জাতীয়
পে-স্কেল নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের নতুন ঘোষণা
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) জাতীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন পে-স্কেলের গেজেট প্রকাশ এবং জানুয়ারি মাস থেকেই পে-স্কেল কার্যকর করার দাবিতে এ সমাবেশ করছেন তারা।
মহাসমাবেশে বাংলাদেশ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদের সভাপতি আবু নাসির খান বলেন, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির কথা থাকলেও ২০১৫ সালের পর এ দেশে সরকারি কর্মচারীদের কোনো বেতন বৃদ্ধি হয়নি। অন্যদিকে গত ১০ বছরে নিত্যপণ্যের মূল্য বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, এই মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে খাপ খেয়ে চলতে পারছেন না সরকারি কর্মচারীরা। বিভিন্ন সংগঠনের নামে পে-স্কেল বাস্তবায়নের জন্য তারা আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছেন।
অন্তর্বর্তী সরকার পে-স্কেল বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে নবম পে-কমিশন গঠন করলেও সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা আগামী সরকার পে-স্কেল বাস্তবায়ন করবেন বলে সরকারি কর্মচারীদের মনে আগুন ধরিয়ে দেন।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকেই এবং জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগে বৈষম্যমুক্ত নবম পে-স্কেল আগামী ১ জানুয়ারি থেকে বাস্তবায়নের দাবি জানান আবু নাসির খান।
মো. ওয়ারেস আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জুনায়েদ আব্দুর রহিম সাকিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ কর্মচারীদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন।
মো. জাকির হোসেন, আমিনুর রহমান ও রোকন উদ্দিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের হাজার হাজার কর্মচারীসহ বিভিন্ন দপ্তরের লক্ষাধিক কর্মচারী মহাসমাবেশে অংশগ্রহণ করেন।
মহাসমাবেশে অন্যদের মধ্যে মো. বাদিউল কবির, মো. মাহমুদুল হাসান, রবিউল জোয়াদ্দার, মো. লুৎফর রহমান, আ. হান্নান, মো. বেলাল হোসেন, খায়ের আহমেদ মজুমদার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
জাতীয়
উত্তরবঙ্গকে এগিয়ে নিতে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
পিছিয়ে পড়া উত্তরবঙ্গকে এগিয়ে নিতে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, উত্তরবঙ্গ বহুদিন ধরেই উন্নয়নের ক্ষেত্রে উপেক্ষিত ছিল। বর্তমান সরকার সেই অবস্থার পরিবর্তনে বদ্ধপরিকর। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানো, শিল্পায়ন এগিয়ে নেওয়া এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি-এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করেই আমরা সমন্বিত পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।
বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) রাতে রংপুরে ৪ দিনের সফরে আসেন তিনি। আগামী রবিবার (৭ ডিসেম্বর) নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে যাবেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে রংপুর নগরীর তাজহাট জমিদার বাড়ি পরিদশনে যান তিনি। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে রংপুর নগরীর সাকিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ভারতের অবস্থানের বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এই বিষয়ে ভারত এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক সাড়া দেয়নি। আমরা তাদের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছি। রাষ্ট্রীয় কূটনীতি সময় সাপেক্ষ বিষয়। কাজটি সতর্কতা ও সম্মানজনক পদ্ধতিতে সম্পন্ন করতে হয়।
বাংলাদেশ সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে তদারকি করছে।’
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উভয় দেশের সংলাপ ও সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, পানি বণ্টন ও আঞ্চলিক যোগাযোগ- এসব ক্ষেত্রেই আলোচনার অগ্রগতি হচ্ছে। আমরা চাইলেই সব সিদ্ধান্ত সঙ্গে সঙ্গে হবে না।
কূটনৈতিকভাবে ধৈর্য ধরে এগোতে হয়। তবে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সরকার কখনোই আপস করবে না।’
দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে উত্তরাঞ্চলের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কৃষি, পশুপালন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, মৎস্য ও হালকা শিল্প-সবক্ষেত্রেই এই অঞ্চলের অসীম সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবায়ন করতে নীতি সহায়তা, অবকাঠামো উন্নয়ন, রাস্তা-রেল যোগাযোগ বাড়ানোসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে উত্তরবঙ্গের পণ্য সহজে পৌঁছে দিতে লজিস্টিকস ও পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকায়নেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে সরকার স্থানীয় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি, কর সুবিধা এবং রপ্তানি প্রণোদনা-সবগুলো বিষয়েই এখন বাস্তব অগ্রগতি রয়েছে। আমরা চাই উত্তরবঙ্গের তরুণেরা এখানেই কর্মসংস্থানের সুযোগ পাক। তাদের ঢাকায় বা অন্য কোথাও ছুটে যেতে না হয়।’
কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়ে তিনি বলেন, দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম আরো জোরদার করা হচ্ছে। আইসিটি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, টেক্সটাইল, সিরামিক ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন শিল্প স্থাপিত হলে ব্যাপক কর্মসংস্থান ঘটবে, আর এর ফলে অঞ্চলটির সামগ্রিক অর্থনীতি প্রাণ ফিরে পাবে। উন্নয়ন শুধু ঢাকার নয়, সারা দেশের। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গকে উন্নয়নের মূলধারায় আনাই এখন আমাদের অগ্রাধিকার। সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের সুফল খুব দ্রুতই জনগণ অনুভব করবে।
অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা অঞ্চলভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা, বিনিয়োগ সুযোগ এবং সীমান্ত বাণিজ্য সম্প্রসারণ সংক্রান্ত নানা প্রস্তাব তুলে ধরেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়ার আশ্বাস দেন।
জাতীয়
সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের মেয়ের নামে দুদকের মামলা
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং নির্ধারিত সময়ে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করার অভিযোগে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী শাজাহান খানের মেয়ে ঐশী খানের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। বৃহস্পতিবার দুদক প্রধান কার্যালয়ে এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এই তথ্য জানান। মামলাটি দায়ের করেন কমিশনের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান।
অভিযোগে বলা হয়, ঐশী খানের নামে অনুসন্ধানে ১ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ৭৫০ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে পারিবারিক ব্যয় হিসেবে দেখা যায় ১১ লাখ ৪৯ হাজার ২৬৪ টাকা। মোট ১ কোটি ৮১ লাখ ৭১ হাজার ৯০৪ টাকার বিপরীতে তার বৈধ আয় পাওয়া যায় মাত্র ১০ লাখ ৫৩ হাজার ৮৯২ টাকা। দুদক জানায়, তার নামে ১ কোটি ৭১ লাখ ১৮ হাজার ৯২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য মেলে। অনুসন্ধানে তার নামে বা বেনামে আরও সম্পদ থাকার সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
দুদক জানায়, অনুসন্ধানের পরে তাকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ দেওয়া হয়। নির্ধারিত ঠিকানায় নোটিশ পৌঁছানো সম্ভব না হওয়ায় ১০ জুলাই সম্পদ বিবরণী ফরম লটকিয়ে জারি করা হয়। পরে তিনি সময় বৃদ্ধির আবেদন করলে নির্ধারিত ২১ কার্যদিবসের সঙ্গে আরও ১৫ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়। তবে বাড়তি সময় পেলেও তিনি বিবরণী দাখিল করেননি।
দুদক জানায়, নির্ধারিত সময়ে সম্পদ বিবরণী না দেওয়া দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪–এর ২৬(২) ধারার আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পাশাপাশি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগে ২৭(১) ধারাও প্রযোজ্য হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জাতীয়
আইএলওর তিন কনভেনশন একসঙ্গে অনুসমর্থন ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত: উপদেষ্টা
শ্রমিকদের অধিকার ও কর্মস্থলের নিরাপত্তা জোরদার করতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তিনটি কনভেনশন অনুসমর্থন এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
অনুসমর্থনের এ ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তকে স্মরণীয় করে রাখতে গতকাল এক উদ্যাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইএলও বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমি, স্টেট গেস্ট হাউস ‘সুগন্ধা’-তে এ উদ্যাপন অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, এ অর্জন কেবল একটি আইনি মাইলফলক নয়-এটি বিশ্বের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা যে আমাদের শ্রমিকদের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের প্রস্তুতির সময়ে এই সিদ্ধান্তটি কৌশলগত ও দূরদর্শী, যা বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের নৈতিক ও টেকসই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে।
উপদেষ্টা জানান, তিনটি কনভেনশনের মধ্যে কনভেনশন নং ১৫৫ (পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য) ও কনভেনশন নং ১৮৭ (পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রচারমূলক কাঠামো) আইএলও’র মৌলিক কনভেনশন। এর সঙ্গে কনভেনশন নং ১৯০ (কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি প্রতিরোধ) অনুসমর্থনের মাধ্যমে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে আইএলও’র ১০টি মৌলিক কনভেনশন অনুস্বাক্ষরকারী দেশে পরিণত হয়েছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া বলেন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কার্যক্রম আরো জোরদার করা হবে, যাতে শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডর মাইকেল মিলার বলেছেন, বাংলাদেশ কর্তৃক তিনটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুসমর্থন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বৃহৎ বাজার তৈরির উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সহযোগিতার ক্ষেত্রকে সুদৃঢ় করতে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকা ইউরোপীয় ইউনিয়ন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশে আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাক্স টুনোন এই অনুসমর্থনকে ‘একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ আখ্যায়িত করেন।
উল্লেখ্য, গত ২২ অক্টোবর যমুনা স্টেট গেস্ট হাউসে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে শ্রম উপদেষ্টা তিনটি কনভেনশনের অনুসমর্থনপত্রে স্বাক্ষর করেন। পরবর্তীতে ২১ নভেম্বর আইএলও’র জেনেভাস্থ সদর দপ্তরে ৩৫৫তম গভর্নিং বডি অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে আইএলও মহাপরিচালকের নিকট অনুস্বাক্ষরের এ দলিল হস্তান্তর করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিষয়ক অ্যাটাসে লিনা খান, টিসিসির সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয়
হাসিনাকে ফেরাতে ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না ভারত: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তাকে দেশে ফেরানোর জন্য ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে এখনো ভারতের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, এ ধরনের বিষয় দ্রুত সমাধান হয়নি। ভারতের পক্ষ থেকে কী প্রতিক্রিয়া আসে, তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত শুধু জানা গেছে, ভারত বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে রংপুর সফরে এসে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমানের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তারেক রহমান সাহেব কবে দেশে ফিরবেন- এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। তার স্ত্রী (ডা. জুবাইদা রহমান) সম্ভবত ঢাকায় পৌঁছেছেন। আজ বেগম জিয়াকে লন্ডনে নেওয়া হচ্ছে না, কারণ জানা গেছে বিমানটিতে টেকনিক্যাল সমস্যা রয়েছে।
আরাকান আর্মির হাতে জেলেদের আটকের বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, আরাকান আর্মিরা কোনো রাষ্ট্রীয় পক্ষ নয়। তাই চাইলে তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সম্ভব হয় না। তবে আমাদের স্বার্থ জড়িত থাকায় বিষয়টি দেখা হচ্ছে। সবকিছু প্রকাশ করা যায় না, তবে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে বা কম ঘটে- সেজন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, চীনের অর্থায়নে ঢাকায় এক হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণের কথা ছিল। সরকার সেটি নীলফামারীতে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিকল্পনা করা হয়েছে এমনভাবে, যাতে রংপুর অঞ্চলের পাশাপাশি ভারত, ভুটানসহ অন্যান্য দেশের মানুষও এখান থেকে চিকিৎসা নিতে পারে। রংপুর অঞ্চলে কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য কম, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কর্মসংস্থান। তাই কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ চলছে।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা চাই দেশের দায়িত্ব নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে এমনভাবে দিয়ে যেতে, যাতে তারা এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই দেশকে কাঙ্ক্ষিত পথে এগিয়ে নিতে পারে। মানুষের অনেক প্রত্যাশা- আমরা যেন সব রিফর্ম শেষ করে যাই। কিন্তু এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। যারা ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসবেন, তারা যেন জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারেন। আমরা আশা করি তারা দেশে সর্বত্র সমতা ও সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করবেন।
এদিকে চার দিনের সফরে রংপুরে এসে আজ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও স্থাপনা পরিদর্শন করবেন। আগামীকাল শনিবার সকালে তিনি রংপুর প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এরপর বিকেলে রংপুর ক্যাডেট কলেজ পরিদর্শন করবেন।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে তিনি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। ওই দিন বিকেলে তিনি সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন।
জাতীয়
প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে লঙ্কান প্রধানমন্ত্রীর ফোন
ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর বাংলাদেশ থেকে জরুরি সহায়তা পাঠানোয় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী ড. হারিনী আমারাসুরিয়া। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় লঙ্কান প্রধানমন্ত্রী অধ্যাপক ইউনূসকে ফোন করেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী আমারাসুরিয়া শ্রীলঙ্কার বিশাল অংশে শত শত মানুষের প্রাণহানি এবং ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘সহায়তা এবং সংহতির প্রকাশের জন্য’ প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।
অধ্যাপক ইউনূস ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি তার সমবেদনা এবং গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। তিনি শ্রীলঙ্কাকে এই সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করার জন্য অতিরিক্ত জরুরি সহায়তা এবং দুর্যোগ-প্রতিক্রিয়া বিশেষজ্ঞ পাঠানোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যা কিছু প্রয়োজন তা করতে আমরা খুশি হবো।
এর আগে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রীলঙ্কায় গত বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ১০ টন ত্রাণ সহায়তা পাঠায় বাংলাদেশ। এই সহায়তার মধ্যে ছিল তাঁবু, শুকনো খাবার, মশারি, ওষুধ, টর্চ লাইট, রেসকিউ হেলমেট এবং গাম বুটের মতো জরুরি সরঞ্জাম। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি দল, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে দেশটির রাজধানী কলম্বোয় পৌঁছান।
সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় দিতওয়ার প্রভাবে শ্রীলঙ্কায় সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের ফলে এখন পর্যন্ত ৩৩৪ জন নিহত এবং অন্তত দু’শতাধিক নিখোঁজ রয়েছেন। ২০ হাজারেরও বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষকে সরকার পরিচালিত অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ফোনালাপের সময়, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। কথোপকথনকালে সিনিয়র সচিব এবং এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন।



