রাজনীতি
সরকার ও ইসিকে কড়া হুঁশিয়ারি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর
সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ড দেখে ‘নতুন করে অনেক কিছু শিখেছেন’ বলে কটাক্ষ করেছেন জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। নির্বাচন কমিশনের সংলাপে ডাক না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেছেন, ‘হালার পো হালারা কী মনে করছে বাংলাদেশটাকে। ইলেকশন কমিশনের প্রধান সবাইকে ডাকছে, আমাদের ডাকে নাই কেন? রাস্তাঘাটে চলবেন না? আমরা দেখছি তো। যখন যারা ক্ষমতায় থাকে তারা সবচেয়ে বেশি শক্তিধর হয়।
মঞ্জুর জেপি এবং আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির একাংশের নেতৃত্ব ২০টি রাজনৈতিক দল নিয়ে গঠিত জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) ১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে।
বনানীর হোটেল শেরাটনে সেই সংবাদ সম্মেলনে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা করেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।
সরকারকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। সেখানে এমন কোনো অবস্থা যেন সৃষ্টি করতে না হয়, যে জান বাঁচাবার জন্য প্রতিহত প্রতিরোধ করে ফেলতে হয়।
আমরা এখানে সমাবেত হয়েছি নির্বাচন অংশগ্রহণ করার জন্য। যদি নির্বাচন করার মতো পরিবেশ থাকে, পরিবেশ সৃষ্টি করা হয় এবং যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে… মামলা সব মিথ্যা, সময়ের ব্যাপার মাত্র।’ তিনি বলেন, ‘মামলা যারা খায়, তারা পরবর্তীকালে দেশ এবং জাতির নেতা হয়। তারা পুনরায় আসে। তারা পুনরায় দেশবাসীকে উপদেশ দেন। আমাদের জীবন কেটে গেছে।’
দেশের আইন-শৃঙ্খলা পিরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে মঞ্জু বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগামীতে পরিবর্তন হবে, তার কোনো লক্ষণ আমরা দেখছি না। বরং অবনতি হওয়ার সুনির্দিষ্ট সংকেত আমরা পাচ্ছি। আমরা নির্বাচনমুখী রাজনীতিতে বিশ্বাস করি।
গণতন্ত্র বিশ্বাস করি। সে জন্য নির্বাচন বয়কটের কথা আমরা চিন্তা করি না। কিন্তু নির্বাচন বয়কটের অবস্থা যদি আমাদের চাপিয়ে দেওয়া হয়, আমাদের কোনো উপায় নাই।’
তিনি বলেন, ‘আসেন আমরা এটা সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন করি, একটা পরিবেশ সৃষ্টি করি, যাতে দেশের মানুষ সুখে-শান্তিতে ও নির্ভয়ে জীবন যাপন করতে পারে। সবাই কিন্তু আপনাদের পেছনে এই লাড্ডু খাওয়ার জন্য ঘোরে না। সাধারণ মানুষ, ১৮ কোটি মানুষ তারা কী চায়? তারা চায় নির্ভয়ে জীবনযাপন। কর্মীরা আছেন, তাদের একটাই চিন্তা যে অ্যারেস্ট করবে না। বাকিটা আমরা দেখব। সে জন্য বলি আসেন সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করি।’
সরকারের সমালোচনা করে মঞ্জু বলেন, ‘কী বলে কী বিপদে পড়ব…। আমি তো বিপদে পড়ব না, আপনারা বিপদে পড়বেন। সে জন্য বলি, আসেন দেশটাকে গড়ি, আসেন একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করি।’
কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘কার কাছে নির্বাচন চাব, এরা কারা? আপনারা চেনেন? আমি তো চিনি না। আপনারা চেনেন? কারা আইসা কী কইতাছে! নির্বাচন সুষ্ঠু করার কথা, শান্তিপূর্ণ-উৎসবমুখর করার কথা! এটা আমেরিকায় দেখা যায়, পশ্চিম দেশে দেখা যায়। আমি আইছি ভাণ্ডারিয়া থেকে। দেখলাম, ভালোই লাগল। নতুন নতুন জিনিস, শিখলাম।’
সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট আয়োজনের সমালোচনা করে জেপি নেতা বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে যারা যাবে, দুইটা ভোট দেবে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ এমনিতে মাথা খারাপ থাকে অভাব-অনটন ও অশান্তির কারণে। এখন নির্বাচনকেন্দ্রে যাইয়া কী অবস্থা করবে আল্লাহ জানে। আমি জানি, কারণ তারা একটাই দিতে পারত না ঠিকমতো, এখন দেখবে ওটা (গণভোটের ব্যালট)।’
মঞ্জু বলেন, ‘নির্বাচন হবে, নির্বাচন হলে আমরা অংশগ্রহণ করব। যদি আমাদের নির্বাচন করতে দেয়। এই মুহূর্তে কিন্তু আমরা দাওয়াত পাইনি, দুই-তিনটা দলকে দাওয়াত করছে। তারপরে বলছে যার যার ইচ্ছা আসুক।’
এমকে
রাজনীতি
তারেক রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে আমরা জয়ী হবো: মির্জা ফখরুল
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি নির্বাচনে জয়ী হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে দেশের মাটিতে পা রেখেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লালসবুজ রঙে সাজানো একটি বাসে করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পূর্বাচলে তার জন্য প্রস্তুত গণসংবর্ধনাস্থলে পৌঁছান তিনি।
এরপরই তাকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা ফ্যাসিস্ট বিদায় করেছি। তারেক রহমানের নেতৃত্বে কঠিন পথ পাড়ি দিয়েছি।
মির্জা ফখরুল এরপর আশা প্রকাশ করে বলেন, ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেই নির্বাচনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা জয়ী হবো।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে আনন্দের জোয়ার বইছে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে। গণসংবর্ধনা মঞ্চে উঠেই হাত নেড়ে তাদের ভালোবাসা ও শুভেচ্ছার জবাব দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সবাই মিলে এক নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ফুটে উঠেছে তার কণ্ঠে।
উদাত্ত কণ্ঠে জনতার উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, আপনারা মার্টিন লুথার কিং-এর নাম শুনেছেন। তিনি বলেছিলেন, আই হ্যাভ এ ড্রিম। আমি আপনাদের সকলের সামনে দাড়িয়ে আমি বলতে চাই- আই হ্যাভ এ প্লান। ফর দি পিপল অব মাই কান্ট্রি। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এটি আমরা বাস্তবায়ন করব।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা লাগবে। এজন্য আপনারা পাশে থাকবেন। সেটা হলেই কেবল আমরা সেই ‘আই হ্যাভ এ প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।
২০০৭ সালে ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তারেক রহমান গ্রেপ্তার হন। এক বছর কারাভোগের পর ২০০৮ সালে তিনি মুক্তি পান এবং চিকিৎসার জন্য স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে যান। এরপর থেকেই বিএনপির এই শীর্ষ নেতা লন্ডনে নির্বাসিত জীবনযাপন করে আসছিলেন।
দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে দেশের আকাশসীমায় প্রবেশের পর তারেক রহমান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্ট লেখেন, ‘দীর্ঘ ৬ হাজার ৩১৪ দিন পর বাংলাদেশের আকাশে!’
এমকে
রাজনীতি
ওসমান হাদিকে স্মরণ করে যা বললেন তারেক রহমান
১৭ বছর পর দেশের মাটিতে দাড়িয়ে তারেক রহমানের প্রথম ভাষণে গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এলেন ওসমান হাদি। শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদির অবদানের কথা স্মরণ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, কয়েকদিন আগে ওসমান শহীদ হয়েছেন। ওসমান হাদি চেয়েছিলেন, এ দেশের মানুষ অর্থনৈতিক অধিকার ফিরে পাক।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিটে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ৭১-এ যারা শহীদ হয়েছে, ২৪-এ যারা শহীদ হয়েছে তাদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হলে প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।
আজ দুপুর ১২টা ৩৫মিনিটে তিনি বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে একটি বিশেষ বাসে করে ৩০০ ফিটের উদ্দেশে রওনা দেন। দলীয় নেতাকর্মীরা রাস্তার দুধারে হাত নেড়ে তাকে স্বাগত জানান। ৩ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর মঞ্চে পৌঁছান বিএনপি নেতা তারেক রহমান।
এর আগে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বহনকারী বিমানটি বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এর কিছুক্ষণ আগে তারেক রহমান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে আবেগঘন বার্তায় লেখেন, দীর্ঘ ৬ হাজার ৩১৪ দিন পর বাংলাদেশের আকাশে!
এরও আগে, বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত সোয়া ১২টায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ফ্লাইটটি। একই দিন বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ৮টায় লন্ডনের নিজ বাসা ত্যাগ করেন তারেক রহমান। তিনি স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে রাত সোয়া ১০টায় হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছান।
রাজনীতি
গাবতলী বিএনপির সদস্য থেকে শীর্ষ নেতৃত্বে তারেক রহমান
অবেশেষে দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর নির্বাসন থেকে দেশে ফিরলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহুল আলোচিত-সমালোচিত এবং চর্চিত ওয়ান ইলেভেন বা ১/১১‘র সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের বিশেষ সরকারের সময় তৎকালীন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান ক্যান্টনমেন্টের শহীদ মঈনুল রোডের বাড়ি থেকে গ্রেফতার হন।
গ্রেফতারের সময় তারেক ছিলেন সুস্থ ও স্বাভাবিক ৪২ বছরের একজন তারুণ্যদীপ্ত যুবক। কিন্তু কারাগারে যাওয়ার পর তাকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠে। আটকের পর একে একে তার নামে বিভিন্ন অভিযোগে ৮টি মামলা দায়ের করা হয়। সেই সব মামলায় রিমান্ডে নিয়ে তাকে নির্যাতন করা হয় বলে আদালতে অভিযোগ করেন তার আইনজীবী ও তৎকালীন বিএনপির মহাসচিব প্রয়াত খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। এরপর এ্যাম্বুলেন্স ও ট্রেচারে করেও তাকে বিভিন্ন মামলায় আদালতে উপস্থাপন করা হত।
অবশেষে ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আদালত তাকে জামিন দেয়। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ও একমাত্র কন্যা জায়মা রহমানকে নিয়ে তিনি চিকিৎসার উদ্দেশ্যে লন্ডন চলে যান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশ ছেড়ে না গেলেও তখনকার সেনা নেতৃত্বের সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতার মাধ্যমেই তারেক রহমান মুক্তি পেয়েছিলেন বলে প্রচার রয়েছে।
সেই থেকে তিনি আর দেশে ফিরতে পারেননি। দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর যাবত তারেক রহমান লন্ডনে ILR ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেইন (স্থায়ীভাবে বসবাস করার বৈধ অনুমতি) স্ট্যাটাসে বসবাস করেন। অবশেষে ২৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর পর দেশের মাটিতে ফিরলেন দেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র আগামীর নেতৃত্ব তারেক রহমান।
১৯৮৮ সালে তারেক রহমান পিতৃজেলা বগুড়ার গাবতলী উপজেলা সদস্য হিসেবে নিজেকে পিতা দেশের সাবেক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া রাজনৈতিক দল বিএনপির রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এরপর কয়েক বছরের মধ্যে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের পদ গ্রহণ করে দলীয় রাজনীতিতে ভূমিকা রাখেন।
লন্ডনে দীর্ঘবছর নির্বাসিত থাকার পর তারেক রহমানের শেষ পর্যন্ত দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে তাকে ঘিরে বিএনপির ভেতরে ও বাইরে তৈরি হওয়া উদ্বেগের অবসান ঘটল।
তার দেশে ফেরার বাধা হিসেবে বিএনপি অনেক আগে থেকেই আওয়ামী লীগ সরকারকে বাধা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি দেশে ফিরলেন সেই আওয়ামী সরকারের পতনেরও পনেরো মাস পর।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তারেক রহমান তার দেশে ফেরার বিষয়ে নিজেই যে উদ্বেগ তৈরি করেছিলেন, তার অবসান ঘটিয়ে দেশে ফেরাটা তার দলের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের কাছে অনেকটা ‘ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর মতো’, যা দলের জন্য স্বস্তি বয়ে নিয়ে এসেছে বলে মনে করেন তারা।
তারেকের দেশে ফেরার মাধ্যমে সাবেক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া দলটি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সংগঠিত ও জনপ্রিয় হওয়ার পর আবার একটি সমস্যা-সঙ্কুল পথ পাড়ি দিয়ে তাদের জ্যেষ্ঠ সন্তানের সরাসরি নেতৃত্বে পরিচালিত হওয়ার সময়ে পদার্পণ করলো।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিলো তারেক রহমান ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দলকে নেতৃত্ব দেবেন। তিনি নিজের রাজনৈতিক জীবনে এবারই প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ সন্তান তারেক রহমান ১৯৬৫ সালের ২০শে নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজে প্রাথমিক পড়াশোনা শেষে করে আশির দশকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু তিনি সেখানে পড়াশোনা শেষ করেছিলেন কি-না সেই সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিএনপির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, সামরিক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় তারেক রহমান তার মায়ের সাথে রাজপথের আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন এবং ওই সময় ১৯৮৮ সালে বগুড়া জেলা বিএনপির গাবতলী উপজেলা ইউনিটের সদস্য হিসেবে তিনি আনুষ্ঠানিক বিএনপিতে সক্রিয় হন।
বিএনপির রাজনীতিতে তারেক রহমান সক্রিয়তার পাশাপাশি জোরালো প্রভাব শুরু হয় ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে। ওই নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিজয়ী হয় এবং সরকার গঠন করে। পরে ২০০২ সালের ২২শে জুন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ তৈরি করে তাকে ওই পদে অধিষ্ঠিত করা হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে হাওয়া ভবন নেয়া হয়েছিলো নির্বাচনী অফিস হিসেবে ব্যবহার করে প্রচার প্রচারণা চালানো ও নির্বাচনী কৌশল নিয়ে কাজ করার জন্য, যাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তারেক রহমান। নির্বাচনে জয়লাভের পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার হলো। কিন্তু হাওয়া ভবন থেকে গেলো এবং এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলো। এরপর ওয়ান ইলেভেনের পর গ্রেফতার, নির্যাতন ও কারাভোগ শেষে তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হলো।
অবশ্য দলীয় রাজনীতিতে প্রভাববিস্তারের পাশাপাশি তারেক রহমান বিএনপির সংগঠন গোছানোর কাজে আত্মনিয়োগ করেন এবং দলের তৃণমূলে ব্যাপক যোগাযোগ তৈরি করেন। এরপর ২০০৯ সালে দলের সম্মেলনে তাকে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পরপরই তাকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করে বিএনপি।
বিএনপির রাজনীতিতে এটা পরিষ্কার যে, মা খালেদা জিয়ার পর তারেক রহমানই হবেন দলের পরবর্তি চেয়ারম্যান।
এমকে
রাজনীতি
মাকে দেখতে এভারকেয়ারের পথে তারেক রহমান
রাজধানীর পূর্বাচল ৩০০ ফিট এলাকায় আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য দিয়ে মাকে দেখতে এভারকেয়ারের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টা ১৮ মিনিটের দিকে সংবর্ধনাস্থল ত্যাগ করে এভারকেয়ারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তিনি।
রাজনীতি
একটি নিরাপদ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই: তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সবাই মিলে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব আমরা, যা একজন মা দেখেন। অর্থাৎ একটি নিরাপদ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই। যে বাংলাদেশে একজন মানুষ নিরাপদে ঘর থেকে বের হতে পারে ও ঘরে ফিরে আসতে পারে।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ৩০০ ফিট সড়কের গণসংবর্ধনা মঞ্চে এ কথা বলেন তিনি।
এসময় তারেক রহমান বলেন, প্রথমেই রাব্বুল আলামিনের প্রতি শোকরিয়া আদায় করছি। মহান রাব্বুল আলামিনের দোয়ায় মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছি।
তারেক রহমান বলেন, ৭১’এ দেশের মানুষ যেমন স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, ২০২৪ সালে তেমন সর্বস্তরের মানুষ, সবাই মিলে এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছিল। আজ বাংলাদেশের মানুষ কথা বলার অধিকার ফিরে পেতে চায়। তারা তাদের গণতন্ত্রের অধিকার ফিরে পেতে চায়।
তিনি বলেন, আমাদের সময় এসেছে সকলে মিলে দেশ গড়ার। এ দেশে পাহাড়ের, সমতলের, মুসলমান, হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই আছে। আমরা নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। যে বাংলাদেশে একজন নারী, পুরুষ, শিশু যেই হোক না কেন নিরাপদে ঘর থেকে বের হলে, যেন নিরাপদে ফিরতে পারে।
তরুণ প্রজন্মই আগামীতে দেশ গড়ে তুলবে উল্লেখ করে গণতান্ত্রিক, শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দেশকে গড়ে তোলার ওপর জোর দেন তিনি। তিনি পরপর তিনবার বলেন ‘আমরা দেশের শান্তি চাই’।
এদিন, বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর ৩০০ ফিট সড়কের গণসংবর্ধনা মঞ্চে পৌঁছান তারেক রহমান। গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে শুভেচ্ছা জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এদিন দুপুর ১২টা ৩৫মিনিটে তিনি বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে একটি বিশেষ বাসে করে ৩০০ ফিটের উদ্দেশে রওনা দেন। দলীয় নেতাকর্মীরা রাস্তার দুধারে হাত নেড়ে তাকে স্বাগত জানান। ৩ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর মঞ্চে পৌঁছান বিএনপি নেতা তারেক রহমান।
এর আগে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বহনকারী বিমানটি বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এর কিছুক্ষণ আগে তারেক রহমান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে আবেগঘন বার্তায় লেখেন, দীর্ঘ ৬ হাজার ৩১৪ দিন পর বাংলাদেশের আকাশে!
এরও আগে, বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত সোয়া ১২টায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে ফ্লাইটটি। একই দিন বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ৮টায় লন্ডনের নিজ বাসা ত্যাগ করেন তারেক রহমান। তিনি স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে রাত সোয়া ১০টায় হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছান।




