অর্থনীতি
অক্টোবরে রপ্তানি আয় কমেছে ৭.৪৩ শতাংশ
২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে রপ্তানি আয় উদ্বেগজনকভাবে ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ কমে ৩ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে কম।
তবে, তৈরি পোশাক খাতের (আরএমজি) ওপর ভর করে দেশের রপ্তানি আয় ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে বছরে মাত্র ২ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়ে ১৬ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সোমবার (৩ নভেম্বর) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, আগের অর্থবছর ২০২৪–২৫ সালের একই সময়ে রপ্তানি আয় ছিল ১৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।
রপ্তানিকারকরা জানান, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাস ছিল রপ্তানির জন্য দুর্বল মৌসুম। এই সময়ে ক্রেতাদের অর্ডার কমে যায় এবং ইউডি আবেদনও কমে আসে, ফলে রপ্তানি আয়েও প্রভাব পড়ে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত পারস্পরিক শুল্কের কারণে সেদেশে রপ্তানি অর্ডার কমে গেছে এবং ইউরোপীয় বাজারে প্রতিযোগিতা আরও বেড়ে গেছে।
এর আগে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসেও রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যায়। ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে দেশের সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়ের খাত আরএমজি খাতে আয় হয়েছে ১২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের ১২ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে একক মাস হিসেবে এ খাতে আয় হয়েছে ৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালের অক্টোবরের ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইপিবির তথ্যে।
আরএমজি খাতের দুই উপখাত—ওভেন ও নিটওয়্যার অক্টোবরে যথাক্রমে ১০ শতাংশের বেশি ও ৫ শতাংশের বেশি রপ্তানি আয়ে পতনের সম্মুখীন হয়েছে।
তবে ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে নিটওয়্যার রপ্তানি সামান্য ০ দশমিক ৪২ শতাংশ বেড়ে ৭ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, আর বোনা পোশাকের রপ্তানি ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়ে ৫ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
অন্য উল্লেখযোগ্য খাতের মধ্যে হোম টেক্সটাইল পণ্য খাতের রপ্তানি ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়ে ২৭৯ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের ২৫৫ মিলিয়ন ডলার ছিল।
কৃষিপণ্য খাতে রপ্তানি আয় ১ দশমিক ৭২ শতাংশ কমে ৩৭৯ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের ৩৮৫ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় কম।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতে জুলাই-অক্টোবর সময়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ০৮ শতাংশ, যা দাঁড়িয়েছে ৪১৪ মিলিয়ন ডলারে; আগের অর্থবছরের একই সময়ে আয় ছিল ৩৭২ মিলিয়ন ডলার।
ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য খাতে রপ্তানি বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ, আয় দাঁড়িয়েছে ২২০ মিলিয়ন ডলারে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৬৩ মিলিয়ন ডলার।
পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ, যা দাঁড়িয়েছে ২৭৭ মিলিয়ন ডলারে; আগের অর্থবছরের একই সময়ে আয় ছিল ২৬৫ মিলিয়ন ডলার। যদিও দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলো ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে, তবে ইপিবির তথ্যানুযায়ী, অক্টোবর মাসে অধিকাংশ পণ্যের রপ্তানি আয়ে পতন ঘটেছে।
তাছাড়া, বছরওয়ারি পতন সত্ত্বেও ধারাবাহিক মাসিক প্রবৃদ্ধি ও প্রধান খাতগুলোর ইতিবাচক পারফরম্যান্স বাংলাদেশের রপ্তানি শিল্পের স্থিতিস্থাপকতা ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা প্রমাণ করছে বলে জানিয়েছে ইপিবি।
অর্থনীতি
বেকারদের কর্মসংস্থানে ১ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
বাংলাদেশের নিম্নআয়ের তরুণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে ১৫ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার (১৫০.৭৫ মিলিয়ন) ডলার অতিরিক্ত অর্থায়ন অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। প্রতি ডলার সমান ১২২ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১ হাজার ৮৩৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান পুনরুদ্ধার ও অগ্রগতির লক্ষ্যে প্রকল্পটিতে ঋণ সহায়তা দেবে সংস্থাটি। এই সহায়তা দেশের ১ লাখ ৭৬ হাজার যুবকের জন্য কর্মসংস্থান এবং আয়ের সুযোগ তৈরি করবে। এর আগে অন্তর্ভুক্ত ২ লাখ ৩৩ হাজার সুবিধাভোগীর পাশাপাশি নতুন অংশগ্রহণকারীরাও দক্ষতা প্রশিক্ষণ, শিক্ষানবিশ উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং ক্ষুদ্রঋণের অ্যাক্সেসসহ পরিষেবার একটি বিস্তৃত প্যাকেজ থেকে উপকৃত হবেন। যাতে তরুণ এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা কর্মসংস্থান এবং ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির বাধা অতিক্রম করতে পারে। এটি নারীর ক্ষমতায়নের জন্য উদ্ভাবনী পদ্ধতিও প্রবর্তন করবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, একটি ভালো চাকরি একটি জীবন, একটি পরিবার এবং একটি সম্প্রদায়কে বদলে দিতে পারে। তবুও প্রতি বছর শ্রমবাজারে প্রবেশকারী অনেক তরুণ বাংলাদেশি কাজ খুঁজে পায় না। দেশটি কাজের মান, দক্ষতার ঘাটতি এবং অমিলের ক্ষেত্রেও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই অতিরিক্ত অর্থায়ন নিম্ন আয়ের পরিবারের তরুণ, বিশেষ করে নারী এবং দুর্বল সম্প্রদায়ের তরুণদের উন্নত কর্মসংস্থান এবং জীবিকার সুযোগের জন্য প্রয়োজনীয় বাজার-প্রাসঙ্গিক দক্ষতা, সম্পদ এবং প্রশিক্ষণ অ্যাক্সেস করতে সহায়তা করবে।
সংস্থাটি জানায়, এই অর্থায়ন শহরাঞ্চলের বাইরে গ্রামীণ সম্প্রদায়গুলোতে প্রকল্পের কভারেজ সম্প্রসারণ করতে সহায়তা করবে। যাতে দেশের প্রান্তিক যুবক এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সহায়তা থেকে উপকৃত হতে পারে তা নিশ্চিত করা যায়। এটি নারীদের প্রশিক্ষণ এবং স্টার্ট-আপ অনুদান প্রদানের মাধ্যমে মানসম্পন্ন এবং সাশ্রয়ী মূল্যের গৃহভিত্তিক শিশু যত্ন পরিষেবা পাইলট করবে।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র সামাজিক সুরক্ষা অর্থনীতিবিদ এবং প্রকল্পের টিম লিডার আনিকা রহমান বলেন, এই নতুন অর্থায়নের মাধ্যমে আমরা প্রমাণিত হস্তক্ষেপগুলো বৃদ্ধি করতে পারি, ক্ষুদ্রঋণের অ্যাক্সেস প্রসারিত করতে পারি এবং মানসম্পন্ন শিশু যত্নের মতো উদ্ভাবনী সমাধানগুলো প্রবর্তন করতে পারি। এছাড়া আরও বেশি তরুণ ও নারীকে তাদের সম্ভাবনা উন্মোচন করতে এবং স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সহায়তা করতে পারি।এই ঋণের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নারী এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা।
অর্থনীতি
খেজুর আমদানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক কমালো সরকার
আসন্ন পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে খেজুর আমদানিতে সরকার আমদানি শুল্ক ৪০ শতাংশ কমিয়েছে। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জনগণের আবেগের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে খেজুরের দাম সাধারণের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসার লক্ষ্যে আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে খেজুর আমদানিতে বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ৪০ শতাংশ কমানো হয়েছে।
পবিত্র রমজান মাসে খেজুরের সরবরাহ ও বাজারমূল্য স্বাভাবিক রাখার উদ্দেশ্যে খেজুর আমদানিতে কাস্টমস ডিউটি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে ২৩ ডিসেম্বর একটি প্রজ্ঞাপণ জারি করেছে সরকার। এই অব্যাহতি আগামী ৩১ মার্চ ২০২৬ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
এছাড়া বিগত বাজেটে আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর সংক্রান্ত বিধিমালা সংশোধন করে খেজুরসহ সব ফল আমদানির ওপর প্রযোজ্য অগ্রিম আয়কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। খেজুর ও অন্যান্য ফল আমদানিতে গত বছর অগ্রিম আয়করে যে ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে তা চলতি বছরেও বহাল আছে।
খেজুর আমদানিতে আমদানি শুল্ক এবং অগ্রিম আয়করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ছাড় দেয়ার কারণে আসন্ন রমজান মাসে খেজুরের সরবরাহ এবং বাজারমূল্য সাধারণ ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে বলে মনে করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
অর্থনীতি
বিমানের বহর সংকট তীব্র, শিগগরই মিলছে না নতুন উড়োজাহাজ
যাত্রী চাহিদা যখন দ্রুত বাড়ছে, ঠিক সেই সময় গত পাঁচ বছরে একটি উড়োজাহাজও বহরে যুক্ত করতে না পারায় তীব্র সংকটে পড়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সম্প্রসারণ না হয়ে, বরং জাতীয় পতাকাবাহী এই সংস্থার বহর আরও সঙ্কুচিত হয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৯টিতে।
গত বছর লিজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় দুটি উড়োজাহাজ ফেরত দেওয়ার পর বহরের আকার কমে আসে। এরপর বিকল্প হিসেবে উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার একাধিক চেষ্টা করা হলেও, আন্তর্জাতিক লিজদাতাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। পাঁচ দফা দরপত্র আহ্বান করলেও—কেউ আগ্রহ দেখায়নি।
খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, মূল সমস্যা হলো সরকারি ক্রয়বিধি বা দরপত্র প্রক্রিয়ার কারণে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে না পারা। বৈশ্বিক বাজারে যখন উড়োজাহাজের তীব্র সংকট এবং লিজ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত অনেক সময় কয়েক দিন বা ঘণ্টার মধ্যেই নিতে হয়, তখন এই দীর্ঘসূত্রতা বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এর প্রভাব ইতোমধ্যেই বিমানের অপারেশনে পড়তে শুরু করেছে। আগামী এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া হজ মৌসুমের আগে একাধিক রুটে ফ্লাইট কমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বিমান। অথচ এর মধ্যেই দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় চলতি মাসের শেষ দিকে ঢাকা–করাচি রুটে ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
বিমানের মুখপাত্র বোসরা ইসলাম বলেন, গত বছরও আমরা লিজ নেয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু এয়ারক্রাফট খুঁজে পাইনি। এবারো চেষ্টা চলছে। চাহিদার তুলনায় এয়ারক্রাফট কম থাকায় হজ মৌসুমে ফ্লাইট কমানোর একটি খসড়া পরিকল্পনা তৈরি রেডি হয়েছে, যা চূড়ান্ত হলে ঘোষণা দেওয়া হবে।
লিজ প্রক্রিয়ার ধীরগতির বিষয়ে তিনি বলেন, বিমানকে সব সরকারি দরপত্র প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় সময় লাগে—এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
বর্তমানে বিমানের বহরে রয়েছে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর, চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮, দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯, চারটি বোয়িং ৭৩৭ এবং পাঁচটি ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ উড়োজাহাজ। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৫ মার্চ কানাডা থেকে একটি ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত হয়।
বর্তমানে বিমান ২২টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রুট চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে।
২০২৪ সালে বিমানের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদিত ১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩৪ সালের মধ্যে অন্তত ২৬টি নতুন উড়োজাহাজ সংগ্রহ করে বহর ১৯ থেকে বাড়িয়ে ৪৭টিতে নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
চলতি বছরের জুনের শেষ দিকে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাফিকুর রহমান বলেন, বর্তমান যাত্রী চাহিদা পূরণ করতে আমাদের উড়োজাহাজ প্রয়োজন। সে কারণেই আমরা সরাসরি লিজদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, উড়োজাহাজ সংকটের কারণে নতুন রুট চালু করাও সম্ভব হচ্ছে না।
তবে অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বলছে, বোয়িং ও এয়ারবাস—দুই উড়োজাহাজ নির্মাতার সঙ্গেই আলোচনা ঝুলে থাকায় এই লক্ষ্য অর্জন ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
বিমানের এক কর্মকর্তা বলেন, সমস্যার দ্রুত সমাধান সম্ভব নয়। বড় ধরনের উড়োজাহাজ কেনাকাটার ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভা পর্যায়ের অনুমোদন লাগে। এ ছাড়া উড়োজাহাজ কেনার জন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করার কমপক্ষে ৫-৬ বছর পর তা পাওয়া যায়।
বিমানের সাবেক বোর্ড সদস্য ও এভিয়েশন বিশ্লেষক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, বিমান দীর্ঘদিন ধরেই কখনও লিজ, কখনও নতুন বিমান কেনা—এইভাবে তারা সিদ্ধান্তে দোলাচলে আছে। তার মতে, “সমস্যা লিজ নেওয়ার জন্য উড়োজাহাজের প্রাপ্যতায় নয়, বরং সঠিক, বাস্তবসম্মত এবং আন্তর্জাতিক মানের দরপত্র প্রক্রিয়া অনুসরণ না করা।”
তিনি বলেন, বিমান বারবার টেন্ডার আহ্বান করলেও লিজদাতারা সাড়া দিতে চান না—কারণ সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্তে সময় লাগে। আন্তর্জাতিক লিজদাতারা ঘণ্টা বা দিনের হিসাবে এয়ারক্রাফট চালান, তারা দীর্ঘ সময় উড়োজাহাজ ‘স্ট্যান্ডবাই’ রাখতে রাজি নন।
আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক শুল্ক নিয়ে বাণিজ্য আলোচনার সময় সরকার ২৫টি বোয়িং উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০৩৭ সালের আগে মার্কিন এভিয়েশন জায়ান্টটি প্রথম উড়োজাহাজ সরবরাহ করতে পারবে না।
এয়ারবাসের ক্ষেত্রেও সময়সীমা প্রায় একই। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর বৈঠকের পর ফ্রান্স প্রকাশ্যে জানায়, বাংলাদেশ ১০টি এয়ারবাস উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
২০৩০ সালের আগে সরবরাহ সম্ভব কি না—এমন প্রশ্নে এয়ারবাস ইন্ডিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার কাস্টমার অ্যাকাউন্টস প্রধান এডওয়ার্ড ডেলাহে বলেন, বৈশ্বিক উচ্চ চাহিদার কারণে উৎপাদন সক্ষমতা সেই সময়সীমা পূরণ করতে পারবে না।
তবে তিনি যোগ করেন যে, এয়ারবাসের সঙ্গে যেসব লিজদাতার আগাম অর্ডার আছে, তাদের মাধ্যমে আগে উড়োজাহাজ পাওয়া যেতে পারে। বিমান যদি এয়ারবাসকে নির্বাচন করে, তাহলে আমরা লিজদাতাদের উৎসাহিত করব যেন আমাদের ডেলিভারি শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীনভাবে উড়োজাহাজ সরবরাহ করা যায়।
বহরের আকারে দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ সংখ্যা ২৫টি, যার মধ্যে প্রায় ১৬টিই লিজ নেওয়া। গত ২১ অক্টোবর তাদের বহরে যুক্ত হয়েছে তৃতীয় এয়ারবাস এ৩৩০-৩০০।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মুখপাত্র কামরুল ইসলাম বলেন, বাস্তবতা হলো—সরকারি প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ, একাধিক কমিটি, অনুমোদন, ব্যাংকিং প্রটোকল—সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া যায় না। এখানে বেসরকারি সংস্থাগুলোর দ্রুততা একটি বড় সুবিধা।
এরপরেও তিনি জানান যে, আমাদের যা চাহিদা সে অনুযায়ী পাচ্ছি না। বৈশ্বিক উড়োজাহাজ সংকট বেসরকারি খাতকেও প্রভাবিত করছে। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কিছু রুটে ফ্লাইট বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এই মুহূর্তে আমাদের অন্তত তিন থেকে চারটি নতুন এয়ারক্রাফট প্রয়োজন।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় ৫০ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য পাড়ি জমিয়েছেন। সড়ক ও রেল যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় কিছু অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী কমলেও সামগ্রিকভাবে আকাশপথে যাত্রী চলাচল বেড়েই চলেছে।
ঢাকা বিমানবন্দরের তথ্য বলছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও ২০২৪ সালে দেশের ব্যস্ততম এই বিমানবন্দর দিয়ে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেছেন, যা ২০২৩ সালের ১ কোটি ১৭ লাখের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ বেশি।
এই বাড়তি চাহিদার মধ্যেই গত অর্থবছরে বিমান ৯৩৭ কোটি টাকা রেকর্ড মুনাফা দেখিয়েছে। তবে এখনো বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে বিমানের দেনা ৬,০৬৮ কোটি টাকার বেশি।
বেবিচক সূত্র জানায়, এর মধ্যে ৪,৭৯৪ কোটি টাকা সারচার্জ এবং মূল দেনা ৭৪৬ কোটি টাকা।
বিমানের সাবেক মুখপাত্র এবিএম রওশন কবির বলেন, বিরোধপূর্ণ এই দেনার বড় অংশ বহু বছরের পুরোনো। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যে বকেয়ার কথা বলছে, তার প্রায় ৭৯ শতাংশই সারচার্জ। এসব পুরোনো বিল আমরা মানি না বলেই পরিশোধ স্থগিত রাখা হয়েছে।
অর্থনীতি
১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরায় হবে ১৪ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সাতক্ষীরা জেলায় ১৪টি নতুন ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং প্রায় ২১ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪০ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে সাতক্ষীরা জেলায় ১৪টি নতুন ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং মোট ২০.৮৭২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ১০টি সংযোগ সড়ক নির্মাণের পূর্ত কাজ ক্রয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসা হয়। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে।
জানা গেছে, ‘ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার মেইনস্ট্রিমিং প্রজেক্ট’-এর আওতায় এই প্রকল্পের নির্মাণের পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য এক ধাপ দুই খাম দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৫টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। ৫টি প্রস্তাবই আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়।
দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি’র সুপারিশে রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মীর আখতার হোসেন লিমিটেডের নিকট থেকে ১৪০ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৭ টাকায় পূর্ত কাজ ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রকল্পটি একনেক থেকে অনুমোদিত হয় ২০২৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
বৈঠকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ‘খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের আওতায় ১০তলা বিশিষ্ট ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণের পূর্ত কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১০৫ কোটি ১৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। দ্য ইউনাইটেড কনস্ট্রাকশন কো. লিমিটেড এবং শেলটেক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এই কাজ করবে।
‘কুমিল্লা-লালমাই-চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর-বেগমগঞ্জ এবং বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী-রামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪-লেনে উন্নয়ন’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউপি-০১ এর পূর্ত কাজের জন্য ১৭৫ কোটি ২ লাখ ৮৮ হাজার ২ টাকা ব্যয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের তাহের ব্রাদার্স লিমিটেড এই কাজ করবে।
‘ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর-শিবপুর রাধিকা আঞ্চলিক মহাসড়ক ও সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউপি-০২ ক্রয় প্রস্তাব পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১৩০ কোটি টাকা। ন্যাশনাল ডেভলপার ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এই কাজ করবে।
‘কুমিল্লা-লালমাই-চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর-বেগমগঞ্জ এবং বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী-রামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪-লেনে উন্নয়ন প্রকল্পের প্যাকেজ নং-পিডব্লিউ-০৩ এর পূর্ত কাজের জন্য ১১১ কোটি ৩৩ লাখ ২৯ হাজার ৪৫৭ টাকা ব্যয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ঢাকার রিলায়েবল বিল্ডার্স লিমিটেড এই কাজ পেয়েছে।
বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ‘বাপবিবো’র বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ক্ষমতাবর্ধন (ঢাকা-ময়মনসিংহ বিভাগ) (বিশেষ সংশোধন) প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউ-৪, লট-১ এর পূর্ত কাজের জন্য ১৩০ কোটি ৭০ হাজার ৭৬ টাকা ব্যয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ঢাকার আইডিয়াল ইলেকট্রিক্যাল এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড এই কাজ পেয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের অপর একটি প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বৈঠকে, ‘বাপবিবো’র বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ক্ষমতাবর্ধন (ঢাকা-ময়মনসিংহ বিভাগ) (বিশেষ সংশোধন) প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউ-৪, লট-২ এর পূর্ত কাজের জন্য ১১৩ কোটি ৮১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৬৬ টাকা ব্যয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ঢাকার আইডিয়াল ইলেকট্রিক্যাল এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড এই কাজ পেয়েছে।
বৈঠকে একই প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর-ডব্লিউ-৫, লট-১ এর পূর্ত কাজের জন্য ২২০ কোটি ৯০ লাখ ২২ হাজার ৭৮৬ টাকা এবং প্যাকেজ নম্বর-ডব্লিউ-৫, লট-২ এর পূর্ত কাজের জন্য ২০৭ কোটি ৯১ লাখ ৪৩ হাজার ৪১১ টাকা ব্যয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই দুটি প্যাকেজের কাজও ঢাকার আইডিয়াল ইলেকট্রিক্যাল এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড পেয়েছে।
অর্থনীতি
রোজায় কৃত্রিম সংকট ঠেকাতে তেল-ডাল কিনবে সরকার
আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট নিরসনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৩ কোটি ৭৫ লাখ লিটার এবং স্থানীয়ভাবে এক কোটি লিটার ভোজ্যতেল কিনবে সরকার। একই সঙ্গে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনা হবে। ভোজ্যতেল কিনতে ৬৪২ কোটি ৪৫ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫০ টাকা ব্যয় হবে। ডাল কিনতে ব্যয় হবে ৭২ কোটি ২০ লাখ টাকা। এসব তেল-ডাল ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে বিক্রি করা হবে।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে নাইজেরিয়া থেকে আন্তর্জাতিকভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ২ কোটি লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
জানা গেছে, আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট নিরসনে বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে জরুরি বিবেচনায় আন্তর্জাতিকভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ২ কোটি লিটার সয়াবিন তেল কেনা হবে। এ লক্ষ্যে নাইজেরিয়ার ভিডক ফার্মস অ্যান্ড এক্সপোর্টস লিমিটেডের কাছে দরপ্রস্তাব চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি দরপ্রস্তাব দাখিল করে।
টিইসি দরপ্রস্তাবটি পরীক্ষা করে এবং রেসপনসিভ হয়। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশ করা ভিডক ফার্মস অ্যান্ড এক্সপোর্টস লিমিটেড, নাইজেরিয়া (উৎস: ব্রাজিল)-এর কাছে থেকে ২ কোটি লিটার পরিশোধিত সয়াবিন তেল ২৪২ কোটি ৬৪ লাখ ৩২ হাজার টাকায় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কিনতে বৈঠকে প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি তা অনুমোদ করেছে।
জানা গেছে, ২ লিটার পেট বোতলে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের মূল্য ধরা হয়েছে ১২১ টাকা ৩২ পয়সা। টিসিবির গুদাম পর্যন্ত অন্যান্য খরচসহ প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম পড়বে ১৫০ টাকা ৩৪ পয়সা।
এই তেল খোলা বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে এবং ক্রয় করা মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি করা হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সরকরি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটিকে জানানো হয়। এতে সরকারের কোনো ভর্তুকির প্রয়োজন হবে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠকে আন্তর্জাতিকভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এক কোটি ২৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির স্টুয়ার্ট ক্লোবানু গেরহার্ড থেকে কেনার অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এই তেলও খোলা বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে এবং ক্রয় করা মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি করা হবে। এতে সরকারের কোনো ভর্তুকির প্রয়োজন হবে না।
আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট নিরসনে বাজারে ভোজ্য তেলের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে জরুরি বিবেচনায় আন্তর্জাতিকভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এক কোটি ২৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কিনতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির প্রতিষ্ঠান স্টুয়ার্ট ক্লোবানু গেরহার্ডের কাছে দরপ্রস্তাব চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি দরপ্রস্তাব দাখিল করে।
টিইসি দরপ্রস্তাবটি পরীক্ষা করে এবং রেসপনসিভ হয়। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশ করা স্টুয়ার্ট ক্লোবানু গেরহার্ড (উৎস: তানজানিয়া)-এর কাছ থেকে এক কোটি ২৫ লাখ লিটার পরিশোধিত সয়াবিন তেল ১৬৫ কোটি ৮৬ লাখ ৯৩ হাজার ৭৫০ টাকায় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দুই লিটার পেট বোতলে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের মূল্য ধরা হয়েছে ১৩২ টাকা ৬৯ পয়সা। টিসিবির গুদাম পর্যন্ত অন্যান্য খরচসহ প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের মূল্য ধরা হয়েছে ১৬৪ টাকা ১১ পয়সা।
বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিকভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৫০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল মালয়েশিয়ার সি মিলেনিয়াম ট্রেড এসডিএন ডট বিহাড থেকে কেনার অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এই তেলও ক্রয় করা মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি করা হবে। এতে সরকারের কোনো ভর্তুকির প্রয়োজন হবে না।
ভোজ্যতেলের বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে জরুরি বিবেচনায় আন্তর্জাতিকভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৫০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার জন্য মালয়েশিয়ার সি মিলেনিয়াম ট্রেড এসডিএন ডট বিহাডের কাছে দরপ্রস্তাব চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি দরপ্রস্তাব দাখিল করে। টিইসি দরপ্রস্তাবটি পরীক্ষা করে এবং রেসপনসিভ হয়। দরপ্রস্তাবের সকল প্রক্রিয়া শেষে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৫০ লাখ লিটার পরিশোধিত সয়াবিন তেল ৬৬ কোটি ৪ লাখ ২০ হাজার টাকায় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দুই লিটার পেট বোতলে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের মূল্য ধরা হয়েছে ১৩২ টাকা ৮ পয়সা। টিসিবির গুদাম পর্যন্ত অন্যান্য খরচসহ প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের মূল্য ধরা হয়েছে ১৬৩ টাকা ৩৭ পয়সা।
বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে এক কোটি লিটার পরিশোধিত রাইস ব্রান তেল কেনার অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। টিসিবির স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারী নিম্ন আয়ের পরিবারে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে এক কোটি লিটার পরিশোধিত রাইস ব্রান তেল কেনার জন্য অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৩টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। ৩টি দরপ্রস্তাবই আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ বিবেচিত হয়।
দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশে রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান গাইবান্ধার প্রধান অয়েল মিলস লিমিটেড থেকে ২৫ লাখ লিটার, ঢাকার গ্রিন অয়েল অ্যান্ড পোলট্রি ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে ২৫ লাখ লিটার এবং ঢাকার মজুমদার প্রোডাক্টস লিমিটেড থেকে ৫০ লাখ লিটারসহ মোট এক কোটি লিটার পরিশোধিত রাইস ব্রান তেল ১৬৭ কোটি ৯০ লাখ টাকায় কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতি লিটার রাইস ব্রান তেলের দাম ধরা হয়েছে ১৬৭ টাকা ৯০ পয়সা।
এছাড়া বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রতি কেজি মসুর ডালের ক্রয় মূল্য ধরা হয়েছে ৭২ টাকা ২০ পয়সা। টিসিবির স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারী নিম্ন আয়ের পরিবারে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৩টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। ৩টি দরপ্রস্তাবই কারিগরিভাবে ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ বিবেচিত হয়।
দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশে রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান খুলনার জয়তুন অটো রাইস অ্যান্ড ডাল মিলস লিমিটেড থেকে ১০ হাজার টন মসুর ডাল (৫০ কেজির বস্তায়) ৭২ কোটি ২০ লাখ টাকায় কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এমকে




