ব্যাংক
শনিবার ব্যাংক খোলা রাখা নিয়ে নতুন নির্দেশনা
হজ কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখা বা উপশাখা শনিবার (১৮ অক্টোবর) খোলা রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, হজ নিবন্ধনের অর্থ জমা দেওয়ার জন্য আমানতকারীরা যতক্ষণ পর্যন্ত উপস্থিত থাকবেন, ততক্ষণ ব্যাংকগুলোকে ওই অর্থ গ্রহণ অব্যাহত রাখতে হবে।
এ ছাড়া, সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ব্যাংক কম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৫ ধারা অনুযায়ী এ নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংক
৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের অনুমোদন দিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক
নয়টি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের (লিকুইডেট) প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে ব্যাংক রেজোলিউশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫–এর আওতায় এ কার্য সম্পাদন করা হবে।
গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য নিশ্চিত করন। গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড গতকাল এই অনুমোদন দিয়েছে বলে জানান তিনি।
ওই কর্মকর্তা জানান, এই সিদ্ধান্তের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন আনুষ্ঠানিকভাবে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ, লিকুইডেটর নিয়োগ, সম্পদ বিক্রি এবং প্রাপ্ত অর্থ পাওনাদারদের মধ্যে বণ্টন করতে পারবে।
ব্যাংক রেজোলিউশন অর্ডিন্যান্সে আর্থিক সংকটে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে একীভূত করা, পুনর্গঠন করা বা বন্ধ করা হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বিক্রি করে পাওনাদারদের টাকা কীভাবে পরিশোধ করা হবে তাও এতে উল্লেখ আছে।
দুর্বল পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূতকরণের প্রক্রিয়ার পরপরই এই সিদ্ধান্ত এলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড ইতোমধ্যে নতুনভাবে একীভূত সম্মিলিত ইসলামি ব্যাংকের লাইসেন্স দিয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যাংক একীভূতকরণ। নতুন প্রতিষ্ঠানটি এখন দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক হতে চলেছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া এবং ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার এই উদ্যোগের মাধ্যমে বোঝা যায়, আর্থিক খাতে দীর্ঘ বছরের অবনতির পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা এখন অনেক কঠোর ও সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে শুরু করেছে।
নয়টি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো- এফএএস ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, প্রিমিয়ার লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, আভিভা ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৫২ শতাংশ এই নয়টি প্রতিষ্ঠানের। গত বছরের শেষে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা।
এই নয়টির মধ্যে আটটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারপ্রতি গড় নিট সম্পদমূল্য ঋণাত্মক ৯৫ টাকা। এখান থেকে বোঝা যায়, সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া তাদের পক্ষে দায় পরিশোধ করা প্রায় অসম্ভব। সহজ ভাষায় বললে, প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ বিক্রি করে সব ঋণ শোধ করলেও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কিছুই থাকবে না, অথবা থাকলেও তা খুবই সামান্য।
আমানতকারীরা অগ্রাধিকার পাবেন
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক এই অনুমোদন দিয়েছে। অনেক আমানতকারীর স্কিমের মেয়াদপূর্তি হওয়ার পরও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। তারা মাসের পর মাস অপেক্ষা করছেন, এমনকি বছরের পর বছর অপেক্ষা করছেন কেউ কেউ।
শনিবার এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক খুব শিগগিরই লিকুইডেটর নিয়োগ করবে।
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘লিকুইডেশন প্রক্রিয়া শুরুর আগে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। সরকার ইতোমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার মৌখিক অনুমোদন দিয়েছে।’
‘আমানতকারীদের রক্ষা করতেই তারা এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ (লিকুইডেশন) করার পথে এগোচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকদের আমানত ফেরত দেওয়া আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার,’ বলেন তিনি।
আভিভা ফাইন্যান্সের গ্রাহক খলিল আহমেদ খান (৬৪) জানান, তার ২৩ লাখ টাকার আমানতের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে জানুয়ারিতে। কিন্তু তিনি এখন পর্যন্ত পেয়েছেন মাত্র ৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।
তিনি প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বহুবার যোগাযোগ করলেও কোনো ফল হয়নি বলে জানান।
উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত খলিল আহমেদ খান বলেন, তারা টাকা দিতে দেরি করায় চিকিৎসা খরচ জোগাড় করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
‘আমার ঋণ পরিশোধ ও চিকিৎসার খরচ মেটাতে জরুরি ভিত্তিতে টাকার দরকার,’ বলেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক দুই ধরনের আমানতকারী মিলিয়ে নয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মোট ১৫ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার আমানত আটকে আছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা একক গ্রাহকের এবং ১১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা ব্যাংক ও করপোরেট আমানতকারীর।
একক আমানতকারীর আমানত আটকে থাকার দিক থেকে শীর্ষে আছে পিপলস লিজিং, প্রতিষ্ঠানটিতে ১ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা আটকে আছে। এরপর আছে—আভিভা ফাইন্যান্স ৮০৯ কোটি টাকা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ৬৪৫ কোটি টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্স ৩২৮ কোটি টাকা, এফএএস ফাইন্যান্স ১০৫ কোটি টাকা।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলেন, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাতের এই সংকটের গোড়ায় রয়েছে বহুদিনের সমস্যা। ব্যাংকের তুলনায় এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে নজরদারি কম ছিল। ফলে বছরের পর বছর ধরে কেলেঙ্কারি, দুর্বল শাসনব্যবস্থা ও অনিয়ম জমতে জমতেই আজকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এই খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান সম্পদের পরিমাণ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো এবং লোকসান কম দেখানোর মাধ্যমে তাদের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা লুকিয়ে রেখেছিল।
এ বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন্স ডিপার্টমেন্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের সংক্ষিপ্ত তালিকা করে। ওই তালিকায় এই নয়টি প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল এবং এবং নামগুলো ব্যাংক রেজোলিউশন ডিপার্টমেন্টে পাঠানো হয়।
এর আগে ১০ মাসের একটি মূল্যায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০টি দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে ‘লাল’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করে।
তালিকায় থাকা বাকি ১১টি প্রতিষ্ঠান হলো—সিভিসি ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, হজ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, আইআইডিএফসি, উত্তরা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল।
এমকে
ব্যাংক
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হলেন সাবেক সচিব আইয়ুব মিয়া
পাঁচটি দুর্বল ব্যাংক একীভূত করে পরিচালনার জন্য অবশেষে চূড়ান্ত লাইসেন্স পেল ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’। নতুন ব্যাংকের চেয়ারম্যান করা হয়েছে সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়াকে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদ সভায় নবস্থাপিত ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’র লাইসেন্স অনুমোদন করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই এই নতুন ব্যাংকটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করবে।
একীভূত হওয়া পাঁচটি ব্যাংক হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বারবার তারল্য সহায়তা দেওয়ার পরও এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা উন্নতি হয়নি, বরং শেয়ারবাজারে তাদের শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে কমে গেছে এবং প্রায় সব ব্যাংকের নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) এখন ঋণাত্মক।
এই নাজুক পরিস্থিতিতেই একত্রীকরণের মাধ্যমে নতুন ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নতুন ব্যাংকটির মোট পেইড-আপ ক্যাপিটাল নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা দেবে, এবং বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা আসবে আমানতকারীদের শেয়ার থেকে। প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা।
এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৯ নভেম্বর সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
অর্থনীতিবিদরা এই সিদ্ধান্তকে দেশের ব্যাংকিং খাতের ইতিহাসে একটি অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন, যা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে উদ্ধার এবং ইসলামী ব্যাংকিং খাতে আস্থা পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এর আগে, গত ৫ নভেম্বর আর্থিকভাবে দুর্বল পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংককে অকার্যকর ঘোষণা করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকগুলো ভয়াবহ তারল্য সংকটের কারণে কর্মীদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছে। আর্থিক এ সংকটে এসব ব্যাংকের কর্মীদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, ৩৫০ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা রেখে নতুন সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের অন্তর্ভুক্ত ৫ ব্যাংক কর্মীদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ব্যাংকগুলোর চরম তারল্য সংকট ও আর্থিক অনিয়মের কারণে এই পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর। তবে এই সিদ্ধান্ত পুনর্গঠনের অংশ ও সাময়িক বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকী।
তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাজারভিত্তিক বেতন পাবেন কর্মকর্তারা।
তবে একীভূত করার সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে। ১৮ নভেম্বর শহিদুল ইসলাম নামে এক সাধারণ বিনিয়োগকারীর পক্ষে ব্যারিস্টার মাহসিব হোসাইন এ রিট দায়ের করেন।
ব্যাংক
চূড়ান্ত অনুমোদন পেলো ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’
ব্যাংকিং খাতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’ ব্যাংক হিসেবে চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছে।
রবিবার (৩০ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক বোর্ড সভার মাধ্যমে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই এই নতুন ব্যাংকটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করবে।
একীভূত হওয়া পাঁচটি ব্যাংক হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বারবার তারল্য সহায়তা দেওয়ার পরও এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা উন্নতি হয়নি, বরং শেয়ারবাজারে তাদের শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে কমে গেছে এবং প্রায় সব ব্যাংকের নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) এখন ঋণাত্মক।
এই নাজুক পরিস্থিতিতেই একত্রীকরণের মাধ্যমে নতুন ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নতুন ব্যাংকটির মোট পেইড-আপ ক্যাপিটাল নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা দেবে, এবং বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা আসবে আমানতকারীদের শেয়ার থেকে। প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা।
এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৯ নভেম্বর সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
অর্থনীতিবিদরা এই সিদ্ধান্তকে দেশের ব্যাংকিং খাতের ইতিহাসে একটি অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন, যা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে উদ্ধার এবং ইসলামী ব্যাংকিং খাতে আস্থা পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এর আগে, গত ৫ নভেম্বর আর্থিকভাবে দুর্বল পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংককে অকার্যকর ঘোষণা করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকগুলো ভয়াবহ তারল্য সংকটের কারণে কর্মীদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছে। আর্থিক এ সংকটে এসব ব্যাংকের কর্মীদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, ৩৫০ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা রেখে নতুন সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের অন্তর্ভুক্ত ৫ ব্যাংক কর্মীদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ব্যাংকগুলোর চরম তারল্য সংকট ও আর্থিক অনিয়মের কারণে এই পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর। তবে এই সিদ্ধান্ত পুনর্গঠনের অংশ ও সাময়িক বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকী।
তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাজারভিত্তিক বেতন পাবেন কর্মকর্তারা।
তবে একীভূত করার সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে। ১৮ নভেম্বর শহিদুল ইসলাম নামে এক সাধারণ বিনিয়োগকারীর পক্ষে ব্যারিস্টার মাহসিব হোসাইন এ রিট দায়ের করেন।
অর্থনীতি
সম্মিলিত ব্যাংকের কর্মীদের বেতন ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হতে পারে
বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকের কর্মীদের বেতন-ভাতা কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটের কারণে কর্মীদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছে এবং গ্রাহকেরা টাকা তোলার ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
এখানকার পাঁচটি ব্যাংক হলো: ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। ব্যাংকগুলো একীভূত হয়ে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ গঠন করবে।
গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সদর দপ্তরে এই পাঁচ ব্যাংকের প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। বৈঠকে ব্যাংকগুলো এক হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা চেয়েছিল, তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন দিয়েছে মাত্র ৩৫০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, ব্যাংকগুলোর খরচ কমানো এবং নতুন ব্যাংক দ্রুত চালু করা অপরিহার্য। অংশ হিসেবে কর্মীদের বেতন ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে এই পাঁচ ব্যাংকে প্রায় ১৬ হাজার কর্মী রয়েছেন। অতীতের সময় অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংকগুলোকে প্রায় ৩৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছে, যা এখনও ফেরত দেওয়া হয়নি।
একীভূত ব্যাংকে সাধারণ আমানতকারীরা দুই লাখ টাকা পর্যন্ত তুলতে পারবেন। ক্ষুদ্র আমানতকারীদের অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকবে।
নতুন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সাত সদস্যের, সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক। পর্ষদের অন্যান্য সদস্যরা হলেন সরকারি বিভিন্ন বিভাগীয় সচিব ও যুগ্ম সচিবরা। নতুন ব্যাংকে পেশাদার ব্যাংকার, হিসাববিদ ও আইনজীবী সমানসংখ্যক স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাবেন। এমডি এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদেরও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
ব্যাংক
প্রাইম ব্যাংকের পুনর্নির্বাচিত চেয়ারম্যান তানজিল চৌধুরী
প্রাইম ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান হিসেবে তানজিল চৌধুরীকে পুনর্নির্বাচিত করেছে পরিচালনা পর্ষদ। সম্প্রতি ব্যাংকের ৫৮৫তম পরিচালনা পর্ষদ সভায় তাকে পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) প্রাইম ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা এসকে নাসির হোসেন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচনের বিষয়ে জানানো হয়।
২০২০ সালে প্রথমবার প্রাইম ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন তানজিল চৌধুরী। তার নেতৃত্বে প্রাইম ব্যাংক ডিজিটাল রূপান্তর, উদ্ভাবন ও স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। একই সঙ্গে ডিজিটাল ব্যাংকিং, উদ্ভাবনী পণ্য ও সেবা, পরিবেশ ও সামাজিক সুশাসন, জেন্ডার ডাইভারসিটি, স্থায়িত্বশীলতা ও নেতৃত্বের উৎকর্ষতার জন্য ব্যাংকটি আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও পুরস্কার দেওয়া সংস্থার স্বীকৃতি অর্জন করে।
তানজিল চৌধুরী প্রাইম ব্যাংকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ইস্ট কোস্ট গ্রুপের (ইসিজি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ৪৫ বছরের বেশি সময় ধরে জ্বালানি ও ডাউনস্ট্রিম হাইড্রোকার্বন খাতে কার্যক্রম পরিচালনাকারী এ কনগ্লোমারেট দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্টে (বিআইআই) উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এছাড়া ২০১৪ থেকে ২০২১ টানা দুই মেয়াদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচিত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তানজিল চৌধুরী বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও সোলার মডিউল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এসএমএমএবি) সাবেক সভাপতি ছিলেন।



