জাতীয়
‘২’ মুছে ৫২ কোটি টাকার কর হয়ে যায় ১২ কোটি
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগে বড় ধরনের একটি কর জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নগরের দুটি কনটেইনার ডিপোর বার্ষিক কর মূল্যায়ন থেকে কৌশলে প্রথম অঙ্ক ‘২’ মুছে ফেলে প্রায় ৪০ কোটি টাকা কর কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগটি তদন্তে বৃহস্পতিবার সিটি করপোরেশনে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জব্দ করে প্রাথমিক তদন্তে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি।
সূত্রে জানা গেছে, কর কমিয়ে দেওয়ার ঘটনায় সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জড়িত থাকতে পারেন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান দুটিও সুবিধাভোগী। ঘটনাটিকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে কমিশন প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।
অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া দুদকের সহকারী পরিচালক সায়েদ আলম বলেন, ‘নথি ঘষামাজা করে ‘২’ সংখ্যাটি বাদ দেওয়া হয়। এতে দুই প্রতিষ্ঠানের ২০ কোটি টাকা করে গৃহকর কমে যায়। আমরা প্রমাণ পেয়েছি এবং সংশ্লিষ্ট নথি জব্দ করেছি। এখন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সংশ্লিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠান হলো মধ্যম হালিশহরে অবস্থিত এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও পতেঙ্গার লালদিয়া চরের ইনকনট্রেড লিমিটেড। ২০১৭–১৮ অর্থবছরে এই দুই প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক কর মূল্যায়ন নির্ধারণ করা হয় যথাক্রমে ২৬ কোটি ৩৮ লাখ ও ২৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। কিন্তু রিভিউ বোর্ডে শুনানির সময় ফরম থেকে প্রথম অঙ্ক ‘২’ মুছে ফেলা হয়। ফলে কর দাঁড়ায় যথাক্রমে ৬ কোটি ৩৮ লাখ ও ৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
দুই কর্মকর্তা বরখাস্ত: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তদন্তেও অনিয়মের প্রমাণ মেলে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রাজস্ব বিভাগের দুই কর্মকর্তা- কর কর্মকর্তা নুরুল আলম ও উপকর কর্মকর্তা জয় প্রকাশ সেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে অনিয়মে সহযোগিতার অভিযোগে তিন হিসাব সহকারী- মঞ্জুর মোর্শেদ, রূপসী রাণী দে ও আহসান উল্লাহকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে সচিবালয় বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ইনকনট্রেড লিমিটেডের শুনানি হয়েছিল ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর, আর এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শুনানি অনুষ্ঠিত হয় ২০২১ সালের ১৩ জুন।
সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন বলেন, ‘গৃহকর নির্ধারণে অনিয়মের বিষয়টি আমাদের অভ্যন্তরীণ তদন্তে ধরা পড়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেয়েই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুদক আমাদের কাছ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়েছে।’
দুদকের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এটি সিটি করপোরেশনের রাজস্ব ব্যবস্থার জবাবদিহি ঘাটতির একটি দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা। তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হতে পারে।
জাতীয়
নির্বাচনে ইসিকে প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ-বাস্তবায়ন আদেশের ওপর গণভোটের তফসিল ঘোষণা করায় নির্বাচন কমিশনকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
এক শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি বলেন, ‘এই তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অতিক্রম করলো। ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ এখন যে নতুন পথে অগ্রসর হচ্ছে-এই নির্বাচন ও গণভোট সেই পথরেখাকে দৃঢ় করবে, গণমানুষের মতকে প্রাধান্য দেবে এবং নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি আরও সুসংহত করবে।’
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেন আমি বিশ্বাস করি, নির্বাচন কমিশন তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবে স্বাধীনভাবে, নিরপেক্ষভাবে এবং সর্বোচ্চ পেশাদারত্বের সঙ্গে। নির্বাচন ও গণভোটকে উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক ও সম্পূর্ণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।’
তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক দলসমূহ, প্রার্থী, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ এবং সর্বোপরি দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই নির্বাচন ও গণভোটকে একটি জাতীয় ঐক্যের উদ্যোগ হিসেবে গ্রহণ করুন। ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং গণতান্ত্রিক আচরণ আমাদের সামনের দিনগুলোকে আরও স্থিতিশীল করবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ নতুন ভবিষ্যতের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। আপনাদের সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ ও দায়িত্বশীল আচরণের মধ্য দিয়ে আমরা একটি আধুনিক, ন্যায়ভিত্তিক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র নির্মাণে সফল হব-এই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’
জাতীয়
সাত পুলিশ সুপারের একযোগে বদলি
পুলিশ সুপার পদমর্যাদার সাত কর্মকর্তাকে একযোগে বদলি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-১ শাখার উপ-সচিব মো. মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ বদলি করা হয়েছে।
বদলিকৃতরা হলেন— মো. তরিকুল ইসলাম, মোছা: লিজা বেগম, সৈয়দ মোহাম্মদ ফরহাদ, মোহাম্মদ মাহমুদুল কবীর, মো. আসলাম উদ্দিন, খালেদা বেগম এবং মোহাম্মদ বদিউজ্জামান।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জনস্বার্থ জারি হওয়া এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
জাতীয়
‘অপমানবোধ’ করছেন, ভোটের পরে সরে যেতে চান রাষ্ট্রপতি: রয়টার্স
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর নিজের সরে যেতে চান তিনি। অর্থাৎ, মেয়াদের অর্ধেক বাকি থাকলেও করবেন পদত্যাগ।
আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) তিনি একথা জানিয়েছেন বলে বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে তিনি তিনি ‘অপমানবোধ’ করছেন।
রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়কের দায়িত্বে থাকলেও, এর বাইরে রাষ্ট্রে তাঁর পদটি মূলত আনুষ্ঠানিক। দেশের কার্যনির্বাহী ক্ষমতা থাকে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার হাতে।
তবে ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হলে এ পরিস্থিতি পাল্টে যায়, এবং রাষ্ট্রপতি পদ নতুন করে গুরুত্ব পায় বলে জানায় রয়টার্স। সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর সাহাবুদ্দিনই ছিলেন দেশের শেষ সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ।
৭৫ বছর বয়সী সাহাবুদ্দিন ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তবে ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আ. লীগের অংশগ্রহণে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে।
বঙ্গভবন থেকে হোয়াটসঅ্যাপে রয়টার্সকে এ সাক্ষাৎকার দেন তিনি। এসময় তিনি বলেন, আমি বিদায় নিতে আগ্রহী। আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব রয়েছে বলেই আমি এ অবস্থানে আছি।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর রাষ্ট্রপতির অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর তিনিই ছিলেন দেশের শেষ সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন।
জাতীয়
রমজান উপলক্ষে খেজুরের ভ্যাট কমালো সরকার
খেজুরের ভ্যাট ১২ শতাংশ কমিয়েছে সরকার। রমজান উপলক্ষে এ ভ্যাট কমানো হয়।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আজ বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান
জাতীয়
পদত্যাগ করা দুই উপদেষ্টা কে কোন দল থেকে নিবার্চন করছেন
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের প্রতিনিধি উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় তাঁরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
সরকারি এবং রাজনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, পদত্যাগে রাজি ছিলেন না তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মাহফুজ আলম। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ‘মাস্টারমাইন্ড’ পরিচিতি পাওয়া এই ছাত্রনেতা নির্বাচন না করে সরকারে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা এবং সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, নির্বাচনকালীন দায়িত্বে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নমুক্ত রাখতে পদত্যাগ করতে হবে।
একাধিক সূত্র জানায়, মঙ্গলবার মধ্যরাতেও মাহফুজ আলম পদত্যাগ না করে আগামী সরকারের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর পর্যন্ত উপদেষ্টা পদে থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। কিন্তু বিভিন্ন পক্ষের পরামর্শ এবং সরকার থেকে সরিয়ে দেওয়ার আশঙ্কায় বুধবার সকালে পদত্যাগে সম্মত হন।
কে কোন দল থেকে নিবার্চন করছেন
পদত্যাগপত্র দেওয়া আসিফ মাহমুদ মঙ্গলবারই নিজ অবস্থান স্পষ্ট করেন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন। তবে কোন দল থেকে প্রার্থী হবেন, তা এখনও ঠিক করেননি। আর মাহফুজ আলম গতকাল বিকেলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তাঁর হেয়ার রোডের বাসায় ডেকে নিয়ে বিদায় জানান।
গতরাতে এনসিপির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, নবগঠিত দলটিতেই যাবেন অভ্যুত্থানের শীর্ষস্থানীয় ছাত্রনেতা আসিফ মাহমুদ। তিনি ঢাকা-১০ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। এ জন্য দল গোছানোর কাজ শুরু করেছেন। ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, হাজারীবাগ ও কলাবাগান থানা নিয়ে গঠিত এই নির্বাচনী আসনের এলাকাগুলোর এনসিপির কমিটিতে নিজ অনুসারীদের জায়গা করে দিতে কাজ শুরু করেছেন।
তবে মাহফুজ আলম নিশ্চিত করেননি– তিনি নির্বাচন করবেন কিনা। তাঁর জন্য লক্ষ্মীপুর-১ আসন খালি রেখেছে এনসিপি। দলটির সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, মাহফুজও এনসিপিতে যোগ দেবেন।
গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের সূত্রের খবর, এনসিপিকে বিএনপির জোটে নিতে চেয়েছিলেন দুই উপদেষ্টা। এ শর্ত পূরণ হলে তারা এনসিপিতে যাবেন, অন্যথায় বিএনপিতে যোগ দেওয়ার যে সমীকরণ ছিল, তা আর নেই। আসন সমঝোতা না হওয়ায় বিএনপির জোটে এনসিপির যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তা মেনে নিয়েই উপদেষ্টাদের এনসিপিতে যেতে হচ্ছে। লক্ষ্মীপুর-১ এবং ঢাকা-১০ আসনে ইতোমধ্যে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। দুই উপদেষ্টার মধ্যে মাহফুজ আলম জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির যে কোনো সমঝোতার বিরোধী।
দায়িত্বে আসছেন কারা
মাহফুজ আলমের পদত্যাগে তাঁর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান। একজন উপদেষ্টা এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, দুই-এক দিনের মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
আসিফ মাহমুদের পদত্যাগে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। অবকাঠামো বিষয়ক দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণে সড়ক পরিবহনসহ তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব দেওয়ার আলোচনা ছিল। তবে তিনি রাজি হননি বলে জানিয়েছেন একাধিক উপদেষ্টা। দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকায় বাড়তি কাজে রাজি ছিলেন না আদিলুর রহমানও। তবে তিনি প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে সম্মত হয়েছেন।
আসিফ মাহমুদের পদত্যাগে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ও খালি হচ্ছে। এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কে পাবেন, তা গতকাল রাত পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে একজন উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ড. আসিফ নজরুলকে এ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
পদত্যাগ কার্যকর কিনা
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা মন্ত্রী পদমর্যাদার। প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা ভোগ করছেন। সংবিধানের ৫৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো মন্ত্রী যদি রাষ্ট্রপতির কাছে পেশের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র দেন, তাহলে পদ শূন্য হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের জন্য একই বিধান প্রযোজ্য হলে প্রধান উপদেষ্টার কাছে পদত্যাগপত্র দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাহফুজ আলম এবং আসিফ মাহমুদ আর পদে নেই। তবে সরকারি সূত্র জানিয়েছে, বিদায়ী সংবর্ধনা দিতেই দুই উপদেষ্টাকে পরিষদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অতীতের চারটি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের কারও পদত্যাগ করে নির্বাচন করার নজির নেই। পদত্যাগ জমা দেওয়ার পর বৈঠকে যোগ দেওয়ারও নজির নেই।
গতকাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখসারিতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া এই দুই ছাত্রনেতার পদত্যাগপত্র গ্রহণের পর প্রধান উপদেষ্টা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের মঙ্গল কামনা করেন। ড. ইউনূস বলেন, ‘অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে তোমরা যেভাবে জাতিকে ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্তির পথে অবদান রেখেছ, তা জাতি মনে রাখবে। আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতেও গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও বিকাশে তোমরা একইভাবে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।’
গতকাল সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সংবাদ সম্মেলনে একই কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। পাশাপাশি তিনি বলেন, দুই উপদেষ্টা যে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, তা তপশিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হবে।
এর আগে বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, তিনি বলেন, সম্পদের হিসাব বিবরণী বুধবার সকালে দাখিল করেছি। কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করিয়েছি। নির্বাচন করব, এটা স্পষ্টভাবে বলা যায়। কিন্তু কোথা থেকে করব, কোন দল থেকে করব, সেটা পরবর্তী সিদ্ধান্ত।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সরকারের পতনের পর তিন দিন পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা হন নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ। এনসিপির দায়িত্ব নিতে নাহিদ গত ফেব্রুয়ারিতে সরকার থেকে পদত্যাগ করেন।
মাহফুজ আলম শুরুতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ছিলেন। গত বছরের ১০ নভেম্বর তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। নাহিদ পদত্যাগ করার পর তাঁকে তথ্য উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আসিফ মাহমুদ শুরুতে ছিলেন শ্রম মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। এ এফ হাসান আরিফকে (প্রয়াত) সরিয়ে গত বছরের নভেম্বরে আসিফ মাহমুদকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।




