আন্তর্জাতিক
বাংলাদেশের সঙ্গে বিরোধ, আন্তর্জাতিক সালিশে যাচ্ছে আদানি
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত অর্থপ্রদানের বিরোধ নিষ্পত্তিতে আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ী গৌতম আদানির মালিকানাধীন বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ার। সোমবার আদানি গ্রুপের এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে বলে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের অর্থ প্রদানের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আন্তর্জাতিক সালিশ প্রক্রিয়া বেছে নিয়েছে আদানি পাওয়ার। ভারতীয় শিল্পপতি গৌতম আদানি নেতৃত্বাধীন এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) বকেয়া অর্থ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। দুই পক্ষের মধ্যে ২০১৭ সালে স্বাক্ষরিত বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) আওতায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আদানি পাওয়ার।
বিবৃতিতে আদানি পাওয়ার বলেছে, কিছু নির্দিষ্ট খাতের ব্যয়ের হিসেব ও বিল করার পদ্ধতি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এমন অবস্থায় উভয় অংশীদারই বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। এতে দ্রুত, মসৃণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক সমাধানের বিষয়ে উভয়পক্ষই আশাবাদী।
তবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে বলেছেন, আলোচনা এখনো চলছে। আলোচনা শেষ হলে প্রয়োজনে আমরা আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়ায় যাব।
২০১৭ সালে ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কোম্পানি আদানি পাওয়ারের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় অবস্থিত কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে ২৫ বছর মেয়াদী একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
আদানি পাওয়ার গড্ডা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎচাহিদার প্রায় এক-দশমাংশ পূরণ করে এই কোম্পানিটি।
গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে রয়টার্স বলেছিল, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ করেছে। কোম্পানিটি ভারতের সরকারের কাছ থেকে পাওয়া কর-সুবিধার ছাড় বাংলাদেশকে না দেওয়ায় এই অভিযোগ করা হয়।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ আদানিকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ১৪.৮৭ টাকা (০.১২২ মার্কিন ডলার) হারে মূল্য পরিশোধ করেছে; যা অন্যান্য ভারতীয় কোম্পানির সরবরাহকৃত বিদ্যুতের গড় ৯.৫৭ টাকার তুলনায় অনেক বেশি।
গত সপ্তাহে আদানি পাওয়ার বলেছিল, বাংলাদেশের কাছ থেকে পাওনা অর্থের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে এসেছে। গত মে মাসে আদানি পাওয়ারের বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলারে নেমে আসে; যা চলতি বছরের শুরুতে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের কাছে আদানির বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ১৫ দিনের শুল্কের সমান।
সোমবারের বিবৃতিতে কোম্পানিটি বলেছে, আদানি পাওয়ার বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী ও উচ্চমানের বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখবে।
আদানি পাওয়ারের গড্ডা প্ল্যান্টটি আমদানি করা কয়লা দিয়ে চলে এবং এই কেন্দ্রে উৎপাদিত পুরো বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করার কথা। কোম্পানিটি বলেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিটি ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির উদ্দেশ্যগুলোকে এগিয়ে নিতে আরও সহায়তা করছে। ২০১৯ সালে নয়াদিল্লি গড্ডার প্ল্যান্টটিকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অংশ হিসাবে ঘোষণা করে। এর ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে আয়কর এবং অন্যান্য শুল্ক ছাড়ের মতো প্রণোদনা পায়।
গত ডিসেম্বরে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আদানি পাওয়ার ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) মাঝে ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর স্বাক্ষরিত চুক্তি ও বাস্তবায়ন চুক্তি অনুযায়ী, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের করহার পরিবর্তন হলে সেই বিষয়ে বাংলাদেশকে দ্রুত অবহিত করতে হবে। একই সঙ্গে ভারত সরকারের কাছ থেকে ‘‘কর ছাড় সুবিধাও’’ দেওয়ার কথা আদানির।
কিন্তু আদানি পাওয়ার তা করেনি। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর ও ২২ অক্টোবর বিপিডিবির পক্ষ থেকে আদানির কাছে দুই দফায় চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে ভারত সরকারের কাছ থেকে পাওয়া সুবিধার বিপরীতে বাংলাদেশে সরবরাহ করা বিদ্যুতের দামে সমন্বয়ের আহ্বান জানানো হয়। এসব চুক্তি এবং চিঠি সবার জন্য উন্মুক্ত না হলেও রয়টার্স দেখেছে বলে সেই সময় জানায়।
গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিপিডিবির দু’জন কর্মকর্তা বলেছিলেন, দুই দফায় চিঠি দেওয়া হলেও তারা আদানি পাওয়ারের কোনও সাড়া পাননি।
কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারত সরকারের কাছ থেকে যে করছাড় পেয়েছে আদানি পাওয়ার, সে অনুযায়ী বিদ্যুতের দাম ধরা হলে বাংলাদেশের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে প্রায় শূন্য দশমিক ৩৫ সেন্ট সাশ্রয় হবে বলে বিপিডিবির ধারণা।
গড্ডা প্ল্যান্ট থেকে কেনা বিদ্যুতের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের একটি সারসংক্ষেপ দেখেছে রয়টার্স। সারসংক্ষেপের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত গড্ডা প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশে ৮ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। কর ছাড়ের বিষয়টি সমন্বয় করা হলে এই বিদ্যুতে বাংলাদেশের প্রায় ২৮ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হতো।
আন্তর্জাতিক
দিল্লিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছে যাত্রীবাহী গাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ১৩ জনে পৌঁছেছে। সোমবার সন্ধ্যার দিকের এই বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২৪ জন।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐহিতাসিক পর্যটন স্থাপনা লাল কেল্লার পাশের এই বিস্ফোরণ ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিটে লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে একটি হুন্দাই আই২০ গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটেছে। বিস্ফোরণে আশপাশে ছড়িয়ে ছিন্ন-ভিন্ন মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া একেবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে কয়েকটি গাড়ি।
দিল্লি পুলিশ বলেছে, লাল কেল্লার পাশে অত্যন্ত শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটেছে। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দিল্লি পুলিশের কমিশনার সতীশ গোলচা বলেছেন, লাল কেল্লা ট্রাফিক সিগন্যালের কাছে ধীরে চলা একটি গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। গাড়িটিতে যাত্রী ছিল। বিস্ফোরণে আশপাশের গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বিস্ফোরণে মোট ২২টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিস্ফোরণের এই ঘটনায় ইতোমধ্যে দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড তদন্ত শুরু করেছে। বিস্ফোরণের পরপর মহরাষ্ট্রের মুম্বাই, জয়পুর, উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলের ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে ছিন্ন-ভিন্ন মরদেহ। দিল্লির উপপ্রধান অগ্নিনির্বাপক কর্মকর্তা একে মালিক বলেন, আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছি। সন্ধ্যা ৭টা ২৯ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
বিস্ফোরণের পর লাল কেল্লা ও এর আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় এই পর্যটন স্থাপনার কাছে বিস্ফোরণের ঘটনায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বছরের পুরো সময়জুড়েই ওই এলাকা পর্যটকে পরিপূর্ণ থাকে।
একই দিনে রাজধানী দিল্লি থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে হরিয়ানার ফরিদাবাদে ২ হাজার ৯০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। দেশটির বিহার রাজ্যের দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণের আগের দিন বিস্ফোরণের এই ঘটনা ঘটেছে।
মুঘল আমলে নির্মিত লাল কেল্লা পুরোনো দিল্লির ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনায় পর্যটকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা সারা বছরই ওই এলাকায় ঘুরতে আসেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এই বিস্ফোরণ সম্পর্কে অবহিত করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এছাড়া দিল্লির পুলিশ কমিশনার, এনআইএ ও ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর প্রধানরাও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পরিস্থিতি সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করছেন।
তবে কী কারণে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য দেয়নি দিল্লি পুলিশ। ঘটনাস্থলে ইতোমধ্যে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন আধাসামরিক বাহিনী ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, পুলিশ এবং সরকারের উচিত যদ শিগগির সম্ভব তদন্ত শুরু করে বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ বের করা এবং তা জনগণকে জানানো। দিল্লির নিরাপত্তা নিয়ে কোনো প্রকার অবহেলা সহ্য করা হবে না।
এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, তিনি মানুষের ছিন্ন-ভিন্ন দেহের অংশ আকাশে উড়ে রাস্তায় পড়ে যেতে দেখেছেন। তার চোখের সামনেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় ওই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বিস্ফোরণের শব্দ এত প্রচণ্ড ছিল যে, তার কান কয়েক মিনিট ধরে ব্যথা করছিল। তিনি বলেন, একজনের শরীর ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেছে। আমি রাস্তায় একটি হাত পড়ে থাকতে দেখেছি। বিস্ফোরণ এত ভয়ঙ্কর ছিল যে, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বিস্ফোরণে আশপাশের ভবনের দেয়াল, জানালা ও দরজা কেঁপে উঠেছে।
আন্তর্জাতিক
ভারতে ব্লাড ব্যাংকের রক্ত নিয়ে এইচআইভি আক্রান্ত ৫ শিশু
ভারতের ঝাড়খণ্ডের পশ্চিম সিংভূম জেলার একটি সরকারি সদর হাসপাতালে রক্ত নেওয়ার পর পাঁচজন শিশুর শরীরে এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমিত রক্ত সঞ্চালনের ফলে এই শিশুরা এইচআইভি পজিটিভ হয়ে পড়েছে বলে বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর ওই হাসপাতালের সিভিল সার্জন, এইচআইভি ইউনিটের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্ট টেকনিশিয়ানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন এই ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারদের দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
এই শিশুদের একজনের মা বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে তিনি যখন মেয়েকে রক্ত দেওয়ার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন, তখন তার প্রতি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিবর্তিত আচরণ দেখে সন্দেহ হয়। পরে একজন স্বাস্থ্যকর্মী তাকে জানান, ভুল রক্ত দেওয়ার ফলে তার মেয়ে এইচআইভি পজিটিভ হয়ে গিয়েছে।
স্থানীয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চন্দন কুমার জানান, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে এই জেলায় মোট ২৫৯ জন দাতা রক্তদান করেছেন। এর মধ্যে ৪৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে চারজন দাতা এইচআইভি পজিটিভ বলে নিশ্চিত করা গেছে। বাকিদের সম্পর্কে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঝাড়খণ্ডের বিশেষ স্বাস্থ্য সচিব ডা. নেহা অরোরার মতে, বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। তবে দাতার রক্ত পরীক্ষা প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, পরীক্ষার জন্য প্রি-কিট ব্যবহার করা হলে রোগটি দেরিতে জানা যায়। তাই এখন ডোনারদের পরীক্ষার জন্য প্রি-কিট ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন এলিসা বা এনএটি টেস্টের মাধ্যমে ভাইরাস দ্রুত শনাক্ত করা হবে।
ঝাড়খণ্ডের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী রামচন্দ্র চন্দ্রবংশীর মতে, এই ক্ষেত্রে সিভিল সার্জন এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের অবহেলা রয়েছে, তাই তারাই দোষী। অ্যাক্টিভিস্ট অতুল গেরা অভিযোগ করেন, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যে পাঁচ হাজারেরও বেশি থ্যালাসেমিয়া রোগী থাকলেও তাদের চিকিৎসার জন্য পুরো রাজ্যে মাত্র একজন হেমাটোলজিস্ট আছেন।
আন্তর্জাতিক
বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তেজনা চায় না ভারত: রাজনাথ সিং
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনূসকে নিজের বিবৃতির শব্দ চয়ন নিয়ে ‘সতর্ক থাকার’ আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তেজনা চায় না ভারত।
গতকাল ভারতীয় সাংবাদিক এবং দেশটির সংবাদমাধ্যম নেটওয়ার্ক ১৮ গ্রুপের শীর্ষ সম্পাদক রাহুল জোশিকে একটি এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন রাজনাথ। আর সেই সাক্ষাৎকারের একটি অংশ জুড়ে ছিল ভারত-বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সম্পর্ক।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তেজনা চাই না। তবে ইউনূসের (বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনূস) উচিত হবে নিজের বিবৃতির শব্দ চয়ন নিয়ে সতর্ক থাকা। আমি আর একটি কথা এখানে বলতে চাই— ভারত যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম; কিন্তু তারপরও আমাদের মূল লক্ষ্য প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।’
২০২৪ সালে জুলাই আন্দোলনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে শুরু থেকেই টানাপোড়েন চলছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের। এর মধ্যে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় এই টানাপোড়েন আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
সম্প্রতি ঢাকায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর জয়েন্ট চিফস অব স্টাফস কমিটি (সিজিসিএসসি)-এর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা এবং তুরস্কের পার্লামেন্টের ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেছেন ড. মুহম্মদ ইউনূস। উভয় দেশের সঙ্গেই ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক তিক্ত।
তুর্কি পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন তুরস্কের এমপি মেহমেত আকিফ ইলমাজ। গত সপ্তাহের শুরুর দিকে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠক হয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের। সাক্ষাৎ শেষে তুর্কি প্রতিনিধিদলের সব সদস্যকে এক কপি করে ‘আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামের একটি বই উপহার দিয়েছেন মুহম্মদ ইউনূস।
‘আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ মূলত ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময়কার এবং এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ছবি, গ্রাফিতির সংকলন। তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ ১৮- এর অভিযোগ— এই সংকলনগ্রন্থে ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ নামের একটি মানচিত্রের ছবি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেখানে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামকে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
নিউজ ১৮-এর দাবি— আসাম দখল বিষয়ক যুদ্ধ পরিকল্পনা এবং যুদ্ধ পরবর্তী অবস্থায় কীভাবে আসামের প্রশাসন পরিচালনা করা হবে, তারও বিবরণ আছে আট অব ট্রায়াম্ফ সংকলনগ্রন্থটিতে।
আন্তর্জাতিক
শাটডাউনে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিপর্যয়, শত শত ফ্লাইট বাতিল
যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম শাটডাউনের (সরকারি অচলাবস্থা) জেরে বিমান চলাচলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেওয়ায় দেশটির ৪০টি প্রধান বিমানবন্দরে শত শত ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) দেশটির ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্থানীয় সময় সকাল ৬টা (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা) থেকে ফ্লাইট বাতিল কার্যকর হয়। তবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো এ নির্দেশনার আওতায় পড়বে না।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, শাটডাউনের (সরকারি অচলাবস্থা) জেরে নেওয়া এই পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের প্রায় ৪ শতাংশ বাতিল করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৭০০টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আমেরিকান এয়ারলাইনস, ডেলটা, সাউথওয়েস্ট ও ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের ফ্লাইট। যদি অচলাবস্থা চলতে থাকে, আগামী মঙ্গলবার থেকে বাতিলের হার ৬ শতাংশে এবং ১৪ নভেম্বরের মধ্যে তা ১০ শতাংশে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছে এফএএ।
আমেরিকান এয়ারলাইনস জানিয়েছে, শুক্রবার ২২০টি ফ্লাইট বাতিলের ফলে প্রায় ১২ হাজার যাত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অধিকাংশকে বিকল্প ফ্লাইটে নেওয়া হয়েছে।
তবে কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী রবার্ট আইসম জানান, প্রাথমিক কাটছাঁট যাত্রীদের জন্য তেমন বিঘ্ন ঘটাবে না। তবে পরিস্থিতি যদি দীর্ঘায়িত হয়, তা সমস্যাজনক হয়ে উঠবে।
ইউনাইটেড এয়ারলাইনস জানিয়েছে, শুক্রবার তাদের ১৮৪টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। শনিবার ১৬৮ ও রবিবার ১৫৮টি ফ্লাইট বাতিলের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রভাবিত অর্ধেক যাত্রীকে চার ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় বুক করা সম্ভব হয়েছে।
পরিবহন সচিব শন ডাফি জানান, শুরুতে শুক্রবার থেকেই ১০ শতাংশ ফ্লাইট কমানোর পরিকল্পনা ছিল। তবে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, হঠাৎ বড় কাটছাঁট আরও বিঘ্ন ঘটাতে পারে। ফলে ধাপে ধাপে ৪ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ডাফি আরও বলেন, পাইলটদের কাছ থেকে আমরা বেশি অভিযোগ পাচ্ছি। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে প্রতিক্রিয়া ধীর হচ্ছে, কন্ট্রোলাররা চাপে রয়েছেন। নিরাপত্তা সূচকগুলো ভুল দিকে যাচ্ছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এফএএ বৃহস্পতিবার রাতে (স্থানীয় সময়) প্রভাবিত বিমানবন্দরগুলোর তালিকা প্রকাশ করে। কার্যকর হওয়ার মাত্র ১২ ঘণ্টা আগে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে অনেক এয়ারলাইনস ক্ষোভ প্রকাশ করে, তবে সংস্থাটি তাদের আপত্তি প্রত্যাখ্যান করে।
চলমান অচলাবস্থায় ১৩ হাজার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার ও ৫০ হাজার নিরাপত্তা কর্মী বিনা বেতনে কাজ করছেন। এফএএ প্রশাসক ব্রায়ান বেডফোর্ড জানিয়েছেন, যে কোনও দিনে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ কন্ট্রোলার কাজে উপস্থিত হচ্ছেন না।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শুক্রবার ছয়টি বিমানবন্দরে কন্ট্রোলার অনুপস্থিতির কারণে ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। একই সঙ্গে রকেট উৎক্ষেপণ কার্যক্রমেও সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে এফএএ।
এজেন্সিটি সতর্ক করে বলেছে, যদি নির্দিষ্ট এলাকায় অতিরিক্ত প্রভাব পড়ে, তাহলে কাটছাঁট পরিকল্পনা সংশোধন করা হতে পারে এবং প্রয়োজনে ব্যস্ত বিমানবন্দরে ব্যক্তিগত বিমান চলাচলও ১০ শতাংশ পর্যন্ত সীমিত করা হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ফ্লাইট বাতিলের প্রাথমিক ধাক্কা সামলানো গেলেও, নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত যদি অচলাবস্থা অব্যাহত থাকে, তা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ আকাশপথে বড় সংকট সৃষ্টি করবে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। সরকারি শাটডাউন ও বেতনবিহীন কর্মীদের অনুপস্থিতিতে এফএএর সক্ষমতা ক্রমশ কমছে, যা বিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
আন্তর্জাতিক
অবৈধ প্রবাসীদের জন্য নতুন উদ্যোগ সৌদি আরবের
বিভিন্ন দেশের অসংখ্য অবৈধ প্রবাসী বসবাস করেন সৌদি আরবে। অনেকদিন ধরেই তাদের দেশে ফেরা আরও সহজ করতে কাজ করছে দেশটির সরকার। তার ধারাবাহিকতায় এবার ‘সেলফ-ডিপোর্টেশন প্ল্যাটফর্ম’ নামে একটি আধুনিক ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে দেশটির পাসপোর্ট অধিদপ্তর।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত ডিজিটাল গভর্নমেন্ট ফোরাম ২০২৫-এ এই তথ্য জানিয়েছে সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নতুন এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অবৈধ প্রবাসীরা অনলাইনেই আবেদন করে দেশে ফেরার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। এতে দীর্ঘদিনের জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার অবসান ঘটবে বলে মন্ত্রণালয় জানায়।
কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, সৌদি আরবের বিমানবন্দর ও সীমান্তে যাত্রী চলাচলকে আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনতে চালু করা হচ্ছে ‘স্মার্ট ট্র্যাক’ নামের একটি বিশেষ ব্যবস্থা।
এ ব্যবস্থায় যাত্রীরা স্মার্ট ক্যামেরার মাধ্যমে পরিচয় যাচাই করে পাসপোর্ট কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছাড়াই সীমান্ত অতিক্রম করতে পারবেন।
এ ছাড়া ‘ডিজিটাল টুইনস’ নামে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক একটি নতুন প্রযুক্তিও চালু করা হবে, যা জনসমাগমের গতিবিধি বিশ্লেষণ, অপেক্ষার সময় নির্ধারণ এবং সেবার মান পর্যবেক্ষণ করবে।
সৌদি কর্তৃপক্ষের মতে, ২০৩০ সালের আগে এসব উদ্যোগের মাধ্যমে দেশটির ভ্রমণ ও প্রবাসী সেবা খাতে এক নতুন যুগের সূচনা হবে, যেখানে প্রযুক্তিই হবে সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু।



