Connect with us
৬৫২৬৫২৬৫২

মত দ্বিমত

চট্টগ্রাম বন্দর সংস্কার: কার স্বার্থে ‘নিরাপত্তা’র ভয়

Published

on

ব্লকে

চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান প্রবেশদ্বার। দেশের মোট আমদানি এবং রপ্তানার প্রায় নব্বই শতাংশ এখান দিয়ে সম্পন্ন হয়। তাই বন্দর কেবল একটি স্থাপনা নয়, এটি জাতীয় অর্থনীতির হৃদস্পন্দন। প্রতিদিন হাজার হাজার কন্টেইনার ওঠানামা করে, জাহাজের হর্ন বাজে, শ্রমিকরা ব্যস্ত থাকে, আর ব্যবসায়ীরা অপেক্ষা করে তাদের পণ্যের মুক্তির জন্য। এই জায়গাই বাংলাদেশের অর্থনীতির নীরব নাড়ি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কিন্তু বছরের পর বছর দুর্নীতি, অদক্ষতা, স্বজনপ্রীতি এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের লুটপাটের কারণে এই নাড়ির গতি ক্রমশ কমে এসেছে। যন্ত্রপাতির অভাব, সমন্বয়ের ঘাটতি, কাগজপত্রের জট এবং সিদ্ধান্তহীনতার কারণে বন্দরের দক্ষতা বিশ্বের মানদণ্ডের তুলনায় অনেক নিচে নেমে গেছে। ব্যবসায়ীরা প্রায়ই বলেন, “পণ্য আনতে যত খরচ হয়, তার থেকেও বেশি খরচ পড়ে বন্দরের অদক্ষতা সামলাতে।” প্রশ্ন আসে, একটি দেশের অর্থনৈতিক স্বপ্ন কি বন্দরেই আটকে থাকবে?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই সমস্যার মোকাবিলায় বর্তমান সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের পুরনো দুর্নীতিগ্রস্ত অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা ভেঙে আধুনিক, দক্ষ ও স্বচ্ছ কাঠামো গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ এবং অভিজ্ঞ অপারেটরদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে উন্নত প্রযুক্তি, ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা, গতি এবং বৈশ্বিক মান বজায় রাখা সম্ভব হয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কিন্তু এখানে বাধা সৃষ্টি করেছে দীর্ঘদিনের সুবিধাভোগী দুর্নীতিগ্রস্ত চক্র। তারা “জাতীয় নিরাপত্তা”র নামে ভয় দেখাচ্ছে, প্রকৃত বিষয়টি নিরাপত্তা নয় বরং তাদের নিজের স্বার্থের নিরাপত্তা। নতুন স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থাপনায় তাদের অবৈধ আয় এবং প্রভাবের সুযোগ শেষ হয়ে যাবে।

দূরদর্শিতা দেখানো দরকার। ব্যক্তিগত জীবনে বিদেশি প্রযুক্তির প্রতি তাদের কোনো আপত্তি নেই। তারা বিদেশে চিকিৎসা নিতে একদিনও দেরি করে না, বিদেশি ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহার করে, বিদেশি গাড়ি চালায়, আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসে ভ্রমণ করে, বিদেশি ওষুধ এবং পানীয় ব্যবহার করে। কিন্তু রাষ্ট্রের স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য বিদেশি বিশেষজ্ঞ এলে হঠাৎ দেশপ্রেম জেগে ওঠে। এই দ্বিচারিতা ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই নয়।

বাস্তবতা হলো, উন্নত বিশ্বে আউটসোর্সিংই দক্ষতার পথ। বিশ্বের প্রায় সব উন্নত দেশে গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরের বড় অংশই আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। উদাহরণ হিসেবে হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অংশ, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিতরণ, সমুদ্রবন্দর, রেলওয়ের নিরাপত্তা এবং বড় শিল্প কারখানার প্রডাকশন লাইন উল্লেখযোগ্য। এগুলো প্রায় সবই পেশাদার আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে, যা লং রেঞ্জ প্ল্যানিং এবং দীর্ঘমেয়াদী দক্ষতা নিশ্চিত করে।

সৌদি আরবের ব্যস্ততম বিমানবন্দর বিদেশি কোম্পানি দিয়ে চলে, সিঙ্গাপুরের PSA বন্দর বিশ্বের সেরা বন্দরের একটি, দুবাইয়ের জেবেল আলি বন্দরও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে। সেখানে দুর্নীতি নেই, অপদক্ষতা নেই, স্বচ্ছতা আছে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরে এপিএম (বিশ্বসেরা ডেনিশ কোম্পানি) কাজ করতে চাইলে হঠাৎ দেশপ্রেম জেগে ওঠে। এটি দেশপ্রেম নয়, এটি চোরদের আয় বন্ধ হওয়ার কান্না।

বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামো এতটাই দুর্বল যে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর আজ দুর্নীতি এবং অদক্ষতায় ভরা। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিরপেক্ষভাবে বিশ্বাস করা যায় না, প্রশাসনের ওপর মানুষের আস্থা নেই, কোনো প্রতিষ্ঠানেই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার সংস্কৃতি নেই, জবাবদিহি দুর্বল এবং স্বচ্ছতা অনুপস্থিত। এই অবস্থায় দক্ষতা আনার সবচেয়ে যৌক্তিক পথ হলো আউটসোর্সিং।

চট্টগ্রাম বন্দরের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ মানেই স্বাধীনতা হারানো নয়। বরং এটি দক্ষতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি কমানো এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার সবচেয়ে শক্তিশালী পথ। ডিজিটাল সিস্টেম এলে প্রক্রিয়া দ্রুত হবে, দুর্নীতি কমবে, এবং দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।

যারা এতদিন খেয়ে এসেছে, তারা চিৎকার করবে “দেশ বিক্রি হয়ে গেলো।” এটা দেশপ্রেম নয়, এটি চোরদের আয় বন্ধ হওয়ার কান্না।

বর্তমান বাস্তবতা বলছে, যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দুর্নীতি মুক্ত করা যেত, হাসপাতালগুলোতে জবাবদিহি জন্মাত, ঢাকা বিমানবন্দরে যাত্রীদের ভোগান্তি কমত, রাজস্ব সঠিকভাবে ব্যবহৃত হতো, তাহলে আজ দেশের জন্য আউটসোর্সিংয়ের প্রয়োজন হতো না। ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি এবং অদক্ষতা রাষ্ট্রকে এমন এক অবস্থায় পৌঁছে দিয়েছে যেখানে দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র দ্রুত সমাধানের বাইরে।

চট্টগ্রাম বন্দরের মতো কৌশলগত স্থাপনায় বিদেশি বিশেষজ্ঞ আনা মানে উন্নয়নকে বাধাহীন করা, দক্ষতা ফিরিয়ে আনা, এবং রাষ্ট্রকে রক্ষা করা। উন্নয়ন মানে শুধু ভবন নয়, গতি, স্বচ্ছতা, সুশাসন এবং মানুষের স্বার্থ রক্ষা।

সারমর্ম
বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে দুর্নীতিকে পরাজিত করতেই হবে। রাজনৈতিক শক্তি এবং প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণে আজ দেশে আউটসোর্সিংয়ের পথ গ্রহণ করতে হচ্ছে। এটি আমাদের দুর্বলতার প্রমাণ নয়, বরং বাস্তবতার স্বীকারোক্তি। রাষ্ট্রকে ধ্বংস হতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে পুরো দেশকেই নতুন করে আউটসোর্সিং করে দক্ষতার পথে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা আর সময় নষ্ট করার অবস্থায় নেই।

চট্টগ্রাম বন্দর সংস্কার একটি সাধারণ অবকাঠামো প্রকল্প নয়, এটি দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ। ডিজিটাল সিস্টেম এলে দুর্নীতি কমে, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পায় এবং কার্যকারিতা দ্রুত হয়। যারা এতদিন খেয়ে এসেছে তারা চিৎকার করে বলবে “দেশ বিক্রি হয়ে গেলো।” এটি দেশপ্রেম নয়, এটি চোরদের আয় বন্ধ হওয়ার কান্না। চট্টগ্রাম বন্দরের স্বচ্ছতা ও উন্নয়ন রুখে দাঁড়ানো মানে দেশের ভবিষ্যৎ রুখে দাঁড়ানো।

রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে চাইলে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আউটসোর্সিং হলো দেশের একমাত্র যৌক্তিক পথ, যা দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে দক্ষতা ফিরিয়ে আনবে, এবং বাংলাদেশকে আধুনিক, স্বচ্ছ এবং প্রতিযোগিতামূলক রাষ্ট্র হিসেবে স্থাপন করবে।

রহমান মৃধা, গবেষক এবং লেখক, প্রাক্তন পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
rahman.mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-

মত দ্বিমত

গণতন্ত্রের অপমৃত্যু এবং জনগণের নবজাগরণের অনিবার্য ডাক

Published

on

ব্লকে

বিশ্বে যে উদ্দেশ্যে গণতন্ত্রের জাগরণ হয়েছিলো কোনো এক সময় সেই উদ্দেশ্য আজও সফল হয়নি। দুই হাজার চব্বিশ সালে যে গভীর উদ্বেগ আমাকে আঘাত করেছিলো সেই একই উদ্বেগ আজ আরও তীব্র হয়েছে যদি বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতাকে দেখি। পৃথিবী আজ প্রযুক্তির অসীম অগ্রগতিতে বদলে গেছে, ডিজিটালায়ন মানুষের জীবনযাত্রাকে নতুন রূপ দিয়েছে, তথ্যপ্রবাহের গতি আশ্চর্য দ্রুততায় ছুটছে কিন্তু গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি যে প্রতিষ্ঠানগুলো সেখানে কোনো অগ্রগতি নেই।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এখনও বহু দেশে স্বৈরাচারী শাসন টিকে আছে, পরিবারতন্ত্র এবং একনায়কতন্ত্র আরও জমাট বেঁধে আছে। শাসন এবং শোষণ যেন একই স্রোতে বইছে, ভাষণের স্বাধীনতা প্রতিদিনই আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে, মানুষের ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার প্রহসনে পরিণত হয়েছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

অথচ রয়েছে জাতি সংঘের মতো অচল এবং নিষ্ক্রিয় এক সংগঠন, যার অবস্থান আজ বিশ্বের সামনে এক অবিশ্বাস্য লজ্জা। কোথাও কোনো সাড়া নেই, কোনো দায় নেই, কোনো জবাব নেই। যেন গোটা মানবজাতির দুর্দশা আর অস্থিরতা তাদের বিবেক স্পর্শই করে না।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আজ দিনমজুর মানুষ তার সবকিছু বিসর্জন দিয়ে নিজের দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জীবন পর্যন্ত দিচ্ছে। আর সেই একই সময়ে যাদের আমরা এলিট শ্রেণি বলি তারা বিলাসবহুল জীবনে অন্য দেশে সুরক্ষিতভাবে অবস্থান করছে কিংবা তাদের পরিবারকে বিশ্বের শান্তিপূর্ণ দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। ওদিকে সাধারণ মানুষ পেটে ক্ষুধা হাতে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করছে মাতৃভূমির জন্য। এই কি সেই গণতন্ত্র যার স্বপ্ন একদিন মানবজাতিকে আলোড়িত করেছিলো। এ লজ্জা এবং এ ঘৃণা কোথায় রাখি।

আজ যুদ্ধ চলছে গাজায় ইউক্রেনে আরও বহু দেশে। অথচ সদ্য আমি এসেছি সিশরে আর দেখছি যে বহু দেশের এলিট মানুষ এখানে নিশ্চিন্তে ছুটি কাটাচ্ছে। তাদের দেশের মানুষ যখন মরছে তখন তারা সমুদ্রের নীল জলে আনন্দে ভাসছে। আমরা খবর দেখছি সাহায্য পাঠাচ্ছি অর্থ দিচ্ছি। কিন্তু সেই অর্থ কতটা যায় সাধারণ মানুষের কাছে আর কতটা চলে যায় দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের পরিবারে যারা দূরদেশে লাক্সারি জীবন কাটায়। বহুদিন ভাবতাম এমন জঘন্যতা শুধু বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এখন দেখছি এ ভণ্ডামি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু কেন। কোথায় সেই জাতি সংঘ। তারা কী কাজ করছে আর কীই বা করতে পারছে।

বাংলাদেশের স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটেছে তবে সেই স্বৈরাচার পরিবারের কেউ দেশে নেই। তারা বিশ্বের নানা দেশে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে নাগরিকত্ব কিনে নিয়েছে। অথচ দেশের মানুষের পেটে ভাত নেই দেখার কেউ নেই। যখন দেশে আইন স্বচ্ছ হলো বিচারিক ব্যবস্থা নিজেদের কাজ করতে শুরু করলো তখনই তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ করছে। বাহ কি আশ্চর্য অভিনয়। আর সব কিছুর ওপরে আছে জাতি সংঘের নিশ্চুপ অবস্থান।

যে দেশে দিনের নব্বই শতাংশ মানুষ দিনমজুর সেখানে কীভাবে এলিট শ্রেণির মানুষ নেতার আসনে বসে। তারা কি কোনোদিন বুঝতে চেয়েছে সাধারণ মানুষের জীবন কতটা কঠিন। না তারা তা বুঝবে কেন। তাদের বোঝার দরকার নেই কারণ বোঝার চেষ্টা করলে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করা যাবে না। এবারের এনসিপির নোমিনেশন ফর্ম বিক্রির দৃশ্য দেখে হঠাৎ মনে হলো তারা অবশেষে এক সত্য উপলব্ধি করেছে। বাংলাদেশের পরিচয় শুধু দুর্নীতি স্বৈরাচার পরিবার তন্ত্রের রাজনীতি সীমাবদ্ধ নয় এদেশে সতেরো কোটি মানুষের মধ্যে রয়েছে বিশাল জনগোষ্ঠী যারা নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করে দেশের উন্নয়নে। এ দেশ রিকশাওয়ালার দেশ অতএব রিকশাচালকের ভোট তার কণ্ঠস্বর তার প্রতিনিধিত্বই হওয়া উচিত দেশের সরকার গঠনের ভিত্তি। বাংলাদেশ পঞ্চান্ন বছর পার করেছে কিন্তু শাসিত হয়েছে এলিট শ্রেণির হাতে। এটা আর চলতে দেওয়া যায় না।

যে রিকশাওয়ালা দেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেখে ছুটে এসেছিলো যে সাধারণ মানুষ দেশের ভবিষ্যৎ রক্ষায় জীবন দিতে দ্বিধা করেনি সেই মানুষই প্রকৃত নায়ক। সুতরাং এবারের জাতীয় নির্বাচন তারই প্রাপ্য। কারণ সেই মানুষই স্বৈরাচার দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজির দুষ্টচক্র থেকে সতেরো কোটি মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে পারবে।

আমি দেখতে চাই বাংলাদেশ হোক বিশ্বের প্রথম দেশ যেখানে জনগণ নতুন বিপ্লবের মাধ্যমে প্রকৃত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে। আর বিশ্ব সেখান থেকে শিখবে কীভাবে শত বছরের প্রতিজ্ঞা যার নাম গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা যায়। জাগো বাংলাদেশ জাগো।

রহমান মৃধা, গবেষক এবং লেখক, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
rahman.mridha@gmail.com

এমকে

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

বৈশ্বিক বিনিয়োগ ও বাংলাদেশের পুঁজিবাজার

Published

on

ব্লকে

একটি নতুন সময়ের চিত্র
বিশ্ব এখন এমন এক বিনিয়োগ সময়ের মুখোমুখি যেখানে পুরনো স্থিতিশীলতা আর নেই। গত কয়েক দশকের পরিচিত অর্থনৈতিক গতিশীলতা, বাজারের নিয়ম ও নিশ্চিত বিনিয়োগ প্রবাহ ভেঙে পড়েছে। অর্থনীতি, ভূরাজনীতি এবং প্রযুক্তির পরিবর্তনের জটিলতায় বিশ্বব্যাপী পুঁজির গতিপথ নতুন রূপ নিচ্ছে। এই পরিবর্তনের ঢেউ বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সরাসরি প্রভাবিত করছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রবণতা
গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগে ক্রমাগত ধীরগতি দেখা গেছে। United Nations Conference on Trade and Development জানিয়েছে যে ২০২৪ সালে বৈশ্বিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে এবং ২০২৫ সাল এখনও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। এর অর্থ, উন্নয়নশীল দেশগুলো বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি।
এশিয়া অঞ্চলে পুঁজিবাজার কিছু অগ্রগতির ইঙ্গিত দিলেও বাজারের গভীরতা, দায়বদ্ধতা এবং স্বচ্ছতার অভাব এখনো প্রকট। উন্নয়নশীল দেশগুলো এখনও ঝুঁকি এবং মানবসম্পদ সংকটে ভুগছে। ফলে অতিরিক্ত বিনিয়োগের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাজার স্থিতিশীল নয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বেসরকারি মৌলধন বা প্রাইভেট ইকুইটি বাজার কিছুটা পুনরুদ্ধার করলেও আগের অবস্থায় ফিরতে পারেনি। বড় লেনদেন ধীর এবং বিনিয়োগকারীরা অত্যন্ত সতর্ক। এর ফলে উদ্ভাবন এবং উদ্যোগে অর্থায়নের গতি কমে যাচ্ছে। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, সুদের হার বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি চাপ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিবর্তন এবং নিয়ন্ত্রক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি মূল্যায়নে বাধ্য করছে। এসব প্রবণতা মিলিয়ে বিশ্ব এখন নতুন বিনিয়োগ যুগের মুখোমুখি, যেখানে পুরনো নিশ্চয়তা আর নেই এবং বাজারকে নতুন চোখে দেখা ছাড়া বিকল্প নেই।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান চিত্র
“একটি দেশের জিডিপির একটি বড় অংশ হচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার, কিন্তু বাংলাদেশে সবচেয়ে অবহেলিত পুঁজিবাজার।” বাংলাদেশে পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন ধরে নির্ভরযোগ্যতা ও স্বচ্ছতার অভাবে দুর্বল। নীচে মূল বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করা হলো। ব্যাংক একীভূতকরণ: নীতি, সংকট ও ঝুঁকি কিছু দুর্বল ব্যাংককে অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারের জন্য তিনটি বড় সংকট তৈরি হয়েছে।

১. তালিকাভুক্ত ব্যাংকের শেয়ারের ভবিষ্যত অনিশ্চিত। বিনিয়োগকারীরা জানে না তাদের অর্থের ফলাফল কী হবে।
২. বিনিয়োগকারীর মতামত উপেক্ষিত। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী শেয়ারহোল্ডারের ভোট, স্বাধীন মূল্যায়ন এবং ন্যায্য বিনিময় অনুপাত নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশে এগুলো কার্যকরভাবে হয় না।
৩. নৈতিক সংকট। যদি অডিট অনুযায়ী ব্যাংক স্থিতিশীল ছিল তাহলে হঠাৎ পতন কেন। আর যদি দুর্বল ছিল তাহলে অডিটে ধরা পড়েনি কেন। এটি বিনিয়োগকারীর আস্থা ভেঙে দেয় এবং বাজারকে ঝুঁকিপূর্ণ করে।
শেয়ারহোল্ডারের অধিকার
শেয়ারহোল্ডারের মৌলিক অধিকারগুলো কার্যকর না হলে বাজার টেকসই হয় না। এই অধিকারগুলো হলো:
১. ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা
২. স্বচ্ছ তথ্য প্রকাশ করা যেমন নন-পেরফর্মিং লোন, ক্যাপিটাল অ্যাডিকোয়েসি এবং অডিট রিপোর্ট
৩. শেয়ারহোল্ডারের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা
৪. ক্ষতির ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর ক্ষতিপূরণের অধিকার
বাংলাদেশে এই অধিকারগুলো প্রায়ই উপেক্ষিত। ফলে বিনিয়োগকারীর আস্থা দুর্বল হয়ে গেছে এবং বাজার অনিরাপদ স্থানে আটকে আছে।
পুঁজিবাজার পতনের মূল কারণ
বাংলাদেশে বাজার পতন কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। বরং এটি দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সংকটের ফল।
১. নীতির অস্থিরতা: হঠাৎ নতুন নীতি যেমন সার্কিট ব্রেকার, মার্কেট মেকার নীতি বা মার্জিন লোন নীতি বাজারকে অনিশ্চিত করে।
২. স্বচ্ছতার অভাব: ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রকৃত আর্থিক অবস্থা জনসমক্ষে আসে না।
৩. গোষ্ঠী স্বার্থে বাজার নিয়ন্ত্রণ: দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে, কিন্তু কার্যকর সমাধান নেই।
৪. সাধারণ বিনিয়োগকারীর বিশ্বাসহীনতা: মানুষ বিশ্বাস করে না যে তাদের টাকা নিরাপদ, নীতি ন্যায্য এবং রেগুলেটর নিরপেক্ষ।
নির্দিষ্ট পথ নির্দেশনা: নতুন আলো কীভাবে দেওয়া সম্ভব
বাংলাদেশ চাইলে এই সংকট কাটিয়ে পুঁজিবাজারে নতুন আলো দিতে পারে। এর জন্য ধাপমূলক রোডম্যাপ প্রস্তাব করা হলো।
১. নীতি ধারাবাহিকতা এবং পূর্বঘোষণা
নতুন নীতি হঠাৎ পরিবর্তন না করে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করতে হবে। সার্কিট ব্রেকার, মার্কেট মেকার এবং মার্জিন লোন নীতিকে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে স্থির করতে হবে।
২. বিনিয়োগকারীর অধিকার রক্ষা
মার্জার বা অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডারের ভোট বাধ্যতামূলক করতে হবে।
রেগুলেটর ব্যর্থ হলে ক্ষতিপূরণের স্বচ্ছ নীতি থাকা জরুরি।
৩. সুশাসন প্রতিষ্ঠা
কর্পোরেট গভর্ন্যান্স শক্তিশালী করতে হবে।
ইন্সাইডার ট্রেডিং কঠোরভাবে দমন করতে হবে।
কোম্পানির অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করতে হবে।
৪. নিয়ন্ত্রক সংস্থার দক্ষতা ও স্বাধীনতা
BSEC এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকির ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
আন্তর্জাতিক মানের অডিট পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হবে।
৫. বিনিয়োগকারীর তথ্যপ্রবাহ ও শিক্ষার উন্নয়ন
সহজ ভাষায় তথ্য প্রকাশ, বিনিয়োগ-ঝুঁকি সচেতনতা বৃদ্ধি, মিডিয়া ও রেগুলেটরের যৌথ উদ্যোগে বাজার-সচেতনতা তৈরি।
৬. উদ্ভাবনী খাতে পুঁজিবাজারের সম্পৃক্ততা
প্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট ইত্যাদিতে পুঁজিবাজারের শক্তি ব্যবহার।
৭. ধাপভিত্তিক রূপান্তর রোডম্যাপ
প্রথম বছর: নীতি রিভিউ ও আইন সংস্কার।
দ্বিতীয় বছর: তদারকি শক্তিশালী করা ও শেয়ারহোল্ডারের অধিকার নিশ্চিত।
তৃতীয় বছর: উদ্ভাবনী বাজার ব্যবস্থা চালু করা এবং বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরিয়ে আনা।

শেষ আহ্বান
বিশ্বের ধনী দেশ, ক্ষমতাধারী ব্যক্তি এবং কর্পোরেট নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে একটি স্পষ্ট বার্তা। বিশ্বের অর্থনীতির সংকটের মূল প্রভাবগুলো হচ্ছে বিশ্বরাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা, সামরিক সংঘাত, রোবটিক ও প্রযুক্তিগত দ্বন্দ্ব, কুটনৈতিক কুচক্র এবং যুদ্ধ। এই বাস্তবতায় যদি কাগজে কলমে আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাহলে এলন মাস্কের মতো একজনের ভোটের মতো আমারও একটি ভোট। এখন ভাবুন যদি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং গুরুত্বপূর্ণ শহরে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ সত্ত্বেও নেতৃস্থানীয় মানুষকে হারানো সম্ভব হয়নি, তাহলে অর্থ দিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা কতটা কার্যকর হবে।
এখন বিশ্বের কাছে প্রশ্ন: আমরা চাই অবিচার ও বিশৃঙ্খলা নাকি ন্যায্যতা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা?

Rahman Mridha, গবেষক এবং লেখক, প্রাক্তন পরিচালক, Pfizer, Sweden
rahman.mridha@gmail.com 

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

নিউইয়র্ক নির্বাচনের বিতর্ক জোহরান মামদানির বিজয় ও বৈচিত্র্যময় নেতৃত্ব

Published

on

ব্লকে

নিউইয়র্ক সিটিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির বিজয় ঘটে। তিনি ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট হিসেবে পরিচিত এবং সমাজতান্ত্রিক নীতির প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার প্রকাশ করেন। তাঁর বিজয়ী ভাষণে মানবতার নতুন দিনের সূচনা, শ্রমজীবী মানুষের ক্ষমতায়ন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সমালোচনা এবং আন্তর্জাতিক সংহতি ও ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত হয়েছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিশেষ করে এলন মাস্কের সমালোচনা এবং কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার উদ্বেগ এই ঘটনাকে বহুমাত্রিক বিতর্কে পরিণত করেছে। এলন মাস্ক মামদানিকে সমর্থন করেননি এবং কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি মামদানিকে মনোমুগ্ধকর প্রতারক বা আকর্ষণীয় ধোঁকাবাজ (charismatic swindler) হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং সতর্ক করেছেন যে তাঁর নীতিগুলি বাস্তবায়িত হলে শহরের সব শ্রেণির মানুষের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। মাস্ক মামদানির নাম ভুল বানান করে মুমদুমি বা যাই হোক উল্লেখ করেছেন, যা অনেকের মতে বর্ণবাদী মন্তব্য হিসেবে গণ্য হয়েছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তিনি ভোটারদের সাবধান করেছেন যে কনজারভেটিভ প্রার্থী কুর্টিস স্লিওয়ারকে ভোট দিলে তা মামদানির পক্ষে যাবে। মাস্কের মতে মামদানির নীতি কলোনিয়ালিজম এবং নতুন সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাবের কারণে আমেরিকান সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে ধারণ করতে পারবে না। তিনি আরও বলেছেন যে এই ধরনের সমাজতান্ত্রিক নীতি বাস্তবায়িত হলে শহরের অর্থনীতি এবং জীবনযাত্রার মানে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মাস্কের এই মন্তব্য রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত এবং তিনি ভয় পেয়েছেন যে সমাজতান্ত্রিক নীতি বাস্তবায়িত হলে ব্যবসায়িক পরিবেশ ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্যে বর্ণবাদ ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতার বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

মামদানির প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট এবং দৃঢ় ছিল। তিনি ট্রাম্পের হুমকিকে অবৈধ এবং অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন আমরা নিউইয়র্কবাসী এবং আমাদের অধিকার আমাদেরই থাকবে। তিনি উল্লেখ করেছেন যারা নিউইয়র্কের সংস্কৃতি এবং জনগণের স্বার্থকে অবমূল্যায়ন করে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। মামদানির বক্তব্যে তার সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং রাজনৈতিক দৃঢ়তার প্রতিফলন দেখা গেছে এবং আন্তর্জাতিক সমালোচনার মাঝেও তিনি নীতির প্রতি অটল থাকার সংকল্প প্রকাশ করেছেন। তাঁর কিছু মন্তব্য যেমন গ্লোবালাইজ দ্য ইন্তিফাদা আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ব্যক্তিত্ব এটিকে অ্যান্টি-সেমিটিক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। মামদানি এই মন্তব্যকে ব্যাখ্যা করেছেন প্যালেস্টাইনের মানবাধিকার রক্ষার প্রতীকী আহ্বান হিসেবে।

এই নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় বড় শহরগুলোর রাজনৈতিক নেতৃত্বের বৈচিত্র্য ক্রমবর্ধমান। উদাহরণস্বরূপ লন্ডনের মেয়র একজন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মুসলিম এবং নিউইয়র্ক সিটির মেয়র আফ্রিকা-ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত মুসলিম। এই পরিবর্তন প্রমাণ করে যে বহু-সাংস্কৃতিক এবং বহু-ধর্মীয় সমাজে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য ক্রমবর্ধমান। তবে একই সঙ্গে কিছু অংশের মধ্যে ভীতিশঙ্কা এবং বিদ্বেষের বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। দীর্ঘ ইতিহাস ধরে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বিশ্বব্যাপী বিদ্বেষ বা ইসলামোফোবিয়া বিদ্যমান। নতুন মুসলিম নেতা নির্বাচিত হওয়ায় কিছু অংশের মধ্যে ভয় এবং অনিরাপত্তা বোধ জন্মায়। সামাজিক মাধ্যম এবং রাজনৈতিক বিবৃতির মাধ্যমে এই বিদ্বেষ ক্রমবর্ধমান এবং কখনও কখনও নির্বাচন এবং নীতিনির্ধারণেও প্রভাব ফেলে।

নতুন নেতৃত্বের নীতিগুলো কখনও কখনও ব্যবসায়িক এবং ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর স্বার্থের সঙ্গে সংঘর্ষে আসে। এলন মাস্কের সমালোচনা জোহরান মামদানির সমাজতান্ত্রিক নীতির বিরুদ্ধে একটি উদাহরণ। এটি দেখায় কিভাবে অর্থনৈতিক স্বার্থ, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সাংস্কৃতিক ভীতি একত্রিত হয়ে বিতর্কের জন্ম দেয়। তবে বৈচিত্র্যকে শক্তি হিসেবে গ্রহণ করা গেলে রাজনৈতিক নেতৃত্বে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অভিজ্ঞতা এবং প্রয়োজন অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব। এটি সমাজকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ন্যায়সঙ্গত করে। ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নতুন বিশ্বের পরিকল্পনার মূল ভিত্তি হতে হবে। বিদ্বেষ প্রতিরোধে শিক্ষা, সচেতনতা এবং সমন্বিত নীতি অপরিহার্য। বৈচিত্র্যময় নেতৃত্বের সমর্থন এবং সমালোচনা উভয় ক্ষেত্রেই নিরপেক্ষ এবং ন্যায়সঙ্গত সংলাপ প্রয়োজন। সামাজিক ভীতিকে রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়া থেকে প্রতিরোধ করা গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র রাজনীতিতে নতুন ঢেউ দেখা গেছে। ছাত্র শিবিরের বিজয় কেবল এক বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমাবদ্ধ ঘটনা নয়, এটি দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক মনোভাবের প্রতিফলন। এই নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব এবং তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেশের রাজনীতিতে জামায়াত ইসলামের প্রভাবকে দৃঢ় করেছে। এমনকি পাশের দেশগুলোতেও এ প্রভাব অনায়াসে লক্ষ্য করা যায়। প্রশ্ন ওঠে, এই নতুন প্রজন্মের উত্থান কি সত্যিই গোটা বিশ্বকে চমকে দিতে পারবে, নাকি প্রকৃত অর্থে ইসলাম, যেহু শান্তির ধর্ম কুরআনের আলোকে, বিশ্বকে শান্তির পথে অগ্রসর করতে সহায়তা করছে, সেটিই আমাদের বিশ্বাসের মূল কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত।

জোহরান মামদানির বিজয়ী ভাষণ, এলন মাস্কের সমালোচনা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া মিলিত হয়ে একটি জটিল রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিতর্ক তৈরি করেছে। সংকট হিসেবে দেখা যায় ভীতিশঙ্কা, বিদ্বেষ এবং সাংস্কৃতিক অজ্ঞতা। সম্ভাবনা হিসেবে দেখা যায় নতুন বিশ্ব গঠন, সকলের সুরক্ষা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নেতৃত্ব। সঠিক নীতি এবং দিকনির্দেশনা গ্রহণের মাধ্যমে বৈচিত্র্যকে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে একটি সাম্য, ন্যায় এবং শান্তির ভিত্তিতে বিশ্ব গঠন সম্ভব। বৈচিত্র্যকে ভয় নয় শক্তি হিসেবে গ্রহণ করলে সমাজের অন্তর্ভুক্তি, ন্যায় এবং শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব।

লেখক রহমান মৃধা
গবেষক ও লেখক, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
rahman.mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

দল মনোনয়ন দিলেও দুর্নীতিবাজকে ভোট দেবেন না

Published

on

ব্লকে

আমরা আর চোখ বুজে থাকতে পারি না। আমরা আর শুনে যেতে পারি না যে কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠী শক্তি ও অর্থের পেছনে লুকিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ বিক্রি করে দিচ্ছে। দুর্নীতি কেবল আর্থিক চুরি নয়, এটি আমাদের ন্যূনতম মর্যাদা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং শেষ পর্যন্ত আমাদের স্বাধীনতাকে ক্ষতবিক্ষত করে। যখন আদালত, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন কিংবা স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় জবাবদিহি বিলুপ্ত হয়ে যায়, তখন ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ। বিশেষত সেই পরিশ্রমী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা, যাদের কষ্টের অর্থে আজও দেশের অর্থনীতি টিকে আছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই কষ্ট আমরা আর মেনে নেব না। দুর্নীতি, অনিয়ম, চাঁদাবাজি কিংবা ক্ষমতার অপব্যবহার, যে অভিযোগই উঠুক, সেটির নিরপেক্ষ তদন্ত এবং প্রমাণভিত্তিক বিচার নিশ্চিত করতে হবে। প্রভাব, দরদাম বা রাজনৈতিক সুবিধার নামে বিচারপ্রক্রিয়া যেন বিকৃত না হয়, সেটাই আজকের সবচেয়ে বড় দাবি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কিন্তু শুধু অভিযোগ নয়, আমাদের কাঠামোই বদলাতে হবে। দীর্ঘমেয়াদে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রয়োজন হবে স্বচ্ছতা, স্বাধীনতা, যোগ্যতা, প্রযুক্তি এবং জনসম্পৃক্ততার সমন্বয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্য এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে যেমন;

১) স্বচ্ছতা ও তথ্য অধিকার প্রসার: সরকারি প্রকল্পের ব্যয়, উন্নয়ন বাজেট এবং লেনদেনের তথ্য সহজে নাগালের মধ্যে আনতে হবে, যাতে জনগণ দেখতে পারে কোথায় কীভাবে টাকা খরচ হচ্ছে। তথ্যের অভাব অনিয়মের জন্ম দেয়; স্বচ্ছতা দুর্নীতির মৃত্যু ঘটায়।
২) স্বাধীন তদন্ত ও অডিট ব্যবস্থা: রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, দ্রুত ও পেশাদার তদন্ত এবং অডিট প্রতিষ্ঠান গঠন করতে হবে, যাদের প্রতিবেদন বাধ্যতামূলকভাবে প্রকাশিত হবে এবং কার্যকর পদক্ষেপে রূপ নেবে।
৩) যোগ্যতা ও সততার ভিত্তিতে সরকারি নিয়োগ: ব্লাডভিত্তিক বা রাজনৈতিক নিয়োগের সংস্কৃতি বন্ধ করে দক্ষতা, নৈতিকতা ও জবাবদিহির ভিত্তিতে নিয়োগ ও মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে। প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ বাড়াতে হবে।
৪) নাগরিক অংশগ্রহণ ও স্থানীয় তত্ত্বাবধান: জনগণকে প্রশাসনিক ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সরাসরি যুক্ত করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের নজরদারি থাকলে কাঠামোগত দুর্নীতি অনেকাংশে রোধ করা যায়।
৫) ডিজিটাল রেকর্ড ও ট্রেসেবল সেবা: সরকারি নথি, লেনদেন ও সেবায় ডিজিটাল রেকর্ড রাখলে অনিয়ম লুকানো যায় না। এতে সেবা দ্রুত হয়, জবাবদিহি নিশ্চিত হয়।

এই পরিবর্তনগুলো শুধু নীতি নয়, এগুলো সততা ও দায়িত্ববোধের সংস্কৃতি গড়ে তোলার পথ। এটি একদিনের কাজ নয়, বরং দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রাম যেখানে প্রতিদিন ন্যায্যতার জন্য দাঁড়াতে হয়। স্বাভাবিক ভাবেই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হলে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে কারণ ভোট মানে দায়িত্ব।

সেক্ষেত্রে একজন দুর্নীতিবাজকে দল মনোনয়ন দিলেও আপনি তাকে সমর্থন করবেন না, হোক না সে আপনার দলের কেউ, ভোট দিয়ে দুর্নীতিকে সমর্থন করবেন না। হ্যাঁ, আমি বলছি বাংলাদেশের আঠারো কোটি মানুষকে। যদি আমরা সত্যিই বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে মর্যাদা রাখতে চাই, তবে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়া ছাড়া বিকল্প নেই। কিন্তু সেটা কখনোই সম্ভব নয় যদি চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিতে জড়িত ব্যক্তিদের হাতেই আমরা দেশকে জিম্মি করে রাখি।

বিশ্বজুড়ে দেড় কোটিরও বেশি রেমিট্যান্স যোদ্ধা আজ এই দেশকে সচল রাখছেন, তাদের কষ্টের টাকা যেন দুর্নীতির পকেটে না যায়, সেটি আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। আমরা চাই মানবিক মূল্যবোধ, সততা, নিষ্ঠা এবং জনগণের কল্যাণে নিবেদিত নেতৃত্ব। কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত অমানুষের দেশ পরিচালনার অধিকার নেই এবং ভুল করেও আমরা যেন তাকে সেই সুযোগ না দিই। এটি শুধু অধিকার নয়, এটি আমাদের জাতিগত দায়িত্ব।

তবু প্রশ্ন থেকে যায়, এত আহ্বান, এত ত্যাগের পরও আমরা কেন একই জায়গায় ঘুরপাক খাই? কেন বারবার সেই পুরোনো নেতৃত্ব, সেই পুরোনো দুর্নীতির চক্র ফিরে আসে? এই প্রশ্নই আমাদের ইতিহাসের আয়নায় তাকাতে বাধ্য করে। ভাবুন গত পঞ্চাশ বছরের বাস্তবতায় আমরা কী পেয়েছি! দীর্ঘ চুয়ান্ন বছর কেটে গেছে, কিন্তু আমরা প্রকৃত অর্থে পরিবর্তন দেখিনি। এক রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে আরেক রোগে আক্রান্ত হয়েছি—কলেরা থেকে যক্ষ্মা, কিন্তু সুস্থ হতে পারিনি। কারণ আমরা বারবার একই দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্ব ও বিকৃত রাজনৈতিক সংস্কৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। এখন যদি আবারও আমরা ব্যর্থ হই, তবে হেরে যাবে আমাদের মনুষ্যত্ব—সাথে হারিয়ে যাবে বাংলাদেশও।

আমি/ আপনিই কিন্তু বাংলাদেশ, আমি/ আপনিই সেই জাগ্রত জনতার কণ্ঠ আমার আছে সততা, আর সততার সঙ্গে লড়াই করার সাহস। অসততার সঙ্গে আমার কোনো আপস নেই। অসততা সবসময় অন্ধকারে লুকায়, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্বৈরশাসন জন্ম দেয়। এই বাস্তবতা বাংলাদেশের মানুষ বহুবার দেখেছে। অতএব, আমরা জানি, এই অপকর্মের প্রশ্রয় আমরা আর দিতে পারি না। আমাদের করণীয় একটাই: সততার পাশে দাঁড়ানো, অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খোলা, এবং প্রতিটি দুর্নীতিকে ঘৃণা করা।

এক সাগরের রক্তের বিনিময় আবারও আমরা নতুন একটি সুযোগ পেয়েছি, এখনই সময়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে যেভাবে টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন চলছে, তা দেখে স্পষ্ট, মানুষের মুখোশধারী রাক্ষসরা আবারও আমাদের গণতন্ত্রকে গ্রাস করতে চায়। কিন্তু আমরা ভুলে যেতে পারি না, এই দেশ কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এটি আঠারো কোটি মানুষের দেশ। যদি আমরা সত্যিই নাগরিক হিসেবে বাঁচতে চাই, তবে এখনই সময়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর, সত্যের পক্ষে বলার, এবং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার।

আসুন সকলে মিলে সত্যের পথে দাঁড়ানোর শপথ নিই সত্য বললে শক্তি শঙ্কিত হয়, কিন্তু ন্যায়ের পথে তা-ই দরকার। আমাদের কণ্ঠ হতে হবে যুক্তিনির্ভর, প্রমাণভিত্তিক ও দায়িত্বশীল। কেবল প্রতিশ্রুতি নয়, চাই কাঠামোগত সংস্কার; কেবল আবেগ নয়, চাই কার্যকর নীতি ও জবাবদিহি।
আমাদের সংগ্রাম কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, এটি একটি জাতির ভবিষ্যৎ পুনরুদ্ধারের লড়াই। আমাদের লক্ষ্য একটিই, একটি দুর্নীতিমুক্ত, মানবিক এবং দায়িত্বশীল বাংলাদেশ। আমি বলি, প্রশ্ন করুন, তথ্য চান, বিচার চাই। আমাদের সন্তানদের জন্য, আমাদের স্বপ্নের জন্য, আমাদের দেশের জন্য, এখনই সময়। নিজের কণ্ঠ তুলুন, সত‍্যের পক্ষে লড়ুন, এবং রক্ষা করুন ভবিষ্যৎ। রক্ষা করুন বাংলাদেশ।

লেখক: রহমান মৃধা
গবেষক ও লেখক, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন।
rahman.mridha@gmail.com 

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

অভিবাসীদের শহর থেকে এক নতুন রাজনৈতিক আলোর ডাক

Published

on

ব্লকে

বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে কিছু মুহূর্ত এমন আসে, যখন একটি শহরের ভোট শুধুই প্রশাসনিক রদবদল নয়, বরং এক নতুন রাজনৈতিক কল্পনার সূচনা করে। নিউ ইয়র্ক সিটির নতুন মেয়র জোহরান মামদানির বিজয় সেই রকমই এক মুহূর্ত।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

মামদানির (Mamdani) ভাষণ কোনো ব্যক্তিগত জয়গাথা নয়, এটি সাধারণ মানুষের লড়াইয়ের পুনর্জন্ম। তাঁর কণ্ঠে ছিল না ক্ষমতার অহংকার; ছিল মানুষের বিশ্বাসের ধ্বনি, একটি শহরের প্রাণে ফের জ্বালানো আগুনের গল্প।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তিনি বলেন, “এই শহরের সূর্য হয়তো অস্ত গেছে, কিন্তু মানবতার জন্য এক নতুন ভোর আসছে।” এই জয় তাঁর একার নয়, এই জয় সেই বাংলাদেশি আন্টির, যিনি শত কষ্টেও মানুষের দরজায় কড়া নাড়েন; সেই অভিবাসীর, যিনি দিনরাত ট্যাক্সি চালিয়ে সন্তানকে মানুষ করার স্বপ্ন দেখেন; সেই নারীর, যিনি একা সংসার চালান কিন্তু স্বপ্ন ত্যাগ করেন না।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তিনি ঘোষণা দেন, ক্ষমতা তোমাদের, এই শহর তোমাদের।

এ বাক্যগুলো শুধু রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নয়, এটি এক গণতান্ত্রিক পুনরুজ্জীবনের ঘোষণা। মামদানি মনে করিয়ে দেন, শহর তখনই জেগে ওঠে, যখন তার মানুষ জেগে ওঠে। আর তার জয় শুধু আনন্দ নয়, বরং এক আত্মবিশ্বাসের ডাক, ভয় নয়, আশা; বিভাজন নয়, ঐক্য; শাসন নয়, অংশগ্রহণ।

বাংলাদেশের মানুষের জন্য ঠিক তেমন একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তবে প্রশ্ন বাংলাদেশ কী পারবে সেটাকে বরণ করতে? মামদানির কথা গুলো ধরেছে আমার মনে, তাই ভাবলাম বাংলাদেশের মানুষের জন্য মামদানির দেওয়া গণতান্ত্রিক পুনরুজ্জীবনের ঘোষণা হতে পারে শিক্ষণীয়।

বাংলাদেশে আজ রাজনীতি অর্থ-ক্ষমতা, দখল ও গোষ্ঠী-স্বার্থের ঘূর্ণাবর্তে আটকে পড়েছে। মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ, রাজনীতি থেকে জনগণ দূরে, আর নৈতিক নেতৃত্ব যেন বিলুপ্তপ্রায়।

মামদানির বার্তা আমাদের শেখায়, রাজনীতি তখনই জীবন্ত হয়, যখন তা ফিরে আসে মানুষের দরজায়।

শিক্ষণীয় তিনটি দিক:
১. রাজনীতির কেন্দ্র জনগণ: ক্ষমতা নয়, দায়িত্ব। প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, অংশগ্রহণ। রাজনীতিকে ফিরিয়ে আনতে হবে জনগণের কাছে, গ্রামে, মহল্লায়, বাজারে, শ্রমিকের ঘরে।
২. নৈতিক নেতৃত্বের পুনর্গঠন: মামদানির সততা ও আদর্শিক দৃঢ়তা মনে করায়, নেতার কাজ জনগণকে ব্যবহার করা নয়, ক্ষমতা তাদের ফেরত দেওয়া।
৩. সমতার চেতনা: অভিবাসী, সংখ্যালঘু, নারী, সবাই রাজনীতির সমান অংশীদার।

আমরা কী ধরনের নেতা আশা করতে পারি
একজন নতুন প্রজন্মের নেতা:
-শ্রোতা, প্রশ্নকে ভয় না পাওয়ার;
-ক্ষমতা নয়, আস্থা গড়ে তোলার;
-ব্যর্থতাকে লজ্জা নয়, শিক্ষার সুযোগ মনে করার;
-জনগণের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার;
-রাজনীতিকে লাভ নয়, দায়িত্ব হিসেবে দেখার।
এ ধরনের নেতা জন্ম নেবে তখনই, যখন নাগরিক সমাজ সাহসী হবে প্রশ্ন করতে, তরুণেরা রাজনীতিকে ঘৃণা নয়, পরিবর্তনের ক্ষেত্র হিসেবে দেখবে, এবং বুদ্ধিজীবীরা পুনরায় সমাজের বিবেক হয়ে উঠবে।

অতএব যে নেতা এখন আপনার দুয়ারে ঘুরছে ভোটের জন্য, তাকে আগে সরাসরি জিজ্ঞেস করুন, আপনি কী সেবা দিতে নাকি নিতে রাজনীতি করছেন? যদি সত্যিই সেবা দিতে রাজনীতি করতে এসে থাকেন তবে আপনার ভোট টাকা দিয়ে কিনবে না বরং আপনার ভোট আপনার মনকে জয় করে নেবে।

প্রশ্ন হতে পারে তাহলে এখন বাংলাদেশের জন‍্য কী করণীয়?
-রাজনীতি পুনর্গঠন করতে হবে নৈতিক ভিত্তিতে: দুর্নীতি, সুবিধাভোগ ও ক্ষমতার আসক্তি থেকে মুক্ত হতে হবে।
-তরুণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে: দলীয় গণ্ডি ভেঙে নাগরিক অংশগ্রহণের সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে।
-রাজনীতির শিক্ষা পুনর্লিখন: স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক শিক্ষাকে আদর্শ, ন্যায় ও দায়িত্ববোধের অংশ হিসেবে শেখাতে হবে।
-জনমত গঠনের নতুন মাধ্যম তৈরি করতে হবে: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্থানীয় ফোরামগুলিকে জনগণের আলোচনার ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করতে হবে, দলে প্রচারমাধ্যম হিসেবে নয়।

কী বর্জনীয়?
-ক্ষমতার কেন্দ্রায়ন
-ব্যক্তিপূজা ও দলনির্ভর অন্ধ আনুগত্য
-রাজনীতিকে ব্যবসায় রূপ দেওয়া
-ভয়ের সংস্কৃতি ও মতপ্রকাশ দমন

এখনই সম্ভব নতুন গণতান্ত্রিক উত্থানের বাংলাদেশ আজ যে রাজনৈতিক অচলাবস্থার মধ্যে, সেখান থেকে বের হওয়ার একমাত্র পথ হলো, একটি গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণ।

মামদানির ভাষণ আমাদের মনে করিয়ে দেয়: গণতন্ত্র কোনো ভোটের ফল নয়, এটি একটি সম্পর্ক, নেতা ও জনগণের মধ্যে বিশ্বাসের সম্পর্ক।

যদি আমরা সেই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারি, যদি মানুষ আবার রাজনীতিকে নিজের মনে করে, যদি তরুণেরা নেতৃত্বের স্বপ্ন দেখে, তবে একদিন আমরাও বলতে পারব, “এই দেশ আমাদের, এই ক্ষমতা আমাদের, এই ভবিষ্যৎ আমাদের।”

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

ব্লকে ব্লকে
পুঁজিবাজার3 hours ago

ব্লকে ৩২ কোটি টাকার লেনদেন

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্লক মার্কেটে মোট ২৮টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মোট ৮১ লাখ ১৩...

ব্লকে ব্লকে
পুঁজিবাজার4 hours ago

জিপিএইচ ইস্পাতের পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা করেছে। আগামী ০১ ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় কোম্পানিটির পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত...

ব্লকে ব্লকে
পুঁজিবাজার4 hours ago

বিডি ওয়েল্ডিংয়ের সর্বোচ্চ দরপতন

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন শেষে দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোডস লিমিটেড...

ব্লকে ব্লকে
পুঁজিবাজার5 hours ago

দর বৃদ্ধির শীর্ষে আইএফআইসি ব্যাংক

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) শেয়ার দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য...

ব্লকে ব্লকে
পুঁজিবাজার6 hours ago

লেনদেনের শীর্ষে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হওয়ায় তালিকায় শীর্ষে উঠে...

ব্লকে ব্লকে
পুঁজিবাজার6 hours ago

৩৫৯ শেয়ারের দরবৃদ্ধি, সূচক বাড়লো ১০৯ পয়েন্ট

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্য সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষে হয়েছে। সেই সঙ্গে টাকার অংকে...

ব্লকে ব্লকে
পুঁজিবাজার7 hours ago

সোনালী লাইফের পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা করেছে। আগামী ৩০ নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টায় কোম্পানিটির...

সোশ্যাল মিডিয়া

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
ব্লকে
রাজনীতি7 minutes ago

দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন খালেদা জিয়া

ব্লকে
কর্পোরেট সংবাদ33 minutes ago

সিটি ব্যাংক ও মাস্টারকার্ডের অংশীদারিত্বে চালু হলো ‘ওয়ার্ল্ড এলিট’ ক্রেডিট কার্ড

ব্লকে
মত দ্বিমত56 minutes ago

চট্টগ্রাম বন্দর সংস্কার: কার স্বার্থে ‘নিরাপত্তা’র ভয়

ব্লকে
ধর্ম ও জীবন1 hour ago

বাউলের সম্মান বেশি দিলে মানসিক চিকিৎসা দরকার: মোক্তার আহমেদ

ব্লকে
রাজনীতি2 hours ago

প্রচারণায় মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জামায়াতের

ব্লকে
কর্পোরেট সংবাদ2 hours ago

বাংলালিংকের নতুন সিএমও কাজী মাহবুব হাসান

ব্লকে
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার2 hours ago

ঢাবির বিজয় একাত্তর হলে আগুন

ব্লকে
জাতীয়2 hours ago

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য চাইল সরকার

ব্লকে
জাতীয়3 hours ago

পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়: দুদক চেয়ারম্যান

ব্লকে
রাজনীতি3 hours ago

ক্ষমতায় এলে বিএনপি গণমাধ্যম সংস্কারে অগ্রাধিকার দেবে: ফখরুল

ব্লকে
রাজনীতি7 minutes ago

দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন খালেদা জিয়া

ব্লকে
কর্পোরেট সংবাদ33 minutes ago

সিটি ব্যাংক ও মাস্টারকার্ডের অংশীদারিত্বে চালু হলো ‘ওয়ার্ল্ড এলিট’ ক্রেডিট কার্ড

ব্লকে
মত দ্বিমত56 minutes ago

চট্টগ্রাম বন্দর সংস্কার: কার স্বার্থে ‘নিরাপত্তা’র ভয়

ব্লকে
ধর্ম ও জীবন1 hour ago

বাউলের সম্মান বেশি দিলে মানসিক চিকিৎসা দরকার: মোক্তার আহমেদ

ব্লকে
রাজনীতি2 hours ago

প্রচারণায় মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জামায়াতের

ব্লকে
কর্পোরেট সংবাদ2 hours ago

বাংলালিংকের নতুন সিএমও কাজী মাহবুব হাসান

ব্লকে
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার2 hours ago

ঢাবির বিজয় একাত্তর হলে আগুন

ব্লকে
জাতীয়2 hours ago

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য চাইল সরকার

ব্লকে
জাতীয়3 hours ago

পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়: দুদক চেয়ারম্যান

ব্লকে
রাজনীতি3 hours ago

ক্ষমতায় এলে বিএনপি গণমাধ্যম সংস্কারে অগ্রাধিকার দেবে: ফখরুল

ব্লকে
রাজনীতি7 minutes ago

দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন খালেদা জিয়া

ব্লকে
কর্পোরেট সংবাদ33 minutes ago

সিটি ব্যাংক ও মাস্টারকার্ডের অংশীদারিত্বে চালু হলো ‘ওয়ার্ল্ড এলিট’ ক্রেডিট কার্ড

ব্লকে
মত দ্বিমত56 minutes ago

চট্টগ্রাম বন্দর সংস্কার: কার স্বার্থে ‘নিরাপত্তা’র ভয়

ব্লকে
ধর্ম ও জীবন1 hour ago

বাউলের সম্মান বেশি দিলে মানসিক চিকিৎসা দরকার: মোক্তার আহমেদ

ব্লকে
রাজনীতি2 hours ago

প্রচারণায় মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জামায়াতের

ব্লকে
কর্পোরেট সংবাদ2 hours ago

বাংলালিংকের নতুন সিএমও কাজী মাহবুব হাসান

ব্লকে
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার2 hours ago

ঢাবির বিজয় একাত্তর হলে আগুন

ব্লকে
জাতীয়2 hours ago

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য চাইল সরকার

ব্লকে
জাতীয়3 hours ago

পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়: দুদক চেয়ারম্যান

ব্লকে
রাজনীতি3 hours ago

ক্ষমতায় এলে বিএনপি গণমাধ্যম সংস্কারে অগ্রাধিকার দেবে: ফখরুল