ব্যাংক
লোকসান বা মূলধন ঘাটতির ব্যাংকে উৎসাহ বোনাস নয়: বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংকিং খাতের সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক যদি আর্থিক লোকসান বা মূলধন ঘাটতির মধ্যে থাকে, তবে তারা তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎসাহ বোনাস দিতে পারবে না। শুধুমাত্র প্রকৃত আয়-ব্যয়ের ভিত্তিতে অর্জিত মুনাফা থেকে বোনাস দিতে পারবে।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ নতুন নির্দেশনা জারি করেছে।
নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো শুধুমাত্র প্রকৃত আয়-ব্যয়ের ভিত্তিতে অর্জিত মুনাফা থেকেই বোনাস প্রদান করতে পারবে। সুতরাং, পুঞ্জিভূত মুনাফা বা অতিরিক্ত সঞ্চিতি থেকে বোনাস দেওয়া যাবে না। এ ছাড়া, ব্যাংকগুলোর মূলধন সংরক্ষণে কোনো ঘাটতি বা সঞ্চিতি ঘাটতি থাকলে, বোনাস দেওয়ার সুযোগ থাকবে না।
এ ছাড়া, ব্যাংকগুলোর ব্যাংকিং সূচকের উন্নতি এবং খেলাপি ঋণ আদায়ে অগ্রগতি থাকার বিষয়টি বোনাস প্রদানের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্যও আলাদা নির্দেশনা রয়েছে। যাতে ২০২৫ সালের ‘রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীদের উৎসাহ বোনাস প্রদান নির্দেশিকা’ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
সরকারের ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হিসাব করতে হবে প্রভিশন (ঋণ, অগ্রিম বা বিনিয়োগের মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধি) বাদ দিয়ে। অর্থাৎ, ব্যাংকগুলোর মুনাফা নির্ধারণ করতে হবে নিট মুনাফা হিসেবে, যা প্রভিশন সমন্বয় করার পর হিসাব করা হবে।
এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে উৎসাহ বোনাস দেওয়ার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলার অভাব ছিল। এই সমস্যা দূর করতে এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে, বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি অভিন্ন উৎসাহ বোনাস নির্দেশিকা তৈরি করে সরকার।
এমকে
ব্যাংক
নির্বাচনী প্রার্থীদের খেলাপি তথ্য প্রস্তুতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া প্রার্থীদের খেলাপি ঋণসংক্রান্ত তথ্য সঠিক ও সম্পূর্ণভাবে প্রতিবেদন আকারে তৈরি করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)-এর প্রতিনিধি দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বৈঠকটিতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে শিগগির চিঠি দেওয়ার কথা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।
নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের আর্থিক অবস্থান যাচাইয়ে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করতে প্রার্থীদের সব ঋণসংক্রান্ত তথ্য ‘দ্রুত, সঠিক ও পূর্ণাঙ্গভাবে’ প্রস্তুত করার ওপর জোর দিয়েছে ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে ঋণ শ্রেণীকরণ সংক্রান্ত প্রচলিত নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে এবং ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) ডেটাবেজে সব ঋণের সঠিক অবস্থা তুলে ধরতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, সিআইবি প্রতিবেদনে এখনো বেশ কিছু ঘাটতি রয়েছে। যেমন: ঋণগ্রহীতার পুরনো পরিচয় তথ্য, ঋণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অসম্পূর্ণ তথ্য এবং লেনদেন-বহির্ভূত ক্রেডিট কার্ড ফি বকেয়া থাকার কারণে ভুল শ্রেণীকরণ।
বার্ষিক ফি, নবায়ন ফি বা এ ধরনের লেনদেন-বহির্ভূত বকেয়া চার্জের কারণে যেসব ক্ষেত্রে ঋণকে খারাপ হিসেবে শ্রেণীকরণ করা হয়েছে, সেগুলো সংশোধনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ, বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী এসব দায় খেলাপি হিসেবে গণ্য হয় না।
ঋণদাতা ব্যাংকগুলোকে ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনের ধারা ৫ অনুযায়ী ‘খেলাপি’র সংজ্ঞা অনুসারে ঋণগ্রহীতা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কেওয়াইসি ও ই-কেওয়াইসি তথ্য অবিলম্বে হালনাগাদ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া, উচ্চ আদালতে বিচারাধীন সিআইবি-সংক্রান্ত মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইনজীবী নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, যেসব মামলার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে বা রায় হয়েছে, সেসব তথ্য সিআইবিকে জানাতে হবে, যাতে ডাটাবেজ যথাযথভাবে হালনাগাদ করা যায়।
এমকে
ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার ডাউন, ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে ভোগান্তি
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার ডাউন হয়ে পড়ায় ইন্টারনেট ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবায় ভোগান্তিতে পড়েছেন বহু গ্রাহক। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টা থেকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে সার্ভার অচল হয়ে যায় বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে ঠিক কখন সার্ভার স্বাভাবিক হবে তা জানাতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। তিনি শুধু জানিয়েছিলেন, সমস্যা সমাধানে কাজ চলমান।
সার্ভার ডাউনের প্রভাবে চেক ক্লিয়ারিং, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পেমেন্ট নিষ্পত্তি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি কার্ডভিত্তিক আন্তঃব্যাংক লেনদেন পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) ও সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। ফলে গ্রাহকদের আন্তঃব্যাংক লেনদেন, অনলাইন পেমেন্ট ও বিভিন্ন ব্যাংকিং সেবায় জটিলতা দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন ব্যাংক গ্রাহককে নোটিশ দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রান্তে এনপিএসবি সেবা সাময়িকভাবে অকার্যকর রয়েছে। সিস্টেম দ্রুত পুনরায় চালু করার চেষ্টা চলছে। এই অসুবিধার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও ভোল্টেজের ওঠা-নামার কারণে পুরো সিস্টেম অফ হয়ে গেছে। বিকেল ৪টার পর থেকেই সমস্যা শুরু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সব ধরনের আন্তঃব্যাংক লেনদেন আপাতত বন্ধ, তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ টিম সমস্যাটি সমাধানে কাজ করছে।
সার্ভার পুরোপুরি ঠিক হতে কত সময় লাগবে তা নিশ্চিত করা না গেলেও, তিনি আশা প্রকাশ করেন শিগগির সেবাগুলো স্বাভাবিক হবে।
ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হলেন আরিফুজ্জামান
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান নির্বাহী পরিচালক (ইডি) পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। গত ১ ডিসেম্বর তাকে এই পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর আগে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক, চট্টগ্রাম অফিসে পরিচালক (বৈদেশিক মুদ্রা) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আরিফুজ্জামান ১৯৯৯ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মজীবন শুরু করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদানের আগে তিনি বেসরকারি কমার্শিয়াল ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তিনি চট্টগ্রাম অফিসে যোগদানের আগে বিএফআইইউতে পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও তিনি ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপাভিশন, এসএমই, কৃষি ঋণ পরিদর্শন বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
শিক্ষাজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। দাপ্তরিত প্রয়োজনে তিনি বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও প্রশিক্ষণ উপলক্ষে ভারত, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, থাইল্যাল্ড, ইন্দোনেশিয়া, সুইজারল্যান্ড, ফিলিপাইন ও শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন।
ব্যাংক
‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ থেকে টাকা তোলা যাবে আগামী সপ্তাহ
দেশের ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতা কাটিয়ে আস্থা ফেরাতে পাঁচ সমস্যাগ্রস্ত ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে গঠিত ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’ আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে। সোমবার (১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন ও লাইসেন্স পাওয়ার পর মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) থেকে ব্যাংকটির কার্যক্রম চালু হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এ উদ্যোগ ইসলামী ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে এবং দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা আমানত ফেরতের প্রক্রিয়া গতি পাবে। আগামী সপ্তাহ থেকেই গ্রাহকদের দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত ফেরত দেওয়া শুরু হবে। এরপর বড় অঙ্কের আমানত পর্যায়ক্রমে ফেরতের জন্য রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হচ্ছে
পাঁচ ব্যাংক একীভূত হয়ে নতুন ব্যাংক
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক— এই পাঁচ ব্যাংককে একীভূত করে দেশের সর্ববৃহৎ সরকারি মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংকটির সৃষ্টি। গত রবিবার গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ বোর্ড সভায় একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত হয়। পরে সোমবার নতুন প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স হস্তান্তর করা হয়।
মূলধন কাঠামো
‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’র পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ২০ হাজার কোটি টাকা, আর অমানতকারীদের শেয়ার রূপান্তর থেকে আসবে ১৫ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন রাখা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা— যা দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মূলধন কাঠামোর একটি।
চেয়ারম্যানের বক্তব্য
ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি বলেন, ‘সরকারি মালিকানায় নতুন একটি ইসলামী ব্যাংক চালু হওয়া জাতির জন্য ইতিবাচক বার্তা। আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক জাতির কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠবে।’
মঙ্গলবার দুপুরে গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি জানান, ব্যাংকের ভিশন, মিশন, আইন-কানুন ও সার্বিক কার্যক্রম পর্যালোচনাই ছিল বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য। সামনে পাঁচ ব্যাংকের আইনানুগ একীভূতকরণ এবং পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে।
উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
মতিঝিলের সেনা কল্যাণ ভবনে স্থাপিত প্রধান কার্যালয়ে দাপ্তরিক কাজ শুরু হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর নতুন ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
দেশের ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন ও গ্রাহক আস্থা পুনরুদ্ধারের বড় পদক্ষেপ হিসেবে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’কে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যাংক
৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের অনুমোদন দিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক
নয়টি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের (লিকুইডেট) প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে ব্যাংক রেজোলিউশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫–এর আওতায় এ কার্য সম্পাদন করা হবে।
গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য নিশ্চিত করন। গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড গতকাল এই অনুমোদন দিয়েছে বলে জানান তিনি।
ওই কর্মকর্তা জানান, এই সিদ্ধান্তের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন আনুষ্ঠানিকভাবে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ, লিকুইডেটর নিয়োগ, সম্পদ বিক্রি এবং প্রাপ্ত অর্থ পাওনাদারদের মধ্যে বণ্টন করতে পারবে।
ব্যাংক রেজোলিউশন অর্ডিন্যান্সে আর্থিক সংকটে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে একীভূত করা, পুনর্গঠন করা বা বন্ধ করা হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বিক্রি করে পাওনাদারদের টাকা কীভাবে পরিশোধ করা হবে তাও এতে উল্লেখ আছে।
দুর্বল পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূতকরণের প্রক্রিয়ার পরপরই এই সিদ্ধান্ত এলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড ইতোমধ্যে নতুনভাবে একীভূত সম্মিলিত ইসলামি ব্যাংকের লাইসেন্স দিয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যাংক একীভূতকরণ। নতুন প্রতিষ্ঠানটি এখন দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক হতে চলেছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া এবং ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার এই উদ্যোগের মাধ্যমে বোঝা যায়, আর্থিক খাতে দীর্ঘ বছরের অবনতির পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা এখন অনেক কঠোর ও সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে শুরু করেছে।
নয়টি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো- এফএএস ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, প্রিমিয়ার লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, আভিভা ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৫২ শতাংশ এই নয়টি প্রতিষ্ঠানের। গত বছরের শেষে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা।
এই নয়টির মধ্যে আটটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারপ্রতি গড় নিট সম্পদমূল্য ঋণাত্মক ৯৫ টাকা। এখান থেকে বোঝা যায়, সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া তাদের পক্ষে দায় পরিশোধ করা প্রায় অসম্ভব। সহজ ভাষায় বললে, প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ বিক্রি করে সব ঋণ শোধ করলেও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কিছুই থাকবে না, অথবা থাকলেও তা খুবই সামান্য।
আমানতকারীরা অগ্রাধিকার পাবেন
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক এই অনুমোদন দিয়েছে। অনেক আমানতকারীর স্কিমের মেয়াদপূর্তি হওয়ার পরও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। তারা মাসের পর মাস অপেক্ষা করছেন, এমনকি বছরের পর বছর অপেক্ষা করছেন কেউ কেউ।
শনিবার এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক খুব শিগগিরই লিকুইডেটর নিয়োগ করবে।
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘লিকুইডেশন প্রক্রিয়া শুরুর আগে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। সরকার ইতোমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার মৌখিক অনুমোদন দিয়েছে।’
‘আমানতকারীদের রক্ষা করতেই তারা এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ (লিকুইডেশন) করার পথে এগোচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকদের আমানত ফেরত দেওয়া আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার,’ বলেন তিনি।
আভিভা ফাইন্যান্সের গ্রাহক খলিল আহমেদ খান (৬৪) জানান, তার ২৩ লাখ টাকার আমানতের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে জানুয়ারিতে। কিন্তু তিনি এখন পর্যন্ত পেয়েছেন মাত্র ৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।
তিনি প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বহুবার যোগাযোগ করলেও কোনো ফল হয়নি বলে জানান।
উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত খলিল আহমেদ খান বলেন, তারা টাকা দিতে দেরি করায় চিকিৎসা খরচ জোগাড় করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
‘আমার ঋণ পরিশোধ ও চিকিৎসার খরচ মেটাতে জরুরি ভিত্তিতে টাকার দরকার,’ বলেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক দুই ধরনের আমানতকারী মিলিয়ে নয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মোট ১৫ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার আমানত আটকে আছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা একক গ্রাহকের এবং ১১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা ব্যাংক ও করপোরেট আমানতকারীর।
একক আমানতকারীর আমানত আটকে থাকার দিক থেকে শীর্ষে আছে পিপলস লিজিং, প্রতিষ্ঠানটিতে ১ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা আটকে আছে। এরপর আছে—আভিভা ফাইন্যান্স ৮০৯ কোটি টাকা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ৬৪৫ কোটি টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্স ৩২৮ কোটি টাকা, এফএএস ফাইন্যান্স ১০৫ কোটি টাকা।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলেন, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাতের এই সংকটের গোড়ায় রয়েছে বহুদিনের সমস্যা। ব্যাংকের তুলনায় এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে নজরদারি কম ছিল। ফলে বছরের পর বছর ধরে কেলেঙ্কারি, দুর্বল শাসনব্যবস্থা ও অনিয়ম জমতে জমতেই আজকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এই খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান সম্পদের পরিমাণ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো এবং লোকসান কম দেখানোর মাধ্যমে তাদের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা লুকিয়ে রেখেছিল।
এ বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন্স ডিপার্টমেন্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের সংক্ষিপ্ত তালিকা করে। ওই তালিকায় এই নয়টি প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল এবং এবং নামগুলো ব্যাংক রেজোলিউশন ডিপার্টমেন্টে পাঠানো হয়।
এর আগে ১০ মাসের একটি মূল্যায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০টি দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে ‘লাল’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করে।
তালিকায় থাকা বাকি ১১টি প্রতিষ্ঠান হলো—সিভিসি ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, হজ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, আইআইডিএফসি, উত্তরা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল।
এমকে




