ধর্ম ও জীবন
সন্তানের কল্যাণের জন্য বাবা-মায়ের চার দোয়া

আল্লাহর নবী ইবরাহিমকে (আ.) আবুল আম্বিয়া বা নবীদের পিতা বলা হয়। আল্লাহ তাআলা তার বংশের বহু সংখ্যাক ব্যক্তিকে নবুয়্যত দিয়ে সম্মানিত করেছেন। আল্লাহর শেষ নবী হজরত মুহাম্মাদও (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম) তার বংশধর।
নবী ইবরাহিম (আ.) সব সময় তার সন্তান ও বংশধরদের জন্য দোয়া করতেন। কোরআনে তার জীবনের ঘটনাবলিতে তার অনেক দোয়া বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো দোয়ায় তিনি নিজের পাশাপাশি নিজের সন্তান ও বংশধরদের জন্যও দোয়া করেছেন।
এখানে আমরা সন্তানদের জন্য নবী ইবরাহিমের ৪টি দোয়া উল্লেখ করছি। বাবা-মায়েরা নিজেদের সন্তানদের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণের জন্য দোয়াগুলো পড়তে পারেন।
১. ইবরাহিম (আ.) দোয়া করেছিলেন,
رَبَّنَا وَ اجۡعَلۡنَا مُسۡلِمَیۡنِ لَكَ وَ مِنۡ ذُرِّیَّتِنَاۤ اُمَّۃً مُّسۡلِمَۃً لَّكَ وَ اَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَ تُبۡ عَلَیۡنَا اِنَّكَ اَنۡتَ التَّوَّابُ الرَّحِیۡمُ
উচ্চারণ: রাব্বানা ওয়াজ‘আলনা মুসলিমাইনি লাকা ওয়া মিন জুররিয়্যাতিনা উম্মাতান মুসলিমাতান লাকা, ওয়া আরিনা মানাসিকানা, ওয়াতুব ‘আলাইনা, ইন্নাকা আন্তাত-তাওয়্বাবুর রাহীম।
অর্থ: হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আমাদের ইবাদতের নিয়ম-কানুন শিক্ষা দিন এবং আমাদের অপরাধ ক্ষমা করুন।নিশ্চয়ই আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা বাকারা: ১২৮)
২. ইবরাহিম (আ.) দোয়া করেছিলেন,
رَبِّ اجۡعَلۡنِیۡ مُقِیۡمَ الصَّلٰوۃِ وَ مِنۡ ذُرِّیَّتِیۡ رَبَّنَا وَ تَقَبَّلۡ دُعَآءِ
উচ্চারণ: রাব্বিজআলনি মুকীমাস-সালাতি ওয়া মিন জুররিয়্যাতি রাব্বানা ওয়া তাকাব্বাল দু‘আ।
অর্থ: হে আমার রব, আমাকে ও আমার সন্তানদের নামাজ কায়েমকারী বানান। হে আমাদের রব, আমার দোআ কবুল করুন। (সুরা ইবরহিম: ৪০)
৩. ইবরাহিম (আ.) দোয়া করেছিলেন,
رَبِّ اجۡعَلۡ هٰذَا الۡبَلَدَ اٰمِنًا وَّ اجۡنُبۡنِیۡ وَ بَنِیَّ اَنۡ نَّعۡبُدَ الۡاَصۡنَامَ
উচ্চারণ: রাব্বিজআল হাযাল বালাদা আমিনাওঁ ওয়াজনুবনি ওয়া বানিয়্যা আন্না’বুদাল আসনাম।
অর্থ: হে আমার রব, আপনি এ শহরকে নিরাপদ করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তানদের মূর্তি পূজা থেকে দূরে রাখুন। (সুরা ইবরাহিম: ৩৫)
৪. ইবরাহিম (আ.) দোয়া করেছিলেন,
رَبَّنَا لِیُـقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ فَاجۡعَلۡ اَفۡئِدَۃً مِّنَ النَّاسِ تَهۡوِیۡۤ اِلَیۡهِمۡ وَارۡ زُقۡهُمۡ مِّنَ الثَّمَرٰتِ لَعَلَّهُمۡ یَشۡكُرُوۡنَ
উচ্চারণ: রাব্বানা লিয়ুকিমুস-সালাতা ফাজআল আফইদাতাম মিনান-নাসি তাহউই ইলাইহিম ওয়ারযুকহুম মিনাস সামারাতি লা‘আল্লাহুম ইয়াশকুরূন।
অর্থ: হে আমার রব, তারা যেন নামাজ কায়েম করে, আপনি মানুষের অন্তর তাদের প্রতি অনুরাগী করে দিন আর ফল-ফলাদি দিয়ে তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করুন যেন তারা শুকরিয়া আদায় করে। (সুরা ইবরাহিম: ৩৭)

ধর্ম ও জীবন
প্রতিমা বিসর্জনে শেষ হলো শারদীয় দুর্গাপূজা

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমী তিথিতে বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দেওয়া হলো। বিদায়ের সুর আর ভক্তদের চোখের জলে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর মধ্য দিয়ে শেষ হলো পাঁচ দিনের এই মহাআয়োজন।
বিকাল থেকেই পুরাণ ঢাকার সদরঘাট এলাকার বীণা স্মৃতি স্নানঘাটে প্রতিমা বিসর্জন কার্যক্রম শুরু হয়। ধানমন্ডি থানার দুর্গামন্দিরের প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এই পর্বের সূচনা হয়।
এছাড়াও পল্টন বধির স্কুলে আয়োজিত পূজামণ্ডপের প্রতিমা বুড়িগঙ্গার ওয়াইজ ঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির উদ্যোগে সদরঘাট টার্মিনালের পাশে বীণা স্মৃতি স্নানঘাটে একটি অস্থায়ী বিসর্জন মঞ্চ তৈরি করা হয়। ঘাট এলাকা ও বুড়িগঙ্গার তীরজুড়ে ছিল আলোকসজ্জার ব্যবস্থা। প্রতিমা বিসর্জন দেখতে বিকাল থেকেই হাজারো ভক্ত ও দর্শনার্থীরা সদরঘাট এলাকায় ভিড় করেন।
ভক্ত রবি দাস বলেন, ‘গত চার দিন বেশ আনন্দের সঙ্গে পূজা উদযাপন করেছি। আজ দেবী মাকে বিসর্জন দিতে এসেছি। খুব খারাপ লাগছে, তবে এটা ভেবে আনন্দ লাগছে আসছে বছর মা আবার আসবেন।’
তিনি নিরাপত্তার বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও কিছুটা নিরাপত্তার শঙ্কায় ছিলাম। তবে এবার কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। চারদিকে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বেশ জোরদার। সব মিলিয়ে সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল খুব ভালো।’
আরেক ভক্ত হৈমন্তী রানী সিংহ বিদায়ের ক্ষণ নিয়ে বলেন, ‘মা আমাদের মাঝে কল্যাণ নিয়ে এসেছেন। এখন ফিরে যাচ্ছেন সতর্ক করে। প্রতিবার মনে হয় মা আরও কিছুদিন থাকলে ভালো হতো। কারণ এই সময়টাতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ আনন্দের সময় কেটেছে। এখন আবার যান্ত্রিক জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হবে।’
প্রতিমা বিসর্জন কেন্দ্রীয় ঘাট কমিটির কর্মকর্তা রজত কুমার সুর জানান, ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন মণ্ডপের প্রতিমা বীণা স্মৃতি ঘাটে আসবে এবং এ উপলক্ষে ঘাটকেন্দ্রিক সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে বুড়িগঙ্গার তীরে পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী, নৌ-পুলিশ ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ক্রাইম সিন টিম ও সোয়াট দলের সদস্যসহ সাদা পোশাকে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্কতার সঙ্গে তৎপর ছিল।
ধর্ম ও জীবন
যানবাহনে চলাচলের তাসবিহ ও দোয়া পড়ার নিয়ম

জীবনের মূল্যবান সময়ের একটা বড় অংশ আমাদের এখন যানবাহনে কেটে যায়। ঘন্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকে থাকা ঢাকাবাসীর জন্য নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এই জ্যামে আটকে থাকা সময়গুলো মোবাইল দেখে কিংবা অহেতুক গল্পগুজবে কেটে যায়।
অথচ সময় আল্লাহ তায়ালার বড় নেয়ামত। এই নেয়ামত অহেতুক কাজে নষ্ট না করে কাজে লাগানো উচিত। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, দুটি নেয়ামত এমন রয়েছে যাতে অধিকাংশ মানুষ ধোঁকায় পড়ে নষ্ট করে থাকে। তা হলো ১. সুস্থতার নেয়ামত। ২. অবসর সময়ের নেয়ামত। (সহিহ বুখারি)
তাই জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগানোর চেষ্টা করা উচিত। যানবাহনে বসে থাকার সময়গুলোও আমরা চাইলে কাজে লাগাতে পারি। এখানে আমি কয়েকটি আমলের কথা লিখছি যা আমরা যানবাহনে ওঠা ও বসে থাকার সময়ে করতে পারি।
১. যানবাহনের দোয়া পড়ুন
যানবাহনে ওঠার পর প্রথমেই দোয়া পড়ে আল্লাহর নিরাপত্তা গ্রহণ করুন। হাদিসে এসেছে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাহনে উঠে তিনবার তাকবির বলে এই দোয়া পড়তেন,
سُبْحانَ الذي سَخَّرَ لَنا هذا وَما كُنّا له مُقْرِنِينَ وإنّا إلى رَبِّنا لَمُنْقَلِبُونَ
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাজি সাখ্খারা লানা হাজা ওয়ামা কুন্না লাহু মুকরিনিন ওয়া ইন্না ইলা রব্বিনা লামুনকলিবুন।
অর্থ: পবিত্র মহান সেই সত্তা- যিনি একে আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন করে দিয়েছেন, আমরা নিজের ক্ষমতায় একে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ছিলাম না। আমাদের অবশ্যই আমাদের প্রতিপালকের নিকট ফিরে যেতে হবে। (সহিহ মুসলিম)
২. কোনো প্রয়োজনীয় কাজ করা সম্ভব হলে করুন
নিজের প্রয়োজনীয় কোনো কাজ করা যানবাহনে বসে করা সম্ভব হলে তা করার চেষ্টা করুন। যেমন সারাদিনের কাজের পরিকল্পনা, হিসাব-নিকাশ ইত্যাদি। প্রয়োজনীয় কাজে ব্যস্ত থাকলে অহেতুক কাজ থেকে বাঁচা সহজ হয়।
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মানুষের ইসলামের সৌন্দর্য (অর্থাৎ তার উত্তম মুসলিম হওয়ার একটি চিহ্ন) হলো, অনর্থক (কথা ও কাজ) বর্জন করা। (সুনানে তিরমিজি: ২৩১৭)
৩. কোরআন তিলাওয়াত করুন
যানবাহনে বসে বসে কোরআন তিলাওয়াত করা যেতে পারে। এখন বেশিরভাগ মানুষের কাছে স্মার্টফোন থাকে। স্মার্টফোনে কোরআনের কোনো একটি এ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করে রাখলে সহজেই দেখে দেখে কোরআন পড়া যায়।
আলহামদুলিল্লাহ, গাড়িতে বসে মোবাইলে কোরআন পড়ে একাধিকবার পূর্ণ কোরআন পাঠ করার তাওফিক হয়েছে। আমার পরিচিত অনেকেই এভাবে কোরআন খতম করেছেন।
কোরআন পড়তে কষ্ট হলে কানে হেডফোন লাগিয়ে কোরআন তিলাওয়াত শোনা যেতে পারে। এটাও সাওয়াবের কাজ।
৪. আল্লাহর জিকির করুন
গাড়িতে কোরআন তিলাওয়াত করা সম্ভব না হলে বা তিলাওয়াত করতে কষ্ট হলে আল্লাহর জিকির করুন। সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, কালিমা তাইয়েবা ইত্যাদি জিকিরে মশগুল থেকে সময় পার করুন। সঙ্গে একটা ছোট্ট তাসবিহ রাখলে জিকিরের কথা মনে পড়ে এবং মনোযোগ ধরে রাখাও সহজ হয়।
৫. গুনাহ থেকে বেঁচে থাকুন
গুনাহ থেকে বেঁচে থাকুন এবং রাস্তার হক আদায় করুন। রাস্তায় চলার সময় রাস্তার হক আদায় করতে হয়। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তোমারা রাস্তার হক আদায় করো! সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! রাস্তার হক কী? তিনি বললেন, চোখ নিচু রাখা, অন্যের কষ্টের বিষয়ে সচেতন থাকা, সালাম এলে তার উত্তর দেওয়া, ভালো কাজের উপদেশ দেওয়া ও মন্দ কোন কাজ দেখলে সাধ্যমত বারণ করা। (সহিহ মুসলিম)
তাই রাস্তায় কারও বিপদ দেখলে সাধ্যমত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। কোনো অপরাধ দেখলে সম্ভব হলে বারণ করুন। পরস্পর সালাম বিনিময় করুন। পাশের সিটে বসা ব্যক্তির কষ্ট হচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন। সহযাত্রী, কন্ডাক্টরসহ সবার সাথে উত্তম আচরণ করুন।
ধর্ম ও জীবন
জুমার জন্য যে ৪ কাজ জরুরি

ইয়াওমুল জুমা সপ্তাহের সেরা দিন। জুমা ছাড়াও এই দিনে অন্য অনেক ইবাদতের বিনিময়ে রয়েছে অনেক সওয়াব ও পুরস্কার। গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের এ দিনে চারটি কাজ করা যাবে না। সেই কাজগুলো কী?
১. পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে মসজিদে যাওয়া
জুমার দিন গোসল করাকে আবশ্যক বলা হয়েছে। তাছাড়া পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। গোসল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে হাদিসের দিকনির্দেশনা-
> হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিনে প্রত্যেক সাবালকের জন্য গোসল করা ওয়াজিব।’ (বুখারি)
> হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ জুমার নামাজে আসলে সে যেন গোসল করে।’ (বুখারি, মুসলিম)
> হজরত ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু জুমার দিন দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন, এমন সময় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রথম যুগের একজন মুহাজির সহাবা (জুমা পড়তে মসজিদে) এলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে ডেকে বললেন, এখন সময় কত? তিনি বললেন, আমি ব্যস্ত ছিলাম, তাই ঘরে ফিরে আসতে পারিনি। এমন সময় আজান শুনে শুধু অজু করে নিলাম। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, শুধু অজুই? অথচ আপনি জানেন যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোসলের নির্দেশ দিতেন।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)
> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবাত (নাপাকি থেকে পবিত্রতার) গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং নামাজের জন্য আগমন করে সে যেন একটি উট কোরবানি করলো। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন একটি গাভী কোরবানি করলো। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কোরবানি করলো। চতুর্থ পর্যায়ে আগমন করলো সে যেন একটি মুরগি কোরবানি করলো। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করলো সে যেন একটি ডিম কোরবানি করলো। পরে ইমাম যখন খুতবাহ দেওয়ার জন্য বের হন তখন ফেরেশতারা (ইমামের খুতবাহ) উপদেশ শোনার জন্য (মসজিদে) উপস্থিত হয়ে থাকে।‘ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)
তাই জুমার দিন সবার উচিত গোসল করা এবং মিসওয়াক করা। যদি সম্ভব হয় সুরভি লাগানো চাই। আর ভালো ও পরিচ্ছন্ন জামা পড়ে মসজিদে যাওয়া।
২. জুমার আজানের সঙ্গে কাজ ছেড়ে দেওয়া
কোরআনুল কারিমের নির্দেশনা অনুযায়ী জুমার আজানের পর নামাজের প্রস্তুতি ছাড়া অন্য কাজ করা বৈধ নয়; বরং তা গুনার কাজ। তাই জুমার আজান হওয়ার পর নামাজের প্রস্তুতিমূলক কাজ ছাড়া দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য ও জীবিকা নির্বাহসহ সব কাজ কর্মই বন্ধ করে দেয়া জরুরি।
ইসলামিক স্কলার ও ফিকহবিদদের মতে, উক্ত আয়াতে আহ্বান (আজান) বলতে মৌলিকভাবে দ্বিতীয় আজান (খুতবার আজান) উদ্দেশ্য হলেও শব্দের ব্যাপকতার মাঝে জুমার প্রথম আজানও অন্তর্ভুক্ত। তাই তাফসীরবিদ ও ফিকহবিদগণের নির্ভরযোগ্য মতানুযায়ী প্রথম আজানের পরও জুমার প্রস্তুতিমূলক কাজ ব্যতিত ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্য যে কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া উক্ত আয়াতের নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত। অতএব তা নাজায়েয ও গুনার কাজ।
সুতরাং জুমার জন্য এক আজান দেয়া হোক আর দুই আজান দেয়া হোক; আজানের পর জুমার নামাজের প্রস্তুতি ছাড়া অন্য কোনো কাজ করা বৈধ নয়। এ সময় অন্য কাজ করলে তা গুনার কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে।
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘লোকজন নিজেদের কাজকর্ম নিজেরাই করতেন। যখন তারা দুপুরের পরে জুমার জন্য যেতেন, তখন সে অবস্থায়ই চলে যেতেন। তাই তাদের বলা হলো, যদি তোমরা গোসল করে নিতে ভালো হতো।’(বুখারি ও মুসলিম) তাছাড়া আল্লাহ তাআলা মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা জীবিকা নির্বাহের ব্যাপারে পরবর্তী (১০নং) আয়াতে সুস্পষ্ট বক্তব্যও তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘অতপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা/ব্যবসা-বাণিজ্য/কাজ-কর্ম) তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমা : আয়াত ১০)
৩. জুমার খুতবায় মনোযোগী হওয়া
জুমার নামাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ খুতবা শোনা। বেশি মুসল্লি হওয়ার কারণে অথবা অন্য কোনো কারণে যদি খুতবার আওয়াজ শোনা না যায়, তবে শব্দ না করে নীরব থাকা আবশ্যক। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমভাবে অজু করে জুমার নামাজে এলো, মনোযোগ দিয়ে নীরবে খুতবা শুনলো, তার পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত আরও তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি (অহেতুক) কঙ্কর স্পর্শ করলো, সে অনর্থক, বাতিল, ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যানযোগ্য কাজ করলো।’ (মুসলিম)
৪. নিরবে খুতবা শোনা
চুপ থেকে জুমার খুতবা শুনতে হবে। খুতবা চলাকালীন কোনো আওয়াজ বা শোরগোল করা যাবে না। কারো সঙ্গে কথা বলা যাবে না। তবেই জুমার দিন হবে গুনাহ মাফের উপায়। খুতবা শোনা হবে গুনাহ মাফের উপায়। হাদিসে পাকে এসেছে-
> হজরত আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গোসল করে জুমার নামাজে এলো, এরপর সাধ্যমত (সুন্নাত) নামাজ আদায় করলো, এরপর ইমামের খুতবা শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকলো; এরপর ইমামের সঙ্গে (জুমার) নামাজ আদায় করল, এতে তার দুই জুমার মধ্যবর্তী দিনসমূহ এবং আরও তিন দিন (মোট ১০ দিনের) গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’
> হজরত আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গোসল করে জুমার নামাজে এলো, এরপর সাধ্যমত (সুন্নাত) নামাজ আদায় করলো, এরপর ইমামের খুতবা শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকলো; এরপর ইমামের সঙ্গে (জুমার) নামাজ আদায় করল, এতে তার দুই জুমার মধ্যবর্তী দিনসমূহ এবং আরো তিন দিন (মোট ১০ দিনের) গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’
> অন্য বর্ণনায় এসেছে, আর যে ব্যক্তি (অহেতুক) কঙ্কর স্পর্শ করল সে অনর্থক, বাতিল, ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যানযোগ্য কাজ করলো।’ (মুসলিম)
> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায়ের জন্য উত্তমরূপে অজু করে (মসজিদে) উপস্থিত হয়, এরপর চুপ করে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে, তার (ওই) জুমা থেকে (পরবর্তী) জুমা পর্যন্ত বরং অতিরিক্ত আরও তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি পাথর কুচি অপসারণ বা নাড়াচাড়া করলো সে অনর্থক কাজ করলো।’ (আবু দাউদ)
> হজরত সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, এরপর তেল ব্যবহার করবে এবং সুগন্ধি নেবে, তারপর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, সে নামাজ আদায় করবে এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, (তখন) চুপ করে মনোযোগ সহকারে তাঁর খুতবা শুনবে। দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (আবু দাউদ)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাসময়ে আগে আগে জুমার নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ধর্ম ও জীবন
সৌদির নতুন গ্র্যান্ড মুফতি ড. শায়খ সালেহ বিন হুমাইদ

সৌদি আরবের নতুন গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে ড. শায়খ সালেহ বিন হুমাইদকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পূর্ববর্তী গ্র্যান্ড মুফতি ড. আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আল শায়খের ইন্তেকালের পরই এই গুরুত্বপূর্ণ পদে তাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) মসজিদ আল-হারাম কর্তৃপক্ষের এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানা গেছে।
গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে নিয়োগলাভের পূর্বে তিনি মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববির ইমাম ও খতিবদের তত্ত্বাবধানকারী ‘প্রেসিডেন্সি অ্যাফেয়ার্স’ পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
শায়খ সালেহ বিন হুমাইদ সৌদি আরবের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় আলেম, যিনি একাধারে বিচারক, শিক্ষাবিদ, ও ইসলামি চিন্তাবিদ হিসেবেও সুপরিচিত।
সালেহ হুমাইদ ১৯৯৩ সাল থেকে সৌদি মজলিস আল শুরা (সৌদি আরবের পরামর্শদাতা পরিষদ) এর সদস্য এবং ফেব্রুয়ারী ২০০২ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০০৯ পর্যন্ত মজলিস আল শুরার স্পিকার ছিলেন।
তিনি বর্তমানে মক্কার মসজিদ আল-হারামের ইমাম। তিনি মক্কার আরবি ভাষা একাডেমির একজন সদস্য, জেদ্দায় আন্তর্জাতিক ইসলামী ফিকহ একাডেমির সভাপতি। কিং ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার থেকে ২০১৬ সালের সার্ভিস টু ইসলাম পুরস্কার জিতেছেন তিনি।
ধর্ম ও জীবন
চাঁদ দেখা গেছে, রবিউস সানি মাস শুরু বুধবার

বাংলাদেশে আজ ১৪৪৭ হিজরি সনের পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আগামীকাল বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) থেকে পবিত্র রবিউস সানি মাস গণনা শুরু হবে। এবং আগামী শনিবার (৪ অক্টোবর) পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালিত হবে।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বায়তুল মুকাররমের সভাকক্ষে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়গুলো, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৪৪৭ হিজরির ২৯ রবিউল আওয়াল, ১৪৩২ বঙ্গাব্দের ৮ আশ্বিন ও ২০২৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা গেছে।
এসিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪৪৭ হিজরি সনের পবিত্র রবিউস সানি মাস গণনা শুরু হবে। পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম আগামী ৪ অক্টোবর পালিত হবে। সভায় চাঁদ দেখা কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।