জাতীয়
ইসির সঙ্গে ৮১ পর্যবেক্ষকের সংলাপ আজ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশীয় ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার সঙ্গে আজ সংলাপে বসবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সকাল ও বিকেল দুই ভাগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ. এম. এম. নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে, সোমবার (২৪ নভেম্বর) ইসি সচিবালয়ের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) ও বিকল্প তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. আশাদুল হক এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ইসির চলমান সংলাপের অংশ হিসেবে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিদের সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শ গ্রহণের লক্ষ্যে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ৪০টি এবং দুপুর ২টা থেকে ৪১টিসহ মোট ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার সঙ্গে মতবিনিময় সভা হবে।
আশাদুল হক আরও বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে সংলাপে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবলায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংলাপে উপস্থিত থাকবেন।
প্রসঙ্গত, জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাযথভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দল, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, নারী নেত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে মতবিনিময় করেছে ইসি।
এর অংশ হিসেবে গত ১৩, ১৬, ১৭ ও ১৯ নভেম্বর দুই সেশনে অন্তত ৪৭টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয়
পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে ৩০ হাজার প্রবাসীর নিবন্ধন
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন দেশ থেকে ভোট দেওয়ার জন্য ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে প্রবাসীদের নিবন্ধন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৬১৪ জনে। নির্ধারিত সময় শেষে সংশ্লিষ্ট প্রবাসীদের ঠিকানায় ডাকযোগে ব্যালট পেপার পাঠাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে পুরুষ ২৬ হাজার ৭৭৮ জন এবং নারী ৩ হাজার ৮৬২ জন।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সকালে ইসির ওয়েবসাইটের তথ্য থেকে বিষয়টি জানা গেছে।
গত ১৯ নভেম্বর থেকে পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের নিবন্ধন শুরু হয়েছে, চলবে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত। আর ২৩ নভেম্বর রাত ১২টার পর (২৪ নভেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশিদের নিবন্ধন, চলবে একই সময় পর্যন্ত।
এই সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ৮ হাজার ৩৭৮ জন, জাপান থেকে ৫ হাজার ৬২৪ জন, আমেরিকা থেকে ৪ হাজার ৪০ জন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ৩ হাজার ৪৯২ জন, কানাডা থেকে ২ হাজার ৪৯৪ জন আবেদন করেছে।
যে দেশগুলোতে নিবন্ধন চলছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, মিশর, মোজাম্বিক, লিবিয়া, মরিশাস, হংকং, ব্রাজিল, উগান্ডা, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়া, বতসোয়ানা, কেনিয়া, রুয়ান্ডা, আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, তানজানিয়া, সোমালিয়া, ঘানা, গিনি, মরক্কো, দক্ষিণ সুদান, চিলি, সিয়েরা লিওন, ইকুয়েডর, তাইওয়ান, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, গাম্বিয়া, পেরু, জিম্বাবুয়ে ও যুক্তরাষ্ট্র। এসব দেশ থেকে মোট নিবন্ধন করেছেন সকাল পৌনে দশটা পর্যন্ত ২৯ হাজার ১০০ প্রবাসী।
সৌদি আরবের প্রবাসীরা ৪ থেকে ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে নিবন্ধন করতে পারবেন। দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা ৯ থেকে ১৩ ডিসেম্বর, মধ্যপ্রাচ্যের (সৌদি বাদে) অন্যান্য দেশের প্রবাসীরা ১৪ থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন। বাংলাদেশে অবস্থানরত (ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি, সরকারি চাকরিজীবী, কয়েদি ও অন্যান্য দেশে বসবাসরত ভোটাররা) ১৯ থেকে ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে নিবন্ধন করতে পারবেন।
জাতীয়
রাজনীতিতে জড়িত কাউকে পর্যবেক্ষক করা যাবে না: সিইসি
রাজনীতিতে জড়িত কাউকে পর্যবেক্ষক হিসেবে না দিতে পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় নির্বাচন ভবনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে দিনব্যাপী সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।
সংলাপের উদ্বোধনী বক্তব্যে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন জাতিকে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তিনি স্বীকার করেন, অতীতের ভুল-ভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে কমিশন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়। আমাদের এজেন্ডা একটাই, একটি ক্রেডিবল ইলেকশন জাতিকে উপহার দেওয়া। একটি ভালো নির্বাচন আয়োজন আমাদের দায়িত্ব। ভালো নির্বাচনের জন্য সবার সহযোগিতা লাগবে বলে জানান তিনি।
সিইসি পর্যবেক্ষকদের ভোটের মাঠের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সক্রিয় সহযোগিতা চেয়েছেন। পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর প্রতি তিনি দুটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
নাসির উদ্দিন বলেন, যারা নতুন পর্যবেক্ষক সংস্থা, তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে। পর্যবেক্ষণের জন্য যাদের নিয়োগ দেওয়া হবে, তারা যেন রাজনীতি ও কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না থাকেন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই।
জাতীয়
রাজধানীতে ৩০০ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত: রাজউক চেয়ারম্যান
ঢাকা শহরে ৩০০ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) ভবনে ‘ভূমিকম্পের ঝুঁকি হ্রাসে প্রস্তুতি ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার ও মতবিনিময় সভা শেষে এ তথ্য জানান রাজউক চেয়ারম্যান।
ঢাকায় গত শুক্র ও শনিবার চার দফা ভূমিকম্পের পর সোমবার দুপুরে এই সেমিনার আয়োজন করে রাজউক। যদিও রাজধানীর ভবনগুলো ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী নির্মাণ নিশ্চিত করা এবং নগর পরিকল্পিত করার দায়িত্ব রাজউকের।
ওই সভায় সরকারে দুজন উপদেষ্টা, রাজউকের চেয়ারম্যান, জরুরি সেবা প্রদানকারী সংস্থার প্রতিনিধি, পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিসহ ভূমিকম্প ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, রাজধানীতে কয়েক দফায় ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় গত শুক্রবার পর্যন্ত ৩০০টি ছোট-বড় ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে।
রাজউকের যেসব কর্মকর্তা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নকশা অনুমোদনের সঙ্গে যুক্ত, তাদের তালিকা রাজউক প্রকাশ করবে কি না, রাজউক চেয়ারম্যানকে এমন প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক।
জবাবে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, তারা এর মধ্যেই জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন। নিয়মবহির্ভূত এবং নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণে রাজউক ও ভবন মালিক উভয়েরই দায় আছে। প্রথমে দায়ী ভবনমালিক, এরপর কর্মকর্তা।
জাতীয়
ঢাকায় ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে ৪০ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে
টাঙ্গাইলের মধুপুর ফল্ট বা ফাটলরেখায় ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরের সাড়ে ৮ লাখ বা ৪০ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে। এতে দুই লাখের বেশি মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা আছে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) নিজেদের একটি সমীক্ষার বরাত দিয়ে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। যদিও রাজধানীর ভবনগুলো ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী নির্মাণ নিশ্চিত করা এবং নগর পরিকল্পিত করার দায়িত্ব রাজউকের।
রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) ভবনে ‘ভূমিকম্পের ঝুঁকি হ্রাসে প্রস্তুতি ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার ও মতবিনিময় সভায় রাজউকের পক্ষ থেকে সমীক্ষার তথ্য উপস্থাপন করা হয়। ঢাকায় গত শুক্র ও শনিবার চার দফা ভূমিকম্পের পর গতকাল সোমবার দুপুরে এই সেমিনার আয়োজন করে রাজউক। এতে সরকারে দুজন উপদেষ্টা, রাজউকের চেয়ারম্যান, জরুরি সেবা প্রদানকারী সংস্থার প্রতিনিধি, পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিসহ ভূমিকম্প ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দ্রুত সময়ের মধ্যে রাজধানীর ভবনগুলোর ঝুঁকি মূল্যায়নের কাজ শুরু করার আহ্বান জানান।
এ ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষকে যুক্ত করে ভবন মূল্যায়নের কাজ শুরুর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, অপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই।
রাজউক এবং সিটি করপোরেশনকে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে উল্লেখ করে পরিবেশ উপদেষ্টা আরও বলেন, যেখানে ভাঙতেই হবে, সেখানে যেন আর কোনো রকম নমনীয়তা না দেখানো হয়, সেটা খুবই জরুরি। প্রয়োজনে রাজউককে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
সেমিনারে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, রাজউকের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য খুব তাড়াতাড়ি ‘টাউন ইম্প্রুভমেন্ট অ্যাক্টের’ সংশোধন হচ্ছে।
ভূমিকম্প হলে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হবে, তা নিয়ে রাজউকের সমীক্ষাটি করা হয় ‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্টের’ (২০১৫-২০২৪) রাজউক অংশের অর্থায়নে। ৫৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
দেশে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল ১৮৮৫ সালে। এই ভূমিকম্প হয়েছিল মধুপুর ফাটলরেখায় (ফল্ট)। এরপর ১৪০ বছর হতে চললেও এত বড় ভূমিকম্প ওই ফাটলরেখায় আর হয়নি।
রাজউকের সেমিনারে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মো. ওয়াহিদ সাদিক। তিনিই মধুপুর ফল্টে বড় ভূমিকম্প হলে কী ক্ষতি হতে পারে, তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মধুপুর ফাটলরেখায় ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকার ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৯টি ভবন ধসে পড়তে পারে, যা মোট ভবনের ৪০ শতাংশের কিছু বেশি। এতে প্রায় আড়াই হাজার কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতি হতে পারে, যা প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার সমান। ভবনগুলো মেরামত অথবা পুনর্নির্মাণে ব্যয় হবে ৪ হাজার ৩৭০ কোটি ডলার (৫ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা)।
ভূমিকম্পের এই ঝুঁকির কথা দেশে বহু বছর ধরেই বলা হচ্ছে। তারপরও ঢাকায় পুরোনো, ঝুঁকিপূর্ণ, নকশাবহির্ভূতভাবে নির্মাণ করা এবং অবৈধ ভবনের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে ভবন নির্মাণের সময়ই আইনকানুন মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাজউকের।
১৯৫৬ সালে ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার উন্নয়ন ও পরিবর্ধনের বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে ‘ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি)’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ডিআইটি ১৯৮৭ সালে রূপ নেয় রাজউকে।
রাজউকের রূপকল্প হলো ‘আওতাধীন এলাকায় পরিকল্পিত ও টেকসই নগরায়ণ এবং বাসযোগ্য আবাসন নিশ্চিতকরণ।’ সংস্থাটির অভিলক্ষ্যে সবার জন্য নিরাপদ আবাসন এবং দুর্যোগ সহনশীল নগর বিনির্মাণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সংস্থাটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রবল। নগরকে পরিকল্পিত করার বদলে আবাসন প্রকল্প করার মাধ্যমে প্রভাবশালীদের প্লট দেওয়ার দিকে বেশি নজর দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে রাজউকের বিরুদ্ধে।
নগর–পরিকল্পনাবিদ এবং জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, রাজউকের তিনটি কাজ। পরিকল্পনা তৈরি করা, উন্নয়ন করা এবং উন্নয়নের নিয়ন্ত্রণ করা। উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তারা হতাশাজনকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, বড় ভূমিকম্পে ৪০ শতাংশ ভেঙে পড়বে বলা হচ্ছে, এর মূল দায় রাজউকের। ভবনমালিক এবং প্রকৌশলীরাও দায় এড়াতে পারেন না।
জাতীয়
ভূমিকম্প ঝুঁকি: প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সোমবার (২৪ নভেম্বর) ড. ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকরা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের কারণে আতঙ্কিত হবার কোনো কারণ নেই; বরং প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বিশেষজ্ঞদের আহ্বান জানান, তারা যেন স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সরকারের করণীয় সম্পর্কে লিখিত পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, আমরা হাত গুটিয়ে রাখতে চাই না, আবার অবৈজ্ঞানিক কোনো পদক্ষেপও নিতে চাই না। আপনাদের পরামর্শগুলো দ্রুত লিখিত আকারে আমাদের দিন; সরকার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
ড. ইউনূস জানান, প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং এক বা একাধিক টাস্কফোর্স গঠনের বিষয়ে কাজ চলছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পাওয়া মাত্রই সে অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আপনারা পত্র-পত্রিকায় লিখেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, অভিজ্ঞতা ভাগ করেছেন। এই আতঙ্ক থেকে জনগণকে রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কী করা প্রয়োজন, সরকারকে তা জানান। কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে, কোন কোন বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে—সব জানান। দুর্ঘটনা যেভাবেই আসুক, যেন আমরা যেন সকল পূর্ব প্রস্তুতি নিতে পারি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভূমিকম্পের প্রস্তুতি হিসেবে কী ধরনের মহড়া প্রয়োজন হবে, সে বিষয়েও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ প্রয়োজন। পাশাপাশি ভূমিকম্পের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা কোন পর্যায়ে আছি সেটিও মূল্যায়ন করতে হবে।
বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও ভূমিকম্প-বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও সমন্বয়ের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ভূমিকম্প নিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তাদেরকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে হবে।
ড. ইউনূস বলেন, আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘শুভেচ্ছা’ নামে একটি অ্যাপ করেছি। এই অ্যাপের মাধ্যমে বিদেশে থাকা বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের সাথে যুক্ত হোন। অ্যাপটিতে আরও কী ধরনের ফিচার আনা যেতে পারে, সে বিষয়েও আমাদের পরামর্শ দিন।
বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভূমিকম্পকে ঘিরে বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক গুজব তৈরি হয়েছে। বলা হচ্ছে— ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে, ১০ দিনের মধ্যে, ১ মাসের মধ্যে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হবে—এ ধরনের অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
তারা বলেন, ভূমিকম্প কখন হবে—কেউ বলতে পারে না। কোন অঞ্চলে কত বছরে কতগুলো ভূমিকম্প হয়েছে এবং তাদের মাত্রা কী ছিল, তা দেখে একটি সময়সীমা অনুমান করা যায়। কিন্তু নির্দিষ্ট দিন-তারিখ-সময় বলা যায় না।
বৈঠকে উপদেষ্টাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, দুর্যোগ ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) প্রফেসর মো. জয়নুল আবেদীন; বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী; বুয়েটের অধ্যাপক তাহমীদ মালিক আল-হুসাইনী; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আখতার; বুয়েটের অধ্যাপক ড. তানভীর মনজুর; বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. মমিনুল ইসলাম; আবহাওয়াবিদ মো. রুবাইয়্যাত কবীর; ভূতত্ত্ববিদ ড. রেশাদ মো. ইকরাম আলী; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ ড. মো. শাখাওয়াত হোসাইন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকিপূর্ণতা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান খান এবং বুয়েটের অধ্যাপক ইসরাত ইসলাম।
বৈঠকে অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান বলেন, ভূমিকম্পের উৎস ও উৎপত্তিস্থল নিয়ে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে—বাংলাদেশ ও এর আশেপাশে কতগুলো সোর্স আছে এবং সেগুলোর কারণে শেকিং লেভেল কী হতে পারে তা নিরূপণ করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হবার সম্ভাবনা কম, কারণ আমরা স্বল্প ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। তবে আমাদেরকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রাখতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আখতার বলেন, জনসচেতনতা তৈরিতে তরুণদের কাজে লাগানো জরুরি। ইনডোরে, আউটডোরে, ব্যক্তি পর্যায়ে ও প্রতিষ্ঠানে—চার স্তরে করণীয় পরিকল্পনা তৈরি করে সবার কাছে পৌঁছাতে হবে। তরুণদের কাজে লাগিয়ে ন্যাচারাল হ্যাজার্ড প্ল্যান ও প্রযুক্তিগত উদ্যোগ নিলে সবাই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে।
চুয়েটের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মন্ত্রণালয় তাদের আওতাধীন স্থাপনাগুলোর মূল্যায়ন করতে পারে। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ—এসব খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমিকম্পবিষয়ক প্রোগ্রাম চালু করলে আতঙ্ক নয়, বরং সচেতনতা তৈরি হবে।
এমআইএসটি’র অধ্যাপক মো. জয়নুল আবেদীন বলেন, সবাইকে বোঝাতে হবে যে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। আমাদের সম্পদের মধ্যে থেকেই কাজ করতে হবে। করণীয় সম্পর্কে আরও সুনির্দিষ্ট তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। মানুষকে মাথা ঠান্ডা রাখার বিষয়ে সচেতন করতে হবে। কোন এলাকায় খোলা জায়গা আছে, কোথায় জমায়েত হওয়া যায়—তা জানাতে হবে এবং সে অনুযায়ী মহড়া করতে হবে। বাসাবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মহড়ার ব্যবস্থা জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, হাসপাতালগুলোর কোনো ধরনের ঘাটতি আছে কিনা, ভবনগুলোর মান ঠিক আছে কিনা, জরুরি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সক্ষমতা আছে কিনা তা মূল্যয়ন করতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখতে হবে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী জানান, ইতোমধ্যেই একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভূমিকম্পের ফলে ফাটল ধরা ভবনের ছবি সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এর মধ্য থেকে দুই শটির বেশি ভবনের মূল্যায়ন করা হয়েছে। বেশিরভাগই পার্টিশন দেয়ালে ফাটল দেখা যাচ্ছে।
সফটওয়্যারটির মাধ্যমে দ্রুত ফাটল ধরা ভবনের মূল্যায়ন ও পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে—বিশেষজ্ঞদের পাঠানো লিখিত সুপারিশ নিয়ে সরকার দ্রুত সময়ে আলোচনা করে টাস্কফোর্স গঠন করবে। ভূমিকম্পের বিষয়ে আশু করণীয় নিয়ে গঠিত টাস্কফোর্সে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা যুক্ত থাকবেন।



