জাতীয়
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিশ্চিতে সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে সরকার: ড. ইউনূস
সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পরিবারের ইচ্ছাকে সম্মান দেখিয়ে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় নেত্রী, দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, গণতান্ত্রিক রাজনীতির অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তিত্ব এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ বিষয়টি আমাদের সবার জন্যই উদ্বেগের বিষয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি শুরু থেকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছে উল্লেখ করে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের প্রতি তার অবিচল অঙ্গীকার, দেশের উন্নয়নে তার অবদান এবং তার প্রতি জনগণের শ্রদ্ধাময় আবেগ বিবেচনায় নিয়ে সরকার এরইমধ্যে তাকে রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পরিবারের ইচ্ছাকে সম্মান দেখিয়ে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। দেশে চিকিৎসার পাশাপাশি প্রয়োজনে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সব বিষয় বিবেচনায় রয়েছে।
নির্বাচনে একে অপরকে প্রতিযোগী হিসেবে দেখবেন
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা চাই এই নির্বাচন হোক সত্যিকার অর্থে উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ এবং সর্বোপরি সুষ্ঠু নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তা, প্রশাসনিক প্রস্তুতি, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং পর্যবেক্ষণের প্রতিটি ধাপকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, একটি বিষয় বারবার মনে করিয়ে দিতে চাই— নতুন বাংলাদেশ গঠনের দায়িত্ব আমাদের সবার। আপনাদের মূল্যবান ভোটই আমাদের রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। তাই ভোটকে শুধুই কাগজে একটি সিল মারার আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে দেখবেন না; বরং এটি হবে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণে আপনার সক্রিয় অংশগ্রহণ, গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা এবং দেশকে এগিয়ে নিতে সরাসরি অবদান। দেশের মালিকানা আপনাদের হাতে, আর সেই মালিকানারই স্বাক্ষর আপনার ভোট।
এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও পবিত্রতা রক্ষার জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা অপরিসীম উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রতি উন্মুক্ত আহ্বান জানাচ্ছি— আপনারা একে অপরকে প্রতিযোগী হিসেবে দেখবেন, কখনো শত্রু হিসেবে দেখবেন না। নির্বাচনের মাঠে এমন একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করুন, যাতে দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, যারা ভোট বাক্স ডাকাতি করবে তারা দেশের মানুষের স্বাধীনতা হরণকারী। তারা নাগরিকদের দুশমন। তাদের থেকে নাগরিকদের রক্ষা করা আমাদের সবার অবশ্য কর্তব্য। ভোট জনগণের ভবিষ্যৎ রচনার অক্ষর। ভোট বাক্সে ভোট জমা দিতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যৎ আর রচনা করা যাবে না। আপনার ভোট আপনি সযত্নে ভোট বাক্সে দিয়ে আসুন। কেউ বাধা সৃষ্টি করলে তাকে সুশৃঙ্খলভাবে প্রতিহত করুন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিন। ভোটের ওপর নির্ভর করছে আপনার আমার সবার ভবিষ্যৎ। আপনার আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ। যোগ্য লোককে ভোট দিন। জাতির ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন। মনে রাখবেন, ভোট রক্ষা করা দেশ রক্ষা করার সমান দায়িত্ব। ভোট রক্ষা করুন। দেশকে রক্ষা করুন। ভোট দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার গাড়ির চাকা। এই চাকা কাউকে চুরি করতে দেবেন না।
তিনি আরো বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে প্রশাসনকে আরও কার্যকর, নিরপেক্ষ ও নির্বাচনী পরিবেশের উপযোগী করতে সরকার মাঠ প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনে বেশ কিছু রদবদল করেছে। এই পরিবর্তনগুলো কারও প্রতি অনুরাগ বা বিরাগ প্রসূত নয়। এগুলো করা হয়েছে দক্ষতা, যোগ্যতা এবং পেশাগত সক্ষমতার ভিত্তিতে। আমাদের লক্ষ্য একটাই— দেশের প্রতিটি ভোটার যেন ভোট দিতে পারেন নিরাপদ পরিবেশে, ভয়মুক্ত মনে এবং সর্বোচ্চ স্বাধীনতায়। নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে আরও কোনো পদক্ষেপ প্রয়োজন— তা কমিশন অবশ্যই গ্রহণ করবে।
‘জুলাই সনদ জাতির ভবিষ্যৎ পথযাত্রায় একটি ঐতিহাসিক দলিল। এই সনদে আমরা যে সংস্কারমালা প্রস্তাব করেছি— রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন, প্রশাসনিক জবাবদিহিতা, দুর্নীতি হ্রাস, অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং সমাজে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা—এসব বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন জনগণের সুস্পষ্ট মতামত। কারণ একটি জাতীয় রূপান্তর কখনোই একক নেতৃত্ব বা একটি প্রশাসনের মাধ্যমে টেকসই হয় না; জনগণকেই চূড়ান্ত সম্মতি দিতে হয়। এই কারণেই আমরা গণভোটের আয়োজন করেছি—যাতে দেশের ভবিষ্যৎ সংস্কার দিশা নির্ধারণে জনগণ সরাসরি সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। এই গণভোট হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন মাইলফলক। এখানে আপনাদের প্রতিটি ভোট আগামী দিনের রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করবে’, বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
এবারের নির্বাচনটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে তিনি বলেন, একই দিনে এবার দুটি ভোট। একটি সংসদ সদস্য নির্বাচনের ভোট। আরেকটি গণভোট— যার প্রভাব হবে শতবর্ষব্যাপী। কাজেই অবশ্যই ভোট দিন। ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন। এর মাধ্যমে আপনারা জানান— আপনারা কি জুলাই সনদের সংস্কার কাঠামোকে এগিয়ে নিতে চান কি না। আপনাদের ভোটই নির্ধারণ করবে রাষ্ট্র কোন পথে অগ্রসর হবে, প্রশাসন কোন কাঠামোয় পুনর্গঠিত হবে এবং নতুন বাংলাদেশ কেমন রূপ পাবে।
‘জুলাই অভ্যুত্থানের সময় আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনেরা কী তৎপরতার সঙ্গে এগিয়ে এসেছিলেন। ফ্যাসিবাদের মসনদ গুঁড়িয়ে দিতে তারা অভূতপূর্ব ভূমিকা রেখেছেন। প্রবাসীদের এই ভূমিকা শুধু জুলাইয়েই নয়, আমরা দেখেছি ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ও। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আমাদের এই প্রবাসী ভাইবোনেরা কখনোই ভোটাধিকার পাননি,’ যোগ করেন তিনি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সক্রিয় উদ্যোগের ফলে প্রথমবারের মতো লাখ লাখ প্রবাসী এবার পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে যাচ্ছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রবাসীরা অত্যন্ত আনন্দিত। আমরাও আনন্দিত। একইসঙ্গে অনেক প্রবাসী নানা জটিলতায় এই উদ্যোগে শামিল হতে না পেরে ব্যথিতও। আপনাদের আবেগের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা রেখে বলছি— এবারের যে ধারা শুরু হলো, তা ভবিষ্যতে থামবে না। আগামীতে আপনারাও এই প্রক্রিয়ায় শামিল হতে পারবেন।
তিনি বলেন, আজ আমি আপনাদের সামনে আমাদের রাষ্ট্রের ন্যায়বিচার, আইনশৃঙ্খলা ও মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি তুলে ধরতে চাই। একটি আধুনিক, ন্যায়ভিত্তিক ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বিভাগকে স্বাধীন করা অত্যাবশ্যক। বহুদিন ধরে বিচার বিভাগ প্রশাসনের বিভিন্ন কাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে তার পূর্ণ সম্ভাবনা অনুযায়ী কাজ করতে পারেনি। এটি জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারে বাধা সৃষ্টি করেছে, আর রাষ্ট্রের ওপর মানুষের আস্থাকেও দুর্বল করেছে।
ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম বড়ো পদক্ষেপ বিচার বিভাগের প্রশাসনিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। আনন্দের সঙ্গে আপনাদের জানাতে চাই— ইতোমধ্যে বিচার বিভাগকে স্বতন্ত্র প্রশাসনিক কাঠামো দিয়ে পৃথক সচিবালয় গঠন করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা সংস্কারের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী মাইলফলক। এখন থেকে আর রাজনৈতিক কোনো চাপ বা প্রভাবের মাধ্যমে বিচারিক স্বাধীনতা যাতে ব্যাহত না হয়, সে নিশ্চয়তাও আরও জোরদার হবে।
জাতীয়
বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে জড়িয়ে ভারতের ট্রলার ডুবি নিয়ে ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার
বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে জড়িয়ে ভারতের ট্রলার ডুবির ঘটনায় ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। এ ধরনের ভুল তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। এ অবস্থায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী তথা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকার জন্য সব সংবাদমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি কিছু কিছু সংবাদ মাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে জড়িয়ে ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর এবং ভুল তথ্য প্রচার করছে। যেখানে দাবি করা হয়েছে, ভারতের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় PAROMITA-10 নামক একটি ভারতীয় মাছ ধরার ট্রলারকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। প্রকৃতপক্ষে, ভারতীয় মাছ ধরার ট্রলারটি দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার সময় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর টহলরত জাহাজ দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১২ মাইলের অধিক দূরত্বে বাংলাদেশের জলসীমায় টহল কার্যক্রম পরিচালনা করছিল।
আইএসপিআর জানায়, গতকাল সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে ভারতীয় কোস্ট গার্ডের মেরিটাইম রেসকিউ কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (এমআরসিসি) থেকে মেরিটাইম রেসকিউ কো-অর্ডিনেশন সেন্টার, ঢাকাকে ই-মেইল এর মাধ্যমে জানানো হয় যে, Indian Fishing Boat (IFB) PAROMITA-10 নামক একটি মাছধরার ট্রলার বঙ্গোপসাগরের ভারতীয় জলসীমায় ১৬ জন জেলেসহ ডুবে যায়। ভারতীয় অপর একটি মাছধরার ট্রলার IFB RAGHUPATI কর্তৃক এ পর্যন্ত PAROMITA-10 এর ১১ জন জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং বাকি ০৫ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছে। এ ছাড়াও নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে ইন্ডিয়ান কোস্ট গার্ড পার্শ্ববর্তী সকল জাহাজ এবং মাছ ধরা ট্রলারকে সহায়তা করার আহ্বান জানায়।
এতে বলা হয়, এই প্রেক্ষিতে, ভারতীয় এমআরসিসি থেকে ই-মেইল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশ নৌবাহিনীর টহলরত জাহাজকে দ্রুততার সঙ্গে বাংলাদেশের জলসীমায় অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে নৌবাহিনীর টহলরত জাহাজ ভারতীয় কোস্টগার্ড ও বাংলাদেশের স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশের জলসীমায় অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই ধরনের উদ্যোগ কেবল মানবিক দায়িত্ব পূরণই করে না, বরং প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সমঝোতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে।
আইএসপিআর আরও জানায়, অপরদিকে বর্ণিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু কিছু সংবাদ মাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয় যে, বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ ধরার ট্রলার PAROMITA-10 কে ডুবিয়ে দেয়, যা ভিত্তিহীন। এ ধরনের ভুল তথ্য গণমাধ্যমে প্রচার অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অনাকাঙ্খিত। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী তথা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ হতে বিরত থাকার জন্য সকল সংবাদমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানানো যাচ্ছে।
জাতীয়
ষড়যন্ত্রে জড়িতদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না: প্রধান উপদেষ্টা
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলে প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনাদের সামনে আজ উপস্থিত হয়েছি অত্যন্ত ব্যথিত হৃদয়ে। এই আনন্দের দিনে গভীর বেদনার সঙ্গে জানাচ্ছি— জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখযোদ্ধা ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর সম্প্রতি যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা শুধু একজন ব্যক্তির ওপর আঘাত নয়— এটি বাংলাদেশের অস্তিত্বের ওপর আঘাত, আমাদের গণতান্ত্রিক পথচলার ওপর আঘাত।
তিনি বলেন, শরিফ ওসমান হাদি বর্তমানে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন। তার চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এরইমধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। আপনারা তার জন্য মহান আল্লাহতালার কাছে অন্তরের অন্তস্তল থেকে দোয়া করুন। উপদেষ্টা বলেন, সরকার এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা গেছে। আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই— যারা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত, তারা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই— পরাজিত শক্তি ফ্যাসিস্ট টেরোরিস্টদের এই অপচেষ্টা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ করে দেওয়া হবে। ভয় দেখিয়ে, সন্ত্রাস ঘটিয়ে বা রক্ত ঝরিয়ে এই দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাই, সংযম বজায় রাখুন। অপপ্রচার বা গুজবে কান দেবেন না। ফ্যাসিস্ট টেরোরিস্টরা, যারা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়, আমরা অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের মোকাবিলা করব। তাদের ফাঁদে পা দেব না। পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি এ দেশের পবিত্র মাটিতে আর কোনোদিন ফিরে আসবে না।
জাতীয়
চার অধিদপ্তরে নতুন ডিজি নিয়োগ
সরকার চারটি গুরুত্বপূর্ণ অধিদপ্তরে নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) নিয়োগ দিয়েছে। পাশাপাশি একজন অতিরিক্ত সচিবকে গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে এ নিয়োগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) নিয়োগ পেয়েছেন ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মাহমুদ হাসান। তিনি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে বদলির আদেশাধীন ছিলেন। গ্রেড-১ কর্মকর্তা মাহমুদ হাসানকে এই নিয়োগ দিয়ে তার চাকরি ভূমি মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে।
এ ছাড়া জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের হাইড্রোকার্বন ইউনিটের মহাপরিচালক নিয়োগ পেয়েছেন বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর (আরডিএ) মহাপরিচালক এ কে এম অলি উল্যা। অন্যদিকে পল্লী উন্নয়ন একাডেমির নতুন মহাপরিচালক হয়েছেন জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমির এমডিএস এ বি এম মাহবুব আলম।
অলি উল্যাকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং মাহবুব আলমকে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগে ন্যস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিএনএ ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক হয়েছেন সাংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল ফয়েজ মো. আলাউদ্দিন। এজন্য তার চাকরি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ন্যস্ত করা হয়েছে।
একই সঙ্গে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এটিএম সিদ্দিকুর রহমানকে গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
তাকে এ পদোন্নতির পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।
জাতীয়
বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানালো সাত দেশ
বাংলাদেশকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ও সুইডেন।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) পৃথক বার্তায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ঢাকার দূতাবাস বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানায়।
মার্কিন দূতাবাসের বার্তায় বলা হয়, এই বিজয় দিবসে, আমরা ১৯৭১ সালের সেই সাহসী বাংলাদেশিদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি ও সম্মান জানাচ্ছি, যাদের আত্মত্যাগ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথকে সুগম করেছে।
চীনের বার্তায় উল্লেখ করা হয়, মহান বিজয় দিবসে বাংলাদেশের জনগণকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। আসুন বিজয়ের প্রেরণায় একসঙ্গে সবার জন্য একটি সমৃদ্ধ ও সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলি।
ভারতীয় হাইকমিশনের বার্তায় বলা হয়, ভারতীয় হাইকমিশন, ঢাকা বাংলাদেশের জনগণকে জানাচ্ছে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
এ ছাড়া পৃথক পৃথক বার্তায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ও সুইডেন বাংলাদেশকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যদিয়ে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীন হয়েছিল বাংলাদেশ।
জাতীয়
বিজয় দিবসে সশস্ত্র বাহিনীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধান উপদেষ্টা
বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে সশস্ত্র বাহিনীর আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবসে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সশস্ত্র বাহিনীর এই আয়োজনে অংশ নেন তিনি।
মহান বিজয় দিবসটিকে আরও মহিমান্বিত ও আকর্ষণীয় করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় সশস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধানে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে একটি মনোজ্ঞ ফ্লাই পাস্ট, প্যারাজাম্প এবং বিশেষ এ্যারোবেটিক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক এই অনুষ্ঠানে একটি সমন্বিত ব্যান্ড পরিবেশনেরও আয়োজন করা হয়। ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সশস্ত্র বাহিনীর অর্কেস্ট্রা দল কর্তৃক বাদ্য পরিবেশন করে এবং ঢাকার বাহিরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত সশস্ত্র বাহিনীর সেনানিবাস বা ঘাঁটি সংলগ্ন এলাকায় সীমিত আকারে ব্যান্ড পরিবেশন করা হয়। এছাড়া, বিমান বাহিনী কর্তৃক সীমিত আকারে ফ্লাই পাস্ট (খুলনা, বাগেরহাট, কুষ্টিয়া, নাটোর, বগুড়া, চট্টগ্রাম শহর ও ফৌজদারহাট এলাকা, কক্সবাজার এবং মাতারবাড়ী এলাকায়) পরিচালিত হয়েছে।
বিজয়ের ৫৪তম বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিকুর রহমান এবং সশস্ত্র বাহিনীর ৫৩ জনসহ সর্বমোট ৫৪ জন প্যারাট্রুপার বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাসহ ফ্রি ফল জাম্পের মাধ্যমে আকাশ হতে ভূমিতে অবতরণ করেন, যা এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং অদ্যাবধি এ রেকর্ডটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে লিপিবদ্ধ হয়নি। সশস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের এই উদ্যোগটি সফল হলে প্রথম বারের মতো এতো সংখ্যক পতাকাসহ ফ্রি ফল জাম্পের রেকর্ডটি বাংলাদেশের পক্ষে লিপিবদ্ধ হবে, যা, নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের সক্ষমতার পরিচয় এবং ভাবমূর্তি উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। একই সাথে এই আয়োজন দেশে-বিদেশে বসবাসরত সকল বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে জাতীয় গৌরব ও আত্ম পরিচয়ের অনুভূতি জাগিয়ে তুলবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনৈতিকবৃন্দ, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানরাসহ আমন্ত্রিতরা উপস্থিত ছিলেন।
এমকে




