অর্থনীতি
রমজানের আগেই বেড়েছে খেজুরের দাম
রমজানে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় খেজুরের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। এ সুযোগে প্রতি বছরই পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। তবে এবার রমজান মাস শুরু হওয়ার অনেক আগেই যশোরে খেজুরের দাম গত বছরের তুলনায় ৪০-৬০ শতাংশ বেড়েছে।
আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্ক ও করহার বৃদ্ধি, টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি এবং ঋণপত্র জটিলতার কারণে এ বছর খেজুরের দাম বেড়েছে।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফআইএ) তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগে প্যাকিংভেদে প্রতি টন খেজুরের শুল্কায়ন মূল্য ছিল ৫০০ থেকে ১ হাজার ডলার। কিন্তু বর্তমানে শুল্কায়ন মূল্য বেড়ে হয়েছে টনপ্রতি ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৭৫০ ডলার। এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে ২৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি, ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট। এ তিন খাতে আগে কোনো রাজস্ব দিতে হতো না ব্যবসায়ীদের। পাশাপাশি অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম কর আগের মতোই ৫ শতাংশ হারে দিতে হচ্ছে। এর প্রভাবে খেজুর আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে বেশি।
যশোরের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হয় গলা বা বাংলা খেজুর। প্রতি কেজি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা, যা গত বছরের রমজানে ছিল ১২০-১৩০ টাকা। জাহিদি খেজুর এখন বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকা কেজি দরে, যা গত বছর ছিল মাত্র ১৫০ টাকা। বাজারে দুই ধরনের দাবাস খেজুর পাওয়া যায়। মানভেদে এ খেজুর ৪৫০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ছিল ৩০০ টাকা। বর্তমানে বরই খেজুর মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪৪০-৫৪০ টাকা, যা গত বছর ছিল ২২০-৪৩০ টাকা। ছায়ার খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি দরে, যা আগে ছিল ২০০ টাকা।
অন্যদিকে জাম্বো মেডজুল মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। সাধারণ মেডজুল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায়, যা গত বছর ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা। মাবরুম খেজুর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা। বাজারে আজওয়া পাওয়া যায় দুই ধরনের। বর্তমানে এটি ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ছিল ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের মরিয়ম খেজুর পাওয়া যায়। সৌদি আরব, ইরান, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া ও মিসর থেকে এ জাতের খেজুর আসে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো জাতের মরিয়ম বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকায়। কালমি মরিয়ম বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৯০০ টাকায়, যা গত রমজানে ছিল ৬৫০-৭০০ টাকা। সুফরি মরিয়ম বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০০ টাকায়, যা গত রমজানে ছিল ৬৫০ টাকা। আম্বার ও সাফাভি জাতের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা প্রতি কেজি, যা গত রমজানে ছিল ৯০০ টাকা। প্যাকেট ক্রাউন (৪০০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়, যা আগে ছিল ১২০ টাকা।
অর্থসংবাদ/এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বৈশ্বিক ঋণ এখন রেকর্ড ৩১৩ ট্রিলিয়ন ডলারে
গত বছর বৈশ্বিক ঋণের ভান্ডারে আরও ১৫ ট্রিলিয়ন বা ১৫ লাখ কোটি ডলারের বেশি যোগ হয়েছে। এর ফলে মোট বৈশ্বিক ঋণ ৩১৩ ট্রিলিয়ন ডলারের নতুন রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
আইএমএফের এক ব্লগপোস্টে বলা হয়েছে, গত ছয় মাসে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া প্রায় সব উন্নত দেশে মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। কিন্তু সরকারের ক্রমবর্ধমান ঋণ অনেক দেশেই এখন বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যেভাবে সরকারের ঋণ বাড়ছে, তার প্রভাব মোকাবিলা করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
মহামারি শুরু হওয়ার চার বছর পর এখন উন্নত দেশগুলোতে সরকারি ব্যয় প্রাক্–মহামারি পূর্বাভাসের চেয়ে জিডিপির ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি। এ ক্ষেত্রে সুদ পরিশোধ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। আর এই হিসাব যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ রেখে করা হয়েছে। চীন ব্যতীত উদীয়মান অর্থনীতির ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয় ২ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি। ব্যয়ের এই ধরন দেখে বোঝা যায়, সংকটের সময় যেসব আর্থিক নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল, যেমন ভর্তুকি ও করছাড়ের মতো নীতি, তা থেকে বেরিয়ে আসার গতি খুব কম। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির সঙ্গে অসমন্বিত সুদহার বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক দেশের সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় অনেকটাই বেড়ে গেছে।
সরকারি ঋণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবার ওপরে আছে বিশ্বের দুই প্রধান অর্থনীতি—যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। মহামারি শুরুর চার বছর পর এই দুই দেশে সরকারি ঋণ বেড়েছে যথাক্রমে ২ ও ৬ শতাংশীয় পয়েন্ট হারে। এই দুটি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর বৈশ্বিক অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভর করে। চীনের প্রবৃদ্ধির হার কমে গেলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ও বাণিজ্যের গতি কমে যায়। ফলে যেসব দেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল, তারা ক্ষতির মুখে পড়ে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বেড়ে গেলে সারা বিশ্বে বিনিয়োগ প্রবাহে ভাটা পড়ে।
এই বাস্তবতায় আইএমএফ মনে করছে, চলতি বছর রাজস্ব আয়ে টানাটানি থাকবে।
২০২৪ সালজুড়ে বিশ্বের অনেক দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জনসংখ্যার হিসাবে এসব দেশে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষের বসবাস। ইতিহাসে দেখা যায়, নির্বাচনের বছরে সরকারি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি করহার কমে যায়। নির্বাচনের বছরে দেশে দেশে সরকারের রাজস্ব ঘাটতি পূর্বাভাসের চেয়ে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়ে যায়। এবারের নির্বাচনী বছরে এই ঘাটতি যেন লাগামছাড়া না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে আইএমএফ।
আইএমএফ মনে করছে, মধ্য মেয়াদে দেশে দেশে ঘাটতি কমানোর বা সরকারি ব্যয় হ্রাসের উদ্যোগ নেওয়া হলেও অনেক দেশের সরকারি ঋণ স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য তা যথেষ্ট নয়। এখন যে নীতিতে সরকারগুলো দেশ চালাচ্ছে, সেই নীতি চলমান থাকলে ২০২৯ সালের মধ্যে সরকারের প্রাথমিক রাজস্ব ঘাটতি (সুদ ব্যয় ব্যতীত) স্থিতিশীল পর্যায়ে থাকবে না। এক-তৃতীয়াংশ উন্নত ও উদীয়মান দেশগুলোর ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে। অন্যদিকে নিম্ন আয়ের এক-চতুর্থাংশ দেশের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য।
উদীয়মান দেশগুলোতে সরকারি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে এসব দেশের রাজস্ব ঘাটতি কমিয়ে আনা জরুরি বলে মনে করে আইএমএফ। তাদের হিসাবে, জিডিপির অন্তত ২ দশমিক ১ শতাংশীয় পয়েন্টের সমপরিমাণ ঘাটতি কমাতে হবে।
এদিকে বাংলাদেশে সরকারের ঋণ এখনো বিপজ্জনক পর্যায়ে না উঠলেও গত কয়েক বছরে ঋণ অনেকটা বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ সালের পর ১২ বছরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি। ২০২২ সালে ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক বিনিয়োগের গতি-প্রকৃতি বদলে যাওয়ার পর বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে। দেশে ঋণ নিয়ে একধরনের উদ্বেগ তৈরি হলেও সামগ্রিক ঋণ–জিডিপির অনুপাত এখনো ৪০ শতাংশের নিচে। বিদেশি ঋণের অর্থে যেসব প্রকল্প হচ্ছে, সেখান থেকে বিদেশি মুদ্রা আয়ের তেমন সুযোগ নেই। এ ছাড়া টাকার যেভাবে অবমূল্যায়ন হচ্ছে, তাতে সরকারের ঋণ পরিশোধের ব্যয় বেড়ে যাবে। এর সঙ্গে রাজস্ব আয় আনুপাতিক হারে না বাড়লে ঋণ পরিশোধ নিয়ে শঙ্কা থেকে যায় বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
টানা ৮ বার কমার পর বাড়ল সোনার দাম
টানা ৮ দফা কমার পর দেশের বাজারে সোনার দাম আবারও বেড়েছে। সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনা দাম এক হাজার ৫০ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ২১৩ টাকা।
স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ দাম বাড়ানো হয়েছে। আগামীকাল রোববার (৫ মে) থেকে এ দাম কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
এর আগে গত ৩ মে এবং ৩০ এপ্রিল, ২৯ এপ্রিল ২৮ এপ্রিল, ২৭ এপ্রিল, ২৫ এপ্রিল, ২৪ এপ্রিল ও ২৩ এপ্রিল আট দফা সোনার দাম কমানো হয়। এর মধ্যে ৩ মে এক হাজার ৮৭৮ টাকা কমানো হয়। তার আগে ৩০ এপ্রিল ৪২০ টাকা, ২৯ এপ্রিল ১ হাজার ১১৫ টাকা, ২৮ এপ্রিল ৩১৫ টাকা, ২৭ এপ্রিল ৬৩০ টাকা, ২৫ এপ্রিল ৬৩০ টাকা, ২৪ এপ্রিল ২ হাজার ৯৯ টাকা এবং ২৩ এপ্রিল ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমানো হয়। এতে আট দফায় ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে ১০ হাজার ২৬২ টাকা কমানো হয়।
আট দফা দাম কমার পর এখন সোনার দাম বাড়লো। শনিবার (৪ মে) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠকে নতুন করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তীতে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার দাম বেড়েছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজুস সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করেছে, যা রোববার থেকে কার্যকর হবে।
নতুন মূল্য অনুযায়ী, সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৫০ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ২১৩ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৩ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৫ হাজার ১৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৮৬৩ টাকা বাড়িয়ে ৯০ হাজার ১৭৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ৭১২ টাকা বাড়িয়ে ৭৪ হাজার ৯৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অবশ্য সোনার গহনা কিনতে ক্রেতাদের এর থেকে বেশি অর্থ গুনতে হবে। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে সোনার গহনা বিক্রি করা হয়। সেইসঙ্গে ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় ন্যূনতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে আগামীকাল থেকে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার গহনা কিনতে ক্রেতাদের ১ লাখ ১৯ হাজার ২২৩ টাকা গুনতে হবে।
এর আগে ৩ এপ্রিল সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৮৭৮ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৯ হাজার ১৬৩ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৮০৭ টাকা কমিয়ে এক লাখ ৪ হাজার ১৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ১৮ শতাংশ
প্রতিযোগিতামূলক দাম এবং নতুন নতুন বাজার তৈরি হওয়ার কারণে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। এসময়ে ২০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুারোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে, গত জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আগের যে কোনো বছরের একই সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
মূলত যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ভারত ও নেপালে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করা হয়। বাংলাদেশ বিনিযোগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) গবেষণায় দেখা গেছে, নানা ধরনের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করলেও প্যাকেজিং পণ্যের বেশিরভাগই টেবিলওয়্যার ও কিচেনওয়্যার।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, স্থানীয়ভাবে তৈরি প্লাস্টিক পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক দাম এ খাতের রপ্তানি বৃদ্ধিতে মূল ভূমিকা রেখেছে। ডলার সংকট ও কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি খোলার ক্ষেত্রে অসুবিধার মধ্যেও এই খাত রপ্তানি অব্যাহত রাখতে পেরেছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিশ্বমানের প্লাস্টিক তৈরি করছে। এটি বিদেশিদের বাংলাদেশ থেকে পণ্য কিনতে আগ্রহী করছে। এখাতের জন্য প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বাজার তৈরি হচ্ছে যা আমাদের রপ্তানি সম্প্রসারণে সহায়ক হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্লাস্টিক শিল্প মূলত একটা এসএমইখাত। তাই এ খাতের উদ্যোক্তারা বিদেশে প্রয়োজনীয় মার্কেটিং করতে পারছে না। ঠিকঠাকমত বিপণন করা গেলে রপ্তানি ১০০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিদেশে অবস্থিত মিশনের মাধ্যমে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন বাজার খুঁজতে সহায়তা করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি। শামীম আহমেদ বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের তুলনায় প্লাস্টিক খাতে কর্পোরেট ট্যাক্সসহ অন্যান্য করহার বেশি। পোশাক খাতের ন্যায় এই শিল্পে করহার কমালে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি আরও বৃদ্ধি পাবে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, গত অর্থবছরে এ খাত থেকে রপ্তানি আশাব্যঞ্জক ছিল না। ধারণা করছি, পশ্চিমা অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করায় এ বছর আরও উন্নতি হবে। ডলারের বেশি দামের কারণে উৎপাদন খরচ প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় মুনাফা কমেছে বলে জানান তিনি।
বিপিজিএমইএর মতে, দেশে পলিওলেফিন উৎপাদন সুবিধা না থাকলেও বর্তমানে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ১৪২টির বেশি পণ্য তৈরি করছে। বাংলাদেশ প্রধানত ফিল্ম প্লাস্টিক, গৃহস্থালি সামগ্রী ও গার্মেন্টস এক্সেসরিজ রপ্তানি করে। এইখাতের ব্যবসায়ীরা আশা করছে এবছর প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি ২৫ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
ইপিবির তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২০ কোটি ৯ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরের একইসময়ে এর পরিমাণ ছিলো ১৭ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর এবছর এই খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বাংলাদেশ ও আইডিবির মধ্যে ২৭০ মিলিয়ন ইউরোর ঋণচুক্তি
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ২৭০ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন ইউরোর ‘রুরাল অ্যান্ড পেরি-আরবান হাউসিং ফাইন্যান্স প্রজেক্ট— সেকেন্ড ফেজ’ শীর্ষক ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণচুক্তি করেছে ইসলামিক ডেভলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)। সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত আইডিবির বোর্ড অব গভর্নরসের বার্ষিক সভা এবং আইডিবি গ্রুপের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে ৮ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন। প্রতিনিধিদল চারদিনের এই আয়োজনে সৌদিভিত্তিক বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর সাথে কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক সভায়ও মিলিত হন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ও আইডিবির নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ্রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী অংশ নেন। এ সময়ে আইডিবি গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সোলাইমান আল জাসের, সৌদি ফান্ড ফর ডেভলপমেন্টের (এসএফডি) ডেপুটি চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ইঞ্জিনিয়ার ফয়সাল এম আল খাতনি এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফাইন্যান্সিং কর্পোরেশনের (আইটিএফসি) চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) ও ইসলামিক কো-অপারেশন ফর ডেভেলপমেন্ট অব দ্যা প্রাইভেট সেক্টরের (আইসিডি) ভারপ্রাপ্ত সিইও ইঞ্জিনিয়ার হানি সেলিম সনবলের সাথে পৃথকভাবে দ্বিপাক্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বাংলাদেশের জন্য আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতার ক্ষেত্র বৃদ্ধি, ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার কৌশল নির্ধারণ, নমনীয় ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি ও ঋণের সুদ হ্রাসকরণ, জলবায়ু পরিবর্তনে সহনশীলতা বৃদ্ধিসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে বিদ্যমান সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়।
গত ২৮ এপ্রিল একটি সাইড ইভেন্টে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সাথে আইডিবি গ্রুপের চিফ ইকোনমিস্টের একটি দ্বিপাক্ষিক সভা হয়। যেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্য এবং বিশেষত অর্থনৈতিক বহুধাকরণে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা এবং নীতিগত উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত অপর একটি সাইড ইভেন্টে আইডিবি গ্রুপের ‘মেম্বার কান্ট্রি পার্টনারশিপ স্ট্র্যাটেজি (এমসিপিএস) ফর দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ ২০২৪-২০২৬’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
চামড়া খাতে ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর প্রস্তাব সিপিডির
চামড়া খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে ২২ হাজার ৭৭৬ টাকা প্রস্তাব দিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। একইসঙ্গে মজুরি দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রেডিং সিস্টেম যথাযথ করার প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি।শ্রমিকদের খাদ্যমূল্য ও মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনায় এ প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি।
শনিবার (৪ এপ্রিল) সিপিডির ধানমন্ডির কার্যালয়ে ‘ট্যানারি শিল্পে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব প্রস্তাবনায় উঠে আসে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেমের নেতৃত্ব গবেষণা পরিচালনা করা হয়। সিপিডির সিনিয়র গবেষক তামিম আহমেদ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা ও ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদসহ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বক্তব্য রাখেন।
শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাবনায় সিপিডি বলছে, শ্রমিকদের খাদ্যমূল্য ২০ হাজার ৫৬৪ ও নন-ফুড মূল্য ১২ হাজার ৮৮১ টাকা হিসেবে মাসে মোট ৩৩ হাজার ৪৪৫ টাকা প্রয়োজন। সেই হিসেবে সিপিডি মনে করছে ন্যূনতম মজুরি হওয়া উচিত ২২ হাজার ৭৭৬ টাকা। একইসঙ্গে আমাদের প্রস্তাব থাকবে গ্রেডিং সিস্টেম ঠিক করে একটি গ্রেডে আনা। এই খাতে গ্রেড উন্নয়নের সুযোগ কম, কারণ একেকটি গ্রেডের কাজ একেক রকম। যেহেতু পদোন্নতির সুযোগ নেই, তাই গ্রেডের মধ্যে কয়েকটি ভাগ, যেমন: যেমন-গ্রেড-৫ এর এ, বি ও সি করে সাবগ্রেড করার প্রস্তাব রয়েছে। এর ফলে পদোন্নতির সুযোগ থাকবে ও শ্রমিকদের কাজে উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে।
গোলাম মোয়াজ্জেম তার বক্তব্যে বলেন, ২০২৩ সালের চামড়া জাত পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ১.২ বিলিয়ন ডলার। যার ভিতরে ট্যানারি শিল্প থেকে এসেছে ১২৩ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি খুঁজছে সে হিসাবে চামড়াজাত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত হতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের গবেষণায় এই খাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২২ হাজার ৭৭৬ টাকা প্রস্তাব এসেছে, আমরা জানি শ্রমিকদের দাবি ২৫ হাজার টাকা আর মালিকদের প্রস্তাবনা ১৫-১৬ হাজার টাকা। আমি আশা করছি মজুরি বোর্ড সকল পক্ষে প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।
সিডিপির গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১১ সালে সর্বপ্রথম ট্যানারি শিল্পের জন্য ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছিল, যার পরিমাণ ৮ হাজার ৭৫০ টাকা। ২০১৮ সালে সেটা বৃদ্ধি করে শহর অঞ্চলের জন্য ১৩ হাজার ৫০০ টাকা ও গ্রাম অঞ্চলের জন্য ১২ হাজার ৮৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে যে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেটা কতগুলো প্রতিষ্ঠানে বাস্তবায়ন করা হয়েছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। সিপিডি’র গবেষণায় দেখা গেছে ২০২৪ সালে এসেও দেখা গেছে ৬০ শতাংশ কারখানা ওই বেতন দিচ্ছে না। প্রতিবছর ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি পাওয়ার কথা থাকলেও সেটা বিবেচনায় বাস্তবায়ন হার অনেক কম পাওয়া গেছে।
এমআই