অর্থনীতি
দেশে-বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন বেড়েছে
দেশের ভেতরে এবং বিদেশে—দুই ক্ষেত্রেই ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার এবং দেশে মোট লেনদেন উভয়ই বেড়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের আগস্টে বাংলাদেশিরা বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে খরচ করেন ৪৪৩ কোটি ৩ লাখ টাকা।
সেপ্টেম্বরে এই খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯৪ কোটি ২ লাখ টাকা—এক মাসে ব্যয় বেড়েছে ৫১ কোটি ১ লাখ টাকা।
জুলাইয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার শীর্ষ তিন দেশ— যুক্তরাষ্ট্র: ৭০ কোটি ৯ লাখ টাকা, থাইল্যান্ড: ৫৯ কোটি ৯ লাখ টাকা, যুক্তরাজ্য: ৫৪ কোটি ১ লাখ টাকা।
এ ছাড়া আরও খরচ— সিঙ্গাপুর ৪০ কোটি ৪ লাখ, মালয়েশিয়া ৩৪ কোটি, ভারত ৩২ কোটি ৩ লাখ, নেদারল্যান্ড ২৫ কোটি, সৌদি আরব ২৪ কোটি, কানাডা ২১ কোটি, অস্ট্রেলিয়া ১৭ কোটি, আয়ারল্যান্ড ১৬ কোটি, চীন ১৫ কোটি এবং অন্যান্য দেশে ৯২ কোটি টাকা।
তবে বাংলাদেশে বিদেশিদের ক্রেডিট কার্ড খরচ কমেছে। আগস্টে বিদেশিরা বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে খরচ করেছিলেন ১৮৩ কোটি ৫ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়ায় ১৭৫ কোটি ৯ লাখ টাকা—অর্থাৎ এক মাসে খরচ কমেছে ৮ কোটি টাকা।
বিদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ খরচ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা— যুক্তরাষ্ট্র: ৩৮ কোটি ৬ লাখ টাকা, যুক্তরাজ্য: ১৭ কোটি টাকা, ভারত: ১৭ কোটি টাকা।
দেশের ভেতরে ক্রেডিট কার্ড লেনদেনেও উল্লম্ফন
দেশের অভ্যন্তরেও ক্রেডিট কার্ড লেনদেন বেড়েছে। ২০২৫ সালের আগস্টে লেনদেন ছিল ৩ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা।সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা—এক মাসে লেনদেন বেড়েছে ২৫১ কোটি টাকা।
অর্থনীতি
তেলের দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা চাই: ক্যাব সভাপতি
আইন ভেঙে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
আজকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন নিয়ে মিটিং ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ আইন অনুযায়ী কিছু পণ্যের মূল্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করে দেয়। মূল্য নির্ধারণ কীভাবে করা হবে সেটার একটা ফর্মুলা আছে।’
ক্যাব সভাপতি বলেন, আমরা জানি মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) হঠাৎ করে ভোজ্যতেলের দাম নয় টাকার বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রিফাইনারি অ্যাসোসিয়েশন যদি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ না করে তেলের দাম বাড়ায় আমি বলবো সেটা আইনের ব্যত্যয়।
‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া যদি তেলের দাম বাড়ানো হয়, তবে সেটি হবে ভোক্তার অধিকারের প্রশ্ন। আমি ক্যাবের প্রেসিডেন্ট হিসেবে যেটা বলতে চাই, যে মূল্যটা বেড়ে গেছে এটি অন্যায়ভাবে করা হয়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা যেটি বলেছেন যে কঠোর ব্যবস্থা, আমরা সেটি দেখার অপেক্ষায় আছি।’
রিফাইনারি বন্ধ করে দেওয়ার মতো বিধান আইনে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা আইন আছে, ভোক্তা অধিকার আইন, যদি কেউ মজুত করে দাম বাড়ায়, সেখানে বিশেষ বিধান আইন প্রয়োগের ব্যবস্থাও আছে। আমরা সেই আইনের প্রয়োগটা দেখতে চাই।
সফিকুজ্জামান আরও বলেন, আমাদের মিটিং থেকেই নির্দেশনা গেছে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে তারা আজকে থেকেই অপারেশনে নামছে, কোথায় এই ব্যত্যয়টা হয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা একটু অপেক্ষা করি কি ব্যবস্থা সরকার নেয়।
এখানে সরকারের ব্যর্থতা আছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো সরকার বলতে পারবে। সরকার তো এ মুহূর্তে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জে আছে। নির্বাচন এবং আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। সেখানে আমার কাছে যেটা মনে হয় নিত্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনায় হয়তোবা আরেকটু বেশি ফোকাস করা উচিত।
ক্যাবের সভাপতি আরও বলেন, আমি লক্ষ্য করেছি ইদানীং মনিটরিংটা খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না। সরকারের উচিত অন্য যে ইস্যুগুলো আছে, রাজনীতি ও আইনশৃঙ্খলা ইস্যুর পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য কিন্তু একটি বড় ইস্যু, আমি মনে করি ভোক্তাদের স্বার্থে বাজার মনিটরিংটা আরও জোরদার করা উচিত।
অর্থনীতি
শীঘ্রই দেশে আসছে পেপ্যাল: গভর্নর
আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে ‘পেপ্যাল’ শীঘ্রই বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করতে চাইছে এবং এর ফলে দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও ফ্রিল্যান্সাররা সহজেই আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও চ্যানেল আই আয়োজিত ‘অ্যাগ্রো অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এই তথ্য জানান।
গভর্নর বলেন, ‘পেপ্যাল বাংলাদেশে ব্যবসা করতে আগ্রহী। ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খোলার মাধ্যমে ছোট চালানে পণ্য রপ্তানি করা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য কঠিন হয়ে যায়। পেপ্যালের মতো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম চালু হলে তারা সহজেই ইউরোপ, আমেরিকা ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে পণ্য পাঠাতে পারবেন এবং দ্রুত পণ্যের দাম দেশে আনা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও করেন, ‘বর্তমানে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ের অভাবে আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিংয়ের সঙ্গে যুক্ত অনেকে বিদেশ থেকে টাকা আনার সময় বিড়ম্বনায় পড়েন। অনেক সময় তারা তাদের পারিশ্রমিকও পান না। পেপ্যাল চালু হলে এই সমস্যার সমাধান হবে।’
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও চ্যানেল আই আয়োজিত ‘অ্যাগ্রো অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এই তথ্য জানান।
পেপ্যাল একটি বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা, যা ব্যবহারকারীরা অনলাইনে টাকা পাঠানো ও গ্রহণ করা, বিল পরিশোধ করা এবং আন্তর্জাতিক কেনাকাটা করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন। এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীর ব্যাংক বা কার্ডের সঙ্গে নিরাপদভাবে সংযুক্ত হয়ে দ্রুত লেনদেন সম্পন্ন করে।
পেপ্যাল ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জন্য সুরক্ষা এবং রিফান্ডের সুবিধাও দেয়। বিশ্বের ২০০-এর বেশি দেশে ফ্রিল্যান্সার, অনলাইন ব্যবসা এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
নগদ লেনদেন কমানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘দেশের দুর্নীতির মূলেই রয়েছে নগদ টাকার লেনদেন। যেখানে যেখানে দুর্নীতি আছে, সেখানে সেখানে নগদ লেনদেন জড়িত।’ তিনি জানান, টাকা ছাপানো ও ব্যবস্থাপনায় বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধাপে ধাপে নগদ লেনদেন কমানোর পরিকল্পনা করছে।
কৃষি খাতের উন্নয়নে ঋণের প্রবাহ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে গভর্নর বলেন, ‘বর্তমানে মোট ঋণের মাত্র ২ শতাংশ কৃষি খাতে দেওয়া হয়। এটি বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করা প্রয়োজন। এছাড়া এসএমই ঋণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল থাকলেও ব্যাংকগুলোর সক্ষমতার অভাবে তা যথাযথভাবে বিতরণ করা যাচ্ছে না।’
খাদ্যশস্য উৎপাদনে দেশের সাফল্যের কথাও তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৩০ লাখ টন। এখন তা প্রায় ৪ কোটি টনে উন্নীত হয়েছে। জনসংখ্যা দ্বিগুণ হলেও উৎপাদন তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে, যা একটি বিশাল অর্জন।’
অনুষ্ঠানে কৃষিখাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ৮ জন ব্যক্তি ও ৩টি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়। পাঁচ শতাধিক আবেদন যাচাই-বাছাই করে এই বিজয়ীদের নির্বাচিত করা হয়েছে।
এমকে
অর্থনীতি
স্বর্ণের দাম কমলো
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের ২২ ক্যারেট প্রতি ভরির (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) দাম ১ হাজার ৫০ টাকা কমানো হয়েছে। এতে এক ভরি সোনার দাম ২ লাখ ১১ হাজার ৯৫ টাকা হয়েছে।
স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পাকা সোনা) দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে এ দাম কমানো হয়েছে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠকে করে এ দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) ঘোষণা দিয়ে আজ ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম এক হাজার ৫৭৪ টাকা বাড়ানো হয়। এ দাম বাড়ানোর ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে এখন দাম কমানো হলো।
এখন সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ৫০ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৯৫ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ১ হাজার ৩৩ টাকা কমিয়ে ২ লাখ ১ হাজার ৪৯৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ৮৬৩ টাকা কমিয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৭২ হাজার ৭০৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনায় ৭৩৫ টাকা কমিয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৮৯ টাকা।
গত ৩০ নভেম্বর সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ৫৭৪ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ১২ হাজার ১৪৫ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ১ হাজার ৪৯৩ টাকা বাড়িয়ে ২ লাখ ২ হাজার ৪৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ১ হাজার ২৮৩ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ৯৭ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৪ টাকা। আজ মঙ্গলবার এই দামে সোনা বিক্রি হয়েছে।
সোনার দাম কমানো হলেও রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ২৪৬ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ৪ হাজার ৪৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ৩ হাজার ৪৭৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৬০১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থনীতি
যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা হচ্ছে ৮৪২ কোটি টাকা গম
যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে ৮৪২ কোটি ৬ লাখ টাকায় ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রতি মেট্রিক টন গমের দাম ধরা হয়েছে ৩১২.২৫ মার্কিন ডলার।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই গম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কমিটির সভাপতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ভার্চ্যুয়ালি বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৮ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। গত ১৮ নভেম্বর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় ৩ লাখ মেট্রিক টন গম জিটুজি পদ্ধতিতে আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন গম জিটুজি পদ্ধতিতে আমদানির জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠানো হয়। বাংলাদেশের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস হোয়াট অ্যাসোসিয়েটস গম সরবরাহের আগ্রহ ব্যক্ত করে পত্র পাঠায়। দুই দেশের মধ্যে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে নির্ধারিত প্রতি মেট্রিক টন ৩১২.২৫ মার্কিন ডলারে কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এতে এই গম আমদানি করতে মোট ব্যয় হবে ৬ কোটি ৮৬ লাখ ৯৫ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৮৪২ কোটি ৬ লাখ ৩৩ হাজার ১০০ টাকা। যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস হোয়াট অ্যাসোসিয়েটস কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এগ্রোক্রপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই গম আমদানি করা হবে।
বৈঠকে জানানো হয়, ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৪ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ থেকে বিরত রয়েছে।
অর্থনীতি
সৌদি স্ক্যানার স্থাপনের পর বেড়েছে পতেঙ্গার কার্গো হ্যান্ডলিং
মাসের পর মাস প্রত্যাশার তুলনায় কম পারফরম্যান্সের পর পতেঙ্গার কনটেইনার টার্মিনালে কনটেইনার হ্যান্ডলিং এবং জাহাজ আগমনে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। আগামী বছরের জুন নাগাদ টার্মিনালটির কার্যক্রম পূর্ণ সক্ষমতায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা একটি আমদানি স্ক্যানার—যা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ার পর বিদেশি অপারেটর রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল (আরএসজিটিআই) নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয়ে গত মে মাসে এনে স্থাপন করে। এই স্ক্যানার টার্মিনালের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ অন্যান্য নতুন সরঞ্জাম এখনও আনা হচ্ছে।
চলতি বছরের মে পর্যন্ত টার্মিনালটি শুধু রপ্তানি কনটেইনারই পরিচালনা করতে পারত। মে থেকে অক্টোবর—এই পাঁচ মাসে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল ১ লাখ ৮ হাজার ২২৮ টিইইউএস কনটেইনার পরিচালনা করেছে; যা এর প্রথম ১৬ মাসের মোট কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের সমান।
মাসওয়ারি কার্গো হ্যান্ডলিংও স্থিরভাবে বেড়েছে—মে মাসে ১৩,৩১৪ টিইইউএস, জুনে ১৪,৫২৭ টিইইউএস এবং জুলাইয়ে ১৫,৩৯৬ টিইইউএস হ্যান্ডলিংয়ের পর আগস্টে তা অনেকটা বেড়ে ২২,৬৩৬ টিইইউএসে পৌঁছায়—যা টার্মিনালটির সর্বোচ্চ মাসিক কার্গো হ্যান্ডলিং। সেপ্টেম্বর মাসে এ কার্যক্রম কমে ১৭,৩৩৭ টিইইউএসে নামলেও— অক্টোবরে আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে নতুন রেকর্ড ২৫,০১৮ টিইইউএস স্পর্শ করে।
সৌদি প্রতিষ্ঠান আরএসজিটিআইয়ের মাধ্যমে ২০২৪ সালের জুন থেকে ২২ বছরের কনসেশন চুক্তিতে পরিচালিত এই টার্মিনাল এখনো বড় ধরনের কনটেইনার দক্ষভাবে হ্যান্ডল করার জন্য আধুনিকায়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যাতে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ বা কনটেইনারের জট কমানো যায়।
এই প্রবৃদ্ধি টার্মিনালে জাহাজ আগমন বেড়ে যাওয়াও এ প্রবৃদ্ধিকে তুলে ধরে। ফলে রপ্তানি কার্গোর প্রবাহ আরও পূর্বানুমানযোগ্য হয়ে উঠেছে। শুধু আগস্ট মাসেই সাতটি জাহাজ ভিড়েছে। আর ছয় মাসে রপ্তানি কনটেইনারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৩,৩৩২ টিইইউএস, যার তুলনায় আমদানি কার্গো ৫৪,৮৯৬ টিইইউএস সামান্য বেশি।
সাম্প্রতিক সময়ের প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল এখনও এর নকশাগত সক্ষমতার অনেক নিচে চলছে। আগস্টের সর্বোচ্চ পর্যায়ে টার্মিনালটি মাসিক ৪১,৭০০ টিইইউএস তাত্ত্বিক সক্ষমতার মাত্র ৫৪ শতাংশই ব্যবহার করতে পেরেছে। সেপ্টেম্বর তা নেমে আসে প্রায় ৪২ শতাংশে এবং অক্টোবর আবার ৪৯ শতাংশে পৌঁছায়।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন টার্মিনালে অনেক শিপিং লাইন এখনো নিয়মিত জাহাজ শিডিউল করছে না—এ ধরনের সীমাবদ্ধতা এই প্রাথমিক পর্যায়ের জন্য স্বাভাবিক ঘটনা।
আরএসজিটিআই জানিয়েছে, ধীরে ধীরে কার্যক্রম বাড়ার বিষয়টি চলমান সরঞ্জাম স্থাপন ও কনসেশন চুক্তির অন্তর্ভুক্ত দুই বছরের উন্নয়ন পর্যায়েরই অংশ।
ইতোমধ্যে ১৪টি রাবার-টায়ার্ড গ্যান্ট্রি (আরটিজি) ক্রেন এসে পৌঁছেছে। সেগুলো এখন কমিশনিংয়ের কাজ চলছে, আর চারটি শিপ-টু-শোর (এসটিএস) গ্যান্ট্রি ক্রেন ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে চালু হওয়ার কথা। অপারেটর বলছে, ২০২৬ সালের মধ্যভাগে টার্মিনাল পুরো সক্ষমতায় পৌঁছাবে।
কার্গো হ্যান্ডলিং এখনো কেন সক্ষমতার নিচে রয়েছে—এ প্রশ্নের উত্তরে আরএসজিটি চট্টগ্রামের কমার্শিয়াল ও পাবলিক অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান সৈয়দ আরেফ সরওয়ার বলেন, প্রথম নয় মাস আমরা শুধু রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডল করেছি। স্ক্যানার না থাকায় আমদানি কার্গো নিতে পারিনি, তাই সংখ্যা কম ছিল।
তিনি বলেন, এনবিআরকে বারবার অনুরোধ করেও স্ক্যানার না পাওয়ায় আমরা নিজেদের অর্থে স্ক্যানার স্থাপন করি এবং মে মাসে আমদানি কার্যক্রম শুরু করি। এরপর থেকেই আমাদের হ্যান্ডলিং গতি পেয়েছে। অক্টোবরে ১৪টি আরটিজি এসেছে, এর মধ্যে চারটি ইতোমধ্যে কমিশনিং সম্পন্ন হয়েছে। আগামী বছরের এপ্রিল মাসে আমরা এসটিএস গ্যান্ট্রি ক্রেন পাব এবং জুনের মধ্যে সেগুলো চালু হবে। আমরা নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। ২০২৬ সালের জুনে ফুল অপারেশনে যেতে পারব, এই পূর্ণ সক্ষমতাকেই আমরা কাজে লাগাতে চাই। সবকিছু পরিকল্পনামাফিক চললে, ২০২৬ সালে আমরা সাড়ে ৪ লাখ টিইইউএস পরিচালনার প্রত্যাশা করছি, তিনি যোগ করেন।
তবে সেই লক্ষ্যের পথে কিছু বাধার বিষয়ও তুলে ধরে আরেফ সরওয়ার বলেন, একটি ট্রেইলারের ডেলিভারি অর্ডার নিয়ে কনটেইনার লোড করে স্ক্যানারে পৌঁছাতে মাত্র ১৫ মিনিট লাগে। কিন্তু স্ক্যানিংয়ের পর কাস্টমস কর্মকর্তারা ট্রেইলার ছাড়তে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নেন—এতে লিড টাইম বেড়ে যায়।
তিনি জানান, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বা সিপিএ-পরিচালিত টার্মিনালগুলোর তুলনায় দ্রুতগতিতে কাজ করছে, সিপিএ ঘণ্টায় ২৭ মুভস করলেও পতেঙ্গায় হচ্ছে ৪৭ মুভস। তবে যানবাহন ছাড়তে বিলম্ব হওয়ায় সামগ্রিক পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়ছে।
সরওয়ার আরও বলেন, টার্মিনালটি শুরুতে এলসিএল (লেস দ্যান কনটেইনার লোড) কনটেইনার নিয়ে সমস্যায় পড়েছিল সীমিত স্টোরেজ সক্ষমতার কারণে। “আমাদের মাত্র ১০০ টিইইউএস সক্ষমতার একটি শেড ছিল, যা সম্প্রতি ৩০০ টিইইউএসে সম্প্রসারণ করেছি। কাস্টমস এজেন্ট এবং পরিবহন শ্রমিকদের জন্য ফ্যাসিলিটিও যোগ করেছি। তবে আমাদের কঠোর কমপ্লায়েন্স প্রক্রিয়া নিয়ে লোকজন অভিযোগ করে।
তিনি বলেন, আমরা ব্যবসা করতে এসেছি, আর আমাদের ব্যবসা কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ওপর নির্ভরশীল। যত বেশি কনটেইনার হ্যান্ডল করব, ব্যবসাও তত বাড়বে। আগামী বছর আমরা সক্ষমতার বেশি হ্যান্ডল করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি।
অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম বলেন, সব সরঞ্জাম স্থাপনের পর সৌদি অপারেটর টার্মিনালকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর সুযোগ পাবে। তারা যদি সেটা করতে পারে, তাহলে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমবে। এটি একটি আশাব্যঞ্জক প্রকল্প, তবে আগামী বছরগুলোতে এটি কেমন পারফর্ম করে—তাও দেখার বিষয়।
এবিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার এবং মুখপাত্র এইচ এম কবির বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। তবে খোঁজ নিয়ে আপনাকে জানাতে পারব।



