অর্থনীতি
যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলো আরও ৬১ হাজার টন গম
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও প্রায় ৬১ হাজার মেট্রিক টন গম এসেছে। দেশটি থেকে দ্বিতীয় চালানের ৬০ হাজার ৮০২ টন গম নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে একটি জাহাজ।
সোমবার (৩ নভেম্বর) খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) আলোকে নগদ ক্রয় চুক্তি নম্বর জিটুজি-এর অধীনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৬০ হাজার ৮০২ টন গমবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে।
চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার টন গম আমদানি করা হবে, যার প্রথম চালান হিসেবে গত ২৫ অক্টোবর দেশে এসেছে ৫৬ হাজার ৯৫৯ টন গম।
জাহাজে রাখা গমের নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম এরইমধ্যে শুরু হয়েছে।গমের নমুনা পরীক্ষা শেষে দ্রুত খালাসের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
অর্থনীতি
ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনে ১২ প্রতিষ্ঠানের আবেদন
ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছে দেশি-বিদেশি মোট ১২টি প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ বাংলা ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, ডিজিটাল ব্যাংকিং অব ভুটান-ডি কে, আমার ডিজিটাল ব্যাংক-২২ এমএফআই, ৩৬ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, বুস্ট-রবি, প্রস্তাবিত আমার ব্যাংক, অ্যাপ ব্যাংক-ফার্মারস, নোভা ডিজিটাল ব্যাংক (বাংলালিংক ও স্কয়ার), মৈত্রি ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, উপকারি ডিজিটাল ব্যাংক, মুনাফা ইসলামী ডিজিটাল ব্যাংক (আকিজ) এবং বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক।
সোমবার (৩ নভেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, আর্থিক খাতে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুযোগ কাজে লাগিয়ে দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই চালু হচ্ছে ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা। এখানে কোনো শাখা, উপশাখা বা এটিএম বুথের প্রয়োজন হবে না, সব সেবা দেওয়া করা হবে মোবাইল অ্যাপ এবং ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে।
নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনে ন্যূনতম ৩০০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থান বাড়িয়ে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।
২০২৩ সালের ১৪ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংক নীতিমালা পাস করে, যেখানে প্রথমে মূলধন নির্ধারিত ছিল ১২৫ কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে ৩০০ কোটি টাকা করা হয়। তুলনামূলকভাবে, প্রচলিত ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় ন্যূনতম মূলধন প্রয়োজন ৫০০ কোটি টাকা।
ডিজিটাল ব্যাংক লাইসেন্স প্রদান ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুসারে হবে এবং পেমেন্ট সার্ভিস পরিচালিত হবে ২০১৪ সালের বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশন অনুযায়ী।
গত ২৬ আগস্ট ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের আবেদন আহ্বান করা হয়। প্রথমে আবেদন গ্রহণের শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩০ সেপ্টেম্বর। তবে প্রস্তাবনা ও প্রয়োজনীয় দলিল সংগ্রহের সময় বিবেচনা করে তা বাড়িয়ে আগামী ২ নভেম্বর বিকেল ৬টা পর্যন্ত করা হয়।
অর্থনীতি
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী প্রথম বছরে বৈদেশিক বিনিয়োগে রেকর্ড
বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী প্রথম বছরে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বৈশ্বিক প্রবণতার সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থনৈতিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সাধারণত বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস পায়, কিন্তু বাংলাদেশ এই ধারায় একমাত্র ব্যতিক্রম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার মন্ডলের বরাত দিয়ে সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, বিশ্বব্যাংকের ডাটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বে যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। উদাহরণস্বরূপ, এই একই সময়ে শ্রীলঙ্কায় (২০২২ সালের পর) এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে (২০১৯ সালের পর) কমেছে ২৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে (২০২১ সালের পর) ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে (২০১৪ সালের পর) ৬১.২১ শতাংশ, মিশরে (২০১১ সালের পর) ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় (১৯৯৮ সালের পর) হ্রাস পেয়েছে ১৬১.৪৯ শতাংশ। এই ধারাবাহিক হ্রাসের প্রবণতার বিপরীতে বাংলাদেশে এফডিআইয়ের এই উল্টো চিত্র দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতার এবং বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের গভীর আস্থার প্রতিফলন।
এ প্রসঙ্গে সোমবার বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) আশিক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাউন্স ব্যাক করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুণ এক প্রতিফলন। সাধারণত গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ প্রচণ্ডভাবে হ্রাস পায়। কিন্তু আমরা দেখছি উল্টা। সঠিক ইকোনমিক পলিসি সেট করা থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, ইত্যাদি সংস্থার আন্তরিকতা, আমাদের প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা ও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটা হয়েছে। আমরা সবসময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান অবশ্য হয়নি। কিন্তু সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। আমরা শিগগির আমাদের সারা বছরের একটা রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করবো।
অর্থনীতি
অক্টোবরে রেমিট্যান্স এলো ৩১ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা
সদ্যবিদায়ী অক্টোবরে ২৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ডলারের (২.৫৬ বিলিয়ন ডলার) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৩১ হাজার ২৭৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এ হিসাবে অক্টোবরে প্রতিদিন গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৮ কোটি ২৬ লাখ ডলার বা প্রায় ১০০৮ কোটি টাকা।
রবিবার (২ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, অক্টোবরের পুরো সময়ে ২৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলার বেশি। গত বছরের একই সময়ে (অক্টোবর-২০২৪) রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মাসভিত্তিক প্রবাসী আয়ের প্রবাহ ছিল যথাক্রমে—জুলাইয়ে ২৪৭ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, আগস্টে ২৪২ কোটি ১৯ লাখ ডলার ও সেপ্টেম্বরে ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চে রেমিট্যান্স প্রবাহ সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলারে পৌঁছেছিল, যা ছিল ওই অর্থবছরের সর্বোচ্চ। পুরো অর্থবছরে প্রবাসী আয় ছিল ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের (২০২৩-২৪) তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ওই অর্থবছরের মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল—জুলাইয়ে ১৯১.৩৭ কোটি, আগস্টে ২২২.১৩ কোটি, সেপ্টেম্বরে ২৪০.৪১ কোটি, অক্টোবরে ২৩৯.৫০ কোটি, নভেম্বরে ২২০ কোটি, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি, মার্চে ৩২৯ কোটি, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি, মে মাসে ২৯৭ কোটি এবং জুনে ২৮২ কোটি ডলার।
অর্থনীতি
এলপি গ্যাসের দাম কমলো ২৬ টাকা
ভোক্তাপর্যায়ে এলপি গ্যাসের নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নভেম্বর মাসের জন্য প্রতি ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ২৪১ টাকা থেকে ২৬ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ২১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
রবিবার (২ নভেম্বর) নতুন এ মূল্যের ঘোষণা করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। যা সন্ধ্যা থেকে কার্যকর হবে।
এছাড়া অটোগ্যাসের দাম ৫৬ টাকা ৭৭ পয়সা থেকে কমে ৫৫ টাকা ৫৮ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে অক্টোবর মাসে প্রতি ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ২৯ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ২৪১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। পাশাপাশি অটোগ্যাসের দাম ১ টাকা ৩৮ পয়সা কমিয়ে ৫৬ টাকা ৭৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে ৪ দফা কমেছিল এলপিজি ও অটোগ্যাসের দাম, আর বেড়েছে ৭ দফা। এক দফা ছিল অপরিবর্তিত। গত বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর বাড়ানো হয়েছিল এলপিজি ও অটোগ্যাসের দাম। আর দাম কমেছিল এপ্রিল, মে, জুন ও নভেম্বরে। তবে দাম অপরিবর্তিত ছিল ডিসেম্বরে।
অর্থনীতি
২০২৬ সালে ১০ শতাংশ কমবে জ্বালানি তেলের দাম: বিশ্বব্যাংক
তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে নামবে, যা এখন প্রতি ব্যারেল বিক্রি হচ্ছে ৬৮ ডলারে। ইতিবাচক প্রভাব পড়বে কৃষি ও খাদ্যখাতে। ফলে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭ শতাংশ কমতে পারে। মূলত চীনে তেলের ব্যবহার স্থিতিশীল। ফলে বৈশ্বিকভাবে তেলের বাজারে অস্থিরতা থাকবে না।
২০২৬ সালে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা টানা চতুর্থ বছর পতনের লক্ষণ। দুর্বল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান তেল উদ্বৃত্ত এবং ক্রমাগত নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে ২০২৫ এবং ২০২৬ উভয় সময়েই দাম ৭ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাংক জানায়, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম নির্ধারণে জ্বালানি তেল বড় ভূমিকা রাখে। জ্বালানি খাতের দাম কমায় ২০২৫ সালে জ্বালানির দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে তা আবার প্রায় ৬ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সংস্থাটি জানায়, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে ২০২৫ সালের শুরু থেকেই। শুধু জ্বালানি তেলের দাম কমা নয় আরও কিছু কারণে কমেছে পণ্যের দাম। তার মধ্যে অন্যতম চীনে তেলের চাহিদা বৃদ্ধি কমে যাওয়া পাশাপাশি বিশ্ববাজারে তেলের সরবরাহ বেড়ে যাওয়া। জ্বালানির দাম কমার ফলে বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি কমছে, অন্যদিকে চাল ও গমের দাম কমার ফলে কিছু উন্নয়নশীল দেশে খাদ্য আরও সাশ্রয়ী হয়েছে।
পণ্য বাজার বিশ্ব অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করছে দাবি করে সংস্থাটির প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্দ্রমিত গিল বলেছেন, ‘জ্বালানি তেলের দামের পতন বিশ্বব্যাপী ভোক্তা-মূল্য মুদ্রাস্ফীতি কমার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে। কিন্তু এই স্বস্তি স্থায়ী হবে না। সরকারগুলোর উচিত তাদের আর্থিকখাতকে সুশৃঙ্খল করা। প্রতিটা দেশের ব্যবসা-প্রস্তুত করতে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে আরও ত্বরান্বিত করতে বর্তমান সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।’
সংস্থাটি জানায়, বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড যানবাহনের চাহিদা বৃদ্ধি এবং চীনে তেলের ব্যবহার স্থবির হয়ে পড়ায় তেলের চাহিদা আরও ধীরে ধীরে কমছে। অপরিশোধিত তেলের দাম ২০২৫ সালে গড়ে ৬৮ ডলার থেকে ২০২৬ সালে ৬০ ডলারে নেমে আসার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে- যা পাঁচ বছরের সর্বনিম্ন।
সংস্থাটি জানায়, ২০২৫ সালে ৬ দশমিক ১ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ০ দশমিক ৩ শতাংশ কমবে খাদ্যের দাম। রেকর্ড উৎপাদন এবং বাণিজ্যিক অস্থিরতার কারণে ২০২৫ সালে সয়াবিনের দাম কমছে তবে আগামী দুই বছরে স্থিতিশীল হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
এদিকে, সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ২০২৬ সালে কফি এবং কোকোর দাম কমার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তবে, ২০২৫ সালে সারের দাম ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, মূলত বাণিজ্য বিধিনিষেধের কারণে। তবে ২০২৬ সালে তা কমে আসবে। এই বৃদ্ধি কৃষকদের লাভের মার্জিনকে আরও ক্ষতি করবে এবং ভবিষ্যতের ফসলের ফলন নিয়ে উদ্বেগ বাড়বে।
বিশ্বব্যাংক জানায়, ২০২৫ সালে মূল্যবান ধাতুর দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে, যার পেছনে রয়েছে নিরাপদ সম্পদের চাহিদা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রমাগত কেনাকাটা। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়ে সোনার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ব্যাপকভাবে সম্পদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচিত হয়েছে সোনা। ২০২৫ সাল শেষে সোনার দাম ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী বছর এটি আরও ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলে ২০১৫-২০১৯ সালের গড় মূল্য প্রায় দ্বিগুণ হবে। ২০২৫ সালে রূপার দাম রেকর্ড বার্ষিক গড় হবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে, যা ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং ২০২৬ সালে আরও ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
সংস্থাটি আরও জানায়, দীর্ঘস্থায়ী বাণিজ্য উত্তেজনা এবং নীতিগত অনিশ্চয়তার মধ্যে যদি বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি কম তবে পণ্যের দাম প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হ্রাস পেতে পারে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি তেল উৎপাদন হয়েছে। বৈদ্যুতিক যানবাহনের বিক্রয় বেড়েছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে তেলের চাহিদা আরও কমিয়ে দিতে পারে।
বিপরীতে, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সংঘাত তেলের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে এবং সোনা ও রুপার মতো নিরাপদ আশ্রয়স্থল পণ্যের চাহিদা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তেলের ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞার বাজারের প্রভাবও মূল্যকে বেসলাইন পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি বাড়িয়ে দিতে পারে।
বিশ্বব্যাংক জানায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) দ্রুত সম্প্রসারণ এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শক্তি এবং অ্যালুমিনিয়াম এবং তামার মতো বেস ধাতুর দাম বাড়তে পারে, যা এআই অবকাঠামোর জন্য অপরিহার্য।
বিশ্বব্যাংকের উপ-প্রধান অর্থনীতিবিদ আয়হান কোস বলেন, তেলের দাম কমলে উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান এগিয়ে একটি সময়োপযোগী সুযোগ তৈরি হয়। ব্যয়বহুল জ্বালানি ভর্তুকি পর্যায়ক্রমে অবকাঠামো এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যবহার করা যায়। যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং দীর্ঘমেয়াদী উৎপাদনশীলতা জোরদার করে। এই ধরনের সংস্কার ব্যয়কে খরচ থেকে বিনিয়োগে স্থানান্তরিত করতে পারে। জ্বালানি ভর্তুকি না থাকলে টেকসই কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করবে।



