আইন-আদালত
হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালকে পালানোয় সহায়তাকারী নুরুজ্জামান রিমান্ডে
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যাচেষ্টা মামলার মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদকে মাইক্রোবাস ভাড়া দিয়ে পালাতে সহায়তা করা মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বলের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন।
এদিন তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ তার পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন না। শুনানি শেষে বিচারক আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে বিজয়নগর এলাকায় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি একটি রিকশায় যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল করে আসা দুজনের একজন তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে পালিয়ে যায়। গুলিতে হাদি মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। এ ঘটনায় গত ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি চালানোর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুজনকে শনাক্ত করে। তারা হলেন- ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান (প্রধান সন্দেহভাজন শুটার) এবং আলমগীর হোসেন (বাইক চালক)। এ ঘটনায় ফয়সাল করিমের স্ত্রী, প্রেমিকা ও শ্যালককে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
এদিকে, হাদিকে গুলি করার ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির মালিকানা নিয়ে আদালতে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কবির। মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুজ্জামানের আদালত কবিরের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
একইদিন মূল অভিযুক্ত ফয়সালের বাবা মো. হুমায়ুন কবির (৭০) এবং মা মোছা. হাসি বেগমকে (৬০) কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতারের পর ডিবির কাছে হস্তান্তর করে র্যাব। আজ তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
আইন-আদালত
প্রধান বিচারপতির বিদায় সংবর্ধনা আগামীকাল
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিদায় সংবর্ধনা জানানো হবে।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সকাল সাড়ে ১০টায় আপিল বিভাগের ১ নম্বর এজলাসকক্ষে প্রধান বিচারপতিকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষে সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান দেশের প্রধান বিচারপতিকে বিদায়ী সংবর্ধনা প্রদান করবেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১১ আগস্ট দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সংবিধান অনুযায়ী, বিচারপতিদের অবসরের বয়স ৬৭ বছর।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ১৯৫৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। প্রধান বিচারপতির বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে ২৭ ডিসেম্বর। ওই দিন ছুটি থাকায় আগামীকাল তার শেষ কর্মদিবস।
প্রথা অনুসারে শেষ কর্মদিবসে বিদায়ী বিচারপতিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বিদায়ী সংবর্ধনা জানানো হয়ে থাকে।
আইন-আদালত
আরও তিন হত্যা মামলায় জামিন পেলেন ছোট সাজ্জাদ
চট্টগ্রামের ডাবল মার্ডারসহ একাধিক হত্যা মামলার আসামি সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ আরও তিনটি হত্যা মামলায় জামিন লাভ করেছেন। উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভের কাগজপত্র ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে এসে পৌঁছেছে বলে মঙ্গলবার কারা সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এর আগে হাইকোর্ট থেকে আরও চার মামলায় পেয়েছিলেন ছোট সাজ্জাদ। এ নিয়ে একে একে সাতটি হত্যা মামলায় জামিন পেলেন তিনি। তবে সাতটি মামলায় জামিন পেলেও সহসা মুক্তি পাচ্ছেন না সাজ্জাদ। এর আগে চার মামলায় জামিন লাভের খবর পাওয়ার পর সাজ্জাদকে গত রোববার চান্দগাঁও থানার দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন জানানো হয় আদালতে। অন্যন্য থানা থেকেও সংশ্লিষ্ট মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন জানানো হাবে বলে সিএমপি সূত্র জানিয়েছে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার শাহ সৈয়দ শরীফ সাম্প্রতিক সময়ে একে একে সাতটি খুনের মামলা ছোট সাজ্জাদের জামিনের কাগজপত্র কারাগারে এসে পৌঁছেছে বলে জানান। সর্বশেষ যে তিনটি হত্যা মামলায় জামিনের কাগজপত্র এসেছে এর মধ্যে রয়েছে, চান্দগাঁও থানার তানভীর ছিদ্দিকী হত্যা মামলা, হৃদয় চন্দ্র তারুয়া হত্যা মামলা ও ফজলে রাব্বী হত্যা মামলা। সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ১০টি খুনের মামলাসহ ১৯টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে জোড়া খুনসহ আলোচিত হত্যাকাণ্ডের মামলাও রয়েছে। তার স্ত্রী তামান্না শারমিনের বিরুদ্ধেও একাধিক খুনসহ অন্তত আটটি মামলা রয়েছে। সাজ্জাদ বর্তমানে রাজশাহী এবং তামান্না ফেনী জেলা কারাগারে বন্দি রয়েছেন। চলতি বছরের ১৫ মার্চ ঢাকা থেকে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের মো. জামালের ছেলে সাজ্জাদ। নগরীর বায়েজিদ, অক্সিজেন ও চান্দগাঁও থানা এলাকায় ‘ছোট সাজ্জাদ’ নামে পরিচিত। তাকে ধরিয়ে দিতে পুলিশ পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল। গত ১০ মে নগরের চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া এলাকা থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন প্রকাশ ‘ছোট সাজ্জাদের’ স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ছোট সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারের পর তার স্ত্রী তামান্না ‘কাড়ি কাড়ি টাকা দিয়ে আদালত ও জামিন’ কিনে নেওয়ার কথা বলে দেশের আইন ও নিরাপত্তা সংস্থাকে অপমান করেন। তার এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) ভাইরাল হয়েছিল। মূলত এর পরই ঢাকা থেকে সাজ্জাদকে গ্রেফতার করা হয়। আন্ডারওয়ার্ল্ডের এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একে একে হত্যা মামলায় জামিন লাভের কারণে পুলিশের মধ্যেও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। আন্ডারওয়ার্ল্ড কাঁপানো এই শীর্ষ সন্ত্রাসী যাতে কারাগার থেকে বের হতে না পারেন সে ব্যাপারেও সতর্ক রয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ।
এ বিষয়ে চান্দগাঁও থানার ওসি জাহেদুল কবির জানান, শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে দুই মামলায় গ্রেফতার দেখাতে আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে। চট্টগ্রাম আদালতের এপিপি মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বলেছেন, আবেদন দুটি আদালতে অপেক্ষায় রয়েছে। মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর ক্ষেত্রে আসামির উপস্থিতিতে শুনানি গ্রহণের বিধান রয়েছে। আসামিরা বর্তমানে বিভিন্ন কারাগারে আটক থাকায়, অনলাইন মাধ্যমে শুনানি গ্রহণের সুযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি নিশ্চিত করেছেন।
এমকে
আইন-আদালত
সাংবাদিক আনিস আলমগীরের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন
উত্তরা পশ্চিম থানার সন্ত্রাস বিরোধ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সাংবাদিক আনিস আলমগীরের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছে পুলিশ।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক মুনিরুজ্জামান আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এ রিমান্ড আবেদন করেন। এ বিষয়ে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালতে শুনানি হবে। উত্তরা পশ্চিম থানার প্রসিকিউশন বিভাগ সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডির ২ নম্বরের একটি জিম থেকে বের হওয়ার পর তাকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে নেন। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবির কার্যালয়ে নেওয়া হয়। পাশাপাশি গত রাতে অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনসহ চারজনের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলাটি দায়ের করেন জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্সের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ। মামলার অপর আসামিরা হলেন- মারিয়া কিসপট্টা (ফ্যাশন মডেল) ও ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজের (উপস্থাপক)।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার অনুসারীরা বিভিন্ন কৌশলে ঘাপটি মেরে দেশে অবস্থান করে দেশকে অস্থিতিশীল ও অবকাঠামোকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র করে আসছে। আসামিরা ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোতে বসে নিষিদ্ধ সংগঠনকে ফিরিয়ে আনার গুজব (প্রপাগান্ডা) চালিয়ে আসছে। এর মাধ্যমে তারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের পাঁয়তারা করছে। এসব বিভিন্ন পোস্টের ফলে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা অনুপ্রাণিত হয়ে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল ও অবকাঠামোকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছেন।
আইন-আদালত
বিচার বিভাগ পুরোপুরি স্বাধীনতা পায়নি: প্রধান বিচারপতি
সম্পূর্ণ সুযোগ সুবিধা থাকলেও বিচার বিভাগ পুরোপুরি স্বাধীনতা পায়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) দেশের জেলা আদালতে কর্মরত উচ্চপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সমাপনী ও বিদায়ী অভিভাষণে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ একথা বলেন।
সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য এর আয়োজন করা হয়। আগামী ২৭ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ অবসরে যাবেন। অবসরে যাওয়ার অগে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এটাই তার সর্বশেষ অভিভাষণ।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেন ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র সৈয়দ রেফাত আহমেদ বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াডাম কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে আইন শাস্ত্রের ডিগ্রি পেয়েছিলেন। পরবর্তী সময় মাস্টার্স ও পিএইচডি করেন যুক্তরাষ্ট্রের টাফ্টস ইউনিভার্সিটির ফ্লেচার স্কুল অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসিতে। সৈয়দ রেফাত আহমেদ অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে কাজ করেছেন।
সৈয়দ রেফাত আহমেদ ১৯৮৪ সালে ঢাকা জেলা আদালতে এবং ১৯৮৬ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হন। ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক হন। এর দুই বছর পর তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন।
ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বাংলাদেশের প্রথিতযশা আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমেদ ও ড. সুফিয়া আহমেদের ছেলে। ইশতিয়াক আহমেদ দুই বার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সৈয়দ রেফাত আহমেদের মা ভাষা সৈনিক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ড. সুফিয়া আহমেদ বাংলাদেশের প্রথম নারী জাতীয় অধ্যাপক ছিলেন।
আইন-আদালত
আগে গণভোট, অস্ত্র উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত চেয়ে আইনি নোটিশ
লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ মারণাস্ত্র ও গোলাবারুদের একটি বড় অংশ আজও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাই এসব মারণাস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতির মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পরবর্তী সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) রেজিস্ট্রি ডাক ও ইমেইলের মাধ্যমে জনস্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং র্যাব মহাপরিচালককে লিগ্যাল নোটিশে বিবাদী করা হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হলে হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করা হবে।
লিগ্যাল নোটিশের বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনজীবী জানান, জুলাই সনদের ওপর গণভোট আয়োজনে বাধা নেই। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের পর ফ্যাসিবাদের পতন ঘটলেও দেশে এক গভীর নিরাপত্তা সংকট ও ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বিপ্লব পরবর্তী অস্থিতিশীল সময়ে দেশের বিভিন্ন থানা ও নিরাপত্তা স্থাপনা থেকে বিপুল পরিমাণ মারণাস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়ে যায়, যার একটি বড় অংশ আজও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এই বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের হাতে থাকায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সাধারণ ভোটার ও প্রার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা আজ চরম হুমকির মুখে। এরই মধ্যে নির্বাচনি সহিংসতা ও প্রাণের ঝুঁকি দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এই চরম নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আজ (রোববার) জনস্বার্থে আমি নিজে নোটিশ পাঠিয়েছি।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি একই সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় নির্বাচনি মাঠ এখন বারুদের স্তূপে পরিণত হয়েছে। এর প্রমাণস্বরূপ নোটিশে উল্লেখ করা হয় যে, গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি সন্ত্রাসীদের গুলিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না করে নির্বাচনের আয়োজন করা হলে তা প্রার্থীদের প্রাণনাশের কারণ হবে এবং সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিকদের জীবনের অধিকার লঙ্ঘন করবে।
নোটিশে এক গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, গণভোট একটি জাতীয় ঐকমত্যের বিষয় এবং রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ, তাই এতে সহিংস প্রতিযোগিতার সুযোগ নেই। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রক্রিয়া। তাই অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।
এ অবস্থায়, নোটিশের মাধ্যমে দাবি জানানো হয়েছে যে, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত দিনে জুলাই সনদের ওপর গণভোট যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হোক, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক লুণ্ঠিত সব অস্ত্র উদ্ধার এবং নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত রাখতে হবে।
নোটিশে আরও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, আগামী ৭ (সাত) দিনের মধ্যে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহামান্য হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে।
এর আগে, এ সংক্রান্ত বিষয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পরবর্তী সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা রিট আবেদন খারিজ হয়ে গেছে।
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতির মধ্যে ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ কংগ্রেসের পক্ষে দলটির মহাসচিব আইনজীবী মো. ইয়ারুল ইসলাম আবেদনটি করেছিলেন। তা গত সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজী ও বিচারপতি রাজিউদ্দিন আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন।




