জাতীয়
ধর্ম অবমাননায় সমান শাস্তিসহ ৪ দাবি হিন্দু যুব মহাজোটের
বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সব ক্ষেত্রে সমতা ও ন্যায্যতার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট। একই সঙ্গে দেশে বিদ্যমান সব ধর্মের অবমাননা রোধে সুস্পষ্ট আইন প্রণয়ন ও সব ধর্মের অবমাননার বিচারের ক্ষেত্রে আইনের সমান প্রয়োগ নিশ্চিত করাসহ চার দাবি জানিয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা এ সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট আয়োজিত বাংলাদেশের বিদ্যমান সব ধর্মের অবমাননা রোধে সুস্পষ্ট আইন প্রণয়ন ও সব ধর্মের অবমাননার বিচারের ক্ষেত্রে আইনের সমান প্রয়োগ নিশ্চিত করার দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করে হিন্দু যুব মহাজোটের সভাপতি প্রদীপ কান্তি দে বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রমাগতভাবে ধর্ম অবমাননার বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে। আগে সাধারণত ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু ধর্ম অবমাননা ও হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর সাম্প্রদায়িক বিভিন্ন হামলার ঘটনা ঘটতে দেখা যেতো। বর্তমানে সংখ্যায় কম হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে অন্যান্য ধর্মের ধর্মগ্রন্থ বা মহাপুরুষদের প্রতিও অবমাননাকর মন্তব্য করাটাও আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় জনগোষ্ঠী হিসেবে সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায় বিদ্যমান সব ধর্মের অবমাননার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বর্তমানে সবাই অনুভব করতে সক্ষম হয়েছি যে, ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর আঘাত করলে সেটা হৃদয়ে কতোটা কষ্টকর অনুভূতি তৈরি করে। এই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমরা দাবি করছি যে, বাংলাদেশের বিদ্যমান সব ধর্মের অবমাননা রোধে সুস্পষ্ট আইন প্রণয়ন ও সব ধর্মের অবমাননার বিচারের ক্ষেত্রে আইনের সমান প্রয়োগ নিশ্চিত করা হোক।
প্রদীপ কান্তি দে আরও বলেন, সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে আমরা বিগত দুই দশক ধরে রাজপথে সক্রিয়ভাবে অসংখ্য আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছি। আমরা সবসময় দাবি করেছি যেন প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে কোনো ঘটনারই দৃশ্যমান বিচার হয়নি। এখন সময় এসেছে ধর্মীয় অবমাননা প্রতিরোধে সুস্পষ্ট আইন প্রণয়ন ও সেটার বাস্তবায়ন করা। এ আইনের সুফল যেন বাংলাদেশের প্রতিটি ধর্মীয় জনগোষ্ঠী পায় সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই যার যার ধর্ম তার কাছে সর্বোচ্চ আবেগের বিষয়। রাষ্ট্র তার নাগরিক হিসেবে সবার বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে বাধ্য।
‘তাই ধর্ম অবমাননা প্রতিরোধে আইনে সুস্পষ্টভাবে মন্দির, মসজিদ, গির্জা, প্যাগোডায় হামলা; প্রতিমা ভাঙচুর; সব ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থ অবমাননা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সব ধর্মের ধর্মীয় মহাপুরুষ/পয়গম্বরদের অযৌক্তিক কটুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে দোষীর শাস্তি নির্দিষ্ট করে পেনাল কোডে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, কোনো নির্দোষ ব্যক্তিকে যেন ফাঁসানো না হয়। বিচার যেন ত্রুটি ও প্রভাবমুক্ত হয়। আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলছি প্রতিটি ধর্মের অবমাননা ঘটনা ঘটলে আইনের প্রয়োগ যেন সমান হয়।’
‘কারণ পূর্বের বাস্তবতায় আমরা দেখেছি যে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম অবমাননার ক্ষেত্রে অপরাধীকে ধরার ক্ষেত্রে যে তৎপরতা দেখায়, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ধর্ম অবমাননার ক্ষেত্রে অপরাধীকে ধরতে ঠিক ততোটা উৎসাহী থাকে না। প্রতিমা ভাঙচুর করা হলে সেটার ক্ষেত্রে প্রথাগতভাবে বলা হয় অপরাধীকে ধরতে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন অতিক্রান্ত হলেই সবাই এ অপরাধের কথা ভুলে যায়। আর যেসব ক্ষেত্রে প্রতিমা ভাঙচুর করার সময় হাতেনাতে অপরাধীদের ধরা হয়, তাদের অধিকাংশকেই মানসিক রোগী বলে ছেড়ে দেওয়ার রেওয়াজ তৈরি হয়েছে।’
‘অথচ বাস্তবতা হচ্ছে এদের প্রায় সবাই মানসিকভাবে সুস্থ এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকে এরা সচেতনভাবে প্রতিমা ভাঙচুর করে। তাই প্রতিমা ভাঙচুরের ব্যাপারে আইনে সুস্পষ্টভাবে শাস্তির ব্যবস্থা উল্লেখ করতে হবে এবং সেটার বাস্তবায়ন করতে হবে।’
ধর্মীয় কোনো সভা থেকে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম/উপাস্য নিয়ে কুৎসা/কটুক্তি করা হলে আইনগতভাবে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে জানিয়ে ধর্মীয় এ নেতা বলেন, কোনো ধর্মের ধর্মীয় বক্তা অন্য ধর্মকে কটুক্তি করতে পারবে না। সেই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে আন্তঃধর্মীয় সুস্থ আলোচনার পথ যেন রুদ্ধ না হয়। সব ধর্মের ক্ষেত্রেই যেন সবাই সমানভাবে সুবিচার পেতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ফেসবুকে গুজব রটিয়ে রামুতে সাম্প্রদায়িক হামলার মাধ্যমেই মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রথম বড়সড় সাম্প্রদায়িক হামলার সূচনা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের সাম্প্রদায়িক হামলা, যশোরের অভয়নগর মালোপাড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলা, রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলা, কুমিল্লার হোমনায় সাম্প্রদায়িক হামলা, ভোলার বোরহানউদ্দিনে সাম্প্রদায়িক হামলা, হবিগঞ্জের শাল্লায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাসহ আরও অসংখ্য আলোচিত ঘটনা সবারই জানা। সব ক্ষেত্রেই একই প্যাটার্নে এ হামলা হয়েছে। প্রথমে ফেসবুকে কোনো হিন্দু যুবকের বিরুদ্ধে কথিত ধর্ম অবমাননার গুজব তৈরি করা হয়েছে। এরপর মব তৈরি করে সংগঠিতভাবে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে, বাড়িঘর লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়েছে। মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে।
‘দেখা যাচ্ছে অনলাইনের একটি কটুক্তির সূত্রে অফলাইনে মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর করে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি ধর্ম অবমাননা করা হচ্ছে। দুঃখের বিষয় বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন কোনো সরকারই হিন্দুদের ওপর এই সাম্প্রদায়িক হামলার চূড়ান্ত কোনো বিচারের আগ্রহ দেখায়নি। ঘটনার পর প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে, অভিযুক্ত হিন্দু ব্যক্তি নির্দোষ। তার মানে সাম্প্রদায়িক হামলার প্লট রচনার জন্যই এই ধর্ম অবমাননার কাহিনী সাজানো হয়। কিন্তু প্রকৃত ধর্ম অবমাননাকারী রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। আমরা সেই ধর্ম অবমাননাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, তা সে ব্যক্তি যেই ধর্মেরই হোক না কেন।’
‘সেই সঙ্গে ধর্ম অবমাননার নাম করে মব তৈরি করে নির্দোষ জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত সব ব্যক্তিকেও শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। ব্যক্তির দায়ে সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য হবে না। এক্ষেত্রে আমাদের সুস্পষ্ট দাবি, হামলাকারীদের সম্পত্তি রাষ্ট্র কর্তৃক ক্রোক করে সেই অর্থ দিয়ে হামলার শিকার নির্দোষ ব্যক্তিদের সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে মব তৈরি করে সাম্প্রদায়িক হামলার ক্ষেত্র ক্রমান্বয়ে বন্ধ হয়ে যাবে।’
বিগত ২০২১ সালের দুর্গাপূজার রক্তাক্ত শারদের স্মৃতি এখনো জ্বলজ্বল করছে জানিয়ে প্রদীপ কান্তি দে বলেন, কুমিল্লার এক মণ্ডপে কোরান শরিফ পাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন জেলায় অসংখ্য পূজামণ্ডপে হামলা ও দুর্গাপ্রতিমা ভাঙচুর ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। পরে সিসিটিভি ফুটেজ ও তদন্তে জানা যায় মো. ইকবাল নামে এক ব্যক্তি মণ্ডপে কোরান রেখে এসেছিল, যার ফলশ্রুতিতে সেদিনের দুর্গাপূজায় নিরীহ হিন্দুদের ওপর তাণ্ডব নেমে এসেছিল। যারা ধর্মীয় সংঘর্ষ তৈরির জন্য এরকমভাবে উসকানি দেয় আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির আইন করার দাবি জানাচ্ছি। সম্প্রতি মো. অপূর্ব রাদ (ধর্মান্তরিত হওয়ার পূর্বের নাম অপূর্ব পাল) ফেসবুকে কোরান শরিফ অবমাননা করেছে। এ ঘটনা সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আহত করেছে।
তিনি বলেন, আমরা এই ধর্মগ্রন্থ অবমাননার প্রতিবাদ করছি। কোনো ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থ কেউ এভাবে অবমাননা করার অধিকার রাখে না। আমরাও চাই তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, যেমনটা কুমিল্লার ইকবালের মতো সব ধর্মীয় অবমাননাকারী উসকানিদাতাদের হওয়া উচিত। মন্দির-প্রতিমা ভাঙচুরকারী আর কোরআন অবমাননাকারী সবাই সমান দোষে দোষী। অপরাধী যেকোনো ধর্মেরই হতে পারে, তাই অপরাধীর ধর্ম না দেখে সবার জন্য সমানভাবে আইন প্রয়োগের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন তৈরি করা জরুরি।
ইসলামিক ধর্মীয় সংগঠনগুলোর নেতৃস্থানীয় আলেম ওলামাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে প্রদীপ কান্তি দে বলেন, আমাদের প্রিয় দেশটিতে সবাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে চাই। এক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মাবলম্বী হওয়ায় আপনাদের ভূমিকা ও সামর্থ্য স্বাভাবিকভাবেই আমাদের চেয়ে বেশি থাকবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় আমরা একে অন্যের হাত ধরে রাখতে চাই। অস্বীকার করার উপায় নেই, বিগত বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলার সময় হামলাকারী উগ্র ধর্মীয় মব নিয়ন্ত্রণে আপনাদের ভূমিকা আরও জোরদার করার আহ্বান জানাই।
তিনি বলেন, সব ধর্মের ধর্মীয় নেতৃস্থানীয়দের প্রভাব নিজ নিজ জনগোষ্ঠীর ওপর থাকে। নিয়মিত বিরতিতে সব ধর্মীয় নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ এক্ষেত্রে আমাদের মধ্যকার অবিশ্বাস দূর করে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সামাজিক বন্ধন আরও দৃঢ় করতে পারে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
এসময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে চার দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো-
১. সব ধর্মের অবমাননার জন্য সমান আইন ও শাস্তির বিধান করতে হবে।
২. ধর্ম অবমাননার অজুহাতে কোনো গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক হামলা চালালে তাদের জন্য শাস্তির বিধান করতে হবে।
৩. বিগত সময়ে ধর্ম অবমাননার অজুহাতে যেসব সংখ্যালঘু এলাকায় হামলা হয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির বিধান করা হোক।
৪. অতীতে কথিত ধর্ম অবমাননার মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত সবাকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হোক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, হিন্দু যুব মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক রাজেশ নাহা, সাবেক সভাপতি সজীব বৈদ্য, ঢাকা মহানগর হিন্দু যুব মহাজোটসহ ছাত্র ও যুব মহাজোটের নেতারা।
জাতীয়
বাংলাদেশে দারিদ্র্যে নামার ঝুঁকিতে ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ: বিশ্বব্যাংক
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ বা ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা যেকোনো অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের মুখে পড়ে আবারও দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও বৈষম্য মূল্যায়ন-২০২৫’ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ দারিদ্র্য হ্রাসে বড় ধরনের অগ্রগতি অর্জন করেছে। এ সময়ে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ দারিদ্র্য থেকে এবং ৯০ লাখ মানুষ অতি দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ, শিক্ষা ও পয়োনিষ্কাশনসহ জরুরি সেবায় প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ২০১৬ সাল থেকে দারিদ্র্য কমার গতি শ্লথ হয়েছে এবং প্রবৃদ্ধি হয়েছে কম অন্তর্ভুক্তিমূলক।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২২ সালে চরম দারিদ্র্য ১২.২ শতাংশ থেকে কমে ৫.৬ শতাংশে এবং মাঝারি দারিদ্র্য ৩৭.১ শতাংশ থেকে কমে ১৮.৭ শতাংশে নেমে আসে। কিন্তু ২০১৬ সালের পর ধনী জনগোষ্ঠীর আয় বাড়লেও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধির হার কমে যায়, ফলে আয় বৈষম্য বেড়ে যায়। কৃষিনির্ভর গ্রামীণাঞ্চলে দারিদ্র্য দ্রুত কমলেও শহরে দারিদ্র্য হ্রাসের হার কমেছে। ২০২২ সাল নাগাদ প্রতি চারজনের একজন শহরে বসবাস শুরু করেন।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের বিভাগীয় পরিচালক জ্যঁ পেম বলেন, পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট, জলবায়ু ঝুঁকি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় শ্রম আয়ও কমছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি—বিশেষ করে নারী, যুবক ও ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য—দারিদ্র্য হ্রাসের জন্য জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
প্রতিবেদন বলছে, উৎপাদনশীল খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি স্থবির হয়ে পড়েছে, বিপরীতে কম উৎপাদনশীল খাতে কর্মসংস্থান বাড়ছে। এতে নারী ও তরুণেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। প্রতি পাঁচজন নারীর একজন বেকার এবং প্রতি চারজন শিক্ষিত নারীর একজনের কর্মসংস্থান নেই। ঢাকার বাইরে শহরাঞ্চলে কর্মসংস্থান প্রায় স্থবির। ফলে নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
১৫–২৯ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের প্রায় অর্ধেক কম মজুরিতে কাজ করছেন—যা দক্ষতা ও শ্রমবাজারের চাহিদার অসঙ্গতি নির্দেশ করে। অভিবাসন দারিদ্র্য কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও দেশের ভেতরে অভিবাসীরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করেন এবং বিদেশে যেতে উচ্চ ব্যয়ের কারণে দরিদ্র মানুষের সুযোগ সীমিত।
প্রতিবেদনে সামাজিক সুরক্ষায় অদক্ষতা ও লক্ষ্যভিত্তিক ব্যয়ের অভাবের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। ২০২২ সালে সামাজিক সুরক্ষার সুবিধাভোগীদের ৩৫ শতাংশ ছিল ধনী পরিবার, যেখানে অতি দরিদ্রদের অর্ধেকও সুবিধা পাননি। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও সারের ভর্তুকির বড় অংশটিও ধনীদের কাছে পৌঁছেছে।
বিশ্বব্যাংক দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমাতে চারটি কৌশলগত করণীয় চিহ্নিত করেছে— উৎপাদনশীল খাতে কর্মসংস্থানের ভিত্তি শক্তিশালী করা, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য শোভন কাজের সুযোগ বৃদ্ধি, প্রক্রিয়াজাত শিল্পে বিনিয়োগ ও দরিদ্র-বান্ধব বাজারব্যবস্থা তৈরি, লক্ষ্যভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা ও কার্যকর রাজস্ব নীতির মাধ্যমে ঝুঁকি মোকাবিলা।
প্রতিবেদনের সহলেখক ও বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সার্জিও অলিভিয়েরি বলেন, বাংলাদেশ পূর্ব–পশ্চিম বৈষম্য কিছুটা কমালেও জলবায়ু ঝুঁকি শহর–গ্রামের বৈষম্য বাড়াচ্ছে। উদ্ভাবনী নীতি, যোগাযোগ উন্নয়ন, শহরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষিতে দরিদ্র-বান্ধব মূল্যচেইন এবং কার্যকর সামাজিক সুরক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশ আবারও দারিদ্র্য হ্রাসের গতি ফিরিয়ে আনতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এমকে
জাতীয়
ভিন্ন রঙের ব্যালটে হবে গণভোট: আসিফ নজরুল
গণভোট কীভাবে গ্রহণ করা হবে, সে প্রক্রিয়ার বিস্তারিত উল্লেখ করে গণভোট অধ্যাদেশ চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়েছে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। আজ বা আগামীকালের মধ্যে এটা গেজেট নোটিফিকেশন হবে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান আইন উপদেষ্টা।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একইদিনে অনুষ্ঠিত হবে গণভোট।
আইন উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট থেকে গণভোটের ব্যালট আলাদা হবে। গণভোটের ব্যালট রঙিন হবে যেন ভোটার বিভ্রান্ত না হয়। সাধারণত সংসদ নির্বাচনের ব্যালট হয় সাদাকালো।
গণভোটে একটি মাত্র প্রশ্ন থাকবে। প্রশ্নটি হলো— জুলাই জাতীয় সনদ আদেশ ও সংবিধান সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবে ভোটারের সম্মতি আছে কি না। সেখানে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ দুটি বাক্স থাকবে। সম্মতি জানালে ‘হ্যাঁ’ ভোট, অসম্মত হলে ‘না’ ভোট দিতে হবে।
আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, সংসদ নির্বাচনের জন্য কমিশনের নিয়োগকৃত রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার বা পোলিং অফিসাররাই গণভোটে রিটার্নিং অফিসার, পোলিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
গণভোটের ক্ষেত্রেও পোস্টাল ব্যালটের সুযোগ থাকবে বলেও জানান আসিফ নজরুল।
এমকে
জাতীয়
বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন: প্রেস সচিব
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে (পণ্য রাখার স্থান) আগুন লেগেছিল। সেই অগ্নিকাণ্ডের তদন্তের রিপোর্ট আজকে পেশ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে এক বিফ্রিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে তিনি জানান।
প্রেস সচিব বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে গত মাসের ১৮ তারিখে একটা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়েছিল, সেই অগ্নিকাণ্ডের তদন্তের রিপোর্ট আজকে পেশ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি পেয়েছে যে, বিভিন্ন কুরিয়ার এজেন্সির জন্য নির্ধারিত ৪৮টি ছোট ছোট লোহার খাঁচার অফিস ছিল কুরিয়ার শেডের ভেতরে। অফিস এলাকায় ফায়ার অ্যালার্ম, স্মোক ডিটেক্টর ও স্প্রিংলার ছিল না। আপনি জানেন, স্প্রিংলার দিয়ে পানি দেওয়া হয়। কোনো অগ্নিনির্বাপক হাইড্রেন্ট ছিল না। কোনো ধরনের নিয়মের তোয়াক্কা ও সতর্কতা ছাড়াই পলিথিনে মোড়ানো কাপড়ের রোল, রাসায়নিক পদার্থ, সংকুচিত বোতলের পারফিউম এবং বডি স্প্রে, ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র, ব্যাটারি, ওষুধজাত পণ্যের কাঁচামালের মতো দাহ্য পণ্য সেখানে স্তূপ করে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেদনে ৯৭ জন সাক্ষীর মৌখিক ও লিখিত সাক্ষ্য জমা দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, এটা কোনো নাশকতা ছিল না। বৈদ্যুতিক আর্কিং এবং শর্ট সার্কিটের কারণে এই আগুনটা লাগে। শর্ট সার্কিটের কারণে কুরিয়ার শেডের বর্ধিত অংশের উত্তর-পশ্চিম কোণের পাশাপাশি অবস্থিত কয়েকটি কুরিয়ার খাঁচার মধ্যবর্তী স্থানে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। তুরস্ক হতে আগত বিশেষজ্ঞ দল, বুয়েট বিশেষজ্ঞ, অগ্নিনির্বাপক বিশেষজ্ঞ এবং সিআইডি ফরেনসিকের প্রতিবেদনে উল্লেখিত অগ্নিকাণ্ডের কারণ নিশ্চিত করা হয়েছে।
এমকে
জাতীয়
অনলাইনে রিচার্জ করা যাবে মেট্রোরেলের কার্ড
ঢাকায় মেট্রোরেলে যাতায়াতের জন্য যাত্রীদের ব্যবহৃত স্থায়ী কার্ড রিচার্জ করার জন্য স্টেশনে যেতে হবে এমন নয়, এখন থেকে ওই কার্ড অনলাইনেই রিচার্জ করা যাবে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁও মেট্রো স্টেশনে এই সেবার উদ্বোধন করা হয়। এর ফলে স্টেশনের লাইনে না দাঁড়িয়েই ঘরে বসে বা যে কোনো জায়গা থেকেই র্যাপিড পাস বা এমআরটি পাস রিচার্জ করা যাবে। তবে আগের মত স্টেশন থেকেও কার্ড রিচার্জ করার ব্যবস্থা থাকছে।
‘লাইন নয়, অনলাইন-রিচার্জ এখন হাতের মুঠোয়!’ স্লোগান সামনে রেখে এ সেবার উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এই সেবা বাস্তবায়ন করেছে।
ডিটিসিএর নতুন এই ব্যবস্থায় ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ, নগদ, রকেটসহ যে কোনো অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রিচার্জ করা যাবে।
ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, অনেকেই আমাদের কাছে অভিযোগ দিচ্ছিল, যে লাইনে ধরে টিকিট কাটা, অনেক ভিড় থাকে এবং অনেক ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এখন সেখান থেকে তাদের জন্য আরও অত্যাধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর সেবা দেওয়ার প্রচেষ্টায় ছিলাম।
কার্ড রিচার্জ করার জন্য ডিটিসিএর ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপে নিবন্ধন করে লগইন করতে হবে। এরপর র্যাপিড পাস বা এমআরটি পাস নির্বাচন করে পেমেন্ট সম্পন্ন করতে হবে। কার্ডে ১০০ থেকে ৫ হাজার পর্যন্ত রিচার্জ করা যাবে।
তবে অনলাইন পেমেন্ট সফল হলেও স্টেশনে স্থাপিত নতুন এভিএম যন্ত্রে কার্ড স্পর্শ না করা পর্যন্ত রিচার্জ কার্যকর হবে না।
এভিএম যন্ত্রে স্পর্শের আগে কেউ চাইলে তার রিচার্জটি সাতদিনের মধ্যে বাতিল করতে পারবে; সেক্ষেত্রে পাঁচ শতাংশ সার্ভিস চার্জ কেটে রাখা হবে।
কোনো গ্রাহক রিচার্জের পর তিন মাসের মধ্যে এভিএম যন্ত্রে স্পর্শ না করলে সেক্ষেত্রেও রিচার্জের অর্থ গ্রাহকের একাউন্টে ফেরত চলে যাবে। এক্ষেত্রেও পাঁচ শতাংশ সার্ভিস চার্জ কাটা হবে।
অনলাইন রিচার্জ কার্যক্রম চালুর অংশ হিসেবে সোমবার থেকে ১৬টি স্টেশনে মোট ৩২টি এভিএম যন্ত্র স্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রতিটি স্টেশনে দুটি করে যন্ত্র বসানো হবে।
বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে চার লাখ ব্যবহারকারী মেট্রোরেল ব্যবহার করছে। এবং ১৬ লাখ স্মার্ট কার্ড ব্যবহারকারীদের কাছে রয়েছে। দৈনিক যেসকল যাত্রী মেট্রোসেবা নিচ্ছেন তাদের ৬৫ শতাংশ স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করছেন বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
এমকে
জাতীয়
দুদককে চাপ প্রয়োগ করলে তালিকা প্রকাশ করা হবে: দুদক চেয়ারম্যান
দুর্নীতির তদন্ত বা অনুসন্ধান বাধাগ্রস্ত করতে আগামীতে কেউ চাপ প্রয়োগ করলে তাদের নাম প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) দুদকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সেগুনবাগিচায় দুদকের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় এমন মন্তব্য করেন।
দুদকে অযাচিত চাপ প্রয়োগ করা হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, দুদকে যারা অযাচিত চাপ প্রয়োগ করলে আগামীতে তাদের নাম প্রকাশ করে দেবো।
মতবিনিময় সভায় দুদকের কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সান ফরিদ ও সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এমকে



