রাজনীতি
সুখবর পেলেন বিএনপির ২৪ নেতা
দলীয় সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বিএনপি’র আরও ২৪ জন নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তাদের দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে তাদের আবেদনের ভিত্তিতে এবার এই ২৪ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হলো।
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন সাতক্ষীরা জেলাধীন ইশ্বরদীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেলাল-ই-মোস্তফা টুটুল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন সরাইল উপজেলার অন্তর্গত অরুয়াইল ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. বাদল আহমেদ, পাবনা জেলাধীন আটঘরিয়া উপজেলার অন্তর্গত মাঝপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইউসুফ আলী প্রামানিক, জামালপুর জেলাধীন মাদারগঞ্জ উপজেলার ৬নং আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মাহমুদুল হাসান চৌধুরী মুক্তা, নাটোর জেলাধীন লালপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ছিদ্দিক আলী মিষ্টু, পিরোজপুর জেলাধীন নাজিরপুর থানার অন্তর্গত সদর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সদস্য মো. রাসেল সিকদার।
এ ছাড়াও বান্দরবান জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ, বান্দরবান জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মো. আবুল কালাম, বান্দরবান জেলা মহিলা দলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও নাইক্ষ্যছড়ি উপজেলা মহিলা দলের সাবেক সভাপতি হামিদ চৌধুরী, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, আলীকদম উপজেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ রিটন, লামা উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি জাকের হোসেন মজুমদার; চট্টগ্রাম জেলাধীন বাঁশখালী উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য আলহাজ্ব মো. আসহাব উদ্দিন চেয়ারম্যান, কুড়িগ্রাম জেলা মহিলা দলের সাবেক সদস্য ও নাগেশ্বরী উপজেলা মহিলা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোছা. ফেরদৌসী বেগম, নাগেশ্বরী উপজেলা মহিলা দলের সাবেক সভাপতি মোছা. আমিনা বেগম অনন্যা।
এ তালিকায় আরও রয়েছেন, খুলনা জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মো. জহুরুল হক, খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য শেখ সাজ্জাদ হোসেন তোতন, রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ও বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির মানিক, সিরাজগঞ্জ জেলাধীন পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি বেলাল হোসেন, পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলাম মিন্টু, পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য মুকুল হোসেন, উল্লাপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মিজানুর রহমান বাবু, উল্লাপাড়া উপজেলার অন্তর্গত পঞ্চক্রোশী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী ও বড়হর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছাকোয়াত হোসেন সাবুও এই সিদ্ধান্তের ফলে দলে ফিরছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আবেদনের প্রেক্ষিতে দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক বুধবার তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
রাজনীতি
এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে বিজিবি মোতায়েন
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাজ্য থেকে আসা চার সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল টিম ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে কাজ শুরু করেছে।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে দলটি হাসপাতালে পৌঁছায় এবং পৌঁছানোর পরই চিকিৎসা কার্যক্রমে অংশ নেয়। এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ড. রিচার্ড বিল।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, চিকিৎসক দলটি প্রথমেই সিসিইউতে গিয়ে খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে এবং তার অবস্থা এখনো সংকটজনক। তবে তিনি চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে।
জানা যায়, বিদেশি বিশেষজ্ঞ টিম দীর্ঘমেয়াদি রোগ ব্যবস্থাপনা, ঝুঁকির বর্তমান মাত্রা, অর্গান সাপোর্ট এবং পরবর্তী করণীয় বিষয়ে উন্নত চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রণয়নে কাজ করবে।
তারা স্থানীয় মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ এবং বর্তমান চিকিৎসা অগ্রগতির মূল্যায়ন করবেন।
প্রথম দিনের কাজের অংশ হিসেবে বিশেষজ্ঞ দলটি খালেদা জিয়ার বিভিন্ন জটিলতার ক্লিনিক্যাল নোট, সর্বশেষ টেস্ট রিপোর্ট এবং ব্যবহৃত সাপোর্ট সিস্টেমের ডকুমেন্টেশন পর্যালোচনা করেছে। এরপর স্থানীয় চিকিৎসকদের সঙ্গে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা হয়।
রাজনীতি
আ.লীগ অভদ্র, জামায়াত অসভ্য দল: মির্জা আব্বাস
জামায়াতে ইসলামী আওয়ামী লীগের মতো অসভ্য দল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে মেডিক্যাল ক্যাম্প উদ্বোধনকালে এ মন্তব্য করেন তিনি।
জামায়াতের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, একটা খারাপ কথা বলতে হয়, আসলে আপনাদের ওষুধ হলো আওয়ামী লীগ। কোনো ভদ্র লোকের সঙ্গে ওরা কাজ করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ একটা অভদ্র দল, এরাও একটা অসভ্য দল।
জামায়াতে ইসলামীকে ধর্ম বিকৃতকারী দল দাবি করে তিনি বলেন, এরা ধর্ম বিকৃতকারী একটা দল। এরা মওদুদবাদে বিশ্বাস করে। এরা ইসলামে বিশ্বাস করে না। এসব লোকের হাত থেকে দয়া করে বেঁচে থাকবেন।
মির্জা আব্বাস আরো বলেন, ‘১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা রাজাকার ও আলবদর হিসেবে পরিচিত ছিল, তারা তখন বাংলাদেশের জনগণ ও নারীদের পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিল। আজ তারাই আবার ভোট চাইছে এবং বড় বড় কথা বলছে। তারা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিল?
যারা বাংলাদেশ চায়নি তারাই এখন বাংলাদেশে ভোট চায় বলেও মন্তব্য করেন মির্জা আব্বাস।
বক্তব্যের সময় তিনি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতায় সবার কাছে দোয়া চান।
রাজনীতি
বাংলাদেশে প্রবেশের পর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পাবেন তারেক রহমান
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার মধ্যে তার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার গুঞ্জন উঠেছে। যদিও সম্প্রতি এক পোস্টে তারেক রহমান দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত তার ‘একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়’ বলে দাবি করেছেন। এতকিছুর মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, তারেক রহমানের দেশে না ফেরার অন্যতম কারণ নিরাপত্তাহীনতা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রবেশের পর বিমানবন্দর থেকে তিনি স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) এর নিরাপত্তাও পেতে পারেন। এ ব্যাপারে সরকারি সিদ্ধান্ত সময়মতো নেওয়া হবে।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বা সমমর্যাদার ব্যক্তিরা এই নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। সম্প্রতি, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সরকারের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করে তাকে এসএসএফের নিরাপত্তা দিয়েছে সরকার।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে নিরাপত্তা শঙ্কা নেই, তার ব্যক্তিগত কোনো নিরাপত্তা শঙ্কাও নেই। তিনি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পাবেন।
সূত্র জানিয়েছে, তারেকের দেশে ফেরার গুঞ্জন থাকলেও বুধবার (৩ ডিসেম্বর) পর্যন্ত তিনি দেশে ফেরার কোনো উদ্যোগ নেননি। বুধবার খালেদা জিয়ার কিছু মেডিকেল টেস্ট রয়েছে। টেস্টের রিপোর্ট নেতিবাচক হলে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার সক্ষমতার বিষয়ে যাচাই-বাছাই হবে। যদি সেটি সম্ভব না হয়, তারেক রহমান তাৎক্ষণিক দেশে ফিরতে পারেন। তবে সার্বিকভাবে তিনি ডিসেম্বরের ১১ তারিখের মধ্যে দেশে ফিরতে পারেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেবেন উল্লেখ করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে শিগগিরই তিনি দেশে ফিরবেন বলে আশা করি।
এর মধ্যে গত ২৯ নভেম্বর ফেসবুক পোস্টে তারেক রহমান বলেন, ‘দেশে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।’ এ বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠে, কী কারণে দেশে ফিরছেন না বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান? রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর সমালোচনায় বিএনপি নেতারা আভাস দিচ্ছেন, নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে ফিরছেন না তারেক রহমান। যদিও কোথায় কী ঝুঁকি রয়েছে, তা স্পষ্ট করেননি কেউ।
এদিকে, মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেননি লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান। দেশে ফিরতে তাকে বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করতে হবে। অথবা ট্রাভেল পাস নিতে হবে। সরকার আগেই জানিয়েছিল, তারেক রহমান চাইলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ট্রাভেল পাস দেওয়া হবে। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ট্রাভেল পাস চাননি। তিনি চাইলেই ইস্যু হবে।
অন্যদিকে, সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশে কারো কোনো নিরাপত্তার শঙ্কা নেই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারো যদি বিশেষ নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়, সেটি দেওয়ার জন্যও মন্ত্রণালয় প্রস্তুত আছে।
রাজনীতি
আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করার পক্ষে ৬৯ শতাংশ মানুষ
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী ৮০ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে ৪২ শতাংশ ‘খুবই আশাবাদী’। তবে দেশের সমস্যাগুলো নিয়ে তাদের উদ্বেগও রয়েছে। এর মধ্যে দুর্নীতিকে দেশের প্রধান সমস্যা বলে মনে করছেন নাগরিকরা। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) সর্বশেষ জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। জরিপে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, গণতন্ত্র, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে নাগরিকদের মূল্যায়ন স্থান পেয়েছে।
চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের আটটি বিভাগে এ জরিপ পরিচালনা করে আইআরআইয়ের প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইনসাইটস ইন সার্ভে রিসার্চ। ‘ন্যাশনাল সার্ভে অব বাংলাদেশ, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০২৫’ শিরোনামে গত সোমবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে ফল প্রকাশ করা হয়।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৩ শতাংশ মনে করেন দেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে, যেখানে ৪২ শতাংশ ভিন্নমত দিয়েছেন। উন্নতির কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন অর্থনৈতিক অগ্রগতি, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ও খাদ্য নিরাপত্তা। অন্যদিকে যারা মনে করেন দেশ ভুল পথে যাচ্ছে, তারা প্রধান কারণ হিসেবে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন। তবে এসব সত্ত্বেও দেশ নিয়ে আশাবাদী তারা। কিন্তু এ আশাবাদের পথে অন্তরায় দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইনশৃঙ্খলার সমস্যা, বেকারত্ব ইত্যাদি।
জরিপের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের ২১ শতাংশ নাগরিক দুর্নীতিকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন আর ১৮ শতাংশের কাছে বড় সমস্যা দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। দেশের নাগরিকদের বড় এটি অংশের মত, চাকরি পেতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির শিকার হতে হয়। ৩০ শতাংশ মানুষের ভাবনা এমনই। অন্যদিকে ১৮ শতাংশ নাগরিক মনে করেন সরকারি জাতীয় চুক্তিগুলোয় দুর্নীতি হয়।
দেশের দুর্নীতি বন্ধ না হওয়ার পেছনে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণকে দায়ী করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অন্যান্য দেশের মতো নির্বাহীর নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে আনতে হবে। তা না হলে রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি দমনে তারা ভূমিকা রাখতে পারবে না। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এ সুপারিশ দিয়েছে। কিন্তু দুদককে স্বাধীন করার বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারই বাদ দিচ্ছে বলে মনে হয়।
এদিকে, আইআরআইয়ের জরিপে অংশ নেওয়া ৪৮ শতাংশ মানুষ আগামী বছর দেশের অর্থনীতি আরো ভালো হবে বলে মনে করেন। মাত্র ১৮ শতাংশ মনে করেন, অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপের দিকে যাবে। ৭২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রয়েছে।
জরিপের পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) পছন্দ করেন ৫১ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে ৫৩ শতাংশ মানুষ জামায়াতে ইসলামীকে পছন্দ করেন বলে জানিয়েছেন। বিএনপিকে অপছন্দ করেন ৪৩ শতাংশ এবং জামায়াতে ইসলামীকে ৪০ শতাংশ। এছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগকে যথাক্রমে ৩৮, ৩৩ ও ২৫ শতাংশ মানুষ পছন্দ করেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবেন কি না- জানতে চাইলে ৬৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন, তারা অবশ্যই ভোট দেবেন। ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন আরো ২৩ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে, মাত্র ৯ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন তারা সম্ভবত ভোট দেবেন না।
আগামী সপ্তাহে ভোট হলে কোন দলকে ভোট দেবেন- এমন প্রশ্নে ৩০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বিএনপির কথা বলেছেন, যেখানে ২৬ শতাংশ মানুষ জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দেবেন বলে জরিপে উঠে এসেছে। অন্যদিকে এনসিপিকে ৬ শতাংশ, জাতীয় পার্টিকে ৫ এবং ইসলামী আন্দোলনকে ৪ শতাংশ মানুষ ভোট দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। অন্য দলগুলোর ভোট রয়েছে ১১ শতাংশ। ৭ শতাংশ ভোটার জানিয়েছেন, তারা কাকে ভোট দেবেন সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নন। এ প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করেন ১১ শতাংশ ভোটার।
তবে আগামী নির্বাচনে ইসলামী দলগুলো বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জোটবদ্ধ নির্বাচন করলে সেটি বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেও দুই দলের ভোট বিএনপির সমান। সেক্ষেত্রে অন্য যেসব দল ও সাধারণ ভোটার আছে, তারা মূল ব্যবধান গড়ে দেবে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিএনপি-জামায়াতের জনসমর্থন প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন বাড়তে দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে দুই দলের মধ্যে দুর্নীতি করা না করার বিষয়টি রয়েছে বলে মনে করেন ড. দিলারা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘জামায়াতের একটা সুনাম আছে, তারা দুর্নীতিবাজ নয়। মানুষ বলছে, বিএনপি-আওয়ামী লীগ- দুটিই দেখলাম, এবার জামায়াতকে দেখব। জামায়াত সরকার গঠন করতে পারবে কি না আমি জানি না। তবে একটি ভালোসংখ্যক আসন নিয়ে তারা সংসদে যাবে বলে মনে হয়। সেটা একদিক দিয়ে ভালো, সংসদে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল আসবে।
বিএনপির আগামীর রাজনীতি নিয়ে ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, যদি খালেদা জিয়ার কিছু হয় আর তারেক জিয়া আসতে না পারেন আমার মনে হয় নির্বাচনটা তাহলে পিছিয়ে যাবে।’
এদিকে জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর দেশের বেশিরভাগ মানুষের আস্থা ও সন্তুষ্টি রয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৬৯ শতাংশ মানুষ ড. ইউনূসকে সমর্থন করেছেন, আর ৭০ শতাংশ বর্তমান সরকারের কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। যেখানে ২৬ শতাংশ মানুষ এর বিরোধিতা করেছেন এবং বাকি চার শতাংশ মানুষ কোনো মতামত দেননি।
জরিপের তথ্যে আরো দেখা গেছে, ৬৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মানুষ জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করাকে তারা সমর্থন করেন। এ ছাড়া দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ মনে করেন ভবিষ্যতের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৫২ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা দেশে নতুন রাজনৈতিক দল দেখতে চান। যেখানে ৪৩ শতাংশ বর্তমান দলগুলোর ওপর সন্তুষ্টি ব্যক্ত করেছেন।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৮ শতাংশ মানুষ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজনকে বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় সংস্কার বলে মনে করেন। আর ৭৪ শতাংশ মনে করে বর্তমান সরকার সুন্দরভাবে সংস্কার কাজ শেষ করতে পারবে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, পলিটিক্যাল এলিট ও জনগণের মধ্যে বিশাল দূরত্ব দেখছেন ৮৮ শতাংশ মানুষ। ৯ শতাংশ মানুষ মনে করছেন এর বিপরীত। অন্যদিকে ধর্ম ও জাতীয়তার ভিত্তিতে বৈষম্য রয়েছে বলে দাবি জানিয়েছেন ৩৪ শতাংশ মানুষ। ৬১ শতাংশের দাবি এর চেয়ে ভিন্ন। জরিপে গণমাধ্যমের ওপর আস্থা রয়েছে ৬০ শতাংশ মানুষের।
জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের ওপর সবচেয়ে বেশি (৬৩ শতাংশ) ইতিবাচক প্রভাব আছে রাশিয়ার। আর সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব (৬০ শতাংশ) রয়েছে ভারতের। সেনাবাহিনীর কাজে আস্থা রয়েছে ৭৯ শতাংশ মানুষের।
এ ছাড়া সমযোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নারীদের কর্মক্ষেত্রে নিয়োগের পক্ষে মত দিয়েছেন মাত্র ১৬ শতাংশ মানুষ। আর পুরুষদের নিয়োগের পক্ষে মত ৬২ শতাংশের। তবে ২০ শতাংশ মনে করেন এক্ষেত্রে বৈষম্য করা ঠিক নয়।
আইআরআইয়ের পরিসংখ্যানমতে, স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক মতপ্রকাশ করতে পারেন বলে মনে করেন ৬৩ শতাংশ মানুষ। ৩৫ শতাংশ তা মনে করেন না। ৯০ শতাংশ মানুষ মনে করেন দেশে সবার সমান অধিকার রয়েছে। গত এক বছরে রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব বেড়েছে বলে মনে করেন ৫০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। তবে ২৬ শতাংশের দাবি, অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে।
দেশের পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলো অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে মনে করেন ৬৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। ৩০ শতাংশের দাবি এর বিপরীত। আওয়ামী লীগের পতন হওয়া আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন ৭০ শতাংশ নাগরিক, এর বিরোধিতা করেন ২৩ শতাংশ। অন্তর্বর্তী সরকারকে বৈধ বলে মনে করেন ৬৪ শতাংশ মানুষ।
এদিকে জরিপের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, দেশ নিয়ে একটা বড়সংখ্যক মানুষ আশাবাদী, তবে যুবক ও তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গিও মূল্যায়ন করতে হবে। তাদের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করছে, দেশ ভুল পথে যাচ্ছে। এ জন্য দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বেকারত্ব ও দ্রব্যমূল্যের বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে। আওয়ামী লীগ আমলে দেশের ভঙ্গুর দশার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সহজসাধ্য কাজ নয়। অন্তর্বর্তী সরকার সে কাজটা করতে চেষ্টা করছে। তবে এ কাজে সরকারকে আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সমর্থনের বিষয়ে ড. মঈনুল ইসলাম বলেন, যেই সময়ে জরিপ চালানো হয়েছে সেই সময়টাতে মানুষ সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে কি না সেটি নিশ্চিত নয়। কারণ তখন নির্বাচনের সময়সীমা স্পষ্ট ছিল না। এ ছাড়া অনেকেই তাদের প্রার্থী চয়েস করতে পারেননি। তবে এখন করলে এটার সঙ্গে জরিপের পার্থক্য হবে।
এমকে
রাজনীতি
খালেদা জিয়ার অসুস্থতা শেখ হাসিনার কারণে: রিজভী
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা শেখ হাসিনার কারণেই বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় জাতীয়তাবাদী কৃষকদল আয়োজিত দোয়া মাহফিলে তিনি এ অভিযোগ তোলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, যিনি নিজের মাটি, দেশ, জনগণ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপস করেননি তার প্রতি সবার ভালোবাসা থাকবেই। সেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাচ্ছি।
তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে অন্যায় দাবির মুখেও দেশের স্বার্থে বেগম জিয়া অনেক সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে যেন কোনো সহিংসতা না ঘটে- এ জন্য সরকার গঠন করে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, যারা সহিংসতা ঘটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এনেছিল, তারাই ক্ষমতায় এসে সেটা বাতিল করেছে।
তিনি বলেন, জনগণের ওপর বিশ্বাস না রেখে নিজের ইচ্ছামতো দেশ চালিয়েছেন শেখ হাসিনা। অথচ ১৯৯৫-৯৬ সালে বাস-ট্রাক পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে দাবি তুলেছিলেন তিনি। বেগম জিয়ার অসুস্থতা ওই হাসিনার কারণেই।
এই বিএনপি নেতা বলেন, দেশের কোটি কোটি মানুষের দোয়ায় গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া আবারও জনগণের মাঝে ফিরে আসবেন।
এমকে



