অর্থনীতি
১০০ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ কতটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া তথ্য বলছে, দেশটির বিদেশি ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে গত ডিসেম্বরেই। অর্থাৎ ডলার প্রতি মূল্য ১১০ টাকা করে হিসেব করলে বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে নেয়ার ঋণের পরিমাণ প্রায় এগারো লাখ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৃহস্পতিবার ২০শে মার্চে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশি ঋণের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র গণমাধ্যমকে বলেছেন, ঋণের পরিমাণ একশো বিলিয়ন ডলার ছাড়ালেও তা জিডিপির তুলনায় বেশি নয়, বরং আরও ঋণ নেয়ার সামর্থ্য বাংলাদেশের আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন জিডিপির তুলনায় একশো বিলিয়ন ডলার ঋণ বেশি না হলেও রাজস্ব আয়, রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স না বাড়াতে পারলে এবং একই সাথে বিদেশি ঋণের প্রবাহ কমিয়ে না আনতে পারলে এ ঋণই বিশাল চাপ তৈরি করতে পারে আগামী কয়েক বছরে।
বিশেষ করে ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এমনিতেই চাপের মধ্যে রয়েছে এবং এর মধ্যেই চলতি বছর থেকেই বড় বড় কিছু প্রকল্পের ঋণের কিস্তি শোধ করাও শুরু হয়েছে। পাশাপাশি রপ্তানি ও রেমিট্যান্সও কাঙ্ক্ষিত আকারে বাড়ানো যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে ডলারের সরবরাহ না বাড়ানো গেলে বিদেশি ঋণকে ঘিরে সংকট জোরালো হওয়ার আশংকা তৈরি হতে পারে বলছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে যখন মেগা প্রকল্পগুলোর মূল অর্থ পরিশোধ শুরু হবে তখন পরিস্থিতি কেমন হয় তা নিয়েই উদ্বিগ্ন অনেকে।
ঋণের মূল অর্থ দিতে হবে কখন
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কিছু মেগা প্রকল্পের মূল অর্থ পরিশোধ শুরু হবে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে এবং সেই বছরে ৫৩১ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার কথা রয়েছে। এরপর ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ৫১৯ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৮-২৯ সালে ৫০৭ মিলিয়ন ডলার শোধ করার আশা করছে সরকার। অন্যদিকে, ২০২২-২৩ বছর থেকেই যে বৈদেশিক ঋণ শোধ করা শুরু হয়েছে সেগুলো মূলত ঋণের সুদ।
সরকারি হিসেব মতে আগামী জুলাই থেকে শুরু হওয়া অর্থবছরে বিদেশি ঋণ হিসাবে চার দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার শোধের পরিকল্পনা আছে সরকারের। এরপর ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সুদসহ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়াবে অন্তত সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে মূলত ভারত, চীন এবং রাশিয়ার কাছ থেকেই ঋণ নিয়েছে বেশি। এসব প্রকল্প সময়মত শেষ না করতে পারলে ঋণ আরও বাড়তে পারে। তবে সব মিলিয়ে একটি দেশের বিদেশি ঋণ হচ্ছে, ওই দেশটি বিভিন্ন দেশ, বিদেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে যে ঋণ নেয় সেটি।
বাংলাদেশ সাধারণত বিশ্ব ব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে থাকে।
‘এটি সংকট নয়, তবে অস্বস্তির’
ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলছেন, জিডিপির অনুপাতে বিদেশি ঋণ এখনও কম- এটি সত্যি, কিন্তু এ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার কোন অবকাশ নেই। “মনে রাখতে হবে ঋণের ব্যবহার কেমন হচ্ছে এবং সেখান থেকে ডলারের অংকে উৎপাদনশীলতা আসছে কি-না -এটি নিশ্চিত করতে না পারলে সংকট তৈরি হবে সামনে,” বলছিলেন তিনি।
অর্থনীতিবিদদের হিসেবে জিডিপির অনুপাতে বিদেশি ঋণের পরিমাণ এখন ২৩ থেকে ২৫ শতাংশের মতো। আবার বিদেশি ঋণ হিসেবে যে অর্থ বাংলাদেশ নিয়েছে তার মধ্যে বিভিন্ন ধরণের ঋণ আছে। মি. হোসেন বলছেন, সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক ঋণ বেশী বেড়েছে। এগুলোর মেয়াদ কম কিন্তু খরচ বেশি। যেমন রূপপুর পরিমাণ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে এবং পদ্মা সেতুতে রেল লাইন সংযোগ প্রকল্পের জন্য চীন বাণিজ্যিক চুক্তিতে শর্তযুক্ত ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ।
“এখন ধরুন, রূপপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ আসলো এবং সেটি অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখলো। দেশের রপ্তানিও বাড়লো। তাহলে সমস্যা হবে না। কিন্তু যদি প্রকল্প পেছাতে থাকে এবং সময়মত রিটার্ন না আসে – তাহলেই ঋণটা চাপ হয়ে উঠবে,” বলছিলেন মি. হোসেন।
আবার ডলার প্রবাহ না থাকলে সেটাও বহি:বাণিজ্যিক ভারসাম্যে যেমন চাপ তৈরি করবে, তেমনি বাজেটেও চাপ তৈরি করবে। সেক্ষেত্রে রাজস্ব আদায় না বাড়লেও ঋণ পরিশোধ কিন্তু সরকারকে করতেই হবে। সে কারণে পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলছেন, বিদেশি ঋণ জিডিপির তুলনায় যেমনই হোক দেখতে হবে সেটি রপ্তানির বিবেচনায় কেমন।
“এভাবে দেখলে বিষয়টি হবে অস্বস্তির, কারণ সত্যিকার অর্থে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি এখন কম। অথচ ঋণটা দ্রুত বাড়ছে,” বলছিলেন তিনি। তবে তা সত্ত্বেও একশো বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ হয়ে গেছে বলে এতে ঠিক ‘সংকট’ বলতে চান না তিনি। বরং তার ভাষ্য হলো- ‘এটি অস্বস্তির’।
উত্তরণের উপায় কী
আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, বিদেশি ঋণ নিয়ে এ অস্বস্তি মোকাবেলা করতে হলে এখনই ঋণ প্রবাহ কমিয়ে আনতে হবে, বিশেষ করে বাণিজ্যিক শর্তে ঋণ নেয়া অর্থাৎ সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট কমাতে হবে। “রাজস্ব আয়, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে। তবে বাস্তবতা হলো রপ্তানি নির্ভরশীল হয়ে আছে একটি পণ্যের ওপর, যা অত্যন্ত ঝুঁকির বিষয়।
আবার রেমিট্যান্স প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে না। অর্থ পাচারের কারণে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। তবে আমরা যদি দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারতাম তাহলে এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি অনেক বাড়তো,” বলছিলেন তিনি। জাহিদ হোসেনও বলছেন যে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স না বাড়াতে পারলে বিদেশি ঋণ ভবিষ্যতে সংকটের জন্ম দিতে পারে।
“রাজস্ব আয় না বাড়ালে সরকারের ব্যয় কমানো একটি বিকল্প হতে পারে। এছাড়া নতুন ঋণ দিয়ে পুরনো ঋণ পরিশোধ অর্থাৎ রিফাইনান্সিংও অন্য একটি বিকল্প হতে পারে। তবে যেসব ব্যয় এখনই দরকার নেই, সেগুলো থেকে সরকার বিরত থাকলে ঋণের চাপ কমবে,” বলছিলেন মি. হোসেন।
এই দুইজন অর্থনীতিবিদই মনে করেন, বিদেশি ঋণের বিপরীতে টাকায় অর্থাৎ স্থানীয় মুদ্রায় রিটার্ন আসার কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ার কারণেও বিদেশি ঋণের ব্যয় বেড়ে যেতে পারে। সেজন্য বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য যে বিদেশি ঋণ অপেক্ষমাণ আছে সেগুলোর অতিরিক্ত সুদের ব্যয় এড়াতে দ্রুত ব্যবহার দরকার বলেও মনে করেন তারা। তবে, এত সতর্কতা ও উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও আগামী দুটি অর্থ বছরে সরকারের বিদেশি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
এর বিপরীতে রাজস্ব আদায়ে যে লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরে নির্ধারণ করা হয়েছিলো সেটি কতটা অর্জিত হয় তা নিয়েও অর্থনীতিবিদদের মনে সংশয় আছে।
চলতি অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাঁচ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিলো সরকার। এ সময়ের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করার কথা। আর বাকি অর্থ অন্য উৎস থেকে সংগ্রহ করার কথা রয়েছে।
অর্থসংবাদ/এমআই

অর্থনীতি
এলপি গ্যাসের নতুন দাম নির্ধারণ রবিবার

আগস্ট মাসে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) মূল্য বাড়ছে নাকি কমছে, তা জানা যাবে আগামীকাল রবিবার (৩ আগস্ট)। এক মাসের জন্য এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা করা হবে সেদিন।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সৌদি আরামকো ঘোষিত আগস্ট (২০২৫) মাসের সৌদি সিপি অনুযায়ী, এই মাসের জন্য ভোক্তা পর্যায়ে বেসরকারি এলপিজির মূল্য সমন্বয় সম্পর্কে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের নির্দেশনা রোববার দুপুর ৩টায় ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইইবি) ঢাকার কমিশন কার্যালয়ের শুনানি কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে ঘোষণা করা হবে।
এর আগে গত ২ জুলাই সবশেষ সমন্বয় করা হয় এলপি গ্যাসের দাম। সে সময় ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৩৯ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ৩৬৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
আগামী রোববার এলপিজির পাশাপাশি ঘোষণা করা হবে অটোগ্যাসের দামও। এর আগে গত ২ জুলাই সবশেষ সমন্বয় করা হয় অটোগ্যাসের দাম। সে সময় ভোক্তা পর্যায়ে ১ টাকা ৮৪ পয়সা কমিয়ে অটোগ্যাসের মূসকসহ দাম প্রতি লিটার ৬২ টাকা ৪৬ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
প্রতি মাসের শুরুতেই এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা করে বিইআরসি।
অর্থনীতি
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ আসবে: বিজিএমইএ সভাপতি

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেছেন, মার্কিন পাল্টা শুল্ক ৩৫ থেকে কমে ২০ শতাংশ হওয়াটা আমাদের জন্য স্বস্তির। তাতে আমাদের ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ আসবে।
তিনি বলেন, চীনের ওপর এখন পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক আছে ৩০ শতাংশ। শিগগির দেশটির ওপর চূড়ান্ত পাল্টা শুল্কহার ঘোষণা করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে যতদূর আভাস মিলছে, তাদের শুল্কহার আমাদের চেয়ে কম হবে না। ফলে দিন শেষে চীন থেকে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থানান্তরিত হওয়া অব্যাহত থাকবে।
মার্কিন শুল্ক কমার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (১ আগস্ট) এক লিখিত বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ আসার ক্ষেত্রে চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি সরবরাহ, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মতো বিষয়গুলো অনুকূলে থাকতে হবে। যেহেতু এখন পর্যন্ত আমরা চুক্তির খসড়া বা সার সংক্ষেপ শুধু জেনেছি, বিস্তারিত পাইনি, তবে আশা করি আমাদের বাণিজ্য প্রতিনিধি দল দেশের ও বাণিজ্য স্বার্থ বজায় রেখেই চুক্তি সম্পাদন সম্পন্ন করেছেন।
তিনি বলেন, পাল্টা শুল্ক নিয়ে গত তিন মাস ধরে আমরা এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলাম। তবে বাড়তি এই শুল্ক আমদানিকারক ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকেই দিতে হবে। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম, প্রতিযোগী দেশের তুলনায় আমাদের পণ্যে পাল্টা শুল্ক বেশি হলে ব্যবসা কঠিন হয়ে যাবে। তবে প্রতিযোগী দেশ পাকিস্তানের চেয়ে আমাদের পাল্টা শুল্ক ১ শতাংশ বেশি হলেও ভারতের চেয়ে ৫ শতাংশ কম। এ ছাড়া চীনের চেয়ে ১০ শতাংশ কম। এটি আমাদের জন্য বড় স্বস্তির।
বাড়তি পাল্টা শুল্কের কারণে সাময়িকভাবে ব্যবসা কমতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার কারণ আগের থেকে পণ্য আমদানিতে বেশি শুল্ক দিতে হবে মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে। এতে তাদের মূলধনে টান পড়বে। এমন পরিস্থিতিতে তারা যদি বাড়তি অর্থায়নের সংস্থান না করতে পারে তাহলে ক্রয়াদেশ কম দেবে। তাছাড়া, বাড়তি শুল্ক শেষ পর্যন্ত ক্রেতাদের ঘাড়ে গিয়েই পড়বে। শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়লে ক্রেতারা চাপে পড়বেন। তাতে পণ্যের বিক্রি কমে যেতে পারে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, গত এপ্রিলে প্রথম দফায় সব দেশের পণ্যের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর করে ট্রাম্প প্রশাসন। সেটি মার্কিন ক্রেতারা বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করেছে। কোনো কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের চাপে আমাদের সরবরাহকারীদের সেই বাড়তি শুল্কের ভাগ নিতে হয়েছে। আমি আমাদের বিজিএমইএর (বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি) সদস্যদের বার্তা দিতে চাই, বাড়তি এই শুল্ক আমদানিকারক ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকেই দিতে হবে। আর দিন শেষে সেটি মার্কিন ভোক্তাদের ওপরই গিয়ে পড়বে। ফলে এই বিশেষ বার্তা পরিষ্কার থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, পাল্টা শুল্ক আলোচনায় বাংলাদেশ কতগুলো প্রতিশ্রুতি ও চুক্তি করেছে সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা। তার মধ্যে গম, তুলা, এলএনজি কেনার মতো স্বল্পমেয়াদি এবং উড়োজাহাজ কেনার মতো দীর্ঘমেয়াদি বিষয় আছে। মনে রাখতে হবে, এখানে কোনো গাফিলতি থাকলে আমরা পুনরায় বিপদে পড়তে পারি।
অর্থনীতি
পেঁয়াজ-মুরগি-ডিমের দাম বেড়েছে, স্বস্তি নেই কাঁচাবাজারে

শ্রাবণের বৃষ্টি ঝরছে অঝোরে। বৃষ্টি হলেই রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজারগুলো অস্থির হয়ে ওঠে। সপ্তাহ ব্যবধানে মুরগি, পেঁয়াজ, ডিমের দাম বেড়ে গেছে। স্বস্তি নেই সবজির বাজারগুলোতে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর কাপ্তানবাজার, শ্যাওড়াপাড়া বাজার ও কারওয়ানবাজারসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকায় গতকাল ফার্মের মুরগির এক ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও ডিমের দাম ছিল ১২০-১২৫ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ডজনে দাম বেড়েছে ১০ টাকা।
ব্রয়লার মুরগির দাম স্থিতিশীল থাকলেও কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সোনালি মুরগির দাম। বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। আর প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৩০ টাকায়।
এ ছাড়া প্রতিকেজি দেশি মুরগি ৬০০-৭০০ টাকা, সাদা লেয়ার ৩১০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়। তবে গরু ও খাসির মাংসের দামে তেমন পরিবর্তন নেই। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়, খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ১ হাজার ১০০ টাকায়।
কারওয়ানবাজারের পাইকারি ডিম বিক্রেতা আসিফ বলেন, বৃষ্টি কারণে বাজারে সবজি, মুরগি, মাছ, মাংসের দাম বেড়েছে। মূলত সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেড়েছে।
এদিকে বাজারে অধিকাংশ সবজির দামই চড়া। বাজারে প্রতিকেজি কচুরমুখী ৩০-৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, পটোল ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, গোল বেগুন ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, কহি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া করলা ৬০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, শসা ৪০ টাকা ও ধনেপাতা ১২০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। আর লাউ প্রতি পিস ৬০-৭০ টাকা ও চালকুমড়া প্রতি পিস ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০-২০০ টাকায়।
এদিকে আলু ও রসুনের দাম স্থিতিশীল থাকলেও বেড়ে গেছে পেঁয়াজ ও আদার দাম। বাজারে প্রতিকেজি আলু ২০-২৫ টাকা ও রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৩০ টাকায়। আর কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি আদায় গুনতে হচ্ছে ১৪০ টাকা পর্যন্ত।
বাজারে মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। বাজারে ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০০-২৬০০ টাকায়। এছাড়া ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৬০০-১৭০০ টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২১০০-২২০০ টাকা ও দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০০-৩২০০ টাকায়।
চড়া অন্যান্য মাছের দামও। প্রতিকেজি বোয়াল ৭৫০-৯০০ টাকা, কোরাল ৮৫০ টাকা, আইড় ৭০০-৮০০ টাকা, চাষের রুই ৩৮০-৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ১৮০-২২০, পাঙাশ ১৮০-২৩০, কৈ ২০০-২২০ এবং পাবদা ও শিং বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়। আর চাষের ট্যাংরা প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, কাঁচকি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা ও মলা ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে ডায়মন্ড, সাগর, মঞ্জুর প্রভৃতি ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল ৮০ টাকা ও মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের মিনিকেট ৮৫-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা চাল ৫৬-৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অর্থনীতি
১৫ শতাংশ কমিয়ে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ২০ শতাংশ

বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ হার যুক্তরাষ্ট্রের সময় অনুযায়ী শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে কার্যকর হবে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুল্ক নিয়ে হোয়াইট হাউসের এক ঘোষণায় এই পরিমাণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়।
হোয়াইট হাউসের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশ অন্য দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ, আফগানিস্তানের ওপর ১৫ শতাংশ, ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ, ব্রাজিলের ওপর ১০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ, ফিলিপাইনের ওপর ১৯ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন।
এর আগে, চলতি বছরের ২ এপ্রিল বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চহারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর বাংলাদেশের আরোপকৃত শুল্কের হার ৭৪ শতাংশ। এ জন্য বাংলাদেশের ওপর ওই পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়। যা আজ ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
পরে ৯ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর ওই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। এ সময় শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন দেশকে আলোচনার সুযোগ দেয় ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক নিয়ে তৃতীয় দফার আলোচনা শুরু হয়েছে গত ২৯ জুলাই।
আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে যার নেতৃত্বে ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) দপ্তরের সঙ্গে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী আলোচনা শেষে উভয়পক্ষ যৌথভাবে এ বিষয়ে ঘোষণা দেন।
অর্থনীতি
আগস্টের জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ

আগস্ট মাসের জন্য জ্বালানি তেলের দাম অপরিবর্তিত রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। যা কার্যকর হবে আগামী ১ আগস্ট থেকে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) এক বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, আগস্ট মাসের জন্য জ্বালানি তেলের বিদ্যমান দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশে স্বয়ংক্রিয় প্রাইসিং ফর্মুলার আলোকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো ভোক্তাপর্যায়ে জ্বালানি তেলের সরবরাহ তুলনামূলক সাশ্রয়ী দামে নিশ্চিত করা।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগস্ট মাসে ডিজেল প্রতি লিটার ১০২ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১২২ টাকা এবং পেট্রোল ১১৮ টাকায় বিক্রি হবে।
বৃহস্পতিবার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। যা কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে।