বিনোদন
সালমান শাহ হত্যার বিচারের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিক্ষোভ
ঢাকাই সিনেমার ক্ষণজন্মা নায়ক সালমান শাহের মৃত্যুর বিচার দাবিতে আবারও উত্তাল হলো জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণ। প্রায় তিন দশক পরেও কাঙ্ক্ষিত বিচার না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ ভক্তরা শনিবার (১ নভেম্বর) বিকেলে এক মানববন্ধনের আয়োজন করেন। তাদের দাবি—সালমান শাহ আত্মহত্যা করেননি, তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং অবিলম্বে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
মানববন্ধন প্রাঙ্গণ ভক্তদের একের পর এক স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে। ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আপস না সংগ্রাম?’ এবং ‘সামিরার ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই’—এমন সব স্লোগানে বিচারহীনতার বিরুদ্ধে নিজেদের ক্ষোভ জানান দেন তারা।
দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে বিচার না পাওয়ায় ভক্তরা তাদের বক্তব্যে রাষ্ট্র ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এক ভক্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘৩০ বছর হয়ে গেছে সালমান হত্যার বিচার চেয়েছি। সামীরা (সালমানের স্ত্রী) এত ক্ষমতাবান? সরকারের চেয়েও তার ক্ষমতা বেশি? এত বছরে যে কয়েকটা সরকার আসছে-গেছে, এদের থেকেও কি তার ক্ষমতা বেশি? নাকি সে তার রূপ দেখিয়ে সবকিছু কন্ট্রোল করে রেখেছে?’
তিনি মামলার অন্যতম আসামি সামিরার সাম্প্রতিক আগাম জামিন নেওয়ার চেষ্টার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘এত বছর বলছে আমিতো দেশে আছি। আমি তো পালাইনি। এখন পালাচ্ছে কেন? এখন কেন আদালত থেকে জামিন নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে? আমি চুরি না করলে তো প্রমাণ করে দিব যে আমি চুরি করি নাই।’
আরেক ভক্ত মামলার তদন্তে ধীরগতিতে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘সালমানকে যে হত্যা করা হয়েছে এটার প্রমাণতো আছে। এদিকে ডলি জহুর, শাবনূর… সন্দেহভাজন হিসেবে কি এদের ডাকতে পারে না? আইন কি চোখে দেখে না? কাঠের চশমা পড়ে থাকলে আরও ৩০ বছর পড়ে থাকা যাবে।’
মানববন্ধনে কেবল ক্ষোভ নয়, ছিল দীর্ঘদিনের জমানো আবেগ আর হাহাকার। ১১-১২ বছর বয়স থেকে সালমান শাহের ভিউ কার্ড জমানো এক ভক্ত বলেন, ‘২৯ বছর ধরে এই ভিউ কার্ডগুলো আমি অনেক যত্ন করে রেখেছিলাম। আজকে এগুলো বাইরে নিয়ে এসেছি। আমি বা আমরা কেউই বাঁচবো না, তবে চাই সঠিক বিচারটা দেখে যেতে।’
আরেক ভক্ত সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরীর কষ্টের কথা তুলে ধরে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘পৃথিবীতে সবচেয়ে ভারী হচ্ছে বাবা-মায়ের কাঁধে সন্তানের লাশ। ৩০ বছর একটা মা তার সন্তানের লাশ সে নিজের হাতে কবর দিছে। আপনাদের যদি এটা হইতো, কী করতেন?’
ভক্তরা অভিযোগ করেন, আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করছে না। তারা বলেন, ‘আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সেই শ্রদ্ধা থেকেই বলছি, আপনারা অবিলম্বে আসামিদের গ্রেপ্তার করুন।’
ভক্তরা প্রত্যয় ব্যক্ত করেন, ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না। এক ভক্তের কথায়, ‘আমাদের মা নীলা চৌধুরী বলেছেন, আমরা মাফ করে দিব। কিন্তু (প্রথমে) বিচার চাই। সে যদি মারাও যায়, আমরা সালমানভক্তরা ভিক্ষা করেই মামলা চালাব। কিন্তু আমরা হত্যার বিচার চাই।’
বিনোদন
সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ
ঢালিউড সুপার হিরো সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা গ্রহণের পর রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) পুনরায় তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার বাদীপক্ষের করা রিভিশন মঞ্জুর করে ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক এ রায় দেন।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৫ বছরে মারা যান সালমান শাহ। অভিনেতার হঠাৎ মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে দাবি করেন তার সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। যা মেনে নেয়নি নায়কের পরিবার। ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলা করেন সালমানের বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।
ওই সময় অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। সিআইডির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালের ২৫ নভেম্বর সিএমএম আদালত সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে রায় দেন। যা প্রত্যাখ্যান করে রিভিশন মামলা করেন সালমানের বাবা।
২০০৩ সালে রিভিশন মামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক প্রতিবেদন দাখিল করেন যেখানে সালমান শাহর মৃত্যুকে ‘অপমৃত্যু’ বলা হয়।
এরপর ছেলের মৃত্যুর বিচারপ্রার্থী কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী মারা গেলে মামলার বাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। ২০১৫ সালে তিনি সিএমএম আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজির আবেদন করেন। তখন মামলাটি তদন্তের ভার পড়ে পিবিআইয়ের ওপর।
২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করলে ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর আদালত ওই প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলাটি নিষ্পত্তি করেন।
মামলার নিষ্পত্তি আদেশের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১২ জুন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা দায়ের করে বাদীপক্ষ। ওই রিভিশন মামলায় বলা হয়, একাধিক ব্যক্তির প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে হত্যাকে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। সুপরিকল্পিত হত্যাকে ‘আত্মহত্যা’ ও ‘অপমৃত্যু’ বলা হচ্ছে। তাই সত্য প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
সালমান শাহর প্রকৃত নাম ছিল শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। তার বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। ক্যারিয়ারের শুরুতে ছোটপর্দায় ‘আকাশ ছোঁয়া’, ‘দোয়েল’, ‘সব পাখি ঘরে ফেরে’, ‘সৈকতে সারস’, ‘নয়ন’ ও ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ সহ একাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। এছাড়াও তিনি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন।
তার অভিনীত সবশেষ সিনেমা ছিল ‘বুকের ভেতর আগুন’। চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে জুটি বেঁধে তিনি সর্বাধিক ১৩টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন, যা বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় জুটি হিসেবে পরিচিত।
বিনোদন
ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত ইলিয়াস কাঞ্চন
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ভালো নেই। দীর্ঘ সাত মাস ধরে অসুস্থ তিনি। এমনকি তিনি ৬ মাস ধরে লন্ডনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অভিনেতার অসুস্থতা এবং চিকিৎসা সম্পর্কে প্রথমবার বিস্তারিত জানালেন তার ছেলে মিরাজুল মইন জয়।
নিসচা আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বুধবার (১ অক্টোবর) কানাডা থেকে ভার্চুয়ালি কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।
মিরাজুল মইন বলেন, আমার বাবা ইলিয়াস কাঞ্চন ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত এবং চিকিৎসা এখনও চলমান। বছরের শুরুতে তিনি নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন। পরে পরিস্থিতি গুরুতর হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা ৯ এপ্রিল তাকে ঢাকার ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নেন।
মইন জানান, দীর্ঘ প্রায় ছয় ঘণ্টা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এমআরআই করা হয়। দুই দিন পরে রিপোর্টে জানা যায়, তার মাথায় টিউমার রয়েছে। এই টিউমারের কারণে ইলিয়াস কাঞ্চন আগে থেকে কথা বলার সময় আটকে যেতেন এবং স্মৃতিশক্তি কমে যাচ্ছিল। এমআরআই রিপোর্টের পর ১৩ এপ্রিল ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্সে তার চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
ডাক্তাররা জানান, টিউমারটি মস্তিষ্কের গভীরে গুরুত্বপূর্ণ নার্ভ সংযোগস্থলে অবস্থান করছে। তাই সরাসরি অপারেশন করা যাবে না। পরবর্তীতে পরিবার থেক এসিদ্ধান্ত নেয়া হয় তার চিকিৎসা লন্ডনে করানো হবে। এরপর গত ২৬ এপ্রিল ইলিয়াস কাঞ্চন লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। পৌঁছানোর পর হারলি স্ট্রিট ক্লিনিকে নিউরোসার্জারির অধীনে তিন মাস পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। ৫ আগস্ট উইলিংটন হাসপাতাল-এ প্রফেসর ডিমিট্রিয়াসের নেতৃত্বে তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। চিকিৎসকরা জানান পুরো টিউমার অপসারণ সম্ভব নয়, অপারেশনের ফলে জীবনহানি বা প্যারালাইসিসের ঝুঁকি থাকতে পারে।
পরিবারের অনুমতিতে টিউমারের একটি অংশ অপসারণ করা হয়, বাকিটা রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপি-র মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করা হবে। চলতি মাসেউ রেডিয়েশন এবং কেমোথেরাপি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন মিরাজুল মইন জয়।
মোট ৩০ দিন রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপি দিতে হবে। সপ্তাহে পাঁচ দিন করে এই চিকিৎসা ছয় সপ্তাহ ধরে চলবে, যা এই মাসেই শুরু হওয়ার কথা। এরপর চার সপ্তাহ তিনি ডাক্তারের অবজারভেশনে থাকবেন। সেখানকার ডাক্তাররা যখন অনুমতি দেবেন, তখনই তিনি বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন বলে আশা করছে তাঁর পরিবার। মিরাজুল মইন জয় বাবা ইলিয়াস কাঞ্চনের দ্রুত সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে আবারও দোয়া প্রার্থনা করেছেন।



