জাতীয়
‘তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার’ মুখে দেশের ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং ১৬ লাখ শিশু মারাত্মক অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের যৌথ বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) খাদ্য মন্ত্রণালয় জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এবং বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার ও সেভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গে একত্রে বহুখাতীয় ও বহুপক্ষীয় এক কর্মশালার মাধ্যমে সর্বশেষ জাতীয় পরিস্থিতি বিশ্লেষণের ফলাফল প্রকাশ করে।
২০২৪ সালে একই বিশ্লেষণে দেখা যায়, যে দেশে ২ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ উচ্চ মাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। সরকার এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে ২০২৫ সালে পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে। তবে এই অগ্রগতি ধরে রাখতে এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন নিশ্চিত করতে আরও জোরদার পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে।
ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) হলো একটি বৈশ্বিক মানদণ্ডভিত্তিক বিশ্লেষণ পদ্ধতি, যা প্রমাণভিত্তিক তথ্য ব্যবহার করে জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তার অবস্থা ৫টি ধাপে শ্রেণিবদ্ধ করে—মিনিমাল (ফেজ ১), স্ট্রেসড (ফেজ ২), ক্রাইসিস (ফেজ ৩), ইমার্জেন্সি (ফেজ ৪) এবং ক্যাটাস্ট্রোফি/দুর্ভিক্ষ (ফেজ ৫)।
২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে পরিচালিত এই বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ সময়কালে বাংলাদেশের ৩৬টি জেলা ও রোহিঙ্গা শিবিরের মোট ৯ কোটি ৬ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ১৭ শতাংশ অর্থাৎ ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ আইপিসি ফেজ ৩ বা তারও উচ্চ পর্যায়ে থাকবে বলে অনুমান করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩ লাখ ৬১ হাজার মানুষ ইমার্জেন্সি (ফেজ ৪) অবস্থায় থাকবে এবং তাদের জরুরি খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন হবে।
সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি দেখা গেছে কক্সবাজারে—বিশেষত উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায়—যেখানে প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ আইপিসি ফেজ ৩ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়াও সুনামগঞ্জ, বরগুনা, বান্দরবান, নোয়াখালী এবং সাতক্ষীরা জেলায় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি বেশি এবং এই এলাকাগুলোর প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ ফেজ ৩ পর্যায়ে শ্রেণিভুক্ত।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে কক্সবাজার ও ভাসানচরে প্রায় ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৬৯২ জন বিশ্লেষিত শরণার্থীদের প্রায় ৪০ শতাংশ ক্রাইসিস বা ইমার্জেন্সি অবস্থায় রয়েছে।
জলবায়ুজনিত ধাক্কা বিশেষ করে ২০২৪ সালের বন্যা জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, পুনরুদ্ধার ধীর করেছে; বাজারে অস্থিরতা ও মুদ্রাস্ফীতি নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়েছে; পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের চাহিদা বাড়লেও মানবিক সহায়তার তহবিল কমে গেছে। এসবই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।
পুষ্টি পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। ৬–৫৯ মাস বয়সী প্রায় ১৬ লাখ শিশু ২০২৫ জুড়ে তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে বা ভুগতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৪৪ হাজার শিশুর অবস্থা মারাত্মক অপুষ্টি (এসএএম), যাদের জরুরি চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন। একই সময়ে প্রায় ১.৪ মিলিয়ন শিশু মাঝারি পর্যায়ের অপুষ্টিতে ভুগবে বলে পূর্বাভাস। এছাড়া ১ লাখ ১৭ হাজার গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীও তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছেন।
এটাই প্রথমবার বাংলাদেশে আইপিসি অ্যাকিউট মালনিউট্রিশন বিশ্লেষণ করা হলো, যা ৭টি বিভাগের ১৮টি বিপদাপন্ন জেলা এবং রোহিঙ্গাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতির বাস্তব চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরেছে এই সর্বশেষ আইপিসি বিশ্লেষণ। ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং ১৬ লাখের বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।
তিনি আরও বলেন, আজকের এই কর্মশালা বিশ্লেষণের ফলাফল শুধু পর্যালোচনা করার জন্য নয়, বরং সেগুলোকে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনায় রূপান্তর করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ সরকার এই তথ্যকে নীতি প্রণয়নে ব্যবহার করবে এবং জাতিসংঘ ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
বিশ্লেষণে যে সুপারিশগুলো উঠে এসেছে, তার মধ্যে রয়েছে জরুরি সহায়তা প্রদান, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য শক-রেসপন্সিভ সেফটি নেট সম্প্রসারণ, কৃষি ও পশুপালন খাতে জরুরি সহায়তা, বন্যাকবলিত এলাকায় জীবিকা পুনরুদ্ধারে সহায়তা ইত্যাদি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মোহাম্মদ জাবের বলেন, আইপিসি বিশ্লেষণের ফলাফল বিশেষ করে গ্রামীণ ও উপকূলীয় সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগের কারণ, যাদের জীবিকা কৃষি ও মৎস্য খাতের ওপর নির্ভরশীল।
তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই মিলে খাদ্যব্যবস্থা শক্তিশালী করতে, পুষ্টিকর খাবারের প্রাপ্যতা বাড়াতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে যেতে চাই। দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে আমাদের দ্রুত ও সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি যেন কেউ পিছিয়ে না থাকে।
সরকারি সংস্থা, জাতিসংঘ, এনজিও এবং প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতার মাধ্যমে এই আইপিসি বিশ্লেষণ সম্পন্ন হয়েছে। আজকের কর্মশালায় বিভিন্ন অংশীজন বিশ্লেষণের ফলাফল নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, নীতি সমন্বয় এবং জাতীয় পরিকল্পনায় ফলাফল প্রতিফলনের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
জাতীয়
ফয়সালসহ সংশ্লিষ্টদের ব্যাংকে ১২৭ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন
জুলাই বিপ্লবী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুটার হিসেবে মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাব লেনদেন বিশ্লেষণে ১২৭ কোটি টাকার অধিক অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।
বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে সিআইডি এই অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়ায় ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২’ অনুযায়ী অর্থপাচার সংক্রান্ত অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাতে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আবু তালেব বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সিআইডি জানায়, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ওসমান হাদি মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরেই সিআইডি এ ঘটনার নানাদিক নিয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থলে দ্রুততম সময়ে ক্রাইমসিন ইউনিটের উপস্থিতি, সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ এবং ঘটনাস্থল থেকে ঘাতকের ব্যবহৃত গুলির খোসা উদ্ধার ও পরবর্তীতে উদ্ধারকৃত বিভিন্ন আলামত ফরেনসিক পরীক্ষাসহ এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের নানাদিক নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে সিআইডি। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত ব্যাংক হিসাবের তথ্য নিয়ে মানিলন্ডারিং অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে সিআইডি।
ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ওরফে রাহুল এখনো গ্রেপ্তার না হলেও মামলার আলামত গোপন ও অভিযুক্তকে পালাতে সহায়তার অভিযোগে তার পরিবারের সদস্যসহ একাধিক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সংস্থাটি জানায়, গ্রেপ্তার অভিযানের সময় প্রাপ্ত বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবইয়ের তথ্য সিআইডি গুরুত্ব নিয়ে পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ শুরু করে। এতে দেখা যায়, অভিযুক্ত ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু চেক বইয়ে বিভিন্ন পরিমাণ অর্থের কথা উল্লেখ রয়েছে। চূড়ান্ত লেনদেন সম্পন্ন না হওয়া এসমস্ত রেকর্ডের সমষ্টিগত মূল্য প্রায় ২১৮ কোটি টাকা।
তবে সিআইডির প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, অভিযুক্ত ও তার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ১২৭ কোটি টাকার বেশি অস্বাভাবিক লেনদেন সংঘটিত হয়েছে, যা মানিলন্ডারিং, সংঘবদ্ধ অপরাধ এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম সংক্রান্ত অর্থায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে। বিষয়টি আমলে নিয়ে সিআইডি মানিলন্ডারিং বিষয়ে পৃথক অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে।
মূল অভিযুক্ত ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে দ্রুততম সময়ে যেন বাজেয়াপ্ত করা যায় সেজন্যও সিআইডি যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে উল্লেখ করে সংস্থাটি জানায়, পাশাপাশি এই সকল অর্থের মূল সরবরাহকারী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করার জন্য সিআইডির অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে পরিকল্পনা, অর্থায়ন ও অস্ত্র সরবরাহে কোনো সংঘবদ্ধ ও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক সক্রিয় ছিল কি না সে বিষয়েও সিআইডির একাধিক টিম কাজ করছে।
অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি মূলহোতাকে গ্রেপ্তার এবং পুরো অপরাধচক্র উন্মোচনে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।
চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা ওসমান হাদি পরে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ গড়ে তুলে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আলোচনায় আসেন। বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শোতেও নিয়মিত আমন্ত্রণ পেতে থাকেন তিনি।
তার যুক্তিতর্কের অনেক ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। তিনি আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার মাসখানেক আগে হত্যার হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন ওসমান হাদি। তিনি গত নভেম্বরে নিজের ফেসবুক পেজে বলেছিলেন, দেশি-বিদেশি অন্তত ৩০টি নম্বর থেকে তাকে ফোনকল করে এবং মেসেজ পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ওই পোস্টে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ‘খুনি’ ক্যাডাররা তাকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখছে। তবে প্রাণনাশের আশঙ্কা সত্ত্বেও ইনসাফের লড়াই থেকে পিছিয়ে যাবেন না তিনি।
১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট রোড এলাকায় প্রচারে যাওয়া ওসমান হাদিকে গুলি করে মোটরসাইকেলে আসা দুই সন্ত্রাসী। রিকশায় থাকা হাদি মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর তাকে নেওয়া হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। অবস্থা গুরুতর দেখে সেখান থেকে হাদিকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যায় সরকার। চিকিৎসকদের সর্বাত্মক চেষ্টার পরও মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ে হেরে যান হাদি। ১৮ ডিসেম্বর রাতে তার মৃত্যুর খবর জানান চিকিৎসকরা।
মৃত্যুর পর ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ওসমান হাদির লাশ বাংলাদেশে আনা হয়। সেখান থেকে লাশ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হিমঘরে নেওয়া হয়। এরপর গতকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় লাখো জনতার অংশগ্রহণে তার জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়। জানাজার পর তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে চিরসমাহিত করা হয়।
ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল সন্দেহভাজন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফয়সল করিম মাসুদ ও তার সহযোগী আলমগীর শেখ। তারা ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে সেদিনেই খবর ছড়ানো হয়। যদিও গোয়েন্দা পুলিশ শুরু থেকেই এ বিষয়ে সন্দেহের কথা জানিয়ে আসছে। তারা বলছে, অভিযুক্তদের দেশের বাইরে চলে যাওয়ার নির্ভরযোগ্য তথ্য এখনো হাতে নেই।
এমকে
জাতীয়
ইসির নিবন্ধন সনদ পেল আমজনতার দল
আমজনতার দলের নিবন্ধন সংক্রান্ত দাবি আপত্তি নিষ্পত্তি করে চূড়ান্তভাবে নিবন্ধন সনদ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এর স্বাক্ষরিত নিবন্ধন সনদটি আমজনতার দলের সাধারণ সম্পাদক তারেক রহমানকে হস্তান্তর করে ইসি।
এর আগে দুটি দাবি আপত্তির বিষয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর শুনানি করে নির্বাচন কমিশন। ইসি জানায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর চ্যাপ্টার ৬এ এর বিধান অনুযায়ী নিবন্ধনের শর্তাদি পূরণ করায়, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্ট হয়ে আমজনতার দলকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন করেছে।
উল্লেখ্য, গত ৪ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছিলেন, নিবন্ধন পাওয়ার শর্তপূরণ করায় তারেকের আমজনতার দলকে নিবন্ধন দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কারও আপত্তি রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আগামী ৯ ডিসেম্বর সময় দিয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ে আপত্তি আসায় দলটির শুনানি করে সন্তুষ্ট হয়ে নিবন্ধন দিল নির্বাচন কমিশন।
এমকে
জাতীয়
হাদির হত্যাকারী সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই: অতিরিক্ত আইজিপি
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকারী ফয়সাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত আইজিপি খন্দকার রফিকুল ইসলাম। রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, ফয়সালের শেষ অবস্থান নিয়ে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। এটা পেতে আমাদের বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তবে সে যে দেশের বাইরে চলে গেছে, এমন নির্ভরযোগ্য তথ্য পাইনি। অনেক সময় অপরাধীদের অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়।
এ হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলা হচ্ছে। কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন কি না– এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা এখনো স্পেসিফিক কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা পাইনি। তবে আমরা সঠিক তথ্য পেতে চেষ্টা করছি।
এ সময় ডিবি প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক ধারণা হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ হত্যাকাণ্ড হতে পারে। এখানে ব্যক্তিগত কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে হয়নি। ঘটনার শুরু থেকে আমরা মাঠে ছিলাম। সব এজেন্সি সমন্বিতভাবে কাজ করেছি। এটাকে আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সম্ভাব্য সবগুলো দিক দেখছি।
এমকে
জাতীয়
ওসমান হাদি দেশের জন্য নির্ভীক পথপ্রদর্শক: আইন উপদেষ্টা
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলছেন, ওসমান হাদি দেশের জন্য নির্ভীক পথপ্রদর্শক ছিল। সে দেখিয়ে দিয়ে গেছে কীভাবে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হয়। কথা বলতে গিয়ে সে নিজেকে জাতির জন্য উৎসর্গ করেছে। এ জাতি তাকে মনে রাখবে আজীবন। হাদির জানাজায় এত মানুষের সমাগম বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কাঞ্চনে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ৭ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি বলেন, শহীদ হাদির জন্য দোয়া চাই আল্লাহ তায়ালা যেন হাদিকে জান্নাতের সর্বোচ্চ জায়গায় স্থান দেন। হাদি এই নস্যাৎ পৃথিবীর চেয়ে ভালো জায়গায় অবস্থান করছে বলে বিশ্বাস করি ৷ হামলাকারীর চেয়ে দেশে সৃষ্টিশীল মানুষের সংখ্যা বেশি। দেশে আত্মত্যাগকারী তরুণের সংখ্যা অনেক বেশি।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ বিগত ১৭ বছর দেশের আইনব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থাসহ অর্থনীতিকে নানাভাবে ভঙ্গুর করে দিয়েছিল বিগত সরকার। ফলে ২৪-এর ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষ একটি শোষক গোষ্ঠী থেকে মুক্তি পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফয়েজ, মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, স্টেট ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ডা. এ এম শামীম, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. আক্তার হোসেন খাঁন প্রমুখ।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি বিভাগের ৬৭২ জনকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে তিনজন শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর’স গোল্ড মেডেল, চারজন শিক্ষার্থীকে ভাইস-চ্যান্সেলর সিলভার মেডেল এবং ২০ জন শিক্ষার্থীকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
এমকে
জাতীয়
এখন থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলবে: ইসি সানাউল্লাহ
নির্বাচন কমিশনার (র) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে এখন থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলবে।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
সানাউল্লাহ বলেন, অভিযান চলমান আছে। আমরা বলেছি এটা নিয়মিতভাবে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানানো হবে।
এর আগে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক পর্যালোচনায় বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। নির্বাচন ভবনে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে এই বৈঠক শুরু হয়।
সিইসির সভাপতিত্বে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, তিন বাহিনী প্রধান বা তাদের উপযুক্ত প্রতিনিধি, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি), এনএসআই, ডিজিএফআই, কোস্টগার্ড, বিজিবি, র্যাব, আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার অংশ নেন।
বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
এরও আগে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান।
ভোটের তফসিল ঘোষণার পর তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের এটি প্রথম সাক্ষাৎ।
এমকে




