জাতীয়
বিডিআর হত্যাকাণ্ড: স্বাধীন তদন্ত কমিশনের মেয়াদ বাড়লো
বিডিআর হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তে গঠন করা জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের মেয়াদ আরও সাত দিন বাড়ানো হয়েছে। তদন্ত কমিশনের মেয়াদ আগামী ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমানকে সভাপতি করে স্বাধীনতা কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রাথমিকভাবে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তিন মাস সময় দেওয়া হয়। পরে সেই সময় দুই দফা আরও তিন মাস করে বাড়ানো হয়। শেষে বাড়ানো হয় দুই মাস। সেই সময় শেষ হয়েছে ৩০ নভেম্বর।
নতুন করে আরও সাত দিন সময় বাড়ানোর আদেশ ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
কমিশনকে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত ঘটনার প্রকৃতি ও স্বরূপ উদঘাটন করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া তদন্ত কমিশনকে ঘটনাকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অপরাধ সংঘটনকারী, সহায়তাকারী, ষড়যন্ত্রকারী, ঘটনার আলামত ধব্বংসকারী, ইন্ধনদাতা এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট অপরাপর বিষয়সহ দেশি-বিদেশি সংশ্লিষ্ট অপরাধী ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, বিভাগ, সংগঠন ইত্যাদি চিহ্নিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
যদিও স্বাধীন তদন্ত কমিশন গত রোববার (৩০ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।
জাতীয়
‘পোস্টাল ভোট বিডি’ নিবন্ধন চলবে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশ থেকে ভোট প্রদানের জন্য তৈরি ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে প্রবাসী ভোটারদের নিবন্ধন চলবে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
সরকারি চাকরিজীবী যে সব ভোটার নিজ কেন্দ্রে ভোট দিতে পারবেন না, তারাও ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে নিবন্ধন করতে পারবেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন দেশ থেকে ভোট দেওয়ার জন্য ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে প্রবাসী নিবন্ধন করেছেন ১ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৫ জন। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টায় ইসির ওয়েবসাইট থেকে বিষয়টি জানা গেছে।
উল্লেখ্য, অ্যাপটি ১৮ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়েছে। এখনো যারা এই অ্যাপে নিবন্ধন করেননি, তাদেরকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে, আর যারা দেশে আছেন, তাদেরকে প্রবাসে বসবাসরত তাদের নিকটজনকে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করে, ভোটে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডাকযোগে পোস্টাল ব্যালট পেতে হলে প্রবাসীদের স্ব স্ব দেশের সঠিক ঠিকানা প্রদান করতে হবে, প্রয়োজনে বন্ধু/আত্মীয়ের ঠিকানা অথবা নিকটস্থ সুপরিচিত কোনো প্রতিষ্ঠান/ভবনের ঠিকানা ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এমকে
জাতীয়
প্রবাসীদের মোবাইল আনা ও ব্যবহার নিয়ে সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত
দেশে ছুটি কাটাতে আসা প্রবাসীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নতুন এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশে ছুটি কাটাতে এসে ৬০ দিন পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন ছাড়া স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারবেন প্রবাসীরা। তবে, দেশে ৬০ দিনের বেশি থাকলেই মোবাইল ফোন রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে এ তথ্য।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সোমবার (১ ডিসেম্বর) সচিবালয়ের অফিস কক্ষে বৈধভাবে মোবাইল ফোন আমদানির শুল্কহার কমানোর বিষয়ে এনবিআর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়য়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসির মধ্যকার সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন কার্ডধারী প্রবাসীরা তিনটি ফোন আনতে পারবেন। এছাড়া স্মার্টফোনের বৈধ আমদানি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে সভায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রবাসীদের যাদের বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন কার্ড আছে, তারা মোট তিনটি ফোন সাথে আনতে পারবেন। অর্থাৎ নিজের ব্যবহারের হ্যান্ডসেটের অতিরিক্ত দুটি নতুন ফোন সাথে নিয়ে আসতে পারবেন। চতুর্থ ফোনের ক্ষেত্রে ট্যাক্স দিতে হবে। যাদের বিএমইটি কার্ড নেই তারা নিজের ব্যবহারের ফোনের পাশাপাশি অতিরিক্ত একটি ফোন ট্যাক্স ছাড়া আনতে পারবেন।
এক্ষেত্রে মোবাইল ক্রয়ের বৈধ কাগজটি নিজের সাথে রাখতে হবে। কেননা মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন বিমানবন্দরে চোরাচালানিরা সাধারণ প্রবাসীদের চাপাচাপি করে স্বর্ণ, দামি মোবাইল ফোন ইত্যাদির শুল্কহীন পাচারে লিপ্ত আছে। চোরাচালানিদের এই অপচেষ্টা রোধ করার জন্যই ক্রয়কৃত মোবাইলের কাগজ সাথে রাখতে হবে।
স্মার্টফোনের বৈধ আমদানি শুল্ক উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্তও হয়েছে সভায়। এতে বৈধভাবে আমদানি করা মোবাইল ফোনের দাম কমে আসবে। বর্তমানে বৈধ পথে মোবাইল আমদানির শুল্ক প্রায় ৬১ শতাংশ। এটা উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে সরকার কাজ শুরু করেছে।
আমদানি শুল্ক কমালেই বাংলাদেশের ১৩-১৪টি ফ্যাক্টরিতে উৎপাদনকৃত মোবাইলের শুল্ক ও ভ্যাট কমাতে হবে, অন্যথায় কোম্পানিগুলোর বিদেশি বিনিয়োগ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমদানি এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের শুল্ক কমানো এবং তা সমন্বয় নিয়ে বিটিআরসি এবং এনবিআর যৌথভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে একাধিকবার বসেছে এবং দ্রুততার সাথে কাজ শুরু করেছে। আলোচনার ফলাফল দেশের ডিভাইস ইন্ডাস্ট্রির অনুকূল আসবে বলে মন্ত্রণালয় বিশ্বাস করে।
এছাড়া, আপনার অজান্তেই কেউ আপনার নামে নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করছে কিনা সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে। এতে আরও বলা হয়, যে কোনো সাইবার অপরাধ, অনলাইন স্ক্যামিং, অনলাইন ও মোবাইল জুয়া, মোবাইল ব্যাংকিং জনিত অপরাধে আপনার নামে নিবন্ধিত সিমটি ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। অপরাধ এবং রেজিস্ট্রেশন ঝামেলা এড়াতে সবসময় নিজের নামে নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করুন।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, দেশে বিদেশের পুরোনো ফোনের ডাম্পিং বন্ধ হবে। কেসিং পরিবর্তন করে এসব ইলেকট্রনিক বর্জ্য দেশে ঢুকিয়ে যে রমরমা ব্যবসা শুরু করা হয়েছে, সেটা বন্ধ করা হবে। বিমানবন্দর এবং স্থলবন্দরগুলোতে ভারত, থাইল্যান্ড, চীন থেকে আসা ফ্লাইটগুলো শনাক্ত করা হচ্ছে, দ্রুতই কাস্টমস থেকে অভিযান চালানো হবে।
এছাড়াও, প্রস্তাবিত টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ (সংশোধনী) ২০২৫-এ মোবাইল সিমের ইলেকট্রনিক নো ইউর কাস্টমার (ইকেওয়াইসি) এবং আন্তর্জাতিক মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি (আইএমইআই) রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত ডেটা সুরক্ষার নিশ্চয়তা তৈরি করা হয়েছে। নতুন একটি ধারা যোগ করে রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত উপাত্ত লঙ্ঘনকারীদের অপরাধের আওতায় আনা হয়েছে। সুতরাং অযথা ভয় বিস্তারের গুজবে কান না দিতে সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে।
জাতীয়
সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা
লাগাতার কর্মবিরতি ও বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের পর তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে এবার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। একইসঙ্গে উপজেলা ও থানা শিক্ষা অফিস কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেবেন শিক্ষকরা।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) থেকে সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই কর্মসূচি পালন করা হবে। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বিকালে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের নেতারা এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
শিক্ষক নেতারা জানান, অর্থমন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ৩দফা দাবি বাস্তবায়নে ২২দিন অতিবাহিত হলেও অদ্যবধি দৃশ্যমান কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বানে আগামীকাল বুধবার থেকে সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে “কমপ্লিট শাটডাউন” বা তালাবদ্ধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের ৩ দফা দাবি হলো:
১. সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে নির্ধারণ।
২. ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে জটিলতার অবসান।
৩. সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি।
এমকে
জাতীয়
জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর: প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর। জাতি এই ঐতিহাসিক নির্বাচন নিয়ে গর্ব করবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে মিরপুর সেনানিবাসে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স ও আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স-২০২৫ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। তখন দেশের নিরাপত্তা ও বিভিন্ন দূর্যোগে সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করেন প্রধান উপদেষ্টা।
কোর্স সম্পন্নকারীদের উদ্দেশে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বছরব্যাপী নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা জাতীয় উন্নয়ন, নীতি প্রণয়ন ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
তিনি উল্লেখ করেন, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট অধ্যয়নের ক্ষেত্রে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ একটি উৎকর্ষের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ নেতৃত্ব তৈরিতে প্রতিষ্ঠানটি যথাযথ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
এ সময় বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
এ বছর ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স ২০২৫-এ মোট ৯৬ জন কোর্স সদস্য অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৪৯ জন, অসামরিক প্রশাসনের ১৮ জন এবং ভ্রাতৃপ্রতিম ১৮টি দেশের ২৯ জন সদস্য। এ ছাড়াও বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর ৫৬ জন কর্মকর্তা সফলভাবে আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স ২০২৫ সম্পন্ন করেন।
কাফি
জাতীয়
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাঁড়াশি অভিযান, ১১৮৬ ভুয়া শিক্ষক চিহ্নিত
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) সাঁড়াশি অভিযানে ধরা খেলো ১১৮৬ জন ভুয়া সনদধারী শিক্ষক। এদের মধ্যে চার শতাধিক শিক্ষকের সনদ জাল ও ভুয়া এবং তিন শতাধিক শিক্ষকের সনদ অগ্রহণযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব শিক্ষকের কাছ থেকে বেতন-ভাতা হিসেবে তাদের নেওয়া ২৫৩ কোটি টাকা আদায় করতে সুপারিশ করেছে অধিদপ্তর। এ ছাড়া সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেহাত হওয়া ৭৯৩ একর জমি উদ্ধারেও সুপারিশ করেছে ডিআইএ।
ডিআইএ সূত্র জানায়, দেড় দশক ধরে জাল সনদ ধরার ব্যাপারে কার্যকর কোনো অভিযান হয়নি। বরং বহু ক্ষেত্রে জাল সনদ ধরা হলেও ঘুষের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জাল সনদের সাড়ে ১২ হাজার আটকে থাকা ফাইল নতুন করে যাচাই করতে গিয়েই বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ চিত্র, যেখানে ১২ জন পরিদর্শকের নেতৃত্বে একটি চক্র শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে ভুয়া সনদধারীদের ছাড় দিত। এখন এসব সনদ যাচাই করে ধরা হচ্ছে। পাশাপাশি ডিআইএ অডিটের নামে কোনো কর্মকর্তা যেন অর্থ লেনদেন করতে না পারে, সে বিষয়েও কঠোর সতর্কতা জারি করেছে অধিদপ্তর।
নথি বলছে, ডিআইএ গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাল সনদ বিরোধী অভিযানে ১ হাজার ১৮৬ জনকে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে রাজশাহী বিভাগে রয়েছে ৭৭৯ জন, খুলনা বিভাগে ১৭৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৪ জন ও ঢাকা বিভাগে ৭০ জন। পুলিশের সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চ আরও ১৩৪ জন জাল সনদধারী শিক্ষকের তালিকা পাঠিয়েছে। এ ছাড়া মাদ্রাসা অধিদপ্তর আলাদা তদন্ত করে ১২০ জন শিক্ষকের জাল সনদ বাতিল করে তাদের ইনডেক্স কর্তন করেছে। ধরা পড়া জাল সনদের মধ্যে রয়েছে এনটিআরসিএ শিক্ষক নিবন্ধন, জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, রয়েল, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সনদ, যেটাকে নেকটার সনদ বলা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন একাডেমিক সনদও রয়েছে। চিহ্নিত হওয়া জাল সনদের মধ্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সনদ রয়েছে ১৪৮টি ও শিক্ষক নিবন্ধন বা এনটিআরসিএ সনদ ১২০টি। বাকিগুলো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সনদ।
কর্মকর্তা জানান, ডিআইএর প্রধান কাজ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর বা সংস্থায় পরিদর্শন ও নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা। পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা তুলে ধরার পাশাপাশি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এর ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংস্থাটি গত এক বছরে চার শতাধিক শিক্ষকের জাল ও ভুয়া সনদ চিহ্নিত করে তাদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। আরও তিন শতাধিক শিক্ষকের সনদ অগ্রহণযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেহাত হওয়া ৭৯৩ একর জমি উদ্ধারে সুপারিশ, ভুয়া নিয়োগ, অর্থ আত্মসাৎ এবং ভ্যাট, আইটিসহ বিভিন্ন ধরনের আর্থিক অনিয়মের কারণে প্রায় ২৫৩ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরতের সুপারিশ করেছ সংস্থাটি।
জানতে চাইলে ডিআইএ পরিচালক অধ্যাপক এম এম সহিদুল ইসলাম বলেন, এ দপ্তরের মূল কাজ হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক, প্রশাসনিক ও নিয়োগের প্রক্রিয়া ঠিক আছে কি না, তা অডিট করা। পাশাপাশি ওইসব প্রতিষ্ঠানে একাডেমিক সুপারভিশন ঠিক আছে কি না, দেখে সুপারিশ করা। কিন্তু বিগত সময়ে এ কাজটি যথাযথভাবে হয়নি। আমি যোগদান করেই জাল সনদ ধরতে একটি সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছি। সেই অভিযানে চার শতাধিক ভুয়া সনদ, তিন শতাধিক অগ্রহণযোগ্য সনদ চিহ্নিত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সামনে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি জানান, সুপারিশে এসব শিক্ষকের এমপিও বাবদ নেওয়া অর্থ (বেতন-ভাতা) ফেরত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এখন নিয়মানুযায়ী চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার আগে শিক্ষাগত সব সনদ যথাযথভাবে যাচাই করার কথা। কিন্তু জাল সনদ জানার পরও অবৈধ সুবিধা নিয়ে বিষয়টি চেপে যান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। ফলে সনদ জাল হওয়ার পরও তারা এমপিওভুক্ত হয়ে যান। পেতে থাকেন বেতন-ভাতা বাবদ সরকারি অর্থও। তবে এনটিআরসিএর মাধ্যমে অনলাইনে সনদ যাচাইয়ের ব্যবস্থা করার পর জাল সনদের হার কিছুটা কমেছে।
মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক বি এম আব্দুল হান্নান ডিআইএর অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, একজন শিক্ষক যদি জাল সনদে চাকরি নেন, তিনি শুধু সরকারের সঙ্গে প্রতারণা নয়, তার পুরো চাকরি জীবনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করেন। এসব শিক্ষককে ধরতে অধিদপ্তরের যদি কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হয়, আমরা তা-ও করতে প্রস্তুত আছি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (নিরীক্ষা ও আইন) জহিরুল ইসলাম বলেন, জাল সনদধারীদের একটি তালিকা শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে জমা হয়েছে শুনেছি। তালিকায় থাকা শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি ও নিয়োগ বাতিল এবং অর্থ ফেরত নেওয়া হবে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও করতে চাই আমরা, যাতে ভবিষ্যতে কেউ যেন এমন কাজ করার সুযোগ না পায়।
ঘুষ নিয়ে জাল সনদ ছাড়, সাড়ে ১২ হাজার ফাইলে বাণিজ্য: সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিআইএতে জাল সনদধারী শিক্ষকদের ফাইল আটকে রেখে এক ধরনের বাণিজ্যে হতো। কয়েকজন পরিদর্শক সিন্ডিকেট করে জাল সনদের নামে এই জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সূত্র বলছে, এই সিন্ডিকেটে অন্যতম সদস্য ছিলেন ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা সাবেক পরিদর্শক ড. এনামুল হক ও মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম মাসুম। সিন্ডিকেটে আরও ছিলেন পরিদর্শক কে এম শফিকুল ইসলাম, মনকিউল হাসানাত, দেলোয়ার হোসেন, শাহিনুর ইসলাম, সাদিয়া সুলতানা, আশরাফুল রহমান খান, রিপন মিয়া, সরকার মোহাম্মদ শফিউল্লাহ দিদার, কামরুন নাহার, মোহাম্মদ ওয়ায়েছ আলকারনী মুন্সী। তারা প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ফাইল আটকে রেখেছিলেন, যার বেশিরভাগই ছিল ভুয়া সনদধারী শিক্ষকদের ফাইল। এসব ফাইল নতুন করে যাচাই-বাছাই করতে গিয়েই বেরিয়ে এসেছে জালিয়াতির ভয়াবহ চিত্র।
এ বিষয়ে ডিআইএ পরিচালক সহিদুল ইসলাম বলেন, একটি দপ্তরে প্রায় ১২ হাজারের বেশি ফাইল অনিষ্পত্তি অবস্থায় ছিল। এখন সেই ফাইল যাচাই করতে গিয়ে দেখি বেশিরভাগ ফাইল জাল সনদ-সংক্রান্ত। এসব ফাইলে কী হয়েছিল তা বুঝে নেন।
ডিআইএর কড়া সতর্কতা, অভিযোগ জানালে পরিচয় গোপন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) পরিদর্শনের নামে যে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন থেকে সবাইকে কঠোরভাবে সতর্ক থাকতে বলেছে। এক গণবিজ্ঞপ্তিতে অধিদপ্তর জানিয়েছে, তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত অফিস আদেশ ছাড়া কোনো পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না এবং এই কাজের জন্য অর্থ লেনদেন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
ডিআইএ বলেছে, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে তারা সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পরিদর্শন ও নিরীক্ষা পরিচালনা করে। এই অডিট চলাকালীন যদি কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধান অথবা অন্য কোনো ব্যক্তি পরিদর্শন ও নিরীক্ষার নামে কোনো ধরনের টাকা দাবি করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অধিদপ্তরকে মোবাইল বা ইমেইলে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে। অভিযোগ তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় কঠোরভাবে গোপন রাখা হবে বলেও জানানো হয়।
এমকে



