সারাদেশ
শিক্ষক ছাড়াই পরীক্ষা দিলো প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা
সহকারী শিক্ষকদের চলমান কর্মবিরতির মধ্যেই ফেনীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার হলে শিক্ষক ছাড়াই পরীক্ষায় অংশ নিতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। কেবল প্রধান শিক্ষক একাই পরীক্ষা গ্রহণের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করছেন। পরীক্ষা নিতে বিভিন্ন স্কুলে ছুটতে দেখা গেছে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের। সহযোগিতা করেছেন অভিভাবকরাও।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) ও মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) ফেনীর বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ফেনী সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেখা গেছে, সহকারী শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে বসে কর্মবিরতি পালন করছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী ওয়াজি উল্লাহ পরীক্ষার হলে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র বিতরণ করে চলে গেছেন। আর শিক্ষার্থীরা যে যার মতো করে পরীক্ষা দিচ্ছে। আবার কোন কোন হল ঘুরে দেখা গেছে, পরীক্ষা নিতে সহযোগিতা করছেন অভিভাবকরা। প্রথম দিন ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বুঝতে সমস্যা হলেও যে যার মতো করে খাতায় উত্তর লিখেছে। এমন হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির চিত্র দেখা গেছে ফেনীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে। তবে কিছু কিছু বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকরা পরীক্ষা নিতে প্রধান শিক্ষককে সহযোগিতা করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার ফেনীর ৫৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ হাজার ৪৫ জন সহকারী শিক্ষক কর্মবিরতি পালন করছেন। আগামী ১০ ডিসেম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরীক্ষা গ্রহণের এমন চিত্র দেখে হতাশ অভিভাবকরা।
এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেনী সরকারি মডেল স্কুলের একাধিক অভিভাবক জানান, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মতো প্রাথমিকেও পরীক্ষা গ্রহণ করা উচিত। এজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে দাবি জানান তারা।
আরেক অভিভাবক রেহানা আক্তার জানান, ইংরেজি প্রশ্নপত্র বুঝতে অনেকের কষ্ট হয়েছে। তাদের সহযোগিতা করার মত কোন শিক্ষক ছিল না। এভাবে পরীক্ষা নিয়ে কি মূল্যায়ন হবে? প্রাথমিকে পড়াশোনা করা সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা। এভাবে চলতে থাকলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতি অভিভাবকদের বিমুখতা তৈরি হবে এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও কমে যাবে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক স্বপ্না মজুমদার বলেন, স্কুলে ডেপুটিশনসহ ১০ জন সহকারী শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। দাবি আদায়ে আমাদের কর্মবিরতি চলছে। চাকরির শেষ পর্যায়ে এসেও কোন পদোন্নতি হয়নি। সহকারী শিক্ষকরা বৈষম্যের শিকার।
বিদ্যালয়ের আরেক সহকারী শিক্ষক নাজমুল ইসলাম বলেন, ভোটগ্রহণ, ভোটার তালিকা, টিকাদানসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন সহকারী শিক্ষকেরা। অথচ আজকে আমরা বৈষম্যের শিকার, আমরা অবহেলিত। দশ বছর পরও আমরা টাইম স্কেল পাইনি।
এক্ষেত্রে আমাদের চাকরির শর্ত পূরণ হচ্ছে না। আমাদের সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা নবম গ্রেড ও প্রধান শিক্ষকরা ১০ম গ্রেড পাচ্ছে। আমাদের ক্ষেত্রে শুধু অজুহাত দেওয়া হচ্ছে।
প্রাথমিক শিক্ষা সমিতির কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও গোহাড়ুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দিন খোন্দকার জানান, ডিজি মহোদয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সুষ্ঠভাবে প্রথম দিনের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। সাময়িক সমস্যা হলেও আমরা চেষ্টা করছি সুন্দরভাবে পরীক্ষা নিতে।
এ প্রসঙ্গে দাগনভূঞা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলার ১০২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতির মধ্যে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কয়েকটি বিদ্যালয় থেকে অভিযোগ এসেছে। ওইসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দীন আহাম্মদ জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকরা পরীক্ষা নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে অভিভাবক ও অফিস সহকারীরা সহযোগিতা করেছে। আশা করি এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।
সহকারী শিক্ষকদের উপস্থিতি ছাড়া কিভাবে পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে এ প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফিরোজ আহাম্মদ জানান, প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা পরীক্ষা নিচ্ছেন। যেসব বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা বিশৃঙ্খলা করেছে অভিযোগ এলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সারাদেশ
কুড়িগ্রামে বাড়ছে শীতের তীব্রতা, তাপমাত্রা নেমেছে ১২ ডিগ্রিতে
গত তিনদিন ধরে ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেছে কুড়িগ্রাম, তবে আজ কুয়াশা কিছুটা কমেছে। কুয়াশা কমলেও শীতের তীব্রতা বাড়ছে। এসময় জেলাটিতে তাপমাত্রার সর্বনিম্ন রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড নির্ণয় করা হয়। সেইসঙ্গে ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইয়ে এ জেলায়। উত্তরের হিমেল হাওয়ায় সন্ধ্যার পর থেকে সকাল অব্দি অনুভূত হচ্ছে প্রচন্ড ঠান্ডা।
এদিকে সন্ধ্যার পর হতে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত শীতের তিব্রতা থাকায় দুর্ভোগে পড়েছে দরিদ্র, দিনমুজুর ও ছিন্নমুল মানুষ।
নাগেশ্বরী উপজেলার কেদার ইউনিয়নের চর বিষ্ণুপুর এলাকার দিনমুজুর ফজর আলী জানান, তিন চারদিন থেকে ঠান্ডা বেশী পড়ায় সকালে কাজে যেতে তাদের কষ্ট হচ্ছে। বেলা করে তাদের কাজে যেতে হচ্ছে।
বাহের কেদার এলাকার ভ্যানচালক আলমগীর হোসেন জানান, সকালে ভ্যান নিয়ে বেরে হলে হাত পা ঠান্ডায় জমে আসে। অনেক সময় কুয়াশার জন্য কিছু দেখা যায় না। তাই বেলা বাড়লে কাজে যেতে হচ্ছে ফলে আগে তুলনায় আয় কমেছে তাদের।
অটোরিকশা চালক লুবেল মিয়া বলেন, শীত বেশী পড়ায় যাত্রী কমে গেছে।
রাজারহাট আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, মঙ্গলবার সকাল ৬ টায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, দিনদিন কুয়াশা আর ঠান্ডা দুটোই বাড়বে এ জেলায়।
এমকে
সারাদেশ
কক্সবাজারে ৪.৯ মাত্রার ভূমিকম্প
কক্সবাজার ও আশেপাশের এলাকায় ৪.৯ মাত্রার মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সোমবার (১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা ৫৭ মিনিটে কক্সবাজার ও পার্শ্ববর্তী পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম শহরে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
কক্সবাজার শহর, উখিয়া, চকরিয়ায় স্থানীয়রা ভূমিকম্পন অনুভূত হয়েছে বলে জানিয়েছে। তবে এতে এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, এ ভূমিকম্পনের স্থায়িত্ব কয়েক সেকেন্ড ছিল।
ভূমিকম্পের তথ্য প্রদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) তাদের ওয়েবসাইটে সর্বশেষ তথ্যে জানিয়েছে, ৪.৯ মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলের নাচুয়াংয়ে।
একই তথ্যে ১০৬.৮ কিলোমিটারের গভীরতা সম্পন্ন এই ভূমিকম্পে প্রভাবিত অঞ্চল হিসেবে দেখানো হয়েছে মিয়ানমারের সাগাইং, উত্তর পূর্ব ভারত এবং বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, ঢাকা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগ।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিকাল সার্ভে ইউএসজিএসও এর পক্ষ থেকেও একই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
উখিয়ার কলেজ শিক্ষক মৃদুল শর্মা জানান, ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়, মনে হচ্ছিলো কম্পনের তীব্রতা বেশি।
কক্সবাজারের শহরের গৃহিণী জোবাইদা করিম বলেন, আচমকা ভূমিকম্পে পুরো বিল্ডিং কেঁপে উঠে। কিছুটা ভয় পেয়েছি, তবে আল্লাহ রক্ষা করেছেন।
গত কয়েক দিনে এখন পর্যন্ত অষ্টমবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে বাংলাদেশে, যার শুরু হয়েছিল গত ২১ নভেম্বর শুক্রবার। সেদিন নরসিংদীতে উৎপত্তি হওয়া ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা। ভূমিকম্পে নিহত হন ১০ জন। এরপর থেকে মাঝে মধ্যে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েই চলেছে।
এমকে
সারাদেশ
বিদ্যুৎ উৎপাদনে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের রেকর্ড
জাতীয় পর্যায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট। নভেম্বর মাসে ৭০০ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যা বাংলাদেশের যে কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে সর্বোচ্চ মাসিক উৎপাদন।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে বিআইএফপিসিএল’র উপমহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানান।
তিনি আরও জানান, মাসব্যাপী বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ১১.৫ শতাংশ অবদান রেখে ধারাবাহিকভাবে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটা প্ল্যান্টের উচ্চ শিল্প ক্ষমতা, দক্ষ কয়লা ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক কর্ম পরিকল্পনার ফল। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এর আগে আগস্ট মাসে কেন্দ্রটি ৭৭১.৭০ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে, যা ৭৮.৫৮% প্ল্যান্ট লোড ফ্যাক্টর (পিএলই) অর্জিত হয়েছে। এটি দেশের মোট ১০ হাজার ১০০ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৭.১৫% অবদান।
সারাদেশ
সাবেক ইউএনওর বিরুদ্ধে এতিমের গোশত আত্মসাতের অভিযোগ
ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনের এনসিপি মনোনীত প্রার্থী মিয়াজ মেহরাব তালুকদার মুক্তাগাছার সদ্য সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে এতিমদের জন্য বরাদ্দকৃত গোশত আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন।
নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক পোস্টে মিয়াজ মেহরাব তালুকদার লিখেছেন, “এতিমের গোশত চুরি মুক্তাগাছা উপজেলা ইউএনওর।” তিনি দাবি করেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে মুক্তাগাছাবাসী উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দুর্নীতি সম্পর্কে তাঁকে নিয়মিত অবহিত করে আসছেন। তবে এলাকার পরিস্থিতি ও দলীয় নেতাকর্মীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তিনি প্রকাশ্যে কোনো পদক্ষেপ নেননি।
মেহরাব তালুকদারের বক্তব্য অনুযায়ী, সৌদি আরব থেকে প্রতিবছর যে উট ও দুম্বার গোশত এতিমদের জন্য বাংলাদেশে পাঠানো হয়, তা উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় এতিমখানায় বিতরণ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু মুক্তাগাছার ইউএনও সেই গোশত বিতরণের পরিবর্তে নিজেরা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি আরও দাবি করেন, ইউএনও এবং তাঁর অধীন কয়েকজন কর্মকর্তা এতিমদের গোশত নিজেরা খেয়েছেন।
ইউএনও নাকি ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যও গোশত নিয়ে গেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আরও বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ স্থানীয়দের কাছ থেকে তিনি পেয়েছেন।
এমনকি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়ার অভিযোগও স্থানীয়দের কেউ কেউ তুলেছেন। মেহরাব তালুকদার বলেন, “শত শত এতিমের হক নষ্টের ঘটনা শুনে আর চুপ থাকা গেল না। এতিমের হক নষ্টের মতো নিকৃষ্ট পাপ আর কিছু হতে পারে না।”
অভিযোগ প্রকাশের পর মুক্তাগাছার বহু মানুষ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে জানান মেহরাব তালুকদার। তিনি বলেন, স্থানীয়রা যেকোনো মূল্যে এই ঘটনার বিচার চান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি তুলেছেন। তিনি এই বিষয়ে সরকারিভাবে অবিলম্বে তদন্ত দাবি করে বলেন, “এতিমের হক আত্মসাৎকারী কাউকে রাষ্ট্রের দায়িত্বে রাখা যায় না। জনগণের সম্পত্তি আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”
এছাড়া ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সহযোদ্ধা ও জুলাই বিপ্লবের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মুক্তাগাছার এসব এতিমের অধিকার রক্ষায় যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পোস্টের শেষে তিনি পবিত্র কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে এতিমের সম্পদ আত্মসাতের কঠিন শাস্তির কথাও উল্লেখ করেন। অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সাবেক ইউএনও বা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এমকে
সারাদেশ
সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল শুরু, তিন জাহাজে যাচ্ছেন ১১০০ পর্যটক
দীর্ঘ নয় মাস বন্ধ থাকার পর ১ ডিসেম্বর থেকে পুনরায় চালু হয়েছে কক্সবাজার–সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল। মৌসুমের প্রথম দিন সোমবার সকাল ৭টায় নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট থেকে ১,১০০ পর্যটক নিয়ে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা দেয় এমভি বার আউলিয়া, এমভি কর্ণফুলী ও কেয়ারি সিন্দাবাদ।
জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ট্যুরিস্ট পুলিশের কঠোর তদারকিতে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ন্ত্রণ ও প্লাস্টিক ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। সচেতনতার অংশ হিসেবে প্রথম দিন যাত্রীদের হাতে অ্যালুমিনিয়ামের পানির বোতল তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক এম এ মান্নান।
সকালে ঘাটে এসে পর্যটকদের স্বাগত জানান জেলা প্রশাসকসহ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম, কক্সবাজার সদরের ইউএনও নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ। তারা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন তদারকি করেন।
সরকার ঘোষিত ১২ দফা নির্দেশনা মেনে সোমবার (১ ডিসেম্বর) থেকে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপনের সুযোগ থাকছে। জাহাজ কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রথম দিনের সব টিকিট আগেই বিক্রি হয়েছিল এবং তিনটি জাহাজে মোট ১,১০০ যাত্রী দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হন।
‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (স্কোয়াব)-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, মৌসুমের প্রথম যাত্রার সব প্রস্তুতি আগে থেকেই সম্পন্ন ছিল। প্রশাসনের সহযোগিতায় পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ পরিবেশে যাত্রা শুরু করা গেছে। আগামী মৌসুমে কমপক্ষে চার মাস রাত্রিযাপনের সুযোগ মিললে জাহাজ মালিকরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গত ১ নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক প্রবেশ উন্মুক্ত হলেও রাত্রিযাপন নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে এতদিন কোনো জাহাজ চলাচল করেনি। এবারও নুনিয়ারছড়া জেটি থেকে চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন।
প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিদিন সকাল ৭টায় জাহাজ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছাড়বে এবং পরদিন দুপুর ৩টায় কক্সবাজারে ফিরবে। টিকিট সংগ্রহ বাধ্যতামূলকভাবে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অনুমোদিত অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে করতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকবে, যা ছাড়া কোনো টিকিট বৈধ হিসেবে গণ্য হবে না। জেটিঘাটে টিকিট যাচাইয়ে ২০ জন ভলান্টিয়ার দায়িত্ব পালন করছেন; একইভাবে ভলান্টিয়ার থাকবেন সেন্টমার্টিনেও।
দীর্ঘ বিরতির পর পর্যটকদের আগমনে সেন্টমার্টিনে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। তবে জেটিঘাটের নির্মাণকাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএস রহমান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি আলী হায়দার জানান।
দ্বীপের ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম জানান, গত এক দশক ধরে পর্যটনই স্থানীয়দের প্রধান জীবিকা। যেকোনো সংকট সত্ত্বেও পর্যটকদের আতিথেয়তায় ঘাটতি রাখা হবে না।
সেন্টমার্টিনের নাজুক প্রতিবেশ ব্যবস্থা রক্ষায় ঘোষিত ১২ দফা নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে—রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো নিষেধ, উচ্চ শব্দে অনুষ্ঠান-বারবিকিউ নিষিদ্ধ, কেয়াবনে প্রবেশ বা কেয়াফল সংগ্রহ নিষিদ্ধ, কাছিম–পাখি–রাজকাঁকড়া–প্রবালসহ যেকোনো জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন সকল কার্যক্রম বন্ধ, মোটরচালিত যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ এবং প্লাস্টিকমুক্ত দ্বীপ উদ্যোগের অংশ হিসেবে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত। পরিবেশ অধিদপ্তর পর্যটকদের বিনামূল্যে অ্যালুমিনিয়াম বোতল সরবরাহ করছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহমুদ পাশা বলেন, প্লাস্টিক দূষণ কমাতে অ্যালুমিনিয়াম বোতল ব্যবহারে কঠোরতা আনা হয়েছে। এটি সফলভাবে কার্যকর হলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক এম এ মান্নান বলেন, “সেন্টমার্টিন আমাদের জাতীয় সম্পদ। পরিবেশ রক্ষা ও দায়িত্বশীল পর্যটনের স্বার্থে নির্দেশনা মেনে চলা সবার দায়িত্ব।” প্রশাসন, জাহাজ মালিক ও সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত তদারকির মধ্য দিয়ে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষা নিশ্চিত করা হবে বলেও তিনি জানান।
এমকে



