকল্পের কভারেজ সম্প্রসারণ করতে সহায়তা করবে। যাতে দেশের প্রান্তিক যুবক এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সহায়তা থেকে উপকৃত হতে পারে তা নিশ্চিত করা যায়। এটি নারীদের প্রশিক্ষণ এবং স্টার্ট-আপ অনুদান প্রদানের মাধ্যমে মানসম্পন্ন এবং সাশ্রয়ী মূল্যের গৃহভিত্তিক শিশু যত্ন পরিষেবা পাইলট করবে।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র সামাজিক সুরক্ষা অর্থনীতিবিদ এবং প্রকল্পের টিম লিডার আনিকা রহমান বলেন, এই নতুন অর্থায়নের মাধ্যমে আমরা প্রমাণিত হস্তক্ষেপগুলো বৃদ্ধি করতে পারি, ক্ষুদ্রঋণের অ্যাক্সেস প্রসারিত করতে পারি এবং মানসম্পন্ন শিশু যত্নের মতো উদ্ভাবনী সমাধানগুলো প্রবর্তন করতে পারি। এছাড়া আরও বেশি তরুণ ও নারীকে তাদের সম্ভাবনা উন্মোচন করতে এবং স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সহায়তা করতে পারি।এই ঋণের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নারী এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা।
অর্থনীতি
খেজুর আমদানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক কমালো সরকার
আসন্ন পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে খেজুর আমদানিতে সরকার আমদানি শুল্ক ৪০ শতাংশ কমিয়েছে। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জনগণের আবেগের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে খেজুরের দাম সাধারণের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসার লক্ষ্যে আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে খেজুর আমদানিতে বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ৪০ শতাংশ কমানো হয়েছে।
পবিত্র রমজান মাসে খেজুরের সরবরাহ ও বাজারমূল্য স্বাভাবিক রাখার উদ্দেশ্যে খেজুর আমদানিতে কাস্টমস ডিউটি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে ২৩ ডিসেম্বর একটি প্রজ্ঞাপণ জারি করেছে সরকার। এই অব্যাহতি আগামী ৩১ মার্চ ২০২৬ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
এছাড়া বিগত বাজেটে আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর সংক্রান্ত বিধিমালা সংশোধন করে খেজুরসহ সব ফল আমদানির ওপর প্রযোজ্য অগ্রিম আয়কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। খেজুর ও অন্যান্য ফল আমদানিতে গত বছর অগ্রিম আয়করে যে ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে তা চলতি বছরেও বহাল আছে।
খেজুর আমদানিতে আমদানি শুল্ক এবং অগ্রিম আয়করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ছাড় দেয়ার কারণে আসন্ন রমজান মাসে খেজুরের সরবরাহ এবং বাজারমূল্য সাধারণ ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে বলে মনে করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
অর্থনীতি
বিমানের বহর সংকট তীব্র, শিগগরই মিলছে না নতুন উড়োজাহাজ
যাত্রী চাহিদা যখন দ্রুত বাড়ছে, ঠিক সেই সময় গত পাঁচ বছরে একটি উড়োজাহাজও বহরে যুক্ত করতে না পারায় তীব্র সংকটে পড়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সম্প্রসারণ না হয়ে, বরং জাতীয় পতাকাবাহী এই সংস্থার বহর আরও সঙ্কুচিত হয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৯টিতে।
গত বছর লিজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় দুটি উড়োজাহাজ ফেরত দেওয়ার পর বহরের আকার কমে আসে। এরপর বিকল্প হিসেবে উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার একাধিক চেষ্টা করা হলেও, আন্তর্জাতিক লিজদাতাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। পাঁচ দফা দরপত্র আহ্বান করলেও—কেউ আগ্রহ দেখায়নি।
খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, মূল সমস্যা হলো সরকারি ক্রয়বিধি বা দরপত্র প্রক্রিয়ার কারণে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে না পারা। বৈশ্বিক বাজারে যখন উড়োজাহাজের তীব্র সংকট এবং লিজ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত অনেক সময় কয়েক দিন বা ঘণ্টার মধ্যেই নিতে হয়, তখন এই দীর্ঘসূত্রতা বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এর প্রভাব ইতোমধ্যেই বিমানের অপারেশনে পড়তে শুরু করেছে। আগামী এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া হজ মৌসুমের আগে একাধিক রুটে ফ্লাইট কমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বিমান। অথচ এর মধ্যেই দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় চলতি মাসের শেষ দিকে ঢাকা–করাচি রুটে ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
বিমানের মুখপাত্র বোসরা ইসলাম বলেন, গত বছরও আমরা লিজ নেয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু এয়ারক্রাফট খুঁজে পাইনি। এবারো চেষ্টা চলছে। চাহিদার তুলনায় এয়ারক্রাফট কম থাকায় হজ মৌসুমে ফ্লাইট কমানোর একটি খসড়া পরিকল্পনা তৈরি রেডি হয়েছে, যা চূড়ান্ত হলে ঘোষণা দেওয়া হবে।
লিজ প্রক্রিয়ার ধীরগতির বিষয়ে তিনি বলেন, বিমানকে সব সরকারি দরপত্র প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় সময় লাগে—এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
বর্তমানে বিমানের বহরে রয়েছে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর, চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮, দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯, চারটি বোয়িং ৭৩৭ এবং পাঁচটি ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ উড়োজাহাজ। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৫ মার্চ কানাডা থেকে একটি ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত হয়।
বর্তমানে বিমান ২২টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রুট চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে।
২০২৪ সালে বিমানের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদিত ১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩৪ সালের মধ্যে অন্তত ২৬টি নতুন উড়োজাহাজ সংগ্রহ করে বহর ১৯ থেকে বাড়িয়ে ৪৭টিতে নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
চলতি বছরের জুনের শেষ দিকে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাফিকুর রহমান বলেন, বর্তমান যাত্রী চাহিদা পূরণ করতে আমাদের উড়োজাহাজ প্রয়োজন। সে কারণেই আমরা সরাসরি লিজদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, উড়োজাহাজ সংকটের কারণে নতুন রুট চালু করাও সম্ভব হচ্ছে না।
তবে অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বলছে, বোয়িং ও এয়ারবাস—দুই উড়োজাহাজ নির্মাতার সঙ্গেই আলোচনা ঝুলে থাকায় এই লক্ষ্য অর্জন ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
বিমানের এক কর্মকর্তা বলেন, সমস্যার দ্রুত সমাধান সম্ভব নয়। বড় ধরনের উড়োজাহাজ কেনাকাটার ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভা পর্যায়ের অনুমোদন লাগে। এ ছাড়া উড়োজাহাজ কেনার জন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করার কমপক্ষে ৫-৬ বছর পর তা পাওয়া যায়।
বিমানের সাবেক বোর্ড সদস্য ও এভিয়েশন বিশ্লেষক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, বিমান দীর্ঘদিন ধরেই কখনও লিজ, কখনও নতুন বিমান কেনা—এইভাবে তারা সিদ্ধান্তে দোলাচলে আছে। তার মতে, “সমস্যা লিজ নেওয়ার জন্য উড়োজাহাজের প্রাপ্যতায় নয়, বরং সঠিক, বাস্তবসম্মত এবং আন্তর্জাতিক মানের দরপত্র প্রক্রিয়া অনুসরণ না করা।”
তিনি বলেন, বিমান বারবার টেন্ডার আহ্বান করলেও লিজদাতারা সাড়া দিতে চান না—কারণ সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্তে সময় লাগে। আন্তর্জাতিক লিজদাতারা ঘণ্টা বা দিনের হিসাবে এয়ারক্রাফট চালান, তারা দীর্ঘ সময় উড়োজাহাজ ‘স্ট্যান্ডবাই’ রাখতে রাজি নন।
আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক শুল্ক নিয়ে বাণিজ্য আলোচনার সময় সরকার ২৫টি বোয়িং উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০৩৭ সালের আগে মার্কিন এভিয়েশন জায়ান্টটি প্রথম উড়োজাহাজ সরবরাহ করতে পারবে না।
এয়ারবাসের ক্ষেত্রেও সময়সীমা প্রায় একই। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর বৈঠকের পর ফ্রান্স প্রকাশ্যে জানায়, বাংলাদেশ ১০টি এয়ারবাস উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
২০৩০ সালের আগে সরবরাহ সম্ভব কি না—এমন প্রশ্নে এয়ারবাস ইন্ডিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার কাস্টমার অ্যাকাউন্টস প্রধান এডওয়ার্ড ডেলাহে বলেন, বৈশ্বিক উচ্চ চাহিদার কারণে উৎপাদন সক্ষমতা সেই সময়সীমা পূরণ করতে পারবে না।
তবে তিনি যোগ করেন যে, এয়ারবাসের সঙ্গে যেসব লিজদাতার আগাম অর্ডার আছে, তাদের মাধ্যমে আগে উড়োজাহাজ পাওয়া যেতে পারে। বিমান যদি এয়ারবাসকে নির্বাচন করে, তাহলে আমরা লিজদাতাদের উৎসাহিত করব যেন আমাদের ডেলিভারি শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীনভাবে উড়োজাহাজ সরবরাহ করা যায়।
বহরের আকারে দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ সংখ্যা ২৫টি, যার মধ্যে প্রায় ১৬টিই লিজ নেওয়া। গত ২১ অক্টোবর তাদের বহরে যুক্ত হয়েছে তৃতীয় এয়ারবাস এ৩৩০-৩০০।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মুখপাত্র কামরুল ইসলাম বলেন, বাস্তবতা হলো—সরকারি প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ, একাধিক কমিটি, অনুমোদন, ব্যাংকিং প্রটোকল—সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া যায় না। এখানে বেসরকারি সংস্থাগুলোর দ্রুততা একটি বড় সুবিধা।
এরপরেও তিনি জানান যে, আমাদের যা চাহিদা সে অনুযায়ী পাচ্ছি না। বৈশ্বিক উড়োজাহাজ সংকট বেসরকারি খাতকেও প্রভাবিত করছে। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কিছু রুটে ফ্লাইট বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এই মুহূর্তে আমাদের অন্তত তিন থেকে চারটি নতুন এয়ারক্রাফট প্রয়োজন।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় ৫০ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য পাড়ি জমিয়েছেন। সড়ক ও রেল যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় কিছু অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী কমলেও সামগ্রিকভাবে আকাশপথে যাত্রী চলাচল বেড়েই চলেছে।
ঢাকা বিমানবন্দরের তথ্য বলছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও ২০২৪ সালে দেশের ব্যস্ততম এই বিমানবন্দর দিয়ে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেছেন, যা ২০২৩ সালের ১ কোটি ১৭ লাখের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ বেশি।
এই বাড়তি চাহিদার মধ্যেই গত অর্থবছরে বিমান ৯৩৭ কোটি টাকা রেকর্ড মুনাফা দেখিয়েছে। তবে এখনো বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে বিমানের দেনা ৬,০৬৮ কোটি টাকার বেশি।
বেবিচক সূত্র জানায়, এর মধ্যে ৪,৭৯৪ কোটি টাকা সারচার্জ এবং মূল দেনা ৭৪৬ কোটি টাকা।
বিমানের সাবেক মুখপাত্র এবিএম রওশন কবির বলেন, বিরোধপূর্ণ এই দেনার বড় অংশ বহু বছরের পুরোনো। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যে বকেয়ার কথা বলছে, তার প্রায় ৭৯ শতাংশই সারচার্জ। এসব পুরোনো বিল আমরা মানি না বলেই পরিশোধ স্থগিত রাখা হয়েছে।




