জাতীয়
সায়েন্সল্যাবে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন–২০২৫’ সংশোধনের দাবিতে এবং সোমবার (১৩ অক্টোবর) ঢাকা কলেজে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেছেন ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বেলা ১১টা ২৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড় তারা অবরোধ শুরু করেন। প্রায় এক ঘণ্টা পর অধ্যক্ষের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে ক্যাম্পাসে ফিরে যান। এরপর বন্ধ থাকা যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
অবরোধ চলাকালে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস ও উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক পারভীন সুলতানা হায়দার ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। পরে শিক্ষার্থীরা তাদের অনুরোধে সায়েন্সল্যাব মোড় থেকে সরে গিয়ে কলেজে ফিরে যান।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, নতুন ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন–২০২৫’-এর বর্তমান ধারায় ঢাকা কলেজের ইন্টারমিডিয়েট বিভাগ বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির শতবর্ষের ঐতিহ্য ক্ষুণ্ন হবে বলে তারা দাবি করেন।
উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন বলেন, ‘ঢাকা কলেজের ইন্টারমিডিয়েট বিভাগ শুধু একটা শিক্ষা ধাপ নয়, এটা আমাদের ইতিহাসের অংশ। এই বিভাগ তুলে দিলে কলেজের ঐতিহ্য ধ্বংস হয়ে যাবে। ’
প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা চাই না আমাদের পরের প্রজন্ম এই কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সুযোগ হারাক। শত বছরের পুরোনো এই ধারা বজায় রাখা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় করা যেতে পারে, তবে ঐতিহ্য মুছে দিয়ে নয়। ’
অবরোধের কারণে প্রায় এক ঘণ্টা সায়েন্সল্যাব এলাকায় যান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে আজিমপুর, নীলক্ষেত, শাহবাগ, ধানমন্ডি, কলাবাগান ও মোহাম্মদপুরসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
এর আগে সোমবার (১৩ অক্টোবর) ঢাকা কলেজে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন–২০২৫’ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা শুরুর সময় শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরে ‘দালাল’ মন্তব্যের অভিযোগে এক শিক্ষার্থীকে শিক্ষকরা ধরে কমনরুমে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করে সহপাঠীকে ছাড়িয়ে আনেন।
এ সময় উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও স্নাতকের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
জাতীয়
টঙ্গীতে জোড় ইজতেমায় মুসল্লির মৃত্যু
গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে চলমান জোড় ইজতেমায় অংশ নিতে আসা এক মুসল্লির ইন্তেকাল হয়েছে।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৪টার দিকে ইজতেমা ময়দানে মৃত্যুবরণ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
ইজতেমার আয়োজক তাবলিগের শুরায়ি নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বিশ্ব ইজতেমার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে গাজীপুরের টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে ৫ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা শুরু হয়েছে। তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ শুরায়ি নেজামের আয়োজনে শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) বাদ ফজর আমবয়ানের মাধ্যমে এ জোড় শুরু হয়। ইজতেমা শুরুর আগেই রাতে ময়দানে আসা এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। ঘুমন্ত অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
মৃত ওই মুসল্লির নাম মো. নুর আলম (৮০)। তিনি নোয়াখালী সদর উপজেলার বাসিন্দা। আজ বাদ জুমা ইজতেমা ময়দানেই তার জানাজা সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) ফজরের পর আম বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয় জোড় ইজতেমার মূল পর্ব। আগামী মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এই ইজতেমা শেষ হবে।
প্রতি বছর ইজতেমার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে এই জোড় অনুষ্ঠিত হয়। এখানে তাবলিগের সাথীরা পুরো বছরের কাজের কারগুজারি পেশ করেন ও মুরুব্বিদের থেকে রাহবারি অংশ নেওয়ার সুযোগ পান।
জাতীয়
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হলো আরো ৩৯ বাংলাদেশিকে
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও ৩৯ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানা হয়েছে। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) ভোর সাড়ে ৫টায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষ সামরিক ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তারা।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দেশে ফেরত কর্মীদের ব্র্যাকের পক্ষ থেকে পরিবহন সহায়তাসহ জরুরি সেবা দেওয়া হয়।
ফেরত আসা এই কর্মীদের মধ্যে ২৬ জনই নোয়াখালীর। এছাড়া কুমিল্লা, সিলেট, ফেনী, ও লক্ষ্মীপুরের দুজন করে এবং চট্টগ্রাম, গাজীপুর, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ এবং নরসিংদীর একজন করে রয়েছেন। এর আগে চলতি বছরে ১৮৭ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন।
দেশে ফেরত আসা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম জানিয়েছে, এই ৩৯ জনের মধ্যে অন্তত ৩৪ জন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ বুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র নিয়ে ব্রাজিল গিয়েছিলেন। এরপর সেখান থেকে মেক্সিকো হয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। আর বাকি পাঁচজনের মধ্যে দুইজন সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে যান আর তিনজন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। এরপর এই ৩৯ জন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের জন্য আবেদন করলে আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান বলেন, এই যে সরকারের পক্ষ থেকে ব্রাজিলে বৈধভাবে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হলো সেক্ষেত্রে তারা ব্রাজিল না যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন সেটি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকার বা এজেন্সির কি কোনো সতর্কতা বা কৌশল ছিল? এই যে একেকজন ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা খরচ করে শূন্য হাতে ফিরলেন তার দায় কার? এভাবে বৈধভাবে অবৈধ হওয়ার পথে ছেড়ে দেওয়া ভীষণ দুর্ভাগ্যজনক এবং দায়িত্বহীনতা। যে এজেন্সি তাদের পাঠিয়েছিল এবং যারা এই অনুমোদন প্রক্রিয়ায় ছিল তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। কয়েক হাজার কর্মী এভাবে ব্রাজিল গেছে। নতুন করে ব্রাজিলে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার আগে সরকারের সতর্ক হতে হবে।
ফেরত আসা এসব বাংলাদেশি ও বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, এর আগে এ বছরের বিভিন্ন সময়ে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের হাতে হাতকড়া, পায়ে শেকল বেঁধে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হলেও শুক্রবার ফেরত আসা বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি।
চলতি বছরের ৮ জুন একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ৪২ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হয়। এর আগে ৬ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত একাধিক ফ্লাইটে আরও অন্তত ৩৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। ২০২৪ সালের শুরু থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির সংখ্যা ২২০ ছাড়িয়েছে।
মার্কিন আইন অনুযায়ী, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থানকারী অভিবাসীদের আদালতের রায় বা প্রশাসনিক আদেশে দেশে ফেরত পাঠানো যায়। আশ্রয়ের আবেদন ব্যর্থ হলে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ (আইসিই) তাদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে।
জাতীয়
দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ আগামী সপ্তাহে
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগামী সপ্তাহেই সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের দুই সদস্য পদত্যাগ করতে পারেন বলে নিশ্চিত সূত্র জানিয়েছে। তারা হলেন—স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম।
নির্বাচন কমিশন ১০ ডিসেম্বরের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করতে পারে। তার আগেই এই দুই উপদেষ্টা নিজেদের প্রার্থীতা নিশ্চিত করতে পদত্যাগ করবেন। তাদের পদত্যাগের পর উপদেষ্টা পরিষদে নতুন মুখ যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়কদের অংশ ছিলেন আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম। পদত্যাগের পর তারা রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিভিন্ন সূত্রের দাবি, বিএনপি ছেড়ে দিতে পারে এমন আসনে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রার্থীতা জমা দিতে পারেন। বিষয়টি মৌখিকভাবে প্রধান উপদেষ্টাকেও অবহিত করা হয়েছে।
ঢাকা-১০ আসনের ভোটার হয়েছেন আসিফ মাহমুদ সজীব এবং ধারণা করা হচ্ছে—সেখান থেকেই তিনি নির্বাচন করবেন। বিএনপি এখনও এই আসনে প্রার্থী দেয়নি। তিনি জানিয়েছেন, নীতিগত কারণে উপদেষ্টা থাকাকালীন নির্বাচন করা ঠিক নয়। তাই পদত্যাগ করেই নির্বাচন করব। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা আছে।
অপরদিকে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম গত কয়েক মাস ধরে পদত্যাগ প্রসঙ্গে নানা মন্তব্য করে আলোচনায় আছেন। তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কিছু পোস্ট সরকারকে বিব্রত করেছে বলেও নীতিনির্ধারক সূত্র জানিয়েছে। ফলে তার পদত্যাগ সময়ের ব্যাপার বলে মনে করছেন অনেকেই।
একই সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বুধবার রাতে নাহিদ ইসলামের বাসায় বৈঠকে বসে জোটবদ্ধ নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করে। তবে বৈঠকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের দল ‘ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ’ (আপ বাংলাদেশ)–কে জোটভুক্ত করার প্রস্তাব উঠতেই আলোচনা থেমে যায়।
৪০ জন নেতার মধ্যে মাত্র তিনজন আপ বাংলাদেশকে জোটে নেওয়ার পক্ষে মত দেন। বাকিরা কেউ বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া, কেউ আবার এককভাবে নির্বাচন করার পক্ষে মত দিয়েছেন। ফলে জোট নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অনেকে আশঙ্কা করছেন—জোট ইস্যুতে শেষ মুহূর্তে এনসিপির ভাঙন দেখা দিতে পারে।
এদিকে জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের নেপথ্যে থাকা কয়েকজন সংগঠকের সমন্বয়ে চলতি বছরের ৯ মে নতুন রাজনৈতিক দল ‘ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)’ যাত্রা শুরু করে। দলটির ৮২ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ এবং সদস্য সচিব আরেফিন মুহাম্মদ হিজবুল্লাহ—দুজনই ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা।
জাতীয়
আরেকটি ফাটলরেখার সন্ধান, ৬ মাত্রায় ভূমিকম্পের শঙ্কা
আরেকটি সক্রিয় ভূগর্ভস্থ ফাটলরেখার (ফল্টলাইন) সন্ধান পেয়েছে ভূমিকম্প নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল। ফাটলরেখাটিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এটার এক ভাগে স্বল্প মাত্রা এবং দ্বিতীয় ভাগ বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে। তৃতীয় ভাগে ভূমিকম্পের ঝুঁকি নেই। প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ ফাটলরেখা বাংলাদেশের জামালপুর ও ময়মনসিংহ থেকে ভারতের কলকাতা পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি সর্বোচ্চ ৬ মাত্রার ভূমিকম্প তৈরি করতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের তথ্যের বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে প্রথম আলো অনলাইন। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আক্তারুল আহসানের নেতৃত্বে এক গবেষণায় নতুন খোঁজ পাওয়া ফাটলরেখা চিহ্নিত হয়েছে। তার সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, তুরস্ক ও বাংলাদেশের কয়েকজন গবেষক।
আক্তারুল আহসান বলেন, ‘১৪-১৯ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানায় জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের আয়োজনে ৬ দিন ধরে আমেরিকান ভূতত্ত্ববিদদের আন্তর্জাতিক সম্মেলন হবে। সেখানে এ গবেষণার বিস্তারিত ফলাফল তুলে ধরা হবে।’
বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের এই উপপরিচালক জানান, তিনি ও তার দল ২০২৪ সালের মার্চে ‘টেকটোনিক জিওমরফলোজি’ পদ্ধতিতে গবেষণা শুরু করেন। সম্প্রতি গবেষণাটি শেষ হয়। এ গবেষণায় ফাটলরেখাটি শনাক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ফাটলরেখাটিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এটার এক ভাগে স্বল্প মাত্রা এবং দ্বিতীয় ভাগ বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে। তৃতীয় ভাগে ভূমিকম্পের ঝুঁকি নেই।’
অবশ্য কোন অংশে ঝুঁকি বেশি, কোথায় কম, তা বিস্তারিতভাবে এখনই প্রকাশ করতে চান না আক্তারুল আহসান। তিনি বলেন, ‘গবেষণাটি নিয়ে একটি নিবন্ধ শিগগিরই বিশ্বখ্যাত একটি জার্নালে প্রকাশিত হবে। সেখানে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।’
বাংলাদেশে ২১ ও ২২ নভেম্বর দুই দিনে চার দফা ভূমিকম্প হয়। এর মধ্যে রিখটার স্কেলে ২১ নভেম্বরের ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। এই ভূমিকম্পে ১০ জনের মৃত্যু হয়। এর আগে বিগত কয়েক বছরে বেশ কয়েক দফা ভূমিকম্প হলেও এত মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। ভূমিকম্পে সৃষ্ট কম্পন মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে।
নতুন শনাক্ত ফাটলের সঙ্গে বড় মাত্রার কয়েকটি ভূমিকম্প ও ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তনের সংযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ব্রহ্মপুত্রের গতিপথের পরিবর্তন এখনো চলছে।
নতুন গবেষণায় বলা হচ্ছে, নতুন করে চিহ্নিত হওয়া ফাটলরেখার জন্ম ৫ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে। এ সময়কালকে ভূতত্ত্ববিদ্যার ভাষায় বলা হয় ইউসিন যুগ। সে সময় সক্রিয় থাকা এ ফাটলরেখা ২ কোটি ৩০ লাখ বছর নিষ্ক্রিয় ছিল। নিষ্ক্রিয়তার এ সময়কালকে বলা হয় মায়োসিন যুগ। ৫৬ লাখ বছর আগে ভূত্বকের নিচে ইন্ডিয়ান প্লেট (যে প্লেটের ওপর উপমহাদেশ ও এর আশপাশের অঞ্চল অবস্থান করছে) ও ইউরেশিয়ান প্লেটের (এশিয়া ও ইউরোপ যে প্লেটের ওপর অবস্থান করছে) ক্রমাগত চাপের ফলে মেঘালয়ের পর্বতমালা মাটির নিচ থেকে উঠে আসার পর এ ফাটলরেখা আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে।
পৃথিবীর ভেতরের চাপ বা ধাক্কায় ভূমির আকৃতি ও রূপরেখায় অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবর্তনকে টেকটোনিক মরফোলজি বলা হয়। নতুন গবেষণায় বলা হচ্ছে, ইন্ডিয়ান প্লেট প্রতিবছর ৪৬ মিলিমিটার বা ৪ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার করে ইউরেশিয়ান প্লেটের নিচে ঢুকে যাচ্ছে। এই গতি একেক সময় একেক রকম ছিল। কখনো সোজা উত্তর দিক বরাবর, আবার কখনো উত্তর–পূর্ব দিক বরাবর এ গতি পরিবর্তিত হচ্ছে। কখনো গতিবেগ বেশি ছিল, কখনো কম। ইন্ডিয়ান প্লেটের এই গতির জন্যই ডাউকি ফাটল এবং নতুন আবিষ্কৃত এ ফাটলের জন্ম হয়েছে।
ইন্ডিয়ান প্লেটের এই গতি বেঙ্গল বেসিনের আরও অনেক ফাটলের জন্ম দিয়েছে জানিয়ে গবেষক আক্তারুল আহসান বলেন, ‘এর ভেতর কিছু ফাটল ভূমিকম্প তৈরির সামর্থ্য রাখে, কিছু রাখে না। নতুন শনাক্ত ফাটলের সঙ্গে বড় মাত্রার কয়েকটি ভূমিকম্প ও ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তনের সংযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ব্রহ্মপুত্রের গতিপথের পরিবর্তন এখনো চলছে।’
নতুন শনাক্ত ফাটলরেখার সঙ্গে সরাসরি যে কটি ভূমিকম্পের সম্পর্ক পাওয়া গেছে, তার মধ্যে ‘বেঙ্গল আর্থকোয়েক’ অন্যতম। এটি হয়েছিল ১৮৮৫ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার ২০১০ সালে এক গবেষণা নিবন্ধে বলেছিলেন, সেই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭। উৎসস্থল ছিল মানিকগঞ্জ। মধুপুর ফাটলরেখায় এই ভূমিকম্প হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
ব্রিটিশ ভূতত্ত্ববিদ চার্লস স্টুয়ার্ট মিডলম্যাসের গবেষণার বরাত দিয়ে হুমায়ুন আখতার লিখেছেন, ‘এই ভূমিকম্পের কম্পন ছড়িয়ে পড়েছিল ভারত, ভুটান ও মিয়ানমারের কিছু এলাকায়। তখন অন্তত ৭৫ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল, যার ৪০ জনই ছিলেন শেরপুরের। ভূমিকম্পটিতে ময়মনসিংহে বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।’
১৯২৩ সালে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ এলাকায় আরেকটি ভূমিকম্প হয়েছিল, যেটি ইউএসজিএসের (মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা) আর্থকোয়েক ক্যাটালগে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হিসেবে লিপিবদ্ধ আছে। এটির সঙ্গেও নতুন চিহ্নিত হওয়া ফাটলরেখার সম্পর্ক রয়েছে বলে আক্তারুল আহসানের গবেষণায় উঠে এসেছে।
নতুন গবেষণাটিতে ‘মর্ফোলজিক্যাল চেঞ্জ’ বিষয়ে স্যাটেলাইট ম্যাপিং দিয়ে সহযোগিতা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে ভূতাত্ত্বিক বাস্তবতা হলো অনেক ফল্টলাইন বা ফাটলরেখা আছে। গবেষণা করলে এ অঞ্চলে এ রকম আরও ফাটলরেখার সন্ধান মিলবে। ফাটলরেখা থাকা মানেই উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প হবে, তা বলা যায় না।’
জাতীয়
গৃহশ্রমিকের অধিকার সুরক্ষার প্রশ্নে গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের প্রতিক্রিয়া
গৃহশ্রমিকদের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্কভুক্ত জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, মানবাধিকার ও শ্রমিক অধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিগণ তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে তাদের বিদ্যমান শ্রম আইনের দ্বাদশ, ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ অধ্যায়ের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তি ও সংজ্ঞায়িত করার জন্য গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানানো হয়।
তবে নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই সংশোধন অধ্যাদেশের মাধ্যমে গৃহপরিচারককে শ্রম আইনে আংশিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, মজুরি, কর্মঘণ্টা, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, সামাজিক সুরক্ষার মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষিত হয়েছে। যদিও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে জাতীয় নীতি অনুসরনীয় কিন্তু গৃহশ্রমিককে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি, ২০১৫’-এ বর্ণিত নির্দেশনা এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে গৃহশ্রমিকদের বিষয়ে সুপারিশসমূহ অনুসরণ করা হয়নি। নীতিতে ও কমিশনের প্রতিবেদনে গৃহশ্রমিকের সুরক্ষা, কল্যাণ, মজুরি, নিয়োগচুক্তি, কর্মঘণ্টা, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, প্রশিক্ষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উল্লেখ থাকলেও শ্রম আইনের সংশোধনীতে গৃহশ্রমিকের জন্য এসব অধিকার উপেক্ষিত হয়েছে।
শ্রম আইন সংশোধন প্রক্রিয়া চলমান থাকাকালে গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি, ২০১৫’ ও শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব বরাবর যে সুপারিশ প্রস্তাব করা হয়েছিল তার অধিকাংশই শ্রম আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে গৃহীত হয়নি।
নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে আরও উল্লেখ করা হয়, গৃহশ্রমিকের শ্রম আইনে আংশিক অন্তর্ভুক্তি তাদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট নয়, উপরন্তু প্রায়োগিক জটিলতা তৈরি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক মনে করে, যে সকল অধ্যায়ের জন্য গৃহশ্রমিককে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার প্রয়োগ যথাযথভাবে নিশ্চিত করার জন্য স্পষ্ট ব্যাখ্যা শ্রম বিধিমালায় যুক্ত করা প্রয়োজন। পাশাপশি শোভন কর্মপরিবেশ ও কর্মক্ষেত্রে গৃহশ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতকল্পে এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে শ্রম আইনের যে সকল অধ্যায়ের ক্ষেত্রে গৃহশ্রমিক প্রযোজ্য হয়নি, সে অধ্যায়গুলোতে গৃহশ্রমিককে অন্তুর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। দেশের অন্যান্য শ্রমিকের ন্যায় গৃহশ্রমিকদের জন্য কর্মক্ষেত্রে ন্যায্য অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে শ্রম আইনের সকল অধ্যায়ে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করে অবিলম্বে পুনরায় অধ্যাদেশ জারি এবং অধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে শ্রম বিধিতেও সংশোধন আনা জরুরি। নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করা হয়, ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি, ২০১৫’, শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ এবং আইএলও কনভেনশন ১৮৯ এর মানদন্ডে আলোকে গৃহশ্রমিকদের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমেই দেশের চরম অবহেলিত গৃহশ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।
উল্লেখ্য, ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ এ ধারা ১ এর উপ-ধারা (৪) এর দফা (ণ) সংশোধন করে ‘গৃহপরিচারক’-কে এই আইনের দ্বাদশ, ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ অধ্যায়ের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপশি ধারা ২-এর উপ-ধারা (৯খ) সন্নিবেশনের মাধ্যমে ‘গৃহপরিচারক’ এর সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে।



