অর্থনীতি
১৩ ব্যাংক থেকে আরও ১৪ কোটি ডলার কিনলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক
দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহে সহায়তা দিতে ব্যাংকগুলো থেকে অতিরিক্ত ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) ১৩টি ব্যাংক থেকে আরও প্রায় ১৪ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার (১৪১.৫ মিলিয়ন ডলার) কেনা হয়েছে।
এদিন প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২২.২৯ টাকা থেকে ১২২.৩০ টাকা পর্যন্ত। কাট-অফ রেট ছিল ১২২.৩০ টাকা, যা মাল্টিপল প্রাইস নিলাম পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।
এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর ১৬টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৫ কোটি মার্কিন ডলার (১৪৯ মিলিয়ন ডলার) কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২২.২৫ টাকা থেকে ১২২.২৯ টাকা পর্যন্ত। আর কাট-অফ রেট ছিল ১২২.২৯ টাকা।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ পর্যন্ত নিলাম পদ্ধতির মাধ্যমে মোট ২৮০ কোটি ৪৫ লাখ (২.৮০ বিলিয়ন ডলার) ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৩ জুলাই থেকে নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা শুরু করে। ওই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, সোমবার ১৩টি ব্যাংক থেকে মোট প্রায় ১৪ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার (১৪১.৫ মিলিয়ন ডলার) কেনা হয়েছে। এসময় প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২২.২৯ টাকা থেকে ১২২.৩০ টাকা পর্যন্ত। কাট-অফ রেট ছিল ১২২.৩০ টাকা।
অর্থনীতি
ইইউতে পোশাক রপ্তানি কমলেও যুক্তরাষ্ট্রে বেড়েছে
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সামগ্রিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে এবং বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।
পোশাক রপ্তানির পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই–নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে পোশাক রপ্তানি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬১৩ কোটি মার্কিন ডলার। আগের বছর একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল এক হাজার ৬১১ কোটি মার্কিন ডলার। বছরের ব্যবধানে রপ্তানি বেড়েছে দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৭৮৩ কোটি ডলার। আগের বছর একই সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৭৯১ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রপ্তানি কমেছে ১ দশমিক ০৩ শতাংশ।
অন্যদিকে আলোচিত সময়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি করেছে ১৮৪ কোটি ডলারের। আগের বছর একই সময়ে রপ্তানি ছিল ১৭৯ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৩ দশমিক ০৬ শতাংশ।
এদিকে অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে। এই মার্কেটের আওতায় রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চিলি, চীন, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, সৌদি আরব, সাউথ কোরিয়া, তুর্কিসহ ইউনাইটেড আরব আমিরাতের অন্যান্য দেশ।
নতুন বাজারে চলতি জুলাই-নভেম্বর সময়ে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২৬৭ কোটি মার্কিন ডলারের। আগের বছর একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ২৭৫ কোটি ডলার। প্রথম পাঁচ মাসে অপ্রচলিত পোশাক রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, প্রথম পাঁচ মাসে চলতি অর্থবছরের সার্বিকভাবে দুই হাজার ৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। গত বছর প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি হয়েছিল এক হাজার ৯৯১ কোটি ডলার।
অর্থনীতি
১৩ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৮ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারা ডিসেম্বরেও অব্যাহত রয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথম ১৩ দিনে দেশে এসেছে প্রায় ১৫০ কোটি ৭৪ লাখ ৭০ হাজার ডলারের প্রবাসী আয়। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) ১৮ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, ডিসেম্বরের প্রথম ১৩ দিনে আসা ১৫০ কোটি ৭৪ লাখ ৭০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্সের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২৪ কোটি ৯৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক (কৃষি ব্যাংক) ব্যাংকের মাধ্যমে ১৫ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ লাখ ডলার এসেছে। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলো মাধ্যমে ১০৯ কোটি ৭০ লাখ ২০ হাজার ডলার এসেছে এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩২ লাখ ৯০ হাজার ডলার।
গত বছর শুধু রমজানের ঈদ ঘিরেই এক মাসে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রেরণে বিভিন্ন প্রণোদনা, বৈধপথে টাকা পাঠানোর ওপর উৎসাহ বাড়ানো এবং এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর সক্রিয় ভূমিকার উল্লেখ করা হচ্ছে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক হাজার ৩৬৭ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। গত বছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ ছিল এক হাজার ১৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। অর্থবছর হিসাবে রেমিট্যান্স আসার প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মাসভিত্তিক প্রবাসী আয় ছিল—জুলাইয়ে ২৪৭ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, আগস্টে ২৪২ কোটি ১৯ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, অক্টোবরে ২৫৬ কোটি ৩৫ লাখ ডলার এবং নভেম্বরে এসেছে ২৮৮ কোটি ৯৫ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চে রেমিট্যান্স এসেছিল সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলার, যা ছিল ওই অর্থবছরের একক কোনো মাসের সর্বোচ্চ রেকর্ড। পুরো অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার—যা আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ওই অর্থবছরের মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স ছিল—জুলাইয়ে ১৯১.৩৭ কোটি, আগস্টে ২২২.১৩ কোটি, সেপ্টেম্বরে ২৪০.৪১ কোটি, অক্টোবরে ২৩৯.৫০ কোটি, নভেম্বরে ২২০ কোটি, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি, মার্চে ৩২৯ কোটি, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি, মে মাসে ২৯৭ কোটি এবং জুনে ২৮২ কোটি ডলার।
অর্থনীতি
মাসে মাত্র ১৪ হাজার টাকার কিস্তিতে কোটিপতির স্বপ্ন পূরণ
একসময় দেশে কোটিপতি হওয়া মানে অনেক বড় বিষয় ছিল। সমাজে কে ধনী মানুষ, তা বোঝাতে বলা হতো, সেই লোক কোটিপতি। অর্থাৎ ধনসম্পদের ক্ষেত্রে কোটি টাকা বড় মাইলফলক ছিল।
সেই বাস্তবতা এখন নেই। মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় গেছে যে ঢাকা শহরে অনেক ফ্ল্যাটের দামই এখন কোটি টাকার ওপরে। সেসব ফ্ল্যাট অবিক্রীতও থাকে না। তারপরও সীমিত আয়ের মানুষের পক্ষে কোটিপতি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
দেশের শক্তিশালী ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের আছে কোটিপতি স্কিম। মাসে সর্বনিম্ন ১৪ হাজার টাকা কিস্তি দিয়েও কোটিপতি হওয়া সম্ভব। দেখে নেওয়া যাক, এই স্কিমে আপনি কীভাবে টাকা সঞ্চয় করবেন।
কী আছে কোটিপতি স্কিমে
ইস্টার্ন ব্যাংকের কোটিপতি স্কিমটি ডিপিএস ও এফডিআরের একধরনের মিশ্রণ। সেটা হলো, আপনি প্রথমে এক লাখ টাকা জমা দিয়ে মাসে মাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা কিস্তি হিসেবে জমা দিয়ে মেয়াদ শেষে কোটিপতি হতে পারেন। আবার প্রাথমিক জমা না দিয়েও শুধু মাসে মাসে কিস্তি দিয়ে মেয়াদ শেষে কোটিপতি হওয়া সম্ভব।
এই সঞ্চয় স্কিমের মেয়াদ ৫ থেকে ২০ বছর। এর মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে এই স্কিম নেওয়া যায়—৫, ৮, ১০, ১২, ১৫, ১৮ ও ২০ বছর মেয়াদে এই স্কিম নেওয়া যায়।
ধরা যাক, আপনি পাঁচ বছর মেয়াদে এই স্কিম নিতে চান। এখন আপনি যদি এক লাখ টাকা প্রাথমিক জমা দেন, তাহলে মাসে ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা জমা দিয়ে কোটিপতি হওয়া যায়। এক লাখ টাকা প্রাথমিক জমা না দিলে আপনার মাসিক কিস্তি হবে ১ লাখ ২৯ হাজার ৯০০ টাকা।
আট বছর মেয়াদে প্রাথমিক জমা ছাড়া আপনার কিস্তি হবে ৭১ হাজার টাকা এবং এক লাখ টাকার প্রাথমিক জমাসহ কিস্তি হবে ৬৯ হাজার ৬০০ টাকা। ১০ বছর মেয়াদে প্রাথমিক জমা ছাড়া আপনার মাসিক কিস্তি হবে ৫১ হাজার ৩০০ টাকা এবং প্রাথমিক জমাসহ কিস্তি হবে ৫০ হাজার ১০০ টাকা।
১২ বছর মেয়াদে প্রাথমিক জমা ছাড়া কিস্তি হবে ৩৮ হাজার ৬০০ টাকা। জমাসহ কিস্তি হবে ৩৭ হাজার ৪০০ টাকা। ১৫ বছর মেয়াদে প্রাথমিক জমা ছাড়া কিস্তি হবে ২৬ হাজার ৩০০ টাকা এবং জমাসহ কিস্তি হবে ২৫ হাজার ৩০০ টাকা।
১৮ বছর মেয়াদে প্রাথমিক জমা ছাড়া কিস্তি হবে ১৮ হাজার ৬০০ টাকা। প্রাথমিক জমাসহ কিস্তি হবে ১৭ হাজার ৬০০ টাকা। ২০ বছর মেয়াদে কিস্তি হবে যথাক্রমে ১৪ হাজার ৯০০ টাকা ও ১৪ হাজার টাকা।
আর কী আছে
এই স্কিম ইস্টার্ন ব্যাংকের যেকোনো শাখায় খোলা যায়। এক ব্যক্তি একসঙ্গে একাধিক কোটিপতি স্কিম খুলতে পারেন। ইস্টার্ন ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব থাকলে সেখান থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিস্তি কেটে নেওয়ার ব্যবস্থাও আছে। সেই সঙ্গে এই স্কিমের বিপরীতে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণের সুবিধা নেওয়া যায়।
কী লাগবে
হিসাব খুলতে সাধারণত যেসব কাগজপত্র লাগে, এ ক্ষেত্রেও তা–ই লাগবে। আপনার নিজের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), নমিনির ছবি ও এনআইডি এবং ওই ব্যাংকে হিসাব আছে, এমন একজন পরিচয়দানকারী। ফরমের নির্দিষ্ট স্থানে সবার স্বাক্ষর লাগবে। জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংক যোগাযোগ করবে, এমন একজনের নাম–ঠিকানাও দিতে হবে।
মেয়াদের আগে ভাঙলে
ব্যাংকের ডিপিএস ও এফডিআর খোলার ক্ষেত্রে যে প্রশ্নটি বারবার ঘুরেফিরে আসে সেটা হলো, মেয়াদের আগে হিসাব ভাঙলে কী হবে। ইস্টার্ন ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, এক বছরের আগে এই হিসাব ভেঙে ফেলা হলে শুধু জমা টাকা ফেরত দেওয়া হয়। সুদ পাওয়া যাবে না।
এক থেকে তিন বছরের মধ্যে ভেঙে ফেলা হলে সঞ্চয়ী হিসাবের সুদ পাওয়া যাবে। তিন বছর পর ভেঙে ফেলা হলে কোটিপতি হিসাবের চেয়ে ২ শতাংশ কম হারে সুদ পাওয়া যাবে।
সঞ্চয় সম্পর্কে একটি কথা বলা হয়। সেটা হলো, আপনি মাসে বা বছরে কত টাকা সঞ্চয় করতে চান, সেই টাকা আগে আলাদা করে রেখে তারপর খরচ করুন। খরচ করার পর আপনি সঞ্চয় করবেন বা তার লক্ষ্য ঠিক করবেন, তা নয়; বরং তার উল্টো পদ্ধতি গ্রহণ করুন। তাহলে সীমিত আয়ের মানুষের পক্ষেও কোটিপতি হওয়া সম্ভব।
এমকে
অর্থনীতি
হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সন্দেহভাজন মাসুদের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ও তার আইটি প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাপল সফট আইটি লিমিটেড’-এর সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ফয়সাল করিম মাসুদের প্রতিষ্ঠানটি বেসিস-এর সদস্য।
তার মালিকানাধীন ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ও ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাপেল সফট আইটি লিমিটেড’ কোম্পানিটি ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া ২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকও ফয়সাল করিম মাসুদ।
ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের (এখন নিষিদ্ধ) রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হয়েছিলেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ওসমান হাদি। মোটরসাইকেলে থাকা আততায়ী তাকে গুলি করে মোটরসাইকেলে করেই পালিয়ে যায়। হাদি এখন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারসহ বিভিন্ন জায়গায় তার সঙ্গে ফয়সাল করিমের সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ছবি রয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে গুলি করা ব্যক্তির চেহারার সাদৃশ্য থাকায় গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এরইমধ্যে ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন। ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আদাবর থানায় একটি মামলা হয়েছিল। ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম। মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। তখন তার কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, পাঁচটি গুলি, তিনটি মোবাইল ফোন ও পাঁচ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল।
ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তার এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তার বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার বিষয়টি সামনে এলো।
এমকে
অর্থনীতি
প্রশাসনিক জটিলতা কমাতে চট্টগ্রামে চালু হচ্ছে শিপ রিসাইক্লিং বোর্ডের কার্যালয়
জাহাজ ভাঙা শিল্পের প্রশাসনিক জটিলতা ও দীর্ঘদিনের ভোগান্তি কমাতে অবশেষে চট্টগ্রামে চালু হচ্ছে বাংলাদেশ শিপ রিসাইক্লিং বোর্ডের প্রথম নিজস্ব কার্যালয়।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে বোর্ডের কার্যক্রম শুরু হবে, যার ফলে অনুমোদনের জন্য ইয়ার্ড মালিকদের আর ঢাকায় ছুটতে হবে না।
জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ বা শিপ রিসাইক্লিং শিল্পের তদারকি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে এই বোর্ড গঠিত হলেও, প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ না হওয়ায় দীর্ঘ সাত বছর এটি কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল। তবে চলতি বছরের মার্চ মাসে একজন মহাপরিচালক ও দুইজন উপ-পরিচালক নিয়োগের মধ্য দিয়ে বোর্ডের কার্যক্রমে গতি আসে।
জাহাজ ভাঙা শিল্পের মূল কেন্দ্র চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে হওয়ায় রাজধানীর শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে কার্যক্রম পরিচালনার পরিবর্তে চট্টগ্রামেই বোর্ডের কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। এত দিন মন্ত্রণালয়ের একটি কক্ষে বসেই দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল।
নগরীর আগ্রাবাদে জাম্বুরি মাঠ সংলগ্ন নবনির্মিত বিএসটিআই ভবনের অষ্টম তলায় স্থাপন করা হয়েছে এই নতুন কার্যালয়। প্রায় ১৮ হাজার বর্গফুট আয়তনের এই অফিসটি রোববার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।
শিপ রিসাইক্লিং বোর্ডের মহাপরিচালক এ এস এম শফিউল আলম তালুকদার জানান, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব ওবায়দুর রহমান।
মহাপরিচালক আরও জানান, এখান থেকে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হলে জাহাজ আমদানি, ভাঙা এবং ইয়ার্ডের অনুমতিসহ অন্তত ২৯ ধরনের লাইসেন্স, অনুমোদন ও নবায়ন সরাসরি এই অফিস থেকেই সম্পন্ন করা যাবে।
তিনি বলেন, ‘আগে এসব অনুমোদনের জন্য উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগ সময়ই ঢাকায় যেতে হতো। এখন আর সেটির প্রয়োজন হবে না।’
খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নতুন এই কার্যালয় চালু হওয়ার ফলে জাহাজ ভাঙা শিল্পের ব্যবসায়ীদের সময় ও খরচ—উভয়ই কমবে। তারা আশা করছেন, বোর্ডটি একটি ‘ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সেন্টার’ হিসেবে কাজ করবে। এটি লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া দ্রুততর করার পাশাপাশি এই শিল্পের সুশৃঙ্খল ও টেকসই বিকাশে নীতিগত সহায়তা প্রদান করবে।




