অর্থনীতি
সৌদি স্ক্যানার স্থাপনের পর বেড়েছে পতেঙ্গার কার্গো হ্যান্ডলিং
মাসের পর মাস প্রত্যাশার তুলনায় কম পারফরম্যান্সের পর পতেঙ্গার কনটেইনার টার্মিনালে কনটেইনার হ্যান্ডলিং এবং জাহাজ আগমনে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। আগামী বছরের জুন নাগাদ টার্মিনালটির কার্যক্রম পূর্ণ সক্ষমতায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা একটি আমদানি স্ক্যানার—যা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ার পর বিদেশি অপারেটর রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল (আরএসজিটিআই) নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয়ে গত মে মাসে এনে স্থাপন করে। এই স্ক্যানার টার্মিনালের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ অন্যান্য নতুন সরঞ্জাম এখনও আনা হচ্ছে।
চলতি বছরের মে পর্যন্ত টার্মিনালটি শুধু রপ্তানি কনটেইনারই পরিচালনা করতে পারত। মে থেকে অক্টোবর—এই পাঁচ মাসে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল ১ লাখ ৮ হাজার ২২৮ টিইইউএস কনটেইনার পরিচালনা করেছে; যা এর প্রথম ১৬ মাসের মোট কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের সমান।
মাসওয়ারি কার্গো হ্যান্ডলিংও স্থিরভাবে বেড়েছে—মে মাসে ১৩,৩১৪ টিইইউএস, জুনে ১৪,৫২৭ টিইইউএস এবং জুলাইয়ে ১৫,৩৯৬ টিইইউএস হ্যান্ডলিংয়ের পর আগস্টে তা অনেকটা বেড়ে ২২,৬৩৬ টিইইউএসে পৌঁছায়—যা টার্মিনালটির সর্বোচ্চ মাসিক কার্গো হ্যান্ডলিং। সেপ্টেম্বর মাসে এ কার্যক্রম কমে ১৭,৩৩৭ টিইইউএসে নামলেও— অক্টোবরে আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে নতুন রেকর্ড ২৫,০১৮ টিইইউএস স্পর্শ করে।
সৌদি প্রতিষ্ঠান আরএসজিটিআইয়ের মাধ্যমে ২০২৪ সালের জুন থেকে ২২ বছরের কনসেশন চুক্তিতে পরিচালিত এই টার্মিনাল এখনো বড় ধরনের কনটেইনার দক্ষভাবে হ্যান্ডল করার জন্য আধুনিকায়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যাতে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ বা কনটেইনারের জট কমানো যায়।
এই প্রবৃদ্ধি টার্মিনালে জাহাজ আগমন বেড়ে যাওয়াও এ প্রবৃদ্ধিকে তুলে ধরে। ফলে রপ্তানি কার্গোর প্রবাহ আরও পূর্বানুমানযোগ্য হয়ে উঠেছে। শুধু আগস্ট মাসেই সাতটি জাহাজ ভিড়েছে। আর ছয় মাসে রপ্তানি কনটেইনারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৩,৩৩২ টিইইউএস, যার তুলনায় আমদানি কার্গো ৫৪,৮৯৬ টিইইউএস সামান্য বেশি।
সাম্প্রতিক সময়ের প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল এখনও এর নকশাগত সক্ষমতার অনেক নিচে চলছে। আগস্টের সর্বোচ্চ পর্যায়ে টার্মিনালটি মাসিক ৪১,৭০০ টিইইউএস তাত্ত্বিক সক্ষমতার মাত্র ৫৪ শতাংশই ব্যবহার করতে পেরেছে। সেপ্টেম্বর তা নেমে আসে প্রায় ৪২ শতাংশে এবং অক্টোবর আবার ৪৯ শতাংশে পৌঁছায়।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন টার্মিনালে অনেক শিপিং লাইন এখনো নিয়মিত জাহাজ শিডিউল করছে না—এ ধরনের সীমাবদ্ধতা এই প্রাথমিক পর্যায়ের জন্য স্বাভাবিক ঘটনা।
আরএসজিটিআই জানিয়েছে, ধীরে ধীরে কার্যক্রম বাড়ার বিষয়টি চলমান সরঞ্জাম স্থাপন ও কনসেশন চুক্তির অন্তর্ভুক্ত দুই বছরের উন্নয়ন পর্যায়েরই অংশ।
ইতোমধ্যে ১৪টি রাবার-টায়ার্ড গ্যান্ট্রি (আরটিজি) ক্রেন এসে পৌঁছেছে। সেগুলো এখন কমিশনিংয়ের কাজ চলছে, আর চারটি শিপ-টু-শোর (এসটিএস) গ্যান্ট্রি ক্রেন ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে চালু হওয়ার কথা। অপারেটর বলছে, ২০২৬ সালের মধ্যভাগে টার্মিনাল পুরো সক্ষমতায় পৌঁছাবে।
কার্গো হ্যান্ডলিং এখনো কেন সক্ষমতার নিচে রয়েছে—এ প্রশ্নের উত্তরে আরএসজিটি চট্টগ্রামের কমার্শিয়াল ও পাবলিক অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান সৈয়দ আরেফ সরওয়ার বলেন, প্রথম নয় মাস আমরা শুধু রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডল করেছি। স্ক্যানার না থাকায় আমদানি কার্গো নিতে পারিনি, তাই সংখ্যা কম ছিল।
তিনি বলেন, এনবিআরকে বারবার অনুরোধ করেও স্ক্যানার না পাওয়ায় আমরা নিজেদের অর্থে স্ক্যানার স্থাপন করি এবং মে মাসে আমদানি কার্যক্রম শুরু করি। এরপর থেকেই আমাদের হ্যান্ডলিং গতি পেয়েছে। অক্টোবরে ১৪টি আরটিজি এসেছে, এর মধ্যে চারটি ইতোমধ্যে কমিশনিং সম্পন্ন হয়েছে। আগামী বছরের এপ্রিল মাসে আমরা এসটিএস গ্যান্ট্রি ক্রেন পাব এবং জুনের মধ্যে সেগুলো চালু হবে। আমরা নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। ২০২৬ সালের জুনে ফুল অপারেশনে যেতে পারব, এই পূর্ণ সক্ষমতাকেই আমরা কাজে লাগাতে চাই। সবকিছু পরিকল্পনামাফিক চললে, ২০২৬ সালে আমরা সাড়ে ৪ লাখ টিইইউএস পরিচালনার প্রত্যাশা করছি, তিনি যোগ করেন।
তবে সেই লক্ষ্যের পথে কিছু বাধার বিষয়ও তুলে ধরে আরেফ সরওয়ার বলেন, একটি ট্রেইলারের ডেলিভারি অর্ডার নিয়ে কনটেইনার লোড করে স্ক্যানারে পৌঁছাতে মাত্র ১৫ মিনিট লাগে। কিন্তু স্ক্যানিংয়ের পর কাস্টমস কর্মকর্তারা ট্রেইলার ছাড়তে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নেন—এতে লিড টাইম বেড়ে যায়।
তিনি জানান, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বা সিপিএ-পরিচালিত টার্মিনালগুলোর তুলনায় দ্রুতগতিতে কাজ করছে, সিপিএ ঘণ্টায় ২৭ মুভস করলেও পতেঙ্গায় হচ্ছে ৪৭ মুভস। তবে যানবাহন ছাড়তে বিলম্ব হওয়ায় সামগ্রিক পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়ছে।
সরওয়ার আরও বলেন, টার্মিনালটি শুরুতে এলসিএল (লেস দ্যান কনটেইনার লোড) কনটেইনার নিয়ে সমস্যায় পড়েছিল সীমিত স্টোরেজ সক্ষমতার কারণে। “আমাদের মাত্র ১০০ টিইইউএস সক্ষমতার একটি শেড ছিল, যা সম্প্রতি ৩০০ টিইইউএসে সম্প্রসারণ করেছি। কাস্টমস এজেন্ট এবং পরিবহন শ্রমিকদের জন্য ফ্যাসিলিটিও যোগ করেছি। তবে আমাদের কঠোর কমপ্লায়েন্স প্রক্রিয়া নিয়ে লোকজন অভিযোগ করে।
তিনি বলেন, আমরা ব্যবসা করতে এসেছি, আর আমাদের ব্যবসা কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ওপর নির্ভরশীল। যত বেশি কনটেইনার হ্যান্ডল করব, ব্যবসাও তত বাড়বে। আগামী বছর আমরা সক্ষমতার বেশি হ্যান্ডল করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি।
অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম বলেন, সব সরঞ্জাম স্থাপনের পর সৌদি অপারেটর টার্মিনালকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর সুযোগ পাবে। তারা যদি সেটা করতে পারে, তাহলে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমবে। এটি একটি আশাব্যঞ্জক প্রকল্প, তবে আগামী বছরগুলোতে এটি কেমন পারফর্ম করে—তাও দেখার বিষয়।
এবিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার এবং মুখপাত্র এইচ এম কবির বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। তবে খোঁজ নিয়ে আপনাকে জানাতে পারব।
অর্থনীতি
আকিজ গ্রুপের নতুন সিওও মোস্তাফিজুর রহমান
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ কনগ্লোমারেট আকিজ গ্রুপ তাদের ইলেকট্রনিক্স বিভাগে দ্রুতগতির সম্প্রসারণ, পণ্য বৈচিত্র্য এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা মোকাবিলায় মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে নতুন চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, বহুমাত্রিক দক্ষতা এবং বাজার-চালিত কৌশল বাস্তবায়নে তার সুনাম আকিজ গ্রুপের রূপান্তর-যাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।
নতুন দায়িত্বে তিনি আকিজ ইলেকট্রনিক্স ডিভিশনকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য একটি বিস্তৃত রোডম্যাপ নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার অধীনে গ্লোবাল পার্টনারশিপ সম্প্রসারণ, নতুন প্রযুক্তি ও পণ্যের উন্নয়ন এবং SKD/CKD-ভিত্তিক স্থানীয় ম্যানুফ্যাকচারিং সক্ষমতা দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে। পাশাপাশি উৎসবস্ত্র সংগ্রহ, মূল্য নির্ধারণ, বিতরণ নেটওয়ার্ক, ব্র্যান্ড পজিশনিং এবং আফটার-সেলস সার্ভিসসহ পুরো অপারেশনাল চক্রকে তিনি কৌশলগতভাবে পরিচালনা করছেন, যা ভবিষ্যৎ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বৃদ্ধির লক্ষ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আকিজে যোগদানের আগে মোস্তাফিজুর রহমান AUX RAC-এর কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে স্বল্প সময়েই বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া তার অন্যতম বড় সাফল্য। শক্তিশালী সেলস প্ল্যানিং, চ্যানেল ডেভেলপমেন্ট ও কাস্টমার-ড্রিভেন কৌশল প্রণয়নে তার দক্ষতা প্রতিষ্ঠানের বাজার অবস্থানকে দ্রুত শক্তিশালী করে। AUX-এর মতো প্রতিযোগিতাপূর্ণ সেক্টরে এমন অর্জন তার নেতৃত্বগুণ এবং বাস্তবায়ন সক্ষমতারই প্রমাণ।
এর আগে Zaynax Group-এ ক্যাটাগরি হেড হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি অ্যানালিটিক্স, পূর্বাভাস, ভেন্ডর ম্যানেজমেন্ট ও ক্যাটাগরি পারফরম্যান্স উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখান। তার নেতৃত্বে বাজার-সমন্বয় সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যা সংগঠনের একাধিক ক্যাটাগরিতে পারফরম্যান্স উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে।
নিজের কর্মজীবনের প্রতিটি ধাপেই তিনি দীর্ঘমেয়াদি মূল্য সৃষ্টি, টেকসই গ্রোথ এবং বাজার-চালিত ইনোভেশনে বিশ্বাসী। কৌশলগত নেতৃত্ব, অপারেশনাল দক্ষতা এবং ভোক্তা-কেন্দ্রিক চিন্তাভাবনার সমন্বয় তার কাজের মূল ভিত্তি। সিওও হিসেবে তার নিয়োগ আকিজ গ্রুপের ইলেকট্রনিক্স ডিভিশনের ভবিষ্যৎ রূপান্তর পরিকল্পনাকে আরো সুদৃঢ় করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আকিজ গ্রুপ ইতোমধ্যে দেশীয় ইলেকট্রনিক্স বাজারে নতুন করে নিজেদের অবস্থান গঠন করছে। এই প্রেক্ষাপটে মো. মোস্তাফিজুর রহমানের অভিজ্ঞতা প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন সক্ষমতা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং পণ্যের বৈচিত্র্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে- যা দেশের ইলেকট্রনিক্স বাজারে নতুন প্রতিযোগিতামূলক ভারসাম্য তৈরি করতে পারে।
অর্থনীতি
দাম বাড়লো এলপি গ্যাসের
ভোক্তাপর্যায়ে এলপি গ্যাসের নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের জন্য প্রতি ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ২১৫ টাকা থেকে ৩৮ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ২৫৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া অটোগ্যাসের দাম ৫৫.৫৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৫৭ টাকা ৩২ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) নতুন এ দর ঘোষণা করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।
যা সন্ধ্যা থেকে কার্যকর হবে।
এর আগে সোমবার (১ ডিসেম্বর) থেকে দেশে ভোক্তা পর্যায়ে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি ২ টাকা করে বাড়িয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। বিশ্ববাজারে মূল্য ওঠানামার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশোধিত প্রাইসিং ফর্মুলা অনুযায়ী নতুন এই মূল্য সমন্বয় করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরিফ সাদেক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় নতুন দাম (লিটারপ্রতি)
ডিজেল: ১০২ টাকা → ১০৪ টাকা
অকটেন: ১২২ টাকা → ১২৪ টাকা
পেট্রোল: ১১৮ টাকা → ১২০ টাকা
কেরোসিন: ১১৪ টাকা → ১১৬ টাকা
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের ওঠানামার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্রতি মাসে দেশের ভোক্তা পর্যায়ে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। ডিসেম্বর মাসের জন্য সংশোধিত ফর্মুলা অনুযায়ী তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিত করতেই এ সমন্বয় করা হয়েছে।
এমকে
অর্থনীতি
এলপি গ্যাসের নতুন দাম নির্ধারণ বিকেলে
তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম বাড়বে নাকি কমবে তা আজ জানা যাবে। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় চলতি (ডিসেম্বর) মাসের জন্য এই দাম ঘোষণা করা হবে। একই সঙ্গে অটোগ্যাসের নতুন দামও নির্ধারণ করা হবে।
এর আগে, সোমবার (১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সৌদি আরামকো ঘোষিত ডিসেম্বর (২০২৫) মাসের সৌদি সিপি অনুযায়ী ভোক্তা পর্যায়ে বেসরকারি এলপিজির মূল্য সমন্বয় সম্পর্কিত নির্দেশনা মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় ঘোষণা করা হবে। পাশাপাশি অটোগ্যাসের নতুন দামও ঘোষণা করা হবে।
সবশেষ গত ২ নভেম্বর এলপি গ্যাসের দাম সমন্বয় করা হয়েছিল। সে সময় ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ২৬ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ২১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এ ছাড়া একই সময়ে অটোগ্যাসের দাম সমন্বয় করা হয়। সে সময় ভোক্তা পর্যায়ে ১ টাকা ১৯ পয়সা কমিয়ে অটোগ্যাসের মূসকসহ দাম প্রতি লিটার ৫৫ টাকা ৫৮ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এমকে
অর্থনীতি
স্বর্ণের দাম আরও বাড়লো
দেশের বাজারে সোনার দাম আরও বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এক হাজার ৫৭৪ টাকা। এতে নতুন দাম দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১২ হাজার ১৪৫ টাকা।
স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ দাম বাড়ানো হয়েছে। এটি মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) থেকে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠক করে এ দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে গত রোববার (৩০ নভেম্বর) থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম বাড়ানো হয় দুই হাজার ৪০৩ টাকা। এই দাম বাড়ানোর দুদিন পর এখন আবার বাড়তি দাম কার্যকর হচ্ছে।
এছাড়া ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় এক হাজার ৪৯৩ টাকা বাড়িয়ে দুই লাখ দুই হাজার ৪৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় এক হাজার ২৮৩ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম এক লাখ ৭৩ হাজার ৫৭২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনায় এক হাজার ৯৭ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৪৪ হাজার ৪২৪ টাকা।
আগের ৩০ নভেম্বর কার্যকর হওয়া দর অনুযায়ী, প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটের সোনা দুই লাখ ১০ হাজার ৫৭০ টাকা, ২১ ক্যারেটের সোনা দুই লাখ এক হাজার ছয় টাকা, ১৮ ক্যারেটের সোনা এক লাখ ৭২ হাজার ২৮৯ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির সোনা এক লাখ ৪৩ হাজার ৩২৭ টাকা ছিল। আজ পর্যন্ত এ দামে তা বিক্রি হয়েছে।
এদিকে, সোনার দাম বাড়ানো হলেও রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে চার হাজার ২৪৬ টাকা। এছাড়া প্রতি ভরি ২১ ক্যারেটের রুপার দাম চার হাজার ৪৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের রুপার দাম তিন হাজার ৪৭৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম দুই হাজার ৬০১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থনীতি
৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের
দেশের আর্থিক খাতে দীর্ঘদিনের সংকট মোকাবিলায় বড় পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল ও সমস্যাগ্রস্ত অবস্থায় থাকা ৯টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড।
রবিবার (৩০ নভেম্বর) গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত আসে। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন হবে সদ্য জারি করা ‘ব্যাংক রেজুলিউশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ অনুযায়ী, যা ব্যর্থ ব্যাংক ও এনবিএফআইকে একীভূত, পুনর্গঠন বা লিকুইডেট করার প্রথম পূর্ণাঙ্গ কাঠামো।
বন্ধ হওয়ার তালিকায় থাকা ৯টি এনবিএফআই হচ্ছে—এফএএস ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), প্রিমিয়ার লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, আবিভা ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং।
এই ৯টি প্রতিষ্ঠান মোট খেলাপি ঋণের ৫২ শতাংশ এর দায় বহন করছে। যার পরিমাণ গত বছরের শেষে দাঁড়ায় ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা।
আমানতকারীদের অগ্রাধিকার
বহু প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর ধরে পরিপক্ব আমানত ফেরত দিতে পারছে না। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়াই প্রথম লক্ষ্য। সরকার মৌখিকভাবে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব বলছে, এই ৯ প্রতিষ্ঠানে আটকে আছে ১৫ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার আমানত। এর মধ্যে ব্যক্তিগত আমানত ৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা, আর ব্যাংক ও করপোরেট আমানত ১১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা।
ব্যক্তিগত আমানতের মধ্যে সর্বোচ্চ আটকে আছে—পিপলস লিজিং ১ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা, আবিভা ফাইন্যান্স ৮০৯ কোটি টাকা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ৬৪৫ কোটি টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্স ৩২৮ কোটি ও এফএএস ফাইন্যান্স ১০৫ কোটি টাকা।
৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭টির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য ঋণাত্মক ৯৫ টাকা— অর্থাৎ সব সম্পদ বিক্রি করলেও শেয়ারহোল্ডারদের হাতে কিছুই থাকবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্বল নজরদারি, সম্পর্কিত দলকে ঋণ, জমে থাকা ঋণ পুনরুদ্ধারের ব্যর্থতা, কৃত্রিমভাবে সম্পদ বেশি দেখানো—এসব কারণে বহু প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর ধরে কার্যত দেউলিয়া অবস্থায় ছিল।
এ বছরের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ এনবিএফআইকে ‘রেড ক্যাটাগরিতে’ চিহ্নিত করে; সেখান থেকেই ৯টিকে বন্ধের তালিকায় আনা হয়।
ঝুলছে ১১ প্রতিষ্ঠানের ভাগ্য
যাদের পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে—সিভিসি ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, হজ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, আইআইডিএফসি, উত্তরা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স ও ইউনিয়ন ক্যাপিটাল।
পাঁচ শরিয়াহ ব্যাংক একীভূত করে নতুন ব্যাংক
সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করে গঠিত ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’কে লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি দেশের ইতিহাসে একীভূত হওয়া সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করছে।



