অর্থনীতি
৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের
দেশের আর্থিক খাতে দীর্ঘদিনের সংকট মোকাবিলায় বড় পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল ও সমস্যাগ্রস্ত অবস্থায় থাকা ৯টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড।
রবিবার (৩০ নভেম্বর) গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত আসে। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন হবে সদ্য জারি করা ‘ব্যাংক রেজুলিউশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ অনুযায়ী, যা ব্যর্থ ব্যাংক ও এনবিএফআইকে একীভূত, পুনর্গঠন বা লিকুইডেট করার প্রথম পূর্ণাঙ্গ কাঠামো।
বন্ধ হওয়ার তালিকায় থাকা ৯টি এনবিএফআই হচ্ছে—এফএএস ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), প্রিমিয়ার লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, আবিভা ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং।
এই ৯টি প্রতিষ্ঠান মোট খেলাপি ঋণের ৫২ শতাংশ এর দায় বহন করছে। যার পরিমাণ গত বছরের শেষে দাঁড়ায় ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা।
আমানতকারীদের অগ্রাধিকার
বহু প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর ধরে পরিপক্ব আমানত ফেরত দিতে পারছে না। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়াই প্রথম লক্ষ্য। সরকার মৌখিকভাবে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব বলছে, এই ৯ প্রতিষ্ঠানে আটকে আছে ১৫ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার আমানত। এর মধ্যে ব্যক্তিগত আমানত ৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা, আর ব্যাংক ও করপোরেট আমানত ১১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা।
ব্যক্তিগত আমানতের মধ্যে সর্বোচ্চ আটকে আছে—পিপলস লিজিং ১ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা, আবিভা ফাইন্যান্স ৮০৯ কোটি টাকা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ৬৪৫ কোটি টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্স ৩২৮ কোটি ও এফএএস ফাইন্যান্স ১০৫ কোটি টাকা।
৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭টির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য ঋণাত্মক ৯৫ টাকা— অর্থাৎ সব সম্পদ বিক্রি করলেও শেয়ারহোল্ডারদের হাতে কিছুই থাকবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্বল নজরদারি, সম্পর্কিত দলকে ঋণ, জমে থাকা ঋণ পুনরুদ্ধারের ব্যর্থতা, কৃত্রিমভাবে সম্পদ বেশি দেখানো—এসব কারণে বহু প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর ধরে কার্যত দেউলিয়া অবস্থায় ছিল।
এ বছরের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ এনবিএফআইকে ‘রেড ক্যাটাগরিতে’ চিহ্নিত করে; সেখান থেকেই ৯টিকে বন্ধের তালিকায় আনা হয়।
ঝুলছে ১১ প্রতিষ্ঠানের ভাগ্য
যাদের পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে—সিভিসি ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, হজ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, আইআইডিএফসি, উত্তরা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স ও ইউনিয়ন ক্যাপিটাল।
পাঁচ শরিয়াহ ব্যাংক একীভূত করে নতুন ব্যাংক
সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করে গঠিত ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’কে লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি দেশের ইতিহাসে একীভূত হওয়া সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করছে।
অর্থনীতি
অর্থবছরের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এলো নভেম্বরে
নভেম্বরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩১ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার। যা চলতি ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের যে কোনো মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এতে বলা হয়, নভেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২৮৮ কোটি ৯৫ লাখ ২০ হাজার ডলার। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৮ কোটি ৭৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার।
এছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২৯ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার ও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স।
বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানায়, ২৩ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ৭৫ কোটি ৪৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার। নভেম্বরের ১৬ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত দেশে এসেছে ৬১ কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ৯ থেকে ১৫ নভেম্বর দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৭৬ কোটি ৮৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার। ২ থেকে ৮ নভেম্বর দেশে এসেছে ৭১ কোটি ১০ লাখ ৭০ হাজার ডলার। আর নভেম্বরের প্রথম দিন প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ৪ কোটি ৩১ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
এর আগে গত অক্টোবর ও সেপ্টেম্বরে দেশে এসেছে যথাক্রমে ২৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ও ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। আর গত আগস্ট ও জুলাইয়ে যথাক্রমে দেশে এসেছিল ২৪২ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার ও ২৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স।
এদিকে, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছর জুড়ে দেশে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৩০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৩২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স, যা দেশের ইতিহাসে কোনো নির্দিষ্ট অর্থবছরে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়ের রেকর্ড।
অর্থনীতি
একনেকে ১৬ হাজার কোটি টাকার ১৮ প্রকল্প অনুমোদন
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ১৬ হাজার ৩২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ের মোট ১৮টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১০ হাজার ১০১ কোটি ১০ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ ৫ হাজার ৬০৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৩৭৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদিত ১৮টি প্রকল্পের মধ্যে ১৩টি নতুন এবং ৫টি সংশোধিত প্রকল্প।
সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, সমাজকল্যাণ ও নারী-শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প ও গৃহায়ন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ-সড়ক-রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ-বন-পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এবং শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলের টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প এবং মানসম্পন্ন বীজ আলু উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ জোরদারকরণ প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধিত সংস্করণ। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় তিনটি অনুসন্ধান কূপ খনন এবং সোনাগাজীতে ২২০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের চারটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আজকের সভায় অনুমোদন পায়। এর মধ্যে রয়েছে মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত বা কর্মক্ষমতা হারানো জুলাইযোদ্ধা পরিবারের জন্য ১৫৬০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ এবং শহীদ পরিবারের জন্য ‘৩৬ জুলাই’ আবাসিক ফ্ল্যাট প্রকল্প।
এছাড়া বাংলাদেশ সচিবালয় ও সংশ্লিষ্ট আবাসিক এলাকাগুলোর জন্য অগ্নিনিরাপত্তা আধুনিকায়ন এবং সচিবালয়ে নতুন ২১তলা অফিস ভবন নির্মাণ প্রকল্পও অনুমোদিত হয়েছে।
সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা এমআরটি লাইন-৬ এর তৃতীয় সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প এবং সিরাজগঞ্জ-রায়গঞ্জ (চান্দাইকোনা) সড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় অনুমোদিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ গ্রিন অ্যান্ড রেজিলিয়েন্ট আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অটিজম ও এনডিডি সেবাদান কেন্দ্র প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের জাপান হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট স্কলারশিপ অনুমোদিত হয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ডিজিটাল উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবন ইকো-সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম সংশোধনও অনুমোদিত হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় একাডেমিক ও কেন্দ্রীয় গবেষণাগারসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প সম্পন্ন করার অনুমোদন দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্প ক্লাইমেট রেসপন্স রিপ্রোডাকটিভ হেলথ অ্যান্ড পপুলেশন সার্ভিস ইম্প্রুভমেন্ট এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের অত্যাবশ্যক কার্যক্রম বাস্তবায়ন প্রকল্প সভায় অনুমোদন পেয়েছে।
এছাড়া সভায় পূর্বে অনুমোদিত মোট ১৫টি প্রকল্প সম্পর্কে একনেককে অবহিত করা হয়। এসবের মধ্যে ছিল- বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্র আধুনিকায়ন, বিভিন্ন জেলা স্টেডিয়াম উন্নয়ন, অটিজম একাডেমি, বিভিন্ন কলেজ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের অবকাঠামো উন্নয়ন, সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার, পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সবুজায়ন, নদী-খাল পুনর্খনন এবং দিনাজপুর পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়নসহ আরও বেশ কিছু চলমান প্রকল্প।
অর্থনীতি
রফতানি প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
বাণিজ্য, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, বাংলাদেশ শিগগিরই স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ করতে চলেছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব বাণিজ্যে রফতানি প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে আমাদের পণ্যকে বৈচিত্র্যময় করা, সরবরাহ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকালে পূর্বাচলের বাংলাদেশ চায়না ফ্রেডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ‘গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপো ২০২৫ ঢাকা’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপো দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ, নির্মাতা, নীতিনির্ধারক, বিনিয়োগকারী এবং উদ্ভাবকদের আইডিয়া শেয়ার, অর্থপূর্ণ আলোচনা, সহযোগিতা এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসায়িক অংশীদারত্বের দ্বার উন্মুক্ত করবে।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বাংলাদেশ শিগগিরই স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ করতে চলেছে। এই মাইলফলক আমাদের অগ্রগতি তুলে ধরেছে, কিন্তু এটি নতুন চ্যালেঞ্জও নিয়ে এসেছে। আমরা বর্তমানে যে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা এবং ছাড় সুবিধা ভোগ করছি তা ধীরে ধীরে হারাবো।
তিনি আরো বলেন, এই রূপান্তর সফলভাবে মোকাবেলার জন্য, আমাদের পণ্য এবং রফতানি বাজার বৈচিত্র্যকরণ, প্রতিযোগিতামূলকতা উন্নত করা এবং দূরদর্শী বাণিজ্য নীতি গ্রহণে দ্রুত এগিয়ে যেতে হবে। এই প্রেক্ষাপটে, গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপো আয়োজন কেবল সময়োপযোগীই নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত ড. লুতফে সিদ্দিকী।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই এর প্রশাসক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রফতানি) মো. আব্দুর রহিম খান এবং বিকেএমই এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের রফতানি সম্ভাবনা তুলে ধরতে ঢাকায় প্রথমবারের মতো সরকারি উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে ‘গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপো’। আজ থেকে শুরু হয়ে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর পূর্বাচলে অবস্থিত বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। তিন দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী আয়োজন করেছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এবারের সোর্সিং এক্সপোতে বাংলাদেশের আটটি গুরুত্বপূর্ণ রফতানি খাতের পণ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। খাতগুলো হচ্ছে তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষিজাত পণ্য, প্লাস্টিক ও কিচেনওয়্যার, হোম ডেকর ও ফার্নিচার, ওষুধ ও তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি)। প্রদর্শনীতে এসব খাতের শতাধিক প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক কোম্পানি, পাইকারি ব্যবসায়ী ও সরবরাহ খাতের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।
এক্সপোতে আফগানিস্তান, চীন, ইরান, জাপান, মিয়ানমার, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের ক্রেতা, বিনিয়োগকারী ও সোর্সিং প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। তারা পণ্য ও সেবা নিয়ে সভা (বিটুবি), পণ্য কেনা বেচা ও চুক্তি করতে পারবে। সোর্সিং এক্সপোতে বিষয়ভিত্তিক ১০টি বিশেষ সেমিনার, অনলাইন ও অফলাইন বিজনেস-টু-বিজনেস (বিটুবি) বৈঠক, দেড় শতাধিক স্টল, নেটওয়ার্কিং ও ফ্যাশন শোসহ নানা আয়োজন থাকছে।
এমকে
অর্থনীতি
সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়লো
দেশে স্বয়ংক্রিয় মূল্য সমন্বয় পদ্ধতির আওতায় ডিসেম্বর ২০২৫ মাসের জন্য সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি ২ টাকা করে বাড়িয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। বিশ্ববাজারে মূল্যের ওঠানামার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশোধিত প্রাইসিং ফর্মুলা অনুযায়ী আজ রবিবার এ দাম সমন্বয় করা হয়েছে। আগামীকাল সোমবার থেকে এ দাম কার্যকর হবে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- ডিজেলের দাম ১০২ টাকা থেকে বেড়ে ১০৪ টাকা, অকটেন ১২২ টাকা থেকে বেড়ে ১২৪ টাকা, পেট্রল ১১৮ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা থেকে বেড়ে ১১৬ টাকা করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরিফ সাদেক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
অর্থনীতি
সুগন্ধি সাবানসহ নতুন তিন পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি
সীমিত পরিসরে নতুন তিনটি পণ্য বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এগুলো হলো গায়ে মাখার সুগন্ধি সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার এবং কাপড় কাচার সাবান। তবে এই পণ্যগুলো প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে বিক্রি হবে।
ক্রেতা চাহিদা থাকলে পরবর্তীতে নিয়মিতভাবে পণ্যগুলো বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। এসব পণ্যের বরাদ্দ শুরু হবে আগামীকাল সোমবার (১ ডিসেম্বর) থেকে। বিক্রি চলবে আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
রবিবার (৩০ নভেম্বর) টিসিবির উপ-পরিচালক ও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেনের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
টিসিবি বলছে, নতুন এই পণ্যগুলো নভেম্বর মাস থেকেই বিক্রয় কার্যক্রমে সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে তা সীমিত পরিসরে। প্রথম অবস্থায় পাঁচটি জেলা (ফেনী, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা ও নীলফামারি) এবং পাঁচটি সিটি করপোরেশনভুক্ত (ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও ময়মনসিংহ) এলাকায় এসব পণ্য ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
টিসিবির উপ-পরিচালক শাহাদত হোসেন বলেন, পরীক্ষামূলক বিক্রয় কার্যক্রম থেকে সাধারণ মানুষের আগ্রহ পাওয়া গেলে পরবর্তীতে এর আওতা বাড়ানো হবে। প্রথম অবস্থায় পাঁচটি সিটি করপোরেশন ও পাঁচ জেলায় এসব পণ্য বিক্রি করা হবে। মোট পাঁচ লাখ উপকারভোগী পরিবারের কাছে এসব পণ্য বিক্রি করা হবে।
বর্ণিত পণ্যসমূহ ভর্তুকি মূল্যে নয়, তবে বাজার মূল্যের কমে বিক্রি করা হবে। পাইলটিংয়ের জন্য গোসলের সাবান (লাক্স) ১০০ গ্রাম প্যাক প্রতিটি ৪৫ টাকা, ডিটারজেন্ট পাউডার (হুইল) ৫০০ গ্রাম প্যাক প্রতিটি ৬০ টাকা এবং লন্ড্রি সোপ (জার্মনিল) ১২৫ গ্রাম প্যাক প্রতিটি ২৩ টাকা দরে বিক্রি করা হবে।
জানা গেছে, টিসিবি বর্তমানে সারাদেশে গ্রাহক প্রতি ২ লিটার ভোজ্য তেল, এক কেজি চিনি এবং ২ কেজি করে মসুর ডাল বিক্রি করছে। এসব পণ্যের সঙ্গেই দুই পদের সাবান ও ডিটারজেন্ট যুক্ত করা হলো। এর আগে অবশ্য টিসিবি এসবের সঙ্গে চা পাতা ও লবণ বিক্রির ঘোষণা দিয়েছিল। যদিও এ দুটি পণ্য এখনো যুক্ত করতে পারেনি।



