অর্থনীতি
আমাদের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত উগান্ডার চেয়েও খারাপ: এনবিআর চেয়ারম্যান
দেশে প্রতি বছর রাজস্ব আয় বাড়লেও জিডিপির তুলনায় তার পরিমাণ খুবই কম। আফ্রিকার দেশ উগান্ডার জিডিপির তুলনায় রাজস্বের হার সাড়ে ১২ শতাংশ। আমরা অনেক সময় উগান্ডাকে নিয়ে হাসাহাসি করে থাকি। কিন্তু জিডিপির তুলনায় রাজস্ব আহরণে আমাদের অবস্থান উগান্ডার চেয়েও খারাপ বলে মন্তব্য করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
তিনি বলেন, রাজস্ব আয় বাড়ানো ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই।
মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব ভবনে ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘জিডিপির কোন অংশ থেকে রাজস্ব আদায় করা যাচ্ছে না, তা নিয়ে আমাদের গবেষণা করতে হবে। আমাদের ভ্যাট ও আয়কর থেকে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে। আয় বাড়াতে না পারলে আমরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ব। একটা পরিবারে যেমন আয় না বাড়লে ঋণের বোঝা বাড়ে, রাষ্ট্রের জন্যও এটা প্রযোজ্য। সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। তবে কোনো ধরনের জোর জবরদস্তি বা জুলুম করে আমরা আদায় করতে চাই না। যারা কর দেয় না, তাদের করের আওতায় আনতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আজ বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে ভ্যাট সপ্তাহ। প্রতি বছরের মতো এ বছরও ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভ্যাট সপ্তাহ পালন করা হবে। এবারের ভ্যাট সপ্তাহের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সময়মতো নিবন্ধন নিব, সঠিকভাবে ভ্যাট দিব’। নিবন্ধনকে গুরুত্ব দিয়ে এ বছরের ভ্যাট দিবস ১০ ডিসেম্বর (আজ) থেকে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী বিশেষ নিবন্ধন ক্যাম্পেইন পরিচালনা করবে এনবিআর। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে নতুন করে এক লাখ প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আনবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘বর্তমানে বহু প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধনের আওতার বাইরে রয়েছে। এর সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে ভ্যাট নিবন্ধনের আওতার সংখ্যাটা অনেক বেশি।’
চলতি অর্থবছরে নতুন করে ৫৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা এনবিআরের জন্য সব সময়ই চ্যালেঞ্জিং। লক্ষ্যমাত্রা যত বাড়বে চ্যালেঞ্জও তত বাড়বে। সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য আমরা কাজ করছি। এজন্য কর ফাঁকি রোধে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এনবিআরের যেসব গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে, তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা অনেক কর ফাঁকি উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছি এবং আগামীতেও এটি অব্যাহত থাকবে।
এমকে
অর্থনীতি
জনগণ ভ্যাট দিলেও অনেক সময় সরকার পায় না: অর্থ উপদেষ্টা
আমার দেশে একটা দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে ভ্যাট আদায় হলেও সরকারের কোষাগারে অনেক সময় পৌঁছায় না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দীন আহমেদ।
তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য ভ্যাট একটি মডার্ন সিস্টেম। এটা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। জিডিপির তুলনায় ভ্যাট তেমন নেই।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট উপলক্ষ্যে আয়োজিত সেমিনারে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভ্যাট যেন সরকারের কোষাগারে পৌঁছায়। আমার দেশে একটা দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে ভ্যাট আদায় হলেও সরকারের কোষাগারে অনেক সময় পৌঁছায় না। বিদেশে ভ্যাট দেওয়া ছাড়া ক্রয় করা যায় না। কিন্তু আমাদের দেশে সব স্থানে ভ্যাটের বিষয়টি পৌঁছায়নি।
সালেহউদ্দিন বলেন, কর জিডিপি এত কম। সরকারের সম্পদ না বাড়ালে কাজ করবো কীভাবে? রাজস্ব বাড়াতে হবে। কোনো কোনো দেশে কর জিডিপি অনুপাত ২৬ শতাংশের কারণে সে দেশ সেবা পায়। আমাদের দেশে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। যেমন– আমাদের দেশে যদি হাসপাতাল ও শিক্ষায় সেবা পাওয়া যায়, তাহলে মানুষ স্বেচ্ছায় রাজস্ব দিতে এগিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, এনবিআরকে বলবো পরিধি বাড়ান, আধুনিকায়ন করেন। সম্পূরক ডিউটি কমান। না হলে বেশি আগানো যাবে না। কর দিলাম, সেবা পাবো না। কর দিলে কী লাভ হলো এই প্রশ্ন যেন করতে না পারে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে ও থাকবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক বলেন, অনেকগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মোমেনটাম তৈরি হয়েছে। সেটাকে ধরে রাখতে হবে। অটোমেটেড করা বড় সাফল্য। ভ্যাট অব্যাহতি কমেছে। এর মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা তৈরি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক চেম্বার অফ কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের চেয়ারম্যান হলেন মাহবুবুর রহমান বলেন, ভ্যাটের বিরোধিতা শুরু থেকে ছিল। ভ্যাট আদায় যতটুকু হওয়ার কথা ছিল, সে তুলনায় পিছিয়ে আছি। তবে সম্ভাবনা রয়েছে। একদিকে ভোক্তাকে ভ্যাট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের ভ্যাট আদায় করে এনবিআরকে দিতে হবে। সেখানে কোনো ব্যত্যয় করা যাবে না।
ভ্যাট না দিলে কী হবে, সে বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে বলে জানিয়েছেন এফআইসিসিআইর ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আজমান।
এ দিকে ‘সময়মত নিবন্ধন নেব, সঠিকভাবে ভ্যাট দেব’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাজধানীসহ দেশের সব বিভাগীয় শহর ও কমিশনার কার্যালয়ে উদযাপন হচ্ছে জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ।
এমকে
অর্থনীতি
যুক্তরাজ্য থেকে এলএনজি কিনবে সরকার, ব্যয় ৪৩৬ কোটি টাকা
দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণে যুক্তরাজ্য থেকে এক কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে মোট খরচ হবে ৪৩৬ কোটি ৭ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের ৪৯তম সভায় এ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
জ্বালানি বিভাগের আওতাধীন পেট্রোবাংলা যুক্তরাজ্যের টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ ১০ দশমিক ৩৭ মার্কিন ডলার দরে এলএনজি ক্রয় করবে।
কর্মকর্তারা জানান, শীতকালে সর্বোচ্চ চাহিদা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার কৌশলের অংশ হিসেবে এ ক্রয় কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া আজকের (৯ ডিসেম্বর) ক্রয় কমিটির সভায় ‘হাওর এলাকায় ফ্লাইওভার সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’-এর একটি বড় নির্মাণ প্যাকেজ অনুমোদনের সুপারিশও করা হয়।
অনুমোদিত প্যাকেজ (সুনা/ধর্মপাশা/সিডব্লিউ-৬) এর আওতায় সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় ৩৪৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। এম এম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডকে যোগ্য দরদাতা হিসেবে সুপারিশ করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটি হাওর অঞ্চলের গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ও দুর্যোগ সহনশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করবে।
এমকে
অর্থনীতি
বেপজা ইজেডে ১ হাজার ২২৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে চীন
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে অবস্থিত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে (বেপজা ইজেড) পোশাক কারখানা স্থাপনে মোট ১০ দশমিক ৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে চীনা মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান উইং তাই গার্মেন্টস (বাংলাদেশ) কোম্পানি লিমিটেড। বাংলাদেশি মুদ্রায় (ডলার প্রতি ১২২ টাকা হিসেবে) যার পরিমাণ ১ হাজার ২২৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এই বিনিয়োগ সম্পন্ন হলে পোশাক কারখানাটিতে ৩ হাজার ১৫৮ জন বাংলাদেশির কাজের সুযোগ তৈরি হবে।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকার বেপজা কমপ্লেক্সে চীনা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) মধ্যে এ-সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বেপজার পক্ষে সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবীর এবং চীনা প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে মহাব্যবস্থাপক লি কিংকি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
চুক্তি অনুযায়ী, চীনা প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ধরনের পোশাক পণ্য যেমন- নারী, পুরুষ ও বাচ্চাদের জন্য বার্ষিক ১ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন পিস টপস, টি-শার্ট, ট্রাউজার ও শর্টস এবং ৪ দশমিক শূন্য ১ মিলিয়ন পিস জ্যাকেট, প্যান্ট ও শর্টস উৎপাদন করবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোয়াজ্জেম হোসেন উপস্থিত ছিলেন। তিনি চীনা প্রতিষ্ঠানটিকে স্বাগত জানান এবং ব্যবসা পরিচালনার জন্য নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতা ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ প্রদানে বেপজার পক্ষে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বেপজার সদস্য (অর্থ) আ ন ম ফয়জুল হক, নির্বাহী পরিচালক (এন্টারপ্রাইজ সার্ভিসেস) খুরশিদ আলম, নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) সমীর বিশ্বাস, নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) এএসএম আনোয়ার পারভেজ ও নির্বাহী পরিচালক (বিনিয়োগ উন্নয়ন-অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফজলুল হক মজুমদার এবং উইং তাই গার্মেন্টস (বাংলাদেশ)-এর কোম্পানি এডভাইজর এজেডএম আজিজুর রহমানসহ বেপজার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এমকে
অর্থনীতি
১৩ ব্যাংক থেকে ২০২ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
দেশে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহকে সহায়তা দিতে এবং বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যাংকগুলো থেকে অতিরিক্ত ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মঙ্গলবার ১৩টি ব্যাংক থেকে মোট ২০ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার (২০২ মিলিয়ন ডলার) কেনা হয়েছে।
এসময় প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২২.২৭ টাকা থেকে ১২২.২৯ টাকা পর্যন্ত। কাট-অফ রেট ১২২.২৯ টাকা, যা মাল্টিপল প্রাইস নিলাম পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ পর্যন্ত নিলাম পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক মোট ২৫১ কোটি ৪০ লাখ (২.৫১ বিলিয়ন ডলার) ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৩ জুলাই থেকে নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা শুরু করে। ওই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এখন পর্যন্ত এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আজ মঙ্গলবার মাল্টিপল প্রাইস অকশনের মাধ্যমে ১৩ ব্যাংক থেকে ২০২ মিলিয়ন বা ২০ কোটি ২০ লাখ ডলার কেনা হয়েছে। এসময় ডলারের দাম নির্ধারণ হয় প্রতি ডলারে ১২২.২৭ টাকা থেকে ১২২.২৯ টাকা পর্যন্ত।
এমকে
অর্থনীতি
দুর্নীতিবাজদের আগে মানুষ ঘৃণা করতো, এখন লাফ দিয়ে যাই সম্মান করতে: অর্থ উপদেষ্টা
দুর্নীতি প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, দুর্নীতি বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আগে দুর্নীতিগ্রস্ত লোককে সামাজিকভাবে অ্যাভয়েড করা হতো, মানুষ ঘৃণা করতো। তারা ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিতে পারতো না। আর এখন লাফ দিয়ে আমরা যাই বিয়ে দিতে, সম্মান জানাতে।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে শিল্পকলা একাডেমিতে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সমাজে দুর্নীতিকে ঘৃণা করতে হবে। বর্তমানে দুর্নীতিবাজ পুরষ্কৃত হচ্ছে। সমাজের সব ব্যক্তির পক্ষ থেকে দুর্নীতির তথ্য আসতে হবে। এনফোর্সমেন্ট একটি কঠিন বিষয়। বর্তমানে দুদক আগের চেয়ে বেশি দৃশ্যমান।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছা থাকলে সমাজে পচন ধরবে না, কমে আসবে দু্র্নীতি। আর্থিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বড় বিষয়। হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে, শাস্তি কী দেবেন? সারাজীবন কারাগারে থাকলেও সাজা হয় না। কারণ দেশের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। শুধু শাস্তি দিয়েই নয়, সামাজিকভাবে দুর্নীতিবাজদের প্রতিরোধ করলে দুর্নীতি কমে আসবে।
সভাপতির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, গত ১৫ বছরে যেসব দেশে আমাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ চলে গেছে, সেখানে আজ আমাদের কার্যকর যোগাযোগ নেই; এমনকি যোগাযোগের পথও খুঁজে পাচ্ছি না। বিদেশে আমাদের কষ্টার্জিত অর্থ ‘ডার্টি মানি’ হিসেবে পড়ে আছে, আর সেসব দেশে এই অর্থ উদ্ধার বা ব্যবস্থাপনার মতো লোকবলও আমাদের নেই।
মোমেন আরও বলেন, আগে মধ্যপ্রাচ্য ও আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে টাকা আসতো। এখন বাস্তবতা উল্টো—বাংলাদেশ থেকে অর্থ আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে যায় এবং পরে কোনো না কোনোভাবে আবার দেশে ফিরে আসে। এসব লেনদেনে বিভিন্ন ধরনের ‘ইনসেনটিভও’ থাকে। এত বড় কাঠামো একদিনে, এক মাসে বা এক বছরে বদলানো সম্ভব নয়।
ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, গত ১৫ বছর ধরে যারা অপরাধ করেছেন, আমাদের দেশের রাজনৈতিক এলিটরা কোটি টাকার বিনিময়ে তাদের সীমান্ত পার করে দিয়েছেন। এসব লোককে আপনারা নির্বাচিত করবেন কি না তা চিন্তা করতে হবে। এখন সময় এসেছে—এমন লোকদের আমরা নির্বাচিত করবো কি না এটা ভাবার।
তিনি বলেন, ভোট হলে শতভাগ লোক দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভোট দেবে, তারপরও দুর্নীতি দূর করা কঠিন। আগামী নির্বাচন পরবর্তী শাসন করার জন্য দুঃশাসক, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী রাখলে উন্নত দেশ পাওয়া কঠিন। ক্ষমতাচ্যুতরা পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের কে যারা সহযোগিতা করেছে টাকার বিনিময়ে, তাদের ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, গত ১৫ বছরে যেসব দেশে টাকা পাচার হয়েছে, সেসব দেশের সঙ্গে দুদকের যোগাযোগ নেই। এসব টাকা ফিরিয়ে আনার জন্য সেসব দেশে ফাস্ট সেক্রেটারি পদমর্যাদার কর্মকর্তা পাঠাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে অনেকেই দেশ ছেড়েছেন—পালিয়ে গেছেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে বায়তুল মোকাররমের খতিব—এটিই দেখায় দুর্নীতি কত গভীরে পৌঁছেছে। যদি শুরুতেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া যেতো, তাহলে আমাদের ১৫–১৬ বছরের ভোগান্তি হতো না।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী সম্পদ বিবরণী জমা দিয়েছিলেন। সেখানে কৃষিজমির পরিমাণ দেখানো হয়েছিল ৫ দশমিক ২১ একর। ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন যাচাই করেও তাতে সমস্যা পাওয়া যায়নি। কিন্তু তদন্তে দেখা যায়, জমি রয়েছে ২৯ একর। গাড়ির বিবরণীতেও অসংগতি পাওয়া যায়—অতিরিক্ত দুটি গাড়ি যুক্ত ছিল, যার একটি তৎকালীন এক এমপি এবং অন্যটি সাবেক যুব প্রতিমন্ত্রীর নামে, যা কিনা ‘পাঁচ নম্বর সুধা সদন’ এর নামে কেনা হয়েছিল এবং সরকারের ভর্তুকিও দেওয়া হয়নি।
মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, যদি তখনই এসব অসংগতি ধরা হতো, সেক্ষেত্রে তার নমিনেশন বাতিল হতো। নমিনেশন বাতিল হলে তিনি এমপি বা প্রধানমন্ত্রী—কিছুই হতে পারতেন না। এমনকি তার দল ক্ষমতায় আসতো কি না সেটাও প্রশ্ন ছিল।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক বলেন, বাংলাদেশে ১৪ থেকে ১৫ ধরনের দুর্নীতি রয়েছে। আমরা শুধু ঘুস নিয়ে কাজ করছি, দুর্নীতির অনেকগুলো ধরনের মধ্যে ঘুস মাত্র একটি ধরণ।
দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদ বলেন, দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে সরকারি সব প্রকল্পের ডিটেইলস অনলাইনে পাবলিশ করতে হবে। এমনকি কোনো তথ্য আপডেট হলেও তা জনগণকে জানাতে হবে। টাকা একবার চুরি হয়ে গেলে তা উদ্ধার করা কঠিন। বাংলাদেশে দুর্নীতি পদ্ধতি ভিন্ন, এখানে বিদেশি পদ্ধতি কাজ করবে না। আমাদের নিজস্ব মডেল তৈরি করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- দুদক কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী, দুদক সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম, দুদক মহাপরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী, আব্দুল্লাহ আল জাহিদ, আক্তার হোসেন, আবু হেনা মুস্তফা জামান, মোকাম্মেল হকসহ দুদকের পরিচালক, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, উপসহকারী পরিচালকসহ পাঁচ শতাতিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।




