রাজনীতি
খালেদা জিয়ার পক্ষে আজ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) থেকে নির্বাচনী প্রচারণা চালাবেন দিনাজপুর জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দিনাজপুরের সদরে অবস্থিত শিশু একাডেমিতে আয়োজিত জরুরি সভায় এই ঘোষণা দেয় জেলা বিএনপি।
এ সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়—বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণা আগামীকাল থেকে শুরু করা। একই দিনে প্রতিটি মসজিদে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা বিষয়ক লিফলেট বিতরণ করা হবে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সকল অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিয়ে আরেকটি সভার আয়োজন করা হবে।
সভায় ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, নির্বাচনের দিন গণভোট ও সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে মিলিয়ে আয়োজন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।
তিনি বলেন, এই উদ্যোগে সময় ও অর্থ উভয়ই সাশ্রয় হবে।
তিনি আরও বলেন, তরুণ ভোটারদের বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া হবে—১২ কোটি ভোটারের মধ্যে প্রায় ৪ কোটি তরুণ। তাই তাদের কাছে কীভাবে পৌঁছানো যায়, সে দিকে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।
রাজনীতি
গণভোটে সংবিধান সংশোধন হবে না: সালাহউদ্দিন
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, মনে রাখতে হবে, গণভোটের মধ্য দিয়ে আইনপ্রণয়ন করা হয়ে যাবে না। গণভোটের মধ্য দিয়ে সংবিধান সংশোধন হয়ে যাবে না। এর জন্য আগে অবশ্যই জাতীয় সংসদ গঠিত হতে হবে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক কর্মসূচিতে এ কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
‘নারীর উপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অসম্মান: প্রতিরোধে প্রস্তুত সচেতন নারী সমাজ’শীর্ষক এই মৌন মিছিল ও সমাবেশের আয়োজক নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট হবে একই দিনে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই সিদ্ধান্ত জানান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান সালাহউদ্দিন আহমদ।
জুলাই জাতীয় সনদ যেভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা প্রতিপালনে বিএনপি অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর বাইরে চাপিয়ে দেওয়া, জবরদস্তিমূলক কোনো প্রস্তাব যদি দেওয়া হয়, তা জনগণ বিবেচনা করবে।
জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বিএনপি সোচ্চার থাকবে বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্ব কোনোভাবে ক্ষুণ্ন হোক, তা তাঁরা চান না। সে জন্য কোনো আরোপিত আইন দিয়ে, আদেশ দিয়ে, জবরদস্তিমূলক প্রস্তাব দিয়ে জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ তাঁরা করতে দেবেন না।
দেশে একটি দল ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে ব্যবসা করছে বলে মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, তাদের হাতে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে। তারা চায়, এ দেশের নারীরা যেন অন্দরমহলে বন্দী থাকে। যেন বাংলাদেশে অর্ধেক জনসমষ্টি অন্ধকারে থাকে। নারীর অগ্রগতি-উন্নতি যেন না হয়। সে জন্য তারা বলছে, কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিতে হবে। কিন্তু কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিলে নারীদের কর্মসংস্থান কমে যাবে।
নারীরা যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে কাজ করবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কর্মঘণ্টা কমানোর সঙ্গে কর্মসংস্থানের বিপরীত সম্পর্ক আছে। কাজেই নারীর কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিলে চাকরিদাতারা তাদের চাকরি দিতে চাইবে না। এতে নারীর কর্মসংস্থান আরও কমে যাবে। তাই যাঁরা নারীর কর্মঘণ্টা কমানোর কথা বলছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য খারাপ।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। তিনি বলেন, তাঁরা ভেবেছিলেন, গত ১৭ বছর নারীরা যেভাবে খুন-ধর্ষণের শিকার হতো, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে। নারীরা তাঁদের মর্যাদা ফিরে পাবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দেশে আজ আবার নারীরা অন্ধকারে ফিরে যাচ্ছেন। নারীদের ঘরে ফিরিয়ে দিতে কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কাজেই অধিকার আদায়ে নারীদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। মর্যাদা ফিরে পেতে নারীদের সমস্বরে আওয়াজ দিতে হবে।
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্যসচিব নিপুণ রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, আজ তাঁরা এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সংকেত দিয়ে গেলেন যে নারীর অধিকার নিয়ে কোনো সংকট তৈরি করা হলে দেশের পুরো নারী সমাজ জেগে উঠবে। এ সময় তিনি স্লোগান দেন, ‘পাঁচ নয় আট, তুমি বলবার কে।’
নারী কর্মপরিসরে কাজ করবে না ঘরে থাকবে—এটা একান্তই নারীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সদস্য চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘নারী অধিকার হলো মানুষের অধিকার। নারীর কোনো দান, দয়া, দাক্ষিণ্যের প্রয়োজন হয় না। নারীরা ঘর সামলাবেন না বাইরে থাকবেন, সেটা একান্তই নারীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার বিষয়। নারীদের সিদ্ধান্ত নারীদেরই নিতে দিন।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাহরীন ইসলাম খান বলেন, পুরুষ আমাদের সহযোদ্ধা। পুরুষ আমাদের শত্রু নয়। তাই নারীর পাশাপাশি যে পুরুষকে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হয়, আমি তাঁর পক্ষে দাঁড়াই।
যে জুলাই সনদে নারীর কথা নেই, সেই জুলাই সনদ নারীরা প্রত্যাখ্যান করছেন বলে মন্তব্য করেন নাহরীন ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘দেশের প্রবৃদ্ধি প্রকৃত উন্নয়ন নয়। প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে সেই উন্নয়ন, যেখানে রাত্রিবেলায় নারী নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন।’
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে এখনো সোচ্চার নয় বলে মন্তব্য করেন মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবর্তন দেখেছি গণ-অভ্যুত্থানে; কিন্তু পরবর্তী সময়ে এসে আমাদের এমন এমন সব সামাজিক অবস্থায় পড়তে হচ্ছে, যেখানে এখন শুনতে হয়, আমাদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে পাঁচ ঘণ্টায় নিয়ে আসা হবে।’
সমাবেশে বক্তব্য দেন ডাকসুর গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক সানজিদা আহমেদ তন্বি। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হোক, পারিবারিক ক্ষেত্রে হোক বা যেকোনো ক্ষেত্রে হোক, যখনই তাঁরা কথা বলতে গিয়েছেন, তখনই দেখেছেন, বিভিন্নভাবে নারীদের হ্যারেস করা হয়েছে। হয়তো নারীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে, অথবা কোনো মতাদর্শ নিয়ে, অথবা পোশাক নিয়ে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে নারীকে কথা বলতে হবে।’
কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য বিলকিস ইসলাম, নিলুফা চৌধুরী, শিরিন সুলতানা, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানসুরা আলম, সহসভাপতি রেহানা আক্তার প্রমুখ।
অর্থনীতি
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচিতে বিএনপি-জামায়াতের ইতিবাচক মনোভাব
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচিতে খুশি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। দল দুটির সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেছে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী আইএমএফ। ঢাকা সফররত আইএমএফের পর্যালোচনা মিশনের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও এই তথ্য জানান।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, মিশনের অবস্থানকালে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে তাদের সংস্কার কর্মসূচি, দৃষ্টিভঙ্গি ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি জানান, এই দুই দলের নেতারা আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি চালু রাখার বিষয়ে অত্যন্ত ইতিবাচক মতামত দিয়েছেন। এছাড়া, নির্বাচন ও ট্রানজিশন প্রক্রিয়া, দলগুলোর অগ্রাধিকার এবং তা বাস্তবায়নের কৌশল নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
নতুন সরকারকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে রাজস্ব ও ব্যাংকিং খাত সংস্কারকে স্বীকৃতি দিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন ক্রিস পাপাজর্জিও।
নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার পর রিভিউ শেষে আগামী বছরের মে মাসের শেষে ৫.৬ বিলিয়ন ডলার ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে আইএমএফ। তার আগে সংস্থাটির একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে এসে নতুন সরকারের সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবে।
সংস্থাটি থেকে নেওয়া ঋণের পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে ঋণ চুক্তির শর্ত বাস্তবায়ন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে ১৩ দিন ধরে রিভিউ শেষে ঢাকা ছাড়ার আগে আজ সন্ধ্যায় আয়োজিত এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশে আইএমএফ মিশন প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।
বাংলাদেশের ৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতিকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করে আইএমএফের এই কর্মকর্তা বলেন, যদিও দুই বছর আগের দ্বিগুণ অঙ্কের মূল্যস্ফীতি এখন ৮ শতাংশে নেমে এসেছে, তবুও এটি এখনো বেশি এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কষ্টকর। মূল্যস্ফীতির হার ৫ থেকে ৬ শতাংশে নামিয়ে না আনা পর্যন্ত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছে আইএমএফ।
এ ছাড়া, অবকাঠামো উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ব্যয় বাড়াতে রাজস্ব আহরণে জোর দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে সংস্থাটি।
এর আগে, গত ৯ নভেম্বর বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে আর্থিক ও সামাজিক খাতের সংস্কার নিয়ে আলোচনা করে আইএমএফের প্রতিনিধি দল। ১২ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের টেকসই অর্থনীতি ও সামগ্রিক আর্থিক খাতের অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন তারা।
রাজনীতি
প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাল বিএনপি
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের দেওয়া ভাষণে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন ও গণভোটের ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করায় তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বিএনপি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের ঘোষণাও দিয়েছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন ও প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সভায় ১৭ অক্টোবর ঐক্যমতের ভিত্তিতে স্বাক্ষরিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ’র ওপর জনগণের সম্মতি গ্রহণের জন্য গণভোট অনুষ্ঠানের আহ্বান জানানো হয়েছে।
একইসঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছে স্থায়ী কমিটি।
রাজনীতি
নিষিদ্ধ দলের কর্মসূচি প্রচার করছে দু-একটি মিডিয়া: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দু-একটি মিডিয়া নিষিদ্ধ ঘোষিত দলের কর্মসূচি ফলাও করে প্রচার করছে। এরা কারা? আমি সবার কথা বলছি না, কিন্তু যারা নিষিদ্ধ বা স্থগিত ঘোষিত দলের মানববিধ্বংসী, হিংস্র ও প্রতিহিংসাপরায়ণ কর্মসূচি প্রচার করছে- তারা কি আইনের আওতায় আসতে পারে না?
বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘জিয়াউর রহমান আর্কাইভ’-এর উদ্যোগে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
রিজভী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এখন ক্ষমতায় আছে, যাকে সব গণতন্ত্রকামী দল সমর্থন করেছে। অথচ নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি দলের কর্মসূচি প্রচার করা হচ্ছে— এটা ফ্যাসিবাদী চক্রান্তের অংশ। এই চক্রান্তের নেটওয়ার্ক শুধু ফ্যাসিবাদীরাই করছে না, এর সঙ্গে আরও বিভিন্ন শক্তি জড়িত হয়েছে। আমাদের সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, জাতীয় নির্বাচন বিলম্ব করার কারণেই ওত পেতে থাকা পতিত স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের উত্থানের আওয়াজ আমরা পাচ্ছি। তাদের গলার আওয়াজ অডিও-ভিডিওসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আরও তীব্র ও হিংস্রভাবে শোনা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, ১৩ তারিখ ‘লকডাউন’। প্রশ্ন হচ্ছে—কিসের লকডাউন, কার লকডাউন? পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে কিংবা বিভিন্ন জায়গা থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। টাকার তো অভাব নেই তাদের। বাংলাদেশ ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, পদ্মা সেতু, ফ্লাইওভার— সবখান থেকেই টাকা লুট হয়েছে। সেই টাকা দিয়ে বোমা বানানো বা গাড়িতে আগুন দেওয়া কঠিন কিছু নয়। তারা এসবই করছে।
তিনি বলেন, এখানে দুটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে— একটি হচ্ছে তাদের অমানবিক নিষ্ঠুরতার চেহারা, যা অনেক আগে থেকেই বিদ্যমান। রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে তারা নিজেরাই বিভিন্ন সময়ে বাসে আগুন দিয়ে বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপিয়েছে। আমরা তখনই বলেছিলাম— এটা সরকার নিজেরাই করছে। এর প্রমাণও আমরা দিয়েছিলাম।
রিজভী অভিযোগ করেন, সরকারের ভেতরেই ভূত আছে— আমি এটা নিশ্চিত। আমরা বারবার বলেছি, কিন্তু দেখা গেছে, সরকারের ভেতর থেকেই আসল শত্রুপক্ষকে চিহ্নিত না করে বরং তারা বিএনপির বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চালিয়ে গেছে। আমি সবার কথা বলছি না, তবে কিছু মানুষ এই চক্রান্তের অংশ।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, একজন রাজনৈতিক দলের নেতা বলেছেন, গণভোট না হলে ২০২৯ সালে নির্বাচন হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন থেকে জনগণ ১৫-১৬ বছর ধরে বঞ্চিত। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারছে না। এই বেদনাকে আপনারা ‘পিআর’ বলে উপহাস করছেন। অথচ পিআরে তো কোনো প্রার্থী থাকবে না, সেটা নিয়েও আপনারা কিছুদিন হইচই করলেন, বললেন এর আইনি ভিত্তি দিতে হবে। তাহলে আসল কাজটা করবেন কবে? এত সংগ্রাম, আত্মদান, রক্তপাতের উদ্দেশ্য ছিল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। যদি দুটি প্রক্রিয়া একসাথে চলে, ক্ষতি কী? এতে বরং আইনি বৈধতা ও বাধ্যবাধকতা উভয়ই নিশ্চিত হবে— যারাই ক্ষমতায় আসুক, তারা জুলাই সনদকে আইন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। তাই এটিকে বিলম্বিত করার কোনো কারণ নেই।
রাজনীতি
নভেম্বরের শেষ দিকে দেশে ফিরছেন তারেক রহমান: সালাহউদ্দিন
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চলতি নভেম্বর মাসের শেষ দিকে দেশে ফিরছেন বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই মাসের শেষ নাগাদ তিনি দেশে ফিরতে পারেন। না হলে দু-একদিন এদিক-ওদিক হতে পারে।
২০০৮ সালে জরুরি অবস্থার মধ্যে পরিবার নিয়ে দেশ ছাড়ার পর গত ১৭ বছর ধরে লন্ডনে বসবাস করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক। জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তার মামলা জটিলতার অবসান হলেও তিনি ফেরেননি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য গত কয়েক মাস ধরে বলে আসছেন, ‘শিগগিরই’ দেশে ফিরছেন তারেক রহমান। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তারিখ বিএনপির পক্ষ থেকে কেউ বলছেন না।
৬ অক্টোবর প্রকাশিত বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে তারেক রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি কবে দেশে ফিরছেন। উত্তরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দ্রুতই মনে হয়। দ্রুতই ইনশাআল্লাহ।’
তারেক রহমানের কাছে আবারও জানতে চাওয়া হয়েছিল, নির্বাচনের আগে তিনি দেশে থাকবেন কি না।
উত্তরে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি যখন করি, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে স্বাভাবিক, নির্বাচনের সাথে রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক কর্মীর একটি ওতপ্রত সম্পর্ক। কাজেই যেখানে একটি প্রত্যাশিত, জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের সময় কেমন করে দূরে থাকব?’
‘আমি তো আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, ইচ্ছা থাকবে, আগ্রহ থাকবে- সেই প্রত্যাশিত, যে প্রত্যাশিত নির্বাচন জনগণ চাইছে। সেই প্রত্যাশিত নির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হবে, জনগণের সাথে জনগণের মাঝেই থাকব ইনশাআল্লাহ।’
প্রায় দুই দশক ধরে দল ও নির্বাচন পরিচালনায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও তিনি কখনো সরাসরি ভোটের মাঠে প্রার্থী হননি। তবে এবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন তারেক রহমান। বগুড়া-৬ (সদর) আসন থেকে লড়বেন তিনি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সেই ১৯৯১ সাল থেকে বগুড়া-৭ (গাবতলী ও শাহজাহানপুর) এবং ১৯৯৬ (জুন) সাল থেকে বগুড়া-৬ (সদর) আসনে নির্বাচন করছেন। এ দুটি আসনে তিনি কখনও পরাজয়ের মুখ দেখেননি। মায়ের সেই পুরনো আসনেই প্রার্থী হচ্ছেন তারেক রহমান।



