জাতীয়
‘তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার’ মুখে দেশের ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং ১৬ লাখ শিশু মারাত্মক অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের যৌথ বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) খাদ্য মন্ত্রণালয় জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এবং বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার ও সেভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গে একত্রে বহুখাতীয় ও বহুপক্ষীয় এক কর্মশালার মাধ্যমে সর্বশেষ জাতীয় পরিস্থিতি বিশ্লেষণের ফলাফল প্রকাশ করে।
২০২৪ সালে একই বিশ্লেষণে দেখা যায়, যে দেশে ২ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ উচ্চ মাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। সরকার এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে ২০২৫ সালে পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে। তবে এই অগ্রগতি ধরে রাখতে এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন নিশ্চিত করতে আরও জোরদার পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে।
ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) হলো একটি বৈশ্বিক মানদণ্ডভিত্তিক বিশ্লেষণ পদ্ধতি, যা প্রমাণভিত্তিক তথ্য ব্যবহার করে জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তার অবস্থা ৫টি ধাপে শ্রেণিবদ্ধ করে—মিনিমাল (ফেজ ১), স্ট্রেসড (ফেজ ২), ক্রাইসিস (ফেজ ৩), ইমার্জেন্সি (ফেজ ৪) এবং ক্যাটাস্ট্রোফি/দুর্ভিক্ষ (ফেজ ৫)।
২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে পরিচালিত এই বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ সময়কালে বাংলাদেশের ৩৬টি জেলা ও রোহিঙ্গা শিবিরের মোট ৯ কোটি ৬ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ১৭ শতাংশ অর্থাৎ ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ আইপিসি ফেজ ৩ বা তারও উচ্চ পর্যায়ে থাকবে বলে অনুমান করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩ লাখ ৬১ হাজার মানুষ ইমার্জেন্সি (ফেজ ৪) অবস্থায় থাকবে এবং তাদের জরুরি খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন হবে।
সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি দেখা গেছে কক্সবাজারে—বিশেষত উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায়—যেখানে প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ আইপিসি ফেজ ৩ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়াও সুনামগঞ্জ, বরগুনা, বান্দরবান, নোয়াখালী এবং সাতক্ষীরা জেলায় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি বেশি এবং এই এলাকাগুলোর প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ ফেজ ৩ পর্যায়ে শ্রেণিভুক্ত।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে কক্সবাজার ও ভাসানচরে প্রায় ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৬৯২ জন বিশ্লেষিত শরণার্থীদের প্রায় ৪০ শতাংশ ক্রাইসিস বা ইমার্জেন্সি অবস্থায় রয়েছে।
জলবায়ুজনিত ধাক্কা বিশেষ করে ২০২৪ সালের বন্যা জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, পুনরুদ্ধার ধীর করেছে; বাজারে অস্থিরতা ও মুদ্রাস্ফীতি নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়েছে; পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের চাহিদা বাড়লেও মানবিক সহায়তার তহবিল কমে গেছে। এসবই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।
পুষ্টি পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। ৬–৫৯ মাস বয়সী প্রায় ১৬ লাখ শিশু ২০২৫ জুড়ে তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে বা ভুগতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৪৪ হাজার শিশুর অবস্থা মারাত্মক অপুষ্টি (এসএএম), যাদের জরুরি চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন। একই সময়ে প্রায় ১.৪ মিলিয়ন শিশু মাঝারি পর্যায়ের অপুষ্টিতে ভুগবে বলে পূর্বাভাস। এছাড়া ১ লাখ ১৭ হাজার গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীও তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছেন।
এটাই প্রথমবার বাংলাদেশে আইপিসি অ্যাকিউট মালনিউট্রিশন বিশ্লেষণ করা হলো, যা ৭টি বিভাগের ১৮টি বিপদাপন্ন জেলা এবং রোহিঙ্গাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতির বাস্তব চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরেছে এই সর্বশেষ আইপিসি বিশ্লেষণ। ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং ১৬ লাখের বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।
তিনি আরও বলেন, আজকের এই কর্মশালা বিশ্লেষণের ফলাফল শুধু পর্যালোচনা করার জন্য নয়, বরং সেগুলোকে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনায় রূপান্তর করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ সরকার এই তথ্যকে নীতি প্রণয়নে ব্যবহার করবে এবং জাতিসংঘ ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
বিশ্লেষণে যে সুপারিশগুলো উঠে এসেছে, তার মধ্যে রয়েছে জরুরি সহায়তা প্রদান, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য শক-রেসপন্সিভ সেফটি নেট সম্প্রসারণ, কৃষি ও পশুপালন খাতে জরুরি সহায়তা, বন্যাকবলিত এলাকায় জীবিকা পুনরুদ্ধারে সহায়তা ইত্যাদি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মোহাম্মদ জাবের বলেন, আইপিসি বিশ্লেষণের ফলাফল বিশেষ করে গ্রামীণ ও উপকূলীয় সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগের কারণ, যাদের জীবিকা কৃষি ও মৎস্য খাতের ওপর নির্ভরশীল।
তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই মিলে খাদ্যব্যবস্থা শক্তিশালী করতে, পুষ্টিকর খাবারের প্রাপ্যতা বাড়াতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে যেতে চাই। দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে আমাদের দ্রুত ও সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি যেন কেউ পিছিয়ে না থাকে।
সরকারি সংস্থা, জাতিসংঘ, এনজিও এবং প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতার মাধ্যমে এই আইপিসি বিশ্লেষণ সম্পন্ন হয়েছে। আজকের কর্মশালায় বিভিন্ন অংশীজন বিশ্লেষণের ফলাফল নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, নীতি সমন্বয় এবং জাতীয় পরিকল্পনায় ফলাফল প্রতিফলনের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
জাতীয়
নির্বাচন বানচালে বড় শক্তি কাজ করবে: প্রধান উপদেষ্টা
নির্বাচন বানচালের জন্য দেশের ভেতর থেকে, বাহির থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ছোটখাটো না, বড় শক্তি নিয়ে নির্বাচন বানচালে চেষ্টা করবে। হঠাৎ করে আক্রমণ চলে আসতে পারে। এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। যত ঝড়ঝাপ্টা আসুক আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবেই।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির মিলনায়তনে এক বিফ্রিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার বরাত দিয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম তা জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার অপপ্রচার আসবে। নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য দেশের ভেতর থেকে বাইরে থেকে খুবই পরিকল্পিতভাবে নানা রকম অপপ্রচার চালানো হবে। এআই ছবি ভিডিও তৈরি করে ছেড়ে দেওয়া হবে। এটাকে সামাল দিতেই হবে। একটা অপপ্রচারের রচনা হওয়া মাত্র সেটা ঠেকাতে হবে। যেন ছড়াতে না পারে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আগামী নির্বাচন সুন্দর ও উৎসব মুখর করতে হলে মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। নির্বাচনী নীতিমালা, ভোট কেন্দ্রের নিয়ম, কীভাবে ভোট প্রদান করতে হবে, কোথাও বিশৃঙ্খলা হলে কি করতে হবে, এসব বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বরাত দিয়ে প্রেস সচিব জানান, ইলেকশন কমিশন এবং কালচারাল মিনিস্ট্রিকে আরো যত টিভিসি, ডকুমেন্টারি বা আরো ভিডিও যত তৈরি করা যায় এবং এটা যেন খুব দ্রুত ইউটিউব এ বা সোশ্যাল মিডিয়াতে আসে, সবাই যেন এটা দেখে নিজেরাই অনেক ক্ষেত্রে প্রস্তুত হতে পারে, তার নির্দেশ দিয়েছেন।
জাতীয়
নিবন্ধনবিহীন মোবাইল বন্ধে চালু হচ্ছে এনইআইআর সিস্টেম
নানা সময়ে নিবন্ধনবিহীন মোবাইল ফোন বন্ধের কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। এবার তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এ লক্ষ্যে এবার ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে সংস্থাটি।
আগামী ১৬ ডিসেম্বর এ পদ্ধতি চালু করা হবে। এরপর নিবন্ধনবিহীন বা আন অফিসিয়াল মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেওয়ার কার্যকর ব্যবস্থা চালু করা হবে।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে বিটিআরসির বোর্ড রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
বিশেষ সহকারী বলেন, ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) চালুর মাধ্যমে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হবে। এটি এমন একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা, যা প্রতিটি মোবাইল হ্যান্ডসেটের আন্তর্জাতিকভাবে অনুমোদিত আইএমইআই নম্বরকে ব্যবহারকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও ব্যবহৃত সিমের সঙ্গে যুক্ত করে নিবন্ধিত করবে। ফলে বৈধ ও অবৈধ হ্যান্ডসেট সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, এ ব্যবস্থা চালু হলে অবৈধভাবে আমদানিকৃত বা নকল মোবাইল ফোনের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হবে। ফলে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে এবং দেশীয় মোবাইল উৎপাদন শিল্প আরও সুরক্ষিত হবে। পাশাপাশি চুরি বা অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত ডিভাইস শনাক্ত ও ব্লক করা সম্ভব হওয়ায় অপরাধ দমনেও এটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, এনইআইআর শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নয়। এটি নাগরিকের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা এবং টেলিযোগাযোগ খাতের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার একটি জাতীয় অঙ্গীকার। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে বিটিআরসির পাশাপাশি দেশের চারটি মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটক তাদের নিজস্ব ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (ইআইআর) সিস্টেম উন্নয়নে কাজ করছে।
বিশেষ সহকারী আরও বলেন, এনইআইআর চালুর ফলে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) জালিয়াতি, সিম প্রতারণা ও স্ক্যাম কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে ইকেওয়াইসি যাচাই আরও শক্তিশালী হবে, টেলিকম সেক্টরে নিরাপত্তা জোরদার হবে এবং রাজস্ব আদায়ও বৃদ্ধি পাবে।
গণমাধ্যমকর্মী ও বিভিন্ন অপারেটরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশের টেলিকম খাতে একটি নতুন, নিরাপদ ও স্বচ্ছ যুগে প্রবেশ করবে। আমি আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি এ উদ্যোগ সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করুন এবং বৈধ হ্যান্ডসেট ব্যবহারে উৎসাহিত করেন।
অনুষ্ঠানের বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারীসহ সংস্থাটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয়
১২৮ জুলাই যোদ্ধার গেজেট বাতিল
মিথ্যা তথ্য দিয়ে গেজেটভুক্ত হওয়ায় ১২৮ জন জুলাই যোদ্ধার গেজেট বাতিল করেছে সরকার। বুধবার (২৯ অক্টোবর) এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকাশিত গেজেট তালিকায় কিছু কিছু জুলাই যোদ্ধা আহত নন, আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকে আহত হননি এবং কয়েক জনের নামে একাধিক গেজেট প্রকাশিত হওয়ার তথ্য মেলে।
এ অবস্থায় জেলা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ময়মনসিংহ বিভাগের ২১ জন, সিলেট বিভাগের ২৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৩৯ জন, খুলনা বিভাগের ৯ জন, রংপুর বিভাগের তিনজন, ঢাকা বিভাগের ১৪ জন, রাজশাহী বিভাগের ১৩ জন, বরিশাল বিভাগের দুজনসহ মোট ১২৮ জনের গেজেট বাতিল করা হয়েছে।
জাতীয়
ভুয়া জুলাইযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করল সরকার
জুলাই আন্দোলনে যুক্ত না থেকেও জুলাইযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন ১০৪ জন। এসব ভুয়া ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে সরকার। তাদের নামের গেজেট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে মোট ১২৭ জনের গেজেট বাতিল হবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ময়মনসিংহ বিভাগে ২০ জন ভুয়া ও ১ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে। সিলেট বিভাগে এ সংখ্যা যথাক্রমে ২৬ ও ১। চট্টগ্রাম বিভাগে ভুয়া ৩৪ জন এবং ৪ জনের নামে দুবার গেজেট রয়েছে। খুলনায় ভুয়া ৫ জন ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, রংপুরে ২ জন ভুয়া, ঢাকায় ৭ জন ভুয়া ও ৭ জনের নামে দুবার গেজেট, রাজশাহীতে ৯ জন ভুয়া ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট এবং বরিশাল বিভাগে ২ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে।
যেসব জুলাই-যোদ্ধার গেজেট বাতিল করতে সুপারিশ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে—
ময়মনসিংহ বিভাগের ২০ জন হলেন নেত্রকোনার সৈয়দ তরিকুল ইসলাম (গেজেট নম্বর ৮০), মোহাম্মদ নুরুল আমিন (৮৮), তানভীর আহমেদ (১২১), আছিয়া খাতুন (১২৩), রুহুল আমিন (১২৭), মো. আমি হাসান রুপম (১২৯), মোহাম্মদ আকিব তালুকদার (১৪৬), মো. সুজন মিয়া (১৫৫), মো. ইমন শাহারিয়া (১৬৫), আশরাফুল ইসলাম জাসাম (১৭২), মুশফিকুর রহমান (১৯৭), মো. সজিব (১৯৮), সোহাগ মিয়া (১৯৯), রুবেল মিয়া (৩৬২), মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন (৩৬৩), রাব্বি হাসান শ্রীনি (৫৬৫), মোহাম্মদ আজহারুল ইসলামিক (৫৬৬), মো. আবু ফরিদ আহামেদ (৫৬৭), আফরিনা জান্নাত (৫৭০) ও মাজহারুল ইসলাম (৬৪৮)।
ঢাকা বিভাগের ৭ জন ভুয়া ও ৭ জন দ্বৈত গেজেটধারী হলেন: রাসেল (৬৭০), খন্দকার রাজ (১০৬৩), রাফিউল নাঈম (১১৬১), রাশেদুল ইসলাম অনিক (১১৬৩), আব্দুল্লাহ আল রাহাত (১১৬৬), মো. মঞ্জমুল আলম জিসান (১৯৩২), মো. সাইফুল ইসলাম শুভ (২৬৮২), রিয়াজুল হাসান (২৮৩৮), বেলায়াত হোসেন শাহীন (২৮৩৯), মুজবর মৃধা (৩৯৬৪), জিহাদ (৩৪১৩), মো. রফিকুল সরদার (৭৩৩), মো. মাসুদুর রহমান (৬৪৫), মোছা. রুমি (৩৪৩১) ও মো. রিয়াজ শরীফ (১৩৮২)।
চট্টগ্রাম বিভাগের ৩৪ জন ভুয়া জুলাই-যোদ্ধার তালিকায় রয়েছেন চট্টগ্রাম জেলার মো. শাগর (৩২৮), আবদুল্লাহ আল নোমান (৪৬৯), নাইম উদ্দীন শাঈদ (৪৯২), মোহা. শরিফুল ইসলাম (৫১৫), শাহাদাত ইকবাজ তাহনি (৫২১), তাহমিনা ইকরার তারকি (৫২২), মাহাবী তাজওয়ার (৫৩৪), জসিম উদ্দিন (৫৪২), মো. আতিকুল ইসলাম (৫৫২), মো. ইয়াছিন (৫৬০), আরফাতুল ইসলাম (৫৯৫), ফরহাদ আলম (৬০১), মোদাসাদ সাহাদ কবির এমরান (৬০৩), মুনজামিরুল হক চৌধুরী মামুর (৬১৬), পঠন চন্দ্র নাথ (৬২২), মিশকাত-আলম রিয়াদ (৬৭৫), মো. এমরান (৭৯৭), মাহাম্মদ সাগর (৭৬৮), নুরুল্লাহ (৭৮৯), সোহাম্মদ রাফি (৭৯৯), ফয়সাল মোহাম্মদ শিয়াস (৮০২), মোছা. ইছনিয়া আকতার (৮২৪), মো. মাঈনুদ্দীন (৮২৫), সাইমন (৯৭৩), মো. আরিফ (১৯৭৬), রাসেল (১৯৮৬), রমজান আলী (৯৮৭), মাহিম চৌধুরী (৯৯৯), রিফাত বিন আল (১৯৯৯)।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সম্পৃক্ত না হয়েও অনেকেই জুলাই-যোদ্ধার তালিকায় থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর ভুয়া প্রমাণিতদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক)।
মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ‘ক’ শ্রেণিতে (অতি গুরুতর আহত) ৬০২ জন, ‘খ’ শ্রেণিতে (গুরুতর আহত) ১১১৮ জন ও ‘গ’ শ্রেণিতে (আহত) ১২ হাজার ৮০ জনসহ মোট ১৪ হাজার ৬৩৬ জনের নাম গেজেটভুক্ত করা হয়। নিহত হন ৮৪৪ জন, যার মধ্যে ৮ জনের গেজেট ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও জুলাই গণ অভ্যুত্থান অধিদপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেন, যাদের নামে অভিযোগ ছিল, সেসব বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের গেজেট বাতিল করা হবে এবং গেজেট বাতিলের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গেজেট বাতিলের কাজ চলমান রয়েছে।
জাতীয়
মেট্রোরেলে দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবারকে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রুল
মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে নিহত আবুল কালামের পরিবারকে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে মেট্রোরেলে সার্বিক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি আসিফ হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন ও অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ।
এর আগে, মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
গত রোববার (২৬ অক্টোবর) ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পিলার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিচে পড়লে আবুল কালাম নামে ওই ব্যক্তি নিহত হন। সোমবার তার মরদেহ শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠী গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর পর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়।
উল্লেখ্য, এই মর্মান্তিক ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা এবং পরিবারের সদস্যকে মেট্রোরেলে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।




