অর্থনীতি
সরকার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায়নি: বাণিজ্য উপদেষ্টা
সরকার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায়নি বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর পূর্বাচলে এক অনুষ্ঠানে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ানো ইস্যুতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
এদিকে, গতকাল (সোমবার) বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৬ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া প্রতি লিটার পাম ওয়েলের দাম বাড়ানো হয়েছে ১৩ টাকা করে। ৩ টাকা বাড়নো হয়েছে খোলা সয়াবিন তেলের দাম।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
গত আগস্টে ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ নিয়ে সরকার ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হয়। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে ব্যবসায়ীরা ১০ টাকা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাদের মাত্র এক টাকা বাড়ানোর অনুমতি দিয়েছিল। এতে করে ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হন এবং সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এ বিষয়ে কোনো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গনমাধ্যমকে জানাননি।
নতুন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে ঠিক পরের দিন উপদেষ্টা জানালেন, তেলের দাম বাড়ানো হয়নি। অর্থাৎ, বাজারে তেলের দাম বাড়নোর প্রস্তাব অনুমোদন হয়নি।
কাফি
অর্থনীতি
নাফিস সরাফাতসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৬১৩ কোটি টাকার মানিলন্ডারিং মামলা
পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিস সরাফাতসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৬১৩ কোটি টাকার মানিলন্ডারিং মামলা দায়ের করেছে সিআইডি। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জসীম উদ্দিন খান বলেন, সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম পরিচালিত প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখ যায়– চৌধুরী নাফিস সরাফাত তার সহযোগী ডক্টর হাসান তাহের ইমামকে সঙ্গে নিয়ে ২০০৮ সালে রেইস ম্যানেজমেন্ট পিসিএল নামে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির লাইসেন্স গ্রহণ করেন। উক্ত প্রতিষ্ঠানটি ২০০৮ সালে যাত্রা শুরুর পর ২০১৩ সালের মধ্যেই ১০টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে সম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পায়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অধীনে ১৩টি ফান্ড রয়েছে। মূলত এ মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে অবৈধ ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করেছিলেন চৌধুরী নাফিস সরাফাত ও তার সহযোগীরা। চৌধুরী নাফিস সরাফাত তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদ ও সহযোগী ডক্টর হাসান তাহের ইমামের সঙ্গে মিলে ফান্ডের অর্থ বিনিয়োগ করে তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) শেয়ার কেনেন এবং পরবর্তীতে ব্যাংকটির পর্ষদের পরিচালক পদ লাভ করেন। এমনকি কৌশলে চৌধুরী নাফিস সরাফাত তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদকে সাউথইস্ট ব্যাংকেরও পরিচালক বানান।
তিনি বলেন, এরপর অভিযুক্তরা চতুরতার সঙ্গে ফান্ডের টাকায় মাল্টি সিকিউরিটিজ নামক একটি ব্রোকার হাউজ ক্রয় করে তার ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে প্রতারণাপূর্বক ফান্ডের অর্থ হাতিয়ে নেন। এছাড়াও চৌধুরী নাফিস সরাফাত পদ্মা ব্যাংকের টাকা দিয়ে পদ্মা ব্যাংক সিকিউরিটিজসহ তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি নামীয় ফান্ড ক্রয়/বিনিয়োগ করেন, যার অধীন একাধিক ফান্ড রয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাল-জালিয়াতির ব্যাপ্তি এতই বিস্তৃত ছিল যে, হিসাব বিও ও অন্যান্য ব্যাংক হিসাব খোলা ও পরিচালনাসহ রাজউক থেকে একাধিক প্লট হাতিয়ে নিয়ে বিভিন্ন নামীয় প্রতিষ্ঠান/বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে বিদেশে অর্থ পাচারের পথ সুগম করেছিলেন অভিযুক্তরা।
তিনি আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে চৌধুরী নাফিস সরাফাত ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বেস্ট হোল্ডিংসের বন্ডে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে চাপ প্রয়োগ, বিদেশে অর্থ পাচার এবং একাধিক বাড়ি–ফ্ল্যাট কেনাসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশিত হয়। এসব অভিযোগ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতেই সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অনুসন্ধান শুরু করে।
অনুসন্ধানকালে চৌধুরী নাফিস সরাফাত, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদ, ছেলে রাহীব সাফওয়ান সারাফাত চৌধুরী এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে তফসিলি ব্যাংকসমূহে মোট ৭৮টি হিসাব পরিচালিত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। ঐ হিসাবগুলোতে মোট প্রায় ১৮০৯.৭৫ কোটি টাকা জমা এবং প্রায় ১৮০৫.৫৮ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। তন্মধ্যে, চৌধুরী নাফিস সরাফাত, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদ এবং ছেলে রাহীব সাফওয়ান সারাফাত চৌধুরীর নামে মোট ২১টি হিসাব চলমান রয়েছে, যার বর্তমান স্থিতি মাত্র ২৯.২১ লাখ টাকা। এ সব হিসাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা লেনদেন হওয়ায় ঐ হিসাবগুলোর তথ্য/দলিলাদি সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
সিআইডির মুখপাত্র বলেন, অনুসন্ধানকালে চৌধুরী নাফিস সরাফাত ও তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদের মালিকানাধীন একাধিক প্রতিষ্ঠানের ১৫টি যৌথ হিসাব রয়েছে। যেখানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা জমা রয়েছে। এছাড়া নাফিস সরাফতের ছেলে রাহীব সাফওয়ান সারাফাত চৌধুরীর নামে বিদেশে বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব যেমন– মোট ৭৬টি হিসাব পরিচালনা করার তথ্য পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, চৌধুরী নাফিস সরাফাত এর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই এ ৩ রুমের একটি ফ্ল্যাট ও ৫ রুমের ১টি ভিলা রয়েছে। সিঙ্গাপুরে হাসান তাহের ইমামের মালিকানাধীন একটি কোম্পানিরও ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করার সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে বাংলাদেশে তাদের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য পেয়েছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
জসীম উদ্দিন খান বলেন, অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ১ হাজার ৬১৩ কোটি ৬৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা পাচারের অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) গুলশান থানায় তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা করে সিআইডি।
অর্থনীতি
ব্রয়লারের দাম বাড়লো, অপরিবর্তিত মাছ-মাংস
এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। একই সঙ্গে লেয়ার, সোনালীসহ অন্যান্য মুরগির দামও আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া মাছ-মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে, বাজারে আগের তুলনায় ইলিশ মাছের পরিমাণ বেড়েছে। এর মধ্যে মাঝারি আকারের ইলিশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকায়।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর নিউমার্কেটের বনলতা বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭০ টাকা। সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকার মধ্যে, দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকায়, আর লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। বাজারে দাম বাড়ার মূল কারণ হিসেবে বিক্রেতারা ফিডের দাম ও খামার পর্যায়ের অন্যান্য খরচ বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন।
মুরগি বিক্রেতা আজাদ মিয়া বলেন, শুনেছি গত এক সপ্তাহে ফিডের দাম অনেক বেড়ে গেছে। আগে আমরা কেজি প্রতি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকায় বিক্রি করতাম, এখন সেটি ১৯০ টাকা। শুধু ফিডই নয়, খামারে খরচ, শ্রমিকদের মজুরি ও পরিবহন খরচও অনেক বেড়ে গেছে। আমাদের তো কিছু করার নেই। কারণ, আমরা পাইকারি মার্কেট থেকে মুরগি কিনি। সেখানেই দাম বাড়তি। যার প্রভাব খুচরা বাজারে পড়েছে।
হাসান উদ্দিন নামের অন্য আরেক বিক্রেতা বলেন, সোনালী ও দেশি মুরগির দাম বেশি থাকায় অনেকে ব্রয়লার মুরগি কিনতে আসেন। এখন সেটার দাম কিছুটা বেড়েছে। আমরা চাইলেই দাম কমাতে পারি না। কারণ, পাইকারিতে চড়া দামে বিক্রি করে। তবে সম্প্রতি যদি বাজারে সরবরাহ বাড়ে তবে দামও স্থিতিশীল হবে এবং সাধারণ মানুষও সুবিধা পাবেন।
অন্যদিকে, মাছের বাজারে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি পড়ছে ইলিশে। মাঝারি আকারের ইলিশ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকায়। বড় আকারের ইলিশের কেজি ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
বনলতা কাঁচাবাজারের মাছ বিক্রেতা ইব্রাহিম আলী বলেন, ইলিশের সরবরাহ এখন বেড়েছে। তবে জ্বালানি ও পরিবহন খরচ বেশি হওয়ার সুবাদে দাম কমছে না। মাঝারি ইলিশের চাহিদা অনেক বেশি। কেউ নিতে চাইলে কম-বেশি দরদামে দিয়ে দিচ্ছি।
তবে ইলিশ ছাড়াও অন্যান্য মাছের দামও চড়া। রুই, কাতল ও মৃগেল আকার ও মানভেদে কেজিতে ৩০০ থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। পাঙ্গাস ও তেলাপিয়ার মতো তুলনামূলক কম দামের মাছও ১৯০-২৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।
এছাড়া, মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, সিলকার্প মাছ ২৫০-৩০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৫০০-৭০০ টাকা, কালিবাউশ মাছ ৪৫০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ছোট মাছের মধ্যে কাঁচকি মাছ ৪৫০ টাকা, মলা মাছ ৩০০ টাকা, পাবদা মাছ আকারভেদে ৩০০-৬০০ টাকা এবং গলদা চিংড়ি আকারভেদে ৬৫০-১০০০ টাকা কেজি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
অর্থনীতি
ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ সাড়ে ৯ লাখ কোটি টাকার ঘরে, বিনিয়োগে চাপ বাড়ছে: পিআরআই
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে পুনঃতফসিল, পুনর্গঠন ও খেলাপি ঋণ মিলিয়ে মোট ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৯ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে বলে সতর্ক করেছে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান বুধবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর বনানীতে আয়োজিত “মান্থলি ম্যাক্রোইকনমিক ইনসাইটস (এমএমআই)” অনুষ্ঠানে এই তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি জানান, বর্তমানে খেলাপি ঋণ ৬.৪ লাখ কোটি টাকা— যা ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের প্রায় ৩৬ শতাংশ। তবে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের আকার আরও বড়, যা সাড়ে ৯ লাখ কোটি টাকার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে; এই হিসাব দেখায় যে এসব ঋণ পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা খুবই কম।
ড. আশিকুর রহমান বলেন, উচ্চ খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে অন্তত ১৬টি ব্যাংক নতুন ঋণ বিতরণে অক্ষম হয়ে পড়েছে। এতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমছে, বেকারত্ব বাড়ছে এবং সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে যাচ্ছে। তাঁর মতে, খেলাপি ঋণের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি শেষ পর্যন্ত চারটি চাপ তৈরি করে— উচ্চ সুদহার, বাড়তি মূল্যস্ফীতি, কম প্রবৃদ্ধি এবং দুর্বল বিনিয়োগ।
সেমিনারটির সভাপতিত্ব করেন পিআরআই চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ এখন বিপজ্জনকভাবে কমে গেছে। “অনেকে নতুন বিনিয়োগের জন্য নয়— পুরোনো ঋণ স্ট্যান্ডার্ড রাখতে নতুন ঋণ নিচ্ছেন।”
তিনি অভিযোগ করেন, অর্থনীতির সংকট স্পষ্ট হলেও নীতিনির্ধারকেরা সে বার্তা শুনছেন না। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন— ৭ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬.৪৪ লাখ কোটি টাকা। তবে পারভেজ মনে করেন, প্রকৃত পরিমাণ আরও বেশি। ঋণ পুনঃতফসিলের সময়সীমা ৬ মাস থেকে কমিয়ে ৩ মাস করা হলে খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
ব্যবসায়ীরা দায়ী— এমন ধারণার বিরোধিতা করে পারভেজ বলেন, “জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু সরবরাহ স্থিতিশীল করা যায়নি। গ্যাস–নির্ভর শিল্পে উৎপাদন ৪০ শতাংশে নেমেছে— এটি কি ব্যবসায়ীদের দোষ?”
তিনি আরও বলেন, এনবিআরের ৫৫ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ব্যবসায়িক ব্যয় বাড়াবে, বিশেষ করে উৎসে কর কর্তনের মাধ্যমে। সরকারের তড়িঘড়ি সংস্কারের সমালোচনা করে তিনি জানান, “এই পরিবর্তন এনবিআরকে আরও জটিল অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে।”
সমাপনী বক্তব্যে চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার বলেন, অর্থনীতি কিছুটা মন্থর হলেও স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত আছে। কর্মসংস্থান বাড়াতে আরও সহনশীল নীতি প্রয়োজন। পাল্টা শুল্কের ফলে রপ্তানি সামান্য কমলেও বাংলাদেশ এখনো ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় ভালো অবস্থানে আছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অর্থনীতি
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়াল ৩১.১০ বিলিয়ন ডলার
দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা বেড়ে এখন ৩১১০০ দশমিক ১৬ বা ৩১ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী এ তথ্য জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্যানুযায়ী, ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ৩১১০০ দশমিক ১৬ মিলিয়ন ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২৬৩৯৩ দশমিক ০৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এর আগে গত ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩১০৮৬ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২৬৩৭৮ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
উল্লেখ্য, নিট রিজার্ভ গণনা করা হয় আইএমএফের বিপিএম-৬ পরিমাপ অনুসারে। মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বিয়োগ করলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ পাওয়া যায়।
এমকে
অর্থনীতি
এনবিআরের ১৭ কর্মকর্তার সম্পদ জব্দ ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ১৭ জন কর্মকর্তার সম্পদ জব্দ ও বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে কর ও শুল্ক ফাঁকিতে সহায়তা করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) দুদকের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, অভিযুক্তদের সম্পদের উৎস যাচাই করতে বিভিন্ন দফতরে এরইমধ্যে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে অবৈধ সম্পদের সত্যতা পাওয়ায় ১৭ কর্মকর্তার কাছেই সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ পাঠিয়েছে দুদক।
এই ১৭ কর্মকর্তার তালিকায় আছেন, এনবিআরের আয়কর নীতি বিভাগের সদস্য মো. লুৎফুল আজিম ও কে এম বদিউল আলম, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (সিআইসি) এ মো. আলমগীর হোসেন, যুগ্ম কমিশনার মো. তারিক হাসান, অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কুণ্ডু, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার কাজী মো. জিয়াউদ্দিন, রেলওয়ে কাস্টমসের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান, বৃহৎ করদাতা ইউনিট (ভ্যাট)–এর অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুর রশিদ মিয়া, কর অঞ্চল–১৬ এর উপ কর কমিশনার মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম ও কর অঞ্চল–৮ এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা।
এছাড়া বিসিএস কর একাডেমির যুগ্ম কর কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দিন খান, কর অঞ্চল–১৬ এর উপ কর কমিশনার মোনালিসা শাহরিন সুস্মিতা, নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (ভ্যাট)–এর অতিরিক্ত কমিশনার হাসান তারেক রিকাবদার, অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ মামুন মিয়া, গোয়েন্দা ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার সাহেলা সিদ্দিক, কর আপিল ট্রাইব্যুনালের কমিশনার লোকমান আহমেদ এবং কর অঞ্চল–৩ এর কমিশনার এম এম ফজলুল হকের নামও রয়েছে।
গত ১৯ আগস্ট এই ১৭ জন কর্মকর্তার সম্পদ বিবরণী চায় দুদক। তথ্যানুসন্ধানে তাদের অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়ার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় দুদক।
রাজস্ব বোর্ড দুই ভাগ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে চলতি বছরের জুন মাসে এনবিআরে সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে আন্দোলন শুরু হয়। এনবিআরের চেয়ারম্যানের অপরসারণ দাবিতে এক সপ্তাহের কলম বিরতি, অবস্থান কর্মসূচি ও সবশেষ দুই দিনের কমপ্লিট শাটডাউন পালনের পর কাজে ফেরেন আন্দোলনকারীরা। সেই সময় আন্দোলনরত ১৬ এনবিআর কর্মকর্তার ‘দুর্নীতির’ তথ্যানুসন্ধান শুরু করে দুদক।



