আন্তর্জাতিক
মালয়েশিয়ায় অভিযানে বাংলাদেশিসহ ৬২ প্রবাসী আটক

মালয়েশিয়ার জোহর রাজ্যের ইমিগ্রেশন বিভাগ পরিচালিত অভিযানে বিভিন্ন দেশের ৬২ জন বিদেশি নাগরিককে আটক করা হয়েছে।
আটকদের মধ্যে রয়েছেন, মিয়ানমারের ৩০, ইন্দোনেশিয়া ৫, বাংলাদেশ ৩, ভারত ২, নেপাল ১, শ্রীলঙ্কা ১, মিয়ানমার ১৪ নারী, ইন্দোনেশিয়ার ৩, ভিয়েতনামের ২ নারী এবং মিয়ানমারের একজন শিশু নাগরিক।
রাতে শহরের দুটি ভিন্ন এলাকায় পরিচালিত এই অভিযানে অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশিদের শনাক্ত করা হয়।
জোহর ইমিগ্রেশন বিভাগের পরিচালক দাতুক মোহাম্মদ রুসদি মোহাম্মদ দারুস এক বিবৃতিতে জানান, স্থানীয় সূত্র ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সন্ধ্যা ৭টা থেকে অভিযান শুরু হয়। সন্দেহভাজন দুটি রেস্টুরেন্টে অভিযান চালানো হয়, যেখানে বিদেশি শ্রমিকদের বৈধ অনুমতি ছাড়া কাজ করার অভিযোগ ছিল।
তিনি জানান, অভিযানটি পরিচালনা করে ইমিগ্রেশন বিভাগের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট, যার সঙ্গে সহযোগিতা করে মালয়েশিয়া বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড সিকিউরিটি এজেন্সির সুলতান ইস্কান্দার ভবনের টিম।
মোট ১৪৩ জনের পরিচয় যাচাইয়ের পর ৬২ জনকে আটক করা হয়, যাদের বয়স তিন থেকে ৫০ বছরের মধ্যে।
মোহাম্মদ রুসদি বলেন, আটকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইমিগ্রেশন অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে— বৈধ ভ্রমণ নথি না থাকা, ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া এবং ভিসা অপব্যবহার করে অবৈধভাবে কাজ করা।
এছাড়া দুটি রেস্টুরেন্টের স্থানীয় মালিককেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে ১৯৫৯/৬৩ সালের ইমিগ্রেশন আইনের অধীনে বিদেশি কর্মী নিয়োগের অভিযোগ আনা হবে। অভিযান চলাকালে তিনজন সাক্ষীকে তদন্তে সহায়তার জন্য বোরাং ২৯ (ফর্ম ২৯) প্রদান করা হয়েছে।
আটক ব্যক্তিদের পরবর্তী তদন্তের জন্য সেতিয়া ট্রপিকা ইমিগ্রেশন ডিপোতে পাঠানো হয়েছে।
রুসদি জনসাধারণকে আহ্বান জানান, অবৈধ অভিবাসন, মানবপাচার ও অভিবাসী চোরাচালান সংক্রান্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে, যেন জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় থাকে।

আন্তর্জাতিক
মেক্সিকোতে ঝড় ও ভূমিধসে নিহত ৪৪

দুই মৌসুমি ঝড় প্রিসিলা এবং রেমন্ডের আঘাত এবং ভারী বর্ষণের জেরে সৃষ্ট বন্যা-ভূমিধসে মেক্সিকোতে নিহত হয়েছেন ৪৪ জন এবং ২৭ জন এখনও নিখোঁজ আছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
রবিবার দেশটির কেন্দ্রীয় দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে এ তথ্য।
বিবৃতির তথ্য অনুযায়, ঝড়-বৃষ্টি ও ভূমিধসে মেক্সিকোর ৫টি রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভেরাক্রুজ। এই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ১৬ জন নিহত হয়েছেন হিদালাগো রাজ্যে; পুয়েবলা ও কুয়েরেতারো রাজ্য থেকে উদ্ধার করা হয়েছে যথাক্রমে ৯ জন এবং ১ জনের মরদেহ।
মৌসুমি ঝড় প্রিসিলা ও রেমন্ডের জেরে গত ৬ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ভারী বর্ষণ শুরু হয় মেক্সিকোজুড়ে। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুসারে, শুধু ভেরাক্রুজেই তিন দিনে ৫৪০ মিলিমিটার (২১ ইঞ্চিরও বেশি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
৯ অক্টোবরের পর থেকে ঝড় ও বৃষ্টির তেজ কমতে থাকে। এ সময় উদ্ধার অভিযানে নামে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তর ও সেনাবাহিনী। দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রবল বৃষ্টির জেরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিধস হয়েছে। ঝড়ো হাওয়ায় অনেক এলাকায় গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে বাড়িঘরের ওপর পড়েছে। ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
৬ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত চলা ব্যাপক এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে মেক্সিকোর ৫৫টি শহরে মোট ১৬ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছেন ৩ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
৬ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত চলা ব্যাপক এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে মেক্সিকোর ৫৫টি শহরে মোট ১৬ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া এখনও বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছেন ৩ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শিনবাম গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় বলেছেন, “রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের সমন্বয়ে দেশজুড়ে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে সহায়তা করা হবে। কেউ বাদ যাবে না।”
আন্তর্জাতিক
অস্থায়ী ভিসার ৮২ পেশার তালিকা তৈরি করেছে যুক্তরাজ্য

শ্রমিক ঘাটতি মোকাবিলার লক্ষ্যে একটি নতুন অভিবাসন প্রকল্পের অধীনে অস্থায়ী কাজের ভিসার জন্য নতুন উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাজ্য। এ লক্ষ্যে অস্থায়ী কর্ম ভিসার জন্য মধ্য-দক্ষতার ৮২টি পেশার তালিকা প্রকাশ করেছে দেশটি।
ইংলিশ চ্যানেলে অনিয়মিত পথে নৌকায় অভিবাসী আগমন নিয়ে দেশটির ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। মতামত জরিপে পপুলিস্ট দল রিফর্ম ইউকের চেয়ে লেবার পার্টির পিছিয়ে থাকার কারণে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও চাপে পড়েছেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মূলত ভোটারদের মন জয়ের লক্ষ্যেই অভিবাসনের বিষয়ে আরও কঠোর অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করছেন স্টারমার।
পাশাপাশি মন্থর অর্থনীতি এবং কিছু খাতে কর্মী ঘাটতি সংকটও দেশটিতে তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে।
ব্রিটেনে যেসব কাজে অস্থায়ী ঘাটতি রয়েছে, সেই তালিকার ৮২টি পেশার সুপারিশ করেছে অভিবাসন বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটি (এমএসি)। প্রতিবেদনে প্রয়োজনীয় যোগ্যতায় ছাড় দিয়ে এসব চাকরিতে বিদেশি কর্মীদের যুক্তরাজ্যে সীমিত প্রবেশাধিকার প্রদান করার সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিটি বলেছে, ‘এমএসি যেসব পেশার সুপারিশ করবে, সেগুলোতে অভিবাসী শ্রমের প্রয়োজনীয়তা কমানো এবং স্থানীয় কর্মীদের সর্বাধিক ব্যবহারে গৃহীত পরিকল্পনাও উপস্থাপন করতে হবে।’
প্রস্তাবিত পেশার তালিকায় ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনিশিয়ান, ওয়েল্ডার, ফটোগ্রাফার, অনুবাদক এবং লজিস্টিক ম্যানেজারও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, যোগ্য অভিবাসী কর্মীদের তিন থেকে পাঁচ বছরের ভিসা দেওয়া যেতে পারে। তবে সরকার নীতি পরিবর্তন না করলে তাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি না দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
আবেদনকারীদের ইংরেজি ভাষায় ন্যূনতম দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে হবে এবং নিয়োগকর্তাদের স্থানীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং নিয়োগের পরিকল্পনা জমা দিতে হবে।
২০২৬ সালের জুলাই মাসে পর্যালোচনার দ্বিতীয় ধাপে এই পেশার তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
ক্যানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় একই ধরনের পরিকল্পনা বিদ্যমান রয়েছে। এসব দেশে স্বাস্থ্যসেবা, প্রকৌশল ও দক্ষ বাণিজ্যে শ্রমঘাটতি পূরণের জন্য ভিসা প্রকল্প কার্যকর রয়েছে।
দুই দিনের ভারত সফরে স্টারমার ভারত সরকারের সঙ্গে ভিসা চুক্তির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এর আগে এই ইস্যুটির কারণে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনা বাধাগ্রস্ত হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক
মক্কায় বিপুল স্বর্ণখনি আবিষ্কার, বিশ্ববাজারে নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত

সৌদি আরবের মক্কা অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের খনি আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। মানসুরা–মাসারাহ স্বর্ণখনির দক্ষিণে নতুন এই খনি আবিষ্কারের ফলে রাজতন্ত্রটির স্বর্ণখনন খাতের পরিসর আরও বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
আরবিয়ান গালফ বিজনেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নব আবিষ্কৃত স্বর্ণখনিটি প্রায় ১২৫ কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত—যা ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খনিজ আবিষ্কার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই আবিষ্কার সৌদি আরবের ‘ভিশন ২০৩০’–এর অংশ, যার মূল লক্ষ্য তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বিকল্প খাত, বিশেষ করে খনিজ শিল্পকে অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভে পরিণত করা।
রাষ্ট্রীয় খনিজ কোম্পানি ‘মাআদেন’ জানিয়েছে, প্রায় ১০০ কিলোমিটারজুড়ে উচ্চমাত্রার স্বর্ণখনি শনাক্ত হয়েছে। খনন নমুনা বিশ্লেষণে প্রতি টন মাটিতে সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ৬ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
মাআদেনের প্রধান নির্বাহী রবার্ট উইলে বলেছেন, ‘এই নতুন আবিষ্কার মক্কাকে বৈশ্বিক স্বর্ণখনি মানচিত্রে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন এই খনি আবিষ্কার সৌদি আরবের স্বর্ণ উৎপাদন সক্ষমতা বহুগুণ বাড়াবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগ আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি আন্তর্জাতিক স্বর্ণবাজারেও প্রভাব ফেলবে, যেখানে বর্তমানে প্রতি ১০ গ্রাম স্বর্ণের দাম ১,১১৫ ডলারের বেশি।
মানসুরা–মাসারাহ খনিতে বর্তমানে প্রায় ৭০ লাখ আউন্স স্বর্ণের মজুত রয়েছে এবং প্রতিবছর সেখান থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার আউন্স স্বর্ণ উত্তোলন করা হয়। নতুন আবিষ্কারটির ফলে খনি কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হবে এবং প্রায় ১২৫ কিলোমিটারজুড়ে একটি বিশ্বমানের স্বর্ণবেল্ট গড়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শিল্প ও খনিজসম্পদ মন্ত্রী বান্দার আলখোরাইফ বলেন, ‘সৌদি আরবের খনিজ খাত বর্তমানে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল খাতগুলোর একটি। এই আবিষ্কার আমাদের অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণের যাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।’
এছাড়া মাআদেন জানিয়েছে, ওয়াদি আল-জাও এবং জাবাল শাইবান অঞ্চলেও নতুনভাবে স্বর্ণ ও তামার উচ্চমাত্রার খনিজের সন্ধান মিলেছে।
বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ স্বর্ণভাণ্ডারধারী দেশ (অক্টোবর ২০২৫ অনুযায়ী)
১. যুক্তরাষ্ট্র – ৮,১৩৩.৫ টন
২. জার্মানি – ৩,৩৫১ টন
৩. ইতালি – ২,৪৫১.৮ টন
৪. ফ্রান্স – ২,৪৩৭ টন
৫. রাশিয়া – ২,৩৩২.৭ টন
এর আগে অস্ট্রেলিয়াকে প্রায় ১০,০০০ টন স্বর্ণভাণ্ডারসহ বিশ্বের বৃহত্তম স্বর্ণভাণ্ডারধারী দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে সুইজারল্যান্ডে পাড়ি জমাচ্ছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ দুফলো ও অভিজিৎ

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ এস্থার দুফলো ও অভিজিৎ ব্যানার্জি শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে সুইজারল্যান্ডে পাড়ি জমাতে চলেছেন। তারা জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করবেন। সেখানে ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্স বিষয়ক নতুন একটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করবেন তারা।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।
নোবেলজয়ী এই দম্পতি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) কর্মরত রয়েছেন। বৈশ্বিক দারিদ্র্য বিমোচনে প্রায়োগিক গবেষণার জন্য ২০১৯ সালে এই দম্পতি ও হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির অধ্যাপক মাইকেল ক্রেমার যৌথভাবে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পান।
জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা আগামী বছরের জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থনীতি বিভাগে যোগদান করবেন। তবে কেন তারা যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যাচ্ছেন, সে বিষয়ে বিবৃতিতে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
এ দম্পতি এমন সময়ে সুইজারল্যান্ডে যাচ্ছেন, যখন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে গবেষণায় অর্থায়ন কমানো এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতার ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ‘ব্রেইন ড্রেইন’-এর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কিছু দেশ মার্কিন বিজ্ঞানীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।
এস্থার দুফলো একজন মার্কিন-ফরাসি নাগরিক। তার স্বামী অভিজিৎ ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তারা জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেমান ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত বিশেষ অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হবেন। তারা যৌথভাবে নতুন লেমান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট, এডুকেশন অ্যান্ড পাবলিক পলিসি প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করবেন। এই কেন্দ্রের লক্ষ্য হবে নীতিনির্ধারণে কার্যকর গবেষণাকে উৎসাহিত করা এবং বিশ্বজুড়ে গবেষক ও শিক্ষা নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট মাইকেল শেপম্যান বলেন, ‘বিশ্বের দুইজন সবচেয়ে প্রভাবশালী অর্থনীতিবিদ আমাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের।’
আন্তর্জাতিক
ভারতে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নারী সাংবাদিকবর্জিত সংবাদ সম্মেলন

ভারত সফররত আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির নারী সাংবাদিকবর্জিত সংবাদ সম্মেলনকে ঘিরে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা।
কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী থেকে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্রসহ বিরোধী রাজনীতিক ও নারী সাংবাদিকরা এ ঘটনায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
শুক্রবার নয়াদিল্লিতে আফগান দূতাবাসে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে কেবল পুরুষ সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। নারী সাংবাদিকরা উপস্থিত হলেও তাঁদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বৈষম্যের প্রতিবাদ জানালেও কোনো সাড়া মেলেনি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো নিন্দা জানায়নি। শনিবার কেবল জানানো হয়, ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন বা ব্যবস্থাপনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো ভূমিকা ছিল না।
তবে সাংবাদিকরা পাল্টা জানতে চান, ভূমিকা না থাকলেও বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে ভারত কি আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে? আফগান সরকারের এই নীতির বিরোধিতা করেছে কি না—এ প্রশ্নের কোনো উত্তর মেলেনি।
দ্য হিন্দুর কূটনৈতিক সংবাদদাতা সুহাসিনী হায়দার এক্সে (টুইটার) লেখেন, ‘তারা ভারত সরকারের অতিথি, অথচ এ দেশে এসে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তাঁর নারীবিদ্বেষী নীতি প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হলো। তালেবান তাদের নারীবিদ্বেষ ভারতেও টেনে আনল—এটা বাস্তববাদিতা নয়, আত্মসমর্পণ।’
সাংবাদিক স্মিতা শর্মা বিস্ময় প্রকাশ করে লেখেন, ‘মুত্তাকির সংবাদ সম্মেলনে কোনো নারী সাংবাদিককে ডাকাই হয়নি। আফগান নারীদের দুর্দশা নিয়ে জয়শঙ্করের ভাষণ বা যৌথ বিবৃতিতে একটি শব্দও নেই। অথচ তাকে লালগালিচা দিয়ে স্বাগত জানানো হলো—যে দেশে নারীর সাফল্যে গর্ব করা হয়!’
সাংবাদিক বিজেতা সিংয়ের মন্তব্য, ‘পুরুষ সাংবাদিকদের উচিত ছিল এই বৈষম্যের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন বর্জন করা।’ আর গীতা মোহন লিখেছেন, ‘এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
বিরোধী দলগুলোও সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছে। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ করে এক্সে লেখেন, ‘আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নারী সাংবাদিকবর্জিত সংবাদ সম্মেলন নিয়ে আপনার অবস্থান স্পষ্ট করুন। আপনার নারীনীতি কি শুধু নির্বাচনের সময় পর্যন্ত সীমিত? দেশের সবচেয়ে যোগ্য নারীদের এই অপমান কীভাবে ঘটতে দেওয়া হলো?’
তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র লেখেন, ‘নারীবর্জিত সংবাদ সম্মেলনের অনুমতি দিয়ে সরকার দেশের নারীদের সম্মানহানি ঘটিয়েছে। এটা মেরুদণ্ডহীনতার প্রকাশ।’
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম লেখেন, ‘ভূরাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা আমি বুঝি, কিন্তু তাদের আদিম নারীবিদ্বেষী রীতি মেনে নেওয়া লজ্জাজনক। পুরুষ সাংবাদিকদেরও উচিত ছিল এই সংবাদ সম্মেলন বর্জন করা।’
কংগ্রেস মুখপাত্র শামা রহমান বলেন, ‘আমাদের আমন্ত্রণে এসে যদি তারা তাদের বৈষম্যমূলক নীতি প্রয়োগ করে, তবে মোদি–জয়শঙ্করের লজ্জিত হওয়া উচিত।’
নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পর আফগান দূতাবাসে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে কোনো দেশের জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা হয়নি। তবে সংবাদ সম্মেলনের টেবিলে তালেবান সরকারের স্বীকৃত ছোট পতাকা রাখা হয়।
তালেবান সরকারকে ভারত এখনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। তবু মুত্তাকি জানিয়েছেন, কাবুলে ভারতীয় দূতাবাস পুরোপুরি চালু করার পাশাপাশি নয়াদিল্লির আফগান দূতাবাসেও নতুন কূটনীতিক নিযুক্ত করা হবে।