রাজনীতি
তারেক রহমানের জন্য শাহবাগ ছাড়লো ইনকিলাব মঞ্চ
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত উপলক্ষ্যে শাহবাগ মোড় ছেড়ে দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। তারেক রহমান আজ (শনিবার) বেলা ১১টার দিকে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করতে আসার কর্মসূচি রয়েছে।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বার্তায় বলা হয়, ‘আজ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত উপলক্ষ্যে ইনকিলাব মঞ্চ শাহবাগ মোড় থেকে ডানদিকে আজিজ সুপারমার্কেটের সামনে অবস্থান নিয়েছে। ঠিক দুপুর ১২টায় পুনরায় শাহবাগ মোড়ে শহীদ হাদি চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। বিচার আদায়ের দাবিতে সারা দেশের জনতাকে শহীদ হাদি চত্বরে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।’
এদিকে সকাল থেকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছে ছাত্রদল। তারা সেখানে জড়ো হয়ে স্লোগানে স্লোগানে সবাইকে উজ্জীবীত করার চেষ্টা করছে। তারা বলছে, তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষ্যে শাহবাগে এসেছেন।
গতকাল দুপুর থেকে শুরু করে শনিবার সকাল পর্যন্ত শাহবাগ মোড়ের হাদি চত্বরে অবস্থান নিয়েছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীরা। হাদি হত্যার বিচার দাবিতে তারা বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড-ব্যানার নিয়ে সেখানে রাতভর অবস্থান করেন। তারা বলছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবেন না। তারেক রহমানের কবর জিয়াতে কর্মসূচি শেষে তারা দুপুর ১২টায় আবারও সেখানে অবস্থান নেবেন বলে জানা গেছে।
এমকে
রাজনীতি
জামায়াতের সঙ্গে জোট নিয়ে এনসিপিতে বিভক্তি
জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আট দলের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জোট বা আসন সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত। দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তরুণদের গড়া দলের নেতারা। তবে এ সমঝোতা নিয়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছে এনসিপিতে। নির্বাহী পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ সদস্য জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার পক্ষে থাকলেও আপত্তি জানিয়ে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে চিঠি দিয়েছেন ৩০ নেতা। এছাড়া ডা. তাসনিম জারা গতকাল শনিবার দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
গণমাধ্যমে কথা বলায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় নাম প্রকাশ না করে এনসিপির ডজনখানেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে জামায়াতের সঙ্গে জোট-সমঝোতার পক্ষে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের ৯০ শতাংশ এবং কেন্দ্রীয় কমিটির ৮০ শতাংশ নেতা মত দিয়েছেন। ফলে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে সমঝোতার সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ রোববার এ-সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।
একই কারণে নাম প্রকাশ না করে এনসিপির এক যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুগ্ম সদস্য সচিব বলেন, জামায়াতের সঙ্গে জোটের বিষয়ে শীর্ষ নেতৃত্ব এককভাবে সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ বিষয়ে এজেন্ডা আকারে আনা হয় ৫৯ সদস্যের দলের নির্বাহী পরিষদের সভায়। সেখানে সবার মতামত চাওয়া হলে মাত্র চারজন বিরোধিতা করেন। এছাড়া বিরোধিতা করতে পারেন, এমন কয়েকজন সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
কয়েকটি সূত্র জানায়, গত বুধবার এনসিপির নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে উপস্থিত থাকা নেতাদের ৯০ শতাংশই জামায়াতের সঙ্গে তাদের জোটের প্রস্তাবের পক্ষে মত দেন। এরপর জামায়াত আমিরের সঙ্গে বৈঠকে করেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা। সবশেষ গতকাল এর বিরুদ্ধে নীতিগত আপত্তি জানিয়ে দলটির আহ্বায়ক নাহিদকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেন ৩০ কেন্দ্রীয় নেতা। তবে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে বর্তমানে ২১৪ জনের মতো সদস্য আছেন। সে হিসাবে সমঝোতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন ২০ শতাংশের কম নেতা।
এনসিপির আসন সমঝোতা নিয়ে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং সদস্য সচিব আখতার হোসেন ছাড়া অন্যদের গণমাধ্যমে কথা বলায় নিষেধজ্ঞা আছে। সে কারণে কেউ নাম প্রকাশ না করলেও কয়েকজন নেতা জানান, সময়ের প্রয়োজন অনুধাবন করেই সমঝোতার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এর আগে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করা হলেও অবমূল্যায়িত হতে হয়েছে। জুলাই বিপ্লবীদের জন্য ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি এবং সামনের সম্ভাব্য বিভিন্ন শঙ্কার বিষয় বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জামায়াতের সঙ্গে জোট করার বিরুদ্ধে নীতিগত আপত্তি জানানো ৩০ জনের মধ্যে অন্যতম এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক খান মুহাম্মদ মুরসালীন। তিনি বলেন, জামায়াতের জোটে যাওয়া না যাওয়া দলের একটি নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। এক্ষেত্রে দুই শতাধিক নেতার মধ্যে মত-দ্বিমত বা ভিন্নমত থাকতেই পারে। কিন্তু আমরা আমাদের আপত্তির কথা জানিয়েছি। এটা পদত্যাগ নয়।
গতকাল এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদের বরাবর ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দায়বদ্ধতা ও দলীয় মূল্যবোধের আলোকে সম্ভাব্য জোট বিষয়ে নীতিগত আপত্তিসংক্রান্ত স্মারকলিপি’ দেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০ সদস্য। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ও এক ধরনের প্রচার চালিয়ে ৩০ জন একমত হতে পেরেছেন। তবে চিঠিতে সই থাকা একাধিক নেতা বলেন, তারা চিঠির সঙ্গে একমত নন। মৌখিক কথা বলে তাদের নাম যুক্ত করা হয়েছে।
চিঠিতে নেতারা তাদের আপত্তির কারণ হিসেবে এনসিপির ঘোষিত আদর্শ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনার দায়বদ্ধতা এবং গণতান্ত্রিক নৈতিকতার কথা বলেছেন। এর সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের ভূমিকা, ধর্মকেন্দ্রিক সামাজিক ফ্যাসিবাদের উত্থানের শঙ্কা এবং জামায়াতের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে জামায়াতের সঙ্গে জোট করলে এনসিপির নৈতিক অবস্থান দুর্বল হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেনÑএনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন, কেন্দ্রীয় সংগঠক আরমান হোসাইন, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক খান মোহাম্মদ মুরসালীন, সংগঠক রফিকুল ইসলাম আইনী প্রমুখ।
বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি না হলেও জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার ক্ষেত্রে এগিয়েছে এনসিপি। আজ এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। শুরুর দিকে এনসিপির নেতারা খুব আগ্রহ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়েছেন। ফলে গত কয়েক দিনে জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির সমঝোতার আলোচনায় গতি আসে এবং দুই দলের দায়িত্বশীল নেতাদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বিষয়টি ইতিবাচকভাবে এগিয়েছে। কোন কোন আসনে দুই দলের কোন কোন প্রার্থীর জেতার সম্ভাবনা বেশি, সেটি মূল্যায়ন করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী আসন সংখ্যাও চূড়ান্ত হয়েছে।
তফসিল অনুযায়ী, আগামীকাল সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। দলীয় প্রার্থী হতে হলে মনোনয়ন ফরমের সঙ্গে দলের প্রত্যয়নপত্রও জমা দিতে হয়। সেজন্য এই সময়ের মধ্যেই আসন সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে সমঝোতা হলেও দলীয় প্রতীকে ভোট হওয়ার কারণে এ ব্যাপারে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ আছে।
গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করে এনসিপির এক যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুগ্ম সদস্য সচিব বলেন, তারেক রহমান দেশে আসার পরও এনসিপির সঙ্গে বিএনপির আসন সমঝোতার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় আগামী সংসদে জুলাই বিপ্লবীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা হয়।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা দল ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে দলটির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পদত্যাগের কথা জানান তিনি। পরে ঢাকা-৯ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার কথা জানিয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন ডা. জারা। এছাড়া তার স্বামী দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহও এনসিপি থেকে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি ব্যক্তিগত কারণে এনসিপি থেকে পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন।
জামায়াতের সঙ্গে দলটির নির্বাচনি জোট বা আসন সমঝোতার আলোচনার মধ্যেই এমন সিদ্ধান্ত এলো। কয়েকটি সূত্র জানায়, জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির সমঝোতায় আপত্তি থাকায় পদত্যাগ করেছেন জারা। তবে ঢাকা-৯ আসনে এনসিপির প্রার্থী হতে পারেন দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব হুমায়রা নুর।
ফেসবুক পোস্টে তাসনিম জারা জানান, আমার স্বপ্ন ছিল একটি রাজনৈতিক দলের প্ল্যাটফর্ম থেকে সংসদে গিয়ে আমার এলাকার মানুষ ও দেশের সেবা করা। তবে বাস্তব প্রেক্ষাপটে আমি কোনো নির্দিষ্ট দল বা জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর প্রয়োজন হওয়ায় আজ রোববার থেকে স্বাক্ষর অভিযানে নামার কথা জানিয়েছেন জারা। তবে একদিনে এত মানুষের স্বাক্ষর নেওয়া অসম্ভব হওয়ায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে আগ্রহীদের স্বতঃস্ফূর্ত সাহায্য চেয়ে একটি ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে আগামী সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ৪৭ লাখ টাকা গণচাঁদা সংগ্রহ করেছেন ডা. জারা। এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পরিবর্তিত সিদ্ধান্তের কারণে অনুদান ফেরত নিতে চাইলে ফেসবুকে দেওয়া একটি ফরম পূরণ করার অনুরোধ করে জারা বলেছেন, আপনাদের ট্রানজেকশন আইডি ও ডিটেইলস ভেরিফাই করার পর অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। আর যারা ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠিয়েছিলেন, তাদের শিগগির জানাব কী প্রক্রিয়ায় আপনাদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।
গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে এনসিপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। সেখানে লেখা হয়, ‘ঐকমত্য কমিশনে সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির সঙ্গেই অন্য দলগুলোর মতভিন্নতা পরিলক্ষিত হতো। সেখানে সংস্কারের পয়েন্টগুলোয় ন্যাচারালি (স্বাভাবিকভাবেই) এনসিপি, জামায়াত ও অন্য দলগুলো একমত হয়েছে।’
তিনি আরো লেখেন, ‘সেক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয়, দেশকে নতুন করে গড়া, নতুনভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোকে গড়ে তোলার জন্য যে রাজনীতি, সে রাজনীতির প্রতি যে কমিটমেন্ট সেটাকেই নির্বাচনি রাজনীতিতে জোটের বা সমঝোতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রধানতম বিবেচ্য বিষয় হিসেবে এটাকে মূল্যায়ন করছি।’
আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের আসন সমঝোতার চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে আজ। এ প্রক্রিয়ায় জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ আট দলের পাশাপাশি এনসিপি ও নতুন কিছু দল যুক্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের গতকাল রাতে জানান, আসন সমঝোতার বিষয়টি নিয়ে নেতারা কাজ করছেন। রাতেই বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার কথা। আজও এ নিয়ে বৈঠক শেষে চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে।
এমকে
রাজনীতি
ঢাকা-১৭ আসনে তারেক রহমানের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ
বগুড়ার পৈতৃক আসনের পর এবার রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-১৭ আসন থেকেও নির্বাচনী লড়াইয়ে নামার জোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে তার পক্ষে সেগুনবাগিচায় বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার।
গুলশান ও বনানী নিয়ে গঠিত এই অভিজাত আসনে বিএনপির শীর্ষ নেতার আগমনের খবরে রাজনৈতিক মহলে এখন নতুন সমীকরণ শুরু হয়েছে।
তারেক রহমান ও তার মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমানের ভোটার হওয়ার প্রক্রিয়াও এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। শনিবার রাতে নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইং তাদের পরিচয়পত্র প্রস্তুতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আজ বিকেলের মধ্যে কমিশন সভায় অনুমোদনের পর তারা আনুষ্ঠানিকভাবে গুলশান এলাকার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হবেন। নিয়ম অনুযায়ী, ভোটার তালিকায় নাম ওঠার পর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য তারা মাত্র একদিন সময় পাবেন।
বগুড়ার পর ঢাকা-১৭ আসন থেকে মনোনয়নপত্র তোলায় দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের এই দ্বিমুখী শক্ত অবস্থান নির্বাচনী লড়াইয়ে বিএনপিকে এক বিশেষ সুবিধাজনক জায়গায় নিয়ে যাবে। এখন সবার নজর নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের দিকে, যা সম্পন্ন হলেই চূড়ান্ত হবে তার সরাসরি সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরবর্তী ধাপ।
এদিকে বিএনপির অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ ঢাকা-১৭ আসনের পরিবর্তে ভোলা-১ আসন থেকে জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
এমকে
রাজনীতি
মায়ের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাইলেন তারেক রহমান
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত জটিল ও সংকটময়। বর্তমানে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। এই কঠিন সময়ে মায়ের দ্রুত সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে বিশেষ দোয়া চেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) দলটির মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
বেগম জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, স্বাস্থ্যের ক্রমাগত অবনতি হওয়ায় তাকে প্রথমে সিসিইউ এবং পরে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে। চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেগম জিয়ার অবস্থা বর্তমানে এমন পর্যায়ে যে তার উন্নতি হয়েছে-এমনটি বলার অবকাশ নেই। তবে মহান আল্লাহর রহমতে এই সংকটময় মুহূর্ত কাটিয়ে উঠতে পারলে ভালো কিছুর আশা করা যেতে পারে।
এদিকে দীর্ঘ ১৭ বছর পর লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর থেকেই তারেক রহমান মায়ের চিকিৎসার বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদারকি করছেন। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দিনভর নানা কর্মসূচি শেষে তিনি পুনরায় হাসপাতালে গিয়ে দীর্ঘ সময় মায়ের পাশে অবস্থান করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ডা. জুবাইদা রহমান। তারা দীর্ঘক্ষণ মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং চিকিৎসার সর্বশেষ আপডেট গ্রহণ করেন। রাত ১২টার দিকে তারা হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
তারেক রহমান হাসপাতালের অন্য রোগীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। ডা. জাহিদ হোসেন জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অত্যন্ত সচেতন যে কোনোভাবেই যেন সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত না হয়। এ কারণে তিনি নেতাকর্মীদের অতিউৎসাহী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ ও অনুরোধ জানিয়েছেন।
বর্তমানে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড বেগম জিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত রয়েছে। গত ২৩ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তার অবস্থা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। তারেক রহমান ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে দেশের প্রতিটি প্রান্তে থাকা মানুষের কাছে দেশনেত্রীর জন্য দোয়া অব্যাহত রাখার আকুল আবেদন জানানো হয়েছে।
এমকে
রাজনীতি
জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতায় এনসিপিকে কঠিন মূল্য চুকাতে হবে: সামান্তা শারমিন
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সমঝোতায় গেলে এনসিপিকে কঠিন মূল্য চুকাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সামান্তা শারমিন বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্ভরযোগ্য মিত্র না। তার রাজনৈতিক অবস্থান বা দর্শনসহ কোন সহযোগিতা বা সমঝোতায় যাওয়া এনসিপিকে কঠিন মূল্য চুকাতে হবে বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, সম্প্রতি রাজনৈতিক জোট প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীল নেতারা মন্তব্য করেছিলেন জামায়াতের জুলাইয়ের স্পিরিট, বাংলাদেশের নিয়ে পরিকল্পনা নিয়ে একমত হলে জামায়াতের সঙ্গে জোট করতে আসতে পারে যে কোনো দল।
সামান্তা শারমিন আরও বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির এত দিনের অবস্থান অনুযায়ী তার মূলনীতি, রাষ্ট্রকল্প জামায়েত থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচন তথা সেকেন্ড রিপাবলিককে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা দল এনসিপি। ফলে এই তিনটি বিষয়ে অভিন্ন অবস্থান যেকোনো রাজনৈতিক মিত্রতার পূর্বশর্ত।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, আমার বর্তমান অবস্থান পার্টির গত দেড় বছরের অবস্থানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিম্নকক্ষে পি আর আওয়াজ তুলে সংস্কারকে ব্যাহত করায় লিপ্ত হয়েছিল জামায়াত। ফলত এনসিপির আহ্বায়ক বলেছিলেন ‘যারা সংস্কারের পক্ষে নয় তাদের সাথে জোটও সম্ভব নয়’। তাই জুলাই পদযাত্রার পর থেকে ‘৩০০’ আসনে একক প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দেয়া হয় আহ্বায়কসহ একাধিক বরাতে এবং স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবে এনসিপি- এই মর্মে সারা দেশ থেকে প্রার্থীদের আহ্বান করা হয়।
সবশেষ তিনি বলেন, জামায়াতের সঙ্গে জোট করার সমস্যাসমূহ তুলে ধরা মানেই বিএনপির পক্ষে অবস্থান বোঝায় না। বরং বিভিন্ন বিষয়ে এতদিন ধরে প্রকাশিত ও নানান মহলে প্রশংসিত এনসিপির অবস্থান আমি সঠিক মনে করি ও নিজেকে এই আদর্শের সৈনিক মনে করি। বিএনপি-জামায়াতের যেকোনটির সঙ্গে জোট এনসিপির সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক পলিসি থেকে সরে গিয়ে তৈরি হচ্ছে।
এমকে
রাজনীতি
খালেদা জিয়া অত্যন্ত সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন: ডা. জাহিদ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা.এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবস্থা অত্যন্ত জটিল। তিনি সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে, রাতে খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। মায়ের শয্যাপাশে তারা দীর্ঘ সময় ছিলেন বলেও জানান ডা. জাহিদ।
তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবেই উনার (খালেদা জিয়া) অবস্থার উন্নতি হয়েছে, এ কথা বলা যাবে না।… উনার (খালেদা জিয়া) অবস্থা অত্যন্ত জটিল, এবং উনি একটা সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন। চিকিৎসা এবং আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে তিনি যদি এই সংকটটা উতরিয়ে যেতে পারেন, তাহলে হয়তো আমরা ভালো কিছু পাব।
স্বাস্থ্যের ক্রমাগত অবনতির কারণেই খালেদা জিয়াকে কেবিন থেকে সিসিইউ এবং সেখানে থেকে পরবর্তীতে আইসিইউতে নেওয়া হয় জানিয়ে ডা. জাহিদ বলেন, সত্যিকার অর্থে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২৩ নভেম্বর এখানে (এভারকেয়ার হাসপাতাল) ভর্তি হয়েছেন; ভর্তি হওয়ার পরবর্তীতে উনার (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থার বেশ অবনতি হয়েছিল।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি চিকিৎসকেরা বিএনপি চেয়ারপারসনকে চিকিৎসা দিচ্ছেন, তার পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান তাতে যুক্ত রয়েছেন।
খালেদা জিয়া ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিবিড় তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন জানিয়ে ডা. জাহিদ বলেন, খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন। তারেক রহমান এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া চাওয়া হয়েছে। সেই দোয়া সব সময় দেশের মানুষ করছেন। সেজন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। চিকিৎসক ও নার্সরা সব সময় দায়িত্ব পালন করেছেন, সেজন্যও তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
এমকে




