Connect with us

ধর্ম ও জীবন

রোজা কী কারণে ভাঙ্গে? রোজা নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা

Published

on

রোজা

মুসলমানদের কাছে পবিত্র রমজান মাসে যারা রোজা রাখেন, তারা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কিছুই মুখে দেন না। এ বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে রোজা শুরু হচ্ছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন বয়সের বেশিরভাগ মানুষও এসময় রোজা রাখেন। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের সকল ধর্মপ্রাণ মুসলিম বিশ্বাস করেন, এ মাসে স্বেচ্ছা নিয়ন্ত্রণ ও বেশি সময় ধরে প্রার্থনার ভেতর দিয়ে তারা নতুন করে আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে পারবেন। তাই, ধর্মে রোজা সংক্রান্ত যেসব নিয়মের কথা বলা আছে, রমজানে তারা সেগুলো মেনে চলেন।

কিন্তু এমন অনেক বিষয় আছে, যেগুলো সম্বন্ধে ধর্মে সরাসরি কিছু বলা না থাকলেও অনেকে সেসবও মানেন। রোজা নিয়ে ধর্মে কী কী বলা আছে, কী কী বলা নেই, ধর্ম নিয়ে কী কী ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, এরকম অনেক প্রশ্নের উত্তর মানুষ গুগলের কাছে জানতে চেয়েছে। গুগলের কাছে জানতে চাওয়া সেরকমই কিছু প্রশ্নের উত্তর এই প্রতিবেদনে দেওয়া হবে।

কী কী কারণে রোজা ভেঙ্গে যায়

সাধারণ মুসলমানরা অনেক কিছুকেই রোজা ভাঙ্গার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। কিন্তু ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, রোজা ভাঙ্গার মূল কারণ আসলে পাঁচটি। সেগুলো হলো—
১. ইচ্ছাকৃতভাবে খাবার খেলে
২. ইচ্ছাকৃতভাবে পান করলে
৩. শরীর থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়লে
৪. মুখ ভর্তি বমি হলে
৫. রোজা রাখা অবস্থায় সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “রক্তপাত বা বমি হলে রোজাদার ব্যক্তি অসুস্থ বোধ করতে পারেন। সেজন্যই ধর্মে এসব ক্ষেত্রে রোজা ভেঙ্গে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।”

রোজা সম্বন্ধে প্রচলিত ভুল ধারণাসমূহ

এই পাঁচ কারণের বাইরে আরও কিছু বিষয়কে রোজা ভাঙ্গার কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়। কিন্তু সেগুলো আদতে রোজা ভাঙ্গার মতো কোনও কারণই নয়। বরং, সমাজে প্রচিলত থাকার কারণে রোজাদাররা সেগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। এতে করে তিনি নিজে যেমন কষ্টে থাকেন, সেইসাথে তার চারপাশের মানুষকেও বিড়ম্বনায় ফেলেন।

অধ্যাপক শামছুল আলম এই প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো সমন্ধে বলেন, “মানুষ এগুলো জানাশোনা বা পড়াশোনার অভাবে বলে। তারা আধুনিক শিক্ষা পায়নি।” তাই, রোজা সম্বন্ধে প্রচলিত তেমনই কিছু ভুল ধারণা সম্বন্ধে জেনে নেওয়া প্রয়োজন।

মুখের লালা গিলে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যায়

মুখের লালা যদি পেটে চলে যায়, তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে; এটি একটি বহুল চর্চিত কথা। এই প্রচলিত ধারণার কারণে রমজানে মানুষ যেখানে সেখানে থু থু ফেলে। এতে করে রোজাদার ব্যক্তিটি একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি করছেন, অন্যদিকে তিনি পাশের মানুষকেও অস্বস্তিতে ফেলছেন। অধ্যাপক শামছুল আলম এ বিষয়ে বলেন, “মুখের লালা গিলে ফেললে কিচ্ছু হয় না রোজার। এ বিষয়ে ধর্মে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই অর্থাৎ, ইন্টার্নাল কিছু পেটে ঢুকলে রোজা ভেঙ্গে যাবে না।”

তবে অন্য কারও মুখের লালা যদি নিজের মুখে যায়, তাহলে রোজা থাকবে না। অর্থাৎ, রোজা পালন করা অবস্থায় সঙ্গীকে চুমু খাওয়া যাবে না।

দাঁত ব্রাশ করা যাবে না

অনেকে বলেন , রোজা রাখা অবস্থায় দাঁতও ব্রাশ করা যাবে না। কিন্তু দীর্ঘ সময় দাঁত ব্রাশ না করার কারণে মুখে দুর্গন্ধ তৈরি হয় এবং তাতে কথা বলার সময় চারপাশে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এই গন্ধ বিষয়ে অনেক রোজাদারকে বলতে শোনা যায়, রোজাদার ব্যক্তির মুখের গন্ধও ভালো বা রোজাদার ব্যক্তির মুখের গন্ধে বিরক্ত হওয়া যাবে না। কিন্তু এ বিষয়ে মি. আলম শুরুতেই এক বাক্যে বলেন, “দাঁত ব্রাশ করলে রোজার কিচ্ছু হবে না।”

“তবে পেস্ট আছে তো, ভুলে গলায় চলেও যেতে পারে। পেস্ট গলায় গেলে রোজা মাকরূহ হবে। সেজন্য এটা সাহরী খাওয়ার আগে করাই ভালো,” যোগ করেন তিনি।

সুতরাং, কেউ যদি সাবধানতা বজায় রেখে অল্প পরিমাণ পেস্ট নিয়ে দাঁত ব্রাশ করেন, তাতে সমস্যা নেই।

নখ এবং চুল কাটা যাবে না

এরকমই প্রচলিত আরেকটা ধারণা হলো, রোজা রাখা অবস্থায় কিছুতেই নখ ও চুল কাটা যাবে না। তবে ‘নখ, চুল কাটা যাবে না; এটা একদম ভুল কথা’ বলে জানান মি. আলম। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “এগুলোতে তো রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে না। আর এগুলো সাধারণত দিনের বেলাতেই মানুষ করে এবং একইসাথে রোজাও মানুষ দিনের বেলাতেই রাখে।”

দাড়ি কামানো যাবে না

রোজা রাখলে পুরুষরা দিনে দাড়ি কামাতে পারবেন না, এমন একটি মিথও প্রচলিত আছে। কিন্তু বাস্তবে তারা যে কোনও সময়েই দাড়ি কামাতে পারবেন। এ নিয়ে কোনও বাধা-নিষেধ নেই। তবে দাড়ি কামানোর সময় শুধুমাত্র একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে যে ‘গাল কেটে গিয়ে রক্ত না গড়ায়’।

এ প্রসঙ্গে ঢাবি’র এই অধ্যাপক বলেন, “রোজা রেখে শেভ করা যাবে না, এটাও একদমই ভুল কথা। ইসলাম অবৈজ্ঞানিক কোনও বিষয় না। এটা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত বিধান।”

রমজানে যৌন সম্পর্ক করা যাবে না

কেউ কেউ মনে করেন, পুরো রমজান মাসে সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু যৌন সম্পর্ক স্থাপনের বিধিনিষেধ শুধুমাত্র রোজা থাকা অবস্থায়। আর মানুষ রোজা রাখে দিনের বেলায়। তাই, রোজা না থাকলে রমজানে সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে কোনও বাধা নেই।

“রোজা রাখা অবস্থায় কোনও যৌন সম্পর্ক করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে,” জানান মি. আলম।

সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না

অনেকের মতে, রোজা রেখে সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু, মানুষের মনে গেঁথে থাকা এই ধারণাকেও ভিত্তিহীন বলে জানান অধ্যাপক শামছুল আলম। তিনি বলেন, “সুগন্ধি বলতে আতর ব্যবহার করা যাবে, এটা তো নবীর সুন্নত। যুগে যুগে নবী রাসূলরা আতর ব্যবহার করে গেছেন। এটা ব্যবহারে কোনও নিষেধ নেই।”

তবে পারফিউমও ব্যবহার করা যাবে কি না, এমন এক প্রশ্নের মুখে তিনি বলেন যে পারফিউম ব্যবহারের বিষয়ে এক ধরনের ‘সতর্কতা’ আছে।

“কারণ পারফিউম তৈরিতে নাকি চর্বি ব্যবহৃত হয়। এটা তো আমরা জানি না। তাই এটা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকলেই বেশি ভালো হয়, শুধু আতর ব্যবহার করা ভালো।”

তবে তিনি এও বলেন, “কিন্তু আপনি পারফিউম ব্যবহার করতে পারেন, কারণ এটি তৈরির সময় তো আপনি দেখেননি। তবে বেশি তাকওয়া (ধার্মিকতা বা ধর্মপরায়ণতা) দেখাতে চাইলে দিনের বেলা ব্যবহার না করাই ভালো। একদম-ই ব্যবহার না আরও ভালো।”

পারফিউম বা আতর ব্যবহার করা রোজা ভাঙ্গার কারণ না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “তাছাড়া, পৃথিবীতে কিন্তু এখন সবকিছু হালালও উৎপাদন হয়। তাই, কেনার সময় খেয়াল করা উচিৎ যে কোন দেশ হালাল উৎপাদন করে। এসব বিষয়ে একটু সচেতন হয়ে চলা উচিৎ।”

‘ভুল করে’ পানাহার করে ফেললে রোজা ভাঙ্গে

অনেকসময় এমন হয় যে একজন ব্যক্তি সারাদিন ধরে রোজা আছেন। কিন্তু হঠাৎ হয়তো মনের ভুলে সে খাবার খেয়ে ফেললো বা পানি পান করে নিলো। কিন্তু সম্বিৎ ফিরে পাওয়ার পর ঐ রোজাদার ব্যক্তি ভাবেন যে তার রোজা সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে গেছে। এটা ভেবে হয়তো তখন সে পরিপূর্ণ আহারই করে ফেলেন। এ প্রসঙ্গে মি. আলম বলেন, “মনের ভুলে ভরপেট খাবার খেলেও রোজা ভেঙ্গে যাওয়ার কথা ইসলামে বলা হয়নি। এতে রোজা মাকরূহ হতে পারে। রোজা ভেঙ্গে যাবে, যদি ব্যক্তি ইচ্ছা করে পানাহার করে।”

এখানে মাকরূহ অর্থকে তিনি ব্যাখ্যা করেন এভাবে, “মাকরূহ মানে অপছন্দনীয়। মাকরূহ মানে— রোজা হয়ে যাবে, কিন্তু রোজার সৌন্দর্যবোধটা শতভাগ হলো না।” তিনি বলেন, “মুখে খাবার নেওয়ার পর যখনই মনে আসবে, তখন ফেলে দিতে হবে। আর গেলা যাবে না।”

রোজা রেখে ঔষধ খাওয়া যাবে না

অনেক মিথের ভীড়ে আরেকটি মিথ হলো, রোজা রেখে কিছুতেই ঔষধ সেবন করা যাবে না। যদিও এর আগে মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) আন্তর্জাতিক গ্লুকোমা সমিতির সাথে যৌথ একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে- রোজা রেখেও কিছু ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। যেমন, চোখের ড্রপ।

ঢাবি অধ্যাপক মি. আলমও বলেন, “যে ঔষধ পেটে যায়, মানে ক্ষুধা কমায়, সেগুলা নিষেধ। কিন্তু নাকে বা চোখে কোনও ড্রপ দিলে, সেটাতে কোনও সমস্যা নাই।” যেসব ওষুধ গিলে খেতে হবে, সেগুলো ইফতারের পরে বা সেহরির আগে খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

তবে পেনিসিলিন, ইনজেকশন, ইনসুলিন অথবা টিকা দেওয়া যাবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ইনসুলিন ইফতারর আগ মুহূর্তে নিতে হবে। তবে ইমার্জেন্সি হলে সব বৈধ।”

“মৃত্যুর আশঙ্কা থাকলে, স্বাস্থ্যের অবনতির আশঙ্কা থাকলে ইসলামে সব বৈধ” যোগ করেন তিনি।

রোজা রেখে ধূমপান করা যাবে

অবাক লাগলেও এটি সত্য যে অনেকে মনে করেন যে সিগারেট তো কোনও খাবার বা মাদক না, তাই রোজা রাখা অবস্থায় ধূমপান করা হলে রোজা ভেঙ্গে যাওয়ার কোনও বিষয় নেই। এ বিষয়ে অধ্যাপক আলমের বক্তব্য, “ধূমপান শুধু রোজা থাকা অবস্থায় না, রোজা ছাড়াও হারাম। মাদকদ্রব্য অন্যের ক্ষতি করে না, এটি শুধু সেবনকারীর ক্ষতি করে। তারপরও মাদকদ্রব্য হারাম।”

“সেখানে ধূমপান নিজের ক্ষতি তো করেই, অন্যেরও ক্ষতি করে। এটি বাতাসে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এটা রোজায় না কেবল, রোজা ছাড়াও খাওয়া ঠিক না। আর যে ধূমপান করছে, সে তো এটা খেয়ে তৃপ্তি পাচ্ছে। অনেকে ভাতের পরিবর্তে সিগারেট খায়। তাই, এটি খেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।”

রান্নার সময় খাবারের স্বাদ গ্রহণ করা যাবে না

যিনি রান্না করেন, তাকে অনেকসময় রান্নার স্বাদ বোঝার জন্য কিছুটা খাবার খেয়ে দেখতে হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঘরের রান্নাঘর সামলানোর কাছে নারীদের অংশগ্রহণই বেশি থাকে। তাই প্রায় প্রত্যেকের ঘরের মা বা বোন রান্নার সময় লবণ, ঝাল ইত্যাদি পরখ করে দেখেন। কিন্তু এরকম কথাও অনেকে বলেন যে রোজা রেখে খাবারের স্বাদ গ্রহণ করলে রোজা মাকরূহ হয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আলম বলেন, “খাবারের স্বাদ নেয়া যাবে। লবণ, ঝাল বা স্বাদ বোঝার জন্য জিহ্বায় লাগানো যায়, এরপর ফেলে দিতে হবে। রান্নাবান্না থেকে তো আর দূরে থাকা যাবে না।”

তবে তিনি এও বলেন যে, ঘরে যদি কম বয়সী বা রোজা রাখেনি, এমন কেউ থাকে; তাদেরকে দিয়ে খাবারের স্বাদ টেস্ট করালে সবচেয়ে ভালো হয়।

কারা রোজা রাখবে?

ইসলামে শুধু প্রাপ্তবয়স্ক (সাধারণত ১৫ বছর) এবং সুস্থ ব্যক্তির রোজা ফরজ বা আবশ্যিক করা হয়েছে। শিশু, অসুস্থ (শারীরিক এবং মানসিক), দুর্বল, ভ্রমণকারী, অন্তঃসত্ত্বা বা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন নারীর জন্য রোজা আবশ্যিক নয়। তবে বাংলাদেশে অনেক পরিবারেই শিশুদেরকেও রোজা রাখার জন্য বলা হয় বা উৎসাহিত করা হয়।

এ বিষয়ে অধ্যাপক আলম বলেন, “অনেক শিশুরা রোজা রাখে। কারণ ইফতারের সময় ওদের জন্য উৎসবের আমেজ। তবে শিশুদের জন্য রোজার কোনও বিধান নাই। নামাজের বিষয়ে বলা হয়েছে যে বাচ্চাদের সাত বছর হলে তাকে নামাজের কথা বলতে হবে। কিন্তু রোজার ব্যাপারে বলা হয়েছে, সাবালকত্ব এলে রোজা রাখা শুরু করে দিতে হবে।”

অর্থসংবাদ/এমআই

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ধর্ম ও জীবন

জুমার দিনের যেসব আমলে গুনাহ মাফ হয়

Published

on

রোজা

আল্লাহ রাত ও দিনকে সৃষ্টি করেছেন। সব দিনের মধ্যে জুমাবার বা শুক্রবারকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। কোরআন ও হাদিসে এই দিনের বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতের জন্য এই দিনটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ।

হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা আগের জাতিগুলোর কাছে জুমার মর্যাদা অজ্ঞাত রাখেন। তাই ইহুদিরা শনিবার নির্ধারণ করে। আর খ্রিস্টানরা রবিবার নির্ধারণ করে। অতঃপর আমরা আসি। আমাদের কাছে তিনি জুমার দিনের মর্যাদা প্রকাশ করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৮৫৬) জুমার দিনের পাঁচ বৈশিষ্ট্য

সৃষ্টিজগতের শুরু থেকে জুমার দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। আবু লুবাবা বিন আবদুল মুনজির (রা.) থেকে বর্ণিত, হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার দিনের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। তা হলো-এক. আল্লাহ তাআলা এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন।

দুই. আল্লাহ তাআলা এই দিনে আদম (আ.)-কে জমিনে অবতরণ করিয়েছেন। তিন. এই দিনে আদম (আ.)-কে মৃত্যু দিয়েছেন। চার. এই দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা কিছুই প্রার্থনা করবে তিনি তা দেবেন। যতক্ষণ সে হারাম কিছু প্রার্থনা করবে না। পাঁচ. এই দিনে কিয়ামত সংঘটিত হবে। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৮৯৫)

নিম্নে জুমার দিনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

১. জুমার নামাজ আদায়ের সওয়াব
সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্র হলো, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে যায় না, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করবেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)

অন্য হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান মধ্যবর্তী সময়ের পাপ মোচন করে; যদি সেই ব্যক্তি সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩৩)

২. জুমার দিন গোসল করার সওয়াব
জুমার দিন গোসল করা ও আগে আগে মসজিদে যাওয়া অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। আউস বিন আউস সাকাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালো করে গোসল করল, দ্রুততর সময়ে মসজিদে গেল ও (ইমামের) কাছাকাছি বসে মনোযোগসহ (খুতবা) শুনল, তাঁর জন্য প্রতি কদমের বদলে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব থাকবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)

৩. মসজিদে প্রথমে প্রবেশের সওয়াব
জুমার দিন মসজিদে আগে প্রবেশ করা ও মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনার বিশেষ গুরুত্ব আছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, অতঃপর প্রথমে মসজিদে গেল সে যেন একটি উট কোরবানি করল। যে এরপর মসজিদে গেল, সে যেন একটি গরু কোরবানি করল। আর যে এরপর ঢুকল, সে যেন ছাগল কোরবানি করল, এরপর যে ঢুকল সে যেন মুরগি কোরবানি করল, আর যে এরপর ঢুকল সে ডিম সদকা করল। অতঃপর ইমাম খুতবার জন্য এলে ফেরেশতারা আলোচনা শোনা শুরু করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৪১)

৪. জুমার দিন দোয়া কবুল হয়
জুমার দিন একটি সময় আছে, যখন মানুষ আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘জুমার দিন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে ভালো কিছুর দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তা দেন। তোমরা সময়টি আছরের পর অনুসন্ধান কোরো।’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর : ১০৪৮)

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলিম এ সময় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে দান করেন। এই মুহূর্তটি তোমরা আছরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান কোরো। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮)

৫. সুরা কাহাফ পাঠ
জুমার অন্যতম আমল সুরা কাহাফ পাঠ করা। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। যে ব্যক্তি অজুর পর এই দোয়া পড়বে তার নাম একটি চিঠিতে লেখা হবে। অতঃপর তাতে সিল দেওয়া হবে, যা কেয়ামত পর্যন্ত আর ভাঙা হবে না।’ (সহিহ তারগিব, হাদিস : ১৪৭৩, আল মুসতাদরাক : ২/৩৯৯)

৬. দরুদ পাঠ
জুমার দিন নবীজি (সা.)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা কর্তব্য। আউস বিন আবি আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং এই দিনে সবাইকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি পরিমাণ দরুদ পড়ো। কারণ জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।’ সাহাবারা বললেন, আমাদের দরুদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে, অথচ আপনার দেহ একসময় নিঃশেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ জমিনের জন্য আমার দেহের ভক্ষণ নিষিদ্ধ করেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৭)

৭. দোয়া কবুল করা হয়
জুমার দিন একটি সময় আছে, যখন মানুষ আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘জুমার দিন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে ভালো কিছুর দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তা দেন। তোমরা সময়টি আছরের পর অনুসন্ধান কোরো।’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর : ১০৪৮)

অন্য হাদিসে এসেছে, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলিম এ সময় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে দান করেন। এই মুহূর্তটি তোমরা আছরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান কোরো। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮)

আবু দারদা ইবনে আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি জুমার দিনের বিশেষ মুহূর্তটি সম্পর্কে বলেছেন, ইমামের মিম্বরে বসার সময় থেকে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত সময়টিই সেই বিশেষ মুহূর্ত। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৯)

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

ধর্ম ও জীবন

জুমার দিনে যে পাঁচ ভুল কাম্য নয়

Published

on

রোজা

জুমার নামাজ প্রতিটি মুসলমানের জন্য অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের অন্যতম একটি ইবাদত। জুমার দিনে অন্যান্য ইবাদাতের জন্যেও রয়েছে অতিরিক্ত সওয়াবের হুকুম। তাই এই দিনটিকে সঠিকভাবে পালন করা জরুরি।

শুক্রবারে জুমার নামাজ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। মোটামুটি সব মুসলমান জুমার নামাজ আদায় করেন। কিন্তু এই নামাজের সময় আমরা কিছু ভুল হয়ে যায়। সে রকম পাঁচটি ভুল নিয়ে সংক্ষিপ্ত কথা—

পরিচ্ছন্ন না হয়ে জুমায় যাওয়া
জুমার নামাজে যাওয়ার আগে গোসল করা জরুরি। অনেকে এই দিনে এত বেশি ব্যস্ত থাকেন যে, কোনো রকম জুমার ফরজ দুই রাকাত আদায় করে চলে আসেন। অথচ আবু সাইদ খুদ্রি (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিন প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্কের জন্য গোসল করা ওয়াজিব (জরুরি)। আর মিসওয়াক করবে এবং সম্ভব হলে সুগন্ধি ব্যবহার করবে। ’ (বুখারি, হাদিস ৮৮০, মুসলিম, হাদিস ৮৪৬)

তাই সবার উচিত জুমার দিন গোসল করা এবং মিসওয়াক করা। যদি সামর্থ্য থাকে, সুগন্ধি ব্যবহার করা। এছাড়াও ভাল ও পরিচ্ছন্ন জামা পড়ে মসজিদে যাওয়া। রাসুল (সা.) নিজেও এই দিন ভাল ও পরিচ্ছন্ন পোশাক পরতেন।

মসজিদে দেরি করে যাওয়া
জুমার নামাজ কেবল দুই রাকাত নামাজ আদায়ে যথেষ্ট নয়। জুমার খুতবা শোনাও জরুরি। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবাত (সহবাস পরবর্তীকালে) গোসলের মতো গোসল করে এবং নামাজের জন্য আগমন করে, সে যেন একটি উট কোরবানি করলো। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে, সে যেন একটি গাভি কোরবানি করলো। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে, সে যেন একটি শিং-বিশিষ্ট দুম্বা কোরবানি করলো। চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমন করলো সে যেন একটি মুরগি কোরবানি করলো। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করলো, সে যেন একটি ডিম কোরবানি করলো। (বুখারি, হাদিস ৮৮১)

তাই জুমার নামাজের দিন পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া উত্তম। তাহলে সময়মতো ও সঠিকভাবে নামাজ আদায় সম্ভব।

জুমার নামাজের সময় অন্য কাজ করা
জুমার নামাজের সময় অন্য কাজ করা নিষিদ্ধ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মসজিদের দিকে যাওয়া জরুরি। জুমার প্রথম আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায় কিংবা অন্য কাজ বন্ধ করে দেওয়া অথবা নামাজের জন্য বিরতি দেওয়া উচিত। ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাইদ (রহ.) থেকে বর্ণিত, আয়েশা (রা.) বলেছেন, লোকজন নিজেদের কাজকর্ম নিজেরাই করতেন। যখন তারা দুপুরের পরে জুমার জন্য যেতেন, তখন সে অবস্থায়ই চলে যেতেন। তাই তাদের বলা হলো, যদি তোমরা গোসল করে নিতে ভালো হতো…। (বুখারি, হাদিস ৯০৩, মুসলিম, হাদিস ৮৪৭)

মনোযোগ দিয়ে খুতবা না শোনা
খুতবা শোনা জুমার নামাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই ঠিকভাবে খুতবা শোনাও জরুরি। তবে যদি মুসল্লি বেশি হওয়ার কারণে অথবা অন্য কোনো কারণে খুতবার আওয়াজ না শোনা যায়, তবে নীরব থাকা নিয়ম।

আবু হুরায়রাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমভাবে ওজু করে জুমার নামাজে এলো, নীরবে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনলো, তাহলে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি (অহেতুক) কঙ্কর স্পর্শ করলো, সে অনর্থক, বাতিল, ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যানযোগ্য কাজ করলো। (মুসলিম, হাদিস ১৮৭৩)

প্রসঙ্গত আরবি ও বাংলায় দেওয়া উভয় খুতবাই মনোযোগ দিয়ে শোনা জরুরি।

খুতবার সময় কথা বলা
খুতবা শোনা ওয়াজিব। রাসুল (সা.) খুতবার সময় কথা বলতে নিষেধ করেছেন। আবু হুরায়রাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিন যখন তোমার পাশের মুসল্লিকে চুপ থাকো বলবে, অথচ ইমাম খুতবা দিচ্ছেন, তা হলে তুমি একটি অনর্থক কথা বললে। (বুখারি, হাদিস ৯৩৪, মুসলিম, হাদিস ৮৫১)

খুতবার সময় কেউ কথা বললে তাকে চুপ থাকতে বলাও উচিত নয়। অর্থাৎ খুতবার সময় মুখ পুরোপুরি বন্ধ রাখা চাই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সঠিকভাবে জুমার নামাজ আদায়ের তাওফিক দান করুন।

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

ধর্ম ও জীবন

দুই কাজে নষ্ট হয় জুমার সওয়াব

Published

on

রোজা

ইসলামে জুমার দিন সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। ইদুল ফিতর ও ইদুল আজহার দিনের চেয়েও জুমার দিনের মর্যাদা ও গুরুত্ব বেশি। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

إِنّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ سَيِّدُ الْأَيّامِ وَأَعْظَمُهَا عِنْدَ اللهِ مِنْ يَوْمِ الْأَضْحَى وَيَوْمِ الْفِطْرِ

জুমার দিন দিনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। জুমার দিন আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে মহান দিন। এমন কি এ দিন আল্লাহ তাআলার কাছে ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর তথা ইসলামের দুই ঈদের দিন থেকেও মহান। (সুনানে ইবনে মাজা)

জুমার দিন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে গোসল করে মসজিদে গিয়ে উত্তমরূপে জুমার নামাজ আদায়ের অপরিসীম সওয়াবের কথা বর্ণনা করে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

مَنِ اغْتَسَلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَتَطَهَّرَ بِمَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ، ثُمَّ ادَّهَنَ أَوْ مَسَّ مِنْ طِيبٍ، ثُمَّ رَاحَ فَلَمْ يُفَرِّقْ بَيْنَ اثْنَيْنِ، فَصَلَّى مَا كُتِبَ لَهُ، ثُمَّ إِذَا خَرَجَ الإِمَامُ أَنْصَتَ، غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الأُخْرَى

যে ব্যাক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর মসজিদে যায়, মানুষকে ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়া থেকে বিরত থাকে, তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ নামাজ আদায় করে, ইমাম যখন খুতবার জন্য বের হন তখন চুপ থাকে, তার এ জুমা এবং পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি: ৯১০)

এ হাদিসে জুমার সওয়াব লাভের জন্য আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যেমন কিছু করণীয় কাজের কথা বলেছেন, দুটি বর্জনীয় কাজের কথাও বলেছেন যা থেকে বিরত থাকা জুমার সওয়াব লাভের শর্ত: ১. মানুষকে ডিঙিয়ে সামনে যাওয়া ২. খুতবার সময় কথা বলা

এ হাদিসটিসহ বিভিন্ন হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে এ দুটি কাজ করতে নিষেধ করেছেন

মানুষকে ডিঙিয়ে সামনে যাওয়া
জুমার দিন ইমামের কাছাকাছি বসার আগ্রহ ও চেষ্টা থাকা উচিত। কিন্তু সেজন্য আগে আগে মসজিদে উপস্থিত হতে হবে। মসজিদে পরে উপস্থিত হয়ে অন্য মুসল্লিদের ডিঙিয়ে তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করা অন্যায় ও গুনাহের কাজ।

খুতবা চলা অবস্থায় কেউ যদি কাতার ডিঙিয়ে সামনে যেতে চায়, তাহলে অন্য মুসল্লিদের উচিত তাকে এ কাজ করতে নিষেধ করা ও বসিয়ে দেওয়া। খতিব সাহেবের চোখে পড়লে তিনি নিজেই তাকে বসে যাওয়ার নির্দেষ দিতে পারেন। একবার রাসুল সা. জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন। তার চোখে পড়লো এক ব্যক্তি মানুষকে ডিঙিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি তাকে বললেন,

اجْلِسْ فَقَدْ آذَيْتَ وَآنَيْتَ

বসে পড়, তুমি দেরি করে এসেছ, মানুষকে কষ্টও দিচ্ছ। (সুনান আবু দাউদ)

জুমার খুতবার সময় কথা বলা
জুমার খুতবা শোনা ওয়াজিব। খুতবার সময় অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। রাসুল (সা.) খুতবার সময় চুপ থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে কেউ কথা বললে তাকে ‘চুপ কর’ বলতেও নিষেধ করেছেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন,

إذا قلت لصاحبك ’أنصت‘ يوم الجمعة والإمام يخطب فقد لغوت

জুমার দিন খুতবার সময় যদি তুমি তোমার সঙ্গীকে বলো, চুপ কর, তাহলেও তুমি অনর্থক কথা বললে। (সহিহ বুখারি)

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন,

مَن تكلَّم يوم الجمعة والإمام يخطب فهو كمثل الحمار يحمل أسفارً

যে জুমার দিন ইমাম খুতবা দেওয়ার সময় কথা বলে সে কিতাবের বোঝা বহনকারী গাধার মতো। (মুসনাদে আহমদ)

ফকিহরা বলেন, যেসব কাজ নামাজের মধ্যে হারাম, তা খুতবা চলাকালীন সময়ও হারাম। খুতবার সময় সুন্নত-নফল নামাজ পড়াও বৈধ নয়।

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

ধর্ম ও জীবন

ওমরাহ নিয়ে সুখবর জানালো সৌদি আরব

Published

on

রোজা

এখন থেকে যেকোনো ভিসায় ওমরাহ পালন করা যাবে বলে জানিয়েছে সৌদি আরব। গত বুধবার (২৪ এপ্রিল) দেশটির হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এর বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে।

বার্তায় বলা হয়, যেকোনো ভিসা নিয়ে যেকোনো দেশ থেকে ওমরাহ পালন করা যাবে। আপনার ভিসা যে ধরনেরই হোক, আপনি ওমরাহ করতে পারবেন। ফ্যামিলি, ট্রানজিট, লেবার ও ই-ভিসা হোক, তা দিয়ে ওমরাহ করতে কোনো বাধা নেই।

এদিকে পবিত্র হজের অনুমোদন দেওয়া শুরু করেছে সৌদি আরব। গত ২৪ এপ্রিল থেকে দেশটির স্থানীয় বাসিন্দা ও সেখানে বসবাসকারী মুসলিম বিদেশি নাগরিকদের হজের অনুমোদন দেওয়া শুরু হয়।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হয়। এতে আবাসন সুবিধা বিবেচনায় ৪ হাজার ৯৯ সৌদি রিয়াল থেকে শুরু করে ১৩ হাজার ২৬৫ রিয়াল পর্যন্ত চারটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়।

এদিকে আসন্ন হজের প্রস্তুতি হিসেবে ওমরাহ পালনের সময়সীমা ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। আগামী ২৯ জিলকদ (৬ জুন) এর মধ্যে ওমরাহ যাত্রীদের সৌদি আরব ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া সৌদি আরবে প্রবেশের পর থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত ওমরাহ ভিসার মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়।

এমআই

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

ধর্ম ও জীবন

রিজিক বাড়ানোর ১২ আমল

Published

on

রিজিক বাড়ানোর ১২ আমল

প্রতিটি প্রাণীর জীবনধারণের জন্য আল্লাহ–তাআলার এমন বিশেষ দানকে রিজিক বলা হয়, যা নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী প্রদান করা হয়; আর তার মাধ্যমে প্রাণীটির সার্বিক উপকার সাধিত হয়। রিজিক সেটাই, যা বান্দার উপকারে আসে। উপকারে আসার বিষয়টিও ব্যাপক—ইহকাল ও পরকাল তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কোনো ব্যক্তি মানুষ বা প্রাণী যদি ইহকালে রিজিকপ্রাপ্ত না হয়, পরকালে সে অবশ্যই তা পাবে।

অনুরূপভাবে যা কিছু মানবদেহ ও আত্মার খোরাক মেটায়, তা-ই রিজিক। মোট কথা, আল্লাহ–তাআলার এক বিশেষ অনুগ্রহের নাম রিজিক, যা তিনি মানুষসহ সব প্রাণীকে নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী দিয়ে থাকেন। তবে কিছু আমলের মাধ্যমে রিজিক বৃদ্ধি ঘটে এবং আয়-উপার্জনে বরকত আসে। রিজিক বাড়ানোর ১২ আমল করবেন যেভাবে-

১. তওবা-ইস্তিগফার করা

তওবা-ইস্তিগফার করার মাধ্যমে বান্দার রিজিক বাড়ে। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের বাগবাগিচা এবং নদীনালা দান করবেন।’ (সুরা নুহ, আয়াত: ১০-১২; সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত: ৮২)

ইবনে আব্বাস (রা.)–র বিবরণে আছে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইস্তিগফার করবে; আল্লাহ–তাআলা সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন; সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১,৫১৮; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩,৮১৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৯১, হাদিস: ৭,৬৭৭)

২. পরহেজগারি অবলম্বন এবং আল্লার ওপর ভরসা রাখা

যেসব কাজকর্ম বা আমলে রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটে; তার মধ্যে তাকওয়া-পরহেজগারি অবলম্বন করা এবং তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা অন্যতম। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না ।’ (সুরা সাদ, আয়াত: ৩৫)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থভাবে ভরসা রাখো। তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় (খালি পেটে) বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফেরে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২,৩৪৪; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪,১৬৪)

৩. হজ-ওমরাহ পালন

বারবার হজ ও ওমরাহ পালন করার দ্বারা রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)–র বিবরণে আছে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা লাগাতার হজ ও ওমরাহ পালন করতে থাকো। কারণ, এর দ্বারা এমনভাবে অভাব ও গুনাহ দূরীভূত হয়; যেমনভাবে কামারের হাপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে দেয়।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৮১০; নাসায়ি, হাদিস: ২,৬৩১)

৪. হিজরত করা এবং জিহাদে অংশ নেওয়া

আল্লাহ–তাআলার রাস্তায় হিজরত করা ও জিহাদে অংশগ্রহণ করার দ্বারা রিজিকে বরকত হয়। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহ–তাআলার রাস্তায় হিজরত করবে; জমিনে বহু আশ্রয়স্থল ও সচ্ছলতা পাবে সে।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১০০)

ইবনে উমর (রা.)–র বর্ণনায় আছে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার বর্শার ছায়াতলে আমার রিজিক রাখা হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৫,৬৬৭; বায়হাকি, হাদিস: ১,১৫৪)

৫. নামাজ আদায়

সময়মতো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে রিজিক বাড়ে। নামাজ আদায় করার ফাঁকে ফাঁকে কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করতে হবে; কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করার ফাঁকে ফাঁকে নামাজ নয়। একই সঙ্গে আল্লাহ–তাআলার ইবাদত পালনে নিজেকে ঝামেলামুক্ত করতে হবে। আল্লাহ–তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আর আপনি পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায়ের আদেশ দিন এবং নিজেও তার ওপর অটল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমিই আপনাকে রিজিক দিই। আর মুত্তাকিদের জন্যই শুভ পরিণাম।’ (সুরা ত্বহা, আয়াত: ১৩২)

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ–তাআলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি তোমার অন্তরকে খালি করো। আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত হিসেবে পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার দরিদ্র্যের পথ দূর করে দেব। আর যদি তা না করো; আমি তোমার হাত (দুনিয়ার) ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেবো এবং তোমার অভাব মেটাব না।’ (তিরমিজি, হাদিস–২,৪৬৬; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪,১০৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৮,৬৯৬)

৬. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা

রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম আরেকটি আমল হচ্ছে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা। আত্মীয়ের সঙ্গে সদাচরণ করতে এবং তাঁদের হক যথাযথভাবে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ–তাআলা। (সুরা নিসা, আয়াত: ৩৬; সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৬) আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে আমি বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং আয়ু দীর্ঘ করা হোক—সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ (বুখারি, হাদিস: ৫,৯৮৫; মুসলিম, হাদিস: ৪,৬৩৯)

আরও পড়ুন: যে কারণে আল্লাহ বৃষ্টি বন্ধ করে দেন

৭. আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় এবং দান-সদকা

দান-সদকা করার মাধ্যমে রিজিক বাড়ে। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় করো; তিনি তার বিনিময় দেবেন। তিনিই উত্তম রিজিকদাতা।’ (সুরা সাবা, আয়াত: ৩৯) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করে। তাদের একজন বলে, হে আল্লাহ! দানকারীকে তার দানের জন্য উত্তম প্রতিদান দিন। অপরজন বলে, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন।’ (বুখারি, হাদিস: ১,৪৪২, মুসলিম, হাদিস: ১,০১০)

৮. শোকর আদায় বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

যেসব কাজকর্ম বা আমলে রিজিক বাড়ে, তার মধ্যে অন্যতম হলো আল্লাহ–তাআলা যেসব নিয়ামত দান করেছেন, তার শোকর আদায় করা বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। কারণ, শোকর আদায় করার দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘যদি তোমরা শোকর আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের (নিয়ামত) বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আজাব বড় কঠিন।’ (সুরা ইব্রাহিম, আয়াত: ৭)

৯. বিয়ে করা

আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত এবং তোমাদের দাস–দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদের বিয়ে করিয়ে দাও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, আল্লাহ–তাআলা নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দেবেন। কারণ, আল্লাহ–তাআলা প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা নূর, আয়াত: ৩২) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণির মানুষকে সাহায্য করাকে আল্লাহ–তাআলা নিজ দায়িত্ব হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তিন শ্রেণির অন্যতম হলো—বিয়ে করতে আগ্রহী সেই ব্যক্তি, যিনি বিয়ে করে পবিত্র জীবন যাপন করতে ইচ্ছুক।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১,৬৫৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২,৫১৮)

১০. গরিব-অসহায়ের প্রতি সদয় হওয়া

যেসব কাজকর্ম বা আমলে রিজিক বাড়ে, তার অন্যতম হলো গরিব-অসহায় মানুষের প্রতি সদয় হওয়া। রাস্তাঘাটে গরিব-অসহায় মানুষকে হাত বাড়াতে দেখলেই সবাইকে এক পাল্লায় মেপে খারাপ আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র ইরশাদ করেছেন, ‘তাদের (ধনী লোকদের) সম্পদে প্রার্থী (দরিদ্র) ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ১৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক প্রদান করা হয়।’ (বুখারি, হাদিস: ২,৮৯৬)

১১. আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা

যেসব কাজকর্ম বা আমলে রিজিক বাড়ে, এর মধ্যে অন্যতম হলো আল্লাহ–তাআলার কাছে প্রার্থনা করা। কারণ, আমরা এমন এক স্রষ্টার সৃষ্টি—যিনি চাইলে খুশি; না চাইলে অখুশি। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো; আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা মুমিন, আয়াত: ৬০)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)–এর বিবরণে আছে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হওয়ার পর মানুষের কাছে সোপর্দ করে, অর্থাৎ অভাব দূরীকরণে মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়; তার অভাব মোচন করা হয় না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হওয়ার পর প্রতিকারের জন্য আল্লাহ–তাআলার ওপর নির্ভরশীল হয় (দোয়া-প্রার্থনা করে) অবিলম্বে অথবা বিলম্বে আল্লাহ–তাআলা তাকে রিজিক দান করেন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২,৮৯৬ ও ২,৩২৬; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৪২১৯)

১২. রিজিক অর্জনের চেষ্টায় থাকা

আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জমিনে) ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমা, আয়াত: ১০)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকালবেলা পাহাড়ের দিকে বের হয়। এরপর লাকড়ি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে। মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে তার জন্য এটা উত্তম।’ (বুখারি, হাদিস: ১,৪৮০; মুসলিম, হাদিস: ১,০৪২)

এমআই

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন
রোজা
সারাদেশ6 hours ago

নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাচন স্থগিত

রোজা
শিল্প-বাণিজ্য6 hours ago

এশিয়ায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি বেড়েছে

রোজা
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার7 hours ago

ঢাবিতে বুধবার থেকে সশরীরে ক্লাস শুরু

রোজা
জাতীয়7 hours ago

প্রকৌশলীদের আরো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

রোজা
জাতীয়7 hours ago

উপজেলা নির্বাচনে দেড় লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন

রোজা
জাতীয়8 hours ago

সরকার বিনিয়োগকারীদের সব সুবিধা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর: পরিবেশমন্ত্রী

রোজা
শিল্প-বাণিজ্য8 hours ago

বিশ্ববাজারে টানা দুই বছর কমবে পণ্যের দাম

রোজা
জাতীয়8 hours ago

অর্থ-কারাদণ্ডের বিধান রেখে সংসদে পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা বিল

রোজা
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার8 hours ago

এসএসসির ফল ১২ মে, জানা যাবে যেভাবে

রোজা
অর্থনীতি9 hours ago

মৎস্য খাতের উন্নয়নে দুটি রপ্তানি অঞ্চল চান ব্যবসায়ীরা

রোজা
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার9 hours ago

চাকরির সুযোগ দিচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক

রোজা
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার9 hours ago

ইবিতে ইনোভেশন শোকেসিং বিষয়ক কর্মশালা

রোজা
অর্থনীতি9 hours ago

টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু আগামীকাল

রোজা
আবহাওয়া10 hours ago

১৩ অঞ্চলে ৮০ কি.মি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

রোজা
আন্তর্জাতিক10 hours ago

হজ ভিসায় নতুন শর্ত দিলো সৌদি

রোজা
জাতীয়10 hours ago

৮ মে ১৪১ উপজেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা

রোজা
জাতীয়10 hours ago

দেশে নারীর চেয়ে পুরুষদের বেকারত্ব বেড়েছে

রোজা
জাতীয়10 hours ago

জেদ্দায় ইউএস-বাংলার ফ্লাইট শুরু ১ আগস্ট

রোজা
পুঁজিবাজার11 hours ago

অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের প্রথম প্রান্তিক প্রকাশ

রোজা
পুঁজিবাজার11 hours ago

বিএসইসি চেয়ারম্যানকে ন্যাশনাল লাইফের শুভেচ্ছা

রোজা
জাতীয়11 hours ago

গ্রামে লোডশেডিং না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

রোজা
কর্পোরেট সংবাদ12 hours ago

রূপালী ব্যাংকে ইনোভেশন প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত

রোজা
জাতীয়12 hours ago

মঙ্গলবার ঢাকায় আসছেন ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী

রোজা
জাতীয়12 hours ago

প্রধানমন্ত্রীর কাছে শপথ নিলেন লালমনিরহাট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান

রোজা
জাতীয়12 hours ago

ইলিশের উৎপাদন বেড়ে ৫.৭১ লাখ টন: প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

Advertisement

ফেসবুকে অর্থসংবাদ

২০১৮ সাল থেকে ২০২৩

অর্থসংবাদ আর্কাইভ

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১