জাতীয়
সারাদেশে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ১ হাজার ৭১১ জন

সারাদেশে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৭১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে বিভিন্ন মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি এক হাজার ১৮৪ জন এবং অন্যান্য ঘটনায় ৫২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১০অক্টোবর) পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এ এইচ এম শাহাদাত হোসেন এ তথ্য জানান।
এ এইচ এম শাহাদাত হোসেন বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত এক হাজার ৭১১ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্য ঘটনায় ৫২৭ জন।
অভিযানিক কার্যক্রমে উদ্ধার করা হয় দেশীয় তৈরি ওয়ান গান একটি, বিদেশি পিস্তল দুটি, ম্যাগজিন একটি, গুলি এক রাউন্ড, সুইচ গিয়ার চাকু দুটি।

জাতীয়
স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামে ডিম যুক্ত করতে হবে: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

স্কুল ফিডিংয়ে ডিম যুক্ত করতে হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, আমাদের স্কুল ফিডিংয়ে দুধ দেওয়া হচ্ছে সেখানে ডিমও যুক্ত করতে হবে।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল ও ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ শাখার সহযোগিতায় সভার আয়োজন করে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর।
বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরিদা আখতার আরও বলেন, অনেক দরিদ্র ছেলেমেয়ে পুষ্টির যোগান পায় না। সেক্ষেত্রে স্কুলের খাবার তালিকায় ডিম রাখলে সেই পুষ্টি পূরণ সম্ভব।
তিনি বলেন, ডিম খাবারের ক্ষেত্রে দেশের সব মানুষ জড়িত। এটি উৎপাদন ও খাদ্যের সঙ্গেও সবাই জড়িত। গরুর মাংস সবাই কিনতে না পারলেও সহজেই ডিম কেনা যায়। আমাদের ৬ বছর বয়সের মধ্যেই শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। তাই স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামে ডিম যুক্ত করতে হবে।
আমাদের ৮০ শতাংশ ডিম প্রান্তিক পর্যায় থেকে আসে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রান্তিক খামারিরা ৮০ শতাংশ ডিম উৎপাদন করে। আবার গ্রামের দরিদ্র নারীরাও দু-একটি করে মুরগি পালন করে পুষ্টির যোগান দেয়।
কৃষিতে কীটনাশক ব্যবহারে মুরগি পালন হুমকির মুখে পড়েছে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। তা ছাড়া হাওরের হাঁসের ডিমের কথা প্রচার করা হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাওরের হাঁসের ডিমের বিষয়ে প্রচার করতে হবে।
তিনি সয়াবিন সম্পর্কে বলেন, যে সয়াবিন আমদানি হয় তা জিএমও, সেটি কিন্তু আমাদের ওপর প্রভাব পড়বে। তাই আমাদের দেশে ভুট্টা উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে। আর ডিম নিরাপদ হতে হবে।
ড. মো. আবু সুফিয়ান বলেন, আমরা করোনাকালে ১ লাখ ৮০ হাজার প্রান্তিক খামারিকে সরাসরি প্রণোদনা দিয়েছি। তা ছাড়া প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদনে সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।
ড. শাকিলা ফারুক বলেন, মানুষের ওজন, বয়স অনুযায়ী প্রোটিন নিতে হবে। তিনি বলেন, দেশি মুরগির চেয়ে ফার্মের মুরগির ডিম বড় হওয়ায় পুষ্টিগুণ বেশি। তবে সাদা, ব্রাউন, হাঁসের ও কোয়েলের ডিম কোনোটার মধ্যে প্রোটিনের পার্থক্য নেই। তবে দেশি মুরগির ডিমের স্বাদ বেশি।
ডিমের ক্ষেত্রে ৬০-৭০ শতাংশ ব্যয় হয় খাবারে বলে জানান অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান সিকদার। বলেন, আমাদের ডিমের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নেই। তাই পোল্ট্রিশিল্পের জন্য আমাদের রোডম্যাপ দরকার।
ডা. এবিএম খালেকুজ্জামান বলেন, একদিনের বাচ্চার দাম কখনো বেড়ে যায় আবার এক সময় কমে যায়৷ সেজন্য বাচ্চার উৎপাদন গত বছর ৪২ টাকা ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ৫৩ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বাজারে স্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে।
মসিউর রহমান বলেন, আমাদের ডিমের চাহিদার ৮০ শতাংশ উৎপাদন প্রান্তিক খামারিরা। তাদের সাহায্য করতে হবে। বর্তমানে আমাদের উদ্যোগে ৪ বিভাগে ৬০০ খামারিদের নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামীতে আরও দুটি বিভাগে ৬০০ খামারি নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ভোক্তার কাছে ডিম পৌঁছে দিতে আমরা সচেষ্ট থাকলেও মাঝখানের হাতগুলো কমাতে হবে। আর যারা ডিম স্টক করে তাদের ধরতে হবে। বিগত সরকারের আমলে আমাদের অনেকের অফিসে ডিজিএফআইয়ের অফিস বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এমন বাধা নিয়ে উৎপাদন করা সম্ভব নয়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ফরিদা আখতার ছাড়াও বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক ও ওয়াপসা বিবির সাবেক সভাপতি মসিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইলিয়াস হোসেন ও অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান সিকদার।
প্রতিবছর অক্টোবরের দ্বিতীয় শুক্রবার বিশ্ব ডিম দিবস পালিত হয়ে থাকে। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ডিমে আছে প্রোটিন, খেতে হবে প্রতিদিন।
জাতীয়
সাবেক নৌবাহিনী প্রধান সরওয়ার জাহান নিজাম আর নেই

সাবেক নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল (অব.) সরওয়ার জাহান নিজাম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানা গেছে।
আইএসপিআর জানায়, সাবেক নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল সরওয়ার জাহান নিজামের মৃত্যুতে নৌবাহিনী প্রধানসহ সর্বস্তরের নৌ সদস্যগণ গভীর শোক প্রকাশ করেন। আগামীকাল (শনিবার) বাদ যোহর নৌবাহিনী সদর দপ্তর মসজিদে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে মরহুমের লাশ যথাযথ সামরিক মর্যাদায় বনানী সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
ভাইস অ্যাডমিরাল সরওয়ার জাহান নিজাম ১৯৫২ সালের ২ নভেম্বর চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালের ১ জুন সাব-লেফটেন্যান্ট পদে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন।
ভাইস অ্যাডমিরাল সরওয়ার জাহান নিজাম তার কর্মজীবনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ২০০৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নৌবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে দেশপ্রেম, পেশাদারত্ব ও দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ও নৌবাহিনীর অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে অনবদ্য অবদান রাখেন তিনি।
মৃত্যুকালে সাবেক নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল সরওয়ার জাহান নিজাম স্ত্রী-কন্যা ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বাংলাদেশ নৌবাহিনী তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে।
জাতীয়
ধর্ম অবমাননায় সমান শাস্তিসহ ৪ দাবি হিন্দু যুব মহাজোটের

বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সব ক্ষেত্রে সমতা ও ন্যায্যতার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট। একই সঙ্গে দেশে বিদ্যমান সব ধর্মের অবমাননা রোধে সুস্পষ্ট আইন প্রণয়ন ও সব ধর্মের অবমাননার বিচারের ক্ষেত্রে আইনের সমান প্রয়োগ নিশ্চিত করাসহ চার দাবি জানিয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা এ সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট আয়োজিত বাংলাদেশের বিদ্যমান সব ধর্মের অবমাননা রোধে সুস্পষ্ট আইন প্রণয়ন ও সব ধর্মের অবমাননার বিচারের ক্ষেত্রে আইনের সমান প্রয়োগ নিশ্চিত করার দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করে হিন্দু যুব মহাজোটের সভাপতি প্রদীপ কান্তি দে বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রমাগতভাবে ধর্ম অবমাননার বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে। আগে সাধারণত ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু ধর্ম অবমাননা ও হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর সাম্প্রদায়িক বিভিন্ন হামলার ঘটনা ঘটতে দেখা যেতো। বর্তমানে সংখ্যায় কম হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে অন্যান্য ধর্মের ধর্মগ্রন্থ বা মহাপুরুষদের প্রতিও অবমাননাকর মন্তব্য করাটাও আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় জনগোষ্ঠী হিসেবে সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায় বিদ্যমান সব ধর্মের অবমাননার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বর্তমানে সবাই অনুভব করতে সক্ষম হয়েছি যে, ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর আঘাত করলে সেটা হৃদয়ে কতোটা কষ্টকর অনুভূতি তৈরি করে। এই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমরা দাবি করছি যে, বাংলাদেশের বিদ্যমান সব ধর্মের অবমাননা রোধে সুস্পষ্ট আইন প্রণয়ন ও সব ধর্মের অবমাননার বিচারের ক্ষেত্রে আইনের সমান প্রয়োগ নিশ্চিত করা হোক।
প্রদীপ কান্তি দে আরও বলেন, সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে আমরা বিগত দুই দশক ধরে রাজপথে সক্রিয়ভাবে অসংখ্য আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছি। আমরা সবসময় দাবি করেছি যেন প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে কোনো ঘটনারই দৃশ্যমান বিচার হয়নি। এখন সময় এসেছে ধর্মীয় অবমাননা প্রতিরোধে সুস্পষ্ট আইন প্রণয়ন ও সেটার বাস্তবায়ন করা। এ আইনের সুফল যেন বাংলাদেশের প্রতিটি ধর্মীয় জনগোষ্ঠী পায় সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই যার যার ধর্ম তার কাছে সর্বোচ্চ আবেগের বিষয়। রাষ্ট্র তার নাগরিক হিসেবে সবার বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে বাধ্য।
‘তাই ধর্ম অবমাননা প্রতিরোধে আইনে সুস্পষ্টভাবে মন্দির, মসজিদ, গির্জা, প্যাগোডায় হামলা; প্রতিমা ভাঙচুর; সব ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থ অবমাননা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সব ধর্মের ধর্মীয় মহাপুরুষ/পয়গম্বরদের অযৌক্তিক কটুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে দোষীর শাস্তি নির্দিষ্ট করে পেনাল কোডে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, কোনো নির্দোষ ব্যক্তিকে যেন ফাঁসানো না হয়। বিচার যেন ত্রুটি ও প্রভাবমুক্ত হয়। আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলছি প্রতিটি ধর্মের অবমাননা ঘটনা ঘটলে আইনের প্রয়োগ যেন সমান হয়।’
‘কারণ পূর্বের বাস্তবতায় আমরা দেখেছি যে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম অবমাননার ক্ষেত্রে অপরাধীকে ধরার ক্ষেত্রে যে তৎপরতা দেখায়, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ধর্ম অবমাননার ক্ষেত্রে অপরাধীকে ধরতে ঠিক ততোটা উৎসাহী থাকে না। প্রতিমা ভাঙচুর করা হলে সেটার ক্ষেত্রে প্রথাগতভাবে বলা হয় অপরাধীকে ধরতে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন অতিক্রান্ত হলেই সবাই এ অপরাধের কথা ভুলে যায়। আর যেসব ক্ষেত্রে প্রতিমা ভাঙচুর করার সময় হাতেনাতে অপরাধীদের ধরা হয়, তাদের অধিকাংশকেই মানসিক রোগী বলে ছেড়ে দেওয়ার রেওয়াজ তৈরি হয়েছে।’
‘অথচ বাস্তবতা হচ্ছে এদের প্রায় সবাই মানসিকভাবে সুস্থ এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকে এরা সচেতনভাবে প্রতিমা ভাঙচুর করে। তাই প্রতিমা ভাঙচুরের ব্যাপারে আইনে সুস্পষ্টভাবে শাস্তির ব্যবস্থা উল্লেখ করতে হবে এবং সেটার বাস্তবায়ন করতে হবে।’
ধর্মীয় কোনো সভা থেকে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম/উপাস্য নিয়ে কুৎসা/কটুক্তি করা হলে আইনগতভাবে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে জানিয়ে ধর্মীয় এ নেতা বলেন, কোনো ধর্মের ধর্মীয় বক্তা অন্য ধর্মকে কটুক্তি করতে পারবে না। সেই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে আন্তঃধর্মীয় সুস্থ আলোচনার পথ যেন রুদ্ধ না হয়। সব ধর্মের ক্ষেত্রেই যেন সবাই সমানভাবে সুবিচার পেতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ফেসবুকে গুজব রটিয়ে রামুতে সাম্প্রদায়িক হামলার মাধ্যমেই মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রথম বড়সড় সাম্প্রদায়িক হামলার সূচনা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের সাম্প্রদায়িক হামলা, যশোরের অভয়নগর মালোপাড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলা, রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলা, কুমিল্লার হোমনায় সাম্প্রদায়িক হামলা, ভোলার বোরহানউদ্দিনে সাম্প্রদায়িক হামলা, হবিগঞ্জের শাল্লায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাসহ আরও অসংখ্য আলোচিত ঘটনা সবারই জানা। সব ক্ষেত্রেই একই প্যাটার্নে এ হামলা হয়েছে। প্রথমে ফেসবুকে কোনো হিন্দু যুবকের বিরুদ্ধে কথিত ধর্ম অবমাননার গুজব তৈরি করা হয়েছে। এরপর মব তৈরি করে সংগঠিতভাবে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে, বাড়িঘর লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়েছে। মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে।
‘দেখা যাচ্ছে অনলাইনের একটি কটুক্তির সূত্রে অফলাইনে মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর করে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি ধর্ম অবমাননা করা হচ্ছে। দুঃখের বিষয় বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন কোনো সরকারই হিন্দুদের ওপর এই সাম্প্রদায়িক হামলার চূড়ান্ত কোনো বিচারের আগ্রহ দেখায়নি। ঘটনার পর প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে, অভিযুক্ত হিন্দু ব্যক্তি নির্দোষ। তার মানে সাম্প্রদায়িক হামলার প্লট রচনার জন্যই এই ধর্ম অবমাননার কাহিনী সাজানো হয়। কিন্তু প্রকৃত ধর্ম অবমাননাকারী রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। আমরা সেই ধর্ম অবমাননাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, তা সে ব্যক্তি যেই ধর্মেরই হোক না কেন।’
‘সেই সঙ্গে ধর্ম অবমাননার নাম করে মব তৈরি করে নির্দোষ জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত সব ব্যক্তিকেও শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। ব্যক্তির দায়ে সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য হবে না। এক্ষেত্রে আমাদের সুস্পষ্ট দাবি, হামলাকারীদের সম্পত্তি রাষ্ট্র কর্তৃক ক্রোক করে সেই অর্থ দিয়ে হামলার শিকার নির্দোষ ব্যক্তিদের সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে মব তৈরি করে সাম্প্রদায়িক হামলার ক্ষেত্র ক্রমান্বয়ে বন্ধ হয়ে যাবে।’
বিগত ২০২১ সালের দুর্গাপূজার রক্তাক্ত শারদের স্মৃতি এখনো জ্বলজ্বল করছে জানিয়ে প্রদীপ কান্তি দে বলেন, কুমিল্লার এক মণ্ডপে কোরান শরিফ পাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন জেলায় অসংখ্য পূজামণ্ডপে হামলা ও দুর্গাপ্রতিমা ভাঙচুর ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। পরে সিসিটিভি ফুটেজ ও তদন্তে জানা যায় মো. ইকবাল নামে এক ব্যক্তি মণ্ডপে কোরান রেখে এসেছিল, যার ফলশ্রুতিতে সেদিনের দুর্গাপূজায় নিরীহ হিন্দুদের ওপর তাণ্ডব নেমে এসেছিল। যারা ধর্মীয় সংঘর্ষ তৈরির জন্য এরকমভাবে উসকানি দেয় আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির আইন করার দাবি জানাচ্ছি। সম্প্রতি মো. অপূর্ব রাদ (ধর্মান্তরিত হওয়ার পূর্বের নাম অপূর্ব পাল) ফেসবুকে কোরান শরিফ অবমাননা করেছে। এ ঘটনা সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আহত করেছে।
তিনি বলেন, আমরা এই ধর্মগ্রন্থ অবমাননার প্রতিবাদ করছি। কোনো ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থ কেউ এভাবে অবমাননা করার অধিকার রাখে না। আমরাও চাই তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, যেমনটা কুমিল্লার ইকবালের মতো সব ধর্মীয় অবমাননাকারী উসকানিদাতাদের হওয়া উচিত। মন্দির-প্রতিমা ভাঙচুরকারী আর কোরআন অবমাননাকারী সবাই সমান দোষে দোষী। অপরাধী যেকোনো ধর্মেরই হতে পারে, তাই অপরাধীর ধর্ম না দেখে সবার জন্য সমানভাবে আইন প্রয়োগের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন তৈরি করা জরুরি।
ইসলামিক ধর্মীয় সংগঠনগুলোর নেতৃস্থানীয় আলেম ওলামাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে প্রদীপ কান্তি দে বলেন, আমাদের প্রিয় দেশটিতে সবাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে চাই। এক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মাবলম্বী হওয়ায় আপনাদের ভূমিকা ও সামর্থ্য স্বাভাবিকভাবেই আমাদের চেয়ে বেশি থাকবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় আমরা একে অন্যের হাত ধরে রাখতে চাই। অস্বীকার করার উপায় নেই, বিগত বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলার সময় হামলাকারী উগ্র ধর্মীয় মব নিয়ন্ত্রণে আপনাদের ভূমিকা আরও জোরদার করার আহ্বান জানাই।
তিনি বলেন, সব ধর্মের ধর্মীয় নেতৃস্থানীয়দের প্রভাব নিজ নিজ জনগোষ্ঠীর ওপর থাকে। নিয়মিত বিরতিতে সব ধর্মীয় নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ এক্ষেত্রে আমাদের মধ্যকার অবিশ্বাস দূর করে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সামাজিক বন্ধন আরও দৃঢ় করতে পারে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
এসময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে চার দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো-
১. সব ধর্মের অবমাননার জন্য সমান আইন ও শাস্তির বিধান করতে হবে।
২. ধর্ম অবমাননার অজুহাতে কোনো গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক হামলা চালালে তাদের জন্য শাস্তির বিধান করতে হবে।
৩. বিগত সময়ে ধর্ম অবমাননার অজুহাতে যেসব সংখ্যালঘু এলাকায় হামলা হয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির বিধান করা হোক।
৪. অতীতে কথিত ধর্ম অবমাননার মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত সবাকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হোক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, হিন্দু যুব মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক রাজেশ নাহা, সাবেক সভাপতি সজীব বৈদ্য, ঢাকা মহানগর হিন্দু যুব মহাজোটসহ ছাত্র ও যুব মহাজোটের নেতারা।
জাতীয়
চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ

স্বাভাবিক কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে চট্টগ্রাম বন্দর-সংলগ্ন এলাকায় সব ধরনের মিছিল, সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন ও পথসভা আগামী ৩০ দিনের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজের সই করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা জারি করা হয়।
এতে বলা হয়, দেশের মোট আমদানি ও রপ্তানির সিংহভাগ কার্যক্রম চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। প্রতিদিন প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার পণ্যবাহী যানবাহন বন্দরে চলাচল করে। ফলে বন্দর এলাকার ট্রাফিক স্বাভাবিক রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বন্দর এলাকায় মিছিল, সভা-সমাবেশ বা মানববন্ধন আয়োজনের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়ে বন্দরের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে, যা জাতীয় অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৭৮ এর ৩০ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
নিষিদ্ধ এলাকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে– বারেক বিল্ডিং মোড়, নিমতলা মোড়, ৩ নম্বর জেটি গেট, কাস্টমস মোড় ও সল্টগোলা ক্রসিংসহ চট্টগ্রাম বন্দর সংলগ্ন এলাকা। এই নিষেধাজ্ঞা আগামী ১১ অক্টোবর থেকে পরবর্তী ৩০ দিনের জন্য বলবৎ থাকবে।
জাতীয়
মিথ্যা মামলার বাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে: আইজিপি

জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে দায়ের হওয়া মিথ্যা মামলার বাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। তিনি নিশ্চিত করেছেন, সরকার ইতিমধ্যে ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করেছে এবং এই ধরনের মামলা থেকে ১৩৬ জনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে দায়ের হওয়া এসব মামলার একটি বড় অংশ ব্যক্তিগত আক্রোশ, মোটা অঙ্কের টাকা দাবি বা চাঁদা না পাওয়ার কারণে করা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অনেক নিরীহ মানুষ এবং শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদেরও আসামি করা হয়েছিল। এই মামলাবাণিজ্য দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি করে।
সরকারের কর্তাব্যক্তিরা আগেই ঘোষণা করেছিলেন যে মিথ্যা মামলা যারা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই ধারাবাহিকতায় পুলিশের কয়েকটি ইউনিট তদন্ত শুরু করে প্রাথমিকভাবে ৬৭ জন বাদীকে শনাক্ত করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সদর দপ্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
আইজিপি বাহারুল আলম একটি গণমাধ্যমকে জানান, সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারা অনুযায়ী ইতিমধ্যে ১৩৬ জনকে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। আরও ২৩৬ জনের আবেদন বিবেচনাধীন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মিথ্যা মামলায় কাউকে হয়রানি করা হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এই ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে যারা প্রকৃত আসামি, তাদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে।
মামলাবাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক করে দিয়ে আইজিপি বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা বা অন্য কেউ মামলাবাণিজ্য করার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের সংশ্লিষ্টতার প্রসঙ্গে তিনি স্বীকার করেন, সবখানেই ভালো-মন্দ লোক আছে। কেউ ফেরেশতা নয়। পুলিশের লোক জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সাধারণ লোকের করা মামলাতেই মানুষ অতিষ্ঠ। পুলিশও জড়ালে মানুষ যাবে কোথায়?