রাজনীতি
১৪ ঘণ্টায় তাসনিম জারার ফান্ডে এলো সাড়ে ২৩ লাখ টাকা
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মনোনীত ঢাকা-৯ আসনের এমপি প্রার্থী এবং দলটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা নির্বাচনি ব্যয় মেটাতে জনগণের কাছে অর্থ সহায়তা চেয়েছেন। এজন্য নিজের বিকাশ পার্সোনাল নম্বর ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে কোনো প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে বার্তা পাঠানোর পরামর্শও দিয়েছেন।
ডা. তাসনিম জারা জানিয়েছেন, গতকাল সোমবার অর্থসহায়তা চাওয়ার ঘোষণার পর নির্বাচনি ব্যয় তহবিলে ১৪ ঘণ্টায় ২৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা পেয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ফেসবুক পোস্টে ডা. জারা লেখেন, মাত্র ১৪ ঘণ্টায় আপনারা ২৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ডোনেট করেছেন, যা আমাদের ফান্ডরেইজিং লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকেরও বেশি। আপনাদের অকল্পনীয় সাড়া ও ভালোবাসায় আমরা অভিভূত।
তিনি লেখেন, আমাদের টার্গেট ৪৬ লাখ ৯৩ হাজার ৫৮০ টাকা। এটা পূর্ণ হলেই আমরা ফান্ডরেইজিং বন্ধ করে দেবো।
এনসিপির এ প্রার্থী লেখেন, একটি জরুরি আপডেট—আমাদের বিকাশ অ্যাকাউন্টের লিমিট আজ রাত ২টার সময় শেষ হয়ে গেছে। যারা এখনো অনুদান পাঠাতে চাচ্ছেন কিন্তু বিকাশ সমস্যার কারণে পারছেন না, তারা দয়া করে আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ডোনেট করবেন।
তিনি লেখেন, আমি শুরু থেকেই একটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে, এই ফান্ডরেইজিং হবে পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে। এটা নিশ্চিত করতে আমরা কী কী করছি?
১. আমরা ক্যাশ ডোনেশন না নিয়ে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ডোনেশন নিচ্ছি। তাই আমাদের প্রাপ্ত প্রতিটি টাকার একটি রেকর্ড থাকছে, যা আমার টিমের দ্বারা তৈরি না, বরং বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই রেকর্ড ভবিষ্যতে যাচাইযোগ্য থাকবে।
২. আমরা আপনাদের নিয়মিত জানাচ্ছি যে, এখন পর্যন্ত মোট কত টাকা সংগ্রহ হয়েছে। কোন মাধ্যমে কত টাকা এসেছে। এসব ডকুমেন্ট নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা জমা দেবো। নির্বাচন কমিশন এটা যাচাই করতে পারবে।
৩. কোন খাতে কত টাকা ব্যয় করা হবে, তা আপনাদের স্পষ্ট করে জানানো হবে।
তাসনিম জারা আরও লেখেন, এছাড়া স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আপনাদের আরও পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
রাজনীতি
বিএনপির মনোনয়ন পেলেন নুরুল হক নুর
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। জোট রাজনীতির অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে জানানো হয়, জোট শরিকদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে বিএনপি মোট সাতটি আসনে প্রার্থী না দিয়ে শরিকদের সমর্থন দেবে।
ঘোষণা অনুযায়ী, পটুয়াখালী-৩ আসনে গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী হিসেবে নুরুল হক নুরকে সমর্থন দেবে বিএনপি। একইভাবে ঢাকা-১২ আসনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, ঝিনাইদহ-৪ আসনে গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে জোনায়েদ সাকি, পিরোজপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) এর মোস্তফা জামাল হায়দার এবং যশোর-৫ আসনে মুফতি রশিদ বিন ওয়াক্কাসকে সমর্থন দেবে বিএনপি।
এর আগে ঝিনাইদহ-৪ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে রাশেদ খান গণমাধ্যমকে জানান, গুলশানে বিএনপির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তাকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। ওই বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ, খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
রাশেদ খান আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচনের আগে ঝিনাইদহ-৪ আসনে জনসভা করবেন—এই শর্তে তিনি প্রার্থী হতে সম্মত হয়েছেন। বিষয়টি শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবে বিএনপি।
জোটভিত্তিক এই মনোনয়ন ঘোষণাকে সামনে রেখে নির্বাচনী মাঠে বিরোধী জোটের কৌশলগত প্রস্তুতি আরও স্পষ্ট হলো বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
রাজনীতি
দেশে ফিরে হাদির কবর জিয়ারত করবেন তারেক রহমান
২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরছেন। তারেক রহমানের সেদিনের কর্মসূচির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করেছে দলটি। এতে জানানো হয়, ২৭ ডিসেম্বর শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করবেন তিনি।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আগামী ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। বিমানবন্দর থেকে তিনি প্রথমে তিনশো ফিট এলাকায় আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যাবেন এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেবেন। ওই অনুষ্ঠানে তিনিই একমাত্র বক্তা থাকবেন। এরপর তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে তার অসুস্থ মাকে দেখবেন। সেখান থেকে তিনি বাসায় যাবেন।
সালাউদ্দিন আহমদ জানান, ২৬ ডিসেম্বর শুক্রবার বাদ জুমা তারেক রহমান তার বাবার কবর জিয়ারত করবেন। এরপর তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন। তিনি আরও বলেন, ২৭ ডিসেম্বর তারেক রহমান ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে গিয়ে আবেদন করবেন। এরপর তিনি শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করবেন এবং পরে পঙ্গু হাসপাতালে আহত জুলাই যোদ্ধাদের দেখতে যাবেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ড. এ কে এম শামসুল রহমান শামস এবং বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ড. মওদুদ আলমগীর পাভেল।
রাজনীতি
দেশের উদ্দেশে আজ লন্ডন ছাড়ছেন তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ ১৭ বছরে নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরছেন। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ‘ঐতিহাসিক ও স্মরণীয়’ করে রাখতে নানামুখী কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি।
বিএনপির দলীয় সূত্র জানা গেছে, বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) লন্ডনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ১২টায়) লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি। তিনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০২ ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন।
ফ্লাইটটি সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি দিয়ে সবকিছু ঠিক থাকলে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তারেক রহমানের সঙ্গে দেশের মাটিতে ফিরবেন তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমান।
দীর্ঘ ১৭ বছর পর তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তবে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে ভিড় না করতে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন।
দেশে ফেরার পর গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে ওঠার কথা রয়েছে তারেক রহমানের। তবে এখনো সেই বাড়ির সংস্কার কাজ চলছে বলে জানা গেছে। যদি কাজ পুরোপুরি শেষ না হয়, তাহলে পাশে থাকা মা খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’য় আপাতত উঠবেন বলে জানিয়েছেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন।
উল্লেখ্য, দেশে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা নেওয়া সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হন বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান। ১৮ মাস কারাগারে থাকার পর ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে মুক্তি পান তিনি। চিকিৎসার জন্য ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকা ছাড়েন তারেক রহমান।
রাজনীতি
নতুন কর্মসূচি ঘোষণা ইনকিলাব মঞ্চের
শহীদ শরিফ ওসমান হাদির লড়াই-সংগ্রামকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে আগামী ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর দেশব্যাপী দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতি কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত ‘শহীদি শপথ পাঠ’ অনুষ্ঠান শেষে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের।
তিনি জানান, কর্মসূচির ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে, সোমবার (২২ ডিসেম্বর) ঘোষিত তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী ২৬ ডিসেম্বর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।
আব্দুল্লাহ আল জাবের বলেন, শহীদ ওসমান হাদিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয়। যারা তাকে হত্যা করেছে, তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আপোষ করা হবে না। ইনসাফ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলমান থাকবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরে এসে এই আন্দোলনে যুক্ত হবেন এবং সংহতি প্রকাশ করবেন।
অনুষ্ঠানে শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মেঝ ভাই সরকারকে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, হত্যার বিচার না হলে একদিন সরকারকেও দেশ ছাড়তে বাধ্য হতে হবে। তার ভাষায়, জীবিত অবস্থার চেয়েও আজ শহীদ ওসমান হাদি অনেক বেশি শক্তিশালী। এই হত্যার দায় কোনোভাবেই সরকার এড়িয়ে যেতে পারবে না।
এমকে
রাজনীতি
তারেক রহমানের জন্য এসএসএফ নিরাপত্তা চায় বিএনপি
নিরাপত্তাজনিত হুমকির কথা উল্লেখ করে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরার আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) নিরাপত্তার আবেদন জানিয়েছে দলটি। তবে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা গত শনিবার এই আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আবেদন পাওয়ার পর গত সপ্তাহে বিষয়টি নিয়ে অন্তত তিনটি বৈঠক করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বৈঠকগুলোতে অংশ নেওয়া কয়েকজন জানান, এ নিয়ে কর্মকর্তারা মিশ্র মত দিয়েছেন। কোনো কোনো কর্মকর্তা অনুরোধের পক্ষে মত দিলেও কেউ কেউ এর বিরোধিতা করেছেন। তাদের যুক্তি, তারেক রহমান কোনো রাষ্ট্রীয় পদে নেই এবং তিনি বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী বা দলীয় চেয়ারপারসনও নন।
অবগত কর্মকর্তারা জানান, বৈঠকগুলোতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, নির্দিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ (ভিভিআইপি) ও সফররত বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে এসএসএফ। তবে এই তালিকার বাইরে কাউকে এসএসএফ নিরাপত্তা দিতে হলে সাধারণত সরকারের বিশেষ সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরের শুরুতে এসএসএফ নিরাপত্তার জন্য আবেদন করে বিএনপি। দীর্ঘ ১৭ বছরেরও বেশি সময় নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে তারেক রহমানের সম্ভাব্য স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে গত জুনে তার জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ি ও বাড়তি নিরাপত্তার আবেদন করেছিলেন বিএনপির কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, তারেক রহমান যদি গুলশানে তার মায়ের বাসভবনে অবস্থান করেন, তবেই কেবল এসএসএফ নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। কারণ খালেদা জিয়া ভিভিআইপি হওয়ায় তার বাসভবনটি ইতোমধ্যেই এসএসএফ নিরাপত্তার আওতায় রয়েছে।
‘অন্যথায় তাকে আলাদাভাবে এসএসএফ নিরাপত্তা দেওয়া হলে অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকেও একই ধরনের দাবি ওঠার পথ প্রশস্ত হবে,’ বলেন ওই কর্মকর্তা।
দলীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সীমাবদ্ধতা
বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সদস্যদের নিয়ে গঠিত চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) ভিড় সামলাতে সক্ষম হলেও বড় ধরনের বা উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলার সক্ষমতা তাদের নেই।
তিনি আরও জানান, সিএসএফ একটি বাসভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলেও তারেক রহমান যখন প্রকাশ্যে চলাচল করবেন বা বড় জনসভায় অংশ নেবেন, তখন তাকে পূর্ণাঙ্গ সুরক্ষা দেওয়ার মতো সরঞ্জাম তাদের নেই। তিনি বলেন, ‘এসএসএফ সবচেয়ে দক্ষ। তাদের ট্রেনিং দেওয়া হয় ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গলে। কোন কোন জায়গা থেকে হুমকি আসতে পারে, তারা সেদিকেই নজর রাখে, ডিফেন্স ম্যানেজমেন্টর জন্য সেরা এসএসএফ।’
অতীতের উদাহরণ টেনে আকবর উল্লেখ করেন যে, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের এসএসএফ নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ২০০৮ সালের নির্বাচনি প্রচারণার সময় খালেদা জিয়াও ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এখনো সরকার ইচ্ছা করলে এসএসএফ দিতে পারে। কারণ তারেক রহমানের নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে সদিচ্ছাই সবচেয়ে বড়।’
বিমানে নিরাপত্তার কড়াকড়ি
এদিকে এয়ারলাইন্স সূত্র জানিয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকির আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের দুইজন কেবিন ক্রুকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ফ্লাইটেই তারেক রহমানের লন্ডন থেকে দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
গত শনিবার রাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সূত্রমতে, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ওই দুই ক্রুর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে বিমানের বিজি-২০২ ফ্লাইট। তারেক রহমান এই ফ্লাইটে চড়ে ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশে পৌঁছাবেন।
বিমানের ফ্লাইট সার্ভিস বিভাগ জানায়, এই ফ্লাইটে প্রথমে জুনিয়র পার্সার মো. সওগাতুল আলম সওগাত ও ফ্লাইট স্টুয়ার্ডেস জিনিয়া ইসলাম জিনিয়ার দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল। তবে পরে তাদের সরিয়ে ফ্লাইট পার্সার মোস্তফা ও স্টুয়ার্ডেস আয়াতকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ঢাকায় নিরাপত্তা প্রস্তুতি
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, তার আগমনের দিন পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার প্রায় ২ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হতে পারে।
নিরাপত্তা পরিকল্পনায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সেখান থেকে এভারকেয়ার হাসপাতাল হয়ে গুলশান পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তা ও তার বাসভবনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তবে চূড়ান্ত নির্দেশনা এখনো জারি হয়নি।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ও তারেক রহমানের বাসভবন দেয়ালঘেঁষা হওয়ায় দুটি বাসা ও তারেক রহমানের অফিসকে একই নিরাপত্তা পরিকল্পনার আওতায় আনা হচ্ছে। বিশেষ করে বাসা ও অফিসের মধ্যকার দূরত্ব ও চলাচলের পথকে নিরাপত্তা পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রমতে, ২৩ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে পুলিশের বিশেষ নজরদারি শুরু হতে পারে। ২৫ ডিসেম্বর রুটজুড়ে প্রতিটি থানা এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে এবং বিশেষ এসকর্টসহ একাধিক চেকপোস্ট থাকবে।
বর্তমানে গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় অন্তত ৯টি চেকপোস্ট চালু রয়েছে, যেখানে সার্বক্ষণিকভাবে ১৫০ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্য নিয়োজিত আছেন। তারেক রহমানের আগমনের আগে চেকপোস্টের সংখ্যা আরও বাড়ানো হতে পারে; প্রয়োজন অনুযায়ী তার বাসভবনের আশপাশেও নিরাপত্তা বাড়ানো হবে।
প্রস্তুতির বিষয়ে গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) রওনক আলম বলেন, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট সমন্বিতভাবে নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে। তবে এখনো চূড়ান্ত নির্দেশনা ঠিক হয়নি। ‘আমরা নির্দেশনা অনুযায়ী সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা ফয়সান হাসান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামসুল ইসলামের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
২৭ ডিসেম্বর ভোটার হবেন তারেক রহমান
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গতকাল নিশ্চিত করেছেন, তারেক রহমান লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পরপরই আগামী ২৭ ডিসেম্বর ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করবেন।
আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। সালাহউদ্দিন বলেন, তারেক রহমান ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘২৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার। যেহেতু পরদিন শুক্রবার, তাই ২৭ ডিসেম্বর শনিবার তিনি ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন।’
এমকে




